প্রেম_এসেছে_গোপনে #পর্ব_০৭ #অনন্যা_অসমি

0
265

#প্রেম_এসেছে_গোপনে
#পর্ব_০৭
#অনন্যা_অসমি

বৃষ্টিতে ভেজা ওয়াসিমকে দেখে আরশিয়া নিজের অজান্তে থমকে গেল। টপটপ করে পানি পড়ছে তার চুল থেকে। মাথাটা এপাশ-ওপাশ নাড়িয়ে পানি কমানোর বৃথা চেষ্টা করছে সে। দু’বাড়ি থেকে প্রায় ৫/৬ টা ছাতা নিয়ে এসেছে মাহিম আর ওয়াসিম। মাহিম তার সাথে মাহাকে নিয়ে গেল। মাহা কিছুটা জেদ ধরেছিলো সে জায়রার সাথে যাবে তবে মাহিমের সামনে ঠিকতে পারেনি। জায়রা, জুবাকে একটা ছাতা আর ইনানকে দেওয়া হলো একটা ছাতা।

” এই নাও ছাতা, তুমি এটা নিয়ে দ্রুত চলে যাও।”

” তাহলে আরহাম?”

” ওকে আমি কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি। গ্রামের রাস্তা, বুঝতেই পারছো বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুরো পথ কাঁদা কাঁদা হয়ে গিয়েছে। আরহাম হেঁটে যেতে পারবেনা। তোমারও একহাতে ছাতা ধরে ওকে নিয়ে যেতে কষ্ট হবে। তাই তুমি চলে যাও, ওকে আমি নিয়ে আসছি।”

আরশিয়া গেল না, ভাবতে লাগল ওয়াসিমই বা কি করে ছাতা আর আরহামকে একসাথে ধরবে? কিছুক্ষণ ভেবে সে বলল,

” দেখি বড় ছাতাটা আমাকে দিন। আপনি আরহামকে কোলে নিন, ছাতা আমি ধরছি।”

” আরে লাগবেনা, তুমি চলে যাও।”

আরশিয়া কোন কথা শুনলোনা। ওয়াসিমের হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে চোখের ইশারায় তাকে আরহামকে কোলে নিতে বলল।

বাকিরা বাড়িতে ফিরে এসেছে আগেই। তারা ভেতরে না গিয়ে ভেজা কাপড়েই উঠোনে দাঁড়িয়ে ওয়াসিম আর আরশিয়ার অপেক্ষা করতে লাগল। ভেতরে সুমনা আহমেদ চিন্তায় শেষ। বারবার এসে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে ওরা এসে কিনা। তিনি নিজেই খুঁজতে বেরিয়ে পড়তেন কিন্তু ফারুক সাহেবের কথায় বাড়িতেই অপেক্ষা করছেন।

ওয়াসিমকে দেখতেই জায়রা চিৎকার করে বলল,

” আন্টি ওরা চলে এসেছে।”

সুমনা আহমেদ দৌড়ে এলেন, তাড়াতাড়ি আরহামকে ওয়াসিমের কোল থেকে নামিয়ে নিলেন। জায়রার মা ইলমা তোয়ালে এগিয়ে দিলো তাদের দিকে।

” ওকে কোলে করে আনতে কেন গেলে বাবা? নিজেই আসতে পারতো। শুধু শুধু কষ্ট করলে।”

” না আন্টি সমস্যা নেই। রাস্তায় অনেক কাঁদা, সাথে পানিও জমতে শুরু করে। এরকম রাস্তায় আরহাম হাঁটতে পারতোনা। আরশিয়ারও তাকে সামলানো কষ্ট হতো, তাই কোলে করে নিয়ে এলাম।”

” আচ্ছা ভালো কাজ করেছিস তুই। এখন যা সবাই একেবারে গোসল করে ফেল। আরশিয়া চাইলে তুমিও করে ফেলতে পারো।” বললেন ইকবাল সাহেবের স্ত্রী। আরশিয়া মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে গেলো।

ব্যাগ থেকে প্যান্ট-শার্ট বের করে যেই ওয়াসিম তা বন্ধ করতে যাবে তখনই কোথা থেকে ইনান এসে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

” এই এই উঠ বিছানা থেকে। মাছ ধরা জামা-কাপড়ে, ময়লা শরীরে বিছানায় শুয়েছিস কেন? মামীরা এখানে শোবে কিভাবে?”

