প্রেম_নিবেদন Part- 32

0
2547

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 32
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- সকালে চোখে কোনো আলো পড়লে ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখি আরাফ নেই। পুরো রুমে সূর্যের আলো এসে পড়েছে। আমি দ্রুত উঠে বসে পড়লাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শরীরে জ্বর আছে। কিন্তু আরাফ আমাকে নামাজ পড়তে ও ডাকলো না কেন!
বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখি গ্লাসের সব পর্দা সরানো। নিশ্চয়ই আরাফ সরিয়েছে। গ্লাসে একটা লেখা দেখে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে!
গ্লাসে মার্কার পেন দিয়ে লিখা ছিলো,
” sorry, জানপাখি। আজ তোমাকে জাগাতে পারলাম না। তোমার শরীরে এখনো জ্বর আছে। ঠিকমতো ওষুধ খেয়ে নিও। আমি অতি শীঘ্রই ফিরে আসবো ইনশাআল্লাহ। ভালোবাসি তোমায় ❤”
.
এসব কি! এই লিখা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছে আরাফ! কোথায় গেছে ও! আমার চোখের পানি যে আর কোনো বাধা মানছে না। আমি দ্রুত আমার ফোন নিয়ে আরাফকে কল করলাম। কিন্তু ফোন বন্ধ! বিছানা ছেড়ে দৌড়ে রুমের বাইরে এলাম। না আরাফ নেই। তারপর ছাদে গেলাম, সেখানেও নেই! আবার রুমে ফিরে এলাম। নিসায়ায়ায়া…..
নিসা- ভাবি কি হয়েছে তোমার?
নাফিসা- তোমার ভাইয়া কোথায়?
নিসা- কি জানি। ঘুম থেকে উঠে ভাইয়াকে দেখিনি। হয়তো গিয়েছে কোথাও। এসে পড়বে।
নাফিসা- আমি দ্রুত আলমারি খুলে দেখলাম।
নিসা দেখো, এখানে জামাকাপড় কম। ও নিশ্চয়ই কোথাও চলে গেছে! আমি ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লাম ?
নিসা- ভাবি তুমি কান্না করো না। প্লিজ শান্ত হও। একি! তোমার শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে! ?
হ্যালো, আম্মু তোমরা কোথায়?
আম্মু- এইতো আমরা এখন রওনা দিবো।
নিসা- আম্মু, দ্রুত এসো। ভাইয়া বাসায় নেই। ভাবি অসুস্থ, আমি কি করবো বুঝতে পারছি না!
আম্মু- কি বলছিস এসব! নাফিসার কি হয়েছে?
নিসা- জ্বর।
আম্মু- তুই জলপট্টি দে। আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যে।
নিসা- আচ্ছা।
ভাবি, খাটে উঠে বসো। ভাবিকে ধরে খাটে হেলান দিয়ে বসালাম। তারপর জলপট্টি দিচ্ছি।
প্রায় ১ঘন্টা পর আম্মু আব্বু এসেছে।
আম্মু- নাফিসা, কি হয়েছে!
নাফিসা- আম্মুউউউ? (আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম)
আম্মু- কি হয়েছে? কান্না করছিস কেন?
নাফিসা- আম্মু আরাফ কোথাও চলে গেছে ?
আম্মু- কোথায় যাবে!
নিসা- আম্মু, ভাইয়াকে কল করেছি ফোন অফ।
আব্বু- নাফিসা, কান্না করো না। আরাফ কিছুদিন পরে ফিরে আসবে।
আম্মু- ? ফিরে আসবে মানে! কোথায় গেছে আরাফ!
আব্বু- USA.
আম্মু- কিহ! তুমি জানতে নাকি সব! তাহলে বলোনি কেন?
আব্বু- হুম। ডেট ফাইনাল করা হয় গতকাল সকালে। আরাফ কেন জানি তোমাদের জানাতে নিষেধ করেছিলো। তাই বলিনি।
নাফিসা- আব্বুর কথা শুনে আমি সেন্স লেস হয়ে যাই! চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করলাম। হাতটা প্রচুর ব্যাথা করছে। তাকিয়ে দেখি সেলাইনের সিরিঞ্জ লাগানো।
নিসা- ভাবি! তোমার জ্ঞান ফিরেছে! আম্মু…
আম্মু- কি ভয়টাই না দেখিয়েছিস আমাদের!
