প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(১৩)

0
1869

প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(১৩)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি

জল ধারার ন্যায় সময় গড়িয়েছে অনেক দূর।কেটে গেছে প্রায় মাসের পর মাস।অর্থ আর প্রাহির প্রেম চলছে ভালোই।তবে এতো ভালোবাসার মাজে অর্থের ধমকানোটাও কমেনি।এ কয়দিনে প্রাহির অনেক বুজানোর ফলে অর্থের অভিমান কমেছে পরিবারের প্রতি।
আজ শুক্রবার। ছুটির দিন।তবে সিকদার বাড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশ।কারন হিয়ার এক্সাম শেষ হয়েছে অনেকদিন।রেজাল্টও এসেছে অনেক ভালো।তাই সবার সিদ্ধান্তে এখন বিয়ের সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করা হবে আজ।আরাফদের বাড়ি থেকে আজ সবাই আসবে এ বাড়িতে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে, তারই আয়োজন চলছে।অর্থ সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।কাজ করার কথা বললে ভুল হবে।সেতো এসেছে প্রাহিকে দেখার জন্যে।কিন্তু নিষ্ঠুর প্রাহি একবারও আসলো না অর্থ’র কাছে।কফি বানিয়ে দিতে বলেছিলো এই সুযোগে যদি একটু কথা বলা যায়।কিন্তু বেয়াদপ মেয়েটা কি করলো সেলিমা খালাকে দিয়ে কফি বানিয়ে পাঠিয়েছে।সবার জন্যে তার সময় আছে শুধু অর্থ’র জন্যে তার সময় নেই।একদম নেই।নিষ্ঠুর, পাষান এক রমনীকে অর্থ ভালোবেসেছে।
প্রাহি রায়হানা বেগম আর হেনার সাথে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে।রান্না করবে বাবুর্চিই কিন্তু বাকি নাস্তার জন্যে খাবার তো তাদেরই বানাতে হবে।প্রায়ই সব শেষের দিকে।রায়হানা বেগম প্রাহিকে এই নিয়ে কপালে একশো চুমু খেয়ে ফেলেছে।মেয়েটা সব কাজে এতো পটু।কতো পদের নাস্তা বানিয়েছে হিসাব ছাড়া।তারা কখনই পারতো না এতোগুলো বানাতে।রায়হানা বেগমের এতো আদরে যেন প্রাহি গলে গিয়ে ওর মন চাইছে পৃথিবীর সবকিছু রান্না করে ফেলতে।তাহলে আরো আদর পাবে সে।কিন্তু শুধু গুমরোমুখো অর্থ কোনদিন ওর খাবারের প্রশংসা করে না।শুধু হুটহাট ওর কাছে আসে আর গিফ্ট দিয়ে চলে যায়।কেন রে?একটু মুখে প্রসংশা করলে কি হয়?
এইতো সেদিন অর্থ থ্যাই স্যুপ পছন্দ করে।প্রাহি সেটা রান্না করতে জানে না।ইউটিউব দেখে রেসিপি ফলো করে রান্না করেছে।প্রথমবারেই দারুন হয়েছে।অথচ অর্থ এইযে ভ্রু-জোড়া কুচকে খেয়ে খেলো।মুখে একটুও হু হা না করে সোজা উপরে চলে গেলো।এতে প্রাহি যখন মুখ ফুলিয়ে নিজের রুমে বসেছিলো।অর্থ ওকে একটা বিশাল বড় সাইজের টেডিবিয়ার গিফ্ট করেছিলো সাথে প্রাহির হাতে অসংখ্য চুমু খেয়েছিলো। প্রাহির অভিমান গলে তখন পানি পানি হয়ে গিয়েছিলো। প্রাহি ভালোভাবেই বুজে যে ওর হাতের রান্না অর্থ’র ঠিক কতোটা পছন্দ।তাই তো প্রতিদিন রাতের খাবারে তার রান্না করা একপদ খাবার থাকবেই।দুপুরে তো আর পারেনা তখন তার স্কুল থাকে।তাই রাতের জন্যে রান্না করে।
প্রানি রান্নাঘর থেকে আঁড়চোখে তাকায় অর্থ’র দিকে।এই ভয়ংকর রাগি লোকটা নাকি তাকে ভালোবাসে।ইসস,কথাটা যতোবার প্রাহিভাবে ততোবার লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়।এইটুকুনে এই অবস্থা সে যে অর্থকে ভালোবাসে এটা বলবে কিভাবে?হ্যা,এই কয়েকটা মাসে অর্থ’র ভালোবাসায় হেরে যায় প্রাহি।নিজেও অর্থকে ভালোবেসে ফেলে সে।কিভাবে যে কি হলো বুজলই না।হিয়াকে বলাতেই সে বুজতে পেরেছে হিয়ার কথায়।যে সে সত্যি ভালোবাসে।
প্রাহির গাল লজ্জায় লাল হয়।এইযে লোকটা সোফায় বসে আছে। কেন বসে আছে তা প্রাহি ভালোভাবেই জানে।এতো এতো কাজের মাজে সে শুধু শুধু বসে আছে তাকে দেখার জন্যে।কি এক মুসিবত।এখন কি কাজ ফেলে তাকে অর্থ’র সামনে স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকতে হবে না-কি আজব?
সে বসে আছে তাই কাজে হেলাফেলা হবে এইজন্যে কাজের লোক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।যাতে ডেকোরেশন সুন্দর করে হয়।এই পাগল লোকটাকে নিয়ে প্রাহি যে কি করবে?
এরই মাজে রান্নাঘরে আসলো হিয়া।এসেই প্রাহিকে সাইডে টেনে নিয়ে গেলো।বললো,

