প্রেম_পায়রা ?️?️ চতুর্থ_পর্ব,পঞ্চম_পর্ব

0
1455

প্রেম_পায়রা ?️?️
চতুর্থ_পর্ব,পঞ্চম_পর্ব
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
চতুর্থ_পর্ব

ভ্যাপসা গরম পড়া বিকেলে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ মানুষের অবস্থাই বেহাল‌। কড়া রোদ উপেক্ষা করে মিশরাতের পুরো পরিবার আর স্নিগ্ধ শপিং মলে প্রবেশ করলো। ইফতেখার চৌধুরীর অসুস্থতার কারণে মিসেস ইয়ামিনের স্নিগ্ধর সাথে আসা হয়ে উঠে নি। শপিং মলে প্রবেশ করে সবাই দোতলায় চলে গেল। যেহেতু বিয়ের শপিং সেহেতু বর ও কনের জন্য স্পেশালি কেনাকাটা রয়েছে। তাই প্রথমেই কনে অর্থাৎ মিশরাতের জন্য শাড়ির দোকানে প্রবেশ করলো সবাই। কিন্তু মিশরাতের মুখ দেখে মনে হচ্ছে না যে বিয়েটা তার। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে সবার সাথে হেঁটে চলেছে।
একের পর এক শাড়ি, লেহেঙ্গা দেখানোর পর দোকানদাররাও একপ্রকার হাঁপিয়ে উঠেছে কিন্তু মিশরাতের সেসব পছন্দ হওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই।
আর তাতে সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিশরাতের দিকে যেটা তার চোখে পড়তেই ঠোঁট হালকা ভিজিয়ে নেয় সে। পাশ থেকে মিসেস ইবনাত মুখে হাসি রেখে চাপা স্বরে বলে উঠলেন,

– ” কি শুরু করেছো মিশরাত!
এখানে এসে এমন বিহেভিয়ার করার মানে কি? এখন লেট না করে তারাতাড়ি একটা পছন্দ করে।”
মায়ের কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় মিশরাত‌। একবার অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো সে। যার অর্থ তার মাথা কাজ করছে না। কিন্তু তাকে চমকে দিয়ে পাশ থেকে স্নিগ্ধ চোখের ইশারায় দোকানদারকে কিছু একটা আনতে বললো। দোকানদার ও স্নিগ্ধের কথা মতো একটা পার্পেল কালারের লেহেঙ্গা নিয়ে আসলো। পার্পেল এর মাঝে হোয়াইট পার্লের কাজ ও অনেকখানি ঘের থাকায় অসাধারণ লাগছে।
স্নিগ্ধ লেহেঙ্গাটা মিশরাতের দিকে এগিয়ে দিতেই মিশরাত একপলক স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে সেটা হাতে তুলে নিলো। পাশ থেকে মেহের, মিসেস ইবনাত সবাই স্নিগ্ধর পছন্দের প্রশংসা করছে। মিশরাত ও মনে মনে বলে উঠলো,

– ” লোকটার পছন্দ আছে বলতে হবে!
কিন্তু এটা আমার নজরে পড়লো না কেন!”
বিল পরিশোধ করে সবাই চলে যায় বরের কেনাকাটা করতে। স্নিগ্ধও মিশরাতের সাথে মিলিয়ে হোয়াইট আর পার্পেল এর মিক্সড শেরওয়ানি নেয়। পরিবারের বাকি সদস্যদের ও টুকটাক কেনাকাটা করতে করতে সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হয়ে যায়।

সারা বিকেলের ধকল কাটিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে মিশরাত‌ আর বাকি সবাই। মিশরাত‌ গুটি গুটি পায়ে উপরে উঠে দরজা খুলে ভেতরে যেয়ে হাতে থাকা ব্যাগ গুলো পাশে সোফার উপর রেখে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ে। ক্লান্তির ছাপ পড়া শরীর ঘুম এসে জড়ো হয়। আর কিছুক্ষণ পর এমনিই চোখ বুজে আসে মিশরাতের‌।

