প্রেম_নিবেদন Part- 01

0
5550

প্রেম_নিবেদন Part- 01
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, হাতে ঘড়ি ও পার্স, পড়নে বোরকা সাথে হিজাব দরিদ্র ঘরের মেয়েটি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে। সে এ বছর একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। সে অনার্স ১ম বর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। আজ তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম দিন।
হুম মেয়েটি আর কেউ নয়। সে নাফিসা।
নাফিসা – মা আমি আসি, আল্লাহ হাফেজ।
মা- হুম সাবধানে যাস, আল্লাহ হাফেজ ?।
তারপর ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম। বাসা থেকে হেটে যেতে ২০মি এর পথ। দরিদ্র ঘরের হওয়ায় খুব হিসেব করে গুছিয়ে চলতে হয় আমাদের। বাবা ছোট ১টা ব্যবসায়ে নিয়োজিত আছেন। তা দিয়ে ৩ ভাইবোনের পড়াশোনা ও সংসার চলে।
হেটে ভার্সিটিতে যাচ্ছি, আজ ভার্সিটির ১ম দিন। লেট করলে চলবে না। ২০মি পর ভার্সিটিতে চলে আসলাম। চারিপাশ নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ । সবাই অচেনা। অফিস রুমে এসে আমাদের ক্লাস কোথায় তা জেনে নিলাম। তারপর ক্লাসে বসে আছি। হঠাৎ ১মেয়ে এসে,
-হ্যালো। আমি দিনা। এই ক্লাসের ই ছাত্রী। তুমি ও নিশ্চয়ই?
আমি- হুম। আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো?
দিনা- ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
আমি- আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ?
তারপর আমরা ২ জন অনেক কথা বললাম। এর মাঝে ফ্রেন্ডশিপ ও হয়ে গেলো।আমি সবার সাথে ই হাসিমুখে কথা বলি, যারা একটু বেশি ভালো, তাদের সাথে মিশে যাই ? দিনার সাথে কথা বলে ও খুব ভালো লেগেছে। আজ কোনো ক্লাস হয় নি। স্যার রা এসে নিজেদের পরিচয় ও সাথে কিছু কথা বলে চলে গেলো। দুপুর ১টায় আমাদের ছুটি হয়।
.
দিনা আর আমি একসাথে ই বেরিয়ে আসলাম। ওর বাসা ও আমাদের বাসার পথে ই। দিনার বাসা ভার্সিটি থেকে ১০মি এর দূরত্বে আর আমার ২০ মি এর দূরত্বে।
রাস্তায় কথা বলতে বলতে ই হাটছিলাম।
দিনা- চল আজ আমাদের বাসায় চল।
আমি- নারে, আজ না। অন্য কোনো দিন৷ আজ তো মাত্রই পরিচয় হলো। আজ আসি।
দিনা- ওকে। আল্লাহ হাফেজ ?
আমি- আল্লাহ হাফেজ ?

