#প্রেম_প্রেম_খেলা
#পর্ব_০৬,০৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
#০৬
পাঁচ বছরে যতগুলো মিউজিক ভিডিও হবে সবগুলো তে আমার পার্টনার হিসেবে আমি শুধুমাত্র আপনাকেই চাই।কারণ আমি টাকার জন্য মডেলিং করছি না।আমি শুধুমাত্র আপনাকে পছন্দ করি বলে এই রকম পেশায় এসেছি।তাছাড়া কারো ক্ষমতা ছিলো না আমাকে এই পেশায় আনার।
এই বলে অহনা সবগুলো টাকা আদ্রিয়ানের মুখে ছুড়ে দিলো।আর বললো আপনি যদি আমার প্রস্তাবে রাজি থাকেন তবেই আমি নেক্সট শুটিং এ উপস্থিত থাকবো।তাছাড়া আমি আসবো না শুটিং এ।এতে আপনার যা করার করে নিন।এই বলে অহনা চলে গেলো।
আদ্রিয়ান আর তার বন্ধুরা অহনার এমন মেজাজ দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেলো।তারা তো সবাই অহনাকে সহজ সরল মেয়ে ভেবেছিলো।কিন্তু এই মেয়ে তো মোটেও সহজ সরল নয়।
সানি তখন বললো,দোস্ত কি করবি এখন?এই মেয়ে তো অন্য কারো সাথে মডেলিং করতে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।তাহলে কি নতুন কোনো মডেলকে খুঁজবো?
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,ওই মেয়ে বললো আর হলো নাকি?সে পাঁচ বছরের চুক্তিতে সাইন করেছে।ওকে এই কাজ করতেই হবে।
উল্লাস তখন বললো, দোস্ত এই চুক্তি দিয়ে কিছু হবে না।কারণ চুক্তিতে তো তোরই নাম লেখা আছে।আর অহনা তো বলছে না তোর সাথে সে কাজ করবে না।সে তো তোর সাথে কাজ করতেই চাচ্ছে।
তানহা তখন বললো, আমি বুঝছি না, তোরা সবাই এই মেয়ের পিছনে এভাবে পড়ে আছিস কেনো?এই মেয়ে ছাড়া কি আর অন্য কেউ নাই?
আদ্রিয়ান তখন বললো তুই যদি এই সহজ জিনিস টা বুঝতি তাহলে তুই আমার জায়গায় থাকতি।তুই বুঝতে কেনো পারছিস না তানহা?এই মেয়ে এখন সেলিব্রিটি। আর সবাই ওকে এখন ভালোভাবেই চেনে।আর জানিসই তো চেনা মানুষের কদর বেশি।এই বলে আদ্রিয়ান বের হয়ে গেলো তার কাজে।
তবে আদ্রিয়ান মনে মনে ভাবতে লাগলো, এভাবে পিছপা হলে চলবে না।যে করেই হোক অহনাকে রাজি করাতেই হবে।তাছাড়া সে নেক্সট উইক দেশের বাহিরে যাবে।প্রায় এক মাস সে দেশে থাকতে পারবে না।তাই বলে কি তার শুটিং অফ থাকবে?না, কিছুতেই হবে না সেটা।সেজন্য তার নেক্সট ভিডিও টা সানি আর অহনাকে দিয়েই করাতে হবে।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
অহনা মন খারাপ করে ঘর বন্দি অবস্থায় আছে।সে ভাবতেই পারছে না আদ্রিয়ান তাকে টাকার বিনিময়ে কিনতে চাইছিলো।অহনা তখন মনে মনে বললো,আদ্রিয়ান আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না আমি শুধুমাত্র আপনাকে ভালোবাসি। এজন্যই আমি মডেলিং পেশায় এসেছি।আপনি কোনদিন বুঝবেন আমার ভালোবাসা?
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।
এসময় আবার কে এলো?এই বলে অহনা চোখের পানি মুছিয়ে দরজা খুলতে গেলো।
অহনা দরজা খুলতেই দেখে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে।আদ্রিয়ান কে দেখামাত্র অহনা বললো,
আপনি এখানে?
আদ্রিয়ান অহনার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো।আর চারদিকে ভালো করে দেখে বললো, একাই থাকো বাসায়?
