প্রেম_নিবেদন part – 6

0
2492

story- #প্রেম_নিবেদন part – 6
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
পরদিন,
নাফিসা- সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ ও কুরআন শরীফ পড়ে আবার সেলাই কাজে লাগে গেলাম। কিছুক্ষণ পর মা ডাকলো,
মা- নাফিসা, এদিকে আয় নাস্তা করে নে।
নাফিসা- মা তোমরা খাও, আমি একটু পর আসছি।
মা- এখনি আয়। এতো বেশি চাপে থাকলে শরীর খারাপ করবে।
নাফিসা- কি আর করার, মায়ের কথামতো খেতে চলে গেলাম।
মা- কিরে, আজ ভার্সিটি যাবি না?
নাফিসা- না মা। কাল থেকে যাবো।
এমন সময় দিনা মায়ের ফোনে কল করল।
নাফিসা- হ্যালো।
দিনা- আসসালামু আলাইকুম।
নাফিসা- এখন খেতে বসেছি, সালাম নিতে পারছি না।
দিনা- ওহ, আচ্ছা। আজ ভার্সিটি আসবি না?
নাফিসা- নারে কাল থেকে আসবো ইনশাআল্লাহ।
দিনা- এতো কি কাজ করছ বাসায়?
নাফিসা- ২ দিনের জন্য উপার্জন করা বেছে নিলাম।
দিনা- তা কোন কাজ টা করছ, শুনি?
নাফিসা- সেলাই কাজ করছি।
দিনা- ওহ আচ্ছা।
নাফিসা- হুম, ২দিনের নোট গুলো আমাকে একটু দিস।
দিনা- হুম অবশ্যই ?। এখন রাখি, আল্লাহ হাফেজ।
নাফিসা- হুম।
.
.
আরাফ- ভার্সিটিতে ছুটির পর কৃষ্ণচূড়া গাছের কাছে বাইকে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হটাৎ দেখলাম আমাদের পাশ দিয়ে চাশমিশ এর পার্টনার যাচ্ছে।
– শিহাব, ওর নাম কিরে?
শিহাব – সঠিক তো জানিনা। মনে হয় দিনা। ওইদিন ডাকতে শুনছিলাম।
আরাফ- ওহ, হ্যালো চাশমিশ পার্টনার।
দিনা- ডাক শুনে মেজাজ টা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তবুও তাকালাম না।
আরাফ- আরে, কানে শুনে না নাকি! এই দিনা।
দিনা- এবার পিছনে ফিরে গেলাম তাদের কাছে।
– কি হয়েছে? চেচাচ্ছেন কেন?
আরাফ- চেচালাম কোথায়! ১বার ডাকলাম, কানে শুনতে পাও নি। তোমার নাম কি?
দিনা- আজব তো! এতক্ষণ নাম ধরে ডেকে এখন নাম জিজ্ঞেস করছেন!
আরাফ- ওহ, আচ্ছা। তারমানে দিনা ই।
দিনা- কি জন্য ডেকেছেন?
আরাফ- তোমার বান্ধবি কোথায়?
দিনা- আসে নি।
আরাফ- ওই দিন বড় বড় কথা বলে এখন ভয়ে পালিয়েছে নাকি! ??
সবাই – হাহাহা ??
দিনা- নাফিসা ভয় পাওয়ার মেয়ে নই।গরিব লোকেরা ভয় পায় না। মনে সাহস নিয়ে চলে। আর পালিয়ে যাবে কেন! আপনার কাছে ৩দিন সময় নিয়েছে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য।
আরাফ- হুম, আজতো ২ দিন চলে গেলো।
দিনা- আরো ১ দিন বাকি আছে তো ?
এমন সময় মাসুদ স্যার আর মনির স্যার আসছে গেইটের দিকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য।
মাসুদ স্যার – আরে দিনা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কেন? বাসায় যাবে না?
দিনা- হ্যাঁ স্যার যাচ্ছি।
মাসুদ স্যার – নাফিসা এখন আসে না কেন?
নাফিসা- স্যার, ওর একটু সমস্যা ছিলো তাই আসেনি। স্যার আমি আসি এখন।
মাসুদ স্যার – হুম। নাফিসা মেয়েটি গরিব হলেও অনেক মেধাবী।
আরাফ- দিনা ও স্যাররা চলে গেলো। স্যার এর কথাটি শুনে কেন জানি খুব খারাপ লাগলো ?
শিহাব – একি, এভাবে আছিস কেন? তোর আবার কি হলো!
আরাফ- কিছুনা। বাসায় যাই ভালো লাগছে না।
ফাহিম – আচ্ছা যা, আজ সন্ধ্যায় আসিস চৌরাস্তার রেস্টুরেন্টে যাবো।
আরাফ- আচ্ছা। bye.
তারপর বাসায় ফিরে আসলাম।
.
বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর নিসা এসে চিতকার করে ডাকছে।
নিসা- এই ভাইয়া, উঠো না কেন! উঠো উঠো ওওওও.
আরাফ- অফফ! নিসা যা তো এখান থেকে , বিরক্ত করিস না। ঘুমাতে দে ?
নিসা- আরে আর কত ঘুমাবা! সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আর শিহাব ভাইয়া তোমার ফোনে কখন থেকে কল করেই যাচ্ছে, শুনতে পাও না?
আরাফ- আমি তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম। কি! সন্ধ্যা হয়ে গেছে! ? আরো আগে ডাকলি না!
নিসা- সেই কখন থেকে ডাকছি, আম্মু এসেও ডেকে গেলো। তোমার তো কোনো সাড়া ই নেই! ?
আরাফ- ফোন নিয়ে দেখি শিহাবের ১৭টা মিসকল। ওহহ! আজ তো রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেলাম বাইক নিয়ে।
.
মা- কিরে সন্ধ্যা হয়ে গেলো যে, কাপড় দোকানে দিয়ে আসবি না?
নাফিসা- হুম, এটার একটু বাকি আছে, শেষ হলেই যাচ্ছি।
মা- অন্ধকার হয়ে আসছে একা যাবি কিভাবে! সাঈদকে সাথে নিয়ে যাস।
নাফিসা- আচ্ছা।
.
কিছুক্ষণ পর চলে এলাম রেস্টুরেন্ট। দেখি সবাই রেগে তাকিয়ে আছে।
আরাফ- কিরে এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন!
শিহাব – কতোগুলো কল করেছি, এখন আবার জিজ্ঞেস করছিস রেগে আছি কেন!?
আরাফ- সরি দোস্ত ঘুমিয়ে ছিলাম। এখন চল খাবার অর্ডার কর।
শিহাব – হুম চল।
.
.
নাফিসা- রাত ৮টা বেজে গেছে, সাঈদ চল আমার সাথে।
সাঈদ – ওকে আপু, চলো।
সাঈদকে নিয়ে কাকার দোকানে গেলাম,
নাফিসা- কাকা, সবগুলো কমপ্লিট হয়ে গেছে। দেখে নিন।
কাকা- তোর কাজ অনেক সুন্দর হয়েছে নাফিসা। এতো তারাতাড়ি এতো গুলো জামা বানালি কি করে! সারাদিন খেটেছিস নিশ্চয়?
নাফিসা- আমি উত্তরে শুধু ১টা হাসি দিলাম।
কাকা- এই নে তোর টাকা। আর তুই চাইলে মাঝে মাঝে আমার কাছ থেকে কাপড় নিয়ে কাজ করতে পারোছ।
নাফিসা- আচ্ছা কাকা, ভেবে দেখবো। কাকা ৩৫০০টাকা দিয়েছে। ধন্যবাদ কাকা, আমার এই উপকার টা করার জন্য ?
কাকা – ?
.
.
আরাফ- রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম অপজিট পাশের ওই ট্রেইলারের দোকান থেকে আজও নাফিসা বেরিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপার কি! মেয়েটা এতো রাতে এখানে কেন!
শিহাব – কিরে দাড়িয়ে রইলি কেন? বাসায় যাবি না?
আরাফ- তোরা যা, আমার ১টা কাজ আছে।
শিহাব – আচ্ছা।
আরাফ- তারপর আমি সেই দোকানে গেলাম।
– হ্যালো আংকেল,
সোহেল – জ্বি বলো।
আরাফ- একটু আগে যে ১টি মেয়ে বেরিয়ে গেলো সাথে ১টা ছোট ছেলে ছিলো তাকে আপনি চিনেন?
সোহেল – হ্যাঁ চিনিতো। কেন?
আরাফ- (কি বলি এখন!) ওকে দেখেছিলাম, আমাদের ভার্সিটিতে মনে হয় পড়ে। এতো রাতে এখানে আসলো যে, তাই জিজ্ঞেস করলাম।
সোহেল – ও আচ্ছা। আমার কাছ থেকে কাপড় অর্ডার নিছিলো ২ দিনের জন্য। ওইগুলাই ফেরত দিতে আইছে। খুব ভালো ১টা মাইয়া। পরিশ্রম করতে জানে।
আরাফ- ওহ আচ্ছা। তারপর বাসায় চলে আসলাম। সারাক্ষণ শুধু মেয়েটার কথাই ভাবছি। ও কি আমার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য কাজ করেছে! আমি মনে হয় সেদিন একটু বেশি ই বলে ফেলছি। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
নাফিসা- বাসায় এসে সব টাকা একসাথে করলাম। ৯১০০ টাকা হয়েছে?। বাকিটা মায়ের কাছ থেকে নিয়ে ১২০০০টাকা মিল করে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
গল্প ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ 🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here