প্রেম_নিবেদন Part- 24

0
1718

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 24
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- বিকেলে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম আরাফের সাথে। আরাফ গাড়ি এনে বালুর মাঠের সামনে থামালো।
-এখানে থামালেন কেন?
.
আরাফ- হাটবে একটু? বাতাসটা খুব সুন্দর। ভালো লাগবে।
.
নাফিসা- না বাসায় যাবো।
.
আরাফ- ওকে। তারপর আবার গাড়ি ছেড়ে দিলাম। নাফিসার বাসার সামনে এসে থামালাম।
.
নাফিসা- আমি গাড়ি থেকে নামলাম। কিন্তু আরাফ গাড়িতে বসে আছে।
– ভেতরে যাবেন না?
.
আরাফ- যেতে হবে?
.
নাফিসা- মা-বাবার সাথে দেখা করে যান।
.
আরাফ- (মুচকি হেসে) ফিসফিস করে, বলার অপেক্ষায় ই তো ছিলাম! ?
.
নাফিসা- শুনে ও না শুনার ভান করে, কিছু বলছেন?
.
আরাফ- না, চলো।
.
নাফিসা- আরফের সাথে বাসার ভেতরে গেলাম। আরাফ বাবা-মাকে সালাম দিয়ে বাবামায়ের সাথে কথা বলছে। আমি লেবুর শরবত বানিয়ে এসে দেখি আমার রুমে শুধু আরাফ বসে আছে। আরাফকে ১গ্লাস দিলাম।
.
আরাফ- তুমি খেয়েছো?
.
নাফিসা- না। আজ মিষ্টি না হলেও এটাই খেতে হবে ?
.
আরাফ- ?
.
নাফিসা- আমি বাবার গ্লাসটা দেয়ার জন্য পাশের রুমে গেলাম।
.
মা- কিরে আরাফ থাকবে না? কতো করে বললাম,
.
নাফিসা- না মা, ওর কাজ আছে। আব্বু বাসায় নেই সব কিছু ওকে দেখতে হবে।
.
মা- আচ্ছা, তাহলে বল রাতে খেয়ে যেতে।
.
নাফিসা- আচ্ছা।
.
আবার আরাফের কাছে আসলাম,
– এখনই চলে যাবেন?
.
আরাফ- কেন, আমাকে ছাড়া থাকতে ইচ্ছে করছে না ?
.
নাফিসা- ? মা বলেছে রাতে খেয়ে তারপর যেতে।
.
আরাফ- না, এখন একটু কাজ আছে। ভালোভাবে পড়ে এক্সাম দিও। প্রতিদিন রিক্সায় যাবে। (পকেট থেকে নাফিসার ফোন বের করে তার হাতে দিয়ে) আর দয়া করে এটা সাথে রেখো। আল্লাহ হাফেজ ?
.
নাফিসা- আল্লাহ হাফেজ।
তারপর আরাফ বাবা-মা থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
.
কিছুক্ষণ পর,
শান্তা, সাঈদ খেলাধুলা করে বাসায় আসলো,
.
সাঈদ- আপু, তুমি কখন ওকে এলে? ?
.
নাফিসা- কিছুক্ষণ আগে।
.
সাঈদ – ভাইয়া আসেনি?
.
নাফিসা- হুম, চলে গেছে।
.
সাঈদ – ওফ! দেখাও করতে পারলাম না। ?
.
নাফিসা- কেন! আমি আসছি খুশি হসনি! ? সবসময় ভাইয়া! ভাইয়া!
.
সাঈদ – হুহ! এতো হিংসুটে কেন তুমি ?
.
নাফিসা- যা এখান থেকে ?
.
সন্ধ্যায় পড়তে বসেছি, আরাফ ফোন করলো। মোবাইল টেবিলেই রাখা ছিলো। রিসিভ করলাম,
– আসসালামু আলাইকুম।
.
আরাফ- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করছো?
.
নাফিসা- পড়ছিলাম। কেন ফোন করেছেন?
.
আরাফ- তোমার সাথে কথা বলার জন্য।
.
নাফিসা- একটু আগে না কথা বলে গেলেন!
.
আরাফ- ?জানপাখি, ২ঘন্টারও বেশি সময় চলে গেছে।
.
নাফিসা- তো কি হয়েছে! এখন ফোন রাখেন। আমি পড়ছি।
.
আরাফ- আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ ?
.
নাফিসা- আল্লাহ হাফেজ।
.
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ১১টা মিসকল।
৭টার দিকে আবার ফোন করেছে,
– আসসালামু আলাইকুম
.
আরাফ- ওয়ালাইকুম আসসালাম। রাতে রিসিভ করোনি কেন?
.
নাফিসা- ঘুমিয়ে ছিলাম।
.
