প্রেম_প্রেম_খেলা #পর্ব_০৩,০৪

0
318

#প্রেম_প্রেম_খেলা
#পর্ব_০৩,০৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
০৩

কতশত মেসেজ দিয়েছি আপনাকে তা আমি নিজেও জানি না।রোজ রোজ মেসেজ দেই আপনাকে।শেষে সানি ভাইয়াকে নক দিয়ে ওনার সাথে কথা বলি।আর মিট করতে চাই।উনি সাথে সাথে রাজি হয়ে যান।প্লিজ ভাইয়া আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট টা এক্সসেপ্ট করেন।আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান।শুধু ফ্যান বললে ভুল হবে আপনি আমার একমাত্র ক্রাশ।

আদ্রিয়ান বোবার মতো শুধু হা হয়ে আছে।কারণ সে অহনার কথা শুনে পুরাই তাজ্জব হয়ে গেলো।

ওদিকে উল্লাস আর লিথি মুখ টিপিয়ে শুধু হাসছে।আর সানিকে বলছে দোস্ত প্রেম শুরু না হতেই এ মেয়ে তো তোকে বাঁশ দিয়ে দিলো।এই মেয়ে তো তোর সাথে কথা বলেছে শুধুমাত্র আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য।

বন্ধুদের কথা শুনে সানি বেচারার মন টাই খারাপ হয়ে গেলো।সে তো ভেবেছে অহনা তাকে পছন্দ করে।এজন্য মিট করতে চাইছে।কিন্তু এখন তো দেখি পুরাই উলটা।

এবার তানহা এগিয়ে আসলো অহনার কাছে আর বললো,এই মেয়ে!তোমার মাথায় কি কোনো সমস্যা আছে?

অহনা তানহার কথা শুনে বললো, কেনো আপু?এভাবে বলছেন কেনো?

অহনা তখন বললো তুমি তো এসেছো সানির সাথে মিট করার জন্য তাহলে এভাবে আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান বলে চিল্লাচ্ছো কেনো?

অহনা তখন আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,আসলে আপু সত্যি বলতে কি আমি তো আদ্রিয়ান কেই দেখার জন্য এসেছি।আমি ওনার অনেক বড় ফ্যান।আর আমি ওনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে আর এক মুহুর্ত থাকলো না।হনহন করে বেরিয়ে পড়লো হোটেল থেকে।

অহনা নিজেও তখন আদ্রিয়ানের পিছু পিছু চলে গেলো।আর বললো, এই যে শুনছেন?আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আমাকে।আমি কিন্তু সেই অহনা যাকে পুলিশ ভুল করে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।আমি আপনার জন্মদিনে আপনাকে উইশ করতে গিয়েছিলাম।সত্যি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি আমি।আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু।আমার ফেসবুক একাউন্টের নাম অহনা চৌধুরী।

আদ্রিয়ান অহনাকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো।

এদিকে সানি এসে বললো, অহনা কি বলছো তুমি এসব?তুমি না আমাকে পছন্দ করো।

অহনা তখন বললো, সরি ভাইয়া।আমি শুধুমাত্র আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য আপনাকে নক দিয়েছিলাম ফেসবুকে।প্লিজ মাফ করে দিবেন আমাকে।

এবার তানহা এগিয়ে এসে বললো, এই মেয়ে কি সব ভুলভাল বকছো?আদ্রিয়ান কোন দুঃখে তোমাকে ভালোবাসতে যাবে?

অহনা সেই কথা শুনে বললো, বাসবে বাসবে।অবশ্যই বাসবে।এই বলে সেও চলে গেলো।

অহনার কথা শুনে আদ্রিয়ানের বন্ধুরা অনেক বেশি অবাক হলো।এই মেয়ে কি বলছে এসব?

