প্রেম_প্রেম_খেলা,০৮,০৯

0
207

#প্রেম_প্রেম_খেলা,০৮,০৯
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
০৮

আদ্রিয়ান তার নেক্সট মিউজিক ভিডিওর জন্য শুটিং করা শুরু করে দিলো।যেখানে এবারও মেল ক্যারেক্টারে থাকবে আদ্রিয়ান আর ফিমেল ক্যারেক্টারে থাকবে অহনা।
আদ্রিয়ান আছে বিধায় অহনা রাজি হয়েছে।তা না হলে সে জীবনেও রাজি হতো না।

শুটিং শুরু হয়ে গেছে।অহনা আর আদ্রিয়ান বেশ মনোযোগ দিয়েই কাজ টা করছে।
ঠিক সেই মুহুর্তে আদ্রিয়ানের ফোনে কল আসলো।সেজন্য আদ্রিয়ান শুটিং অফ করে একটু দূরে সরে গেলো।

যখন কথা বলা শেষ হলো তখন আদ্রিয়ান শুটিং স্পটে আসলো।কিন্তু তার মুখ খানা বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিলো। অহনা তখন এগিয়ে এসে বললো,কি হয়েছে আদ্রিয়ান? কোনো সমস্যা?

আদ্রিয়ান তখন বললো অহনা আমাকে আজকেই ঢাকা ছাড়তে হবে।খুব এমারজেন্সি একটা শো তে ডাক পড়েছে আমার।

অহনা সেই কথা শুনে বললো এটা তো অনেক ভালো নিউজ।আপনি চলে যান।

আদ্রিয়ান তখন বললো কিন্তু এই শুটিং এর কি হবে?

অহনা তখন বললো, আপাতত শুটিং বন্ধ থাকবে।আপনি আসার পর বাকি কাজ শুরু করা হবে।

আদ্রিয়ান তখন বললো,
পাগল হইছো তুমি?এতোদিন শুটিং অফ থাকলে আমাদের কত ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাই নাই।তার চেয়ে বরং শো টাই ক্যান্সেল করে দেই।এই বলে আদ্রিয়ান তার ফোন টা নিয়ে কাকে যেনো কল করতে ধরলো।

অহনা তখন বললো কি করছেন এসব?এতো বড় একটা শো এ চান্স পাইছেন সেটা মোটেও হাতছাড়া করা যাবে না।আপনি চলে যান।আমি দেখছি কি করা যায়?

আদ্রিয়ান তখন বললো তুমি আবার কি করবে?

এদিকে তানহা এগিয়ে এসে বললো,দোস্ত কি হইছে?

আদ্রিয়ান তখন তানহাকেও বললো ব্যাপার টা।

তানহা তখন বললো, তোর এখন বাহিরের শোতেই যাওয়া উচিত আদ্রিয়ান। উল্লাস আর সানি তো আছেই।ওদের মধ্যে কাউকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেবো আমরা।

আদ্রিয়ান তখন বললো কিন্তু অহনা যে আমাকে ছাড়া আর কারো সাথে শুটিং করবে না।

তানহা তখন বললো, না করলে আর কি করার আছে?আমি আর সানি করবো তাহলে।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো তুই সানির সাথে করবি মডেলিং?যাতে মিউজিক ভিডিও টা ফ্লপ হয় সেই ধান্দায় আছিস তাই না?

তানহা তখন তাহলে কি আর করার আছে?কাউকে না কাউকে তো করতেই হবে।এখন অহনা যদি না কাজ করে তাহলে কি ওর পায়ে পড়ে কাজ করাতে হবে আমাদের?

অহনা সেই কথা শুনে বললো কারো পায়েতেই পড়তে হবে না।আমি করবো কাজ টা।এই বলে অহনা চলে গেলো শুটিং স্পটে।

আদ্রিয়ান তখন অহনার হাত ধরে বললো, তুমি মন থেকে বলছো অহনা?তোমার কোনো প্রবলেম হবে না তো?

