প্রেম_নিবেদন part- 9

0
2169

story- #প্রেম_নিবেদন part- 9
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
আরাফ- বাসায় কলিং বেল বাজালাম। নিসা দরজা খুলে দিলো।
নিসা- ??আজও এই অবস্থা!! প্রতিদিন ই পুকুরে গোসল করে আসতে হয়!!
আরাফ- হুম হয়। তোর কি! সর এখান থেকে।
নিসা- ?
আরাফ- আম্মুর শরীর এখন কেমন?
নিসা- ভালো।
আরাফ- তারপর রুমে চলে আসলাম।
.
নাফিসা- বাসায় আসলাম ভিজে কাপড়ে। দিনার ওড়নাটা থাকায় আজ রক্ষা। না হলে কিভাবে বাসায় আসতাম!!
মা- কিরে তোর এই অবস্থা কে? ভিজলি কি করে!
নাফিসা- মা, ভার্সিটির পুকুরে পড়ে গেছি.
মা- কি করে পড়লি?
নাফিসা- এখন চলো আমার সাথে, আবার পড়ে দেখাই কিভাবে পড়েছি।
মা- ? কতোবার না করলাম, শরীরটা দুর্বল আজ যাস না। কোনো কথাই তো শুনছ না।
নাফিসা- দুরররর, কিছু হয় নি।
.
আরাফ- ১সপ্তাহ পর পরীক্ষা, রাতে পড়তে বসেছি। কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মন বসছে না। বার বার চাশমিশের চেহারা ভেসে উঠছে সামনে। ওফফ! সারাদিন শুধু এই মেয়ের কথা মনে পড়ছে কেন!! ?
সবসময় যাকে দেখলে রাগ হয়, আজ কেন তাকে দেখে খুব ভালো লাগলো!! কিছুই বুঝতে পারছি না আমি!! তাহলে কি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি!! দুরর… ! কি ভাবছি আমি এসব! সামনে আমার এক্সাম, এখন মাথায় চাশমিশ চেপে বসে আছে!
তারপর আর তেমন একটা ভার্সিটি যাই নি এক্সামের জন্য । মাঝে মাঝে প্রয়োজন হলে গিয়েছি। নাফিসাকে কখনো দেখেছি, কখনো দেখি নি। কিন্তু সবসময়ই ওর কথা মনে পড়তো, বাসায় পড়তাম সাথে ওর কথা ভাবতাম। এভাবে ই এক্সাম শেষ করলাম।

২ মাস পর,……..
নাফিসা- হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।
দিনা- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস?
নাফিসা- আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস?
দিনা- আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
নাফিসা- বাসার সবাই কেমন আছে? কেমন চলছে তোর বিবাহিত জীবন?
দিনা- আলহামদুলিল্লাহ ?। চল আজ তোকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট যাবো।
নাফিসা- হঠাৎ?
দিনা- এমনি, অনেকদিন হলো তোর সাথে দেখা হয় না। প্লিজ না করিস না।
নাফিসা- ওকে।
তারপর দিনার সাথে রেস্টুরেন্ট গেলাম।
.
আরাফ- পরীক্ষা শেষ হলো গতকাল। আম্মু এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এদিকে সকাল থেকে নিসা মাছির মতো ভো ভো শুরু করেছে শপিংয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাবি এখান থেকে ?
নিসা- তোমাকে যেতেই হবে, আমি কিছু জানি না।
আম্মু – আরাফ, চল আমার ও কিছু কেনা লাগবে।
আরাফ- আম্মু তুমিও শুরু করলা! তোমরা ২জন চলে যাও।
আম্মু – না, তুই ও যাবি সাথে ?
আরাফ- ? ওকে।
তারপর নিয়ে গেলাম ২জনকে। আব্বু অফিসে থাকায় বেচে গেছে মহিলাদের শপিং থেকে! এতো ঘুরতে পারে কিভাবে মেয়ে মানুষ!! এটা পছন্দ না, ওটা ভালো না! আমি তো এদিকে অস্থির ??
তারপর রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে লাঞ্চ করলাম। আম্মু তোমরা বস, আমি বিল দিয়ে আসছি।
আম্মু – হুম যা।
আরাফ- তারপর আমি চলে আসলাম বিল দিতে।
.
নাফিসা- রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে যাবো ঠিক তখনই ১ মেয়ে দৌড়ে আসলো।
নিসা- হ্যালো আপু, আমার আম্মু তোমাকে ডাকছে।
নাফিসা- কোথায়?
নিসা- ওইযে ওদিকে।
নাফিসা- তাকিয়ে দেখই ওই আন্টি। পাশে গেলাম, আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?
আন্টি- ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছি। তোমাকে দেখার পর তো আরও অনেক ভালো হয়ে গেছি ? কেমন আছো তুমি?
নাফিসা- আলহামদুলিল্লাহ ভালো ?
আন্টি – সেদিনের পর তোমায় কতো খুজেছি। অবশেষে আজ দেখা পেলাম ☺️
নাফিসা- তারপর আমি আর দিনা আন্টির সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম। উনি আমার নাম, ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন। সাথে মায়ের ফোন নং ও নিলেন, আমার টা ই চেয়েছিলেন কিন্তু আমি ফোন ইউজ করি না। তারপর বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।
.
আরাফ- আমি বিল দিয়ে আম্মুর কাছে যাওয়ার সময় দেখলাম নাফিসা আর আম্মু কথা বলছে। আমিতো অবাক হয়ে গেলাম। দ্রুত পায়ে হেটে আম্মুর কাছে গেলাম। এতোক্ষণে নাফিসা চলে গেছে।
নিসা- আম্মু আমি গাড়িতে যাই। ব্যাগ নিয়ে দাড়াতে পারছি না। তোমরা আসো।
আম্মু – আচ্ছা যা।
আরাফ- আম্মু তুমি কার সাথে কথা বলছিলে? তুমি ওকে চিনো?
আম্মু – হ্যাঁ ও ই তো আমাকে হাসপাতালে নিয়েছিল ওইদিন। আবার রক্ত ও দিলো।
আরাফ- আমি এবার চরম পর্যায়ে অবাক! সত্যি বলছো? এ সেই মেয়ে?
আম্মু – হ্যাঁ। মিথ্যা বলার কি আছে?
আরাফ- (মনে মনে) এই ধরনের মহৎ কাজ শুধু নাফিসার দ্বারা ই সম্ভব। আমি তো আবার নতুন করে ওর প্রেমে পড়ে গেলাম।
আম্মু – জানিস দরিদ্র হলেও খুব ভালো একটা মেয়ে। যে ঘরের বউ হয়ে যাবে সে ঘর আলোকিত হয়ে উঠবে ?।
আরাফ- তাহলে নিজের ঘরেই নিয়ে আসো তোমার ছেলের বউ করে। ☺️?
আম্মু – কিহ!! ? কখনো না। ওই মেয়েকে আমি আমার ঘরের বউ করে কখনোই আনবো না।
আরাফ- আম্মু শুনো, আম্মু প্লিজ… আম্মু….

