প্রেম_নিবেদন Part- 23

0
1700

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 23
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছি, আরাফ আমার সাথে বসেছে। যতবার পানি খাচ্ছে ওর সামনে গ্লাস থাকা সত্ত্বেও আমার গ্লাস নিয়ে খাচ্ছে ? সবার সামনে কিছু বলতেও পারছি না।
.
আরাফ- ?
.
আব্বু- আরাফ কাল থেকে আমি না ফেরা পর্যন্ত অফিসের দেখাশোনা সম্পূর্ণ তোর উপর। কোনো প্রব্লেম হলে আমাকে কল করে জানাবি।
.
আরাফ- ওকে আব্বু।
.
নাফিসা- আব্বু তুমি কোথাও যাচ্ছো?
.
আব্বু- হুম, USA যেতে হবে ১সপ্তাহ পর ফিরবো। ?
.
নাফিসা- অহহ, আচ্ছা।
.
নিসা- আব্বু তোমার ফ্লাইট কখন?
.
আব্বু- কাল দুপুর ১২টায়। নাফিসা..
.
নাফিসা- জ্বি আব্বু?
.
আব্বু- তুমি আর কখনো হেটে ভার্সিটি যাবে না।
.
নাফিসা- আব্বু, ভার্সিটিতো বেশি দূর না। তাছাড়া হেটে যেতে আমার সমস্যা হয় না। অভ্যাস আছে।
.
আব্বু- তবুও তুমি হেটে যাবে না। আমরা সবাই গাড়ি নিয়ে চলি, তুমি কেন হেটে যাবে!
.
নাফিসা- আব্বু, আমি গাড়ি নিয়ে গেলে নিসা যাবে কিভাবে। ওর স্কুলের রাস্তা আমার ভার্সিটির রাস্তা তো একদিকে না।
.
আব্বু- বাসার গাড়ি নিসা নিয়ে গেলে তুমি আমাদের সাথে অন্য গাড়িতে যাবে। আমরা তোমাকে ভার্সিটি নামিয়ে অফিস যাবো। অফিস আর ভার্সিটি তো একদিকেই। আর ছুটির পর বাসার গাড়ি তোমাকে নিয়ে আসবে।
.
নাফিসা- না আব্বু, যাওয়ার সময় না হয় তোমাদের সাথে যাবো, আসার সময় আমি একা চলে আসবো। কারণ আমার এক এক দিন এক এক সময় ছুটি হয়।
.
আব্বু- আচ্ছা, তাহলে রিক্সায় চলে আসবে।
.
নাফিসা- আচ্ছা।
.
আম্মু- নাফিসা, তোর পরীক্ষা কবে থেকে?
.
নাফিসা- পরশু থেকে।
.
আম্মু- বাসায় থেকে দিবি?
.
নাফিসা- সেখানে থাকলেই ভালো হতো।
.
আম্মু- আচ্ছা, কাল বিকেলে আরাফ তোকে দিয়ে আসবে।
.
নিসা- ওফ! আব্বু চলে যাবে, ভাবিও চলে যাবে, বাসা তো পুরো ফাকা! ভাবি তোমার সাথে গল্প করতে পারবো না!
.
নাফিসা- আমার পরীক্ষাতো মাত্র ৬দিন, আমি ৭দিন থেকে চলে আসবো।
.
নিসা- আচ্ছা। তা ১দিন বেশি কেন?
.
নাফিসা- বোনাস?
.
সবাই- হাহাহা?
.
নাফিসা- খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে রুমে এসে দেখি আরাফ সোফায় বসে ল্যাপটপ এ কাজ করছে। আমি বিছানা গোছাতে লাগলাম।
.
নিসা- ভাবি, ঘুমিয়ে গেছো!
.
নাফিসা- না, এসো।
.
আরাফ- তুই এখানে কি করছ? যা পড়তে বস।
.
নিসা- তুমি চুপ থাকো। তোমার কাছে এসেছি!? ভাবি বারান্দায় চলো তোমার সাথে গল্প করবো।
.
নাফিসা- আচ্ছা।
বারান্দায় বসে নিসা ফেসবুক চালাচ্ছে আর আমার সাথে কথা বলছে।
.
নিসা- ভাবি, দেখো এই পোস্টটা। ইসলামে তো নারীপুরুষ সবাইকে সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে, তাহলে বাবার সম্পত্তিতে ছেলের ২ভাগ আর মেয়েদের ১ভাগ কেন? ইসলাম কি মেয়েদের ঠকিয়েছে?
.
আরাফ- (সোফায় বসে কাজ করছিলাম আর তাদের কথা শুনছিলাম।) কেন, তোর কি আব্বুর সম্পত্তি বেশি বেশি চাই? তোর জামাইকে ঘর জামাই বানিয়ে রাখবো ?
.
নিসা- ভাইয়া তুমি এতো বেশি কথা বলো কেন! তোমার কাজে তুমি মনযোগ দাও।
.
নাফিসা- মোটেও না নিসা। ইসলাম মেয়েদের জিতিয়েছে।
.
নিসা- কিভাবে?
.
নাফিসা- মেয়েরা বাবার সম্পত্তি থেকে কিছু অংশ পায়, স্বামীর কিছু অংশ পায়, আবার বিয়ের দেনমোহরও পায়। এইসব নিজের থাকে, কেউ তার অংশীদার হয় না। কিন্তু ছেলেদের সম্পত্তির অংশীদার অনেকে হয়। সন্তান, স্ত্রী, বাবা-মা, ভাইবোন সবার দায়িত্ব ছেলেদের নিতে হয়।
.
নিসা- তাহলেতো ছেলেদের প্রাপ্য আরও অনেক বেশি হওয়া উচিত। ইসলাম তো মেয়েদের রানী বানিয়ে রেখেছে।