আব্বু- এখন কেমন লাগছে নাফিসা?
নাফিসা- আমি শুধু চোখ বুজে ইশারা করলাম, ভালো।
২দিন শুধু সেলাইনের মাধ্যমে আমাকে হসপিটালে রাখা হয়েছে। আজ বিকেলে বাসায় নিয়ে যাবে। আব্বু বাসায় যাওয়ার জন্য হসপিটালের সব কিছু মেনেজ করছে। আম্মু আর নিসা আমার পাশে বসে আছে। নিসার ফোনে কল আসলে সে বাইরে চলে গেলো।
নিসা- অপরিচিত নম্বর থেকে কল এসেছে!
-আসসালামু আলাইকুম।
আরাফ- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস?
নিসা- ভাইয়া!! বাসায় এই পরিস্থিতিতে রেখে এখন জিজ্ঞেস করছো কেমন আছি। ভাবি হসপিটালে ভর্তি।
আরাফ- ?কি হয়েছে? এখন কেমন আছে?
নিসা- জ্বর প্রচুর মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। এখন আগের চেয়ে ভালো। আজ বিকেলে বাসায় নিয়ে যাবো। ২দিন শুধু সেলাইনের মাধ্যমে রাখা হয়েছে। এমন কাজ কিভাবে করলে! কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না! ভাবির কাছে ফোন দিবো? কথা বলবা?
আরাফ- নাফিসা এখন আমার সাথে কথা বলবে না। বাসায় ফিরে আমাকে ১টা কল দিস। তবে নাফিসার সামনে কল দিস না আম্মুর সাথে কথা বলবো।
নিসা- আচ্ছা।
নাফিসা- বিকেলে বাসায় চলে এলাম। মা বাবা এসেছে দেখতে। আমার কিছু ভালো লাগছে না। সবাই উঠে পড়ে লেগেছে আমাকে খাওয়ানোর জন্য। ২বার বমি করেছি। কিন্তু তাদের খাবার খাওয়ানো কমে না।
আরাফ- সন্ধ্যায় আম্মুর সাথে কথা হয়েছে। ইচ্ছেমতো বকাঝকা করেছে। কিন্তু জানপাখির সাথে কথা না বললে মন শান্ত হচ্ছে না ?
নাফিসা- রাত ৯টা বাজে, মা খাবার খাওয়াচ্ছে জোর করে।
– মা দয়া করে আমাকে একা থাকতে দাও। আমি আর খাবো না।
মা- আচ্ছা।
নাফিসা- মা তো চলে গেছে, কিন্তু আবার নিসা এসে আমার পাশে বসেছে। ভাবি আমি তোমার সাথে থাকবো।
নাফিসা- আচ্ছা। একটু পর আমার ফোনে কল বেজে উঠলো।
নিসা- ভাবি তোমার ফোন বাজছে।
নাফিসা- হাতে নিয়ে দেখলাম অপরিচিত বিদেশি নম্বর। পরপর ২বার কেটে দিলাম। তারপর আবার দেয়ায় রিসিভ করলাম, কিন্তু কোনো কথা বলছি না।
হুম, চিনতে ভুল করিনি, এটা আরাফই।
আরাফ- ৩বার কল করার পর নাফিসা রিসিভ করলো, কিন্তু কোনো কথা বলেনি। ওর নিশ্বাসের শব্দ শুনে আমার গলা ভারি হয়ে গেছে। আমি আর কোনো কথা বলতে পারছি না।
হঠাৎ ফোন কেটে গেছে। আমি আবার ব্যাক করেছি কিন্তু ফোন বন্ধ। পরে নিসার কাছে জানতে পারি, নাফিসা তখন বুঝতে পেড়ে আছাড় দিয়ে ফোন ভেঙে ফেলেছে।
আরাফ- ১৭দিন পর দেশে ফিরবো। আজ ৬ষ্ঠ দিন। নাফিসা ছাড়া প্রতিদিন ই সবার সাথে কথা হয়। আজ আবার নিসাকে কল করলাম।
নিসা- হ্যালো ভাইয়া।
আরাফ- কেমন আছিস?
