প্রেম_এসেছে_গোপনে #পর্ব_০৩ #অনন্যা_অসমি

0
268

#প্রেম_এসেছে_গোপনে
#পর্ব_০৩
#অনন্যা_অসমি

লজ্জা, অস্বস্তি, ঝাল সব মিলিয়ে আরশিয়ার নাকের পানি, চোখের পানি মিলেমিশে এক করুণ অবস্থা। ইচ্ছের বিরুদ্ধে খেতে বসেছিলো সে কিন্তু সেখানেও বাঁধলো বিপত্তি।

” আন্টি ওকে মধুটা দিন, এটা খেলে একটু আরাম লাগবে।”

ওয়াসিমের হাত থেকে মধুর বোতলটা নিয়ে আরশিয়াকে খাইয়ে দিলেন সুমনা আহমেদ। জুবা টিস্যু এগিয়ে দিলে তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো আরশিয়া।

” সুমনা তোর মেয়ে যে ঝাল খেতে পারেনা আমাদের বলবিনা। তাহলে আরেকটু ঝাল কম দেওয়া হত।” জায়রার মা বলল।

” হুম দেখো তো মেয়েটার ঝালে কি অবস্থা হয়েছে। চোখ-মুখ একেবারে লাল হয়ে গিয়েছে। নাও মা আরেকটু মধু মুখে দাও।” জায়রার বড় মামী আরশিয়ার মাথা হাত রেখে বললেন।

” তোমরা যে এতোটা ঝাল খাও তা তো আমি আগে জানতাম না। ভেবেছিলাম দু’দিন তো খেয়েছে। এতটুকু ঝাল হয়তো সে মানিয়ে নেবে কিন্তু এতো বেশি বেশি হয়ে যাবে বুঝতে পারলে তো বলেই দিতাম।”

” হয়েছে এখন কথা কাটাকাটি করে লাভ নেই। মামুনী তুমি বলতে পারতে আমাদের, আমরা অন্যকিছুর ব্যবস্থা করে দিতাম। ইলমা যা তো, তোর ভাবীর সাথে গিয়ে কিছু একটা রান্না করে নিয়ে আয়। মেয়েটা কি সারারাত না খেয়ে থাকবে নাকি?” জায়রার বড় মামা ইকবাল সাহেব বললেন।

” না মামা আমি ঠিক আছি। আমি আর কিছু খাবোনা, আমার খিদে মিটে গিয়েছে।”

” চুপ করো তুমি। আমাদের থেকে বেশি বুঝ না? এই সুমনা তুই তোর মেয়ের কাছে থাক। ভাবী চলো দেখি কি রান্না করা যায়।”

সুমনা আহমেদ মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন, মুখে স্পষ্ট চিন্তার চাপ।

” মাথা ঘুরাচ্ছে?”

” না মা আমি ঠিক আছি। না বুঝে মরিচও খেয়ে ফেলেছি বলে বেশি ঝাল লেগেছে।”

” তোকে ওদের সাথে বসতে দেওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে। আমার কপালটাই খা’রা’প। এতো বড় মেয়ে অন্ধের মতো খাওয়ার সময় মরিচ খেয়ে বসে আছে। কবে বড় হবে তুমি? নিজের জন্য এখন কথা না বললে কবে বলবে? আমরা যেদিন থাকবোনা সেদিন কি করবে শুনি? আমার ছোট ছেলেটাও তোমার থেকে বেশি বুঝদার। এবার তো একটু বড় হও।”

মায়ের মিষ্টি ধমক শুনে আরশিয়া আলতো হেসে মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু সুমনা আহমেদের চিন্তার অন্ত নেই। মেয়েটা যে বড্ড সহজ সরল আর অর্ন্তমুখী। বুক ফাঁটবে তবুও যেন তার মুখ ফাঁটেনা।

আচমকা ক্যামেরার শব্দে আরশিয়া পাশে থাকিয়ে দেখলো মুখে চওড়া একটা হাসি ঝুলিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে ইনান।

