প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (বোনাস পার্ট)

0
1913

প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (বোনাস পার্ট)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি

নিস্তব্ধ পরিবেশ।বারান্দার গ্রিলের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে চাঁদের আলোর ছড়াছড়ি।বাতাসে হাসহেনা ফুলের সুভাষে মাখামাখি।ঘরের ফেইরিলাইট্স গুলো আর সাদা পর্দা গুলো যেন সব কিছুর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।চারদিকে কেমন যেন একটা প্রেম প্রেম ভাব।
চাদনি রাতের মােহনীয় রূপ-সৌন্দর্য প্রতিটি মানুষের মনেই রং ধরায়। সুখ-শয্যায় ঘুম আসে না, অথচ ঘুম না আসার কোনাে গ্লানিও অনুভূত হয় না। কেমন যেন বুকের তলে জমা হয়, অথচ সেই ভাব প্রকাশের ভাষা নেই । মূলত জ্যোৎস্নার মায়াবী রূপ মানুষের মন দেয়, রাঙিয়ে তােলে মানুষকে। সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ মাতাল হয়ে পড়ে এমন জ্যোৎস্নায়। কিন্তু আজ প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখার মন কারো নেই।
দুটি মানুষ শুধু তাকিয়ে দেখছে একে অপরকে।একজন দেখছে চোখে প্রেম,ভালোবাসা,আকাঙ্খা, না পাওয়ার বেদনা নিয়ে। আরেকজন কি কারনে দেখছে সেটা সে নিজেও উপলব্ধি করতে পারছে না।মনের মাজে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত অনুভুতিগুলো নিয়ে সে এলোমেলো এক মানবী।যে নিজেকেই নিজে বুজতে পারে না।তবুও কিসের যেন একটা টানে সে কাতর চাহনী নিয়ে তাকিয়ে আছে বিপরীত মানুষটার দিকে।

অর্থ তাকিয়ে আছে প্রিয়তমার মুখশ্রীর দিকে।এলোমেলো চুল বাতাসের কারনে মৃদ্যু দুলছে,হরণী চোখজোড়া দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।কি যে নেশা সেই চাহনী।অর্থ প্রাহির চোখের একসমুদ্র মায়া খুজে পায় যেই সমুদ্র সে হাজার বার ডুবে যেতে রাজি।ফর্সা গাল গুলো চাঁদের আলোয় আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। অর্থ’র মন চায় গালগুলো একটু টেনে দিতে।গোলাপি ঠোঁট জোড়া দেখলেই অর্থ’র সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।বুকের ভীতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।মলিন হয়ে আছে প্রাহির মুখশ্রীটা তবুও সেকি মায়া এই চেহারাটায়।

অর্থ একপা দু’পা করে এগিয়ে যায় প্রাহির দিকে। তবুও প্রাহি ঠায় দাড়িয়ে আছে।আজ কেন যেন অর্থকে একটুও ভয় পাচ্ছে না প্রাহি।কেন পাচ্ছে না?অন্যসব সময় হলে তো ভয়ে ওর হুশজ্ঞান হারিয়ে যায়।তবে আজ কেন অর্থ’র উপর থেকে নিজের চোখজোড়া সরাতে পারছে না ও?লোকটাকে পাগলাটে দেখাচ্ছে,চোখে মুখে কিছু পাওয়ার আকুলতা ভেসে উঠছে,উষ্কখুষ্ক চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পরে আছে এবং হাওয়ায় দুলছে,লোকটার এই গভীর চোখজোড়া যেন প্রাহিকে চিৎকার করে বলছে,’ শুনছো?আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।তুমি কি শুনবে মেয়ে?’
কিন্তু কি বলতে চায়? কিসের এতো আকুলতা ওই চোখে।লোকটার সব কিছু আজ হঠাৎ করেই প্রাহির কাছে অনেক সুন্দর লাগছে।লোকটার চুল,কপাল,ভ্রু,গাল,চোখ,নাক,ঠোঁট সব,সব কিছু ভীষনরকম সুন্দর দেখাচ্ছে এটা প্রাহির কাছে মনে হচ্ছে।লোকটার অবাধ্য চুলগুলো একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কেন এমন পাগলাটে অনুভুতি হচ্ছে ওর মনে?কেন?কেন?কেন?এই কেন’র উত্তর প্রাহির জানা নেই।আর ও জানতেও চায়না আজ কিছু।শুধু অর্থকে মনভরে দেখতে চায় ও।

প্রাহির এইসব ভাবনার মাজে কখন যে অর্থ ওর এতো কাছাকাছি চলে এসেছে টেরই পায়নি।লোকটার উষ্ম নিশ্বাসগুলো প্রাহির মুখে আছড়ে পরায় হালকা কেঁপে উঠে ও।সাথে সাথে চোখজোড়া নামিয়ে ফেলে প্রাহি।লোকটা ভয়ানক ভাবে তাকিয়ে থাকে প্রাহির দিকে।কেন এইভাবে তাকায়?বুকটা দুরু দুরু করছে প্রাহির।এটা কেমন অনুভুতি?

