প্রেম_পায়রা ?️?️
২০,২১
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
বিংশ_পর্ব
– ” স,স্,স্ন,স্নিগ্ধ!!!!”
কম্পিত কন্ঠে অবাক হয়ে বলে উঠলো মিশরাত। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে। এ কি করে সম্ভব!
অরিনের কাঁধের উপর স্নিগ্ধর এক হাত আর অরিনের এক হাত স্নিগ্ধর কোমরে। নেশায় টলমল হয়ে গিয়েছে স্নিগ্ধ। গায়ে লেপ্টে থাকা সাদা শার্টের বোতাম তিন চারটা খোলা। স্নিগ্ধ কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে একটা জায়গায় চোখ আটকে যায় মিশরাতের। শার্টের কলার আর স্নিগ্ধের নেক এরিয়াতে লাল রঙের লিপস্টিক যুক্ত ওষ্ঠের ছাপ।
এ পাঁচ মাসে এ প্রথম স্নিগ্ধকে এভাবে নেশায় বুঁদ হয়ে বাড়ি ফিরতে দেখেছে মিশরাত। কি এমন হয়েছিল যে তাকে এভাবে নেশাক্ত হতে হলো!
অরিন ও ঢুলুঢুলু ভাবে স্নিগ্ধ কে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। মিশরাত একবার ভালো করে পরখ করে নিল চারপাশে যে মিসেস ইয়ামিন বা ইফতেখার চৌধুরীর মাঝে কেউ আছে কিনা? কাউকে আশেপাশে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। উপরে রুমে পৌঁছাতেই মিশরাত স্নিগ্ধ কে তড়িঘড়ি করে বিছানার উপর শুইয়ে দেয়।
– ” স্নিগ্ধ, স্নিগ্ধ! উঠুন! এসব কি অবস্থা করেছেন নিজের?”
স্নিগ্ধকে জাগ্রত করার চেষ্টা করে বলতে থাকে মিশরাত।
– ” সকালের আগে স্নিগ্ধর জ্ঞান ফিরবে না মিশরাত! তাই অযথা চেষ্টা করে লাভ নেই।”
পাশ ফিরে তাকায় মিশরাত। অরিনের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
– ” স্নিগ্ধ হঠাৎ করে এতো ড্রিংকস কিভাবে করলো? আর উনার এই অবস্থা কেন?
আপনি তো উনার সাথে ছিলেন তাই না, অরিন আপু?
উনার শার্টে এসব কিসের চিহ্ন!!”
অরিন মুখটাকে ইনোসেন্ট বানিয়ে বলে উঠল,
– ” আমি জানি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না মিশরাত!
কিছু দিন ধরেই স্নিগ্ধ স্যার আমার সাথে অদ্ভুত আচরণ করছে। হুটহাট কাছে এসে পড়ে আমার।
আসলে আজকে অফিস শেষে বেরোনোর সময় হঠাৎ করে স্নিগ্ধ স্যার আমার হাত ধরে ফেললেন। আমি বারবার বারণ করছিলাম কিন্তু তার মাঝে কোনো ভাবান্তর ছিল না।
সে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে জোরে জোরে ড্রাইভ করা শুরু করলেন। মিনিট বিশেক পর শুনশান একটা ক্লাবের সামনে গাড়ি থামিয়ে আমাকে টেনে হিচড়ে ভেতরে নিয়ে গেলেন। ক্লাবে সারি সারি মদের বোতল রাখা একটা টেবিলে গিয়ে সেখান থেকে বোতল নিয়ে একের পর এক গ্লাসে খাওয়া শুরু করেন। আমি সেখান থেকে কোনো মতে ছুটে পালিয়ে আসতে চাইলে স্নিগ্ধ স্যার আমাকে আবারো ঐ নেশালো অবস্থায় ধরে ফেলেন। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকলেও তিনি আমাকে ছাড়েন নি!! একটা সময় পর যখন পুরোপুরি নেশায় বুঁদ হয়ে যায় তখন আমার সাথে জোরাজুরি করার চেষ্টা করেন তিনি!!”