–না। হবে না।আপনি আপনার শো টা মনোযোগ দিয়ে করিয়েন।এই বলে অহনা আবার শুটিং স্পটে চলে গেলো।

আদ্রিয়ান সবাইকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে গেলো।কারন তাকে যে ব্যাগ প্যাক করতে হবে।

এদিকে অহনা সানির সাথে শুটিং শুরু করে দিলো।কিন্তু অহনার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিলো না।কারণ সানি ইচ্ছাকৃতভাবেই তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টাচ করছিলো।
সেজন্য অহনা বার বার বলতে লাগলো স্টপ।স্টপ দিছ ভিডিও।

এইভাবে ভিডিওর মাঝখানে বার বার থেমে দেওয়ায় সবাই ভীষণ বিরক্ত হতে লাগলো।কিন্তু অহনা আদ্রিয়ানের কথা ভেবে আবার তার কাজে মন দিলো।কারণ ভিডিও টা সুন্দর না হলে আদ্রিয়ানের যে অনেক বড় লস হয়ে যাবে।

কিছুক্ষণ পর অহনার মনে হলো, না এভাবে সানির সাথে সে কিছুতেই কাজ করতে পারবে না।আদ্রিয়ান ছাড়া অন্য কোনো ছেলে টাচ করবে?ইম্পসিবল। সেজন্য অহনা কাউকে কিছু না বলে শুটিং স্পট ছেড়ে চলে গেলো।অহনাকে হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়া দেখে সবাই চিল্লাতে লাগলো।কেউ কিছুই বুঝতে পারছিলো না।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

অনু আদ্রিয়ানের কাপড় গুছিয়ে গুছিয়ে ব্যাগে রাখছে।আর মিসেস তমালিকা খন্দকার আদ্রিয়ান কে খাইয়ে দিচ্ছে।আদ্রিয়ান এতো বড় হইছে তবুও এখনো তাকে খাইয়ে দিতে হয়।তার আম্মু না খাওয়াই দিলে সে কিছুতেই খেতে চায় না।শুধুমাত্র বাহিরে গেলে আদ্রিয়ান নিজের হাতে খাবার খায়।তার আচার আচরণ এখনো শিশুদের মতো।

তমালিকা খন্দকার খাইয়ে দিচ্ছে আর বলছে,বাবা!আমরা কবে বউমাকে দেখতে পারবো এই বাড়িতে?আর কবে তার হাতের মজার মজার রান্না খাবো?

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, সেটা জীবনেও সম্ভব না আম্মু।আমি বিয়ে করবো না কখনো।আর কতবার বলবো তোমাদের।অনুর হাতের এতো টেস্টি টেস্টি খাবার খেয়েও মন ভরছে না তোমার?

–না ভরছে না।

আদ্রিয়ান তখন বললো,তোমার যখন আরো মজার মজার রান্নার খাওয়ার এতই শখ তাহলে ভালো ভালো কিছু সেফ নিয়োগ দেবো।ওকে।

তমালিকা খন্দকার সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,বউমার হাতের রান্না আর সেফের হাতের রান্না কি এক হবে কখনো?আমার সেফ চাই না,বউমাকেই চাই আমার।

হঠাৎ পিছন দিক থেকে অহনা বললো, এই তো আমি এসেছি।

তমালিকা খন্দকার অহনাকে দেখে বেশ হয়ে বললো, অহনা!তোমার কথাই হচ্ছিলো।

অহনা সেই কথা শুনে বললো, আমার কথা হচ্ছিলো? সত্যি বলছেন?

–হ্যাঁ সত্যি বলছি।এই বলে অহনা আদ্রিয়ানের আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো।

এদিকে আদ্রিয়ান অহনাকে দেখে ভীষণ রেগে গেলো। আর বললো, তুমি এখানে?তোমার না শুটিং হচ্ছে।

–হ্যাঁ হচ্ছে।

আদ্রিয়ান তখন ধমক দিয়ে বললো তাহলে শুটিং বাদ দিয়ে এ বাসায় কি করো?

