প্রেম_প্রেম_খেলা #পর্ব_০২(বোনাস পর্ব)

0
314

#প্রেম_প্রেম_খেলা
#পর্ব_০২(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

অহনা চোখ মেলে তাকাতেই দেখে তিনজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে।এদিকে যে রাত পেরিয়ে ভোর হয়েছে সেদিকে ওর বিন্দুমাত্র খেয়াল নাই।
সে হাত দিয়ে তার চোখ টা ভালো করে ঘষা দিয়ে আবার তাকালো।আর পুলিশদের দেখতে পেয়ে ঘুমঘুম চোখে বললো,
দেখতে এলাম আদ্রিয়ান কে কিন্তু দেখতে পাচ্ছি পুলিশদের।

তখন একজন পুলিশ রাগান্বিত কন্ঠে বললো, এই মেয়ে বিড়বিড় করে কি বলছো এসব?গাড়ি থেকে নামো?

অহনা সেই কথা শুনে বললো, কেনো স্যার?

–কেনো মানে?তোমার নামে নালিশ আছে।

অহনা তখন বললো আমি কি করেছি স্যার?

–কি করেছো এখনো জানো না?অদ্রিয়ানের বাসার সামনে কাল থেকে ঘুরঘুর করছো।এখন পর্যন্ত এখানেই আছো।থানায় চলো আমাদের সাথে।

–কিন্তু স্যার আমি তো শুধু,,,

অহনা পুরো কথা শেষ না করতেই একজন মহিলা পুলিশ অহনাকে টেনে নামালো গাড়ি থেকে আর ওনাদের গাড়িতে তুললো।
অহনা শুধু বার বার বলতে লাগলো প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আমি তো কিছু করি নি।কি জন্য আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন?
তখন মহিলা পুলিশটি বললো চুপ করো।কোনো কথা হবে না।আগে থানায় চলো।সব কথা থানায় গিয়ে শুনবো।

অহনা সেজন্য চুপ করে থাকলো।তবে তার ভীষণ ভয় হতে লাগলো সে কি সত্যি কোনো অপরাধ করেছে?কিন্তু কি অপরাধ করেছে?

অহনাকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেলো।কিছুক্ষন পর দুইজন পুলিশ এসে বললো, স্যার, পুরো গাড়ি চেক করলাম।কিন্তু সন্দেহ করার মতো কিছুই পেলাম না।শুধু কিছু শুকিয়ে যাওয়া ফুলের তোড়া,একটা গিফট বক্স আর কিছু আদ্রিয়ানের আর্ট করা ছবি।

তখন পুলিশ ইন্সপেক্টর অহনার সামনে এসে বললো সত্যি করে বলো কেনো আদ্রিয়ানের বাসার সামনে ঘুরঘুর করছিলে?

অহনা তখন বললো স্যার, আমি তো জাস্ট আদ্রিয়ান কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলাম।প্লিজ বিশ্বাস করুন।

পুলিশ ইন্সপেক্টর তখন আদ্রিয়ানের বাসার দারোয়ান মিঃ নাফিস কে বললো কিছু না জেনে হুদাই কম্পিলিন করো।এই মেয়ে তো আদ্রিয়ানের ফ্যান।আদ্রিয়ান কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে।

নাফিস সেই কথা শুনে বললো, স্যার মেয়েটি কাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে আছে।সেজন্য ভেবেছিলাম আপনাদের জানানো উচিত ব্যাপার টা।

পুলিশ সব কথা শুনে অহনাকে ছেড়ে দিলো।কিন্তু এই খবর ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে।কে জানি এই ফাঁকে অহনার ছবিও তুলে নিয়েছে।

খবরের শিরোনাম হলো,আদ্রিয়ানের এক ফ্যান কে সন্দেহের বশে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।কারণ মেয়েটি নাকি কাল সন্ধ্যা থেকে আদ্রিয়ানের বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।খবর নিয়ে দেখা গেছে মেয়েটি একজন ভার্সিটির স্টুডেন্ট। হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করে।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

টুশু,অর্পা,আর সনিয়া অহনাকে ঘিরে ধরে আছে।তারা অহনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলো।এতোদিন আদ্রিয়ান কে নিয়ে অনেক খোঁচা মারা কথা বললেও আজ তারা কোনো কথাই বললো না।কারণ তারা ভালো করেই জানে আজ অহনার মন ভালো নেই।কিন্তু অহনা হঠাৎ চিৎকার করে বললো, পেয়েছি।

টুশু, অর্পা আর সনিয়া অবাক হয়ে বললো, কি পেয়েছিস?

