প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পর্ব)

1
3036

প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পর্ব)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি

‘ কোথায় আর খুজবো ওকে আমি?কিভাবে খুজে পাবো?না জানি আমার প্রাহিকে ওরা কি অবস্থায় রেখেছে।আমার মাথা কাজ করছে না।’ ধরা গলায় কথাগুলো বললো অর্থ।

হেমন্ত নিজেরও চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।যেতোটুকু পেরেছে প্রায় একপ্রকার তন্নতন্ন করে খুজেছে প্রাহিকে তারা কিন্তু পায়নি। হেমন্ত নিজেকে শান্ত করলো।এই মুহূর্তে ওকে সবটা সামলাতে হবে। নাহলে অর্থ আরো ভেঙে পরবে।হেমন্ত ধীর কন্ঠে বলে, ‘ ভাই চিন্তা করিস না।আরাফ ভাইয়া গিয়েছে তো পুলিশ ফোর্স নিয়ে।আমরা আবারও বের হবো খুজতে।চিন্তা করো না।’

অর্থ চোখ বুজে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।তারপর উঠে গিয়ে ওয়াশরুমে মাথায় ইচ্ছামতো পানি ঢাললো।মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো অর্থ।ওকে আবারও প্রাহিকে খুজতে বের হতে হবে।তার আগে এই মাথা ব্যাথা কমাতে হবে।অর্থ ওর ড্র‍য়ার থেকে মেডিসিন বের করতে নিলেই।কিছু একটা ওর চোখে পরে।তা দেখেই অর্থ’র চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে।ওর তো মনেই ছিলো না এটার কথা।দ্রুত পায়ে বাহিরে বের হয়ে হেমন্ত’র কাছে গেলো।গিয়ে বললো, ‘ হেমন্ত চল দ্রুত।আর আরাফকে ফোন করে বলে দে আমার গাড়িকে ফলো করতে।

হেমন্ত কোন প্রশ্ন করলো না।শুধু যা বললো তা কথামতো পালন করলো।তারপর ছুটলো গাড়ি নিয়ে তারা।

————-
চোখজোড়া আস্তে আস্তে খুলে তাকালো প্রাহি।মাথাটা ভার ভার লাগছে প্রচুর।অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে।ঝাপ্সা চোখজোড়া স্পষ্ট হয়ে আসতেই আশেপাশে তাকায় প্রাহি।ক্ষীন আলোয় বুজা যাচ্ছে এটা একটা ছোট খাটো বেডরুম।যেখানে একটা স্টিলের বেড, একটা ছোট টেবিল আর চেয়ার বাদে কিছু নেই।চেয়ারটাতেই ওকে বেধে রাখা হয়েছে।প্রাহি হালকা আওয়াজে বললো,’ কেউ আছেন প্লিজ?আমাকে মুক্ত করে দিন প্লিজ।কেউ আছেন?প্লিজা আমাকে যেতে দিন।’

তারপর হু হু করে কেঁদে দিলো প্রাহি।কি হচ্ছে ওর সাথে এসব?ওর সাথেই কেন সবাই এমন করে?মানুষ ওর ভালো চায়না কেন? প্রাহি আবারও কান্না করতে করতে বললো, ‘ প্লিজ আমাকে যেতে দিন প্লিজ।অর্থ ভাইয়া আপনি কোথায়?আমাকে নিয়ে চলুন প্লিজ?আমার ভয় করছে।’

প্রাহি এইবার জোড়েই কেঁদে দিলো।ঠিক তখনি খট করে দরজাটা খুলে গেলো। আর একটা লোক প্রবেশ করলো।প্রাহি অস্রুসিক্ত চোখে সামনে তাকাতেই।ক্ষীন আলোতে যাকে দেখে তাতে ও অবাক না হয়ে পারে না।অবাকের শেষ সীমান্তে পৌছে গেছে ও।অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,’ জয় ভাইয়া, তুমি?’

জয় হাসলো।তারপর প্রাহির সামনে গিয়ে ওর গালজোড়া সজোড়ে চেপে ধরলো।প্রাহি ব্যাথায় কুকরে উঠলো।জয় দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘ কি ভেবেছিস?আমি এখানে দেশে না থাকলেই তুই যা মন চায় তাই করবি?এতোই সোজা?আমার এতোদিনের ভালো মানুষির পিছনে যে উদ্দেশ্য ছিলো তা পূরন না করেই তোকে ওই অর্থ’র হতে দিবো?নেভার এভার।কখনই না।তোকে সুযোগ দিয়েছিলাম।তোর আঠোরো বছর বয়স অব্দি অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম।তোকে বিয়ে করবো ভেবেছিলাম।কিন্তু পাখি যে আমার খাচা ছেড়ে, অন্যের খাচাতে ভালোবেসে ঘর বেধেছে।তা কি করে মেনে নেই।’

কথাগুলো বলেই সজোড়ে প্রাহির গালে চর মেরে দিলো জয়।প্রাহির ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরতে লাগলো।প্রাহি কাঁদছে আর মনে প্রানে অর্থকে ডাকছে। জয় এইবার চুল মুঠি করে ধরলো প্রাহির। প্রাহি চোখ মুখ খিচে রেখেছে ব্যাথায়।প্রাহি ভেজা চোখে তাকিয়ে বলে, ‘ শেষ মেষ তুমিও ভাইয়া। তুমিও আমার ক্ষতিটাই চাইলে?কেন? বলো কেন তোমরা আমার ভালো দেখতে পারো না?কি এমন ক্ষতি করেছি আমি তোমাদের?’

