#প্রেম_প্রেম_খেলা
#পর্ব_০৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
কতশত মেসেজ দিয়েছি আপনাকে তা আমি নিজেও জানি না।রোজ রোজ মেসেজ দেই আপনাকে।শেষে সানি ভাইয়াকে নক দিয়ে ওনার সাথে কথা বলি।আর মিট করতে চাই।উনি সাথে সাথে রাজি হয়ে যান।প্লিজ ভাইয়া আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট টা এক্সসেপ্ট করেন।আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান।শুধু ফ্যান বললে ভুল হবে আপনি আমার একমাত্র ক্রাশ।
আদ্রিয়ান বোবার মতো শুধু হা হয়ে আছে।কারণ সে অহনার কথা শুনে পুরাই তাজ্জব হয়ে গেলো।
ওদিকে উল্লাস আর লিথি মুখ টিপিয়ে শুধু হাসছে।আর সানিকে বলছে দোস্ত প্রেম শুরু না হতেই এ মেয়ে তো তোকে বাঁশ দিয়ে দিলো।এই মেয়ে তো তোর সাথে কথা বলেছে শুধুমাত্র আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য।
বন্ধুদের কথা শুনে সানি বেচারার মন টাই খারাপ হয়ে গেলো।সে তো ভেবেছে অহনা তাকে পছন্দ করে।এজন্য মিট করতে চাইছে।কিন্তু এখন তো দেখি পুরাই উলটা।
এবার তানহা এগিয়ে আসলো অহনার কাছে আর বললো,এই মেয়ে!তোমার মাথায় কি কোনো সমস্যা আছে?
অহনা তানহার কথা শুনে বললো, কেনো আপু?এভাবে বলছেন কেনো?
অহনা তখন বললো তুমি তো এসেছো সানির সাথে মিট করার জন্য তাহলে এভাবে আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান বলে চিল্লাচ্ছো কেনো?
অহনা তখন আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,আসলে আপু সত্যি বলতে কি আমি তো আদ্রিয়ান কেই দেখার জন্য এসেছি।আমি ওনার অনেক বড় ফ্যান।আর আমি ওনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে আর এক মুহুর্ত থাকলো না।হনহন করে বেরিয়ে পড়লো হোটেল থেকে।
অহনা নিজেও তখন আদ্রিয়ানের পিছু পিছু চলে গেলো।আর বললো, এই যে শুনছেন?আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আমাকে।আমি কিন্তু সেই অহনা যাকে পুলিশ ভুল করে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।আমি আপনার জন্মদিনে আপনাকে উইশ করতে গিয়েছিলাম।সত্যি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি আমি।আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু।আমার ফেসবুক একাউন্টের নাম অহনা চৌধুরী।
আদ্রিয়ান অহনাকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো।
এদিকে সানি এসে বললো, অহনা কি বলছো তুমি এসব?তুমি না আমাকে পছন্দ করো।
অহনা তখন বললো, সরি ভাইয়া।আমি শুধুমাত্র আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য আপনাকে নক দিয়েছিলাম ফেসবুকে।প্লিজ মাফ করে দিবেন আমাকে।
এবার তানহা এগিয়ে এসে বললো, এই মেয়ে কি সব ভুলভাল বকছো?আদ্রিয়ান কোন দুঃখে তোমাকে ভালোবাসতে যাবে?
অহনা সেই কথা শুনে বললো, বাসবে বাসবে।অবশ্যই বাসবে।এই বলে সেও চলে গেলো।
অহনার কথা শুনে আদ্রিয়ানের বন্ধুরা অনেক বেশি অবাক হলো।এই মেয়ে কি বলছে এসব?
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
অহনার বান্ধুবীরা আসলেই বুঝতে পারছে না আসলে অহনা চাচ্ছে টা কি?কেনো এমন করছে সে?এভাবে নিজের মানসম্মান নিজের হাতে কেনো শেষ করছে?
অহনার বান্ধুবীরা এসব নিয়ে চিন্তা করলেও অহনার বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই।তার উউদ্দেশ্য একটাই যে করেই হোক আদ্রিয়ান কে পটাতেই হবে।
কিন্তু অহনা এটা জানে না যে আদ্রিয়ান কারো প্রেমে পড়ার মতো ছেলে নয়।
এদিকে আদ্রিয়ান বাসায় আসতেই ওর বন্ধুরাও এগিয়ে আসলো।তানহা বললো, দোস্ত এই মেয়েটা কে কি তুই আগে থেকে চিনিস?