-” ভাই কিন্তু আর একটু হলে ব্লাস্ট হয়ে যাবে।যা রেগে আছে না।”

প্রাহি মুক বাকালো।বললো,

-” তোমার ভাইয়ের যতো আদিখ্যেতা। এখন কি আমি তার সামনে মূর্তির মতো বসে থাকবো নাকি আজব।কাজ থাকে না?”

-” সে আমি কি জানি?তোমার জনকে তুমি বুজাও।আর হ্যা,এর জন্যে আমায় যেন কোন ধমকাধমকি না করে।নাহলে তোর চুল সব আমি ছিড়ে ফেলবো।”

বলেই হিয়া চলে গেলো। প্রাহি হা করে তাকিয়ে আছে।কি বজ্জাত মেয়ে হিয়া।বলে কিনা তার চুল টেনে ছিড়ে ফেলবে।যেমন ভাই তেমন তার বোন।বদের হাড্ডি দুটো।অবশ্য এই কথাগুলো প্রাহি মুখ ফুটে অর্থের সামনে জীবনেও বলতে পারবে না।দেখা যাবে এইগুলো বলায় অর্থ তাকে সুইমিংপুলে চুবিয়ে চুবিয়ে আধমরা বানিয়ে দিবে।রায়হানা বেগমের কথায় প্রাহি সেদিকে যায়।তিনি বলছেন,

-” প্রাহি তুই গোসলে চলে যা।সোমুচা আর শরবত বানানো বাকি। এইগুলো আমরা করে নিবো।তুই যা। তুই যথেষ্ট করছিস।যার বিয়ে সে তো এর এক কানাকরিও পারে না।একে বিয়ে দিয়ে কিযে হবে আমার।কেমনে থাকবে শশুড়বাড়ি।একটা কাজও পারে না ঠিকভাবে। আর বড়জন। উনার কথা আর কি বলবো।নিজে তো একটা জামাও এদিক থেকে ওদিক নেয় না।কিন্তু কোন কিছু একটু অগোছালো করলেও রাগ যেন তার টগবগিয়ে উঠে। এই ছেলে নিয়ে আবার ভয়ের শেষ নেই।বিয়ে করলে দেখা যাবে প্রাহি ওর অত্যাচারে মরে যাবে।ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে যে আমি কি করবো।”