অহনা তখন বললো আদ্রিয়ান এর সাথে দেখা করার রাস্তা পেয়ে গেছি।

অহনার কথা শুনে টুশু হা হয়ে গেলো,অর্পা অহনার দিকে এগিয়ে এলো আর সনিয়া তো বুঝতেই পারছে না কি রিয়েকশন করবে?

অহনা ওদের মুখের এই অবস্থা দেখে বললো, কি হয়েছে তোদের?এভাবে হা করে কি দেখছিস আমার দিকে?

অর্পা তখন বললো, অহনা,এতো কিছুর পরও তুই আদ্রিয়ানের নাম এখনো নিচ্ছিস?

–হ্যাঁ নিচ্ছি।কারণ তোদের তো বলেইছি আদ্রিয়ান কে নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত কিছুতেই হাল ছাড়বো না আমি।

টুশু তখন বললো, অহনা,পাগলামি করিস না।তুই কিন্তু আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান করে নিজের অনেক বড় ক্ষতি করছিস?

–আমার কিছু হয়ে যাক না কেনো?তবুও আমি আদ্রিয়ানের পিছু ছাড়ছি না।

সনিয়া এবার অহনাকে শান্ত ভাবে বোঝাতে লাগলো।দেখ অহনা,আদ্রিয়ান একজন সেলিব্রেটি। তোর মতো অনেক মেয়েরই সে ক্রাশ।সবাই যদি তোর মতো এমন পাগলামি করে তাহলে আদ্রিয়ান কার হবে?তুই প্লিজ এভাবে নিজের মানসম্মান নষ্ট করিস না।তাছাড়া আংকেল আন্টি যখন শুনবে তোকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিলো তখন ওনাদের মনের অবস্থা কেমন হবে?পাড়াপ্রতিবেশি রা অপমানজনক কথা বলবে আংকেল আন্টি কে।একবার তোর ফ্যামিলির কথা মনে করে আদ্রিয়ান কে ভুলে যা।

অহনা সনিয়ার কথা শুনে বললো, তোরা আমাকে যে যাই বলিস না কেনো?আমি যে করেই হোক এক দিন না একদিন আদ্রিয়ানের মুখোমুখি হবোই হবো।

এক মাস পরের ঘটনা,,,,,

আদ্রিয়ান তার বাসার মধ্যে এক মগ কফি হাতে একটা সেলফি উঠে সেটা তার পেজে পোস্ট করলো।।আর ক্যাপশন লিখলো,
“তোমার অনুপস্থিতিতে রক্তিম সূর্যের রং আর গোধূলি বিকেল আমি এক মগ কফির মাঝে খুঁজে ফিরি”

সাথে সাথে সেই পোস্টে লাইক কমেন্ট করা শুরু হয়ে গেলো।কিন্তু আদ্রিয়ান কারো কমেন্টের রিপ্লাই দিলো না বাট সে সবার কমেন্ট এক নজরে দেখে নিলো।

–খবরদার এই পোলার উপর কেউ ক্রাশ খাবা না।কারণ এই পোলা শুধু আমার।

–এই ছেলে হলো আমাদের পাশের বাসার এক আন্টির মেয়ের এক্স।কালসাপ একটা।

–ইতোমধ্যে মনে হয় সেঞ্চুরি করে ফেলেছে।আবার এমন ভাব মারে যে মনে হয় কোনোদিন প্রেমই করি নি।

–আদ্রিয়ান আমার বয় ফ্রেন্ড। আমি হলাম তার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড।

–সামনের মাসে আদ্রিয়ানের সাথে আমার বিয়ে হবে।

এরকম হাজার হাজার কমেন্ট আসতে লাগলো।সে কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়বে?আদ্রিয়ান এই ব্যাপার টা খুব এনজয় করে।সকল মেয়েরা তার জন্য কত পাগল?

আদ্রিয়ান বাসার মধ্যে প্রবেশ করতেই তানহা চিল্লায়ে বললো,
আদি!স্টপ!যাস না আগেই।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে থেমে গেলো।

তানহা তখন বললো,আজ সানি ট্রিট দেবে আমাদের।তোকে নিয়ে যেতে বলেছে সানি।

তানহা হলো আদ্রিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড। শুধু তানহা নয়,সানি,উল্লাস,লিথি আর টিনা হলো আদ্রিয়ানের খুব কাছের বন্ধু।
আর আদ্রিয়ান নাম টা বেশ বড় হওয়ায় বন্ধুরা সবাই তাকে আদি নামেই ডাকে।

?কিসের ট্রিট দিবে ঐ হাড়কিপটে? জীবনে তো দুই পয়সাও খাওয়াতে দেখলাম না ওরে।

তানহা সেই কথা শুনে বললো, ঐ কি নিজের ইচ্ছায় খাওয়াচ্ছে নাকি?আমরা জোর করছি বিধায় খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,তা হঠাৎ কিসের ট্রীট দিচ্ছে ও?

