#প্রেম_প্রেম_খেলা,০৯,১০
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
০৯ বোনাস পর্ব
তানহার মুখে আদ্রিয়ান আর অহনার কথা শুনে উল্লাস,সানি আর লিথি যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।
তারা সবাই বললো, এতোদিন অনেকে অনেক কথা বলেছে আমরা বিশ্বাস করি নি।এমনকি টিভির চ্যানেলেও আদ্রিয়ান আর অহনাকে নিয়ে নিউজ হয়েছে তবুও আমরা বিশ্বাস করি নি।কিন্তু আজ এই কথা শোনার পর মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান আর অহনা সত্যি সত্যি প্রেম করছে।কিন্তু আদ্রিয়ান আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে এতো বড় সত্যি টা লুকাতে পারলো?
লিথি তখন বললো আদ্রিয়ান মনে হয় আর আমাদের বন্ধু ভাবে না।সেজন্য এভাবে এড়িয়ে চলছে।এতো বড় একটা খবর সে আমাদের জানালো না।
তানহা তখন বললো,এতে আদ্রিয়ানের কোনো দোষ নাই।আমার মনে হচ্ছে অহনার কোনো উদ্দেশ্য আছে।তাছাড়া এই মেয়ে হঠাৎ করে এভাবে আদ্রিয়ানের পিছনে উঠেপড়ে লেগেছে কেনো?
সানি তখন বললো, এতো কিছুর পর ও তুই আদ্রিয়ান কে বিশ্বাস করছিস?
–হ্যাঁ করছি।কারণ ওকে আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না।সেই কলেজ লাইফ থেকে ওর সাথে আমি আছি।একসাথে আমরা ভার্সিটি লাইফও শেষ করেছি।ও যে কোনো মেয়ে মানুষের উপর আসক্ত হবে এটা কেউ আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবে না।
উল্লাস তখন বললো, ব্যাপার টা আমাকেও বেশ ভাবাচ্ছে।অহনা হঠাৎ কোথায় থেকে উদয় হলো?
কিছুক্ষন পর আদ্রিয়ান আসলো ওদের মাঝে।
আদ্রিয়ান কে দেখে কেউ কোনো কথা বললো না।
আদ্রিয়ান ওদের মুখ চোখ দেখে বুঝে ফেললো তানহা নিশ্চয় ওদের কে সবকিছু বলে দিয়েছে।
সেজন্য আদ্রিয়ান বললো,
দোস্ত তোরা যেটা ভাবছিস সেরকম কিছুই নয়।অহনা নিজেই গিয়েছে আমাদের বাসায়।আর গিয়েই কি শুরু করেছে যা আমি কল্পনাও করতে পারছি না।
সানি তখন বললো,দোস্ত শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দে।তুই কি সত্যি অহনাকে ভালোবাসিস?
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,আমি যে বার বার বলতেছি আমি অহনাকে ভালোবাসি না।তারপর ও তোদের বিশ্বাস হচ্ছে না?
উল্লাস সেই কথা শুনে বললো, দেখ আদি।আমরা তোকে অনেক বিশ্বাস করি। বাট ব্যাপার টা এখন খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অহনাকে তোর থেকে দূরে সরে দে।তা না হলে এই মেয়ে যে কি করবে তুই ভাবতেও পারবি না।
আদ্রিয়ান তখন বললো হ্যাঁ সেটাই করতে হবে।আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে অহনার সাথে ভাব জমাতে চাইছিলাম সে উদ্দেশ্য তো আর পূরন হলো না।তাহলে ওকে কেনো রাখতে যাবো আমার জীবনে?
তানহা সেই কথা শুনে বললো তাহলে ওকে তোর সত্যি কথাটা বলতে হবে এখন।তুই আজকেই বলে দে অহনাকে।তা না হলে অহনা কিন্তু তোর পিছু কিছুতেই ছাড়বে না।
আদ্রিয়ান কথা দিলো আজকেই সে অহনার থেকে তার আংটি ফেরত নেবে।আর অহনাকে ডাইরেক্ট বলে দেবে সে তাকে ভালোবাসে না।
উল্লাস তখন বললো আমি তাহলে নেক্সট ভিডিওর জন্য আবার একটা নিয়োগ দেই।অহনার থেকেও অনেক সুন্দর আর স্মার্ট মেয়ে বাছাই করবো আমি।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো ঠিক আছে।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
অহনা আজ আদ্রিয়ানের বাসাতেই আছে।কারণ মিসেস তমালিকা আজ আর যেতে দেন নি অহনাকে।আদ্রিয়ান যেহেতু আজ চলে যাবে সেজন্য তিনি চাইছিলেন আজ অহনা তাদের বাসাতেই থেকে যাক।
আদ্রিয়ান আজ রাতের ফ্লাইটেই ঢাকা ছাড়বে।সেজন্য আদ্রিয়ান চাইছিলো অহনাকে সে সত্যি টা বলেই যাবে।তাহলে সে একমাস পর দেশে এসে একদম নির্ঝামেলায় তার কাজে মন দিতে পারবে।
আদ্রিয়ান শুধু সুযোগ খুচ্ছে।কিন্তু বলতে পারছে না।কারণ অহনা এখন পর্যন্ত তার সামনেই আসে নি।
অন্যদিকে অহনা রুমে বসে থেকে কাঁদছে।আসলে আদ্রিয়ান আজ চলে যাবে দেখে অহনার মন টা ভীষণ খারাপ।সেজন্য সে একা একা রুমের মধ্যে বসে কাঁদছে আর চিন্তা করছে এই এক মাস সে আদ্রিয়ান কে না দেখে থাকবে কি করে?
