প্রেম_নিবেদন Part- 7

0
2361

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 7
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- পরদিন ভার্সিটিতে গেলাম। যখন গিয়েছিলাম তখন আরাফকে পাই নি। ক্লাস শেষ করেও খুজতে শুরু করলাম। আসেনি নাকি আজ!!
অবশেষে দেখলাম ক্যানটিনের সামনে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। দিনাকে সাথে নিয়ে সেখানে গেলাম।
.
আরাফ- বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম, হঠাৎ আমার সামনে কেউ এসে টাকা ধরলো। তাকিয়ে দেখি চাশমিশ। ?
নাফিসা- এই নিন আপনার টাকা।
আরাফ- লাগবে না টাকা। তোমার কাছে ই রেখে দাও।
নাফিসা- আপনার টাকা আমি রেখে দিবো কেন! ভয় পাবেন না, এটা হারাম না, হালাল টাকা। পরিশ্রমের বিনিময়ে রোজগার করা টাকা।
শিহাব – তা কি করে রোজগার করেছো? রিক্সা চালিয়ে নাকি অন্যের বাসায় কাজ করে! ????
নাফিসা- কেন রিক্সা চালানো, অন্যের বাসায় কাজ করে খাওয়া কি অপরাধ! এতো অহংকার নিয়ে ঘুরেন কিভাবে আপনারা! মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে। আর আপনারা তাদের উপহাস করে বসে বসে আড্ডা দেন। ১দিন তাদের অবস্থানে নিজেকে দাড় করিয়ে দেখেন তো অনুভূতিটা কেমন হয়!
শিহাব – অ আচ্ছা, তা ভেবে দেখবো। তা তুমি কিভাবে উপার্জন করলে সেটা বললে না তো!
নাফিসা- সেটা আপনাকে বলতে বাধ্য নই।?
আরাফ- ওফফ! শিহাব চুপ কর তো।
নাফিসা- টাকাটা ধরুন।
আরাফ- বললাম তো লাগবে না।
নাফিসা- (আরাফের হাত ধরে টাকাটা তার হাতে রেখে) নাফিসা না খেয়ে মরবে, তাও অন্যের টাকা নিয়ে চলবে না। ? আল্লাহ হাফেজ।
বলে সেখান থেকে চলে আসলাম।
আরাফ- এ কি বলে গেলো মেয়েটা! এতো জিদ্দি! আমি শুধু তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি! ?
শিহাব- কিরে, তুই কিছু বললি না!
আরাফ- সব বিষয় নিয়ে মজা না করলে তোদের চলে না! ?
শিহাব – যাক বাবা! তোর আবার কি হয়ে গেলো!
আরাফ- কিছু না। বাদ দে! তারপর তারা সবাই হাসি ঠাট্টা করছে। কিন্তু আমার কিছু ভালো লাগছে না। নিজেকে কেন জানি খুব অপরাধী লাগছে?, অপর দিকে খুব রাগও হচ্ছে আমাকে টাকা দিয়ে গেলো! ?
.
নাফিসা- দিনা আর আমি বাসায় যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখলাম রাস্তার ওপাশে বাসের সাথে ১টা রিকশার ধাক্কা লেগে রিকশাটি উল্টে যায়। রিকশায় ১জন মহিলা ছিলো। আমি আর দিনা দ্রুত রাস্তা পাড় হয়ে সেখানে গেলাম। এতোক্ষণে সেখানে অনেক লোকের ভিড় জমে গেছে। সেখানে গিয়ে দেখি মহিলাটির মাথা ফেটে রক্ত ঝড়ছে সাথে হাতের দিকটাও ছিলে গেছে। রিকশাওয়ালাও কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে। সবাই তাকিয়ে দেখছে। কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না।
– আজব তো! আপনারা তাকিয়ে কি দেখছেন। মানুষের বিপদে সাহায্য না করে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছেন!! ? দিনা তুই ১টা গাড়ির ব্যবস্থা কর। উনাকে হাস্পাতালে নিতে হবে।
দিনা- হুম যাচ্ছি।
নাফিসা- আমি আমার ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আন্টির মাথায় চেপে ধরলাম। দিনা ১টা সিএনজি নিয়ে এলো। তারপর উনাকে আমি আর দিনা হাস্পাতালে নিয়ে এলাম। সাথে রিকশাওয়ালাকেও। সারারাস্তায় ই আন্টির জ্ঞান ছিলো, কিন্তু কিছু করার শক্তি ছিলো না। উনাকে কেবিনে নেয়া হলো। উনার ফোন আমার হাতে ছিল। কার কাছে ফোন দিবো বুঝতে পারছিলাম না! ১ নম্বরে ডায়াল করে দিলাম। ভাগ্যবশত উনার হাসব্যান্ড এর ফোনে কল গেলো। তারপর উনাকে সব বললাম। উনি আমাকে ১টা রিকুয়েষ্ট করলেন, যাতে উনি না আসা পর্যন্ত আমি সেখানে থাকি।
কিছুক্ষণ পর,
ডাক্তার – রোগীর রক্তের প্রয়োজন।
নাফিসা- এখন আমি কি করি!
