প্রেম_এসেছে_গোপনে #পর্ব_০৪ #অনন্যা_অসমি

0
311

#প্রেম_এসেছে_গোপনে
#পর্ব_০৪
#অনন্যা_অসমি

বাড়ির পরিবেশ অন্যদিনের তুলনায় আজ বেশি ব্যস্ততাপূর্ণ। সুমনা আহমেদের মামার ইচ্ছে উনি গ্রামবাসীকে খাওয়াবেন। ওনার কথা, আজ বাদে কাল ম’রে গেলে ছেলে-মেয়ের বি’পদে আপদে এই মানুষগুলোই তো এগিয়ে আসবে।

আরশিয়া একা একা ঘুরে ঘুরে কাজকর্মগুলো দেখছিলো। দোতালা বাড়িটার সামনে ছোট একটা উঁচু মাঠ। মাঠের একপাশে রান্নার কাজ চলছে, বাকি জায়গাটুকুতে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

” এই পিচ্চি শোন।”

অপরিচিত কণ্ঠস্বরে আরশিয়া প্রথমে বুঝতে পারেনি যে তাকে বলা হয়েছে, সে পেছনে না ফিরে এগিয়ে যেতে নিলে পুনরায় আবারো সেই কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো।

” এই পিচ্চি শুনতে পাওনি?”

” আমাকে বলছেন?”

” আশেপাশে তুমি ছাড়া আর কোন বাচ্চাকাচ্চাকে দেখছো?” কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল যুবকটি।

অপরিচিত যুবকের কাছ থেকে প্রথম দেখায় একধরণের ব্যবহারে আরশিয়া কিছুটা বিব্রত হল।

” দুঃখিত আমি বুঝতে পারিনি। আপনি কি কিছু বলবেন?”

” তোমাকে দেখে তো এই গ্রামের মনে হচ্ছে না। আগে তো কখনো দেখিনি। এভাবে এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছো কেন? দাওয়াত খেতে এসেছো, টেবিলে গিয়ে বসে থাকবে। তা না করে তুমি এইদিকে ঘুরঘুর করছো কেন? নাকি অন্যকোন মতলব আছে তোমার?”

ছেলেটা যে ভালো কিছু মিন করে কথাটা বলেনি তা বুঝতে পেরে আরশিয়া কিছুটা রাগ হল। তবে সে উত্তেজিত হলোনা বরং শান্ত কন্ঠে বলল,

” দেখুন ভাইয়া আমি আপনাকে চিনিনা, আমি জানিনা আপনি কে। আপনিও আমাকে চেনেন না তাই না জেনে কারো সম্পর্কে কিছু বলা ঠিক নয়। আমি এমনিতেই হাঁটাহাঁটি করছিলাম,কোন খারাপ উদ্দেশ্য আমার মাঝে নেই। তাও কোন সমস্যা করে থাকলে আমি দুঃখিত,আমি এখুনি চলে যাচ্ছি।”

কথা শেষ করে এক মূহুর্তে দাঁড়ালোনা আরশিয়া, দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে গেলো।

ছেলেটা মুখে বিরক্তিভাব নিয়ে বলল,

” দু’দিনের পিচ্চির কি তেজ! ভুল করবে আবার কিছু বলাও যাবেনা। কার না কার বাচ্চা, কিছু হয়ে গেলে তখন আমাদের উপর দোষ এসে পড়বে।”

” কি মাহিম ভাই বিড়বিড় করে কি বলছো?”

” আরে ইনান তুমি। দেখোনা এক পিচ্চি এদিকে হাঁটাহাঁটি করছিলো বলে সরে যেতে বলেছি আর সে আমাকে বড় বড় ভাষণ দিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেলো।”

” আবার কোন পিচ্চি তোমাকে কথা শোনালো? আমাদের আন্ডাবাচ্চা গুলো নাকি?”

” না এই গ্রামের বা তোমাদের কেউ না। আজকেই প্রথম দেখলাম।”

ইনান কিছু একটা ভেবে বলল,

” মেয়েটাকি বাচ্চা বাচ্চা দেখতে? মাথায় কি একটা ঝুঁটি করা ছিলো?”

