প্রেম_নিবেদন Part- 16

0
2058

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 16
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- আজ শুক্রবার, মাকে দেখলাম সকাল থেকেই রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে। আমাকেও বলে গেলো ঘরটা সুন্দরভাবে গুছাতে।
ঘর তো গুছিয়ে ফেললাম, কিন্তু এসব কেন!
.
– মা, বাসায় কি কেউ আসবে?
.
মা- হুম, মেহমান আসবে। তোর বিয়ের সমন্ধ নিয়ে।
.
নাফিসা- তাই বলে প্রথমেই এতোসব রান্না করতে হবে।
.
মা- হুম হবে। সেসব নিয়ে তোকে কথা বলতে হবে না।
.
নাফিসা- আমি আর কিছু না বলে চলে এলাম। মেয়ে হয়ে জন্মেছি বিয়ে তো দিবেই! তাছাড়া বিয়েটা হয়ে গেলে একদিকে ভালোই হয়, আরাফের মতো ছেলেরা পিছু নিবে না। ?
.
.
দুপুরের দিকে মেহমান এসেছে। আমি ছোট চাচীর ঘরে ছিলাম। শান্তা এসে বলে গেলো মেহমানরা খাওয়া-দাওয়া করছে। কিছুক্ষণ পর আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো। আমি ১টা কাতানের থ্রিপিস পড়েছি আর একটু হালকা সাজ।
.
আমি তাদের সামনে গিয়ে মাথানিচু করেই সালাম দিলাম।
– আসসালামু আলাইকুম।
.
আংকেল – ওয়ালাইকুম আসসালাম।
.
আন্টি- কেমন আছো, নাফিসা?
.
নাফিসা- এবার আমি মাথা তুলে তাকালাম, আমিতো চরমভাবে শকড!!? এরা এখানে কেন!
.
বাবা- নাফিসা, উনারা কিছু জিজ্ঞেস করেছে।
.
নাফিসা- হুম? আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন আন্টি?
.
আন্টি- আলহামদুলিল্লাহ ?। এসো এদিকে আমার কাছে এসে বসো।
.
নাফিসা- আমি কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছি না! চুপচাপ গিয়ে বসলাম। বাবা আর আংকেল বিয়ের তারিখ ও ঠিক করে ফেলছেন! ? আর এদিকে আরাফ আর তার বোন কি যেনো কথা বলছে, আর আরাফ মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। আমার তো মনে চাচ্ছে চিতকার করে কান্না করি, না পারছি কিছু বলতে না পারছি সইতে??
.
বড়রা কথা বলে বিয়ের দিন ও ঠিক করে ফেলেছে, আমার সেদিকে খেয়াল নেই, এবার আন্টি আমার হাত ধরে রিং পড়াতে যাচ্ছিলেন,
.
নাফিসা- আন্টি আমার ১টা কথা আছে।
.
সবাই হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু আমি শুধু আন্টির দিকেই তাকিয়ে আছি। কারণ বাবা-মায়ের দিকে তাকানোর সাহস একমুহূর্তে আমার নেই।
.
আন্টি- হুম বলো।
.
নাফিসা- sorry, আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না।
.
বাবা- নাফিসা!
.
আন্টি- ভাইসাহেব, আমি দেখছি। নাফিসা তার কারণটা কি জানতে পারি?
.
নাফিসা- বাবা আমার কথাটা শুনো আগে। যে ছেলে কোনো মেয়ের জন্য তার বাবা-মাকে ছাড়তে পারে, তাকে আমি কিভাবে বিয়ে করি! আরাফ নিজে বলেছে সে আমার জন্য তার বাবা-মাকে ছেড়ে চলে আসবে!
একসময় দেখা যাবে সে কোনো কারণে আমাকেও ছেড়ে চলে যাবে! বাবা তুমি তার সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে কিভাবে দিতে পারো!
.
আন্টি- হ্যাঁ, কোনো কারণে আরাফ তোমাকেও ছেড়ে চলে যাবে, যদি তুমি অনুমতি দাও।
.
নাফিসা- মানে!!
.
আন্টি- মানে হচ্ছে, আরাফ আমাদেরকে এই কথা বলেছে যে তুমি ওকে বলেছো বাবা-মাকে ছাড়তে পারলে তুমি তাকে বিয়ে করবে। তোমার কথা শুনে সেদিন বাসায় গিয়ে অনেক কান্নাও করেছে। তারপর আমিই বলেছি তোমার শর্তে রাজি হতে। সে তার বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে বাবা-মাকে ছাড়তে রাজি হয়েছে। একসময় যদি সে তোমার কাছে অনুমতি চায় আর তুমিও তাকে অনুমতি দিয়ে দাও তাহলে তো তোমাকে ছাড়বেই। সেটা সম্পূর্ণই তোমার উপর depend করছে, এতে তো আরাফের কোনো দোষ থাকবে না।?
.
নাফিসা- আমি আরাফের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালাম, আর ও মুচকি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে ?।
.
আংকেল – আরো কিছু বলার আছে আমার নাফিসা মামুনির?
.
বাবা- নাফিসা, আর একটা কথাও না।
.
নাফিসা- আমি আর কি বলবো! আমার জবান তো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। তারপর আন্টি আমার হাতে রিং পরিয়ে দিলেন। উনারা কিছুক্ষণ কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। আমি কারো দিকে একবারের জন্যও তাকাইনি।
.