হঠাৎ আদ্রিয়ান অহনার রুমে প্রবেশ করলো।আর এসেই বললো,অহনা তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই।
কিন্তু অহনা আদ্রিয়ানের গলা শোনামাত্র দৌঁড়ে এসে আদ্রিয়ান কে জড়িয়ে ধরলো আর বললো আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসবেন।এই এক মাস আমি আপনাকে না দেখে কি করে থাকবো?
আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে আর তার কান্দাকাটি দেখে সে কি বলতে এসেছিলো সেটাই ভুলে গেলো।আদ্রিয়ান একদম বোবার মতে হয়ে রইলো।এদিকে অহনা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আর বলছে,বিদেশ গিয়ে আমাকে আবার ভুলে যাবেন না তো?
আদ্রিয়ান এবার তার বুক থেকে অহনাকে সরিয়ে দিলো।আর তার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো, এই মেয়ে তুমি কি পাগল নাকি?এইভাবে কেউ কাঁদে?মানুষের আপন কেউ মারা গেলেও তো এভাবে কেউ কাঁদে না।
অহনা তখন বললো আমার তো সেরকমই মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার প্রিয় মানুষ টা আমাকে ছেড়ে কত দূর চলে যাচ্ছে।
আদ্রিয়ান এবার আবার হেসে উঠলো। সে হাসতে হাসতে বললো,তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো?কি জন্য ভালোবাসো?এতো ভালোবাসার একটা রিজেন দেখাও।
অহনা তখন বললো জানি না আমি।শুধু জানি আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।যে ভালোবাসার কোনো কারণ নেই।
আদ্রিয়ান তখন বললো, অহনা!একটা সত্যি কথা বলবো শুনবে?
–জ্বি বলেন।
আদ্রিয়ান তখন বললো,আমি জানি কথা টা শুনলে তুমি ভীষণ মন খারাপ করবে।কিন্তু কিছু করার নাই আমার।এই সত্য টা আড়াল করে আমি তোমাকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছি।
অহনা তখন বললো,কি এমন কথা?
আদ্রিয়ান তখন বললো, আই এম সরি অহনা।আমি তোমাকে কখনো কোনোদিন ভালোবাসি নি।আর বাসতেও পারবো না।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে বললো, মানে?কি বলছেন এসব?
–হ্যাঁ ঠিক বলছি।আমি তোমার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার নাটক করেছি এতোদিন। যাতে করে তুমি আমার সব কথা শোনো।আর আমার কথামতো প্রতিটা ভিডিওর জন্য কাজ করো।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হা হয়ে রইলো।এই কথাগুলো কি সত্যি আদ্রিয়ান বলছে?অহনার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
আদ্রিয়ান তখন বললো, আমি তোমাকে বাকি সবার মতো ভেবে এসেছি।কিন্তু তুমি যে সম্পূর্ণ আলাদা টাইপের মেয়ে তা আমি আজ দিয়ে বুঝে গেলাম।অনেক মেয়েই আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু তারা সবাই তাদের ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে আসে।আমি তোমাকেও সুযোগ দিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি সেটা গ্রহণ করো নি।
তুমি যে শুধু আমাকেই ভালোবাসো এটা আমি বুঝে গেছি।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে কোনো উত্তর দিলো না।কারন তার যে আজ কথা বলার শক্তি টাই নষ্ট হয়ে গেছে।
আদ্রিয়ান তখন বললো আই এম সরি অহনা।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
অহনা এবার কথা বলে উঠলো।সে এবার তার চোখের পানি মুছিয়ে বললো,
আমাকে কেনো ভালোবাসা যায় না সেটা কি জানতে পারি আদ্রিয়ান ?