অহনা কিছু বলার আগেই তমালিকা বললো,এটা কি ধরনের ব্যবহার আদ্রিয়ান? তুমি সবসময় অহনার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করো কেনো?

অহনা তখন বললো,আম্মু!আমি কিন্তু আর কখনোই আপনাদের বাসায় আসবো না।আপনার ছেলেকে বলে দিন হয় সে ঠিক করে কথা বলবে তা না হলে আমাকে হারাবে।

আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।অহনা তার আম্মুকে নিজেও আম্মু বলে ডাকছে।এতো দূর চলে গিয়েছে সে?আদ্রিয়ান এবার আর তার রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারলো না।সে অহনার কাছে গিয়ে বললো, এই তুমি আমার আম্মুকে কি বলে ডাকলে?আমার আম্মু তোমার কোন জন্মের আম্মু ছিলো?

অহনা আদ্রিয়ানের রাগ দেখে একদম ভয় পেয়ে গেলো।সে একদম কেঁদেই ফেললো।

তমালিকা খন্দকার তখন আদ্রিয়ান কে উলটো ধমক দিয়ে বললো, আমি বলেছি আম্মু ডাকতে।আর অহনা শুধু আজ না,এখন থেকে সবসময় আম্মু আম্মু বলেই ডাকবে।

আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না তার মা অহনার এতো ভক্ত হলো কেমনে?তাছাড়া অহনা কেনো শুটিং ছেড়ে এসেছে সেটাও জানা হলো না তার।তার আম্মু থাকতে কিছুই বলা যাবে না।সেজন্য আদ্রিয়ান বললো,

আম্মু তুমি একটু বাহিরে যাবা এখন?আর অনু তুইও চলে যা।আমার অহনার সাথে একটু আলাদা ভাবে কথা আছে।

তমালিকা তখন হাসতে হাসতে বললো ওকে বাবা।যাচ্ছি।এখনকার ছেলেমেয়েদের মতিগতি বোঝা বড় দায়।আর তার নিজের ছেলের মতিগতি তো বোঝায় যায় না।এই বলে তমালিকা বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

আদ্রিয়ান যখন অহনাকে প্রপোজ করেছিলো তখন অহনার বান্ধুবীরা কিছু ছবি উঠায়ছিলো।।সবগুলো ছবি অহনা নিজের কাছে অনেক যত্ন করে রেখেছে।আর এই ছবিগুলোই আদ্রিয়ানের মা বাবা দুইজনই দেখেছে।কারণ সবাই যখন বলাবলি করছিলো আদ্রিয়ান অহনাকে ভালোবাসে, সবাই বিশ্বাস করলেও আদ্রিয়ানের বাবা মা বিশ্বাস করে নি।কারণ আদ্রিয়ান কারো সাথে প্রেম করবে বা ভালোবাসবে এটা ইম্পসিবল ব্যাপার ছিলো।আদ্রিয়ানের বাবা মা কনফার্ম হওয়ার জন্য অহনার কাছে গিয়েছিলো।অহনা তখন ছবিগুলো দেখিয়েছে।তবে দিয়ে তারা বিশ্বাস করেছে।এজন্য তমালিকা খন্দকার এতো বেশি ভালোবাসছেন অহনাকে।কারণ তমালিকা চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার এই বদমেজাজি ছেলেকে বিয়া করাবেন তিনি।যেহেতু আদ্রিয়ান ও অহনাকে ভালোবাসে তাহলে কিসের আর দেরি?
কিন্তু তিনি তো আর জানেন না আদ্রিয়ান ভালোবাসার নাটক করছে?

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

তমালিকা খন্দকার চলে যাওয়ার সাথে সাথে আদ্রিয়ান বললো,তুমি শুটিং করা বাদ দিয়ে কি জন্য এ বাসায় এসেছো?

অহনা তখন বললো আমি সানির সাথে শুটিং করতে পারবো না।

–কেনো পারবে না?

অহনা তখন বললো, আপনি কি রকম ভালোবাসার মানুষ হে?
যে তার প্রেমিকাকে অন্য আরেকজন ছেলের হাতে দিয়ে আসেন?