আদ্রিয়ান সোজাসাপটা উত্তর দিলো না।
–তাহলে মেয়েটা এরকম পাগলামি কেনো করছে?
“তা,আমি কি করে জানি?
এই বলে আদ্রিয়ান চলে গেলো।
কিন্তু সানির বেশ সন্দেহ হলো।কি করে একটা মেয়ে এতো নির্লজ্জ হতে পারে?মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না।কিন্তু এই মেয়ে তো তার সব সীমা অতিক্রম করে ফেলতেছে।শেষমেশ তার সাথেও প্রেমের অভিনয় করলো?তবুও নাকি তার আদ্রিয়ান কে চাই।ব্যাপার টা বেশ খটকা লাগলো সবার।
এদিকে অহনা আদ্রিয়ানের সাথে যেসব সেলফি উঠেছিলো সেগুলো এক এক করে তার নিজের আইডি,পেজ এবং বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করতে লাগলো।আর ক্যাপশন দিলো, আমি আর আমার বয়ফ্রেন্ড একসাথে ফাইভ স্টার হোটেলে।আমরা আজ খুব মজা করলাম।
ইতোমধ্যে এই নিউজ টিও ভাইরাল হয়ে গেলো।আদ্রিয়ানের যে গার্লফ্রেন্ড আছে সেটা শুনে অনেক মেয়ের তো খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেলো।তারা ভাবতেই পারে নি আদ্রিয়ান মিংগেল।তারা তো ভেবেছে আদ্রিয়ান সিংগেল।
আদ্রিয়ানের বন্ধু সানি,লিথি,উল্লাস আর টিনা ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো এই নিউজ শুনে।তারা ভাবতে লাগলো আসলেই কি অহনা আদ্রিয়ানের গার্লফ্রেন্ড। তা না হলে মেয়েটা এমন পাগলামি কেনো করবে?
ওদিকে তানহা আর চুপচাপ না থেকে সোজা আদ্রিয়ান কে বলেই ফেললো,দোস্ত,তুই আমাদের কাছে আবার কিছু লুকাচ্ছিস না তো?
তুই কি সত্যি সত্যি মেয়েটাকে চিনিস না?
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো তোরা আসলেই পাগল হয়েছিস সবাই।আমি ওকে যদি চিনতাম আর ওর সাথে যদি আমার সত্যি কোনো রিলেশন থাকতো তাহলে কি ও এভাবে পাগলামি করতো?ওই মেয়ে আমার মানসম্মান নষ্ট করার জন্য এমন করছে।এবার আর চুপ করে থাকলে হবে না।কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।
আদ্রিয়ান এবার পুলিশের কাছে কম্পিলিন করলো।যে অহনা নামের এক মেয়ে তার নামে এমনিতেই এক গুজব ছড়াচ্ছে।তার মানসম্মানের ক্ষতি করছে।এই মেয়েকে শীঘ্রই ধরে আনুন।তবে কাজটি গোপনে করবেন।তা না হলে আমার মানস্মানের আরো বেশি ক্ষতি হবে।
পুলিশ আদ্রিয়ানের কথামতো অহনাকে ধরতে গেলো।কিন্তু অহনা যখন তার অপরাধ জানতে চাইলো তখন পুলিশ বললো,আপনি অহেতুক আদ্রিয়ানের নামে গুজব ছড়াচ্ছেন।সেই অপরাধে আপনাকে এরেস্ট করা হচ্ছে।
অহনা তখন হাসতে হাসতে বললো, স্যার আমি তো ওনার একজন ভক্ত।মানে বিশাল বড় ফ্যান।ফ্যানরা এরকম একটু শয়তানি করতেই পারে।আমি ফাজলামি করে বলেছি যে আদ্রিয়ান আমার বয়ফ্রেন্ড। তাই বলে কি সে আমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেলো?দুনিয়ার মানুষ কি এতই পাগল?