আদ্রিয়ান তখন বললো,আমি একসময় মোহনা নামের একটা মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসতাম।তাকে আমি আজও ভালোবাসি।সেজন্য দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়তে চাই না অহনা।কারণ আমি এখনো আমার ফাস্ট ভালোবাসার মানুষের প্রতিই আসক্ত।তার জায়গায় আমি অন্য কোনো মেয়েকে বসাতে পারবো না।
অহনা সেই কথা শুনে বললো, সেই মেয়ে কোথায় এখন?
আদ্রিয়ান তখন বললো জানি না সে কোথায় আছে?তবে আমি তাকে অনেক খুঁজেছি।
অহনা তখন বললো কি হয়েছিলো আপনাদের মধ্যে?যে কারণে আপনারা আজ আলাদা?
আদ্রিয়ান তখন বললো এটা একান্তই আমার পার্সোনাল ম্যাটার।সেজন্য বলতে পারছি না।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,হায় রে ভালোবাসা।ভালোবাসা মানুষ কে সত্যি অন্ধ করে দেয়।
যে মেয়ে আপনাকে ঠকিয়েছে সেই মেয়েকে আপনি এখনো ভালোবাসেন?
যার জন্য আপনার সুন্দর জীবন টা এভাবে নষ্ট হয়ে গেলো সেই খারাপ, দুশ্চরিত্রা মেয়ের জন্য এখনো অপেক্ষা করছেন?
আদ্রিয়ান এবার চিৎকার করে বলে উঠলো মুখ সামলিয়ে কথা বলো অহনা।সে আমার কাছে সবসময়ই পবিত্র।তার চরিত্র নিয়ে খবরদার কথা বলবে না।
অহনা এবার নিজেও চিৎকার করে বললো সেদিন আপনি কই গিয়েছিলেন মিঃ আদ্রিয়ান? যেদিন মোহনাকে সবাই মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো?
সেদিন আপনি কই মুখ লুকিয়ে বসে ছিলেন যেদিন মোহনা আপনার কাছে ছুটে এসে বার বার বলেছিলো, মানুষের কথা বিশ্বাস করো না আদি।প্লিজ আমাকে এক্সসেপ্ট করে নাও।
সেদিন কই গিয়েছিলেন আদ্রিয়ান? যেদিন অপমান সহ্য করতে না পেরে মোহনা আত্নহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলো?
আর আজ আপনি এখনো সেই ভালোবাসার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেছে আছেন?অথচ যখন মূল্য দেওয়ার কথা ছিলো তখন তাকে ঘৃনা করেছেন।নিজের মুখে আপনার জীবন থেকে তাকে সরিয়ে যেতে বলেছেন।
কেনো করেছেন এমন?
অহনার কথা শুনে আদ্রিয়ানের যেনো পুরো পৃথিবী ঘুরতে লাগলো।অহনা এসব কি বলছে?অহনা মোহনার কথা জানলো কি করে?
আদ্রিয়ান মোহনার কথা জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক তখনি অহনা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।এদিকে আদ্রিয়ান অহনা অহনা বলে চিল্লাতে লাগলো।কিন্তু অহনা আর পিছন ফিরে তাকালো না।তখন আদ্রিয়ান দ্রুত গিয়ে অহনাকে ধরে ফেললো,আর বললো তুমি কে?
অহনা তখন আদ্রিয়ানের হাত সরে দিয়ে বললো আমি আপনার জীবন টা তছনছ করার জন্য এসেছিলাম আদ্রিয়ান। আপনাদের পুরো পরিবার কে ধব্বং করতে চেয়েছিলাম যেমন ভাবে আপনি আমার পরিবারকে ধবংস করেছেন।কিন্তু আফসোস আমি কিছুই করতে পারলাম না।আমি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছি।কারন আপনি যে এখনো আমার বোনকে ভালোবাসেন।আর আপনার বাবা মার মতো ভালো মানুষ যে কেউ হতেই পারে না।
চলবে,
#প্রেম_প্রেম_খেলা(১০)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
তুমি এতোদিন তাহলে আমার সাথে নাটক করেছো?এই যে আমাকে নিয়ে তোমার পাগলামি গুলো সব কি তাহলে তোমার অভিনয় ছিলো?
–হ্যাঁ অভিনয় ছিলো।আমি আপনাকে কোন দুঃখে ভালোবাসতে যাবো আদ্রিয়ান? আপনি হাজার মেয়ের ক্রাশ হতে পারেন কিন্তু আমার নয়।
তাছাড়া আপনার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো আপনি আমার বোনের প্রেমিক হন।
আদ্রিয়ান তখন বললো কেনো এ অভিনয় করেছো অহনা?
অহনা তখন বললো আপনার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য।এখন সত্যি করে বলুন আমার বোন কে হোটেলে নিয়ে গিয়েছিলো কে?
