প্রেম_এসেছে_গোপনে #পর্ব_১০ #অনন্যা_অসমি

0
229

#প্রেম_এসেছে_গোপনে
#পর্ব_১০
#অনন্যা_অসমি

ওয়াশরুম খালি দেখে আরশিয়া যেই ঢুকতে যাবে তখনই কোথা থেকে যেন ইনান, ওয়াসিম দৌড়ে এলো। আরশিয়াকে দেখে তারা অসহায়ভাবে তাকালো। যা দেখে আরশিয়া না হেসে পারলোনা।

” এটা কিন্তু ঠিক না দামী নূর আপু। আমরা আগে থেকে সিরিয়ালে ছিলাম।”

” কিন্তু আমি তো কাউকে দেখিনি। তোমরা লাইনে না দাঁড়িয়ে এদিকে ওদিকে ঘুরলে এটা আমার দো’ষ?” বলে হাসতে হাসতে দরজা লাগিয়ে দিলো আরশিয়া। দ্রুত দাঁত ব্রাশ করে বের হতেই দেখলে এবার আর ওয়াসিম কোথাও যায়নি। যা দেখে আরশিয়ার ভীষণ হাসি পেলেও সে হাসলোনা। হাতের ইশারায় তাকে যেতে বলল। ওয়াসিম যাওয়ার পর আরশিয়া রুমের দিকে যাবে তখন ইনানকে আসতে দেখতে বলল,

” লাভ নেই। আবারো ফুল হয়ে গিয়েছে। খালি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো।”

” এখন আবার কে গিয়েছে?” হতাশ হয়ে জানতে চাইলো ইনান।

” ওয়াসিম।”

” কি! ভাই এভাবে আমাকে ধোঁ’কা দিতে পারলো।”

” তুমি চারিদিকে ঘুরে বেড়ালে আজ আর যেতে পারবে না। তাই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকো।”

আরশিয়ার কথায় বাধ্য ছেলের মতো পালন করলো ইনান। ওয়াসিম বের হতেই একদন্ড দেরি না করে ঢুকে পড়লো সে।
.
.

সুমনা আহমেদ না বললেও আলী সাহেব থেকে সবাই জেনে গিয়েছে আরশিয়ারা আগামীকাল চলে যাবে। যা শুনে সবাই নানাভাবে তাদের যেতে বারণ করছে।

আরশিয়াকে পিচ্চিগুলো সবাই ঘিরে রেখেছে, যেন সে কোন দো’ষে দো’ষী। তাদের শর্ত না মানলে তাকে এই জে’ল থেকে ছাড়া হবেনা। জায়রা তো একেবারে চিপকে বসে আছে আরশিয়ার সাথে।

” আপু প্লিজ তোমরা কালকে যেওনা। আমরাও তো কিছুদিন পর শহরে চলে যাবো তখন আমাদের সাথে যেও।”

” তা হয়না জায়রা। মায়ের যে ছুটি শেষ, আরহামেরও এবার স্কুল যেতে হবে।”

” তাহলে আন্টি আর ভাই চলে যাক। তুমি থেকে যাও। তোমার একদম একা লাগবেনা, আমরা আছি তো।” জুবা বলল।

” হুম জুবা আপু একদম ঠিক বলেছে। আমরা তোমাকে আন্টির কথা একদম মনে করতে দেবোনা। সবসময় তোমার সাথে থাকবো, গল্প করবো। প্লিজ থেকে যাও, আমি শহরে গেলে তোমাকে অনেকগুলো বই উপহার দেবো।”

জায়রার শেষোক্ত কথা শুনে আরশিয়া হেসে ফেলল।

” তুমি আমাকে বইয়ের লোভ দেখাচ্ছো জায়রামণি?”

” তো কি করবো। তুমি তো থাকতে রাজিই হচ্ছোনা।” কিছুটা মন খারাপ করে বলল জায়রা। আরশিয়া হালকা হেসে বলল, ” আরে আগে তো তোমাদের চিনতাম না তাই আসা হয়নি। এবার তো চিনলাম, পরে অবশ্যই আবার আসবো। আর ফোন তো আছেই, মনে পড়েই আমাকে ফোন করে দেবে।”

” ফোন থাকলেই বা কি? ফোনে কি আর তোমাকে এভাবে জরিয়ে ধরে মন খুলে কথা বলতে পারবো?” আরশিয়াকে একপাশে জরিয়ে ধরে বলল জায়রা। আরশিয়া আর কিছু বলতে পারলোনা, শুধু জায়রার হাতে হাত রাখলো। সে কিই বা বলবে, তার বলার মতো আর কোন কথাই অবশিষ্ট নেই।
.
.

