প্রেম_নিবেদন Part- 21

0
1824

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 21
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
আরাফ- নাফিসা, রেডি হয়ে নাও ভার্সিটিতে নামিয়ে অফিস যাবো। অনেক দিন হলো ক্লাস করো না।
.
নাফিসা- আমিতো বই খাতা কিছুই আনিনি!
.
আরাফ- ভার্সিটি যেতে বই লাগে! ১টা কলম আর ১টা খাতা হলেই হয়।
.
নাফিসা- আপনি যান, আমি আজ যাবো না। কাল থেকে যাবো।
.
আরাফ- হুম জানিতো আমিই তোমার জান।?
.
নাফিসা- ?আমি জান বলিনি, আপনাকে অফিস যেতে বলেছি।
.
আরাফ- ওই একই কথা।? আচ্ছা আজ যেতে হবে না কিন্তু কাল থেকে প্রতিদিন যাবা, কোনো বাহানা চলবে না। সামনের সপ্তাহে তোমার এক্সাম। স্টাডি রুমে তোমার বই রাখা আছে, পড়তে বসো। আর বেড সাইড টেবিলের ড্র‍য়ারে তোমার মোবাইল রাখা আছে, বোরিং লাগলে টাইম পাস করতে পারো। আমি আসি?
.
নাফিসা- আমার বই মানে!?
.
আরাফ- তুমি ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি ও বাসা থেকে তোমার বই আনতে। আল্লাহ হাফেজ?
.
নাফিসা- আল্লাহ হাফেজ ?
.
আরাফ চলে গেলো। সত্যিই তো! আমার একটুও মনে ছিলো না বই আনতে। নিসা স্কুলে গেছে। বাসায় এখন আম্মু আর আমি। একটুও ভালো লাগছে না একা একা থাকতে বোরিং লাগছে। কিছুক্ষণ আম্মুর সাথে গল্প করেছি। তারপর আবার রুমে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, সময় যেন কাটেই না! এমন সময় ফোনে রিংটোন বেজে উঠে। ড্রয়ারের পাশে যেতে যেতে কল কেটে যায়। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আরাফের ৮টা মিস কল।
.
আবার কল আসার সাথে সাথে রিসিভ করলাম
– আসসালামু আলাইকুম।
.
আরাফ- ওয়ালাইকুম আসসালাম। এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?
.
নাফিসা- আম্মুর সাথে গল্প করছিলাম।
.
আরাফ- মোবাইলটা সাথে রাখতে পারোনা!
.
নাফিসা- বাসায় থেকেও মোবাইল সাথে নিয়ে ঘুরতে হবে! ?
.
আরাফ- এখন কি করছো?
.
নাফিসা- আপনার সাথে কথা বলছি। কি জন্য কল করেছেন, সেটা বলুন।
.
আরাফ- এমনি, তোমার সাথে কথা বলার জন্য?
.
নাফিসা- ৩ঘন্টা আগে মাত্র কথা বলে গেলেন!
.
আরাফ- ৩ ঘন্টা তুমি মাত্র বলছো! জানপাখি, প্রতি সেকেন্ডে তোমাকে মনে করি।
.
নাফিসা- হয়েছে, ফালতু কথা রেখে এখন কাজে মনোযোগ দিন। ফোন রাখুন।
.
আরাফ- তুমি আগে রাখো।
.
নাফিসা- আল্লাহ হাফেজ।
.
আরাফ- সাথে সাথে ফোন রেখে দিলো! ?কোথায় বলবে, তুমি আগে রাখো! কি কপাল আমার!! ?
.
আব্বু- কপাল আবার কি দোষ করলো! নাফিসার সাথে কথা বলছিলি??
.
আরাফ- হুম?
.
আব্বু- ভালোই তো করেছে, সময় নষ্ট না করে তোকে কাজের সুযোগ দিয়েছে। ?
.
আরাফ- ?
.
নাফিসা- দুপুর ২টায় নিসা বাসায় আসলো। আমি আম্মু আর নিসা একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম।
.
নিসা- ভাবি, চলো ছাদে যাবো।
.
নাফিসা- আচ্ছা চলো। আম্মু তুমিও চলো।
.
আম্মু- আচ্ছা?
.
তারপর মেইন দরজা লক করে ৩জন ছাদে গেলাম। ছাদের অর্ধেকটা ফুল ও ফল গাছ দিয়ে ভড়া। বাহারি রকমের ফুল ফুটে আছে। অনেক সুন্দর লাগছে ?। আর অর্ধেকটা খালি। সিড়ির পাশে ১টা রুম আছে কিন্তু লক করা। বাইরে থেকে বেশ বড়সড় দেখাচ্ছে। পাশে ১টা দোলনাও আছে।আম্মুর ফোন আসলো, আম্মু সাইডে গিয়ে রেলিংয়ের পাশে দাড়িয়ে কথা বলছে। আমি আর নিসা ফুল গুলো দেখছি, অনেকগুলো গাছ আছে, অনেক সুন্দর লাগছে।
– নিসা, এটা কিসের রুম?