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,মোহনা কিন্তু ছোটো বাচ্চা ছিলো না।তাছাড়া কেউ তাকে জোর করেও নিয়ে যেতে পারে না।সে নিজের ইচ্ছাতেই গিয়েছে।রিসেপশনে তারই নাম লেখা ছিলো।সে নিজে সাইন করেছে।
অহনা তখন বললো, তার মানে আপনি এখনো বিশ্বাস করেন আপুর সাথে যে ছেলের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেটা সত্যি ঘটনা।
আদ্রিয়ান তখন বললো আমি ভালোমন্দ বুঝি না অহনা।তোমার বোন যে আমার বিশ্বাস ভেংগেছে আমি শুধু এটাই বুঝি।মোহনা যে হোটেলে খারাপ কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে সেটা কিন্তু মিথ্যা না।আমি বা তুমি যতই চিল্লাচিল্লি করি না কেনো এতো বড় সত্য টা কিন্তু মিথ্যে হয়ে যাবে না।
অহনা তখন হাসতে হাসতে বললো,আপনি আমার বোনকে মিস ও করেন আবার তাকে অপরাধীও ভাবেন।ব্যাপার টা ঠিক নিতে পারলাম না আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ান তখন বললো,অনেক নাটক করেছো তুমি।প্লিজ এখন আর আমার মাথাটা গরম করো না।আমি ভুলে গেছি সব।দয়া করে এসব পুরাতন কথা নতুন করে জেগে তুলো না।যাও,এখন তুমি তোমার রাস্তা দেখতে পারো।
অহনা তখন বললো,এতো তাড়াহুড়ো কেনো করছেন আদ্রিয়ান? আমি অনেক অপমান আর লাঞ্চনা সহ্য করে এই পর্যন্ত এসেছি কি এমনি এমনি।
–তাহলে কি করতে চাচ্ছো তুমি?
;আমি যা করবো সেটা আমার নিজের প্লান অনুযায়ীই করবো।সেজন্য আমি চাচ্ছি আপনি আমাকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন।
আদ্রিয়ান তখন চিৎকার করে বললো, স্টপ অহনা।প্লিজ আমার আর এসব শুনতে ভালো লাগছে না।তুমি চলে যাবা এখন?
অহনা তখন বললো, এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো আপনি?আপনি তো নির্দোষ তাই না?
;হ্যাঁ আমি নির্দোষ।
অহনা তখন বললো,আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে এসব কিছু আপনারই একটা সাজানো ফাঁদ ছিলো।আপনি নিজেই মোহনাকে হোটেলে নিয়ে গেছেন।মাঝখান থেকে আমার বোন দোষী হয়েছে।আর আপনি হয়েছেন সাধুবাবা।
আদ্রিয়ান তখন হাসতে হাসতে বললো তোমার মাথা পুরাই গেছে অহনা।আমি মোহনাকে ভালোবাসি।ভীষণ ভাবে ভালোবাসি।আমাদের দুই বছরের রিলেশন ছিলো।এতো ভালোবাসার পরেও আমি কি করে ওর সাথে বেঈমানি করতে পারি?
অহনা তখন চিল্লায়ে বললো,করতেই পারেন।কারন অভিনয় করা আপনার পেশা।আপনি আপনার স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারেন।আপনি তো স্বার্থের জন্য আমার সাথেও প্রেমের অভিনয় করছিলেন।এখন কি করে বিশ্বাস করি আপনাকে বলুন তো?
আদ্রিয়ান তখন বললো মোহনাকে ঠকিয়ে আমার কি লাভ?এখানে আমার কিসের স্বার্থ থাকতে পারে?
অহনা তখন বললো হয় তো আমার বোনকে ভীষণ ভাবে ভালো লেগেছে সেজন্য এতোদিন প্রেম চালিয়ে গেছেন।কিন্তু যখন দেখলেন আর ভালো লাগছে না তখন এই নাটক টা সাজিয়েছেন যাতে করে আপদ ও দূর হয়ে যায়।আর আপনার রাস্তাও ক্লিয়ার হয়ে যায়।যাতে করে আবার নতুন আরেকজনের সাথে এই প্রেম প্রেম খেলা খেলতে পারেন।
আদ্রিয়ান এবার অহনার কাছে গিয়ে বললো, আমাকে তো অনেকদিন ধরেই পটাতে চাইছো,পেরেছো কি?বিছানা পর্যন্ত নিয়ে গেছো আমাকে।আমি কি তোমাকে একবারের জন্য টাচ করেছিলাম?