হইহুলোর থেকে দূরে আরশিয়া একা পুকুর পাড়ে বসে আছে। আগে পানি একদম তলানিতে থাকলেও বৃষ্টির কারণে এখন আগের তুলনায় কিছুটা পানিপূর্ণ হয়েছে। আপনমনে সেদিকেই তাকিয়ে ছিলো সে।

” তোমরা নাকি কাল চলে যাবে?”

আবারো অনাক্ঙিত কন্ঠস্বরে কেঁপে উঠল আরশিয়া, শুকনো ঢোক গিললো সে। সে উঠে দাঁড়াবে তার আগে ওয়াসিমই তার পাশে বসে পড়ল।

” আপনি এতোটা সময় কোথায় ছিলে? সকাল থেকে তো দেখিনি।”

” একটু কাজে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণ আগেই এলাম। এসে শুনলাম তোমরা নাকি চলে যাচ্ছো। সত্যি নাকি?”

” হুম দুপুরে চলে যাবো।”

” আর কিছুদিন থাকলে পারতে। আমাদের সাথে যেতে না হয়।”

আরশিয়া হালকা হেসে বলল, ” আপনিও।”

” সবাই মন খারাপ করে আছে, জায়রা তো পারলে তোমাকে বেঁধে রাখে।”

কোন উওর দিলো না আরশিয়া, শুধু হাসল। ওয়াসিম আবারো ধীর কন্ঠে বলল,

” আর কি কখনো আসবে? আর কি হবে দেখা?”

” যদি কপালে থাকবে তবে তো দেখা হবেই।”

ওয়াসিম কিছুক্ষণ চুপ করে বসে উঠে দাঁড়াল। চলে যেতে গিয়েও থেমে গেল। কিছুসময় নিয়ে আস্তে ধীরে বলল,

” তোমাকে খুব মনে পড়বে কহিনূর।”

ব্যাস এতটুকু বলেই দ্রুত পায়ে স্থানটা ত্যাগ করল সে। আরশিয়া একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল। এই প্রথম ওয়াসিম তাকে আরশিয়া বাদে তাকে কহিনূর বলে ডেকেছে। তৎক্ষণাত সে গেলোনা, আরো অনেকটা সময় একা একা পুকুর পাড়েই বসে রইল।
.
.

” নাতনী তোরা যে এসেছিস আমার আত্না কি যে শান্তি পেয়েছে তা বলে বোঝানোর মতো নয়। তোর মায়ের সাথে সেই বিয়ের আগে ভালোমতো কথা বলেছিলাম। তোকে দেখেছি তো সেই ছোটবেলায়, নাতীকে তো এই প্রথম দেখলাম। কত বড় হয়ে গিয়েছিস তোরা। তোরা যে আমার এই শেষ সময়ে আসবি আমি আশা করিনি। আরো আগে এলি না কেন? এই শেষ সময়ে এলি। আরো আগে আসলে তোদের সাথে আরো কিছুটা সময় কাটাতে পারতাম, তোদের আরো আদর যত্ন করতে পারতাম। এখন তো আমি বিছানাতে পড়ে আছি।” আরশিয়া, আরহামকে জরিয়ে ধরে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে কথাগুলো বললেন মামানানু।

” এভাবে বলোনা নানু। তুমি তো আমাদের অনেক আদর যত্ন করেছো, সবাই কত খেয়াল রেখেছে। তুমি চিন্তা করোনা, তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।”

” আ…. নাতনী আর মিথ্যা সান্তনা দিসনে। মিথ্যা সান্তনা শুনলে যে বাঁচার ইচ্ছে আরো বেড়ে যাই। যাক তোদের সবাইকে একসাথে দেখে আমার মনটা জুরিয়ে গিয়েছে। জামাই এলে আমি বড্ড খুশি হতাম রে। তোর বাপকে সাথে নিয়ে এলিনা কেন?”