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো অরিন। এদিকে অরিনের এসব কথাবার্তা শুনে রাগে, দুঃখে চোখ নাক লাল হয়ে এসেছে মিশরাতের। অরিন আবারো নাক টেনে বলে উঠলো,
– ” আমি অনেক চেষ্টা করেছি মিশরাত কিন্তু আমি নিজের সর্বনাশ হওয়াকে বাঁচাতে পারি নি!!
আমি এখন কি করবো বলো?”
অরিনের বলা প্রতিটা কথা যেন বিষের মতো অসহ্যনীয় মনে হচ্ছে মিশরাতের কাছে! তাহলে তার এতদিনের ধ্যান ধারণা সবটাই কি মিথ্যে ছিল। তার মানে কি?
– ” আমি স্নিগ্ধকে খুব ভালো ভাবে চিনি। সে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে এমন আচরন করেনি! তাহলে আপনার সাথে এমন জঘন্য কাজ করার প্রশ্ন আসে কোত্থেকে?
আর স্নিগ্ধের শার্টে আর গলায় লিপস্টিকের দাগ গুলো তো আপনার!!
সেগুলো লাগলো কি করে?”
মিশরাতের কাঠকাঠ গলায় কথা শুনে হালকা ভড়কে গেল অরিন। কপালে হালকা ঘাম জড়ো হয়ে গিয়েছে। তবুও মুখটাকে কাঁদো কাঁদো করে বলে উঠলো,
– ” মিশরাত তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো? আমি একটা মেয়ে হয়ে কি নিজের মান সম্মান বিলিয়ে দিবো নাকি?
আর ঐ দাগগুলো হয়তো কোনো ভাবে লেগে গিয়েছে!”
অরিনের কথা গুলো ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না মিশরাত।
এদিকে স্নিগ্ধ বিছানায় জ্ঞান হীন অবস্থায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রয়েছে।
– ” আমি ঠিক কী বলবো বুঝতে পারছি না! এতো রাতে মা বাবা আপনাকে এখানে দেখলে নিশ্চয়ই সবটা জেনে যাবে যেটা আমি চাই না এখন। বাবা হার্টের পেশেন্ট। আমি আপনার সাথে কাল কথা বলবো!”
বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় মিশরাত। এদিকে অরিন বাম হাত দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
– ” যাক, প্ল্যান টা অন্তত কাজে দিয়েছে। সো স্যাড তাই না মিশরাত!
তোমার মনে জমে থাকা স্নিগ্ধর প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে!
আর বাকিটুকু ধামাকা না হয় কাল সকালেই হবে। কেননা এটাই তোমার স্নিগ্ধর জীবনে লাস্ট দিন। এর পর ভালোবাসার দুটো পাখি দু প্রান্তে চলে যাবে!!”
এই বলেই বাঁকা হেসে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো অরিন।
এদিকে মিশরাত অনুভূতিহীন মূর্তির মত রুমের ফ্লোরে বসে রয়েছে। কি থেকে কি হয়ে গেল তার জীবনে? শুনেছে আকাশের মেঘের রং ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায়। তাই বলে তার জীবনের সবটুকু রং এভাবে মেঘেদের আড়ালে হারিয়ে যাবে?
– ” কীভাবে করতে পারলেন এমনটা, স্নিগ্ধ?
আমি তো চেয়েছিলাম সব কিছু ভুলে নতুন করে আবারো সবটা শুরু করতে। কিন্তু আপনি কি করে ফেললেন এটা স্নিগ্ধ!!
আর তাছাড়া অরিন আপুই বা মিথ্যে কথা বলবে?
কাকে ছেড়ে কাকে বিশ্বাস করবো? এ কেমন গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম আমি!!”
মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকে মিশরাত।
সকালের আলোর ছিটেফোঁটা চোখকে স্পর্শ করতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে স্নিগ্ধ। পিটপিট করে তাকাতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে সে। মাথাটা প্রচুর পরিমাণে ঝিমঝিম করছে। কোনোমতে হেলান দিয়ে উঠতেই চোখ পড়ে নিচে মিশরাতের হেলান দিয়ে ঘুমন্ত চেহারাকে। ঘুমন্ত মায়াবী চেহারা দেখে একদৃষ্টে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মিশরাতের দিকে। কিন্তু পরমুহূর্তেই গত রাতের কথা মনে পড়তেই চেহারার রং ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে স্নিগ্ধর। ফর্সা চেহারায় লাল রক্তিম আভা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
হঠাৎ করে চোখে মুখে পানির ঝাপটা এসে পড়তেই ধড়ফড় করে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে মিশরাত। মাথার চুল বেয়ে টুপটুপ করে পানি ঝড়ছে। সকাল বেলা এভাবে ঘুমের মধ্যে এমন পানির ঝাপটা পেয়ে অবাক হয়ে যায় সে। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সামনে পানিশূন্য জগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। চোখেমুখে রাগের আভা।
– ” এসব কি ধরনের আচরণ স্নিগ্ধ? আপনি এগুলো কি শুরু করেছেন?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল মিশরাত।
– ” কি শুরু করেছি বুঝতে পারছিস না তুই?
একটু পরেই সব বুঝতে পারবি, ওয়েট!!”
রাগে গজগজ করতে করতে আলমারির কাছে গিয়ে সেটা খুলে একের পর এক শুরু করে মিশরাতের সব জামাকাপড়, শাড়ি সব মেঝেতে ফেলতে থাকে স্নিগ্ধ। এদিকে স্নিগ্ধর হঠাৎ এমন আচরণ দেখে ঘাবড়ে যায় মিশরাত।
– ” কি হচ্ছে কি এসব স্নিগ্ধ! আপনি এভাবে আমার জিনিসপত্র মেঝেতে ছুড়ে ফেলছেন কেন?
কি শুরু করেছেন আপনি!!”
মিশরাতের কথা শুনে থেমে যায় স্নিগ্ধ। পেছনে ফিরে ধীর পায়ে মিশরাতের সামনে এসে দাঁড়ায়। মিশরাত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেই স্নিগ্ধ হুট করেই মিশরাতের বাহু খামচে ধরে। যার ফলস্বরূপ মিশরাত ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে।
– ” এই জিনিসপত্র গুলোর মতো একটু পর ঠিক তোকেও এভাবে আমি ছুড়ে ফেলবো বাড়ির বাইরে। তোর মতো একটা নষ্টা মেয়ের আমার বাড়িতে কোনো জায়গা নেই!!
এক্ষুনি তুই আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি!!”
স্নিগ্ধর বলা প্রতিটা কথা মিশরাতের কানে বাজছে। কি বলছে কি এসব স্নিগ্ধ।
– ” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে স্নিগ্ধ?
কি সব হাবিজাবি বকছেন!! কি করেছি আমি যে আমায় এত বড় অপবাদ দিচ্ছেন!”
– ” আমি হাবিজাবি বকছি? আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?
ঐ রাসকেল রবিনের সাথে নষ্টামি করার আগে এসব মনে ছিল না?
আই জাস্ট হেট ইউ মিশরাত! জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম মাই হাউজ!!”
স্নিগ্ধর চিৎকারে কেঁপে উঠে মিশরাত। মাথা ঝিমঝিম করছে তার? রবিনের সাথে তার কি সব সম্পর্ক বানিয়ে দিয়েছে স্নিগ্ধ!
– ” স্নিগ্ধ নিশ্চয়ই আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে! আমি এসবের কিছুই করি নি!
প্লিজ বিশ্বাস করুন! না জেনে আমায় এত বড় অপবাদ দিবেন না।”
অনুনয়ের চোখে বলে উঠলো মিশরাত। কিন্তু স্নিগ্ধর মাঝে তেমন কোনো ভাবান্তর হলো না। সে উল্টো মিশরাতের বাহু পূর্বের তুলনায় আরো জোরে চেপে ধরলো।
– ” আমার ভুল হচ্ছে? আমার?