আমি হলাম আদ্রিয়ান।আমার পেশা যেমন গান গাওয়া তেমনি নেশাও এই গান গাওয়া।আমি আগেও বলেছি আর এখনো বলছি আমি কখনো কোনোদিন কোনো নারীতে আসক্ত ছিলাম না আর থাকবোও না।আমি শুধুমাত্র একজনাতেই আসক্ত ছিলাম।আর সারাজীবন তারই থেকে যাবো।আমি মোহনাকে ভালোবাসি।বুঝেছো?দ্বিতীয় বার আর অন্য নারীর কথা বলবে না।মোহনা ছাড়া আমার জীবনে অন্য নারী ছিলো না।আর আসবেও না।
অহনা সেই কথা শুনে বললো, তা এতই যখন প্রেমিকাকে ভালোবাসতেন তাহলে তাকে বিশ্বাস কেনো করেন নি?কেনো একবারের জন্যও ভাবেন নি কেউ শত্রুতা করে এই কাজ করেছে।
আদ্রিয়ান এবার আর অহনার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।
অহনা তখন বললো, আমার বোন কিন্তু ও ক্যারেক্টারের মেয়েই ছিলো না।সেটা আপনি নিজেও তো ভালো করে জানেন।তাহলে কেনো বুঝতে পারেন নি সেদিন আপনি?কেনো প্রতিবাদ করেন নি?
আদ্রিয়ান তখন বললো প্লিজ অহনা আমি হাতজোড় করে বলছি এসব এখন থামাও।আমি আর শুনতে চাই না এসব কিছু।
অহনা তখন বললো আপনি না শুনতে চাইলেও আজ আপনাকে শুনতে হবে এসব।কারণ আজ আমার বলার দিন আদ্রিয়ান।আপনি যদি সেদিন আমার বোনকে একটু সাপোর্ট করতেন তাহলে আমার বোন কে আত্নহত্যা করতে হতো না।আর আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতো না।আমাদের আপনি অনেক বড় ক্ষতি করেছেন।এর জন্য কিন্তু আপনাকে অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আদ্রিয়ান তখন বললো তুমি আমাকে দোষারোপ করছো কেনো?আমি কি ওকে আত্নহত্যা করতে বলেছিলাম?
অহনা তখন বললো, বলেন নি।কিন্তু এমন ভাবে অপমান করেছেন যেজন্য আমার বোন নিজের জীবনটাই শেষ করেছে।আপনি জানতেন না সে আপনাকে কত টা ভালোবাসতো?সেই আপনিই যদি তাকে অবিশ্বাস করেন আর তাকে অপমান জনক কথা বলেন সে আর কি নিয়ে বেঁচে থাকতো?
আদ্রিয়ান তখন বললো, অহনা!তখন আমি মানসিক ভাবে ভেংগে পড়েছিলাম।এই পরিস্থিতিতে রাগের মাথায় কি বলেছি সে তো আমি নিজেই জানি না।
অহনা তখন চিৎকার করে বললো,তাই বলে একজন নির্দোষ মানুষ কে আপনি দোষারোপ করবেন? যারা ফাঁসিয়েছে আমার বোনকে তাদের আমি শেষ দেখে ছাড়বো।একটারেও শান্তিতে থাকতে দেবো না।এই বলে অহনা বেড়িয়ে পড়লো।
এদিকে অহনাকে যেতে দেখে তমালিকা খন্দকার বললো, মা অহনা!তুমি যাচ্ছো কোথায়?তোমাকে না বললাম আজ এখানেই থেকে যাও।
আদ্রিয়ান তখন পিছন দিক থেকে বললো,মাম্মি ওকে যেতে দাও প্লিজ।তুমি এবার একটু বাস্তবতায় ফিরে এসো।আমাদের দুইজনকে নিয়ে এসব ভুলভাল ভাবা বন্ধ করো।
তমালিকা তখন আদ্রিয়ানের কাছে এসে বললো, বাবা কি হয়েছে তোদের মধ্যে আবার?তোরা সারাক্ষণ এতো ঝগড়া করিস কেনো?তোদের কে তো আমি একবারও ভালোভাবে কথা বলতে দেখি না।
আদ্রিয়ান তখন বললো, আর দেখবেও না মাম্মি।
–মানে?
আদ্রিয়ান তখন বললো,এতো দিন ধরে একটা গেম চলছিলো।সেই গেম টা আজ অভার হয়ে গেলো।
এই বলে আদ্রিয়ান অহনার আগেই বাসা থেকে চলে গেলো।
এদিকে অহনাও যখন তার পা বাড়াতে লাগলো তখন তমালিকা বললো, আদ্রিয়ান কোন গেমের কথা বললো অহনা?
