প্রেম_নিবেদন Part- 17

0
1837

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 17
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
পরদিন,
মা- নাফিসা, দ্রুত তৈরি হয়ে নে, তোর শাশুড়ি আসছে তোকে নিয়ে কেনাকাটা করতে যাবে।
.
নাফিসা- আমার বিয়েও দিয়ে ফেললা! শাশুড়ী আবার আসলো কোথা থেকে!
.
মা- কথা প্যাচাস কেন! ৬দিন বাকি তোর বিয়ের। বেশি কথা না বলে যা বলছি তা কর?
.
নাফিসা- হুহ!
.
.
দুপুরের দিকে উনারা গাড়ি নিয়ে আসলো। শুধু আরাফের বোন বাসার ভিতরে আসলো, আর বাকিরা গাড়িতেই বসে আছে।
.
নাফিসা- আমি হিজাব পড়ছিলাম এমন সময় মেয়েটি আমার রুমে আসলো,
.
– হ্যালো ভাবি!
.
নাফিসা- আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো?
.
– ভালো, তুমি কেমন আছো?
.
নাফিসা- আলহামদুলিল্লাহ। বসো এখানে।
.
– ভাবি, তাড়াতাড়ি করো। আম্মু গাড়িতে আছে। লেট হয়ে যাবে তাই ভেতরে আসেনি।
.
নাফিসা- আর ২মি। আমি হিজাব পড়ছি আর তার সাথে কথা বলছি।
.
– তোমার সাথে তো আমার তেমন পরিচয়ই হয়নি। আমি আরাফের ছোট বোন, এটা নিশ্চয়ই জানো?
.
নাফিসা- ? হুম। তোমার নাম কি?
.
– আল-নিসা।
.
নাফিসা- খুব সুন্দর নাম।
.
নিসা- তোমার নাম ও খুব সুন্দর, ভাবি নুর নাফিসা ?
.
নাফিসা- আমাকে আপু বলেই ডাকো। ভাবি বললে কেমন যেনো মনে হয়।
.
নিসা- তাহলে আমি ভাবি বলে ডাকবো কাকে!?
নাফিসা- বিয়ের পর না হয় ভাবি ডেকো, এখন আপু ডাকো।
.
নিসা- আচ্ছা?। এবার চলো।
.
নাফিসা- হুম?
.
নাফিসা- গাড়ির কাছে গেলাম, আরাফ ড্রাইভিং সিটে বসা,আর আন্টি পিছনে। নিসা সামনের দরজা খুলে দিলো আমি যাতে সামনে বসি।
.
– নিসা আমি আন্টির সাথে পিছনে বসি। তুমি সামনে বসো।
.
নিসা- ওকে।
.
নাফিসা- আমি আন্টির সাথে পিছনে বসলাম। আন্টিকে সালাম দিলাম। তারপর আরো অনেক কথা বলতে বলতে শপিংমল এ পৌছালাম।
.
আরাফ- গাড়ি ড্রাইভ করছি, আর সামনের ছোট মিররে নাফিসাকে মাঝে মাঝে দেখছি। আম্মুর সাথে বেশ ভালো গল্প জমিয়েছে। আর আমার দিকে ১বার তাকায়ও না ?। হঠাৎ নিসা মিররটা উল্টো করে লাগিয়ে দিলো। আমি তারদিকে রেগে তাকালাম ?
.
নিসা- ভাইয়া, এভাবে ড্রাইভ করলে এক্সিডেন্ট হবে ?
.
আরাফ- সবসময় বেশি বুঝস!?
শপিং করতে করতে আমি শেষ। আমার আম্মু ১টা ড্রেস কেনার জন্য সারা শপিংমল ঘুরে ? নাফিসার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে আম্মুর সাথে ঘুরতে ঘুরতে সে ও ক্লান্ত ?
– আম্মু আর কতক্ষণ লাগবে!
.
আম্মু- এইতো শেষ।
.
আরাফ- তারপর রেস্টুরেন্ট নিয়ে গেলাম, নাফিসা আর আম্মু ১টা করে বার্গার নিয়েছে, আমি ১টা লাচ্ছি আর ১টা সেন্ড্রুইচ, আর নিসাতো খাবারের মেলা বসিয়েছে!
– আরে, এতো খেলে তো একদিনে মোটি হয়ে যাবি!
.
নিসা- ওফফ! ভাইয়া, তুমি সবসময় এমন কেন করো!? তোমার ইচ্ছে হলে তুমিও খাও।
.
আরাফ- লাগবে না আমার। প্যাক করে সাথে নিয়ে নে, রাত হয়ে যাচ্ছে।
.