আরাফ- এতো তারাতাড়ি!?
.
নাফিসা- হুম রাত জেগে পড়ার অভ্যাস নেই।
.
আরাফ- আচ্ছা, এখন পড়ো।
.
নাফিসা- হুম।
.
নাফিসা- ৫দিন চলে গেলো এক্সাম দিচ্ছি, প্রতিদিনই আরাফ ২/৩ বার করে কল করে। তবে কথা বলার সময় ১/২ মি এর বেশি হয় না। কেননা আমার ফোনে কথা বলতে বিরক্ত লাগে।আজ ৬ষষ্ঠ দিন। সকালে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। এমন সময় আবার ফোন করেছে,
.
নাফিসা- আসসালামু আলাইকুম।
.
আরাফ- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো, জানপাখি ?
.
নাফিসা- আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
.
আরাফ- আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
.
নাফিসা- কেন ফোন করেছেন?
.
আরাফ- কেন বউয়ের খোঁজ নিতে ফোন করতে পারি না! তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে, ভিডিও কল দেই?
.
নাফিসা- না। এখন ভার্সিটি যাবো।
.
আরাফ- তুমি খুব বিরক্ত হও আমার ফোনে?
.
নাফিসা- হ্যাঁ।
.
আরাফ- অন্যান্য লোকদের দেখি, ফোনে কথা বলার জন্য ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। আর আমি এতো ব্যস্ততার মাঝেও তোমার সাথে কথা বলার সময় খুঁজে নেই, আর তুমি বিরক্ত হও! আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আর কল করবো না। আল্লাহ হাফেজ।
.
নাফিসা- আমি কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেছে। হুহ! তাতে আমার কি!? আমি ভার্সিটি চলে এলাম।
দেখতে দেখতে আরও ২দিন কেটে গেছে। এর মাঝে আরাফ আর ফোন করেনি। আম্মুর সাথে কথা হতো মাঝে মাঝে।
বিকেলে নিসা গাড়ি নিয়ে এলো আমাকে নিতে।
.
নিসা- আসসালামু আলাইকুম ভাবি। কেমন আছো??
.
নাফিসা- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি?
.
নিসা- আমিও আলহামদুলিল্লাহ ? তবে ভাইয়া মনে হয় ভালো নেই।
.
নাফিসা- কেন?
.
নিসা- আমি কি জানি তোমাদের ব্যাপার!
.
নাফিসা- আমি আর কিছু বললাম না। হয়তো ওইদিন বলাতে কষ্ট পেয়েছে।
.
নাফিসা- তোমার ভাইয়া না আসবে বলেছিলো?
.
নিসা- ভাইয়া অফিসের কাজে একটু বেশিই ব্যস্ত তাই আসেনি।
.
নাফিসা- ওহ! আচ্ছা।
.
নিসাকে সাথে নিয়ে খেয়ে মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম বাসার উদ্দেশ্যে।
.
রাত ৮টার দিকে, আম্মু মায়ের পাঠানো খাবার গরম করছিলো। আমি আর নিসা সোফায় বসে গল্প করছিলাম। কলিং বেল বাজলে, আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। আরাফকে দেখে আমি অবাক! ? একি আরাফ! এই সাত দিনে চেহারার একি হাল করেছে! চোখেমুখে ক্লান্তি নেমে এসেছে। চোখ গর্তে চলে গেছে, মনে হয় ঠিক মতো ঘুমায়নি।
ও আমাকে দেখে ১টা মুচকি হাসি? দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
আজব ছেলে! এই অবস্থায় হাসে কি করে ও!
আমি রান্নাঘরে গিয়ে আমের জুস বানিয়ে নিয়ে গেলাম তার জন্য। রুমে এসে দেখি আরাফ গোসল করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে মাথা মুচছে আর ফোন লাউডস্পিকারে রেখে শিহাবের সাথে কথা বলছে।
.
শিহাব – তোর চোখেমুখের অবস্থা কি হয়েছে, দেখেছিস একবার! দোস্ত এতো প্রেশারে থাকলে তো পাগল হয়ে যাবি!
.
আরাফ- আব্বু কাল ভোরে ফিরবে, আমার চাপও কমে যাবে।
.
শিহাব – চল আজ সবাই একসাথে খেতে যাই রেস্টুরেন্ট।
.
আরাফ- আচ্ছা দেখি, এখন ফোন রাখি। নামাজ পড়ে জানাচ্ছি।
.
শিহাব- আচ্ছা।
.
নাফিসা- ( সত্যিই তো, আরাফ অনেক চাপে আছে। তার উপর যেখানে ও আমার সাথে কথা বলে মনটা হালকা করতে চায়, আমি তার সাথে রূঢ় ব্যবহার করি! ওকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করবো।)
.
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here