অহনা তখন বললো আপনি বুঝবেন না এ গেম আন্টি।
–আন্টি?তুমি আমাকে আবার আন্টি বলছো?আমি না বলেছি আম্মু বলে ডাকবে।আমার কোনো মেয়ে নাই।সেজন্য তুমিই আমার মেয়ে।
অহনা তখন বললো, আন্টি আমি আপনার বা আপনার ছেলের আপন কেউ হই না।আমিও আদ্রিয়ান কে ভালোবাসি না আর আদ্রিয়ান ও না।আমি হলাম আদ্রিয়ানের এক্স লাভার মোহনার বোন অহনা।এই বলে অহনাও বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।
তমালিকা খন্দকার অবাক নয়নে অহনার দিকে তাকিয়ে রইলো।যে মোহনার জন্য তার সোনার টুকরো ছেলেটার জীবন পুরোই শেষ হয়ে গেছে সেই মেয়ের বোনকে সে এতো খাতির যত্ন করেছে এতোদিন?সেই মেয়েকেই সে তার ছেলের বউ ভেবে বসে আছে?
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
মোহনা আর আদ্রিয়ান একই সাথে পড়াশোনা করতো।একসময় তারা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।আর বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে তারা প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে যায়।আদ্রিয়ান আজ এতো বড় একজন শিল্পী হয়েছে শুধুমাত্র মোহনার জন্য।কারণ আদ্রিয়ানের গানের গলা খুবই সুন্দর ছিলো।সে প্রায়ই বিভিন্ন ফাংশনে গান গাইতো।তারপর তার বন্ধুবান্ধবদের ও গান গাইয়ে শোনাতো।
আদ্রিয়ানের এমন সুরালো কন্ঠ শুনে মোহনা নিজেই আদ্রিয়ান কে একটা ইউটিউব চ্যানেল আর ফেসবুকে একটা পেজ খুলতে বলে।আদ্রিয়ান ও মোহনার কথামতো ইউটিউব চ্যানেল খোলে।আর প্রতিদিন সে নিজের গলায় গান গেয়ে পোস্ট করতে থাকে।প্রথমদিকে তেমন কোনো সাড়া পায় না সে।তবুও রেগুলার সে গান গাইতে থাকে।আদ্রিয়ান তার প্রতিটা গান মোহনাকে উদ্দেশ্য করে গাইতো।সব ঠিকঠাক ভাবেই চলছিলো।তাদের প্রেম ভালোবাসা দেখে প্রায় মানুষ ই হিংসা করতো।কিন্তু হঠাৎ একদিন তাদের এই ভালোবাসাতে ফাটল ধরে যায়।কারণ মোহনাকে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তমাল নামের এক ছেলের সাথে হোটেলে দেখা যায়।পরে পুলিশ মোহনা আর ছেলেটিকে ধরে নিয়ে যায়।
বেআইনি কাজের জন্য মোহনাকে পুলিশ হোটেল থেকে ধরেছে বলে একের পর এক নিউজ হতে থাকে।এই নিউজ শোনামাত্র মোহনার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়।আর এদিকে মোহনার মা অহনাকে তার এক রিলাটিভের বাড়ি রেখে আসে।কারণ তিনি চান নি এক মেয়ের জন্য মানুষ তার অন্য মেয়ের দিকেও আংগুল তুলে কথা বলুক। অহনা তখন মাত্র এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় বসে আছে।
এদিকে মোহনাকে ছাড়ানোর জন্য মোহনার মা আর মামা পুলিশ ষ্টেশনে চলে যায়।তারা অনেক টাকা পয়সা খরচ করে অবশেষে মোহনাকে ফেরত আনে।কিন্তু মোহনা বুঝতেই পারছে না সে কত বড় একটা অপরাধ করেছে।
মোহনার অপকর্মের কথা শুনে আদ্রিয়ান ভীষণ ভাবে ভেংগে পড়ে।সে বিশ্বাসই করতে পারছিলো না মোহনা এই খারাপ পেশার সাথে জড়িত।কিন্তু যখন সবার মুখে মুখে মোহনার অপকর্মের কথা সে শোনে তখন আর সে সেটা সহ্য করতে পারছিলো না।সেও পুরোপুরি বিশ্বাস করে যে মোহনা একজন খারাপ চরিত্রের মেয়ে।
লজ্জায় মোহনা বাড়ি থেকে বের হতে পারছিলো না।তবুও সে চুরি করে আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করতে যায়।কারণ মোহনার বিশ্বাস ছিলো আদ্রিয়ান তাকে বিশ্বাস করবে।
মোহনাকে দেখে আদ্রিয়ান কিছুই বলে নি কিন্তু আদ্রিয়ানের বন্ধুবান্ধব ভীষণ ভাবে অপমান করতে থাকে মোহনাকে।মোহনা তখন আদ্রিয়ানের হাত ধরে বলে, আদ্রিয়ান প্লিজ বিলিভ মি।তোর কি মনে হয় আমি খারাপ?
