প্রেম_নিবেদন Part- 22

0
1916

story- প্রেম_নিবেদন Part- 22
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- ১গ্লাস শরবত নিয়ে রুমে এলাম। আরাফ গোসল করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল মুছছে।
– এই নিন আপনার শরবত।
.
আরাফ- নাফিসার হাত থেকে গ্লাসটা নিলাম।
– তুমি খেয়েছো?
.
নাফিসা- না। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
.
আরাফ- (নাফিসার মুখের সামনে গ্লাসটা ধরলাম) একটু খাও।
.
নাফিসা- ? বলছি না খেতে ইচ্ছে করছে না।
তারপর বিছানার চাদর টেনে ঠিক করতে লাগলাম।
.
আরাফ- ওকে। (মুখে দিয়ে দেখি অন্যদিনের চেয়ে টেস্ট আলাদা)
– নাফিসা, শরবত কি তুমি বানিয়েছো?
.
নাফিসা- হ্যাঁ, কেন?
.
আরাফ- মিষ্টি হয়নি কেন?
.
নাফিসা- ? চিনি দিয়েছিতো! যদিও টকটা বেশি দিয়েছি।
.
আরাফ- তুমি খাওনি, বুঝবে কিভাবে! খেয়ে দেখো, একটুও মিষ্টি হয়নি।
.
নাফিসা- তাহলে নিসা কি আমার সাথে দুষ্টুমি করলো নাকি! কই দেখি?
আমি আরাফের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে একটু খেলাম। মিষ্টি তো ঠিকই আছে!
– কই মিষ্টি তো ঠিকই আছে ?
.
আরাফ- কই, দেখি!
.
নাফিসা- (আরাফ আমার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে আমি যেদিকে মুখ লাগিয়ে খেয়েছি, সেদিকে সে মুখ লাগিয়ে খেলো)
.
আরাফ- হুম এবার ঠিক আছে। ?
.
নাফিসা- এবার ঠিক আছে মানে? আমি কি এখন চিনি দিয়েছি নাকি!
.
আরাফ- তুমি গ্লাসে মুখ লাগিয়েছো তাই মিষ্টি হয়ে গেছে?
.
নাফিসা- ?
.
সন্ধ্যায়,
নাফিসা- আম্মুর কাছে রান্নার কাজে সাহায্য করতে গেলাম, আম্মু পাঠিয়ে দিলেন পড়তে বসার জন্য। নিসার সাথে স্টাডি রুমে পড়তে বসলাম। ১সপ্তাহের ও বেশি হবে বই ধরি না। ৪দিন পরে এক্সাম! আমি আর নিসা পড়ছি, একটু পর আরাফ আসলো ল্যাপটপ হাতে নিয়ে। তারপর ১টা সিংগেল সোফা ছিল, সেটাতে বসলো।
.
নিসা- ভাইয়া, তুমি এখানে কেন?
.
আরাফ- তোরা পড়ছিস কিনা, গাইড দিতে আসলাম।
.
নিসা- গাইড দিতে? নাকি ভাবিকে মিস করছিলে, সেজন্য আসছো??
.
নাফিসা- ?
.
আরাফ- বেশি বুঝোস কেন? পড়া পড়।?
.
নিসা- হুহ!?
.
আরাফ- চাশমিশ, তোমার চশমা কোথায়? চশমা ছাড়া তুমি পড়তে পাড়ো? ?
.
নাফিসা- কেন? আমি কি চোখে কম দেখি নাকি! ?
.
আরাফ- আমি তো ভাবছি, কমই দেখো।
.
নাফিসা- গত ১০দিনে আমাকে চশমা পড়তে দেখেছেন?
.
আরাফ- আসলেই তো! ?। তাহলে ভার্সিটিতে চশমা পড়ে যাও কেন?
.
নাফিসা- ধুলাবালির জন্য। চোখে, নাকে ধুলো লাগলে আমার ঠান্ডা লেগে যায়।
.
আরাফ- ওহ, এজন্য মোটা ফ্রেমের চশমা পড়তে। তাহলে ওইদিন চিকন ফ্রেমের চশমা পড়েছো কেন?
.
নাফিসা- কোন দিন??
.
আরাফ- তারুণ্য জাগরণ প্রোগ্রামে।
.
নাফিসা- শাড়ির সাথে ওটা ম্যাচ ছিলো, তাই।
.
আরাফ- তোমার চোখে তো কোন সমস্যা নেই, তাহলে তোমাকে আজ থেকে চাশমিশ না ডেকে অন্য নামে ডাকবো।
.
নিসা- হিহিহিহি… ? জানপাখি বলে ডাকবা!
.
আরাফ- হুম, ওটাই তো ডাকি।?
.
নাফিসা- আমার পড়ার ডিস্টার্ব হচ্ছে ?
.
আরাফ- সরি, জানপাখি। আমি আর কথা বলছি না।
.
নিসা- ওফ! আমিও চুপ! ?
নাফিসা- চুপ থাকতে হবে না, বই পড়ো।
.
নিসা- হুম☺️
.
পরদিন সকালে নাস্তা শেষে,
.
আরাফ- জানপাখি, দ্রুত তৈরি হয়ে নাও। ভার্সিটিতে যাবে আজ।
.
নাফিসা- হুম। আমি তৈরি হয়ে গেলাম বোরকা ও হিজাব পড়ে।
.
-আম্মু, আমি আসছি।
.
আম্মু- কিভাবে যাবি। ড্রাইভার তো ওই গাড়ি নিয়ে নিসার স্কুলে গেলো।
.
