প্রেম_নিবেদন Part- 13

0
1957

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 13
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
.
নাফিসা- আজ শুক্রবার। প্রতিদিনের মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ ও কুরআন পড়ে মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করলাম। তারপর কিছুক্ষন সেলাই কাজ করলাম। নিজের কিছু জামা ছিলো সেগুলো কমপ্লিট করলাম। দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে আসরের নামাজ পড়ে বাড়ির পিছনের দিকে গেলাম। সেখানে বড় ১টা মেহগনি গাছ আছে, আমার ছোট ভাই-বোনরা গাছের ডালে ছোট দোলনা বানিয়েছে খেলার জন্য। আমিও তাদের সাথে আজ যোগ দিলাম।
.
আরাফ- বিকেলে মাকে নিয়ে নাফিসাদের বাসায় গেলাম। বাসায় ঢুকে ১জন মধ্য বয়সী লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলে, উনি নাফিসাদের ঘর দেখিয়ে দিলেন। লোকটা নাফিসার আম্মুকে ডেকে দিলেন। তাদের বাসাটা মুটামুটি বড় ধরনের। চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খোলামেলা। নাফিসাদের টিনের ঘর৷ বাইরে থেকে অনেক বড় দেখাচ্ছে, মনেহয় ৩/৪ টা রুম হবে।
.
আরাফ- আসসালামু আলাইকুম, আন্টি।
.
আন্টি- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনারা? ঠিক চিনতে পারলাম না।
.
আম্মু- আপনি নাফিসার আম্মু?
.
আন্টি – হ্যাঁ।
.
আম্মু- আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
.
আন্টি – আচ্ছা ভেতরে আসুন।
.
আম্মু- হুম।?
.
আরাফ- আমরা ভেতরে এলাম। আন্টি কিছু হালকা খাবার নিয়ে এলেন। আম্মু আর আন্টি কথা বলছে। আমার আম্মু এমনিতেই মিশুক। অতি সহজেই কারো সাথে মিশে যায়। আমি ঘুরে রুমটা দেখছি। ঘরের আসবাবপত্র খুব সুন্দর ও পরিপাটিভাবে গুছানো। আন্টি ছাড়া আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আমি জানালার পাশে এসে দাড়ালাম। বাচ্চাদের চেচামেচি শুনা যাচ্ছে। তাকিয়ে দেখি নাফিসা বাচ্চাদের সাথে দোলনায় দোল খাচ্ছে। বাতাসে তার চুল উড়ছে। চেহারাটা সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে না, তবুও অনেক সুন্দর লাগছে ?
.
এবার আংকেল ও চলে এলো। আমি গিয়ে আম্মুর পাশে বসলাম। আম্মু তাদের সাথে কথা বলছে। কিন্তু আংকেলের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল ? উনি ধনী পরিবারে উনার মেয়েকে বিয়ে দিবে না। আম্মু অনেক্ষণ চেষ্টা করলো বুঝানোর, কিন্তু কিছুতেই রাজি করাতে পারলো না।?
.
.
নাফিসা- আমি দোলনায় দোল খাচ্ছি। বিকেলের মিষ্টি বাতাস খুব ভালো লাগছে ?। এমন সময় শান্তা দৌড়ে আসলো,
.
শান্তা – আপু, ওই ভাইয়াটা এসেছে।
.
নাফিসা- কোন ভাইয়া??
শান্তা- ওই যে ওইদিন বালুর মাঠে দেখা হলো যে।
.
নাফিসা- বালুর মাঠে! তারমানে কি আরাফ!!
.
আমি দোলনা থেকে নেমে ঘরের দিকে আসতে লাগলাম। দেখলাম, আরাফ দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে ? ও এখানে কেন! আমি এগিয়ে যেতেই সামনাসামনি হয়ে গেলাম। ও আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে কিছু না বলেই চলে গেলো। ওর দৃষ্টি যেন কিছু বলছিলো। কিন্তু আমি কিছুই বুজতে পারলাম না।
.
তারপর আবার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই দেখলাম ১জন মহিলা বের হয়ে আসছে। আরে! এ তো ওই আন্টি!!
.
– আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন? ?
.
আন্টি – ওয়ালাইকুম আসসালাম। ? আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
.
.নাফিসা- আলহামদুলিল্লাহ ? কিন্তু আপনি এখানে!
.
আন্টি- তোমাকেই দেখতে এসেছিলাম। ভেবেছি দেখা হবেই না। অবশেষে দেখা হলো ?। আচ্ছা এখন আসি, আমার ছেলে বাইরে অপেক্ষা করছে। আল্লাহ হাফেজ।
.