আদ্রিয়ান তখন বললো আমি কি সানির সাথে তোমাকে প্রেম করতে বলেছি?

অহনা তখন বললো সানি আমার শরীরে টাচ করতেছিলো যা আমার অসহ্য লেগেছে।সেজন্য আমি চলে এসেছি।আমি পারবো এই কাজ করতে। সরি আদ্রিয়ান।

অহনার কথা শুনে আদ্রিয়ানের মাথা এতো গরম হলো যে সে রাগ করে বললো অহনা বের হয়ে যাও আমাদের বাসা থেকে।আর কখনোই আসবে না এখানে।

কিন্তু অহনা আদ্রিয়ানের রাগ যেনো বুঝতেই পারলো না।সে তখন বললো,

কেনো আসবো না?একশো বার আসবো।এই বলে সে আদ্রিয়ানের বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো। আর বললো,ইশঃ কবে আসবে সেই দিন।যেদিন আমরা দুইজন একসাথে ঘুমাবো এই বিছানায়।এই বলে সে আদ্রিয়ানের হাত ধরেও দিলো এক টান।আর সেজন্য আদ্রিয়ান ও বিছানায় এসে পড়লো।

আদ্রিয়ান অহনার এমন কান্ড দেখে কি বলবে সত্যি তার মাথাতেই আসছিলো না।সে তখন বললো অহনা!তুমি কি মানুষ নও?

–এ কথা বলছেন কেনো?

আদ্রিয়ান তখন বললো, না মানে তুমি এতো লজ্জাহীন কেনো?এইভাবে যে আমাদের বাসায় আসছো,তারপর আমাকে যে বিছানায় শোয়ালে এটা কোনো ভদ্র মেয়ের কাজ?

অহনা তখন বললো আমি কবে বললাম যে আমি ভদ্র?

আদ্রিয়ান অহনার এমন উত্তর শুনে সত্যি টাস্কি খেয়ে গেলো।সে তখন বললো অহনা তুমি কিন্তু এবার তোমার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো?

অহনা সেই কথা শুনে বললো কই ছাড়িয়েছি সীমা?এখনো ছাড়ি নি।আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসছি,লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছি বাট এখনো আমি বা আপনি একটা কিস পর্যন্ত করতে পারলাম না।এটা কি মানা যায় কখনো?এই বলে অহনা তার চোখে হাত দিয়ে বললো,ধ্যাত কি বলছি এসব?এসব তো আপনি বলবেন।

আদ্রিয়ান তখন বললো,তুমি এতো দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছো অহনা?ছিঃ। আমি সত্যি ভাবতে পারছি না আর। এ আল্লাহ! এই মেয়ের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও।

অহনা তখন উঠে এসে আদ্রিয়ানের বুকের উপর ঝুঁকে তার মুখ স্পর্শ করে বললো, এটা আর সম্ভব না আদ্রিয়ান। কেউ আর আপনাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।আপনি যখন আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছেনই তখন এই আমি আপনাকে বিয়েও করবো,তারপর বাসরও হবে আমাদের।আর কিছুদিনের মধ্যে ঘরভর্তি পোলাপান ও হবে।সব হবে।শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি।

আদ্রিয়ান তখন অহনাকে সরিয়ে দিয়ে বললো, তোমার মাথায় মনে হয়ে প্রবলেম আছে অহনা।তা না হলে একজন মেয়ে মানুষ এতো বেহায়া কেমন করে হয়?

অহনা তখন হাসতে হাসতে বললো, আমার বান্ধুবীরাও সেম কথা বলে। আর আজ আপনিও বলবেন।তাহলে আরেকটু পাগলামি করি?এই বলে অহনা আদ্রিয়ানের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো।

আদ্রিয়ান তখন বললো, এভাবে আমার দিকে আসছো কেনো অহনা?

