প্রেম_নিবেদন Part- 19

0
2036

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 19
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
আন্টির রুমের সামনে এলাম, আন্টি আলমারি থেকে কি যেনো নিচ্ছে,
.
নাফিসা- আসবো আন্টি?
.
আন্টি আমার দিকে একবার দেখে কিছু না বলে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন। আমি কিছুটা হতবাক হলাম, পরক্ষণে মনে হলো তিনি কেন এমন করলেন, এবার আমি বললাম,
.
নাফিসা- আম্মু আসবো?
.
এবার তিনি হেসে বললেন,
আম্মু- হুম এসো।☺️
.
নাফিসা- কিন্তু এবার আমি গেলাম না। দাড়িয়ে রইলাম।
.
আম্মু- কি ব্যাপার দাড়িয়ে আছো যে! ?
.
নাফিসা- আম্মু বলে ডাকতে বললে, আর নিজের মেয়েকে তুই করে বলতে পারলে না!?
.
আম্মু- ? পাজি মেয়ে, আয় এদিকে।
.
নাফিসা- হুম☺️। এবার ভিতরে গেলাম। আমি আম্মুর পাশে বসলাম। হটাৎ দেখলাম আরাফ ও আমার পিছু পিছু রুমে এসে আম্মুর অন্যপাশে বসতে বসতে বললো !?
.
আরাফ- এতোক্ষণ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে মা-মেয়ের ভালোবাসা দেখলাম ☺️ আর ছেলেকে তো ভুলেই গেছো! ?
.
আম্মু- হিংসে হচ্ছে বুঝি আমার ছেলের! ?
.
আরাফ- না হিংসে না, আমার ভালোবাসা আমার জন্যই রেখো। তা হলেই হবে ?
.
আম্মু- ফাজিল ছেলে ?। নাফিসা, এগুলো রাখ। কাল বৌভাতের অনুষ্ঠানে পড়বি। আর এগুলো আজ থেকে তোর।
.
নাফিসা- আম্মু, এগুলো নিয়ে আমি কি করবো! কালকের ওই গহনাগুলোই তো অযথা পড়ে থাকবে। আমার কাছে এসব ভারী গহনা পড়তে ভালো লাগে না।
আম্মু- সবসময় পড়তে হবে না। এগুলো আমার স্মৃতি হিসেবে রাখবি। তাছাড়া কখনো কখনো ভারী গহনার ও প্রয়োজন পড়ে।
.
নাফিসা- কিন্তু আম্মু..
.
আরাফ- রাখো তো, আম্মু বললোই তো স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে।
.
নাফিসা- ?
.
আম্মু- আরাফ, তুই রুমে নিয়ে যা।
.
আরাফ- হুম, দাও।
.
নাফিসা- আরাফ গহনাগুলো রুমে নিয়ে গেলো, পিছু পিছু আমিও গেলাম। আরাফ গহনা আলমারিতে রাখছে। আমি নিসার কাছে সোফায় বসলাম।
.
আরাফ- কিরে মোটি, তুই এখানে কি করিস??
.
নিসা- ভাইয়া!? আমাকে মোটি কেন বলো? আমি কি মোটা!
.
আরাফ- এতো খাস, তাও মোটা হোস না তাই বলি?
.
নাফিসা- আমি এদের ভাইবোনের দুষ্টুমি দেখে মিটিমিটি হাসছি।
.
নিসা- বেশি কথা বললে, ভাবিকে আমার পক্ষে এনে, তোমার বিপক্ষে নিয়ে যাবো।
.
আরাফ- তোর কাজ অনেক আগেই সহজ হয়ে আছে, তোর ভাবি আমার বিপক্ষেই আছে। পারলে পক্ষে এনে দে। ? (বলতে বলতে আমি তাওয়াল নিয়ে বাথরুমে চলে এলাম।)
.
নাফিসা- ?
.
নিসা- হাহাহা ?
.
নাফিসা- নিসা, চলো বারান্দায় যাই।
.
নিসা- আচ্ছা চলো।
.
নাফিসা- তোমাদের বাসা কত তলা?
.
নিসা- ৪তলা বাসা, আর এখন তুমি ৪ তলাতেই দাড়িয়ে আছো ?
.
নাফিসা- অহ, আচ্ছা। ৪তলায় কেন থাকো! সিড়ি দিয়ে নামতে উঠতে ও তো পা ব্যাথা করার কথা।
.
নিসা- ? ️অভ্যাস হয়ে গেছে ভাবি। আর আগে আমরা ২ তলায় থাকতাম। ছাদে বাগান করেছি, নিচ তলায় সব ভাড়া দেয়া। ভাড়াটিয়ারা যাতে ছাদে উঠতে না পাড়ে সেজন্য আমরা ৪তলায় এসেছি।
.
নাফিসা- ? তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
.
নিসা- আমি SSC exam দিবো। সামনেই exam আর বেশিদিন নেই। ?