.
সন্ধ্যার সময় বই সামনে নিয়ে টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। এমন সময় বাবা আসলেন, আমার মাথায় হাত রাখলো।
.
বাবা- নাফিসা, মন খারাপ?
.
নাফিসা- না।
.
বাবা- মন খারাপ করিস না। ওরা অনেক ভালো, ১সপ্তাহ আগে যখন আরাফাত চৌধুরী(আরাফের বাবা) আমার সাথে কথা বলতে এসেছেন তখন থেকেই আমাদের ভাব জমেছে। প্রতিদিনই ফোনে কথা হতো। তোর খবর নিতেন। উনি আমার সাথে বন্ধুত্বের হাত বারিয়ে দিয়েছে। আরাফের সাথেও মাঝে মাঝে কথা হতো। কিন্তু তুই একটু বেশিই খারাপ ব্যবহার করেছিস তার সাথে। পরশুদিন তারা আমাকে বলেছে তুই আরাফকে সেই কঠিন কথাটি বলেছিস। সাথে এটাও বলে দিছে যাতে তোকে কিছু না জিজ্ঞেস করি। কিন্তু আমার প্রচুর রাগ হয়েছে তোর উপর। আমার মেয়ে এতো বড়ো কথা কেমনে বলে! ইচ্ছে করছে তোকে থাপ্পড় দেই, কিন্তু আমি যে তোদের গায়ে কোনোদিন হাত তুলিনি।
.
নাফিসা- বাবা আমি সেটা আরাফকে যাচাই করার জন্য বলেছি।
.
বাবা- হুম সেটা আজকে বুজতে পারছি। কিন্তু এটাওতো তুই বুঝতে পারছিস ওরা সবাই কেমন! আগামী শুক্রবারই তোর বিয়ে।
.
নাফিসা- কিহ! এতো তারাতাড়ি! ?
.
বাবা – হুম, তোর সামনেই তো কথা বলছি। বেশি দূর হলে তোর পড়ালেখার ক্ষতি তাই। আচ্ছা মন খারাপ করিস না, দেখিস সেখানে অনেক ভালো থাকবি। এখন পড়।
.
নাফিসা- হুম।
.
তারপর বাবা চলে গেলো, হয়েছে আমার আর পড়া! মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। শান্তা আসলো,
– তুই দুপুরে আমাকে বললি না কেন ওরা আসছে!?
.
শান্তা – আমি কি জানতাম নাকি! দুপুরে দেখার পর মা বলতে নিষেধ করছে, তাই বলিনি। ?
.
নাফিসা- মা ও কেমন! কিছুই বলেনি আমায়!
.
শান্তা- ভালোই তো হয়েছে, ১সপ্তাহ পর তোমার বিয়ে, ওফফ! খুব মজা হবে আপু। ?
.
সাঈদ- আরে আপুর তো বিয়ে, আপু মজার কি বুঝবে? মজা তো করবো আমরা?
.
নাফিসা- ?
.
.
আরাফ- ১সপ্তাহ পর বিয়ে, ওফফ! অবশেষে সব ঠিক হলো। আজ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো ?
.
নিসা- ভাইয়া, শপিং এ যাবা কবে?
.
আরাফ- তুই আছোস তোর শপিং নিয়ে! ? যা ভাগ!
.
নিসা- আমার শপিং এর কথা বলিনি, তোমার বউয়ের শপিং এর কথা বলেছি?
.
আরাফ- ওহহু! ভুলেই তো গিয়েছিলাম!
তা,,কি কি লাগবে? আমি কিভাবে জানবো!?
নিসা তুই কাল চল আমার সাথে।
.
নিসা- পারবো না, এতোক্ষণ না আমাকে ভাগতে বললা!?
.
আরাফ- ওফ! কোনো কথা বললেই প্যাচে ফেলে, কাল যাবি ব্যাস! প্রয়োজনে মাইর দিয়ে নিয়ে যাবো।?
.
নিসা- কিইইই?
.
আরাফ- জ্বিইইই। আম্মুর কাছ থেকে জেনে আয়, কি কি লাগবে।
.
নিসা- পারবো না।
.
আরাফ- ফাজিল মেয়ে, একটা কথাও শুনে না! আম্মুউউউ
.
আম্মু- কি??
.
আরাফ- কাল শপিং এ যাব, কি কি লাগবে লিস্ট করে দিও।
.
আম্মু- বাব্বাহ! আমার ছেলের বিয়ের জন্য তর শইছে না দেখছি!?
.
আরাফ- ওফ! আম্মু, মাত্র ৭দিন। এর মাঝে সব মেনেজ করা কতটা tough, তুমি বুঝো না!
.
আম্মু- হয়েছে, আর লিস্ট লিখে দিলেও তুই কিনতে পারবি না। আমিও সাথে যাবো নাফিসাকে নিয়ে।
.
আরাফ- তোমাদের নিয়ে শপিং! আমার ১০মি এর কাজ তোমরা সারাদিন লাগিয়ে ফেলো!?
.
নিসা- হিহিহিহি…?
.
.
চলবে…..
.
কেমন লাগলো? নাফিসা আপনাদের রিয়েকশন দেখতে চায় ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here