প্রেম_নিবেদন Part- 33

0
2669

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 33
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- আরাফ বাসায় নেই আজ ১৩দিন। সকালে আমি সীমা আন্টি আর আম্মুর সাথে রান্না ঘরে বসে আছি আর টুকটাক কাজ করে দিচ্ছি। আর আম্মু স্বাস্থ্যের নানান বানী শুনিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় কে যেন কলিং বেল বাজালো!
আম্মু- সীমা দেখোতো কে এলো!
নাফিসা- আম্মু আমি দেখছি।
আম্মু- আচ্ছা।
নাফিসা- আমি দরজা খুলে ওপাশের মানুষটা কে দেখে দ্রুত দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার চোখের পানির বাধ ভেঙে গেছে। এদিকে কলিং বেল বাজিয়েই চলেছে।
নিসা- ভাবি কে এসেছে? কান্না করছো কেন?
নাফিসা- আমি দৌড়ে আমার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
নিসা- দরজা খুলে দেখি ভাইয়া এসেছে! ?
আরাফ- কেমন আছিস?
নিসা- ভালো।
আরাফ- আম্মু কোথায়?
নিসা- রান্নাঘরে।
আরাফ- আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
আম্মু- আরাফ!? ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আরাফ- আমি আম্মুকে জরিয়ে ধরলাম।
কেমন আছো?
আম্মু- আলহামদুলিল্লাহ। চেহারার একি হাল করেছিস!
আরাফ- আব্বু কোথায়?
আম্মু- বাইরে গেছে। এসে পড়বে এখনি। নাফিসা দেখেছে তোকে?
আরাফ- হুম ?
আম্মু- ফাজিল ছেলে, অনেক কষ্ট পেয়েছে তোর জন্য। যা তার কাছে ?
আরাফ- হুম ?।
আরাফ- আমি আমার রুমের সামনে গেলাম। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ।
– জানপাখি, দরজা খুলো। জানপাখি…..
দেখো, এখন কিন্তু আবার চলে যাবো। প্লিজ দরজা খুলো। না হলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে ?
বেশ কিছুক্ষণ ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়া নেই!?
নিসা- অনেক কষ্ট দিছো, এবার বাইরেই থাকো ?
আরাফ- ? একটা হেল্প কর।
নিসা- ভুলেও না। ? তোমার হেল্প করতে গিয়ে অবশেষে আমার ফোনটাও হারাইছি। ?
আরাফ- কালকেই ফোন পেয়ে যাবি। আজ শেষ বারের মতো হেল্প কর।
নিসা- কি?
আরাফ- ভাইয়া, বলে ভয়ংকর ভাবে, খুব জোরে চিৎকার কর।
নিসা- এতো জোর কোথায় পাবো!?
আরাফ- ফাজিল মেয়ে ? যা বলছি তা কর।
নিসা- ? ভাইয়ায়ায়ায়া!
নাফিসা- আমি চুপচাপ খাটে বসে ছিলাম, নিসার চিৎকারে আমার শরীর কেপে উঠলো! ?আরাফের কিছু হয়নি তো! আমি দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। সাথে সাথে আরাফ আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমিও দ্রুত বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম কিন্তু ব্যার্থ হলাম। আরাফ আমাকে এক টানে তার বুকে মিশিয়ে নিলো। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমার দম বন্ধ হয়ে যাবার পালা হয়েছে! আর আমি এদিকে ওর পিঠে এলোপাথাড়ি হাত ছুড়তে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই ও ছাড়ছে না।
আরাফ- এভাবে হাত ছুড়লে তো হাতে ব্যাথা পাবে।
নাফিসা- (আশ্চর্য! সে নিজে ব্যাথা পাচ্ছে তার খেয়াল নেই, আমার হাতের চিন্তা করছে)
ছাড়ো আমাকে, ছুবেনা আমাকে। যেখান থেকে এসেছো ফিরে যাও।
আরাফ- যেখানেই থাকিনা কেন দিন শেষে তো পাখির নীরেই ফিরতে হবে।
নাফিসা- এবার হার মেনে আমিও তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
এতো ভালোবাসো কেন আমাকে! এভাবে ভালোবাসতে হয়!??
নাফিসা- অনেক্ক্ষণ এভাবে থাকার পর যখন আমার কান্নার বেগ কমে এলো আরাফ আমার মাথার দুপাশে দু’হাতে ধরে আমার গাল গড়িয়ে পড়া চোখের পানি তার ঠোঁট দিয়ে শুষে নিলো। তারপর আমার ঠোঁট দুটো তার ঠোঁটের আয়ত্তে নিয়ে নিলো ?। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলো।
আমি আবার তাকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আরাফ- এই কয়দিনে চেহারার একি হাল করেছো! এমন পাগলামি কেউ করে!