.
নাফিসা- কোন স্কুল থেকে?
.
নিসা- মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে। ভাইয়া ও সেখানেই পড়েছিলো।
.
নাফিসা- বিজ্ঞান বিভাগের তুমি?
.
নিসা- হুম। ভাবি, তুমি কোন Year এর ছাত্রী?
.
নাফিসা- অনার্স ১ম বর্ষের, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের।
নিসা- ওহ। ভালো sub. ভাই…
.
আম্মু- নিসা এদিকে আয়তো একটু…
.
নিসা- আসছি। ভাবি পরে কথা বলবো। আর বিকেলে তোমাকে ছাদে নিয়ে যাবো।
.
নাফিসা- আচ্ছা?
.
দুপুরে নিসা ডেকে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য। এখানে যদিও আমার জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ তবুও মানিয়ে নিতে তেমন কষ্ট হচ্ছে না। দেখলাম সবাই বসেছে ডাইনিং টেবিলে, আমিও নিসার সাথে বসলাম
.
নাফিসা- আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
.
আংকেল – মেহেরিমা, তুমি আম্মু ডাকের মর্যাদা পেলেও আমি কিন্তু এখনো আব্বু ডাকের মর্যাদা পাইনি।
.
নাফিসা- আংকেলের কথা শুনে আমার এখন অনেক লজ্জা হচ্ছে। আর বাকিরা মিটিমিটি হাসছে! এবার আমি বললাম,
-sorry, আব্বু
.
আব্বু- এইতো লক্ষি মেয়ে আমার☺️, এবার আবার সালাম দাও।
.
নাফিসা- আসসালামু আলাইকুম আব্বু। ?
.
আব্বু- ওয়ালাইকুম আসসালাম।? আর কখনো যেন আব্বু ডাকতে ভুল না হয়। মনে থাকবে তো!
.
নাফিসা- হুম, আব্বু কেমন যেনো পোড়া পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে।
.
সবাই আমার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালো।?
.
আম্মু- আমিতো চুলায় কিছু রাখিনি!
.
নাফিসা- উফ! আম্মু, আগুনে পোড়া না, এটা মনপোড়া ?
.
এবার আব্বু,আম্মু বুঝতে পেড়ে দুজনেই হেসে দিলো।??
নিসা আর আরাফ ব্যাপারটা বুঝতে পেড়ে একে অপরের দিকে তাকালো,তারপর আব্বু আম্মুর সাথে তাল মিলিয়ে তারাও হেসে দিলো ?
.
নিসা- ভাবি, এতোক্ষণ হিংসে হয়নি, এখন বলে হিংসে বাড়িও না।?
.
নাফিসা- না বললে হিংসা বাড়বে, আর বললে হিংসা বাড়বে না। তাইতো বলছি ?
.
নিসা- হাহাহা.. ?
.
আব্বু- হুম, এবার খাওয়া শুরু করা যাক।
.
সবাই খেয়ে যার যার মতো রুমে চলে এলাম।
.
নাফিসা- আমি রুমে এসে জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছি। এ বাড়িতে বর্তমানে এটাই আমার প্রিয় জায়গা। জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকালে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের উপরিভাগটা খুব কাছে থেকে দেখা যায়। অনেক পাখিরা বসে থাকে এখানে। এমন সময় আরাফ এসে আমার পাশে দাড়ালো,
.
আরাফ- জানপাখি..
.
নাফিসা- ?আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার বাইরে তাকিয়ে আছি,
.
আরাফ- আমি জানি আমার উপর রেগে আছো। হয়তো তুমি বিয়েটাও মানছো না। কিন্তু আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। আমিকি এতোটাই খারাপ, যে তুমি আমাকে মেনে নিতে পারছো না!
.
নাফিসা- ?আমি আরও একবার কিছুটা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আবার বাইরে তাকিয়ে আছি।
.
আরাফ- জানপাখি, তোমার অনুমতি ছাড়া কখনো তোমার কাছেও আসবো না, কখনো স্বামীর অধিকার ফলাবো না। তোমার কাছে আমার ২টা চাওয়া। ১/আমার পরিবারের সদস্যকে কখনো কষ্ট দিও না। আমার বিশ্বাস তুমি এমন কিছু কখনো করবে না যাতে আমার পরিবার কষ্ট পায়। আর ২/ তুমি আমাকে ভালো না বাসো তাও প্লিজ কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না। আমাকে তোমায় ভালোবাসার সুযোগটুকু দিও। সবসময় আমার সামনে থেকো। তোমাকে দেখেই আমি আমার সারাজীবন পার করতে পারবো। শুধু আমার কতোটুকু ইচ্ছা পূরন করো। ভালোবাসি তোমায় ?
.
নাফিসা- ?
.
তারপর আরাফ চলে গেলো রুমে। আমি বারান্দায়ই দাঁড়িয়ে রইলাম।
.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here