আদ্রিয়ান অহনার এমন আচরণ দেখে মনে মনে ভাবলো এই মেয়ে আবার জোর করে কিছু করবে নাকি?জীবনে তো অনেক মেয়েকেই দেখেছি।কিন্তু এরকম লজ্জাহীন মেয়ে তো দেখি নি।অহনা যে একজন মেয়ে মানুষ সত্যি আমার সন্দেহ হচ্ছে এখন।

হঠাৎ আদ্রিয়ানের বাসায় তানহাও আসলো।সে এসেই সোজা আদ্রিয়ানের রুমে প্রবেশ করলো।আর দুইজনকে এভাবে বিছানায় শোয়া দেখে চিৎকার করে বললো,আদি!এসব হচ্ছে টা কি?

আদ্রিয়ান একদম চমকে উঠে বিছানায় বসলো।আর অহনা তো ছিটকে পড়ে গেলো।

তানহা তখন হাতের তালি দিয়ে বললো, বাহঃ খুব ভালো লাগলো দৃশ্য টা।তা তোদের সম্পর্ক যখন বিছানা পর্যন্তই গড়িয়েছে তাহলে বিয়ে কেনো করছিস না তুই?
এতো সাধু সাজার কি আছে আদি?

আদ্রিয়ান তখন বললো তানহা আগে শুনবি তো পুরো কথা টা?

কিন্তু তানহা কিছু না বলেই চলে গেলো।

আদ্রিয়ান তখন রাগ করে অহনার দুই গালে দুই টা চড় মেরে বললো, এরকম বেহায়া আর নির্লজ্জ মেয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।আর শুনে রাখো আমি তোমাকে কোনোদিন ভালোবাসিও নি।আর বাসবো ও না।বের হয়ে যাও আমাদের বাসা থেকে।

অহনা আদ্রিয়ানের চড় খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো আমাকে মারলেন আপনি?আর কখনোই যাবো না আপনার বাসা থেকে।এই যে বসলাম হাঁটু গেড়ে।আজ থেকে আমি এই বাসাতেই থাকবো।দেখি কি করে আমাকে তাড়ান আপনি?

আদ্রিয়ান কি করবে সত্যি বুঝতে পারছিলো না।অহনাকে সে অনেক সহজ সরল মেয়ে ভেবেছিলো। কিন্তু এই মেয়ে তো দেখি তাকে নাকে দরি দিয়ে ঘোরাচ্ছে।তার উদ্দেশ্য তো সফল হলোই না,বরং উলটো ঘাড়ের উপর চড়ে বসেছে অহনা।
কিন্তু অহনা এরকম কেনো করছে?
আদ্রিয়ান রাগ করে সেজন্য নিজেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

চলবে,

#প্রেম_প্রেম_খেলা(০৯)
বোনাস পর্ব
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তানহার মুখে আদ্রিয়ান আর অহনার কথা শুনে উল্লাস,সানি আর লিথি যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।
তারা সবাই বললো, এতোদিন অনেকে অনেক কথা বলেছে আমরা বিশ্বাস করি নি।এমনকি টিভির চ্যানেলেও আদ্রিয়ান আর অহনাকে নিয়ে নিউজ হয়েছে তবুও আমরা বিশ্বাস করি নি।কিন্তু আজ এই কথা শোনার পর মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান আর অহনা সত্যি সত্যি প্রেম করছে।কিন্তু আদ্রিয়ান আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে এতো বড় সত্যি টা লুকাতে পারলো?

লিথি তখন বললো আদ্রিয়ান মনে হয় আর আমাদের বন্ধু ভাবে না।সেজন্য এভাবে এড়িয়ে চলছে।এতো বড় একটা খবর সে আমাদের জানালো না।

তানহা তখন বললো,এতে আদ্রিয়ানের কোনো দোষ নাই।আমার মনে হচ্ছে অহনার কোনো উদ্দেশ্য আছে।তাছাড়া এই মেয়ে হঠাৎ করে এভাবে আদ্রিয়ানের পিছনে উঠেপড়ে লেগেছে কেনো?