বাসায়,,,,,,
মা- কিরে কেমন কাটলো ১ম দিন?
আমি- আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আজ তো তোমার মেয়ে ১জন ভালো ফ্রেন্ড ও পেয়ে গেছে। ?
মা- তাই নাকি! নাম কি? বাসা কোথায়?
তারপর মায়ের সাথে কিছুক্ষন গল্প করে নিলাম। নামাজ পরে, দুপুরে খেয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম। বিকেলে ব্যাগ থেকে বুক লিস্ট টা বের করে বই গুলোর নাম ও মূল্য দেখে নিলাম। প্রায় ৩৫০০ টাকার বই লাগবে। এতো টাকা তো আমার কাছে এখন জমা নেই। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। রাতে মায়ের সাথে কাজে সাহায্য করে, শান্তা ও সাঈদকে পড়ায় সাহায্য করলাম। শান্তা ক্লাস 9 ও সাঈদ ক্লাস 5 এ পড়ে।
বাবা রাতে ফিরলে সবাই একসাথে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। এভাবেই চলছিলো দিনগুলো।
.
আমি আরাফ। বাবামায়ের আদরের দুষ্টু, রাগী ও জেদি ছেলে। আমরা ১ভাই ১ বোন৷ আমি অনার্স ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়নরত। আমার বোন নিসা ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা বড় বিজনেসম্যান। দেশবিদেশ ঘুরে টাকা উপার্জন করেন, আর আমরা ভাই-বোন সেই টাকা উড়িয়ে বেড়াই।
আমাদের চাহিদার কোনো অপূর্ণতা রাখে না বাবা মা।
আরাফ- আম্মু, নাস্তা দাও তারাতাড়ি। ভার্সিটিতে যাবো, দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আম্মু – ২মি অপেক্ষা কর, এখনই আসছি।
নিসা- ভাইয়া তুমি যাওয়ার সময় আমাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যেও।
আরাফ- পারবো না, ড্রাইভার কে বলিস নামিয়ে দিয়ে আসতে।
নিসা- কেন তুমি গাড়ি নিয়ে যাবে না?
আরাফ- না, বাইকে যাবো। তোকে নিতে পারবো না।
নিসা- হুহ! ?
আম্মু – এই নে, এদিকে এসে নাস্তা কর।
তারপর নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম বাইক নিয়ে। প্রায় ১সপ্তাহ পর ভার্সিটিতে যাচ্ছি।
ঢাকার বাইরে বেড়াতে যাওয়ার কারণে ভার্সিটিতে যেতে পারিনি। ভার্সিটিতে পৌছে দেখি নিলয়, জয়, ফাহিম, শিহাব একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
আরাফ- কিরে কেমন আছিস তোরা?
জয়- আরে আরাফ যে! ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
আরাফ- ভালো।
শিহাব- অনেক দিন পর দেখা হলো। কেমন কাটলো তোর দিনগুলো?
আরাফ- ভালো। তোদের দিন কেমন কাটছে?
ফাহিম- তোকে ছাড়া তেমন ভালো না। অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের র‍্যাগিং এ রাখছি। বাকিগুলো তোর জন্য রাখছি। ?
সবাই- হাহাহা ???
.
.
নাফিসা – প্রায় ১ সপ্তাহ পরে আজ ভার্সিটিতে যাচ্ছি। পাশের বাসার ১ আপুর কাছ থেকে ৪টা বই সংগ্রহ করেছি, আর বাকি ২টা বই আজ ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় কিনে নিব। দিনার বাসার সামনে যেতেই দিনাকে ও পেয়ে গেলাম। তারপর ২জন গল্প করতে করতে ভার্সিটিতে চলে আসলাম। সেও ৩/৪ দিন ধরে ভার্সিটিতে যায় নি।
ভার্সিটির গেইটে ঢুকতেই কেউ ১জন পিছন থেকে ডাকলো,
– এই মোটা চাশমিশ।
শুনে ও না শুনার ভান করে চলে আসছিলাম। হঠাৎ ১টি ছেলে এসে সামনে দাড়ালো।
আরাফ- এই মেয়ে ডাকছি যে, শুনতে পাচ্ছো না?
নাফিসা- আমাকে বলছেন?
আরাফ- তোমাদের ২জন ছাড়া তো আর আশেপাশে কাউকে দেখছি না। কানে শুনতে পাও না নাকি!
দিন- আপনি চাশমিশ বলে ডেকেছেন, কিন্তু আমাদের কারো নাম ই তো চাশমিশ না।
আরাফ- নাম তো জানতাম না। তাই ডেকেছি। এখন থেকে পিঠে নাম লিখে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখো, তাহলে সুবিধা হবে।
নাফিসা- আমাদের প্রয়োজন নেই। আপনার ইচ্ছে হলে আপনি লাগাতে পারেন। তা কি জন্য ডেকেছেন সেটা বলুন।
শিহাব – বাবাহ! মেডামদের তো অনেক তাড়া দেখছি।
নাফিসা- জ্বি, ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। আল্লাহ হাফেজ।
তারপর দিনার হাত ধরে টানতে টানতে চলে আসলাম।
আরাফ- আরে শুনো শুনো। ইগনোর করে চলে গেলো! এদের তো স্পেশাল ক্লাস নিয়ে ছাড়বো ?
শিহাব – হুম চল, এখন আমরা আমাদের ক্লাসে যাই।
আরাফ- ওকে, এই সবাই চল।
.
.
গল্প ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ 🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here