অহনা বললো হুম।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো তাহলে তো তোমার ভালোই সাহস দেখি।চেহারা দেখে তো মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারো না।
–মানে?
–কিছু না।
অহনা তখন বললো চা না কফি?
–আমার ব্যাপারে এতো কিছু জানো আর এটা জানো না আমি কি পছন্দ করি?
অহনা সেই কথা শুনে কফি রেডি করতে গেলো।
এদিকে আদ্রিয়ান ভাবতে লাগলো কিভাবে অহনাকে সে রাজি করাবে?
কিছুক্ষন পর অহনা কফির ট্রে এনে আদ্রিয়ানের হাতে দিলো।
আদ্রিয়ান কফির মগ হাতে নিয়ে বললো,তুমি খাবে না?
অহনা মাথা নেড়ে বললো না।সে আর একটি কথাও বললো না।
আদ্রিয়ান তখন বললো মন খারাপ?এভাবে চুপচাপ আছো যে?
অহনা কোনো উত্তর দিলো না।
আদ্রিয়ান তার কফির মগ টা রেখে হঠাৎ অহনার হাত ধরে বললো,
অহনা আমি আজ একটা বিশেষ কারনে তোমার কাছে এসেছি।আশা করছি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দেবে না।
অহনা তখন বললো, আমি জানি আপনি কেনো এসেছেন?আমি আগেও বলেছি আর এখনো বলছি,আমি অন্য কারো সাথে শুটিং করতে পারবো না।বিশ্বাস করুন আমার মডেলিং করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নাই।আমার এসব ভালো লাগে না।
আদ্রিয়ান তখন বললো আমি সাথে থাকলেও কি আপত্তি আছে তোমার?
–মানে?
আদ্রিয়ান তখন বললো,তোমার সানির সাথে শুটিং করতে হবে না।আমিই থাকবো নেক্সট ভিডিওতে।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে বললো হঠাৎ এভাবে মত পাল্টালেন যে?
আদ্রিয়ান তখন বললো, সত্যি বলতে কি আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি অহনা।সেদিন সবাই ছিলো বিধায় বলতে পারি নি।আজ সেজন্য একাকি ভাবে বলতে এলাম।
আদ্রিয়ানের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে অহনা একদম গদগদ হয়ে গেলো।তার বিশ্বাসই হচ্ছে না আদ্রিয়ান নিজের মুখে বলছে কথা টা।
অহনা তখন বললো আপনি সত্যি বলছেন?
আদ্রিয়ান এবার অহনাকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো, ভালোবাসা নিয়ে কেউ কি মিথ্যা কথা বলে?সত্যি তোমাকে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলছি।
অহনা সেই কথা শুনে লজ্জায় আদ্রিয়ানের থেকে একটু দূরে সরে গেলো।তার যে স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলো।সে তো এটাই চাই যে আদ্রিয়ান তাকে ভালোবাসুক।
হঠাৎ আদ্রিয়ান অহনার কাছে চলে আসলো।আর তার মুখ স্পর্শ করে ঠোঁট বাকা করে বললো,ভাগ্যের কি পরিহাস তাই না?তুমি আমাকে কত করে চাই তে,আর আজ পেয়েই গেলে।
অহনা সেই কথা শুনে বললো, মন থেকে কিছু চাইলে সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই তার মনোবাসনা পূরণ করে দেন।
আদ্রিয়ান তখন বললো এখন তো আমার সবকিছু তোমারই।আমার ভালো মন্দ সব টা এখন তোমাকেই সামলাতে হবে।
অহনা সেই কথা শুনে বললো, এখনো সেই অধিকার হয় নি আমার।যেদিন সবার সামনে আমাকে বিয়ে করবেন,পুরো দেশের লোক জানতে পারবে এই কথা।সেদিন এই অধিকার পেয়ে যাবো আমি।
আদ্রিয়ান হঠাৎ অহনাকে জড়িয়ে ধরে বললো, সেই অধিকার যদি আমি তোমাকে এখনি দিয়ে দেই?