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

অহনার বান্ধুবীরা আসলেই বুঝতে পারছে না আসলে অহনা চাচ্ছে টা কি?কেনো এমন করছে সে?এভাবে নিজের মানসম্মান নিজের হাতে কেনো শেষ করছে?
অহনার বান্ধুবীরা এসব নিয়ে চিন্তা করলেও অহনার বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই।তার উউদ্দেশ্য একটাই যে করেই হোক আদ্রিয়ান কে পটাতেই হবে।
কিন্তু অহনা এটা জানে না যে আদ্রিয়ান কারো প্রেমে পড়ার মতো ছেলে নয়।

এদিকে আদ্রিয়ান বাসায় আসতেই ওর বন্ধুরাও এগিয়ে আসলো।তানহা বললো, দোস্ত এই মেয়েটা কে কি তুই আগে থেকে চিনিস?

আদ্রিয়ান সোজাসাপটা উত্তর দিলো না।

–তাহলে মেয়েটা এরকম পাগলামি কেনো করছে?

“তা,আমি কি করে জানি?
এই বলে আদ্রিয়ান চলে গেলো।

কিন্তু সানির বেশ সন্দেহ হলো।কি করে একটা মেয়ে এতো নির্লজ্জ হতে পারে?মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না।কিন্তু এই মেয়ে তো তার সব সীমা অতিক্রম করে ফেলতেছে।শেষমেশ তার সাথেও প্রেমের অভিনয় করলো?তবুও নাকি তার আদ্রিয়ান কে চাই।ব্যাপার টা বেশ খটকা লাগলো সবার।

এদিকে অহনা আদ্রিয়ানের সাথে যেসব সেলফি উঠেছিলো সেগুলো এক এক করে তার নিজের আইডি,পেজ এবং বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করতে লাগলো।আর ক্যাপশন দিলো, আমি আর আমার বয়ফ্রেন্ড একসাথে ফাইভ স্টার হোটেলে।আমরা আজ খুব মজা করলাম।

ইতোমধ্যে এই নিউজ টিও ভাইরাল হয়ে গেলো।আদ্রিয়ানের যে গার্লফ্রেন্ড আছে সেটা শুনে অনেক মেয়ের তো খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেলো।তারা ভাবতেই পারে নি আদ্রিয়ান মিংগেল।তারা তো ভেবেছে আদ্রিয়ান সিংগেল।

আদ্রিয়ানের বন্ধু সানি,লিথি,উল্লাস আর টিনা ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো এই নিউজ শুনে।তারা ভাবতে লাগলো আসলেই কি অহনা আদ্রিয়ানের গার্লফ্রেন্ড। তা না হলে মেয়েটা এমন পাগলামি কেনো করবে?
ওদিকে তানহা আর চুপচাপ না থেকে সোজা আদ্রিয়ান কে বলেই ফেললো,দোস্ত,তুই আমাদের কাছে আবার কিছু লুকাচ্ছিস না তো?
তুই কি সত্যি সত্যি মেয়েটাকে চিনিস না?

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো তোরা আসলেই পাগল হয়েছিস সবাই।আমি ওকে যদি চিনতাম আর ওর সাথে যদি আমার সত্যি কোনো রিলেশন থাকতো তাহলে কি ও এভাবে পাগলামি করতো?ওই মেয়ে আমার মানসম্মান নষ্ট করার জন্য এমন করছে।এবার আর চুপ করে থাকলে হবে না।কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।

আদ্রিয়ান এবার পুলিশের কাছে কম্পিলিন করলো।যে অহনা নামের এক মেয়ে তার নামে এমনিতেই এক গুজব ছড়াচ্ছে।তার মানসম্মানের ক্ষতি করছে।এই মেয়েকে শীঘ্রই ধরে আনুন।তবে কাজটি গোপনে করবেন।তা না হলে আমার মানস্মানের আরো বেশি ক্ষতি হবে।

পুলিশ আদ্রিয়ানের কথামতো অহনাকে ধরতে গেলো।কিন্তু অহনা যখন তার অপরাধ জানতে চাইলো তখন পুলিশ বললো,আপনি অহেতুক আদ্রিয়ানের নামে গুজব ছড়াচ্ছেন।সেই অপরাধে আপনাকে এরেস্ট করা হচ্ছে।

অহনা তখন হাসতে হাসতে বললো, স্যার আমি তো ওনার একজন ভক্ত।মানে বিশাল বড় ফ্যান।ফ্যানরা এরকম একটু শয়তানি করতেই পারে।আমি ফাজলামি করে বলেছি যে আদ্রিয়ান আমার বয়ফ্রেন্ড। তাই বলে কি সে আমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেলো?দুনিয়ার মানুষ কি এতই পাগল?