সানি তখন বললো, এতো কিছুর পর ও তুই আদ্রিয়ান কে বিশ্বাস করছিস?

–হ্যাঁ করছি।কারণ ওকে আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না।সেই কলেজ লাইফ থেকে ওর সাথে আমি আছি।একসাথে আমরা ভার্সিটি লাইফও শেষ করেছি।ও যে কোনো মেয়ে মানুষের উপর আসক্ত হবে এটা কেউ আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবে না।

উল্লাস তখন বললো, ব্যাপার টা আমাকেও বেশ ভাবাচ্ছে।অহনা হঠাৎ কোথায় থেকে উদয় হলো?

কিছুক্ষন পর আদ্রিয়ান আসলো ওদের মাঝে।

আদ্রিয়ান কে দেখে কেউ কোনো কথা বললো না।

আদ্রিয়ান ওদের মুখ চোখ দেখে বুঝে ফেললো তানহা নিশ্চয় ওদের কে সবকিছু বলে দিয়েছে।
সেজন্য আদ্রিয়ান বললো,
দোস্ত তোরা যেটা ভাবছিস সেরকম কিছুই নয়।অহনা নিজেই গিয়েছে আমাদের বাসায়।আর গিয়েই কি শুরু করেছে যা আমি কল্পনাও করতে পারছি না।

সানি তখন বললো,দোস্ত শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দে।তুই কি সত্যি অহনাকে ভালোবাসিস?

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,আমি যে বার বার বলতেছি আমি অহনাকে ভালোবাসি না।তারপর ও তোদের বিশ্বাস হচ্ছে না?

উল্লাস সেই কথা শুনে বললো, দেখ আদি।আমরা তোকে অনেক বিশ্বাস করি। বাট ব্যাপার টা এখন খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অহনাকে তোর থেকে দূরে সরে দে।তা না হলে এই মেয়ে যে কি করবে তুই ভাবতেও পারবি না।

আদ্রিয়ান তখন বললো হ্যাঁ সেটাই করতে হবে।আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে অহনার সাথে ভাব জমাতে চাইছিলাম সে উদ্দেশ্য তো আর পূরন হলো না।তাহলে ওকে কেনো রাখতে যাবো আমার জীবনে?

তানহা সেই কথা শুনে বললো তাহলে ওকে তোর সত্যি কথাটা বলতে হবে এখন।তুই আজকেই বলে দে অহনাকে।তা না হলে অহনা কিন্তু তোর পিছু কিছুতেই ছাড়বে না।

আদ্রিয়ান কথা দিলো আজকেই সে অহনার থেকে তার আংটি ফেরত নেবে।আর অহনাকে ডাইরেক্ট বলে দেবে সে তাকে ভালোবাসে না।

উল্লাস তখন বললো আমি তাহলে নেক্সট ভিডিওর জন্য আবার একটা নিয়োগ দেই।অহনার থেকেও অনেক সুন্দর আর স্মার্ট মেয়ে বাছাই করবো আমি।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো ঠিক আছে।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

অহনা আজ আদ্রিয়ানের বাসাতেই আছে।কারণ মিসেস তমালিকা আজ আর যেতে দেন নি অহনাকে।আদ্রিয়ান যেহেতু আজ চলে যাবে সেজন্য তিনি চাইছিলেন আজ অহনা তাদের বাসাতেই থেকে যাক।

আদ্রিয়ান আজ রাতের ফ্লাইটেই ঢাকা ছাড়বে।সেজন্য আদ্রিয়ান চাইছিলো অহনাকে সে সত্যি টা বলেই যাবে।তাহলে সে একমাস পর দেশে এসে একদম নির্ঝামেলায় তার কাজে মন দিতে পারবে।

আদ্রিয়ান শুধু সুযোগ খুচ্ছে।কিন্তু বলতে পারছে না।কারণ অহনা এখন পর্যন্ত তার সামনেই আসে নি।

অন্যদিকে অহনা রুমে বসে থেকে কাঁদছে।আসলে আদ্রিয়ান আজ চলে যাবে দেখে অহনার মন টা ভীষণ খারাপ।সেজন্য সে একা একা রুমের মধ্যে বসে কাঁদছে আর চিন্তা করছে এই এক মাস সে আদ্রিয়ান কে না দেখে থাকবে কি করে?

