প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(১৮)

0
1806

প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(১৮)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি

দুহাত গালে দিয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছে প্রাহি।আর ওর সামনেই রাগি চোখে তাকিয়ে আছে অর্থ।রাগে ওর সারা শরীর রি রি করছে।মাথার রগগুলো থপথপ করছে।মাথাটা অতিরিক্ত বিগরে আছে ওর।হাতগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।অনেক চেষ্টাও করে তা সফল হচ্ছে না।উলটো প্রাহিকে ফোঁপাতে দেখে রাগের মাত্রা দ্বিগুন হচ্ছে।অর্থ রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পারায় পাশের ফুলের টপটা সজোড়ে লাত্থি দিয়ে ফেলে দিলো।টপটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।প্রাহির দিকে তেড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ও।একবার যেই ভুল করেছে আবারও একই ভুল করতে চায়না সে।প্রাহির সাথে বিচ্ছেদটা যে ওর সহ্য ক্ষমতার বাহিরে।অর্থ কি করবে হিতাহিত জ্ঞান না পেয়ে ছাদের কর্নারে রাখা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে দু হাতে মাথা চেপে ধরলো।প্রাহি ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।কি থেকে কি করবে ওর মাথায় আসছে না।ভোঁতা একটা যন্ত্রনা ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে।অর্থ’র অস্থির আচড়ন ওকে আরো ভয়ে কাবু করে ফেলছে।হঠাৎ অর্থ চোখ তুলে তাকালো।প্রাহি আত্মা শুদ্ধ কেঁপে উঠলো।লোকটার চোখজোড়া ভয়ানক ভাবে লাল হয়ে আছে।অর্থ ঠান্ডা স্বরেই বললো,
-” কাম হিয়ার প্রাহি?”
প্রাহি আমতা আমতা করলো কিছু বলার জন্যে।তার আগেই অর্থ আবারও বলে,
-” এই সেইড কাম নিয়ার টু মি, ফাস্ট।”
প্রাহি কাঁপা শরীর নিয়ে এগিয়ে গেলো অর্থ’র দিকে।অর্থ’র কাছে যেতে ওর ভয় করছে প্রচন্ড। একটু আগে যা হলো তাতে মনে হয়েছিলো এই বুজি অর্থ ওকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে।কিন্তু ওর দোষ কোথায় এখানে?
প্রাহি রাত দুটো বাজে ছাদে এসে চন্দ্রবিলাশ করছিলো একা একা।ঘুম আসছিলো না ওর।শরীরটা কেমন যেন লাগছিলো।রুমের ভীতর থাকতে অসহ্য লাগছিলো।তাই ছাদে এসেছিলো একটু।ছাদে প্রচুর বাতাস।তাই প্রাহি যখন চাঁদ দেখছিলো তখন পাশের ছাদে কিছু অসভ্য ছেলেরা আড্ডা দিচ্ছিলো।মাতাল হওয়া ছেলেরা বাতাসে যখন প্রাহির ওড়না হালকা সরে গিয়েছিলো সেটা নিয়েই নিজেরা নিজেরা নানানভাবে বাজে কথা বলছিলো।কিন্তু প্রাহি তো নিজের মাজেই ছিলো না।সে তো চন্দ্রবিলাশ করতে ব্যস্ত।এদিকে অর্থ নিজের পুরনো বাড়ি থেকে ফিরে একবার প্রাহির রুমে যায় ওকে দেখার জন্যে।কিন্তু প্রাহিকে সেখানে পায়না।সারা বাড়ি খুজলো।হিয়াকেও জাগিয়ে জিজ্ঞেস করলো প্রাহি কোথায়।তখন জানতে পারলো প্রাহি নাকি ওর থেকে ছাদের চাবি নিয়ে গেছে।আর ছাদেই গিয়েছে ওর নাকি রুমে ভালো লাগছিলো না।হিয়া যেতে চেয়েছিলো কিন্তু প্রাহি মানা করে দিয়েছে।