নাফিসা- ? তোমার চেহারার অবস্থা এমন কেন?
আরাফ- তুমি ভালো থাকলেই তো আমি ভালো থাকতাম। তোমার জন্য চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ওকে, আজ সারাদিন ২জন শুধু ঘুমাবো।
গোসল করেছো?
নাফিসা- হুম।
আরাফ- আচ্ছা তুমি বসো, আমি গোসল করে আসি।
নাফিসা- আমি ওকে ছেড়ে দিলে ও আমার কপালে চুমু দিয়ে গোসল করতে চলে গেলো। আমি খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, জানিনা! আরাফের ডাকে ঘুম ভাঙলো। দেখি ও ২প্লেট খাবার নিয়ে এসেছে।
আরাফ- জানপাখি, মুখে পানি দিয়ে আসো।
নাফিসা- আমি খাবো না। ভালো লাগছে না।
আরাফ- আমি কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।যাও..
নাফিসা- ? আমি মুখ ধুয়ে এলাম। আরাফ আমাকে খায়িয়ে দিচ্ছে সেও খাচ্ছে।
– আমি আর খাবো না।
আরাফ- সেকি! ২জনে মিলে তো ১প্লেট ও শেষ হলো না! সব খেতে হবে।
নাফিসা- ?জোর করেই খায়িয়ে দিলো। খাবার শেষ করে আমি আবার শুয়ে পড়লাম আরাফ প্লেট রাখতে গেলো। একটু পর সে এসে আমাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরলো। আমি তার দিকে ঘুরে তাকালে সে আমার গলায় গভীর ভাবে চুমু খেলো।
আরাফ- ওফ! জানপাখি, ১৩দিন এই জিনিসটা মিস করেছি।
নাফিসা- ১৭দিন পরে না আসার কথা ছিলো, তাহলে ১৩দিন পর কেন?
আরাফ- তোমার জন্য ১৭দিনের কাজ ১৩ দিনে করে এসেছি। তুমি যখন বলেছো ১১দিন এ বাড়িতে থাকবে তখন তো আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো!
নাফিসা- তুমি শুনলে কিভাবে!
আরাফ- নিসার কানে ব্লুটুথ ছিলো। আমি তোমার সব খবর ই রেখেছি।?
নাফিসা- ?
আমার কপালে চুমু দিয়ে,
আরাফ- ঘুমাও এখন। আজ সারাদিন শুধু ঘুমাবা।
নাফিসা- দুপুরের দিকে ঘুম ভেঙে গেলো, তাকিয়ে দেখি পাশে আরাফ নেই। আমি দ্রুত উঠে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। এমন সময় দেখলাম আরাফ রুমে প্রবেশ করলো। আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম,
– কোথায় গিয়েছিলে? জানো, আমি ভয় পেয়েছি ?
আরাফ- জানপাখি, আমি মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছি।
নাফিসা- কখনো আমাকে ঘুমে রেখে কোথাও যাবেনা তুমি।
আরাফ- ডেকেছিলাম তো তোমাকে ২বার। কিন্তু উঠোনি, তাই চলে গেলাম। যাও নামাজ পড়ে আসো।
নাফিসা- না।
আরাফ- ?
নাফিসা- তারপর সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম। আব্বু আজ সিলেট যাবে।
আব্বু- কি, নাফিসার মন ভালো হয়েছে?
আম্মু, নিসা- ?
নাফিসা- আমি এদিকে লজ্জায় মাথা তুলতে পারছি না।
আম্মু- হয়েছে, আর লজ্জা পেতে হবে না। খাবার শেষ কর।?
নাফিসা- খাবার শেষ করে সব কিছু গুছিয়ে রুমে চলে এলাম। আরাফ বিছানায় শুয়ে আছে। আমাকে কাছে ডাকলো।
-কি?
তারপর টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।
আরাফ- ঘুমাও।
নাফিসা- না, এখন আর ঘুম আসবে না। এমনিতেই চোখ মুখ ফুলে গেছে।
আরাফ- তাহলে কি করবে?
নাফিসা- বাইরে ঘুরতে যাবো। বালুর মাঠে ?
আরাফ- আচ্ছা বিকেলে নিয়ে যাবো।
নাফিসা- তোমার বাইকে যাবো।
আরাফ- ? বাইক তো স্টোর রুমে। এতোদিনে হয়তো মরিচা ধরেছে। আজ ওয়াস করতে দিয়ে কাল নিয়ে যাবো। আর আজ গাড়ি নিয়ে যাবো।
নাফিসা- ওকে।
বিকেলে আরাফের সাথে বালুর মাঠে এলাম। নদীর ধারে কাশফুল গুলো খুব সুন্দর লাগছে। আর মিষ্টি বাতাস। ?