হঠাৎ আদ্রিয়ান অহনার রুমে প্রবেশ করলো।আর এসেই বললো,অহনা তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই।

কিন্তু অহনা আদ্রিয়ানের গলা শোনামাত্র দৌঁড়ে এসে আদ্রিয়ান কে জড়িয়ে ধরলো আর বললো আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসবেন।এই এক মাস আমি আপনাকে না দেখে কি করে থাকবো?

আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে আর তার কান্দাকাটি দেখে সে কি বলতে এসেছিলো সেটাই ভুলে গেলো।আদ্রিয়ান একদম বোবার মতে হয়ে রইলো।এদিকে অহনা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আর বলছে,বিদেশ গিয়ে আমাকে আবার ভুলে যাবেন না তো?

আদ্রিয়ান এবার তার বুক থেকে অহনাকে সরিয়ে দিলো।আর তার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো, এই মেয়ে তুমি কি পাগল নাকি?এইভাবে কেউ কাঁদে?মানুষের আপন কেউ মারা গেলেও তো এভাবে কেউ কাঁদে না।

অহনা তখন বললো আমার তো সেরকমই মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার প্রিয় মানুষ টা আমাকে ছেড়ে কত দূর চলে যাচ্ছে।

আদ্রিয়ান এবার আবার হেসে উঠলো। সে হাসতে হাসতে বললো,তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো?কি জন্য ভালোবাসো?এতো ভালোবাসার একটা রিজেন দেখাও।

অহনা তখন বললো জানি না আমি।শুধু জানি আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।যে ভালোবাসার কোনো কারণ নেই।

আদ্রিয়ান তখন বললো, অহনা!একটা সত্যি কথা বলবো শুনবে?

–জ্বি বলেন।

আদ্রিয়ান তখন বললো,আমি জানি কথা টা শুনলে তুমি ভীষণ মন খারাপ করবে।কিন্তু কিছু করার নাই আমার।এই সত্য টা আড়াল করে আমি তোমাকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছি।

অহনা তখন বললো,কি এমন কথা?

আদ্রিয়ান তখন বললো, আই এম সরি অহনা।আমি তোমাকে কখনো কোনোদিন ভালোবাসি নি।আর বাসতেও পারবো না।

অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে বললো, মানে?কি বলছেন এসব?

–হ্যাঁ ঠিক বলছি।আমি তোমার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার নাটক করেছি এতোদিন। যাতে করে তুমি আমার সব কথা শোনো।আর আমার কথামতো প্রতিটা ভিডিওর জন্য কাজ করো।

অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হা হয়ে রইলো।এই কথাগুলো কি সত্যি আদ্রিয়ান বলছে?অহনার বিশ্বাসই হচ্ছে না।

আদ্রিয়ান তখন বললো, আমি তোমাকে বাকি সবার মতো ভেবে এসেছি।কিন্তু তুমি যে সম্পূর্ণ আলাদা টাইপের মেয়ে তা আমি আজ দিয়ে বুঝে গেলাম।অনেক মেয়েই আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু তারা সবাই তাদের ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে আসে।আমি তোমাকেও সুযোগ দিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি সেটা গ্রহণ করো নি।
তুমি যে শুধু আমাকেই ভালোবাসো এটা আমি বুঝে গেছি।

অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে কোনো উত্তর দিলো না।কারন তার যে আজ কথা বলার শক্তি টাই নষ্ট হয়ে গেছে।

আদ্রিয়ান তখন বললো আই এম সরি অহনা।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।

অহনা এবার কথা বলে উঠলো।সে এবার তার চোখের পানি মুছিয়ে বললো,
আমাকে কেনো ভালোবাসা যায় না সেটা কি জানতে পারি আদ্রিয়ান ?

