প্রেম_এসেছে_গোপনে #পর্ব_০৮ #অনন্যা_অসমি

0
217

#প্রেম_এসেছে_গোপনে
#পর্ব_০৮
#অনন্যা_অসমি

” আপু এই নাও চকলেট।”

চকলেট খেতে খেতে আরেকটা চকলেট আরশিয়ার দিকে এগিয়ে দিল আরহাম।

” তোমাকে চকলেট কি দিয়েছে?”

” ওই যে একটা আপু আছে না সে দিয়েছে।”

” কে? জায়রা?”

” হুম? জানিনা, আমি গেলাম খেলতে।”

দৌড়ে চলে গেল আরহাম। আরশিয়া চকলেটটা একপাশে রেখে আবারো মোবাইল দেখতে লাগল।

” এইনে ঢঙী চকলেট খা।”

জায়রার হাত থেকে চকলেটগুলো নিয়ে একটা মুখে দিয়ে মাহা জানতে চাইল,

” হঠাৎ কি মনে করে চকলেট খাওয়াচ্ছিস?”

” আমি না ওয়াসিম ভাই কিনে দিয়েছে এগুলো। জুবা আপুর নাকি চকলেট খেতে ইচ্ছে করছে তাই ওয়াসিম ভাই পুরো এক প্যাকেট নিয়ে এসেছে। সবাইকে দেওয়ার পর যা ছিল বাকিগুলো আপু নিয়ে গিয়েছে।”

” ওয়াসিম ভাই দিয়েছে এগুলো?” খুশিতে গদগদ হয়ে বলল মাহা।

” আস্তে আস্তে। তোমার ওয়াসিম ভাই শুধু কিনে দিয়েছে তাও জুবা আপুর জন্য। ভাগাভাগির কাজটাতো আমি করেছি। তাই ওয়াসিম ভাই দিয়েছে ভেবে এতো খুশী হওয়ার কিছু নেই।”

মাহা বিরক্তি নিয়ে আড়চোখে জায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,

” চুপ কর শ’য়তা’ন মেয়ে। এতো সত্যি কথা তোকে কে বলতে বলেছে?”

” তোমার কাছে লাইন বাই লাইন না বললে তো আবার সমস্যা। তখন তোমার মনের ভেতরে প্রজাপতি আরো বেশি করে উড়বে, তখন আবার বি’পদ।”
.
.

” কি হল ওয়াসিম ভাই মন-টন খারাপ নাকি?”

ইনানের কথায় ওয়াসিম হালকা হেসে কাপড় নামাতে নামাতে বলল,

” মন খারাপ হবে কেন ইনান? মন খারাপের মতো কিছু হয়েছে নাকি?”

” সেটা তো তুমিই ভালো জানো। কিন্তু কয়েকদিন ধরে দেখছি তুমি কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গিয়েছ। আমার থেকে দূরে দূরে থাকছো। ঘটনাতো আমার কাছে সু্বিধার লাগছেনা।”

ওয়াসিম একবার ইনানের দিকে তাকিয়ে নিচে যেতে যেতে বলল,

” আমার কিছুই হয়নি ইনান। তুমি বেশি ভাবছো বলেই এরকম লাগছে।”

ইনান ওয়াসিমের পেছন পেছন গেলো না। ওয়াসিম নেমে যেতেই সে ফিক করে হেসে দিল। তারপর শিসশিস বাজাতে বাজাতে নিচে নেমে এল।
.
.

” তুমি কি চারুকলার ছাত্রী নাকি?”

নিচে বসে জুবার প্র্যাকটিকাল খাতায় চিত্র আঁকছিল আরশিয়া। জুবা এবার এইচএসসি পরিক্ষা দেবে। চিত্র নিয়ে সে ভীষণ চিন্তায় ছিল, যা দেখে সুমনা আহমেদ বললেন খাতাগুলো যেন আরশিয়াকে দেয় সে এঁকে দেবে। জুবা অনেক করে অনুরোধ করায় আরশিয়াও আর না বলতে পারেনি। সকাল হতেই সে বসে পড়েছে আঁকার জন্য।

ওয়াসিমের কন্ঠ শুনে আরশিয়া সোজা হয়ে বসল। ওয়াসিম তখনো উঁকিঝুঁকি দিয়ে আরশিয়ার আঁকা দেখতে ব্যস্থ।