-” ভালোবাসার অনুভুতি!”

হঠাৎ অর্থ’র ফিসফিস করা বলা কথাটা ওর আত্মা শুদ্ধ কাপিয়ে তুললো।লোকটা ওর মনের কথা জানলো কিভাবে?কিভাবে বুজতে পারলো? কেঁপে উঠে দু কদম পিছিয়ে যেতে নিলেই অর্থ প্রাহির বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর আলতো করে একহাত প্রাহির কোমড়ে আরেক হাত প্রাহির গালে ছোঁয়াতেই চোখ বন্ধ করে মাথাটা একপাশে ঘুরিয়ে নেয় প্রাহি।অজানা অনুভুতি ওর হৃদয় চাপা পরে যাচ্ছে ক্রমশ।
অর্থ প্রাহির দিকে তাকিয়ে থেকেই শীতল কন্ঠে বলে উঠে,

-” টেল মি প্রাহি ডিড ইউ মিস্ড মি?”

প্রশ্নটা শুনে প্রাহি চোখজোড়া আরো জোড়ে খিচে বন্ধ করে নেয়।হঠাৎ চমকে উঠে প্রাহি।কারন অর্থ ওকে কোলে তুলে নিয়েছে।প্রাহি হকচকিয়ে গিয়ে দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।প্রাহি কাঁপা কন্ঠে বলে,

-” কি ক..করছেন আ…আপনি?”

অর্থ জবাব দিলো।প্রাহিকে কোলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।তারপর আলতো হাতে প্রাহির চুলগুলো একপাশে সরিয়ে দিলো।অর্থ’র শীতল হাতের স্পর্শে প্রাহির কেপে উঠে অর্থ’র ঘাড় খামছে ধরে।ওর সারা শরীর মৃদ্যু কাঁপছে।অর্থ আস্তে করে নিজের মাথাটা প্রাহির কাধে রাখলো।এতে যেন ভুমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠলো প্রাহির।
অর্থ বললো,

-” প্রাহি?তোমার জন্যে আমি পুরো পাগল হয়ে গিয়েছি।এই আমিটা নাহ পুরো অগোছালো হয়ে গিয়েছি।জানো, এই একমাস আমি ঠিকমতো ঘুনোতে পারিনি,খেতে পারিনি,কাজে মন বসাতে পারিনি।তোমার জন্যে দিনরাত একটা অসুস্থ পাখির ছানার মতো ছটফট করেছি।অথচ আমি তুমি আসার আগেও সিংহের ন্যায় বুক ফুলিয়ে চলতাম।বলোতো কেন আমি এমন হয়ে গেলাম?আমার আগের আমিটা কোথাও হারিয়ে গেছে জানো প্রাহি?”

প্রাহি বাচ্চাদের মতো করে ডানেবামে মাথা নাড়ালো।অর্থ বললো,

-” এই আমি পুরোটাই তোমার মাজে হারিয়ে গিয়েছে প্রাহি।আমি আর আমার নিজের মাজে নেই।এই আমিটা সম্পূর্ণ প্রাহি নামক মেয়েটার হাতে বন্ধি হয়ে গিয়েছে।কেন হয়েছে জানো?”

প্রাহি আবার মাথা নাড়ালো।অর্থ হালকা হাসলো।তারপর প্রাহির কানে হালকা স্বরে ফিসফিসিয়ে বলে,

-” কারন এই আমিটা তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে প্রাহি।আই লাভ ইউ।”

ব্যস প্রাহি কি হলো কে জানে?সে এই বাক্যটুকু শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।দুহাতে অর্থকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হু্ঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।অর্থ’ও প্রাহিকে নিজের সাথে আরো প্রগাঢ়ভাবে মিশিয়ে নিলো।যেন ছেড়ে দিলেই প্রাহি কোথাও হারিয়ে যাবে।

#চলবে______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here