ঘন্টা এক পর মেহের মিশরাতের দরজায় টোকা দেয়। পরপর দুই তিনবার টোকা দেয়ার পরেও কোনো রেসপন্স না পেয়ে দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়।
মিশরাতকে বিছানায় এলোমেলো ভাবে বেঘোরে ঘুমোতে দেখে মেহের হালকা হেসে দেয়।
– ” আসলেই পাগলী একটা!”
বলেই রুমের লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে চলে আসে মেহের।

রাতের আকাশে এক ফালি চাঁদ দৃশ্যমান। হালকা মেঘও করেছে! তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী নয়। কিন্তু মনের মধ্যে যে মেঘ জমেছে সেটা? সেটা কি করে মুছে ফেলবে স্নিগ্ধ। জ্বলন্ত সিগারেটের পুড়ে যাওয়া অংশগুলো বাতাসের সাথে মিলে মিশে ধোঁয়াশায় পরিনত হচ্ছে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই স্নিগ্ধের। সে তো আকাশ পানে তাকিয়ে থাকায় ব্যস্ত। আজ অনেক দিন পর সিগারেটে আগুন ধরালো সে। যখন যন্ত্রণা গুলো খুব করে মনের ভেতর নাড়া দেয় তখন একটা হলেও এটা প্রয়োজন।

– ” আচ্ছা আমি সত্যিই কোনো ভুল করছি না তো?
মিশরাতকে বিয়ে করে ওর জীবনটা নষ্ট করে দেবো না তো? আমি তো বিয়েটা শুধুমাত্র বাবার জন্য করছি!”

নিজের ভেতর একপ্রকার অনুতপ্ত বোধ হলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো স্নিগ্ধ।
– ” না, না তা হতে যাবে কেন? আমি যে কারণে বিয়েটা করছি তা তো আমি মিশরাতকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছি। আর মিশরাত ও তো এসবে বিশ্বাসী নয়। সে ও তো এটাই ধরে নিয়েছে যে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত সে আমার নাম মাত্র বউ। তারপর তো সে আবার ও তার পুরনো লাইফে চলে যাবে!
আর সবচেয়ে বড় কথা আমি অন্য কাউকে আর কোনোদিন ভালোবাসতে পারবো না!!”

লাস্টের কথাটি ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠল স্নিগ্ধ। সিগারেটের জ্বলন্ত অংশ স্নিগ্ধর আঙুল ছুঁতেই তার টনক নড়ে। হাত টা হালকা ঝাড়া দিয়ে রুমের ভেতরে চলে আসে। জ্বলতে থাকা টেবিল ল্যাম্পের সুইচ অফ করতে যাবে তখনি চোখ পড়ে টেবিলের উপর থাকা কালো রঙের ডায়েরিটার উপর। অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে যেন এই জিনিস টাকে ঘিরেই তার ভেতরের যত শূন্যতা!!

সকালের আলোর ঝাপটা চোখের উপর পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে মিশরাত। আজকাল সকালের আলোর তেজটা বোধহয় একটু বেশিই। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই নজর পড়ে দেয়ালে থাকা ঝুলন্ত ঘড়িটার উপর। বেলা হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। ধড়ফড়িয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে মিশরাত‌। নিশ্চিত আজও বকা খেতে হবে। এই ঘুম নামক জিনিসটা তাকে এমন ভাবে গ্রাস করেছে যে তা বলার বাহিরে। অলসতা কাটিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে যায়।

নিচে নামতেই খেয়াল করে বাড়িতে মেহমান গিজগিজ করছে। আর সবার নজর মিশরাতের দিকে পড়তেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে মিশরাতকে নিয়ে। এর ই মাঝে মিশরাতের ফুপি মিসেস রেহেনা পান চিবোতে চিবোতে বলে উঠে,

– ” তো ভাই বিয়া তো দিতেইছো তো মাইয়াডারে! আমি যে তহন কইলাম আমার পোলাডার লগে বিয়া দাও! তহন তো কথাডা শুনলা না! রবিন পোলা হিসেবে কোন দিক দিয়া খারাপ তুমি কও তো!!”