পুলিশ অহনার কথা শুনে বললো, ওকে নেক্সট টাইম এরকম আর কোনো আবোলতাবোল নিউজ ছড়াবে না।এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম।এই বলে পুলিশ চলে গেলো।

পুলিশ চলে যাওয়ার পর টুশু বললো, অহনা!আর কতো নিচে নামাবি নিজেকে?আমার তো এখন নিজেরই বিবেকে বাঁধছে তোর মতো মেয়েকে বান্ধুবি করতে।না জানি তোর জন্য আমাদের কেও কোন বিপদে পড়তে হয়?

সনিয়া এগিয়ে এসে বললো, আমাদের ফ্যামিলি আছে অহনা।আমাদের বাবা মা যদি শোনে এইরকম মেয়ের সাথে আমরা এক হোষ্টেলে থাকি তাহলে আমাদের পড়াশোনায় অফ করে দেবে।

এবার অর্পা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি অহনা বললো, তোকে কিছু বলতে হবে না।আমি জানি তুই কি বলবি?
আমার জন্য তোদের সবার যখন মানসম্মানের এতো ক্ষতি হচ্ছে তাহলে আমি এই হোষ্টেল ছেড়ে দিচ্ছি।আমি পরের মাস থেকে একা একাই থাকবো।আমার কোনো বন্ধুর প্রয়োজন নেই।আমার শুধু আদ্রিয়ান থাকলেই চলবে।

অহনার কথা শুনে টুশু,অর্পা, আর সনিয়া হা হয়ে গেলো।এতো করে বোঝানোর পর ও সেই আদ্রিয়ান কেই অহনা বেছে নিলো।তাদের থেকে ওর কাছে আদ্রিয়ানের মূল্যই বেশি?

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

অহনা অন্য একটা হোষ্টেলে চলে আসলো।সে আর তার বান্ধুবীদের সাথে থাকলো না।সে চায় না তার কারণে তার বান্ধুবীদের মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাক।

একমাস পর,

আজ আদ্রিয়ানের একটা কনসার্ট আছে।আর প্রোগ্রাম টি হবে ঠিক অহনাদের ভার্সিটির আশেপাশেই।আদ্রিয়ান তার সুরের যাদুতে সবাইকে পাগল করতে আসবে।অহনা ভাবতেই পারছে না আদ্রিয়ান কে আবার সে দেখতে পাবে।সে তো আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলো।আদ্রিয়ান আসার কথা শুনে সে খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে।কি ড্রেস পড়বে?কিভাবে আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করবে ভাবতে ভাবতেই তার দিন চলে যাচ্ছে।

অহনা হোয়াইট কালারের একটা গাউন পড়েছে।একদম সুন্দর করে সাজগোছ করে সে প্রোগ্রামে চলে গেলো।তবে সে প্রোগ্রামে মোটেও মনোযোগ দিতে পারছিলো না।কারণ আদ্রিয়ান এখন পর্যন্ত আসে নি।আদ্রিয়ান কে দেখার জন্যই সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে।

কিন্তু কিছুক্ষন পর ঘোষণা করা হলো আদ্রিয়ান আসতে পারবে না প্রোগ্রামে।শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো অহনার।সেজন্য সে প্রোগ্রাম দেখা বাদ দিয়ে তার হোষ্টেলে চলে গেলো।