আদ্রিয়ানের এমন কথা শুনে অহনার ভয় হতে লাগলো।তার পুরো শরীর পাথরের মতো জমে গেলো।আদ্রিয়ান কোন অধিকারের কথা বলছে?
আদ্রিয়ান তখন একটা রিং বের করে বললো, তোমার হাত টা বাড়িয়ে দাও অহনা।আমি আজকেই তোমাকে নিজের করে পেতে চাই।
অহনা তখন বললো এইভাবে চুপি চুপি রিং পড়ানোর কোনো মানেই হয় না আদ্রিয়ান। সবার সামনে যেদিন পড়াতে পারবেন সেইদিন পড়িয়েন।আমি অপেক্ষা করে থাকবো?
আদ্রিয়ান তখন বললো সবার সামনে রিং পড়ানোর টাইম এখনো আসে নি অহনা।এই বলে আদ্রিয়ান আবার অহনার হাত টেনে আনলো।আর রিং টা পড়াতে ধরলো।
অহনা তখন বললো, আমার বহুদিনের ইচ্ছা আপনি আমার বান্ধুবীদের সামনে আমাকে প্রপোজ করবেন।যদি রিং টা ওদের সামনে পড়াতেন খুব খুশি হতাম আমি।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো অহনা তুমি বুঝতে কেনো পারছো না? এভাবে সবার সামনে এখনি আমাদের রিলেশনের কথা প্রকাশ করা যাবে না।তোমার আমার ভালোবাসার কথা শুধু আমরা দুইজনই জানবো।বললাম তো পরে সময় হলে সবাইকে জানিয়ে দেবো।
অহনা তখন বললো সবাই কে বলতে হবে না তো।আমার শুধু তিনজন বান্ধুবির কথা বলছি।ওরা সত্যিটা কাউকে বলবে না।আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ওরা।
আদ্রিয়ান অনেক ভেবে চিনতে বললো ওকে।তাহলে তোমার ফ্ল্যাটেই আসতে বলো সবাইকে।আমি সন্ধ্যার সময় ফ্রি আছি।
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শোনামাত্র বললো,সন্ধ্যার সময় না।এখনি ডাকছি ওদের।আপনি জাস্ট আধাঘন্টা সময় দিন আমাকে।ওরা আমার বাসার আশেইপাশেই থাকে।
আদ্রিয়ান মনে মনে ভাবলো এ কোন ঝামেলায় পড়ে গেলাম?
এদিকে অহনা আর দেরী না করে টুশু কে কল করলো।
টুশু কল রিসিভ করেই বললো,অহনা?
তা এতো দিন পর কি মনে করে কল দিলি?এখন তো সেলিব্রিটি হয়ে গেছিস?আমাদের কথা কি মনে আছে?
অহনা তখন বললো তোরা আমাকে ভুলে যেতে পারিস কিন্তু আমি যাই নি।
অর্পা তখন বললো আমরা যে তোকে ভুলে গেছি তুই সেটা কি করে ভাবলি?আমরা তো জাস্ট তোর পাগলামি বন্ধ করার কথা বলেছিলাম।কিন্তু তুই তো সেটা শুনলিই না বরং আমাদের কে ছেড়ে হোস্টেল থেকে বের হয়ে গেলি।
অহনা তখন বললো এখন এসব রাগ অভিমানের কথা বাদ দে।অর্পা আর সনিয়াকে সাথে করে নিয়ে এই মুহুর্তে আমার বাসায় চলে আয়। খুবই ইমপরটেন্ট একটা কথা আছে।
–এখন?এখন হবে নারে।
অহনা সেই কথা শুনে বললো তাহলে কখন আসতে পারবি?