.
নাফিসা- হুম। ?
.
আরাফ- মনে থাকে যেন, আবার বিয়ের পর ননদের অংশ নিয়ে হিংসা করিস না ?
.
নিসা- হুহ!? ভাবি তোমার দেনমোহর কতো ছিলো?
.
নাফিসা- জানিনাতো।
.
নিসা- সেকি! ভাইয়া তোমাকে দেনমোহর দেয় নি!?
ভাইয়া, এতোক্ষণ তো আমাকে যা তা বলছিলা। নিজের বউয়ের দেনমোহর এখনো দাওনি কেন?
.
আরাফ- ওপ্স! মনেই ছিলো না। বিয়ের সময় চেকে সমস্যা ছিলো, তাই টাকা তুলতে পারিনি। পরে ভুলেই গিয়েছি।?
.
নিসা- কত টাকা ছিলো?
.
আরাফ- ৫লক্ষ ১২হাজার।
.
নিসা- আমিতো সবসময় শুনেছি, ভাংতি টাকা ১টাকা, ৫টাকা এমন থাকে। তোমার টা ১২হাজার কেন?
.
আরাফ- ওটা সিক্রেট, তোকে বলা যাবে না। ?
.
নিসা- ?? বলতে হবে না। ভাবি, সকালে আমার কোচিং আছে ঘুমাবো। good night.
.
নাফিসা- good night?
.
নাফিসা- আমি জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে বিছানায় চলে এলাম। হঠাৎ দেখলাম গ্লাসে থাকা বাকি পানিটুকু আরাফ খেয়ে নিলো।
– এটা কি হলো?
.
আরাফ- কোনটা?
.
নাফিসা- আপনি আমার রাখা পানি খেয়ে নিলেন কেন? ডাইনিং টেবিলেও নিজের গ্লাস থাকা সত্ত্বেও বারবার আমার গ্লাস নিয়ে খেয়েছেন কেন? ?
.
আরাফ- আমিতো সুন্নাত আদায় করেছি। বা রে! এতো হাদিস জানো এটা, জানো না! আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ও যে গ্লাসে উনার স্ত্রীর মুখ লাগানো অংশে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়েছেন। আমিও সেটাই করেছি?
.
নাফিসা- ? (আমি আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লাম)
.
পরদিন,
নাফিসা- আব্বু চলে যাবে তাই আর ভার্সিটি যাই নি। বিকেলে আমিও চলে যাবো। আম্মুর সাথে রান্নার কাজে সাহায্য করলাম। ১১টায় আব্বু বেরিয়ে গেলেন। আরাফ গিয়েছে আব্বুকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসতে। আমি এদিকে বাসায় যাওয়ার জন্য সব গুছিয়ে নিলাম। দুপুর ২টার দিকে আরাফ বাসায় আসলো। আমি,আম্মু আর আরাফ একসাথে খেয়ে তারপর রুমে এলাম।
.
আরাফ- জানপাখি, বস এখানে।
.
নাফিসা- আমি সোফায় বসলাম আরাফের পাশে।
– কেন?
.
আরাফ- wait.
.
তারপর আরাফ আলমারি থেকে ১টা প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিলো।
.
নাফিসা- কি এটাতে?
.
আরাফ- খুলে দেখো।
.
নাফিসা- প্যাকেট খুলে দেখি অনেকগুলো টাকা। ৫টা নতুন বান্ডেল। সাথে কিছু ভাংতি পুরান টাকা, যা প্রায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
– এতো টাকা কিসের?
.
আরাফ- তোমার দেনমোহর। পুরো ৫লক্ষ ১২হাজার আছে এখানে।
.
নাফিসা- লাগবে না আমার।
.
আরাফ- বললেই হলো! এটা তোমার পাওনা। এটাতে সম্পূর্ণ তোমার অধিকার।
.
নাফিসা- আমি এতো টাকা দিয়ে কি করবো!
.
আরাফ- সেটা তুমি জানো। তোমার যা ইচ্ছা করতে পারো।
.
নাফিসা- আপনার কাছে রেখে দিন। যখন প্রয়োজন হবে, তখন নিবো।
.
আরাফ- আচ্ছা।
.
নাফিসা- কিন্তু এই টাকা গুলো এতো পুরান কেন?
.
আরাফ- গণে দেখোতো এখানে কতো টাকা।
.
নাফিসা- ১২০০০.
.
আরাফ- চিনতে পারোনি এই টাকা? এটা তুমি আমাকে দিয়েছিলে।?
.
নাফিসা- ?রেখে দিয়েছেন কেন! টাকা রেখে দেওয়া যায়!
.
আরাফ- কি করবো বলো! এটা যে আমার বউয়ের উপার্জনের টাকা? তাই রেখে দিয়েছি।
.
নাফিসা- ?
.
.
চলবে…..

অনেকে বলেন, গল্প দিতে দেড়ি করি।
কিন্তু কি করবো বলেন,
আমি আগেই বলেছি আমার টাইপিং স্লো। বেশি লিখার সময় পাইনা। তাছাড়া এখন রমজান মাস, নামাজ, রোযা, কুরআন পড়ে ঠিক মতো লিখতে পারি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here