” দেখি দেখি, এইতো। বাহ্, এটা তো আরো সুন্দর! ঝাল লাগার ফলে আর যাইহোক দামী নূর কহিনূর আপুর আরো একটা রূপের দেখা মিলে গেলো। আপনার ওই লাল লাল নাকটা এতোটা সুন্দর, পুরোই চেরি টমেটোর মতো।” শেষের কথাটা আরশিয়ার কানের সামনে এসে নিচুস্বরে বলল ইনান। আরশিয়া চোখ বড় বড় করে একবার ইনানের দিকে তো একবার তার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে। তার মুখভাব দেখে ইনান তো হেঁসে লুটেপুটি খাওয়ার অবস্থা। আরশিয়াকে আরো বিভ্রান্ত করার জন্য সে চোখ মেরে হাসতে হাসতে সরে গেলো।

” কি সাংঘাতিক ছেলেরে বাবা!”

ইনান সম্পর্কে জায়রার মামাতো ভাই, ইকবাল সাহেবের বড় ছেলে সে। বয়সে জায়রা, জুবা থেকে বড় হলেও আরশিয়া থেকে বেশ ছোটই সে। কিন্তু মাঝে মাঝে আরশিয়ার মনে হয় ইনানই বুঝি তার বড়।

খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই আবারো গল্পে মেতে উঠলো। ছেলেরা টেবিল চেয়ার সরিয়ে রাখছে, বাড়ির বউ-মেয়েরা রান্নাঘরের দোরে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আরহাম তার বয়সী বাচ্চাদের সাথে দৌড়ঝাঁপ করতে ব্যস্থ।

এই কয়েকদিনে তোলা ছবিগুলো ইনান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর বিশ্লেষণ করছে। বাকিরা সবাই মৌমাছির মতো তাকে ঘিরে ধরেছে।

” কিরে বিচ্চুর দল, এতো মনোযোগ দিয়ে কোন রতন দেখা হচ্ছে শুনি? আমিও একটু দেখি তোমরা কি এমন দেখছো।”

মূহুর্তেই ফোন বদল হয়ে ওয়াসিমের হাতে চলে এলো। দু-তিনটে ছবি দেখার পর হঠাৎ তার আঙ্গুল থেমে গেল। দু-তিনবার পলক ফেলে সে স্ক্রিনে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখতে লাগল।

” এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছো ওয়াসিম ভাই?” জুবা প্রশ্ন করল।

” তুমি তাড়াতাড়ি দেখা শেষ করো, আমাদের এখনো অনেক ছবি দেখা বাকি।”

” দেখি এদিকে দাও আমার ফোন। এতো কি দেখছো তুমি আমিও একটু দেখি।”

ওয়াসিমের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো ইনান। স্ক্রিনের দিকে ভ্রু-কুচতে ওয়াসিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” তুমি এতো মনোযোগ দিয়ে মাহার ছবি দেখছিলে?”

” মাহা? কিন্তু আমি তো……” বাকি কথা না বলে সে গলা এগিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে ছবিটা আরেকবার দেখে নিলো। জায়রার বয়সী একটা মেয়ের ছবি ঝলঝল করছে ইনানের মোবাইলে। ওয়াসিম গলা ঝেঁড়ে বলল,

” এমনিতেই দেখছিলাম। অনেকদিন দেখিনি তো, তাই হুট করে চিনতে পারিনি। ছবিটা দেখে মনে করার চেষ্টা করছিলাম এটা কে।”

” তাই নাকি ওয়াসিম ভাই? নাকি ঘটনা অন্য কিছু? আমি যা ভাবছি তা হলে কিন্তু বলতে পারো। পরের বছরই তো আমাদের স্কুল জীবন শেষ, তখন না হয় তোমাদের একটা ব্যবস্থা আমি করে দেবো। সাথে তো জুবা আপুও আছে। কি বলো আপু?”