টুশু তখন বললো সন্ধ্যার দিকে যাবো।
অহনা সেই কথা শুনে বললো ওকে।তবে মিস যেনো না হয়।
–ঠিক আছে।এই বলে টুশু কল কেটে দিলো।
অহনা এবার আদ্রিয়ান কে বললো আপনার কথামতো ওদের কে সন্ধ্যার সময়ই আসতে বললাম।আপনি কিন্তু অবশ্যই আসবেন।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো ঠিক আছে।এই বলেই আদ্রিয়ান চলে গেলো।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
সন্ধ্যার সময় টুশু,অর্পা আর সনিয়া আসলো।হোস্টেল থেকে চলে যাওয়ার পর এই প্রথমবার তারা অহনার সাথে দেখা করতে আসছে।এর আগে অহনা আর আদ্রিয়ানের মিউজিক ভিডিও রিলিজ হওয়ার দিন ওরা সবাই কংগ্রাচুলেশনস জানিয়ে ছিলো।তারপর আর কথা হয় নি তাদের।যেহেতু অহনা এখন একজন সেলিব্রেটি হয়ে গেছে সেজন্য তারা আর নিজের থেকে কথা বলতে চায় না।অহনা কথা বললেই তবে দিয়ে তারা কথা বলে।
অহনা অনেকদিন পর তার বান্ধুবীদের দেখে ভীষণ খুশি হলো।অহনা ওদের কে নিয়ে গেস্ট রুমে চলে গেলো।কি সুন্দর করে সাজিয়েছে অহনা ফ্ল্যাট টা।সবার চক্ষু একদম ছানাবড়া হয়ে গেলো।
হঠাৎ টুশু জিজ্ঞেস করলো,আজ কি কোনো বিশেষ দিন অহনা?এতো সুন্দর করে কেনো সাজিয়েছিস?
অহনা তখন হাসতে হাসতে বললো,জাস্ট কিছুক্ষন অপেক্ষা কর।এমনিতেই দেখতে পারবি।
এরই মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠলো।অহনা দরজা খুলতেই দেখে আদ্রিয়ান এসেছে।তার হাতে সুন্দর একটা ফুলের তোড়া।আর কিছু গিফট বক্স।আদ্রিয়ান কে আজ খুবই হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছিলো।কালো শার্ট আর কোর্ট পরিহিত আদ্রিয়ান কে দেখে চোখ ফেরানো যাচ্ছিলো না।অহনা তো এমনিতেই ওর প্রেমে ফিদা আর আজ তো একদম পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তার।
এদিকে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে অর্পা, সনিয়া আর টুশুও এগিয়ে আসলো।তারা নিজেরাও আদ্রিয়ান কে দেখে একদম পাগল হয়ে গেলো।এই প্রথমবার ওরা আদ্রিয়ান কে এতো কাছ থেকে দেখছে।তারা বিশ্বাসই করতে পারছে না তাদের সামনে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
আদ্রিয়ান ফুলের তোড়া টা অহনার হাতে দিলো।আর অহনার বান্ধুবীদের দেখে বললো,তোমরাই তাহলে এই পাগল টার বান্ধুবি?
অহনা সেই কথা শুনে বললো, এই আপনি আমাকে পাগল বললেন কেনো?
আদ্রিয়ান তখন বললো,পাগল কে পাগল বলবে না তো কি বলবে?
অহনা সেই কথা শুনে মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে গেলো।
কিন্তু হঠাৎ আদ্রিয়ান অহনার হাত ধরে টেনে তার সামনে আনলো।আর হাঁটু গেড়ে বসে বললো,আই লাভ ইউ পাগলি।উইল ইউ মেরি মি?
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।তার মনে হচ্ছে সে ভুল শুনছে।
এদিকে অর্পা,সনিয়া আর টুশু সেই কথা শুনে মুখে হাত দিলো।কারণ তাদের সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটা।এ তারা কি দেখছে?আদ্রিয়ান তো সত্যি সত্যি অহনাকে প্রপোজ করছে।
আদ্রিয়ান তখন ইশারা করে বললো, দাও হাত টি বাড়িয়ে।এই বলে আদ্রিয়ান নিজেই অহনার হাত টি টেনে নিয়ে আংটি পড়িয়ে দিলো।আর সবার সামনে অহনার কপালে একটা কিস করে বললো,আই লাভ ইউ সো মাচ।
অহনা তখন সাথে সাথে আদ্রিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বললো, আই লাভ ইউ সো মাচ টু।
টুশু তখন অহনাকে বললো শেষমেশ আদ্রিয়ান কে পটেই নিলি।তোর জিদ আছে অহনা।
অহনা তখন বললো,আজ বিশ্বাস হলো আমার কথা?তোরা না বলতি আমি পাগল?আমাকে নাকি পাগলা গারদে থাকা উচিত।
এখন কি মনে হচ্ছে?