আজ সারারাত অহনা ঘুমাতে পারলো না।একদম অস্থিরতার মধ্যে তার রাত কেটে গেলো।

এক সপ্তাহ পর,

অহনা আদ্রিয়ানের পেজ চেক করতে লাগলো।আদ্রিয়ান নতুন কোনো ছবি পোস্ট করেছে কিনা তা দেখার জন্য।কিন্তু সে আদ্রিয়ানের পেজে যেতেই একদম টাস্কি খেয়ে গেলো।কারণ আদ্রিয়ান তার পেজে পোস্ট করেছে, সে এক সপ্তাহ পর ঢাকা ভার্সিটির প্রোগ্রামে আসবে সে।

অহনা এই নিউজ দেখে নিজেও টাস্কি খেয়ে গেলো।যে আদ্রিয়ান কে দেখার জন্য সে পাগল হয়ে আছে।সেই ছেলে তাদের ভার্সিটির প্রোগ্রামেই আসবে?

#চলবে,

#প্রেম_প্রেম_খেলা
#পর্ব_০৪(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

Hum tere bin ab rehe nehi sakte ..
Tere bina kiya wajud mera
Tujse judagar ho jayenge
So Khudse Hi Ho Jayenke Juda

Kiuki tum hi ho
Ab tum hi ho
Zindegi ab tum hi ho

Chan V … Mera Dard V.
Mary Ashiki Ab Tum Hi Ho ……..

আদ্রিয়ানের গান শুনে সবাই মুগ্ধ।এ যেনো এক সুরের যাদুকর।সবাই আদ্রিয়ানের সাথে সাথে গাইতে গাইলো।

Tera mera rista he casa
Ek pal dur gawara nehi
Tere liye har rose he jite
Tusco diya mera wakt sabhi
Koi lamha mera na ho tere bina
Har sas pe naam tera
Kiuki tum hi ho
Ab tum hi ho……..

গান শেষ হওয়া মাত্র আদ্রিয়ান স্টেজ থেকে নেমে গেলো।আর সাথে সাথে সবাই অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য ঘিরে ধরলো তাকে।অহনা নিজেও চলে গেলো।কিন্তু আদ্রিয়ান নিচমুখ হয়ে যেভাবে সবাইকে অটোগ্রাফ দিচ্ছে মনে তো হয় না সে অহনাকে আজ দেখতে পাবে।সেজন্য অহনা নিজেই চিৎকার করে বললো,
এই যে আদ্রিয়ান!আমাকে একটা অটোগ্রাফ দেওয়া যাবে?

আদ্রিয়ান অহনার কন্ঠ শুনে উপর দিকে তাকালো।

অহনা আদ্রিয়ান কে তাকানো দেখে ভীড় ঠেলে আদ্রিয়ানের কাছে চলে যেতেই আদ্রিয়ান আর এক মুহুর্ত থাকলো না।

অহনা তখন বললো, এই যে,যাচ্ছেন কেনো?একটা অটোগ্রাফ দিয়ে যান প্লিজ।
আদ্রিয়ান কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা তার গাড়িতে উঠে চলে গেলো।

আদ্রিয়ানের এমন ব্যবহারে অহনার ভীষণ খারাপ লাগলো।সে আদ্রিয়ানের এতো বড় ফ্যান তবুও আদ্রিয়ান তাকে অটোগ্রাফ দিলো না।এইভাবে তাকে অপমান করলো?
সেজন্য অহনার জিদ আরো বেড়ে গেলো।সে নিজেও আদ্রিয়ানের হোটেলের দিকে চলে গেলো।যে করেই হোক আদ্রিয়ানের অটোগ্রাফ সে নেবেই নেবে।

আদ্রিয়ান যে হোটেলে উঠেছে অহনাও সেই হোটেলে চলে গেলো।তবে রিসেপশনে গিয়ে তার মন টা খারাপ হয়ে গেলো।কারণ কোনো রুম ফাঁকা ছিলো না।সেজন্য অহনা রাগ করে হোটেল থেকে বের হয়ে এলো।আর হোটেলের বাহিরে এসে কয়েকটা ছবি তুলে ক্যাপশন দিলো,
হোয়াইট হাউজ ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে আছি এখন।অনেক এনজয় করছি।

আদ্রিয়ান একা উঠেছে এই হোটেলে।কারন তার কাল একটা প্রোগ্রাম আছে এখানে।আদ্রিয়ান একটু রেস্ট নিচ্ছিলো হঠাৎ তানহা কল দিয়ে বললো দোস্ত, এসব হচ্ছে টা কি?