আদ্রিয়ান তখন বললো,আমি একসময় মোহনা নামের একটা মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসতাম।তাকে আমি আজও ভালোবাসি।সেজন্য দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়তে চাই না অহনা।কারণ আমি এখনো আমার ফাস্ট ভালোবাসার মানুষের প্রতিই আসক্ত।তার জায়গায় আমি অন্য কোনো মেয়েকে বসাতে পারবো না।

অহনা সেই কথা শুনে বললো, সেই মেয়ে কোথায় এখন?

আদ্রিয়ান তখন বললো জানি না সে কোথায় আছে?তবে আমি তাকে অনেক খুঁজেছি।

অহনা তখন বললো কি হয়েছিলো আপনাদের মধ্যে?যে কারণে আপনারা আজ আলাদা?

আদ্রিয়ান তখন বললো এটা একান্তই আমার পার্সোনাল ম্যাটার।সেজন্য বলতে পারছি না।

অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,হায় রে ভালোবাসা।ভালোবাসা মানুষ কে সত্যি অন্ধ করে দেয়।
যে মেয়ে আপনাকে ঠকিয়েছে সেই মেয়েকে আপনি এখনো ভালোবাসেন?
যার জন্য আপনার সুন্দর জীবন টা এভাবে নষ্ট হয়ে গেলো সেই খারাপ, দুশ্চরিত্রা মেয়ের জন্য এখনো অপেক্ষা করছেন?

আদ্রিয়ান এবার চিৎকার করে বলে উঠলো মুখ সামলিয়ে কথা বলো অহনা।সে আমার কাছে সবসময়ই পবিত্র।তার চরিত্র নিয়ে খবরদার কথা বলবে না।

অহনা এবার নিজেও চিৎকার করে বললো সেদিন আপনি কই গিয়েছিলেন মিঃ আদ্রিয়ান? যেদিন মোহনাকে সবাই মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো?
সেদিন আপনি কই মুখ লুকিয়ে বসে ছিলেন যেদিন মোহনা আপনার কাছে ছুটে এসে বার বার বলেছিলো, মানুষের কথা বিশ্বাস করো না আদি।প্লিজ আমাকে এক্সসেপ্ট করে নাও।
সেদিন কই গিয়েছিলেন আদ্রিয়ান? যেদিন অপমান সহ্য করতে না পেরে মোহনা আত্নহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলো?
আর আজ আপনি এখনো সেই ভালোবাসার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেছে আছেন?অথচ যখন মূল্য দেওয়ার কথা ছিলো তখন তাকে ঘৃনা করেছেন।নিজের মুখে আপনার জীবন থেকে তাকে সরিয়ে যেতে বলেছেন।
কেনো করেছেন এমন?

অহনার কথা শুনে আদ্রিয়ানের যেনো পুরো পৃথিবী ঘুরতে লাগলো।অহনা এসব কি বলছে?অহনা মোহনার কথা জানলো কি করে?

আদ্রিয়ান মোহনার কথা জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক তখনি অহনা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।এদিকে আদ্রিয়ান অহনা অহনা বলে চিল্লাতে লাগলো।কিন্তু অহনা আর পিছন ফিরে তাকালো না।তখন আদ্রিয়ান দ্রুত গিয়ে অহনাকে ধরে ফেললো,আর বললো তুমি কে?

অহনা তখন আদ্রিয়ানের হাত সরে দিয়ে বললো আমি আপনার জীবন টা তছনছ করার জন্য এসেছিলাম আদ্রিয়ান। আপনাদের পুরো পরিবার কে ধব্বং করতে চেয়েছিলাম যেমন ভাবে আপনি আমার পরিবারকে ধবংস করেছেন।কিন্তু আফসোস আমি কিছুই করতে পারলাম না।আমি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছি।কারন আপনি যে এখনো আমার বোনকে ভালোবাসেন।আর আপনার বাবা মার মতো ভালো মানুষ যে কেউ হতেই পারে না।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here