রেহেনা বেগমের কথা শুনে চায়ের কাপ থেকে চোখ তুলে তাকালেন আজীজ সাহেব। বোনের মুখে এমন কথা শুনে কপাল কুঁচকে ফেললেন তিনি।

– ” আপা তুমি আবারো রবিনের কথা বলছো?
তুমি ভালো করেই জানো আমি রবিনের সাথে ফারাহর বিয়ে দিবো না। আর আমি আশা করি তুমি তোমার ছেলের চরিত্রের সাথে অবগত।
তাই এ ব্যাপারে আমি দ্বিতীয়বার কোনো কথা বলতে চাই না।”

আজীজ সাহেবের মুখে এমন তিক্ত কথা হজম করতে পারলেন না রেহেনা বেগম। একপ্রকার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠার মতো অবস্থা তার। মুখ বাঁকিয়ে কটাক্ষের সুরে বলে উঠলেন,

– ” হইছে থামো! আমার পোলাডা এতো ও খারাপ না। হ এইডা মানি ও দু একখান সিগারেট খায়, আর বেশি হইলে একটু আধটু বন্ধু গো পাল্লায় পইরা মদ খায়।
তয় পোলাডা আমাগো ফারাহরে মেলা পছন্দ করে। কিন্তু তুমি তো ফারাহর বিয়া ঐ বড়লোক পোলাডার লগে ঠিক করলা!
ঐ পোলায় বুঝি ঐসব ছাইপাশ গিলে না!
হুহ, যত্তসব!”

এতক্ষণ চুপচাপ সব সহ্য করলেও আজীজ সাহেবের মেজাজ এবার চড়া হয়ে গেল।

– ” আপা এবার কিন্তু তুমি তোমার সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছো!

তোমার ‌ছেলের চরিত্রের সাথে স্নিগ্ধের চরিত্রের তুলনা করছো! তোমার সাহস হয় কি করে এসব উল্টো পাল্টা কথা বলার!!”

আজীজ সাহেবের চিটচিটে মেজাজ দেখে রেহানা বেগম মুখ বাঁকিয়ে উঠে চলে যান।
এদিকে মিশরাত পড়েছে অস্বস্তিতে। একেক জনের একেক উদ্ভট প্রশ্ন শুনে প্রত্যুত্তরে শুধু হু হু করে যাচ্ছে। সেটা মেহের খেয়াল করতেই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

– ” এই অনেক জেরা করা হয়েছে। এবার সবাই সবার ঘরে যাও। এমনিতেই বেলা হয়ে গিয়েছে। দুপুরের খাবার খেতে হবে একটু পর।”
মেহেরের কথা শুনে সবাই বাধ্যমতো চলে যায়। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিশরাত‌। যাক বাবা বাঁচা গেল।

উঠে দাড়াতেই সামনে হুট করে কেউ এসে দাঁড়ায় মিশরাতের‌। মাথা তুলে তাকাতেই দেখে রবিন তার দিকে বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। মুখে রয়েছে হাসি। সেটা খেয়াল করে রাগে শরীর রি রি করে উঠে মিশরাতের‌।

-” শালা, অসভ্য, খবিশ! যখন দেখো তখন সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। মেজাজ টা গরম করে দেয়। সাথে তো বত্রিশ পাটি দাঁতের হাসি তো ফ্রী!”

মনে মনে বিড়বিড় করে মিশরাত‌।
– ” এভাবে আমার পথ রুখে দাঁড়িয়েছেন কেন রবিন ভাই! আমার রাস্তা ছাড়ুন রবিন ভাই! আমি উপরে যাবো!”

রবিন বিশ্রীভাবে হেসে বলে উঠে,
– ” আহা ফারাহ্, তোরে কইছিনা আমারে ভাই ডাকবি না!
ভাই শব্দ টা কেমন জানি পর পর লাগে! আমি তো তোর,,,,”

চোখ গরম করে তাকায় মিশরাত‌।
– ” দেখুন রবিন ভাই, নিজের লিমিটে থাকুন! আর মুখে লাগাম দিন!
এটা ভুলে যাবেন না আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেলে আমি আত্মীয় স্বজন মানি না!
সো ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট!
আর এটাও ভুলবেন আর কদিন পর ই আমার বিয়ে!!”
বলেই গটগট করে ওখান থেকে চলে আসলো মিশরাত‌। আর ওদিকে রবিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে।

– ” এতো ভাব? ঐ বড়লোক পোলার লগে বিয়া হইবো তাই এতো ভাব!
তোর ঐ সংসারে যদি আমি ফাটল না ধরাইছি আমার নাম ও রবিন না। ঘুইরা ফিরা তোর আমার কাছেই আসা লাগবো ফারাহ!”