” না আমি রসায়ন নিয়ে পড়ছি।”

” বাহ্! তুমি তো খুব সুন্দর আঁকতে জানো। আমি তো আরো ভেবেছিলাম তুমি চারুকলার নিয়ে পড়ছো।”

” কেন? ছবি কি শুধু চারুকলার স্টুডেন্টই আঁকতে পারে? বাকিরা কি পারে?” খাতা বন্ধ করে বলল আরশিয়া।

” না না আমি তা কখন বললাম? ওটা তো আমার শুধু মনে হয়েছিল। আচ্ছা তুমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়? এতোদিন হয়ে গেল এটা তো এখনো আমি জানলামই না।”

আরশিয়ার সবকিছু গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মুচকি হেসে বলল,

” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।”

আরশিয়ার কথা শুনে ওয়াসিম যে শক খেয়েছে তা তার মুখভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আরশিয়া মনে মনে মজা পেলেও তা প্রকাশ করলো না।

” সত্যি বলছো নাকি মজা করছো?”

” আমি আপনার সাথে মজা করতে যাবো কেন? এটা কি মজা করার বিষয়?”

” তুমি আমি একই ভার্সিটিতে পড়ি অথচ এতোদিনে একবারো আমাদের দেখা হলো না। কি অদ্ভুত!”

” ভার্সিটিতে তো আমরা ছাড়াও হাজার হাজার শিক্ষার্থী আছে। সেই সাথে আমাদের ডির্পাটমেন্টও আলাদা আর দেখা হলেও বা কি? তখন না আমি আপনাকে চিনতাম না আপনি আমাকে।”

” তুমি তো প্রথম থেকেই জানতে আমরা একই ভার্সিটিতে তাহলে আগে বলোনি কেন? সেইদিনও তো বলোনি।”

” এমনিতেই।” বলেই আরশিয়া হাসতে হাসতে জুবার খোঁজে বেরিয়ে গেল। এদিকে ওয়াসিম এখনো তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
.

রাতে খাওয়া শেষে আরশিয়া একাই রুমে শুয়ে ফোন দেখছিল। তার মা-ভাই বাইরে আছে। সে যেই ফোন বন্ধ করতে যাবে তখন কোথা থেকে যেন জায়রা চলে এলো।

” আরে জায়রা যে, এই সময় এখানে? ঘুমাওনি যে এখনো? বসো।” আরশিয়া একটু সরে গিয়ে জায়গা করে দিলো বসার জন্য। কিন্তু সে বসলো না উল্টো জায়রাকে টেনে শোয়া থেকে তুলে দিলো।

” আরে আরে কি করছো কি?”

” আপু তাড়াতাড়ি উঠো, এখন ঘুমানো যাবে না। এই নাও ওড়না, তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে এসো।”

” কিন্তু কেন? কিছুক্ষণ আগেই না এলাম। এখন আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”

” আরে তুমি এসো, দেখতে পাবে।”

আরশিয়াকে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেল জায়রা। নিয়ে এলো তাকে ইনানের রুমে। এখানে এসে সে দেখল বাড়ির সব বাচ্চা-কাচ্চারা আগে থেকেই উপস্থিত এমনকি আরহামও তাদের সাথে বসে আছে। সবার মাঝে মাহাকে দেখে আরশিয়া একটু অবাক হলেও কিছু বললনা। ভাবলো হয়তো দু’পরিবারের সম্পর্ক অনেক গভীর যা সে জানেনা। তাই হয়তো এতো রাতেও মাহা এইখানে আছে।

” ইনান ভাই এবার শুরু করো। আমি আপুকে নিয়ে এসেছি।”

” কি করছো তোমরা? আমাকে একটু বলবে।”

” আপনি যদি সারাদিন রুমে বসে থাকেন তাহলে জানবেন কেমন করে কি হচ্ছে? আমরা এখন সবাই মিলে মুভি দেখবো। আমরা যখনই সবাই একসাথে হয় তখনই এভাবে রাত জেগে মুভি দেখি। এবার একটু দেরি হয়ে গিয়েছে তবে ব্যপার না।” বলল ইনান।