পুলিশ অহনার কথা শুনে বললো, ওকে নেক্সট টাইম এরকম আর কোনো আবোলতাবোল নিউজ ছড়াবে না।এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম।এই বলে পুলিশ চলে গেলো।
পুলিশ চলে যাওয়ার পর টুশু বললো, অহনা!আর কতো নিচে নামাবি নিজেকে?আমার তো এখন নিজেরই বিবেকে বাঁধছে তোর মতো মেয়েকে বান্ধুবি করতে।না জানি তোর জন্য আমাদের কেও কোন বিপদে পড়তে হয়?
সনিয়া এগিয়ে এসে বললো, আমাদের ফ্যামিলি আছে অহনা।আমাদের বাবা মা যদি শোনে এইরকম মেয়ের সাথে আমরা এক হোষ্টেলে থাকি তাহলে আমাদের পড়াশোনায় অফ করে দেবে।
এবার অর্পা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি অহনা বললো, তোকে কিছু বলতে হবে না।আমি জানি তুই কি বলবি?
আমার জন্য তোদের সবার যখন মানসম্মানের এতো ক্ষতি হচ্ছে তাহলে আমি এই হোষ্টেল ছেড়ে দিচ্ছি।আমি পরের মাস থেকে একা একাই থাকবো।আমার কোনো বন্ধুর প্রয়োজন নেই।আমার শুধু আদ্রিয়ান থাকলেই চলবে।
অহনার কথা শুনে টুশু,অর্পা, আর সনিয়া হা হয়ে গেলো।এতো করে বোঝানোর পর ও সেই আদ্রিয়ান কেই অহনা বেছে নিলো।তাদের থেকে ওর কাছে আদ্রিয়ানের মূল্যই বেশি?
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
অহনা অন্য একটা হোষ্টেলে চলে আসলো।সে আর তার বান্ধুবীদের সাথে থাকলো না।সে চায় না তার কারণে তার বান্ধুবীদের মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাক।
একমাস পর,
আজ আদ্রিয়ানের একটা কনসার্ট আছে।আর প্রোগ্রাম টি হবে ঠিক অহনাদের ভার্সিটির আশেপাশেই।আদ্রিয়ান তার সুরের যাদুতে সবাইকে পাগল করতে আসবে।অহনা ভাবতেই পারছে না আদ্রিয়ান কে আবার সে দেখতে পাবে।সে তো আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলো।আদ্রিয়ান আসার কথা শুনে সে খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে।কি ড্রেস পড়বে?কিভাবে আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করবে ভাবতে ভাবতেই তার দিন চলে যাচ্ছে।
অহনা হোয়াইট কালারের একটা গাউন পড়েছে।একদম সুন্দর করে সাজগোছ করে সে প্রোগ্রামে চলে গেলো।তবে সে প্রোগ্রামে মোটেও মনোযোগ দিতে পারছিলো না।কারণ আদ্রিয়ান এখন পর্যন্ত আসে নি।আদ্রিয়ান কে দেখার জন্যই সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে।
কিন্তু কিছুক্ষন পর ঘোষণা করা হলো আদ্রিয়ান আসতে পারবে না প্রোগ্রামে।শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো অহনার।সেজন্য সে প্রোগ্রাম দেখা বাদ দিয়ে তার হোষ্টেলে চলে গেলো।
আজ সারারাত অহনা ঘুমাতে পারলো না।একদম অস্থিরতার মধ্যে তার রাত কেটে গেলো।
এক সপ্তাহ পর,
অহনা আদ্রিয়ানের পেজ চেক করতে লাগলো।আদ্রিয়ান নতুন কোনো ছবি পোস্ট করেছে কিনা তা দেখার জন্য।কিন্তু সে আদ্রিয়ানের পেজে যেতেই একদম টাস্কি খেয়ে গেলো।কারণ আদ্রিয়ান তার পেজে পোস্ট করেছে, সে এক সপ্তাহ পর ঢাকা ভার্সিটির প্রোগ্রামে আসবে সে।
অহনা এই নিউজ দেখে নিজেও টাস্কি খেয়ে গেলো।যে আদ্রিয়ান কে দেখার জন্য সে পাগল হয়ে আছে।সেই ছেলে তাদের ভার্সিটির প্রোগ্রামেই আসবে?
#চলবে,