” হুম তুমি চেনো নাকি?”

ইনান কপাল চাপড়ে হাসতে হাসতে বলল,

” ওনি আমাদের কাজিন, সম্পর্কের আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো বোন। এবারই প্রথম এসেছে বলে তুমি চিনতে পারোনি। আর উনি পিচ্চি বাচ্চা না বয়সে আমার থেকেও বড়,অর্নাস তৃতীয় বর্ষে পড়ে।”

” অর্নাস!” না চাইতেও মাহিমের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। যা দেখে ইনানের হাসির মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গেল।
.
.

বাড়ির পেছনে থাকা পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে আরশিয়া। পুকুরটা প্রায় পানিশূন্য, পানি একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সেই স্বল্প পানির দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশিয়া।

” মন খারাপ?”

ঘাড় সামান্য বাকিয়ে আরশিয়া মানুষটাকে একবার দেখে নিলো। না বোধক মাথা নাড়িয়ে পুনরায় পানি দেখায় মনোযোগ দিলো।

ওয়াসিম একটু নড়েচড়ে আবারো বলল,

” কিন্তু তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে খুব মন খারাপ। কোন সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো, দ্বিধা করার দরকার নেই।”

” না আমি ঠিক আছি। কম কথা বলি তাই হতো আপনার এরকমটা মনে হচ্ছে।”

” বেশ তাহলে তোমার কথায় মেনে নিলাম। দুপুরে খেতে কোন অসুবিধে হয়নি তো?”

” না আজ কোন অসুুবিধে হয়নি। কাল একটু অন্যমনস্ক থাকার কারণে মরিচও খেয়ে ফেলেছিলাম। তাই ঝালটা একটু বেশিই লেগেছে। তবে আপনার আনা মধু খাওয়ার পর অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছিলাম।”

” তুমি সেটাও খেয়াল করেছিলে নাকি?”

প্রতিউত্তরে আরশিয়া কিছু বললোনা, শুধু হালকা হাসলো।

” যদি কিছু মনে না করেন আপনার ব্যপারে কিছু জানতো পারি? আসলে আমি ঠিক আপনার সম্পর্কের অবগত নই।” কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই বলল সে।

” অবশ্যই। হ্যালো মিস আরশিয়া, আমি ওয়াসিম রওনক। বর্তমানে চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে মার্স্টাস করছি। এটা আমার দাদুবাড়ি। বর্তমানে আমি একশো এক পার্সেন্ট সিঙ্গেল আছি। আর কি কিছু জানতে চান মিস আরশিয়া?” কিছুটা নাটকিয়ভাবে বলল ওয়াসিম। তার কথা বলার ধরণ দেখে আরশিয়া হেসে ফেলল। যা দেখে ওয়াসিম লাজুক হেসে এলোমেলো চুলগুলো আরো এলোমেলো করে ফেলল।

” ওয়াসিম ভাই।”

তৃতীয় ব্যক্তির কথা শুনে দু’জনে কথা বলা বন্ধ করে পেছনে ফিরে তাকালো। জায়রার সমবয়সী একটা মেয়ে হাসিমাখা মুখে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা মূহুর্তেই দূরত্ব গুছিয়ে ওয়াসিমের কাছাকাছি এসে দাঁড়াল।

” কেমন আছো ওয়াসিম ভাই? তুমি পুকুর পাড়ে আর আমি সেই কখন থেকে তোমাকে খুঁজে চলেছি। আমরা কোন সকালে এলাম, এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল আর আমি তোমার দেখা এখন পেলাম।” মুখ ভার করে বলল মেয়েটি।

” আসলে আমি কাজে ব্যস্থ ছিলাম মাহা। এতোগুলো মানুষের খাবারের দায়িত্ব, সবাই হাতে হাতে কাজ না করলে সামলানো তো মুশকিল। তুমি কেন খুঁজছিলে? জরুরি কিছু নাকি?”