নিসা- ভালো। তুমি?
আরাফ- আছি আলহামদুলিল্লাহ। নাফিসা কেমন আছে? সুস্থ হয়েছে?
নিসা- আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। কিন্তু সব কিছুর প্রতি অনিহা। আম্মু, আন্টি বকে জোর করে ২/১বার খাওয়াতে পারে। ভাবি সারাক্ষণ বিষন্ন থাকে ?।
আরাফ- ব্লুটুথ অন করে একবার তার সাথে কথা বল। কতো দিন ওর স্বর শুনিনা।
নিসা- আচ্ছা, চেষ্টা করছি। তুমি লাইনে থাকো।
আরাফ- আচ্ছা।
নাফিসা- সকালে মা চলে গেছে শান্তার পরীক্ষা থাকায়। আমার ও এ বাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছিলো মায়ের সাথে চলে যাই। কিন্তু আম্মু তো যেতে দিবে না। বারান্দায় বসে আছি, এমন সময় নিসা এলো।
নিসা- ভাবি কি করছো?
নাফিসা- এইতো বসে আছি, এসো।
নিসা- আরাফ ভাইয়ার কথা ভাবছো?
নাফিসা- নিসা, দয়া করে ওই নামটা আমার সামনে উচ্চারণ করো না?
নিসা- ভাবি, মন খারাপ করো না। ভাইয়া আর ১১দিন পরে ফিরে আসবে।
নাফিসা- আমিও তোমাদের কাছে আর ১১দিন আছি, আমাকে নিয়ে আর তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। ?
তারপর আমি সেখান থেকে উঠে ছাদে চলে এলাম।
আরাফ- নাফিসার কথা শুনে আমার ভেতরটা কেপে উঠলো ?। তারপর আমি ফোন কেটে দিলাম। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি জানপাখিকে ? এদিকে আমার কাজে মনও বসছে না। কিন্তু এটাও যে গুরুত্বপূর্ণ ?
৯ম দিনে আবার ফোন করলাম নিসাকে,
নিসা- বিকেলে ভাবিকে সাথে নিয়ে ছাদে দোলনায় বসে আছি। এমন সময় ভাইয়া ফোন করলো। আমি উঠে কর্ণারে রেলিং এর পাশে চলে এলাম।
– হ্যাঁ ভাইয়া বলো।
আরাফ- জানপাখি কি করে?
নিসা- দোলনায় বসে আছে।
আরাফ- তুই কোথায়?
নিসা- আমি রেলিংএর পাশে দাড়িয়ে।
আরাফ- তুই এখানেই থাক, ভিডিও কল দেই। দূর থেকে একটু দেখবো।
নিসা- ভাবি দেখে ফেললে!
আরাফ- দেখবেনা।
আমি কল কেটে দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে নিসাকে ভিডিও কল করলাম। দেখলাম নাফিসা দোলনায় পা তুলে হাটুর উপর মাথা রেখে বসে আছে। কিন্তু ওর চেহারা তেমন ভাবে দেখা যাচ্ছে না।
নিসা- OMG! ভাবি দোলনা থেকে নেমে আমার কাছে আসছে! দেখে ফেলেনিতো! আমি এবার কি করবো! কল কেটে দিবো নাকি এভাবেই থাকবো!?
ভাবি আমার কাছে এসে এক টানে ফোনটা নিয়ে আছাড় দিলো?
নাফিসা- Sorry.
নিসা- এ….! এটা কি হলো! আমার শখের ফোন ভেঙে এখন আবার sorry বলে চলে গেলো! ?
আরাফ- নাফিসা কাছে আসার পর সাথে সাথে কল কেটে গেলো! নিশ্চয়ই এটাও ভেঙে ফেলেছে ?
.
.
চলবে…..

আপনাদের কাছে গল্প ভালো লাগে না, তাই না!
কেউ শেয়ার করে না আমার গল্প। কষ্ট পাইলাম ? (Nur Nafisa)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here