নাফিসা- আল্লাহ হাফেজ ?। তারমানে আরাফ আন্টির ছেলে আর ও ই আন্টিকে নিয়ে এসেছে। কিন্তু ওনারা হঠাৎ কি জন্য এলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।
.
.
আরাফ- আম্মুকে নিয়ে বাসায় এসেছি, কিছু ভালো লাগছে না। ? আংকেল কিভাবে না করে দিলো! আজ তো মনে হচ্ছে ধনী হওয়া অপরাধ!
.
ইশার নামাজ পড়ে রুমে বসে আছি। নিসা ডিনারের জন্য ডেকে গেলো। আমার ভালো লাগছে না কিছু, তাই যাই নি। একটু পর আব্বু আসলো। আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত রাখলো।
.
আব্বু- আরাফ, খাবি না?
.
আরাফ- আব্বু আমার ভালো লাগছে না। তোমরা খেয়ে নাও। আব্বু আমরা কেন ধনী হলাম! আমরা কেন গরীব হলাম না? বলো তো!
.
আব্বু- মন খারাপ করিস না। ধনী-গরীব ইচ্ছে করে হতে পারেনা কেউ। ভাগ্যই আমাদের নিয়ে যায়। আল্লাহ যার ভাগ্য যেমন রেখেছে তেমনই হবে। আমাদের শুধু ইচ্ছা শক্তিটা থাকতে হবে।
.
আরাফ- আব্বু, নাফিসার তো অন্য ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে! তোমার ছেলে নাফিসা ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। ?
.
আব্বু- আচ্ছা তাহলে খুঁজে দেখি কার কার নাম নাফিসা, তার সাথেই তোর বিয়ে দিব ?
.
আরাফ- দুরর! আব্বু তুমি মজা করছো!?
.
আব্বু- পাগল ছেলে! মন খারাপ করিস না। আমি যাবো নাফিসার আব্বুর সাথে কথা বলতে।
.
আরাফ- কোনো লাভ নেই আব্বু, উনি ক্লিয়ার বলে দিছে ধনী পরিবারে বিয়ে দিবে না?
.
আব্বু- ওইযে বললাম না, আমাদের ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে। চেষ্টা করে দেখবো। এখন চলতো, খুব ক্ষুধা লেগেছে।?
.
আরাফ- ?আচ্ছা চলো।
.
.
নাফিসা- মায়ের কাছে জানতে পারলাম আরাফ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কিন্তু বাবা না করে দিয়েছে। বাবা ধনীলোক পছন্দ করে না। আমার তো খুব খুশি লাগছে ?। কারণ বাবা-মা রাজি হয়ে গেলে তো আমি তাদের অবাধ্য হতে পারবো না। আমারও ধনীলোক পছন্দ না। ধনীরা অহংকারী হয়। আর আরাফকে তো আমি এমনিতেই পছন্দ করি না, তাকে আবার বিয়ে!?
.
.
.
আম্মু- মন ভালো হলো অবশেষে??
.
আরাফ- কিছুটা ?
.
নিসা- আহারে, আমার ভাইটা বিয়ের টেনশনে ১দিনেই শুকিয়ে গেছে?
.
আরাফ- নিসা!?
.
আম্মু- আর টেনশন দিস না তো নিসা।?
.
আরাফ- আম্মু তুমিও শুরু করলা!? আমি খাবই না।
.
আব্বু- আরে আরাফ তুই বস। আমিতো চিন্তা করছি, আরাফের আগে নিসার বিয়েটা ই দিয়ে দিবো?
.
নিসা- ?
.
আরাফ- হুম তাই করো।?
.
আম্মু- পাত্র আছে কিনা বলো, ২ ভাই-বোন এর বিয়ে এক দিনেই দিয়ে দেই।?
.
নিসা- হুহ! সময় আমার ও আসবে, তখন তোমাদের ক্লাস নিব ?
.
সবাই- ???
.
নাফিসা- পরদিন ভার্সিটি যাচ্ছি, আজ আর ওই আরাফকে দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় কাল বাবার কথা শুনে আমার পিছু নেয়া বন্ধ করেছে?। উফফ বাচা গেলো! প্রতিদিন পিছু পিছু আসতো, কি বিরক্তিকর।
.
হঠাৎ দেখলাম ১টি বাচ্চা মেয়ে রাস্তায় পড়ে গেলো। আমি দৌড়ে সেখানে গেলাম। বাচ্চাটি কান্না করছে৷ দেখলাম ওর হাতে একটু কেটে গেছে।
.
– ওফ! কান্না করে না লক্ষিটি। চলো আমার সাথে।
.
বাচ্চাটি- আম্মুউউ?
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here