বলেই এক শয়তানি হাসি দিল রবিন।………….

চলবে ?

#প্রেম_পায়রা ?️?️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#পঞ্চম_পর্ব

মাঝ থেকে কেটে গিয়েছে আরো দুটো দিন। নানা রকমের ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে পার করেছে দুটো পরিবার। আজ স্নিগ্ধ আর মিশরাতের হলুদ সন্ধ্যা।

সারাদিনের তোরজোর এর কারণে মিশরাত সারা বাড়িতে বিরক্তি নিয়ে ঘুরঘুর করছে। সেটা মিসেস ইবনাতের চোখে পড়তেই তিনি ধমকের সুরে বলে উঠেন,
– ” এভাবে সারা বাড়ি টৈ টৈ করে না ঘুরে উপরে যেয়ে বসে থাকো। আর একটু পরেই সময় পাবে না আর। পার্লারের মেয়েরা চলে আসবে।”

মায়ের কথা শুনে বিরক্তি আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায় মিশরাতের‌। একটা নামমাত্র বিয়ের জন্য এতো আয়োজনের জন্য এতকিছু করার কি আছে? অবশ্য এখানে কারোর কিছু করার নেই কেননা মিশরাত আর স্নিগ্ধ ছাড়া আসল সত্যিটা আর কারোর ই জানা নেই। তাই মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে গটগট করে চলে আসে মিশরাত‌।
কাচা হলুদ রঙের শাড়ি, সাথে কাঁচা ফুলের অর্নামেন্টস্ আর মুখের মধ্যে হালকা মেকআপ। মনে হচ্ছে যেন কোনো হলুদ অপ্সরী। মেহের ধীরে ধীরে মিশরাতকে নিয়ে নিচে চলে আসে। স্নিগ্ধর হলুদ পর্ব শেষ হতেই মিশরাতের হলুদ পর্বের সূচনা ঘটে।

একে একে সবাই হলুদের ছোঁয়া দেয় মিশরাতের গালে। মেহের তো একগাদা হলুদ নিয়ে মিশরাতের গালে লাগিয়ে দেয়। যার কারণে মিশরাত কাঁদো কাঁদো চেহারায় মিসেস ইবনাতের দিকে তাকাতেই সবাই সশব্দে হেসে দেয়। কিন্তু এতো হাসি তামাশার ভেতরেও মিশরাতের মুখে এক প্রকার বিষন্নতার ছাপ। ভাবতেই অবাক লাগছে আগামীকাল তার বিয়ে। আবার ঠিক ছ মাস পরই সে বিয়ে নামক বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।

রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। গালের মধ্যে এখনো হলুদের কিছু আবরণ লেগে রয়েছে। রাত প্রায় গভীর হতে চলেছে তবুও তার মাঝে কোনো হেলদোল নেই। সে তো অন্য চিন্তায় মগ্ন।

– ” আমি পারলাম না আমার কথা রাখতে!
আমি পারিনি তোমায় আমার একান্তই আমার করে রাখতে! তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছো।
হ্যাঁ চেয়েছিলাম আমি দ্বিতীয়বার কোনোদিন এসব বিষয় মাথায় আনবো না, কোনোদিন এই বিয়ে নামক বস্তুটাকে নিজের সাথে জড়াবো না, কিন্তু আজ!আজ আমায় সেসব কথা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে হবে!
জড়াতে হবে নিজেকে ঐ বিয়ে নামের মিথ্যে মায়ায়!”
চোখের কার্নিশ বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো স্নিগ্ধর। রাগে ক্ষোভে, অভিমানে না পেরে রেলিং এর উপর সজোরে একটা ঘুষি মেরে বসে স্নিগ্ধ!