তাহলে এগুলো কি!!”
বলেই ফোন থেকে স্নিগ্ধ মিশরাতের সামনে যা দেখালো তাতে মিশরাতের চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম!…………
চলবে ?
#প্রেম_পায়রা ?️?️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#একবিংশ_পর্ব
ফোনের স্ক্রিনে চোখ যেতে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মিশরাত। মুখ দিয়ে টু শব্দ ও বের হচ্ছে না। একটা কথা আছে না, অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর! সে অবস্থাই বর্তমানে মিশরাতের হয়েছে।
রবিনের সাথে মিশরাতের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ফোনের স্ক্রিনে বন্দী। আর সেটা দেখে লজ্জায়, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো মিশরাত!
– ” এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিস কেন? এখন দেখতে খারাপ লাগছে? লজ্জা করলো না ঐ রাসকেলের সাথে নোংরামি করতে?”
হুংকার দিয়ে উঠল স্নিগ্ধ। রাগ কন্ট্রোল করার জন্য জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে সে। কিছুক্ষণ পর শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে উঠলো,
– ” তুমি তো বলেছিলে তুমি আমাকে ভালোবাসতে চাও, তাইনা? নতুন করে সম্পর্কটা শুরু করতে চাও, তাহলে এগুলো কিভাবে করলে মিশরাত।
মিনিমাম লজ্জাবোধ টুকুও তোমার মাঝে ছিল না নাকি?
কিভাবে পারলে ঐ ছেলেটার সাথে এমন,,, বলতেও লজ্জা লাগছে!
আসলেই মেয়ে জাতটাই বোধ হয় একই। তুমি এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে।”
বলেই মিশরাতকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে হিচড়ে নিচে নিয়ে যেতে লাগলো স্নিগ্ধ।
– ” স্নিগ্ধ, আমার লাগছে! ছাড়ুন আমাকে!
আমার পুরো কথাটা তো শুনুন। আমার আর রবিন ভাইয়ের মাঝে কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই। প্লিজ লেট মি এক্সপ্লেইন। সবটা না জেনে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না!”
কিন্তু সেদিকে কর্ণপাত না করে স্নিগ্ধ মিশরাতকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে চিল্লাচিল্লি করার শব্দ শুনে হুড়মুড় করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী। পেছন পেছন মিস্টার ইফতেখার চৌধুরীও আসলেন।
– ” কি ব্যাপার স্নিগ্ধ? তুমি মিশরাতকে এভাবে টেনে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
কি হয়েছে কি!!”
প্রশ্ন করে উঠলেন মিসেস ইফতেখার চৌধুরী।
ততক্ষণে স্নিগ্ধ মিশরাতকে নিয়ে দরজার কাছটায় চলে গিয়েছে।
– ” বের হয়ে যাও এ বাড়ি থেকে!
আমার বাড়িতে আর যাই হোক কোনো নষ্টা মেয়ের জায়গা নেই!
আমাদের সবার জীবন থেকে চলে যাও তুমি!!”
সারা শরীর হীম ধরে গিয়েছে মিশরাতের। মাথাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। স্নিগ্ধর বলা প্রতিটা কথা তার মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে। স্নিগ্ধর কথা শুনে মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী আর মিস্টার ইফতেখার চৌধুরী দুজনেই অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলেন।
– ” কি বলছিস কি স্নিগ্ধ? তুই মিশরাতকে কি উল্টোপাল্টা অপবাদ দিচ্ছিস সেটা তোর খেয়াল আছে!!”
অবাক হয়ে বলে উঠলেন মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী।
– ” হ্যাঁ মা, আমি যা বলছি তা ঠিকই বলছি!
এই মেয়ে এই বাড়িতে থাকতে পারবে না। ওকে এখান থেকে বের হয়ে যেতে বলো!”