–কি হচ্ছে?

–তুই যে হোটেলে আছিস মেয়েটাও সেই হোটেলে আছে।

–কোন মেয়ে?

–তুই এখনো জানিস না কোন মেয়ে?

আদ্রিয়ান এবার একটু রাগ দেখিয়ে বললো যা বলার ক্লিয়ার করে বলবি একটু?

তানহা তখন বললো অহনা মেয়েটাও তোরই হোটেলে আছে এখন।

আদ্রিয়ান এবার বেশ অবাক হয়ে গেলো।সে তখন বললো তুই কিভাবে জানলি?

–মেয়েটার টাইমলাইন থেকে।তুই ও চেক করে দেখতে পারিস।মেয়েটা যেসব কান্ড করতেছে সত্যি এবার সে তার সীমা ছেড়ে যাচ্ছে।তুই কিছু বলছিস না কেনো?পরে কিন্তু এ নিয়ে কেলেংকারী বেঁধে যাবে দেখিস।যদি সাংবাদিকরা জানতে পারে তাহলে তো আর রেহাই নাই।

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে কল কেটে দিলো।আর অহনা নাম সার্চ দিতেই চলে আসলো মেয়েটার ছবি।
আদ্রিয়ান অহনার এমন পাগলামি দেখে সত্যি অবাক হয়ে গেলো।সে সবচেয়ে বেশি অবাক হলো অহনার সাথে তার বিভিন্ন রকম এটাচ ছবি দেখে।আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না অহনা কেনো এমন করছে তার সাথে।যেখানেই সে যাচ্ছে সেখানেই এই মেয়েটা পৌঁছে যাচ্ছে।
আদ্রিয়ান অহনার আইডি চেকড করে পুরাই অবাক হয়ে গেলো।কারন অহনার পুরো আইডি জুড়ে শুধু তারই ছবি।

আদ্রিয়ান সেজন্য নিজেই অহনাকে মেসেজ দিলো।

–হ্যালো।

অহনার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না এটা আদ্রিয়ান। সে ভালো করে চেক করে দেখে হ্যাঁ এটা আদ্রিয়ানই।সে তো আদ্রিয়ানের মেসেজ দেখে একদম পাগল হয়ে গেলো।

সে তখন বললো আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি নিজে আমাকে মেসেজ দিয়েছেন।কি যে খুশি লাগছে বলে বোঝতো পারবো না।আমি না আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।আপনিও নিশ্চয় আমাকে পছন্দ করেছেন।

আদ্রিয়ান তখন বললো, আমি তোমাকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য মেসেজ দেই নি।আমি তোমাকে সতর্ক করার জন্য মেসেজ দিয়েছি।তুমি কিন্তু এবার তোমার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো।মেয়ে মানুষ যে এতো নির্লজ্জ হয় তা তোমাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।এরকম পাগলামি করলেই যে আমি তোমাকে ভালোবাসবো সেটা ভাবলে কি করে?আমি তোমাকে জীবনেও ভালোবাসবো না।তোমার মতো এরকম হাজার হাজার মেয়ে আমার পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায়।
আচ্ছা বাদ দাও।কাজের কথা শোনো।যদি আমার মানসম্মান নষ্ট করতে না চাও তাহলে তোমার আইডিতে কিছুক্ষন আগে হোয়াইট হাউজ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল নিয়ে যে ছবি পোস্ট করেছো সেগুলো ডিলিট করে দাও।
আর যদি মনে করো আমার মানসম্মান নষ্ট করাই তোমার মূল উদ্দেশ্য তাহলে রেখে দিতে পারো।

অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে এবার কেঁদে ফেললো।আদ্রিয়ান এভাবে তাকে অপমান করবে সত্যি সে বুঝতে পারে নি।সেজন্য সে তাড়াতাড়ি করে সবগুলো পোস্ট ডিলিট করে দিলো।আর অহনা আদ্রিয়ান কে নিয়ে কোনো পোস্ট করে না।

এদিকে এই ঘটনার পর থেকে আদ্রিয়ান রেগুলার অহনার আইডি চেক করতে থাকে।সে নিজেও ভীষণ অবাক হলো।অহনা এইভাবে তার কথা শুনে সবগুলো পোস্ট ডিলিট করে দিলো।সত্যি কি মেয়েটা তাকে ভালোবাসে।মেয়েটার মনে হয় তাকে অসম্মান করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই।

এক মাস পরের ঘটনা।
আদ্রিয়ানের মিউজিক ভিডিওর জন্য মডেল খোঁজা হচ্ছে।যেখানে মেল ক্যারেক্টারে আদ্রিয়ান নিজেই থাকবে কিন্তু ফিমেল ক্যারেক্টারের জন্য নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছিলো।এইভাবে অনেক খোঁজাখুঁজির পর টপ দশ জন কে বেছে নেওয়া হলো।এই দশজনের ভিতর যাকে আদ্রিয়ান পছন্দ করবে সেই হবে আদ্রিয়ানের পার্টনার।

মেয়ে দশজন সুন্দর প্রিপেরেশন নিয়ে এসেছে।একেক জনকে ঝাক্কাস পরীর মতো লাগছিলো।আদ্রিয়ানের বন্ধু সানি আর উল্লাস তো ভীষণ এক্সসাইটেড। এই দশজনের ভিতর একটারে তারা পটিয়ে নেওয়ার ধান্দায় আছে।অন্যদিকে আদ্রিয়ান, তানহা আর লিথি খুব মনোযোগ দিয়ে একজন একজন করে দেখতে লাগলো।আর নাম্বার দিতে লাগলো।এইভাবে দেখতে দেখতে দশম মেয়ের পালা এসে গেলো।দশম মেয়ে আর অন্য কেউ নয়, অহনা ছিলো।

অহনাকে দেখামাত্র তো সবার চোখ কপালে উঠে গেলো।এ মেয়ে এখানে কিভাবে এলো?
অহনা সবাইকে দেখে বললো আসসালামু আলাইকুম। মে আই কাম ইন?

তিনজনের একজনও তাকে ইয়েস বললো না।অহনা তখন নিজেই চলে এলো ভিতরে।তানহা অহনাকে দেখামাত্র বললো,ইউ?

–হ্যাঁ আমি।

আদ্রিয়ান তখন তানহাকে থামিয়ে দিয়ে বললো চুপ কর তুই।ভালো করে নাম দেখ।ও নিজেও একজন প্রতিযোগি।

তানহা তখন বললো তাই বলে এই মেয়ে তোর মডেল হবে?

আদ্রিয়ান তখন বললো এখনো হয় নি তো।ভালো করে যাচাই করে নাম্বার দে।
তানহা সেই কথা শুনে মনে মনে বললো দেওয়াচ্ছি নাম্বার।এই অভদ্র মেয়েকে আমি জিরো দেবো।

আদ্রিয়ান এই প্রথমবার অহনাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।উচ্চতা ৫” ৫।গায়ের রঙ ফর্সা।মুখের আকৃতি গোল।স্লিম বডি।কথা বলার ধরন সুন্দর।হাঁটার স্টাইল সুন্দর।আদ্রিয়ানের কাছে অহনাকে সব দিক দিয়েই পারফেক্ট মনে হলো।সেজন্য সে দশের মধ্যে দশ দিলো অহনাকে।এর আগে একজন মেয়েকেও সে দশ দেয় নি।লিথিও দশ দিলো।কারণ তার কাছেও অহনাকে পারফেক্ট মনে হয়েছে।কিন্তু তানহা রাগ করে জিরো দিলো।