শাওয়ার শেষে টাওয়াল দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে রুমে প্রবেশ করে মিশরাত‌। চুলগুলো শুকানো দরকার। নাহলে বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ভালোভাবে মেলে দিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে নিলো সে। তারপর উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিল সেগুলো। উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরতেই আঁতকে উঠে মিশরাত।

– ” আপনি এখানে রবিন ভাই!
আপনার সাহস তো কম না, আপনি এতো রাতে আমার রুমে এসেছেন!!”

রবিন এগোতে এগোতে বলে উঠে,

– ” আরে ফারাহ্ এতো রাগ করোছ ক্যান?
আমি কি কিছু করছি? আমি তো ভাবলাম কাইল তোর বিয়া আজ রাইতে এট্টুখানি দেখা কইরা যাই। আর যাই হোক কাইল থেকা তো তুই ঐ বড়লোক পোলাডার লগে রাইত কাটাবি! আজ রাইত না হয় আমার লগে,,”

রবিনের এমন বিশ্রী ভঙ্গি দেখে রাগে ক্ষোভে কান গরম হয়ে এলো মিশরাতের‌। রাগ সামলাতে না পেরে ঠাঁটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল রবিনের গালে‌। রবিন রক্ত চক্ষু নিক্ষেপ করতেই মিশরাত হুংকার দিয়ে উঠে,

– ” ডোন্ট ডেয়ার!
আপনি আমার ফুফাতো ভাই দেখে আমি আপনাকে সম্মান করতাম কিন্তু আপনার এমন লো ক্লাস মেন্টালিটি দেখে সেটা আর পারছি না!
ডিজগাস্টিং! জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম মাই রুম!”
একপ্রকার চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে মিস্টার আজীজ, ইরফান, মেহের, মিসেস ইবনাত সহ রবিনের মা মিসেস রেহেনা বেগম ও মিশরাতের রুমে উপস্থিত হন। রবিনকে এই মুহূর্তে মিশরাতের রুমে দেখে সবাই বেশ অবাক হয়। মিশরাত আবার ও হুংকার দিয়ে বলে উঠে,

– ” আপনি কি শুনেন নি, জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম মাই রুম!!
রাসকেল কোথাকার!!”

রবিনের সাথে তর্কাতর্কি করার এক পর্যায়ে মিসেস রেহেনা তেতে আসেন।
– ” এই ফারাহ্ এই! তোর সমস্যাডা কি? তুই আমার পোলার লগে এমন ভাবে কথা কইতেছস কেন?
রবিন তোরে কি করছে!! যে তুই এরকম ষাঁড়ের মত চিল্লাইয়া সারা বাড়ি মাথায় তুলছোস!”

মিসেস রেহেনার গলার আওয়াজ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় মিশরাত। বাকি সবাইকেও চোখে পড়ে তার। তাই কোনো রকম ভনিতা না করে সোজাসুজি বলে উঠে,

– ” দেখো ফুপি!
তোমার ছেলেকে আমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলেছি!
আর তোমার ছেলে কি বলেছে সেটা তুমিই না হয় উনার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিও।
অসভ্য কোথাকার!!”

-” এই ছেমড়ি! তোর তো সাহস কম না তুই আমার পোলারে অসভ্য কছ! রবিন তোর লগে কি অসভ্যতামি‌ করছে!!”
মিসেস রেহানা গর্জে উঠলেন। পাশে আজীজ সাহেবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবারো বলে উঠেন,

– ” ভাবছিলাম এইবার তোর বাড়ি আইসা সব ঝামেলা মিটে যাইবো। কিন্তু তোর মাইয়ার ব্যাবহার দেইখা আমি আর এক সেকেন্ড ও এই বাড়িতে থাকমু না! আমি আমার পোলারে নিয়া এখনি চইলা যামু!”