দিনা- রক্তের গ্রুপ কি?
ডাক্তার – O +ve.
দিনা- আমারটা তো B +ve.
নাফিসা- আমার টা O +ve.
ডাক্তার – ওকে চলুন। ১ব্যাগ হলেই হবে।
নাফিসা- আমি চলে গেলাম রক্ত দিতে। এতোক্ষনে উনার হাসবেন্ড চলে এসেছে। আন্টিকে রক্ত দেয়া হলে আমি কিছুক্ষণ বাইরে বসে আংকেল এর সাথে কথা বললাম। উনি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। বকশিস হিসেবে কিছু দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। কারণ আমি টাকার বিনিময়ে সাহায্য করি নি, মানবতার খাতিরে সাহায্য করেছি। কিছুক্ষণ পর আন্টির কাছে গেলাম,
নাফিসা- এখন কেমন আছেন, আন্টি?
আন্টি উত্তরে শুধু একটু হাসলেন, সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি বুঝতে পারলাম এখন কথা বলার শক্তিটুকু উনার নেই। আমি বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
.
খুব ক্লান্ত লাগছিলো। তাই আমি আর দিনা রিকশা নিয়ে বাসায় আসলাম।
মা- কিরে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে তোর?
নাফিসা- তেমন কিছু না।
মা- তেমন কিছু না মানে!! তোর জামায় রক্তের দাগ লেগে আছে!
নাফিসা- পরে মাকে সব বলে দিলাম।
মা- অন্যের সাহায্য করেছিস ভালো কথা, কিন্তু নিজের অবস্থা টা তো একবার দেখবি। নিজের স্বাস্থ্যের কি অবস্থা!
নাফিসা- মা, ওনার জায়গায় তো আজ আমি অথবা তুমি ও হতে পারতে। ভেবে দেখো তো! এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। ২/১ দিনেই ঠিক হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। আমার ক্লান্ত লাগছে, বিশ্রাম নিবো। ?
.
আরাফ- সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি বাসায় কেউ নেই। আম্মুকে কল করলাম আব্বু রিসিভ করলো।
আব্বু – হ্যালো।
আরাফ- আব্বু, আম্মু কোথায়!? বাসায় তো দেখছি কেউ নেই।
আব্বু – আমরা হসপিটালে।
আরাফ- কিহ! হসপিটালে কেন?
আব্বু- তোর আম্মুর এক্সিডেন্ট হয়েছে।
আরাফ- কি বলো এগুলো! কখন! তোমরা এখন কোন হসপিটাল?
তারপর আর দেড়ি না করে সেখানে গেলাম। আব্বুর কাছ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনলাম। আম্মুকে এই অবস্থায় দেখে একদম ভালো লাগছে না। নিশব্দে কেদে দিলাম। আর মনে মনে অই মেয়েটার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। যদি ১ বার দেখা করতে পারতাম, তাহলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতাম “মানুষ এতো মহৎ হয় কি করে!”
.
নাফিসা- রাতে খুব জ্বর হলো। বাবা ওষুধ নিয়ে আসছে। আর মায়ের সেবাযত্ন তো আছে ই। এতো ভালো কেন হয় বাবা-মা!
পরদিন দিনা এসেছিলো দেখতে, তারসাথে কিছুক্ষন গল্প করেছি।
.
.
গল্প ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ 🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here