নাফিসা- প্রয়োজন নেই আম্মু। আমি এমনিতেই যেতে পারবো। আল্লাহ হাফেজ।
.
আম্মু- আল্লাহ হাফেজ।
.
নাফিসা- গেইটের বাইরে বেরিয়ে দেখি আরাফ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি এখনও অফিস যাননি কেন? আব্বু কোথায়?
.
আরাফ- আব্বু নিচে নামেনি এখনও। তুমি গাড়িতে উঠে বসো। তোমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে আমরা অফিস যাবো।
.
নাফিসা- প্রয়োজন নেই। আমি হেটে যাবো।
.
আরাফ- নাফিসা, জেদ করো না তো। গাড়িতে উঠো।
.
নাফিসা- জেদ এর কি হলো! হেটে যাওয়া অভ্যাস হয়ে গেছে। আল্লাহ হাফেজ।
.
তারপর আমি ভার্সিটির উদ্দেশ্যে হাটতে শুরু করলাম।
.
আরাফ- ওফ! এই মেয়েটা ১টা কথাও শুনে না ?
.
আব্বু- আরাফ, নাফিসা কোথায়?
.
আরাফ- হেটে চলে গেছে।
.
আব্বু- কেন!?
.
আরাফ- হেটে যেতে ভালো লাগে, তাই! তুমি গাড়িতে উঠো।
.
আব্বু- আচ্ছা চল।
.
নাফিসা- দুপুরে, ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখলাম ১জন মধ্য বয়সী মহিলা দরজা খুলে দিলো।
.
মহিলা – আপনে নিশ্চয়ই আরাফের বউ?
.
নাফিসা- ঘরে ঢুকতে ঢুকতে, হ্যাঁ। কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না!
.
মহিলা – আমি এই বাড়িতে কাম করি ?।
.
নাফিসা- এতোদিন তো দেখলাম না!
.
আম্মু- ও এতোদিন ছুটিতে ছিলো। ?
.
নাফিসা- ওহ, আচ্ছা। ?
.
আম্মু- হুম, যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
.
নাফিসা- হুম।
রুমে এসে হিজাব খুলছিলাম, এমন সময় মহিলাটি ঘর মুছার জন্য হাতে বালতি নিয়ে এলেন। বউমনি, আপনে বাইরে যান আমি ঘর মুছে দেই।
.
নাফিসা- আমি বোরকা খুলে, উনার হাত থেকে বালতি নিয়ে বললাম,
আন্টি, আমাকে আপনি বলবে না, আর বউমনি বলবে না। আমার নাম নাফিসা। আমি আপনার মেয়ের মতো। আমাকে নাফিসা বলে ডাকবেন।?
.
আন্টি- আইচ্ছা।? তুমি পুরাই আরাফের মতো কথা কও। আরাফরে সাহেব ডাকছিলাম, ও তো রাইজ্ঞা চাট্টিখান। ? পরে ভাবি শিখায় দিলো কারে কি ডাকমু।
.
নাফিসা- আচ্ছা আন্টি, আপনি এখন যান, আমার রুমটা আমিই মুছে দিবো।
.
আন্টি- কি কও এইডা! তাইলে আমি আছি কেন!
.
নাফিসা- আপনি অন্য রুম মুছে দিন। কেমন!
.
আন্টি- ভাবি দেখলে বকবো।
.
নাফিসা- কেউ কিছু বলবে না। আপনি যান।
.
তারপর, আমি ওড়নাটা ভালোভাবে বেধে ঘর মুছতে লাগলাম।
.
নিসা- ভাবি ফোনের চার্জা.. ভাবি!? তুমি ঘর মুছো কেন? আন্টি আছে তো, উনি মুছে দিবে।
.
নাফিসা- আমি থাকতে আমার ঘর অন্য কাউকে মুছতে হবে কেন!?
.
নিসা- তাই বলে,
.
আম্মু- আমি জানতে চাই, আমার নাফিসা মেয়েটা এতো লক্ষি কেন!?
.
নাফিসা- আমার মায়ের মতো মা আর তোমার মতো আম্মুর জন্য ?। আচ্ছা এখন যাও আমার কাজের দেড়ি হচ্ছে।
.
আম্মু- আচ্ছা, নিসা দেখে কিছু শিখ। সারাদিন ফোন নিয়ে পড়ে থাকা ছাড়া তো আর কিছুই জানিস না।
.
নিসা- খোটা দিচ্ছো!?
.
আরাফ- কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ায় দুপুরে বাসায় চলে আসলাম। নিসা দরজা খুলে দিলো।
.
নিসা- ম্যাজিক দেখার জন্য তুমিও তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলা??
.
আরাফ- কিসের ম্যাজিক!
.
নিসা- তোমার রুমে গিয়ে দেখো ?
.
আরাফ- রুমের সামনে যেতেই দেখলাম নাফিসা হাতে বালতি নিয়ে বের হচ্ছে, ওড়না পেচিয়ে কোমড়ে বাধা।? জানপাখি, তোমার এই অবস্থা কেন?
.
নাফিসা- রুমটা মুছে দিয়েছি, ৫মি পর ভেতরে যান।
.
আরাফ- তুমি ঘর মুছলে কেন? বাসায় কাজের লোক রাখা আছে তো।
.
নাফিসা- আমি থাকতে আমার ঘর অন্য কেউ মুছবে কেন!? আপনি আপনার কাজ করুন।
.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here