মিসেস রেহানা ভেবেছিলেন আজীজ সাহেব তাকে আটকাবেন। যত যাই হোক সে তার বোন হয়। কিন্তু তাকে চমকে দিয়ে আজীজ সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

– ” ঠিক আছে আপা! আমি ড্রাইভারকে বলবো তোমাদের বাসায় পৌঁছে দিতে। তোমরা না হয় প্যাকিং শুরু করে দাও।”

ভাইয়ের কাছ থেকে এমন‌ অপ্রীতিকর মন্তব্য মোটেও আশা করেন নি মিসেস রেহানা বেগম। অপমান সহ্য করতে না পেরে রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন তিনি। পেছন পেছন রবিন ও বেরিয়ে গেল। তবে যাওয়ার পূর্বে মিশরাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গেল।

মিসেস রেহানা আর রবিন চলে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিশরাত‌। মেহের আর মিসেস ইবনাত সহ সবাই মিশরাতের কাছে এসে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো। কিন্তু মিশরাত মুখ ফুটে কিছু বললো না এই ভেবে যে আজীজ সাহেব আর রেহানা বেগমের সম্পর্কটা একেবারে না নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে মিস্টার আজীজ রবিনের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত থাকায় কিছুটা আঁচ করতে পারলেন। তিনি চোখের ইশারা দিতেই সবাই আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়ে আসে। সবাই চলে যেতেই মিস্টার আজীজ সাহেব মিশরাতের পাশে গিয়ে বসলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠেন,

– ” আমি জানতে চাইবো না রবিন তোকে কি বলেছে আর তোকেও ওসব কথা মনে করাতে চাই না। মাথা থেকে ওসব ঝেড়ে ফেলো।
আগামীকাল তোমার বিয়ে। তোমার নতুন জীবনের শুরু। আর হ্যাঁ আমি জানি তুমি কোথাও না কোথাও এ বিয়েতে রাজি না। তবে হ্যাঁ একটা সময় পর তুমি বুঝতে পারবে আমার এ সিদ্ধান্ত টা ভুল ছিল না।
সো এসব আজেবাজে চিন্তা না করে তুমি তোমার কালকের মতো স্পেশাল দিন নিয়ে কনসান্ট্রেট করো।
আর ঘুমিয়ে পড়ো। শুভ রাত্রি।”

বাবার মুখে এসব কথা শুনে অনেক টা চমকে উঠে মিশরাত‌। সে যে বিয়েতে রাজি না এটা তার বাবা জানতো! কিন্তু কিভাবে? বাবা বলে? হয়তো তাই!

বধূ বেশে মেহেরের সাথে নিচে হলরুমে উপস্থিত হলো মিশরাত‌। বিয়ের সাজে মিশরাতকে যেন অপরুপ সুন্দর দেখাচ্ছে। ফর্সা শরীরে পার্পেল রঙের লেহেঙ্গা টা ফুটে উঠেছে। খোঁপা করে রাখা চুলের মধ্যে সাদা গাজরা সুন্দর করে লাগানো। কপালে সিঁথির মধ্যে টিকলি আর কপালের মধ্যখানে একটা পার্সেল রঙের টিপ। স্নিগ্ধ কেও কম সুন্দর লাগছে না। পড়নে শেরওয়ানি, মাথায় আভিজাত্য পাগড়ি,হাতের কব্জিতে ঘড়ি। মুখের মধ্যে রয়েছে সৌজন্যমূলক হাসি। তবে ভেতরে ভেতরে যে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তা সে ছাড়া আর কেইবা জানে!!

মিশরাতকে এনে স্নিগ্ধর সামনে বসানো হলো। পাশেই কাজী সাহেব সহ সবাই অধীর আগ্রহে মিশরাতের অপেক্ষা করছিলেন। মিশরাতকে সামনে উপস্থিত দেখে একবার চোখ তুলে তাকালো স্নিগ্ধ। সাথে সাথে চোখ আটকে গেল তার মিশরাতের চেহারার দিকে।
টানা টানা চোখ দুটোতে গাঢ় কাজল, ঠোঁটের নিচ বরাবর কালো রঙের তিল তাকে আকর্ষণ করছে। মিশরাত আর স্নিগ্ধর চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিল স্নিগ্ধ। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।

– ” নো নো স্নিগ্ধ! এগুলো কি ভাবছিস তুই! জাস্ট কন্ট্রোল অফ ইউর মাইন্ড!
এটা বিয়ে না, শুধুমাত্র একটা ডিল!”