স্নিগ্ধ কাঠকাঠ গলায় বলে উঠলো। মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী দৌড়ে মিশরাতের কাছে এসে দাঁড়ালেন।
– ” মিশরাত, স্নিগ্ধ এসব কি বলছে? সত্যিটা কি আমাকে খুলে বলো! কি হয়েছে?”
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর কথা কানে পৌঁছাতেই পাশ ফিরে তাকালো মিশরাত।
– ” মা বিশ্বাস করুন, আমি কিছু করিনি। আমি জানি না কে এভাবে আমার রবিন ভাইয়ের ছবি তুলেছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি এসবের কিছুই করিনি!”
মিশরাতের কথা শুনে স্নিগ্ধ রেগে তেড়ে আসে তার দিকে।
– ” দেখো মিশরাত, আমি এখন কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাই না। তাই বলছি চুপচাপ চলে যাও।
আর আগামী সাত দিনের মাথায় তুমি তোমার ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে! নাও গেট লস্ট। ”
স্নিগ্ধর মুখে ডিভোর্স পেপারের কথা শুনে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল মিশরাতের। কি বলছে এগুলো সে!
– ” কি বলছেন স্নিগ্ধ? প্লিজ এমনটা করবেন না, আমি সত্যিই কিছু করিনি। আপনি আমার কথার বিশ্বাস করছেন না কেন!!”
মিশরাতের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসলো স্নিগ্ধ। চোখে চোখ রেখে সোজাসাপ্টা গলায় বলল,
– ” কি বলছি সেটা তুমি বুঝতে পারছো না তাই তো!
আমি সোজাসাপ্টা ভাবে বলছি, আই ওয়ান্ট ডিভোর্স, তোমার মতো নষ্টা মেয়েকে আমি আমার স্ত্রী মানি না!”
স্নিগ্ধর কাছ থেকে বারবার এমন অপবাদ পেয়ে মিশরাতের রাগে লজ্জায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। সে যখন এগুলো কিছুই করে নি তাহলে শুধু শুধু কেন দোষারোপ শুনতে হবে তাকে।
– ” ইনাফ ইজ ইনাফ মিস্টার স্নিগ্ধ।
অনেক হয়েছে। আপনি সেই কখন থেকে আমাকে অযথা দোষারোপ করে যাচ্ছেন। একবারও আমার কথা শুনেছেন? আমি নষ্টা মেয়ে হিসেবে অপবাদ দিচ্ছেন?
আসল নষ্টামি কে করেছে সেটা আপনার শার্টের এসব চিহ্ন দেখলেই বোঝা যায় মিস্টার স্নিগ্ধ!
আমাকে অপবাদ দিচ্ছেন? তাহলে কাল রাতে নেশায় বুঁদ হয়ে অরিন আপুর সাথে বাড়ি ফিরলেন কেন? অরিন আপুই বা আমাকে সেসব কথা কেন বললো?
কই আমি তো বিশ্বাস করিনি আপনি অরিন আপুর সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছেন। সে তো আমাকে সবটাই বলেছে!!”
মিশরাতের কথা শুনে স্নিগ্ধ বিস্ফোরিত চোখে তাকালো মিশরাতের দিকে। মিশরাতের কথায় শার্টের দিকে নজর যেতেই সে আতকে উঠলো।
– ” আপনার আমার প্রতি বিশ্বাস এতোই ঠুনকো ছিল স্নিগ্ধ, যে একটা ছবির উপর ভিত্তি করে আপনি আমাকে আজ এত বড় অপবাদ দিয়ে বসলেন?
লিসেন, আমি আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করেই ছাড়বো আর এ বাড়ি থেকেও বের হয়ে যাবো। আর সেটা আপনার এই ঘৃণিত অপবাদের জন্য না, সেটা আমার নিজের আত্মসম্মানের জন্য!
তবে হ্যাঁ সেদিন সত্যিটা জেনে যাবেন আপনি চাইলেও আমাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারবেন না, মিস্টার স্নিগ্ধ!!!
মাইন্ড ইট!”
অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে উঠলো মিশরাত। গুটি গুটি পায়ে গিয়ে মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী আর ইফতেখার চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে।
– ” মা, বাবা! আমি জানি আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না, আপনারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন! আমি জানি না আমি আদৌও তার যোগ্য কি না?
তবে হ্যাঁ প্লিজ আমাকে আটকাবেন না, আমি এত বড় একটা মিথ্যে অপবাদ নিয়ে স্নিগ্ধর সাথে একই ছাদের নিচে থাকতে পারবো না!
এ কয়েক মাসে আমি যতটুকু ভালোবাসা পেয়েছি তাতে আমি মুগ্ধ।
আপনারা নিজেদের খেয়াল রাখবেন। আমার চলে যাওয়ার সময় এসে পড়েছে। ভালো থাকবেন!!”
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো মিশরাত। চোখে জমে থাকা অশ্রু টুকু টুপ করে গড়িয়ে গালে এসে পড়লো।
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী মিশরাতকে আটকাতে গিয়েও থেমে গেলেন। কোন মুখে আটকাবে সে!
মিশরাত এগিয়ে গেল দরজার দিকে। যাওয়ার পূর্বে এক পলক স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে আবারো হাঁটা শুরু করলো সে। আর স্নিগ্ধ ঠায় মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। চিন্তাশক্তি হারিয়ে গিয়েছে তার। মিশরাতের বলে যাওয়া প্রতিটি বাক্য তার কানে বাজছে। এত বড় ভুল সে কি করে করতে পারলো!
মিশরাত বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী এসে দাঁড়ালেন স্নিগ্ধর সামনে। স্নিগ্ধ মাথা তুলে তাকাচ্ছে না। দৃষ্টি তার মেঝেতে আবদ্ধ। মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন স্নিগ্ধর গালে।
– ” লজ্জা করলো না, এসব করতে?
তোকে আমার নিজ গর্ভের সন্তান বলতেও ঘৃণা হচ্ছে স্নিগ্ধ!!
মিশরাতের মতো ওমন একটা মিষ্টি মেয়েকে তুই এতো বড় অপবাদ দিলি?
আর তুই নেশা করিস? অরিনের সাথে কিসের সম্পর্ক তোর? যদি কেউ নষ্টা হয়ে থাকে সেটা মিশরাত না সেটা হলো তুই!
আমার চোখের সামনে থেকে এই মুহূর্তে দূর হয়ে যা স্নিগ্ধ। আমার তোর চেহারা দেখতেও ঘৃণা লাগছে!!”
এদিকে ইফতেখার চৌধুরীর শরীর ঘর্মাক্ত হয়ে উঠেছে। বুকে অসহনীয় ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। এ কিসের লক্ষণ তবে?
কারো চাপা আর্তনাদের শব্দ কানে পৌঁছাতেই পেছনে ফিরে তাকালো মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী আর স্নিগ্ধ। মিস্টার ইফতেখার চৌধুরী সোফার উপর বসে পড়েছেন বুকে হাত দিয়ে। বুকের ভেতর চাপ অনুভব হতেই চাপা আর্তনাদ ভেসে আসে।
– ” বাবা, বাবা! কি হয়েছে বাবা? চোখ খুলো! বাবা চোখ খুলে রাখো! কিছু হবে না!
আমরা এক্ষুনি হসপিটাল যাচ্ছি, তুমি ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না!!”
ইফতেখার চৌধুরীকে ধরে প্রলাপ বকতে থাকে স্নিগ্ধ।
– ” খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না স্নিগ্ধ! ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে গিয়েছে, এখন পরিবারের লোকজন ও দূরে ঠেলে দিচ্ছে!
হওয়া উচিত!
আমারো এমন কষ্ট হয়েছিল। তোমার জন্য আমি আনানকে, আমার অস্তিত্ব, আমার চেহারা হারিয়েছি! কিভাবে তোমাকে ছেড়ে দেই বলো!”
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো অরিন। চোখে মুখে প্রতিশোধের তীব্র নেশা!………….
চলবে ?