আম্মু তো গিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে গেলো। আমি গাড়ি ড্রাইভ করছি, আম্মু প্লিজ আমার কথা শুনো। প্লিজ একবার বুঝতে চেষ্টা করো। ও খুব ভালো তুমিতো জানো। আরও কতো রিকুয়েষ্ট করলাম, কিন্তু আম্মু একটা কথা ও বলে নি। বাসায় চলে আসলাম।
সন্ধা হয়ে গেল, সারাদিন আম্মুর পিছু পিছু ই ঘুরছি, আর রিকুয়েষ্ট করেই যাচ্ছি। আম্মু কিছুই বলছে না।
নিসা- ভাইয়া, সেই কখন থেকে দেখছি আম্মুর পিছনে লেগেছো। কেন বলোতো!
আরাফ- তুই চুপ থাক, যা এখান থেকে ?
নিসা- হুহ! ? আম্মু যে রিকুয়েষ্ট ই করুক, শুনবে না একদম। ফাজিল একটা ?
আরাফ- আম্মু রুমে বসে আছে, আমিও সেখানে গেলাম।
আম্মু, কি সমস্যা বলোতো। নাফিসা খুব ভালো মেয়ে। অনেক সহজ সরল। ও তোমার ছেলের যোগ্য। ও দরিদ্র বলে কি তুমি ওকে পছন্দ করছো না?
আম্মু – কে বললো সে দরিদ্র বলে তাকে পছন্দ করছি না? আমার আর ১টা ভালো, ভদ্র ছেলে থাকলে আমি অবশ্যই তাকে আমার ঘরে নিয়ে আসতাম। ও তোর যোগ্য ঠিকই, কিন্তু তুই ওর যোগ্য না। জেনে শুনে কিভাবে আমি শান্তশিষ্ট মেয়েটার জীবন নষ্ট করবো!
আরাফ- মানে!
আম্মু – মানে মেয়েটি সব দিক থেকে পারফেক্ট। কিন্তু তুই কতোটুকু যোগ্যতাসম্পন্ন বলতো! মেয়েটি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তুইতো ৭ দিনেও ১ ওয়াক্ত পড়তে রাজি নই! তোর মধ্যে অহংকার, রাগ, জেদ বেশি। সারাক্ষণ বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়াবি। আর তুই নিজেও কোনো ভাবে প্রতিষ্ঠিত না। কি করে তোর সাথে ওর বিয়ে দেই?
আরাফ- আমি যদি সব দিক থেকে যোগ্য হয়ে উঠি, তাহলে ওর সাথে আমার বিয়ে দিবে তো?
আম্মু – ?
আরাফ- প্লিজ আম্মু বলো ?
আম্মু- ভেবে দেখবো।
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here