তারপর বাসায় ব্যাক করলাম। নাফিসার বাসার পাশে এসে গাড়ি থামালাম।
– আম্মু তোমরা বসো, আমি নাফিসাকে ভিতরে দিয়ে আসি।
.
আম্মু- হুম।
.
নাফিসা- আমি একাই যেতে পারবো, আসতে হবে না।
আরাফ- কে শুনে কার কথা! আমি নেমে নাফিসার সাথে ওর বাসায় ঢুকলাম।
.
– নাফিসা?
.
নাফিসা- কিছু বলবেন?
.
আমার দিকে ১টা প্যাকেট এগিয়ে দিলো।
.
নাফিসা- এটা কি?
.
আরাফ- ধরোতো আগে।
.
নাফিসা- আমি হাতে নিলাম।
.
আরাফ- এটা মোবাইল সেট। সিমসহ সব এক্টিভ করা আছে। এটা বলে সাথে সাথে চলে এলাম।
.
নাফিসা- আরে!…. কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো। ঘরে এসে প্যাকেট টা আলমারিতে রেখে আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সারাদিন ঘুরে অনেক ক্লান্ত লাগছে।
.
.
আরাফ- নাফিসাকে নামিয়ে আমরা বাসায় চলে এলাম। ফ্রেশ হয়ে অনেক বার কল করলাম নাফিসার ফোনে। ফোন তো বেজেই চলেছে, কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। মনে হয় সাইলেন্ট করা,আর না হয় নাফিসা ইচ্ছে করেই রিসিভ করছে না। ওফ! এই মেয়েটা যে কি! আমিও খুব ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
নাফিসা- এখন আর আমি ভার্সিটি যাই না। বাসায় বসেই কাটাই দিনগুলো।
.
আরাফ- সেদিনের পর আর দেখা হয়নি নাফিসার সাথে। প্রতিদিনই কল করছি, কিন্তু কখনো কল রিসিভ হয়নি। এমনিতে মাঝে মাঝে আংকেল, আন্টির সাথে কথা হয়।
.
নাফিসা- আজ আমার বিয়ে, ভারি শাড়ি আর গহনা পড়িয়ে পার্লার থেকে সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে আমাকে। অনেকে এসে ছবি তুলছে৷ মনে হচ্ছে আমি একটা পুতুল। যে যেভাবে বলবে সেভাবেই থাকতে হবে আমাকে। অনেকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু আমি কোনো কথা বলছি না। আমার পাশে দিনা আছে, প্রয়োজন ভেদে সে-ই উত্তর দিচ্ছে। আর বাচ্চারা ছুটাছুটি, দুষ্টুমি করছে।
.
দিনা- নাফিসা, তুই এমন চুপ হয়ে গেলি কেন?
নাফিসা- কি বলবো?
.
দিনা- কিছু বলতে বলছি না, কিন্তু মুখ এমন ভার করে রাখিস না। দেখ আমাদের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আন্টি আংকেল বুঝেশুনে তোকে আরাফের সাথে বিয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে সক্ষম হ। তোর বিয়েতে ভাবছি কত মজা করবো আর তুই মুখ এমন পেচার মতো করে আমার মজা শেষ করে দিলি। be happy ?
.
নাফিসা- ?
.
একটুপর বরযাত্রী চলে এলো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে এখন আমাকে আরাফের বাসায় নিয়ে যাবে। নিজেকে অনেক শক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যার্থ হলাম। মায়ের চোখে পানি দেখে আমার চোখ বাধা মানেনি। শান্তা, সাঈদ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বাবা একটু আগে আরাফের হাতে আমার হাত রেখে কিছু বলছিলেন এরপর আর বাবাকে দেখিনি। কান্না করতে করতে প্রায় অচেতন অবস্থায় আমাকে আরাফের বাসায় নিয়ে আসা হলো।
.
আমাকে ১টা রুমে এনে বসানো হলো। চারিদিকে সম্পূর্ণ রুম ফুল দিয়ে সাজানো। খাটেও গোলাপের পাপড়ি সাথে অন্যান্য ফুল দিয়ে সাজানো। নিসা ও তার কাজিনরা এসে আমার পাশে বসে কিছুক্ষণ বকবক করে চলে গেলো। আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আন্টি এসে বলে গেলো আরাফের সাথে ২রাকাত নফল নামাজ পড়তে। মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আমি খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি।
.
দরজার বাইরে হইচই শুনছিলাম, হয়তো, আরাফকে তার কাজিনরা ঘিরে ধরেছে বকশিস নেয়ার জন্য।
কিছুক্ষণ পর আরাফ রুমে আসলো।
.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here