তাকে ঘুমোতে বলেছে।অর্থ তা শুনেই রাগে ফেটে যাচ্ছে।এতো রাত্রে মেয়েটা ছাদে গিয়েছে।আক্কেল জ্ঞান নেই।অর্থ দ্রুত পায়ে ছাদে গেলো।গিয়েই পাশের ছাদের ওই মাতাল ছেলেদের দু একটা বাজে কথা কানে আসে।অর্থ রেগে আনমনা হয়ে থাকা প্রাহির দিকে তাকায়।দেখে প্রাহির ওড়না সরে গিয়েছে।অর্থ গর্জন করে উঠে পাশের ছেলেদের এমন জোড়ে ধমক দেয় ওরা হুমড়ি খেয়ে ছাদ থেকে দৌড়।প্রাহিও ভয় পেয়ে যায়।কাঁপা গলায় কিছু বলতে নিলেই অর্থ দৌড়ে এসে।শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে প্রাহির দু গাল শক্ত করে চেপে ধরে।থাপ্পড় দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় ও।ছেলেগুলো কতোটা বাজে ইংগিত করছিলো।ভাবলেই সবকিছু ভেঙে গুরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।প্রাহিকে ছেড়ে উলটো দিকে ঘুরে রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকে ও।এরপর যা হওয়ার হলো।
—-
প্রাহি অর্থর সামনে গিয়ে দাড়াতেই অর্থ হেঁচকা টানে প্রাহিকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। প্রাহির কোমড় দু হাতে জড়িয়ে ধরে প্রাহিকে নিজের বুকের মাজে ডুকিয়ে নেয়।এভাবে চেপে ধরায় প্রাহির দম বন্ধ হয়ে আসছে।তাও কোথাও যেন একটা ভালোলাগা কাজ করছে।অর্থ’র গরম নিঃশ্বাস ওর ঘাড়ে আছঁড়ে পরছে।অর্থ শীতল কন্ঠে বলে,
-” এতো রাতে ছাদে কেনো আসলে?”
প্রাহির আবার কান্না পেলো।ধরা গলায় বলে,
-” আ..আমার ঘুম আ..আসছিলো না।রু..রুমের ভীতর দম আটকে আ..আসছিলো।তাই একটু ছাদে এসেছিলাম।”
অর্থ লম্বা শ্বাস ফেলে নিজের রাগ সামলে নিলো।প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-” তুমি জানো না আমি কতোটা ডেস্পারেট তোমার জন্যে।কেনো এতোটা খামখেয়ালিভাবে চলাফেরা করো তুমি।কেন এতোটা অগোছালো।চারদিকে কেন নজর দেওনা।বাতাসে তোমার গায়ের ওড়না সরে যাওয়ায় পাশের ছাদের মাতাল ছেলেরা কতোটা বাজে ইংগিত দিচ্ছিলো জানো।সামনে থাকলে এক একটার কলিজা টেনে ছিরে ফেলতাম আমি।”
প্রাহি ভয়ে আতকে উঠলো।অর্থ মুখে বাঁকা হাসি বজায় রেখে বলে,
-” নো প্রোবলেম।এই অর্থ’র কলিজাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে ওরা।এর ফলাফল হবে ভয়ানক ওদের জন্যে।যাতে পরবর্তীতে আর কোন মেয়েকে নিয়ে এইভাবে বাজে কথা না বলে।”
প্রাহির ভয়ে চোখে পানি চলে এসেছে।ও বললো,
-” প্ল..প্লিজ এমন কিছু করিয়েন না।প্লিইইজ।”
অর্থ রাগি কন্ঠে বলে,
-” তোমাকে তা নিয়ে ভাবতে হবে না।বেশি বুজলে ছাদ থেকে উড়িয়ে মারবো।”
প্রাহি অর্থ’র বুক থেকে মাথা উঠিয়ে চোখ পিটপিট করে তাকালো।তারপর বলে,
-” আমাকে ফেলে দিবেন আপনি?”
অর্থ ভ্রু-কুচকে বললো,
-” হ্যা কোন সন্দেহ?ফেলে দেখাবো তোমাকে?”
অর্থ দুহাতে প্রাহিকে জড়িয়ে নিয়ে কোলে তুলতে নিলেই প্রাহি চেচিঁয়ে উঠে।অর্থ বাঁকা হাসলো।তারপর শক্ত কন্ঠে বলে,