জয় বিকট হাসলো।হাসতে হাসতে বলে, ‘ এতেই এই অবস্থা?যখন সব রহস্যেগুলো জানতে পারবি তখন কি হবে?’

প্রাহি বুজতে না পেরে বলে, ‘ মানে? ‘

জয় ঘারের পিছে হাত রেখে আয়েশি ভঙ্গিতি বলে, ‘ তোকে ছোট থেকে এতোটা আদর করা।বিদেশে গিয়েও অনবরত তোর খোজ খবর নেওয়া।এইগুলো কি আমি শুধু শুধুই করেছি?উহুম নাহ।তোর কাছে ভালো সাজতে চেয়েছিলাম।যাতে তুই আমাকে পছন্দ করিস।তোকে বিয়ে করতে পারি আর তোর নামের সকল সম্পত্তিও আমার হতে পারে।কিন্তু, কিন্তু আমার ওই ইডিয়েট বাবা মা দুটো।গাধাদের মতো কিসব প্লান করে আমার পুরো প্লানটাই উলটে দিলো।আর এই তোকে বিয়ে দেওয়ার মতো গাধামো করলো।তবে এই বুদ্ধি যে দিয়েছে কে সেটা আমি খুব ভালোভাবে জানি।আসছে হয়তো।আমার লোকেরা জানালো।গার্ডেনে আছে।আমি একটু আটকে রাখতে বলেছি।’

প্রাহির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো এক একটা কথা শুনে। কাঁপা গলায় বলে, ‘ মানে মামা মামিও আমাকে আমার সম্পত্তির জন্যে এসব করেছিলো?আর? কে আসবে?আর কে বাকি আছে বলো?আমিও দেখতে চাই।সে সকল জঘন্য মানুষদের চেহারা।যারা যারা এইসব জানোয়ারের মতো কাজ করছিলো।’

জয় ঠাস করে আরেকটা চর লাগালো প্রাহির গালে।তারপর বলে, ‘ তো তুই কি মনে করিস?তোকে এতোদিন বাচিয়ে রেখেছে এমনি এমনি?সবকিছুর পিছনেই সবার উদ্দেশ্য থাকে।আর আমি তো এসবে যুক্ত হয়েছি সবে মাত্র চার,পাচ বছর হবে হয়তো।কিন্তু আসল কাল্প্রিটকে দেখলে তুই কি বলবি?যে এইসব জঘন্য খেলার আসল মাষ্টার মাইন্ড!’

প্রাহি নিজেকে শক্ত করলো।নরম হলে চলবে না।ওকে জানতেই হবে আসল মানুষটি কে যে এইসব জঘন্য খেলাগুলো সাজাচ্ছে। তাই শক্ত কন্ঠে বলে, ‘ কে সে আমি জানতে চাই।’

জয় হেসে দিয়ে বলে, ‘ অবশ্যই জানবি।তুই আমার বউ হতে যাচ্ছিস।তো আমার বউয়ের ইচ্ছা কি আমি অপূর্ণ রাখতে পারি? ওয়েট আসতে বলছি ওকে।’

প্রাহি ঘৃনায় চোখ ঘুরিয়ে নিলো। এই লোকটা যে এতোটা জঘন্য সে আগে জানতো না।প্রাহির সাথে ওর মামা বাসায় একমাত্র ভালো ব্যবহার কতো ওর এই মামাতো ভাই জয়।কিন্তু তার পিছনে যে এরকম জঘন্য উদ্দেশ্য আছে জানতো না।জয় বিদেশ চলে গিয়েছিলো স্টাডি করতে।প্রাহির যখন তেরো বছর বয়স তখনি প্রাহিকে প্রথম দেখেছিলো।একবছর দেশে থেকেছিলো।সেই একটা বছর প্রাহি অনেক শান্তিতে ছিলো।কারন জয়ের কারনে প্রাহির মামা মামি ওকে কিছু বলতে পারতো না।এক বছর পর বিদেশে চাকরি পাওয়াতে আবার চলে যায় ও।কিন্তু প্রাহির অনেক খোজ খবর নিতো। প্রাহিও নিজের বড় ভাইয়ের মতো ভালোবাসতো জয়কে। কিন্তু জয়ের যে এরকম জঘন্য মতলব ছিলো জানতো না সে।

প্রাহির ভাবনার মাজে দরজায় খটখট আওয়াজ হয়।প্রাহি সেদিকেই তাকালো।জয় যখন দরজা খুলে দিলো তখন দরজা দিয়ে যে প্রবেশ করলো।তাকে দেখে যেন প্রাহির পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো।এই মানুষটা এসব করতে পারে জীবনে ভাবতেও পারিনি ও।তাহলে শেষ মেষ ওর সকল ধ্বংশগুলো ওর কাছের মানুষরাই করলো?
প্রাহির হাত পা কাঁপছে।এতোটা যন্ত্রনা ও সহ্য করতে পারছে না।ঝাপ্সা হয়ে আসছে চোখ।চোখজোড়া বুজে আসতে আসতেই এস্তে করে বললো, ‘ কেন করলেন এমন?কেন করলেন?অনেক বিশ্বাস করতাম আপনাকে?কেন করলেন এমন? সম্মান করতাম।কেন করলেন?’

#চলবে_______

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here