প্রাহি লাস্ট কথাটা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো।রায়হানা বেগম জলদি পানি এসে প্রাহিকে পান করালো।প্রাহি জোড়পূর্বক হাসি টেনে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। যাওয়ার পথে আঁড়চোখে অর্থ’র দিকে একপলক তাকিয়ে ছিলো।লোকটা তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকেই তাকিয়ে।শরীরটা শিরশির করে উঠলো।লোকটা এতো ভয়ানকভাবে তাকায় কেন তার দিকে।এই চাহনী যে প্রাহির সহ্য ক্ষমতার বাহিরে তা কি সে জানে না।প্রাহি দ্রুত পায়ে ছুটলো নিজের রুমের দিকে।এখানে আর থাকা যাবে না।
রুমে গিয়ে আলমারি খুলে অর্থ’র দেওয়া সবুজ রাউন্ড সাদা সুতোর গর্জিয়াস কাজ করা সবুজ রঙের গাউনটা নিলো। সাথে সাদা লেগিন্স আর সাদা উড়না নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।সুন্দরমতো গোসল সেরে টাওয়ালে পেচানো লম্বা ঘন চুলগুলো ছেড়ে দিতেই তা ঝরঝর করে কোমড় অব্দি ছড়িয়ে গেলো।টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দেওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই বিছানায় বসা অর্থকে দেখে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো।লোকটা এখানে কখন এলো।হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে প্রাহির।লোকটা সামনে আসলেই ওর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।অর্থ উঠে দাড়ালো।একপা দুপা করে এগিয়ে গেলো প্রাহির দিকে।দৃষ্টিতে অদ্ভুত মুগ্ধতা। তার সামনে দাঁড়ানো যে রমনীটি দাঁড়িয়ে আছে তার রূপের আগুনে যেন সে ঝলসে যাচ্ছে।প্রাহি পেছাতে পেছাতে দেয়ালে লেগে গেলো।অর্থ একেবারে ওর সামনে এসে প্রাহির দুই সাইডে হাত রাখলো।চোখে ঘোর লেগে যাচ্ছে তার।এতো সুন্দর কেন প্রাহি?এটা কি শুধু তার চোখেই।দেখো মেয়েটাকে তার কাছে দেখতে এতো সুন্দর লাগে।তবুও মুখ ফুটে সে কখনো বলেনি প্রাহি আজ তোমাকে সুন্দর লাগছে।
অর্থ এইবার নিচু হয়ে প্রাহির ঘারে মুখ গুজে দিলো। ঘারে লেপ্টে থাকার ভেজা চুলে ঘ্রান নিয়ে মাতাল হচ্ছে সে।এদিকে প্রাহির প্রায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা।অবশ হয়ে আসছে তার শরীর।রক্ত চলাচল যেন বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াচ্ছে।প্রাহি কাঁপা কাঁপা হাতটা নিয়ে অর্থের ঘাড়ের পিছনে রাখলো।ভাঙ্গা কন্ঠে বলে,

-” ক..কি ক…করছেন? স..সরুন না প্লিজ।”

প্রাহির কোমল মিষ্টি আওয়াজে এইটুকু কথা যেন পুরো এলোমেলো করে দিলো অর্থকে।করে বসলো এক ভয়ংকর কাজ।অধর ছোয়ালো প্রাহির গলায়।হালকা কামড়ও দিলো।প্রাহি চোখ খিচে বন্ধ করে অর্থ’র ঘাড় খামছে ধরলো।নখ মনে হয় ডেবে গেছে।অর্থ এখনো ঠোঁট ছুইয়ে রেখেছে সেখানেই।প্রাহির নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম।কাঁপতে কাঁপতে সে বোধহয় মারা যাবে আজকে।শরীরটা আর টিকিয়ে রাখতে পারলো না প্রাহির।নিজের শরীরের সমস্ত ভর অর্থ’র উপর ছেড়ে।অর্থ নিজেও সরে এসে প্রাহিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো।প্রাহি দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরে জোড়েজোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।আর একটু হলেই যেন প্রান পাখিটা উড়াল দিতো তার।
অর্থ প্রাহিকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।প্রাহি মাথা নিচু করে আছে। অর্থ বাকা হাসলো।তারপর প্রাহির দিকে ঝুকে প্রাহির কানে কানে ভয়ানক এক নিষিদ্ধ বানিগুলো বলে প্রাহির কপালে অধর ছুঁইয়ে দ্রুত চলে গেলো।আর প্রাহি হতভম্ভ হয়ে আছে।এই মাত্র লোকটা কি বলে গেলো?ইয়া খোদা, আজ আর প্রাহি লোকটার সামনেও যাবে না।তাকাবেই না তার দিকে।দেখা যাবে লজ্জায় সে মরেই যাবে।
প্রাহি উঠে দাড়ালো।বেড সাইড টেবিল থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।লজ্জায় গাল,কান,নাক টকটকে লাল হয়ে আছে।

#চলবে______

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here