কাজী সাহেব প্রথমে স্নিগ্ধকে কবুল বলার জন্য বললে স্নিগ্ধ একটা দম ফেলে বলে দেয় ‘কবুল’। এরপর আসে মিশরাতের পালা!
– “বলো মা কবুল!”
মিশরাত একপলক বাকি সবার দিকে তাকালো। মিসেস ইবনাত আর মিস্টার আজীজ চোখের ইশারায় কবুল বলতে বললে মিশরাতও ছোট্ট করে একটা দম নিয়ে বলে উঠে,
– ” কবুল!”
এরপর সবাই একসাথে বলে উঠে‌ ‘ আলহামদুলিল্লাহ’। কাজী সাহেব কাবিননামা স্নিগ্ধের দিকে এগিয়ে দিলেন স্নিগ্ধ গটগট করে সাইন করে দেয়। মিশরাতের সামনে কাজী সাহেব কাবিননামা তুলে দিয়ে বলে,
– ” মা এখানে সই করে দিন!”
মিশরাত কাবিননামার দিকে একপলক তাকিয়ে আলতো হাসলো। এটা বাকি সবার কাছে কাবিননামা হলেও তার কাছে তার বিয়ের ডিলের কাগজ। যেটাতে সাইন করার মাধ্যমেই স্নিগ্ধ আর সে একটা ডিল কনফার্ম করবে। ছোট একটা শ্বাস ফেলে কলম হাতে নিয়ে কাবিননামায় স্বাক্ষর করার স্থানে গুটিগুটি অক্ষরে লিখে দিলো মিশরাত।

বিয়ের পর্ব শেষ হতেই শুরু হয় বিদায়ের পালা। একে একে সবাইকে জড়িয়ে ধরে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে মিশরাত‌। বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয় সে। ইরফান ও অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল আটকে রেখেছে। এতোটা বছর নিজের বোনকে আগলে রেখেও আজ তাকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। মেহেরও শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। যত যাই হোক মিশরাত ছিল তার সবচেয়ে প্রিয়। ভালোবাসার মানুষ যাকে নির্দ্বিধায় সব শেয়ার করা যেত। মিস্টার আজীজ নিজেকে শক্ত রেখে মিশরাতকে জোর করে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। গাড়িতে মিশরাতকে বসানো হলেই স্নিগ্ধ চোখের ইশারায় মিস্টার আজীজ কে বোঝালো যে সে তার মেয়েকে আগলে রাখবে।
ড্রাইভার কে বলে গাড়ি ছুটে চলে তার আপন গতিতে।

ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করার আওয়াজ কানে যেতেই স্নিগ্ধ পাশ ফিরে তাকালো মিশরাতের দিকে। কান্না করার ফলে চোখের কাজল অনেকটা লেপ্টে গিয়েছে। যা চোখে পড়তেই ক্রমশ এক অজানা ঘোরে চলে যেতে থাকে স্নিগ্ধ। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় সে। পেছন থেকে টিস্যুর বক্স এনে মিশরাতের সামনে ধরতেই মিশরাত মাথা তুলে একবার স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে টিস্যু নিয়ে চোখ মুছতে থাকে।

ঘন্টা দুয়েক পর গাড়ি এসে থামে চৌধুরী ভিলার সামনে। সুবিশাল বাড়ির নকশা টাও দারুন আকর্ষণীয়। যে কেউ দেখলেই এক মুহূর্তের ভেতর পছন্দ করে ফেলবে।
গাড়ির দরজা খুলতেই মিশরাত বেরিয়ে আসে। স্নিগ্ধ চোখের ইশারা দিতেই হাঁটা শুরু করে ভেতরের দিকে। মিসেস ইয়ামিন যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন মিশরাত আর স্নিগ্ধের জন্য। মিশরাত দরজার সামনে দাড়াতেই তিনি পরম ভালোবাসায় বরণ করে নিলেন মিশরাতকে। মিশরাতও মুখে হাসি ঝুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর মিসেস ইয়ামিন মিশরাতকে নিয়ে উপরে চলে গেলেন। স্নিগ্ধর রুমে প্রবেশ করতেই নাকের মাঝে হরেক রকম ফুলের ঘ্রাণ ভেসে এলো মিশরাতের নাকে। সুসজ্জিত রুমটা তার কাছে বেশ লাগলো। রুমটা বেশ পরিপাটি ও। মিসেস ইয়ামিন মিশরাতকে রুমে রেখে নিচে চলে আসলেন। মিসেস ইয়ামিন চলে যেতেই মিশরাতের চোখ পড়লো লাগেজের দিকে।