” উফ…. ওয়াসিম ভাই। আমি কি তোমার মতো নাকি? আমি সবার আগে গোসল করে ফেলেছি। মেয়েগুলো যা লেট লতিফা, অপেক্ষা করলে আজ আর আমার গোসল করতে হতোনা। তাই বুদ্ধি করে ওরা যখন জামা আনতে গেলো তখনই বাথরুমে ঢুকে পড়েছিলাম। এবার তুমি ঘুরো। বাথরুম সবগুলো মেয়েদের আর বাবা-চাচদের দখলে।”

ইনানের কথাশুনে ওয়াসিম হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়ল। তার হতাশামিশ্রিত মুখখানা দেখে ইনান হো হো করে হাসতে লাগল। আচমকা সে হাসি তাকিয়ে সোজা হয়ে বসল।

” আচ্ছা আমরা তোমাদের আগে বাড়িতে ফিরে এলাম। তোমাদের আসতে এতোটা সময় লাগলো কেন?”

ইনানের এহেন প্রশ্নে ওয়াসিম ভড়কে গেল।

” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তোরা তো নিজের মতো চলে এসেছিস। তোরা অভ্যস্ত এই পরিবেশে কিন্তু ওরা তো প্রথমবার এলো। ভেজারাস্তায় তাড়াহুড়ো করে এলে আরশিয়াও পড়তো, সাথে আমি আর আরহামও। তাই একটু আস্তে-ধীরে এসেছি।”

ওয়াসিমের কথা যে ইনানের মোটেও বিশ্বাস হয়নি তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ওয়াসিম জামা-কাপড় নিয়ে বেরিয়ে গেল তবে ইনান এখনো ওভাবেই বসে রইল।
.
.

হাতে একজোড়া জুতো নিয়ে এদিক-ওদিক কাউকে খুঁজছে আরশিয়া।

” কহিনূর আপু তুমি কি কাউকে খুঁজছো? হাতে এগুলো কার জুতো?”

জায়রার কন্ঠ শুনে আরশিয়া পেছন ফিরে দেখল তার পাশে মাহাও দাঁড়িয়ে আছে।

” তুমি ওয়াসিমকে দেখেছো?”

” ওয়াসিম ভাই তো রুমে শুয়ে আছে।”

” ঘুমাচ্ছে?”

” না মোবাইল দেখছে। আমরা তো এখন সেখান থেকেই এলাম। কেন বলো তো?”

আরশিয়া হাতে থাকা জুতো গুলোর দিকে ইশারা করে বলল,

” আরহাম ওনার জুতোগুলো পড়ে এতোক্ষণ ঘুরে বেড়াছিল। মা আমাকে এগুলো দিয়ে বলল যেন ফিরিয়ে দিয়ে আসি। সেই কখন থেকে ওনাকে খুঁজে চলেছি।”

” আচ্ছা যাও ভাইয়া কোণার রুমটাতে আছে।”

” আপু আপনি না হয় জুতোগুলো আমাকে দিন, আমি দিয়ে আসছি।”

মাহার কথা শুনে আরশিয়া যেতে গিয়েও থেমে গেল। তার কথা শুনে জায়রা চোখের ইশারায় কিছু একটা বলল যা আরশিয়ার বোধগম্য হলোনা।

” আপু তুমি না হয় আমাকেই দাও। কষ্ট করে আর তোমাকে যেতে হবেনা।”

” তোমরা যাবে? না থাক, আমিই বরং যাই। তোমাদের আবার ওনার কাছে যেতে হবেনা।”

আরশিয়া চলে যেতেই জায়রা মাহাকে চেপে ধরল।

” এই তোর মাথায় কি কোন বুদ্ধি নেই? কেন আপুকে এটা বলতে গেলি? উনি কিছু মনে করলে কি করবি?”