” নানু তুমি তো জানোই বাবার স্কুলের ছুটি নেই। সবাই চলে এলে ঘরও খালি থাকবে। তাই বাবা আসতে পারেনি। তবে তুমি ভেবোনা পরের বার অবশ্যই বাবা আসবে।”

” পরের বার তোরা আসার আগে আমি বেঁ’চে থাকবো তো? না থাকলেও আফসোস হবেনা। ম’রার আগে প্রাণ জুরিয়ে তোদের দেখে আমার আত্না শান্তি পেয়েছে। এবার ম’রে গেলেও কোন আফসোস থাকবেনা।”

” বুড়ো তুমি আমার দামী নূরের সাথে এতো কি ফিসফিস করছো? আমার থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছো নাকি?” রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল ইনান। তার কথা শুনে নানু অসুস্থ শরীর নিয়েও হেসে উঠল।

” এভাবে এসো না গো বুড়ো, বাকি দাঁতগুলোও পড়ে গেলে তখন আর মাংস খেতে পারবে না।”

এভাবে নানান কথায় ইনান নানুর মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে গেলো। কথার মাঝে সে একবার আরশিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। আরশিয়া বুঝতে পারলো ইনান আসলে নানুর মন থেকে মৃ’ত্যর চিন্তা সরানোর জন্য এসব করছে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চলে গেল।

দ্রুত রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেল। সকাল হতেই আরশিয়া, সুমনা আহমেদ সবকিছু আবারো চেক করে ভালোমতো গুছিয়ে রাখলেন। যাওয়ার আগে তাদের খাওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো।

” না আন্টি আমি ভাত খাবোনা। এতো ভারী খাবার খেয়ে আমি বাসে যেতে পারবোনা, আমার এমনিতেই বাসে যাতায়াত করতে সমস্যা হয়।”

” একটু করে খাও মা। তোমাদের জন্যই সকাল থেকে এইসব মাছ, মাংস রান্না করা হয়েছে।” ইনানের মা বললেন।

” এই সুমনা তোর মেয়েকে বল একটু কিছু খেতে।” জায়রার মা বললেন।

” মা প্লিজ জোড় করোনা। তোমরা খাও কিন্তু আমি খাবোনা। তুমি তো জানো আমার দমবন্ধ লাগে।”

” ওকে আর জোড় করিস না। এমনিতে চা-বিস্কিট দে, আমাদের ওতেই হবে।”

অতঃপর হালকা নাস্তা করে,ওষুধ খেয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে তারা। ইনানের মা তাদের জন্য মালটা, কমলা, আচার এসব দিলো যেন গাড়িতে সমস্যা হলে খেতে পারে।

” আপু তুমি আবার আসবে তো?”

” অবশ্যই আসবো জায়রা।”

” দামী নূর আপু আমাকে ভুলে গেলে কিন্তু আমি রাগ করবো।”

” তোমাকে কি করে ভুলি ইনান। তোমার এই দুষ্ট-মিষ্টি কাজগুলো কি ভোলা যায়? আসছি, ভালো থেকো তোমরা।”

তৃষাণ গাড়ি নিয়েছে এসেছে। গাড়ি উঠে সবাইকে বিদায় দেওয়ার সময় আরশিয়া খেয়াল করলো সকাল থেকে সে ওয়াসিমকে দেখছেনা, এখনও সবার সাথে সে নেই। অজান্তেই তার মন খারাপ হলে গেল, তবে সেটা প্রকাশ না করে হাসি মুখে সবাইকে বিদায় জানালো। গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে, কয়েক সেকেন্ড পরে কি মনে হতেই আরশিয়া দ্রুত পিছন ফিরে তাকালো। সবার সাথে ওয়াসিমকে দেখে তার ঠোঁটে কোণে হাসি ফুটলো। গাড়ি এগিয়ে গেল। দৃষ্টিগোচর হয়ে গেলো সবাই, সাথে ওয়াসিমও।

গাড়ি এসে থামলো বাস স্টেশনে। তৃষাণ তাদের বাসে তুলে দিয়ে বাস ছাড়া অপেক্ষা করতে লাগল। নির্দিষ্টি সময় বাসও ছেড়ে দেওয়া হলো। আরশিয়া সিটে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ ফেলে আসার দিনগুলো নিয়ে ভাবলো, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here