আরাফ- জানপাখি, ছোট বেলার কবিতা মনে পড়ে গেলো,
চিকচিক করে বালি কোথা নেই কাদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
নাফিসা- হয়নি তো!
চিকচিক করে বালি কোথা নেই কাদা,
একধারে নাফিসা, পাশে একটা গাধা ?
আরাফ- ???
নাফিসা- তারপর আরাফ আমার সামনে হাটু গেড়ে বালিতে বসে পড়লো। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে,
আরাফ- কথা দিচ্ছি থাকবো পাশে সারাজীবন ❤️
যদি মঞ্জুর করো তুমি আমার এ #প্রেম_নিবেদন ❤️
নাফিসা- আমি তার হাতে হাত রেখে,
– মঞ্জুরকৃত ?
আরাফ আমার হাত তার বুকের বা-পাশে রেখে চোখ বুজে বললো,
আরাফ- জানপাখি, আজ এখানে শান্তির ঢেউ খেলে যাচ্ছে ?
আরাফ- হঠাৎ নাফিসা হাত এক ঝটকায় ছুটিয়ে নিলো, তাকিয়ে দেখি ও কাশফুল নিতে গেছে।️?
আমি বালি ঝেড়ে উঠে তার কাছে গেলাম। ও চিৎকার দিয়ে কাশফুল ফেলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
– জানপাখি, কি হয়েছে? ভয় পেলে কেন?
নাফিসা- বিচ্ছু ?
আরাফ- হাহাহা…. ? আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছি।
নাফিসা- ছাড়ো।
আরাফ- আর একটু থাকো না এভাবে।
নাফিসা- উহু, বাসায় যাবো।
আরাফ- আচ্ছা চলো।
আমি ছেড়ে দিলাম, কিন্তু নাফিসা আমাকে ঝাপটে দরে রাখলো।
– কি হলো! বাসায় যাবে না?
নাফিসা- না, এভাবেই থাকবো ☺️
আরাফ- ?।
এমনি আমার ফোন বেজে ওঠে আমি নাফিসাকে এক হাতে জড়িয়ে রেখেই ফোন রিসিভ করলাম ,
আসসালামু আলাইকুম।
শিহাব- ওয়ালাইকুম আসসালাম। দোস্ত বালুর মাঠটাও বাদ রাখলি না তোদের রোমাঞ্চের ? আসছিলাম ঘুরতে তা আর হলো না!
আরাফ- ?যেখান থেকে এসেছিস ফিরে যা, সামনের আসিস না।
শিহাব- হুম, already চলে এসেছি। চালিয়ে যা ?
আরাফ- আল্লাহ হাফেজ।
নাফিসা- তোমার বন্ধুগুলো সব বদের হাড্ডি ?
আরাফ- ?
নাফিসা- আযান দিয়েছে, নামাজে যাও।
আরাফ- তুমি একা থাকবে কিভাবে! চলো বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।
নাফিসা- না, আমি এখানেই আছি। তুমি মসজিদে যাও৷ তোমার ফোনটা দিয়ে যাও।
আরাফ- আচ্ছা।
নাফিসা- এই ২টা ফাইলের লক করা কেন? লক খুলো।
আরাফ- ? যাতে কেউ না দেখতে পারে, তাই লক করেছি। A Janpakhi N লিখো। সব পাসওয়ার্ড খুলে যাবে।
নাফিসা- ওকে ?
আরাফ, মসজিদে গেলো আর আমি ছবি গুলো দেখছি। আমার এতো ছবি তুলেছে আর আমি কখনো বুঝতেই পারিনি! ?
নাফিসা- আরাফ নামাজ পড়ে এসেছে সাথে ২টা ফ্রুটু জুস নিয়ে এসেছে।
– লুকিয়ে লুকিয়ে আমার এতো ছবি তুলেছো কেন?
আরাফ- সামনে থাকলে তুলতে দিতে!?
নাফিসা- ? জুসের বোতল খুলে আমার হাতে ১টা দিলো, আর ১টা থেকে সে খেতে শুরু করলো। কিন্তু আমি খাচ্ছি না,
আরাফ- কি হলো? খাও..
নাফিসা- আমি আমার টা আরাফের হাতে দিয়ে ওর টা আমি নিয়ে নিলাম।
– আমি এটা খাবো।
তারপর খাওয়া শুরু করলাম। আর আরাফ মুচকি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– তুমি খাও না কেন?
আরাফ- এবার আমিও যে ওটা খাবো।
নাফিসা- তারপর আমার হাত থেকে নিয়ে আবার সে খেলো।
– দুজনেই যদি এটা খাই, তাহলে এটা খাবে কে?
আরাফ- ১টা শেষ করে ২জন আবার ওটা খাবো ?
নাফিসা- ? আচ্ছা বাসায় চলো.
.
.
চলবে……
.
ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবে। 🙂 (Nur Nafisa)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here