ওয়াসিম বিরক্তি নিয়ে জায়রার মাথায় হালকা বারি মারল।

” চুপ কর বজ্জাত মেয়ে। বেশি পেঁকে গিয়েছিস না? খালাকে বলতে হবে মেয়ের মন বেশি উড়ু উড়ু করছে। আমার আগে তোকে বিদেয় করা দরকার।”

” হুম যাও যাও। দেখি কিভাবে মাকে বলতে পারো। আমিও তোমার কথা বলে দেবো।”

” কি বলবি? ওটা তো আমার ফোনও ছিলোনা, এটা ছিলো ইনানের। আর ছবিও ছিলো তার ফোনে, আমি তো শুধু দেখছিলাম। এমনও তো হতে পারে ইনানের মাঝেই কোন ঘাপলা আছে।”

ওয়াসিমের কথা শুনে ইনান হকচকিয়ে গেলো।

” ভাই তুমি এসব কি বলছো? কেন আমার নামে এরকম ঝুটা কথা বলছো? এরকম মিথ্যাচার করলে আমি সারাজীবন সিঙ্গেলই থেকে যাবো।”

” হয়েছে বাবা তোমরা আর ঝগড়া করোনা। জায়রা তুমি জানো কাল মাহারা আসছে।”

” কি বলো আপু! তাহলে তো বেশ ভালো হবে। আমরা সবাই মিলে অনেক মজা করবো। সাথে কহিনূর আপুকেও নেবো। আপু অনেক বেশি ইন্ট্রোভার্ট, এখনো সহজ হতে পারেনি।”

” ওসব রাখ। এটা বল মাহা এখানে কেন আসছে?”

” ইনান ভাই এই গ্রামে একা তুমি থাকো না। এটা মাহারও নানাবাড়ি। তো সে বুঝি এখন তোমার জন্য এখানে আসবে না।”

” সে আসুক, ঘুরুক তাতে আমার কিছু যাই আসেনা। তবে ও যদি আমাদের সাথে থাকে তাহলে আমি তোদের সাথে নেই।” বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো ইনান।

” কেন কেন? মাহা কি তোমাকে কা’মড়েছে নাকি?”

” আ…. জায়রা, ইনান তোরা কি শুরু করেছিস বলতো? এখন যা ভেতরে যা, অনেক রাত হয়েছে। ঠান্ডা বেশি পড়ছে। আর বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে সর্দিকাশি শুরু করে যাবে। যা যা তাড়াতাড়ি কম্বলের ভিতরে যা।”

জায়রা, জুবা সহ সব বাচ্চাকাচ্চাদের ওয়াসিম ভেতরে পাঠিয়ে দিলো। সবাই আস্তে আস্তে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে লাগলো।
.
.

ড্রইংরুমের মাটিতে বড় করে বিছানা করে সব ছেলেরা একসাথে শুয়েছে। মেয়েদের জন্য সব রুমগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ওয়াসিম শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছিলো। হঠাৎ কেউ কানের সামনে ফিসফিস করে বলল,

” ওয়াসিম ভাই তুমি কি সত্যিই মাহার ছবি দেখছিলে নাকি অন্য কারোর?”

আচমকা কণ্ঠস্বরে ওয়াসিম প্রথমে ঘাবড়ে গেলো। ঘাড় হালকা ঘুরিয়ে দেখলো ইনান তার দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে। তার এতো আগ্রহ দেখে ওয়াসিম বাঁকা হেসে জবাব দিলো,

” তোমার গ্যালারির একহাজার সাতশ আট নম্বর ছবিটা দেখছিলাম। আরেকটা সত্যি কথা বলব?”

ইনান বোকার মতো বলল, ” কি?”

” ছবিটা অনেক বেশি মন মুগ্ধকর ছিলো। ভাগ্যিস তোমার ফোনটা নিয়েছিলাম না হলে তো দেখাই হতোনা।”

ইনানের চিন্তামাখা মুখশ্রী দেখে ওয়াসিম নিঃশব্দে হেসে আবারো ফোন দেখতে লাগলো। এদিকে বোকা ইনান তোর গ্যালারীতে ছবি গুনতে বসে পড়ল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here