প্রায় এক দেড় ঘন্টা পর রুমের দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে স্নিগ্ধ। রুমের ভেতর ঢোকার সাথে সাথে চোখ পড়ে মিশরাতের দিকে। কোমর অবধি লম্বা চুলগুলো ছাড়া আর যেগুলো বাতাসের সাথে খেলা করছে। মিশরাত পেছন দিকে ঘুরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে লেহেঙ্গা ছেড়ে একটা জর্জেটের সালোয়ার কামিজ।
হঠাৎ কারো গলা খাঁকারি দেয়ার আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই পেছনে ফিরে মিশরাত।

– ” কি ব্যাপার তুমি ঘুমাও নি এখনো!
রাত তো অনেক হতে চললো। ঘুমিয়ে পড়ো।”
সোজাসাপ্টা ভাবে বলে উঠে স্নিগ্ধ।

– ” নতুন জায়গায় এডজাস্ট হতে একটু সময় লাগে আমার, তাই ঘুম আসছে না!”
মিশরাত বলে উঠে।

মিশরাতের কথায় ছোট করে ওহ্ বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। দশ পনেরো মিনিট পর শেরওয়ানি ছেড়ে একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে বেরিয়ে আসে স্নিগ্ধ।

– ” আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো, সারাদিনে অনেক ধকল গিয়েছে!”
বলেই বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো স্নিগ্ধ।

মিশরাত ঘড়ির দিকে তাকালো। আসলেই অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে। তাই চুপটি করে স্নিগ্ধের পাশে যেয়ে শুতে নিলে স্নিগ্ধ শোয়া থেকে এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে মিশরাত।

– ” কি ব্যাপার এভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন কেন! কি হয়েছে?”
মিশরাতের কথায় ভড়কে উঠে স্নিগ্ধ। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে উঠে,

– ” তুমি কি আমার সাথে ঘুমাবে নাকি!”

স্নিগ্ধর কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল মিশরাত। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

– ” তো আমি কোথায় ঘুমাবো? এই রুমে তো আমি দুটো খাট দেখতে পারছি না!
এক মিনিট। বাই চান্স আপনি আমাকে সোফায় ঘুমোতে বলছেন না তো!
লিসেন এটা কোনো হিন্দি সিরিয়াল না যে বিয়ের রাতে আপনি বলবেন আমি বিছানায় না সোফায় ঘুমাবো! সেটা হবে না!
চুপচাপ এ জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ুন এখানে!
আর হ্যাঁ ডিসট্যান্স মেনে ঘুমাবেন।
যত্তসব!”

বলেই ঠাস করে পুনরায় বিছানায় শুয়ে পড়লো মিশরাত। আর স্নিগ্ধ এখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। মেয়েটা তাকে কতো কিছু শুনিয়ে দিলো। যেখানে সবাই ওর সামনে গলা উঁচু করে কথা বলতে ভয় পায় সেখানে এই পুঁচকে মেয়ে তাকে শাসাচ্ছে। ভাবা যায় এগুলো!

– ” স্নিগ্ধ শেষমেশ এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলি যে কি না তোকেই শাসায়‌। কপাল পুড়লো তোর তাহলে এবার।
আস্ত একটা ইডিয়ট!!”

বিড়বিড় করে স্নিগ্ধও মিশরাতের‌ পাশটায় শুয়ে পড়লো আর কিছুক্ষণ বাদেই তলিয়ে গেল ঘুমের দেশে!…………….

চলবে ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here