-” লিসেন প্রাহি।তোমাকে নিয়ে আমি সামান্যতম হেরফের সহ্য করতে পারি না।ইউ নো না আ’ম ম্যাডলি লাভ ইউথ ইউ।তোমার নিজেরও তোমার প্রতি কোন অধিকার নেই।এই তুমিটা পুরো আমার।বুজেছো?তাই নিজের সামান্যতম অবহেলা করলে তা তোমার জন্যে ভয়ানক হবে।আজ আমি নিজের রাগটাকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রনে এনেছি।কিন্তু বারবার এটা পারবো না।তখন না জানি আমি রাগের মাথায় তোমাকে মেরেই ফেলবো।”
প্রাহি অর্থ’র শেষের কথাটা শুনে অর্থকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।লোকটা মারাত্মক ভয়ানক।এ জোন মুসিবতের পাল্লায় পরলো আল্লাহ্।যদি সত্যি সত্যি কোন এক সময় প্রাহিকে মেরে দেয় লোকটা রাগের মাথায় তখন কি হবে প্রাহির?প্রাহির এতো এতো স্বপ্ন সব ভেস্তে যাবে।প্রাহি তো ডাক্তার হতে চায়।তার স্বপ্ন তো ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।নাহ,এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।সে আর এমন কিছু করবে না যাতে অর্থ রেগে যায়।
অর্থ প্রাহিকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে প্রাহির চুলের ঘ্রান নিচ্ছে।বিলিভ ইট অর নট- কাউকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার রয়েছে অনেক উপকারিতা। এতে যেমন নিরাপদ অনুভূত হয়, একইসঙ্গে বাড়ে বিশ্বাস ও আস্থা। জড়িয়ে ধরলে বৃদ্ধি পায় মানসিক শান্তি; কমে অস্থিরতা। ভালোবাসার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হলো জড়িয়ে ধরা।
অর্থ চোখ বুজেই সুন্দর ও তার আকর্ষনীয় কন্ঠে একটা গানের দু লাইন গেয়ে উঠলো,
~♪`তোমার চোখে আকাশ আমার, চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা
ভেতর থেকে বলছে হৃদয় তুমি আমার প্রিয়তমা।~`♪।
প্রাহি অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে অর্থ’র মুখের দিকে।এই লোকটা এতো চমৎকার গান গায় । অথচ কে বলবে এই গম্ভীর লোকটার গানের গলা এতো সুন্দর।প্রাহি বলে,
-” এতো সুন্দর গান করেন আপনি?”
অর্থ হাসলো।প্রাহি আবারও বলে,
-” আবার একটু গাইবেন?”
অর্থ মুচঁকি হেসে বলে,
-” আজ আর না।আবার অন্য একদিন গেয়ে শোনাবো।”
প্রাহি মুখ ফুলালো।তা দেখে অর্থ হাসলো।প্রাহিকে চমকে দিয়ে অর্থ প্রাহির কামিজের উপর দিয়েই ওর পেটে আলতো করে হাত রাখলো।তারপর ধীর কন্ঠে বলে,
-” পেটে ব্যাথা আছে আর?”
প্রাহি কি বলবে?অর্থ’র ছোঁয়ায় ওর ভীতর শুদ্ধ কাঁপছে।প্রাহি মাথা দুলিয়ে না জানালো।অর্থ আবার বলে,
-” খেয়েছিলে রাতে?”
প্রাহি আবার মাথা দুলালো।অর্থ দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো।তারপর হুট করে প্রাহিকে কোলে তুলে নিলো।বললো,
-” অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাবে চলো।”
প্রাহিও আর কিছু বললো না।অর্থ’র বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে রইলো।প্রিয় মানুষটার হৃদস্পন্দন গুনতে লাগলো।অদ্ভুত সুন্দর ধ্বনি এটা। শুনতেই মন চায় শুধু।

#চলবে_______

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জাবা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here