.
নিসা- এটাতে ভাইয়ার আসবাবপত্র গিটার, ব্যায়াম করার যন্ত্রপাতি এসব।
.
নাফিসা- ?তোমার ভাইয়া আবার গান ও গাইতে পারে?
.
নিসা- হুম। জানোনা তুমি অনেক ভালো গান গাইতে পাড়ে। কিন্তু বেশির ভাগই ইংলিশ গান গায়।
.
নাফিসা- এটা সবসময় লক করা থাকে?
.
নিসা- হুম।ভাইয়া কাউকে যেতে দেয়না এঘরে। মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে আসে, তাও আবার পরিষ্কার করার জন্য?। কিন্তু গত ১মাস ধরে আমাকেও ঢুকতে দেয় না। ভাইয়া নিজেই সব করে।
.
নাফিসা- ? কেন? কি আছে এঘরে?
.
নিসা- কি জানি!? চলো দোলনায় বসি।
.
নাফিসা- হুম চলো। বিকেলের বাতাস খুব ভালো লাগছে।
.
নিসা- ভাবি, তুমি ফেসবুক চালাও না?
.
নাফিসা- ফোনই ইউজ করি না আবার ফেসবুক! ?
.
নিসা- কেন?
.
নাফিসা- ভালো লাগে না। তবে একাউন্ট খোলা আছে, ডিএক্টিভ।
.
নিসা- টিভিতে সিরিয়াল দেখো?
.
নাফিসা- না।
.
নিসা- তোমার টাইম পাস করো কিভাবে?
.
নাফিসা- মায়ের কাজে সাহায্য করি, নিজের পড়াশোনা, ছোট ভাই-বোনের পড়াশোনা, বাসায় ৫/৬ জন স্টুডেন্ট পড়াতাম, ভার্সিটিতে ক্লাস করা। এসব নিয়েই সময় কেটে যেতো।
.
নিসা- বাহ! আমার সময় কাটে বই আর ফোন নিয়ে। আর আম্মুর সময় কাটে রান্না আর টিভির সিরিয়াল নিয়ে?
.
আম্মু এসে পাশে বসতে বসতে,
আম্মু- আমার নামে বদনাম করা হচ্ছে??
.
নাফিসা- না আম্মু ?
.
নিসা- দেখেছো আম্মু, সিরিয়াল দেখতে দেখতে তুমি সত্যি কথাকে বদনাম বানিয়ে ফেলছো ?
.
আম্মু- ?
.
নাফিসা-?
.
নাফিসা- কিছুক্ষণ বসে গল্প করলাম। একটু পর আম্মুর ফোনে আবার ফোন আসলো।.
.
আম্মু- হ্যাঁ আরাফ, বল।
…….
আম্মু- আচ্ছা আসছি।
নাফিসা, নিসা নিচে চল, তোর আব্বু আর আরাফ অফিস থেকে ফিরেছে।
.
নাফিসা- আচ্ছা চলো।
নিচে নেমে দেখি আব্বু আর আরাফ দাঁড়িয়ে আছে। আব্বু আর আরাফ দুজনের চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। আম্মু চাবি দিয়ে দরজা খুলে দিলো। সবাই ভিতরে প্রবেশ করলো।
আম্মু রান্নাঘরে শরবত বানাতে গেলেন, আমিও আম্মুর পিছু পিছু গেলাম।
.
নাফিসা- আম্মু আমি বানিয়ে দেই?
.
আম্মু- ওকে, দে। ?
.
নাফিসা- আমি সবার জন্য লেবুর শরবত বানালাম। নিসাকে ১ গ্লাস দিলাম।
.
নিসা- ওয়াও ভাবি, অনেক মজা হয়েছে ?
.
আম্মু- ওহ! এখন আম্মুর টার মজা উড়ে গেছে!?
.
নিসা- না আম্মু, সত্যিই। তুমি খেয়ে দেখো। ভাবি টক বেশি দিয়েছে। আর তোমারটা মিষ্টি বেশি হয়।
.
নাফিসা- আম্মুদের হাতে মিষ্টি থাকে তাই?
.
আম্মু- ?আরাফের টা রুমে নিয়ে যা।
.
নাফিসা- আচ্ছা। তারপর আম্মুর কাছে ২গ্লাস দিয়ে ১টা গ্লাস নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছি।
.
আম্মু- তোর গ্লাস কোথায়?
.
নাফিসা- আম্মু, আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
.
আম্মু- আচ্ছা।
.
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here