” উফ চুপ করতো, মনে করলে করুক গে। এই চলনা আমরা আবার যাই। ওয়াসিম ভাই তো রুমে একা যদি আবার কিছু করে তো।”

” কিসব বলছিস এগুলো! কিছু করবে মানে? তোর মাথাটা নাও গেছে। চল এবার আর ওদিকে যেতে হবেনা। বেশি উড়ু উড়ু করলে তোর ভাই পাখা চে’টে দেবে।”

মাহাকে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলো জায়রা।

” আসবো।”

আরশিয়া অনাকাঙ্ক্ষিত কণ্ঠস্বরে ধরফর করে উঠে বসল ওয়াসিম। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলে পর্দার ওপারে আরশিয়া দাঁড়িয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে।

” হ্যাঁ এসো এসো।”

পর্দা সরিয়ে ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করল আরশিয়া। জুতোজোড়া নিচে রেখে বলল,

” আপনার জুতো ফিরিয়ে দিতে এলাম। আরহাম না বুঝে নিয়ে গিয়েছিল।”

” আরহাম নিয়ে গিয়েছিলো? দেখো, আমি আরো মনে করেছিলাম বোধহয় আবারো আমার জুতো কেউ চুরি করে ফেলেছে।”

” সরি আরহাম বুঝতে পারেনি এটা ওর জুতো নয়।”

” না না সমস্যা নেই। ও ছোট বাচ্চা, এতোসব কি আর সে বুঝে। তুমি বসো না।”

” না বসবোনা, জুতোটা ফিরিয়ে দিতে এসেছিলাম। আমি আসি এখন।”

ওয়াসিম কিছু বলবে তার আগেই আরশিয়া বেরিয়ে গেল। সে বেরিয়ে যেতেই ওয়াসিম লাজুক হেসে বালিশে মুখ গুঁজে আবারো শুয়ে পড়ল।
.
.

বাইরে চেয়ার পেতে সবাই একসাথে বসেছিল। ইনান ফোনের দিকে তাকিয়ে গুণগুণ করে গান গায়ছিলো। তা দেখে জায়রা একটু রসিকতা করে বলল,

” হু হু আপু তুমি কি কারো পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারছ?”

জায়রার এমন কথায় সবাই থমকে গেল। ওয়াসিম থম মেরে জায়রার দিকে তাকাল, ইনান ফোন চালানো বন্ধ করে আড়চোখে তাকাল।

” পরিবর্তন? কার আবার পরিবর্তন দেখব?”

” কার আবার আমাদের ইনান ভাইয়ের। দেখছো না কয়েকদিন ধরে আরো বেশি উড়ু উড়ু করছে। সবসময় তো গুণগুণ করে গান গায়তে থাকে। এই যেমন এখনো তো গায়ছিলো।”

” তো গান গাওয়ার সাথে পরিবর্তনের কি সম্পর্ক?”

” আরে আপু বোঝনা কেন? এটা তো ভালো লক্ষণ নয়। কেমন প্রেম প্রেম একটা ফিল পাচ্ছি আমি।”

জায়রার কথা শুনে জুবা অবাক নয়নে ইনানের দিকে তাকায়। এদিকে ইনান তো বিরক্ত।

” কিসব বলছিস তুই!”

” হুম আমার তো তাই মনে হচ্ছে। আমি সত্যি বলছিনা ইনান ভাই?”

” ইনান ভাই জায়রার কথা কি সত্যি? এই জায়রা বলনা ঘটনা কি?”

” ইনান ভাই তো এখন আরশিয়া আপু পেছন পেছন ঘুরঘুর করে। আমার মতো মনে হয়……।”

” আরশিয়া আপু! কিন্তু উনি তো ভাই থেকে বয়সে বড়। ইনান ভাই কথা কি সত্যি?”

” তোরা…..।” সে বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে গেলেও থেমে গেল। কিছু একটা ভেবে মুচকি এসেছে পায়ের উপর পা তুলে বলল,

” হ্যাঁ সত্যি। আমি তো ঠিকও করে ফেলেছি প্রেম করার পর আমরা কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো। দামী নূর আপুও জানে, এখন শুধু অফিসিয়াল তাকে বলার পালা। কখন বলা যায় বলতো? ও ওয়াসিম ভাই তুমি চুপ করে গেলে কেন? তুমি তো আমাদের সবার বড়। তুমি কিছু আইডিয়া দাও।”

ইনানের কথা শুনেও ওয়াসিম কিছু বললোনা। উঠে ঘরের ভিতরে চলে গেল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here