আদ্রিয়ান মোহনার হাত সরে দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
পরের দিন মোহনা আবার আসে আদ্রিয়ানের কাছে।আর বলে আদ্রিয়ান! পুরো পৃথিবীর লোক একদিকে আর তুই একদিকে।কে কি বলছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমি শুধু তোর মুখে শুনতে চাই তুই কি ভাবছিস আমাকে নিয়ে?
তানহা তখন বলে মোহনা তোর লজ্জা শরম আসলেই নেই। এতো কিছুর পরও তুই কোন লজ্জায় আদ্রিয়ানের সামনে এসেছিস,অন্য কেউ হলে এই মুখ আর দেখাতো না কোনোদিন।
মোহনা তখন তানহাকে ধমক দিয়ে বলে,আমি কি তোর সাথে কথা বলছি?তুই কেনো আমাদের দুইজনের মাঝে আসতেছিস?
তানহা তখন বলে এতোকিছুর পরেও তোর তেজ কমলো না মোহনা।তুই আসলেই লজ্জাহীন মেয়ে একটা।
এবার আদ্রিয়ান চিৎকার করে বলে,তানহা তুই কি শুরু করলি বল তো? তুই কি কারনে একজন অপবিত্র মেয়ের সাথে কথা বলে নিজেকেও অপবিত্র করছিস?চলে আয় তুই।এসব নোংরা মেয়েদের থেকে আমাদের দূরে থাকাই বেটার।
এই বলে আদ্রিয়ান তানহাকে সাথে করে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।কিন্তু মোহনা ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।তবে আদ্রিয়ান আর পিছন ফিরে তাকায় না।
হঠাৎ আদ্রিয়ান কি মনে করে যেনো পিছন ফিরে তাকায়।আর দৌঁড়ে গিয়ে মোহনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।এটাই তাদের দুইজনের শেষ দেখা আর শেষ স্পর্শ ছিলো।কিন্তু দুইজনের কেউই সেটা বুঝতে পারে নি।
মোহনাও কাঁদছে অন্যদিকে আদ্রিয়ান ও কাঁদছে।এদিকে ভার্সিটির সকল স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে থেকে তাদের দেখছে আর কেউ বা ছবি তুলছে।
এদিকে মোহনা কাঁদছে আর বলছে আদ্রিয়ান তুই কি আমাকে সত্যি অবিশ্বাস করছিস?বিশ্বাস কর আমি এসবের কিছুই জানি না।কেউ বিশ্বাস না করলেও অন্তত তুই বিশ্বাস কর প্লিজ।
আদ্রিয়ান তখন মোহনার মুখে হাত দিয়ে বলে এখন এসব বাদ দে।ভুলে যা সব।যা হবার হয়ে গেছে।কে কি বললো তাতে আমার যায় আসে না।আমি তোকে বিয়ে করতে চাই।তুই কাল কাজি অফিসে চলে আসিস।
মোহনা তখন বলে,কিন্তু তোর বাবা মা কে না বলে এইভাবে বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে?
আদ্রিয়ান তখন বলে তুই কি আমাকে বিয়ে করতে চাস?যদি রাজি থাকিস তাহলে আসিস।কারণ আমার ফ্যামিলি কখনোই মেনে নিবে না তোকে।
–কিন্তু,,,,
–কোনো কিন্তু নয়।
কিন্তু হঠাৎ এক সপ্তাহ পরে মোহনার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তার নিজের বাড়ি থেকে।
আদ্রিয়ান এই নিউজ শোনার পর প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলো।কারণ সেও আত্নহত্যা করতে ধরেছিলো।ছুড়ি দিয়ে নিজের শরীর ক্ষতবিক্ষত করেছিলো।
প্রায় এক দুই মাস আদ্রিয়ান হাসপাতালের বেডেই পড়ে ছিলো।পরে তার বন্ধুরা তাকে বিভিন্ন ভাবে শান্ত্বনা দেয় বিশেষ করে তানহা সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছে তাকে।উল্লাস সানি আর লিথি তো আছেই।
কিছুদিন আদ্রিয়ান মোহনার জন্য পাগলামি করলেও পরে সে স্বাভাবিক হয়ে যায়।মোহনার স্মৃতি কে ধরে রাখার জন্য সে নতুন করে গানের জগতে ফিরে আসে।আর একের পর এক গানের ভিডিও ইউটিউবে ছাড়তে থাকে।শেষমেশ দীপান্বিতা গানের মাধ্যমে সে জনপ্রিয়তা লাভ করে।তারপর থেকে আদ্রিয়ান কে আর পিছনে তাকাতে হয় নি।এতোদিন অন্যের গান নিজের কন্ঠে গাইলেও বর্তমানে সে নিজের সুর করা আর নিজের ই বানানো গানে কন্ঠ দেয়।