” বাহ্ রে আমি বুঝি তোমাকে এমনি খুঁজতে পারিনা?”

” না তা নয়, তবে প্রয়োজন ছাড়া তো কেউ কারো খোঁজ তেমন একটা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনা। তুমি কি বলো আরশিয়া?”

ওয়াসিম যে হুট করে তাকে কিছু বলে বসবে তা আরশিয়া বুঝতে পারেনি। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কোনবতে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

ওয়াসিমের পাশে অপরিচিত একটা মেয়েকে দেখে মাহার হাসি হাসি ভাবটা উবে গেলো।

” এটা কে ওয়াসিম ভাই? তোমার পরিচিত কেউ? তোমার সাথে এসেছে? তোমার বন্ধু নাকি অন্যকিছু?”

ওয়াসিম আড়চোখে আরশিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” পরিচিত তো বটে তবে এখনো বন্ধু হয়ে উঠতে পারিনি। তবে কেউ চাইলে বন্ধু হতে পারি কিংবা তারও বেশি কিছু।”

আরশিয়া বিপরীতে কিছু বলল না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। ওয়াসিমের হেয়ালি মেশানো কথা মাহার মোটেও পছন্দ হল না। সে অধৈর্যমাখা কন্ঠে আবারো জিজ্ঞেস করল,

” উফ ওয়াসিম ভাই এতো হেয়ালি করো না। সোজাসুজি বল উনি কে? তোমার কি হয়?”

” ও হচ্ছে আরশিয়া, দাদুর একমাত্র ভাগ্নির মেয়ে। আমাদের দূরসম্পর্কের কাজিন। প্রথমবার এসেছে তাই তুমি চিনতে পারছোনা। আরশিয়া এটা হচ্ছে মাহা। সংক্ষেপে যদি বলি এটা হচ্ছে জায়রার ফ্রেন্ড। আচ্ছা তোমরা থাকো আমি এবার গেলাম, দেখি কাজ কতদূর এগিয়েছে। আরশিয়া তুমি চাইলে থাকতে পারো, তবে অন্ধকার হওয়ার আগে সরে এসো। না হলে মশার কামড় খেতে হবে।”

আরশিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই ওয়াসিম চলে গেলো। তার সাথে কথা না বলে চলে যাওয়াতে মাহা মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইল।

গলা ঝেঁড়ে আরশিয়া জানতে চাইলো,

” তুমি কি দাঁড়াবে নাকি চলে যাবে? গেলে চল, একসাথে যায়।”

আরশিয়ার কথার উওর না দিয়ে মাহা আগে আগে হাঁটতে লাগলো।

” কিরে মাহা কোথায় চলে গিয়েছিলি? মা তোকে খুঁজছে তো। যা তাড়াতাড়ি, না হলে পিঠের উপর পরতে দেরি নেই।”

” কি বলো দাভাই! আগে বলবেনা। আজ কপালে দুঃখ আছে মনে হয়।” কথাটা বলতে বলতেই মায়ের খোঁজে ছুট লাগালো মাহা। মাহিমের পাশ কেটে যেতে গেলে সে দ্রুত আরশিয়ার পথ আটকে ফেলল।

” আব… সরি আসলে আমি তখন বুঝতে পারিনি তুমি এবাড়ির আত্নীয়। আমি ভেবেছিলাম হয়তো বাইরের কেউ। কোন ঝামেলা হবে সেটা ভেবে আমি তোমাকে সরে যেতে বলেছিলাম। তোমার সম্পর্কে আগে থেকে জানলে আমি এরকম কিছুই বলতাম না। তুমি প্লিজ রাগ করো না।”

” ঠিক আছে ভাইয়া, সমস্যা নেই। আমি কিছু মন করিনি।” কথোপকথন আর না বাড়িয়ে আরশিয়া মাহিমকে পাশ কাটিয়ে নিজের মায়ের কাছে চলে গেলো। আরশিয়ার এতোটা অনাগ্রহ মাহিমের কিছুটা গায়ে লাগল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here