তানহা তখন আদ্রিয়ানের পিঠ থাপড়িয়ে বললো,দোস্ত, আমাদের সানি তো নতুন গার্লফ্রেন্ড পাইয়া গেছে।দেখতে নাকি হেব্বি সুন্দরী। তুই কি করলি জীবনে?এতো ফ্যান ফলোয়ার দিয়ে কি হবে?যদি একটা মনের মতো গার্লফ্রেন্ড ই না জোগাড় করতে পারলি?

–মানে?আদ্রিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তানহার দিকে।

তানহা তখন বললো, মানে আবার কি?
ফেসবুকে এক মেয়ের সাথে পরিচয়,তারপর পরিচয় থেকে কথা বলা।আজ সেই মেয়ে মিট করতে আসছে সানির সাথে।সেজন্য আমাদের কেও ডেকেছে।সানি বলেছে আমাদের চয়েজ হলে তবেই নাকি সে কনটিনিউ করবে রিলেশন টা।

আদ্রিয়ান তানহার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো।

তানহা আদ্রিয়ান কে চুপচাপ থাকা দেখে বললো,প্রেম করতে না বুকের পাটা লাগে।আর সবচেয়ে বড় কথা মেয়ে পটানোর কৌশল জানতে হয় আগে,তারপর রোমান্টিক কথাবার্তা শিখতে হয়।এসব তোর দ্বারা হবে না।তোর শুধু এই চেহারা খান,আর ঐ গানের গলা।আর কিছু নাই ভিতরে।এমন রগচটা আর বদমেজাজী ছেলের দ্বারা প্রেম হয় না মামা।এই বলে তানহা আদ্রিয়ানের হাত থেকে চাবি নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।

আদ্রিয়ান তানহার পিছু পিছু যেতে যেতে বললো, দেখিস সানি বেটা নির্ঘাত ঠকবে।হয় মেয়েটার চরিত্র খারাপ হবে তা না হলে দেখতে বাজে হবে।এসব অনলাইনের প্রেম ভালোবাসা মোটেও টেকে না কারো।

তানহা তখন বললো সেটা সময় হলেই বোঝা যাবে।আগে সানির দুই পয়সা খসে আছি।এই বলে সে নিজেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।

আদ্রিয়ান মনে মনে ভাবতে লাগলো একজন পারফেক্ট মেয়ের অভাবে সে এখনো সিংগেল।চারপাশে এতো এতো মেয়ে থাকার পরও আদ্রিয়ান এখন পর্যন্ত তার মনের মতো একটা গার্লফ্রেন্ড খুঁজে পেলো না।অথচ
প্রতিদিন কত কত মেয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব পাঠায় সেদিকে তো সে তোয়াক্কাই করে না।কিন্তু তার ফ্রেন্ড অনলাইন থেকে মেয়ে পটিয়ে নিলো।

আদ্রিয়ান হোটেলে প্রবেশ করতেই দেখে পরীর মতো সুন্দর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শুধু পরী বললে ভুল হবে একদম ডানা কাটা পরী।তার দুই টা ডানা থাকলে বোধ হয় সে পরীর মতোই উড়ে বেড়াতো।দেখতে মনে হয় ৫ ফুট ৫ এর মতো।ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়েছে সাথে উঁচু হিল।সেজন্য মেয়েটিকে আরো বেশি লম্বা লাগছিলো।

কিন্তু মেয়েটি আদ্রিয়ান কে দেখামাত্র দৌঁড়ে এসে এক নিঃশ্বাসে বললো,
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন ভাইয়া?আমি অহনা।আমি আমার নিজের চোখকে সত্যি বিশ্বাস করতে পারছি না।এ আমি কাকে দেখছি?সত্যি আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।আমি খুশির ঠেলায় তো কথা বলার ভাষাই হেরে ফেলতেছি।
অহনা কথা বলছে আর হাঁপাচ্ছে।
ভাইয়া সত্যি বলতে কি আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে।আপনি ছবিতেও যেমন সুন্দর বাস্তবেও তেমনি।আর গানের গলার কথা নাই বা বললাম।ভাইয়া একটা সেলফি প্লিজ! এই বলে অহনা ক্লিক ক্লিক করে কয়েকটা ছবি ওঠালো।

অহনার এমন কান্ড দেখে উল্লাস সানির গা টেলা দিয়ে বললো, দোস্ত এটা তোর গার্লফ্রেন্ড না আদ্রিয়ানের?এ তো দেখি আদ্রিয়ান কে দেখে পুরাই পাগল হইয়া গেছে।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here