কিছুক্ষন পরেই রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে। সকল মেয়েই অধীর আগ্রহে বসে আছে।অহনা তো শুধু চোখ বন্ধ করে তার সৃষ্টি কর্তাকে ডাকতে লাগলো।এবারের মতো তাকে জিতিয়ে দাও খোদা।কারন তার মডেল হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নাই।শুধুমাত্র আদ্রিয়ানের কাছাকাছি থাকার জন্য এই প্রতিযোগিতায় তাকে টিকতেই হবে।

তানহা অহনার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,কোনো লাভ নাই সোনা।আমি জিরো দিয়েছি।ওরা দুইজন দশ দিলেও মোট ২০ হয়।কিন্তু অন্য মেয়েরা কমপক্ষে ২৪ না হয় ২৭ তো পেয়েছেই।

বিজয়ীর নাম ঘোষণা তানহাই করবে।কারণ সে বেশি আগ্রহী বিজয়ীর নাম ঘোষনা করার জন্য।আদ্রিয়ান সেজন্য ওর হাতেই পেপার টা দিলো।

তানহা খুশি মনে পেপার হাতে নিয়ে এনাউন্স করলো,যে আজকের বিজয়ী অ,,,।তানহা অহনার নাম দেখে চমকে উঠলো। এটা কি করে সম্ভব?অহনা কিভাবে হতে পারে?
সেজন্য তানহা আদ্রিয়ানে দিকে তাকালো।আদ্রিয়ান তখন বললো, কি হলো বল?
তানহা সেই কথা শুনে পেপার টা আদ্রিয়ানের হাতে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।আদ্রিয়ান তখন নিজেই অহনার নাম ঘোষণা করলো।

অহনা তার নাম শোনামাত্র একদম কেঁদেই ফেললো।সে সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলো না।অহনার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এটা।সে আবার স্বপ্ন দেখছে না তো?এইজন্য পাশের মেয়েটাকে বললো, কিছু মনে না করলে আমাকে একটু চিমটি কাটবেন প্লিজ।মেয়েটি সেই কথা শুনে মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলো।

আদ্রিয়ান তখন নিজেই অহনার কাছে চলে এলো।আর বললো কাল ঠিক দশটায় নাজ গার্ডেনে চলে আসবে।আর হ্যাঁ, অবশ্যই দশটায়।

অহনা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো হুম।কারণ সে তার খুশি ধরে রাখতে পারছিলো না।

পরের দিন খুশির ঠেলায় ঠিক আট টায় অহনা নাজ গার্ডেনে চলে গেলো।কিন্তু নাজ গার্ডেনের গেটই খোলে নয় টায়।এখন এ এক ঘন্টা সে কি করে?সেজন্য কয়েকটা সেলফি তুলে সে ফেসবুকে পোস্ট করে।তারপর তার বান্ধুবীদের সাথে কথা বলে তবুও আর এক ঘন্টা শেষ হয় না।হঠাৎ অহনার মনে হয় সে তো কিছু খেয়ে আসে নি।সেজন্য খাওয়ার জন্য সামনের এক রেস্তোরায় চলে যায়।কিন্তু সেখানে যে ভীড় অহনা সেজন্য ভীড় ঠেলেই প্রবেশ করলো ভিতরে।আর এদিকে যে দশটা পার হয়ে গেছে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই সেদিকে।

হঠাৎ অহনা রেস্তোরাঁর দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বেজে দশ মিনিট বাজে।সে আর কই থাকে?তাড়াতাড়ি করে খাওয়া বাদ দিয়েই দিলো এক দৌঁড়।এদিকে পিছন দিক থেকে এক ছেলে চিল্লাতে চিল্লাতে বললো ম্যাডাম খাবারের বিল দিলেন না?
অহনা সেই কথা শুনে আবার ফিরে আসলো বিল দেওয়ার জন্য।এদিকে টাকাও খুচরা নাই।সেজন্য টাকার নোটটা ছেলেটার হাতে দিয়ে বললো বাকি টাকা পরে এসে নিয়ে যাবো।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here