” আপু তুমি আমার পাশে বসো।”

জায়রা এবং জুবার মাঝখানে বসলো আরশিয়া। জায়রার পাশে ওয়াসিম বসে আছে আগে থেকেই। মাহা উঠে ওয়াসিমের সামনে বসতে চাইলেও সবার আড়ালে জায়রা তার হাত চেপে পুনরায় বসিয়ে দিলো।

প্রজেক্টার ঠিক করে ইনান লাইট বন্ধ করে নিজের জায়গায় বসে পড়ল। শুরুতে আরশিয়া মনে করেছিলো হয়তো কোন সাধারণ মুভি কিন্তু আধঘণ্টা যাওয়ার পরেই সে বুঝতে পারলো এটা হরর মুভি। বুঝতে পেরে সে কোন কথা না বলে নীরবে উঠে দাঁড়াতেই জায়রা ক্ষীণস্বরে বলে উঠল,

” আরে আপু তুমি দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?”

” জায়রা আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আরহামও দেখো কেমন ঝিমোচ্ছে। তোমরাই বরং দেখো, আমরা ঘুমাতে চলে যাই।”

” কি বলো আপু? মাত্রই তো এলে। আরেকটু থাকো না।”

” না জুবা, তোমরাই দেখো। আমি হরর মুভি দেখিনা।”

” ও… তাহলে এই ব্যপার। দামী নূর আপু আপনি ভুতের ভয়ের কারণে চলে যাচ্ছেন তাই না?” হাসতে হাসতে বলল ইনান। তার কথার বিপরীতে আরশিয়া কিছু বলবে তার আগেই ওয়াসিম শান্ত কন্ঠে বলল,

” এভাবে হাসার কি আছে ইনান? ওনার হয়তো হরর মুভি ভালো লাগেনা, সবার টেস্ট তো আর একই ধরণের না। আর এখন বেশ রাতও হয়েছ, আরহামেরও ঘুম পাচ্ছে। ও বারবার আমার কাঁধে হেলে পড়ছে। আরশিয়া তুমি বরং আরহাম নিয়ে ঘুমাতে চলে যাও। ঘুম এলে জোড় করে বসে থাকার দরকার নেই।”

ওয়াসিমের কথায় আরশিয়া গোপনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। দ্রুত আরহামকে নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। অবশ্য ইনান খুব একটা ভুল বলেনি। আসলেই সে ভুতকে ভয় পাই। মনে মনে ওয়াসিমকে একটা ধন্যবাদ দিলো, অজান্তেই তাকে সাহায্য করার জন্য।

এদিকে আরশিয়া যেতেই মাহা বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এই আপুটাও না। সবকিছুতেই ওনার গাঁইগুঁই থাকবেই, অদ্ভুত। জায়রা তুই কেন শুধু শুধু ওনাকে ডেকে আনতে গেলি? আমরা ছিলাম তো বেশ ছিলাম। আগে কি আমরা রাত জেগে মুভি দেখিনি? পুরো মজাটাই নষ্ট করে দিলো।”

” মাহা উনি তোমার বড়, কাউকে সম্মান না দাও। অন্তত তার পিঠপিছে আজেবাজে কথা বলোনা।” গম্ভীর কন্ঠে বলল ইনান।

” ইনান।” ওয়াসিম থামিয়ে দিলো তাকে। তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,

” মাহা সবারই তো সমস্যা থাকে আর সেটা বুঝতে হয়। তার সমস্যা হচ্ছে তাই সে চলে গিয়েছে। আমাদের তো আর দেখতে মানা করে যায়নি। তোমার দেখতে ইচ্ছে হলে দেখো, আরশিয়া কি তোমাকে বারণ করেছে? ইনান চালু কর, তাড়াতাড়ি দেখে ঘুমাতে হবে।”

ইনান পুনরায় মুভি চালু করলো। তবে আজ আর তাদের সম্পূর্ণটা দেখা হলোনা। ঘুম পাখি তাদের চোখে এমনভাবে ঝেঁকে বসেছে যে চোখ খুলে রাখা দায় হয়ে গিয়েছিল। তাই সব কোনভাবে বন্ধ করে সবাই ঘুমাতে চলে গেল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here