মোহনার মৃত্যুর কথা শুনেও তার মা অহনাকে আসতে দেয় নি।অহনা অনেকবার গ্রামে আসতে চেয়েছে।তবুও পারে নি আসতে।শেষমেষ কিছুদিন আগে তার মাও মারা যায়।তারপর সে তার গ্রামে ফিরে আসে।
অহনা তার বাড়িতে এসেই তার বোন মোহনার ডায়রি টা হাতে নেয়।ডায়রি টা অহনা এক রাতের মধ্যেই পড়ে শেষ করে।ডায়রির প্রতিটা পাতা শুধু আদ্রিয়ান কে নিয়ে লেখা।কিছু কিছু কথা পড়ে অহনার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে থাকে।কারণ মোহনা যে অসম্ভব ভালোবাসতো আদ্রিয়ান কে।
ডায়রির প্রথম পাতাতেই ছিলো,
আমার ভালোবাসার আদ্রিয়ান। সে দেখতে যেমন হ্যান্ডসাম তেমনি তার সুর পাগল করার মতো।আমি বার বার শতবার সেই সুরের মাঝে হারিয়ে যেতে চাই।সে যখন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো তখন শুধু আমি ভাবতাম কেনো এই ছেলেটাকে আমার এতো ভালো লাগে।কেনো তাকে আমার শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড মনে হয় না।পরে বুঝতে পারলাম আমি তাকে ভালোবাসি।অসম্ভব ভাবে ভালোবাসি।যে ভালোবাসা কোন কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।আমি তাকে সারাজীবনের জন্য আমার করে রাখতে চাই।তাকে আমি হারিয়ে যেতে দেবো না কখনো।কারণ আমার মতো যে তাকে আর কেউই ভালোবাসতে পারবে না।
পুরো ডায়রি জুড়ে শুধু আদ্রিয়ান কে নিয়ে মোহনার মনের আবেগ অনুভূতি নিয়ে লেখা।মোহনা যে আদ্রিয়ান কে পাগলের মতো ভালোবাসতো এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই।
কিন্তু ডায়রির শেষ পাতার দুই টা লাইন পড়ে অহনার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।এই লাইন দুইটা পড়েই বোঝা যায় মোহনা কেনো আত্নহত্যা করেছে।
মোহনা লিখেছে,
আদ্রিয়ান আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে আর অনেক বিশ্বাস ও করে।আমাকে নিয়ে যখন পুরো দেশের লোক কানাকানি করেছে এমনকি আমার পরিবারের প্রতিটা লোকও আমাকে অপমান করেছে তখনও সে আমার পাশে ছিলো।আমাকে বিয়ে করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু আমি কি তার সেই আগের মোহনা আছি?যে ছিলো ফুলের মতো পবিত্র,যাকে ছোঁয়ার অধিকার শুধু তার ভালোবাসার মানুষ আদ্রিয়ানের ছিলো।আমাকে তো এখন অন্য পুরুষ ছুঁয়েছে।
–আমি কি এতোটাই স্বার্থপর মেয়ে?
আদ্রিয়ান এখন যতই আমাকে ভালোবাসুক আমার কাছে কেনো জানি তা সহানুভূতিতার মতো মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে সে আমাকে দয়া করছে।কারন তার যে একটা কথা আমি কখনো ভুলতে পারবো না,সে যখন তানহাকে বললো,
তুই কি কারনে একজন অপবিত্র মেয়ের সাথে কথা বলে নিজেকেও অপবিত্র করছিস তানহা?চলে আয় তুই।এসব নোংরা মেয়েদের থেকে আমাদের দূরে থাকাই বেটার।
এই কথাটা কেনো জানি বার বার আমার কানে বাজছে।কেনো বাজছে কানে আমার?কেনো আমি সারাক্ষণ শুধু এই কথাটাই শুনতে পাচ্ছি।
এইজন্য অহনা আদ্রিয়ান কে প্রমান করার জন্য তার সাথে এমন ভালোবাসার অভিনয় করেছে।অহনা দেখতে চেয়েছে আদ্রিয়ান সত্যি অন্য নারীর প্রতি আসক্ত কিনা?আদ্রিয়ান সত্যি মোহনাকে ভালোবাসতো কিনা?না মোহনার প্রতি তার এই ভালোবাসা শুধুই একটা নাটক ছিলো?মোহনার উপর এই ষড়যন্ত্রের পিছনে আদ্রিয়ানের হাত ছিলো কিনা?
চলবে,