অর্পা তখন বললো আমরা তো ভেবেছিলাম অতোবড় একজন সেলিব্রেটি মানুষ তোকে কি করে ভালোবাসতে পারে?কিন্তু সে যে সত্যি সত্যি তোকে এভাবে প্রপোজ করবে?ও মাই গড।সত্যি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না এটা।
সনিয়া তখন বললো, ভাইয়া আপনার নিজের কন্ঠে একটা গান শুনতে চাই আজ।প্লিজ। প্লিজ।প্লিজ।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে অহনাকে বললো তাহলে কিন্তু তোমাকে ডান্স করতে হবে।তবেই আমি গাইবো।
অহনা সবার সামনে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিলো।
টুশু তখন বললো এভাবে লজ্জা পাচ্ছিস কেনো অহনা?রাজি হয়ে যা।ইসঃ তোর কি কপাল মাইরি।সংগীত শিল্পী আদ্রিয়ান তোকে প্রপোজ করলো।
আদ্রিয়ান হঠাৎ তার সুরেলা কন্ঠে গেয়ে উঠলো,
Suraj Hua Maddham, Chaand Jalne Laga
Aasmaan Yeh Haai Kyoon Pighalne Laga…
অহনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।হঠাৎ আদ্রিয়ান অহনার হাত ধরে কাছে টেনে আনলো।আর তাকে নাচাতে লাগলো।এরপর আর অহনাকে বলতে হলো না।সে একা একাই নেচে যাচ্ছে।
এদিকে আদ্রিয়ান গাইতেই আছে,
Suraj Hua Maddham, Chaand Jalne Laga
Aasmaan Yeh Haai Kyoon Pighalne Laga…
Main Thehra Raha, Zameen Chalne Lagi
Dhadka Yeh Dil, Saans Thamne Lagi
Oh, Kya Yeh Mera Pehla Pehla Pyaar Hai
Sajna, Kya Yeh Mera Pehla Pehla Pyaar Hai
Ho Oh Oh, Oh Oh Oh Oh Oh, Aa Aa Aa Aa Aa Aa
Suraj Hua Maddham, Chaand Jalne Laga
Aasmaan Yeh Haai Kyoon Pighalne Laga
Main Thehri Rahi, Zameen Chalne Lagi
Dhadka Yeh Dil, Saans Thamne Lagi
Haan, Kya Yeh Mera Pehla Pehla Pyaar Hai
Sajna, Kya Yeh Mera Pehla Pehla Pyaar Hai
কিছুক্ষন পর আবার কলিং বেল বেজে উঠলো।অহনা তখন তার নাচ বন্ধ করে বললো,ফুড পান্ডাতে খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম।হয় তো খাবার নিয়ে এসেছে।এই বলে অহনা দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।কিন্তু দরজা খুলতেই অহনার চোখ একদম বড়বড় হয়ে গেলো।
কারণ মিডিয়ার লোকেরা এসেছে।
এদিকে অহনার আসতে দেরি হওয়াই টুশু,অর্পা আর সনিয়া এগিয়ে আসলো।
অহনা সবাইকে একসাথে দেখে বললো, আপনারা এখানে?
মিডিয়ার লোকেরা তখন একসাথে বলে উঠলো,ম্যাম আমরা খবর পেয়েছি আদ্রিয়ান স্যার আপনার ফ্ল্যাটে এসেছে।আপনাদের দুইজনের মধ্যে কিসের সম্পর্ক সেটা আমরা জানার জন্যই এসেছি।
অহনা তখন বললো আমরা আমাদের নেক্সট মিউজিক ভিডিও নিয়ে আলাপ আলোচনা করছি।সে সম্পর্কেই কথা হচ্ছে আমাদের মধ্যে।
হঠাৎ একজন বললো কিন্তু রুমের ডেকোরেশন দেখে, আর আপনার সাজসজ্জা দেখে তো তেমন টা মনে হচ্ছে না।ম্যাডাম কিসের পার্টি হচ্ছে আজ বলবেন প্লিজ।
এবার আদ্রিয়ান এগিয়ে আসলো।আদ্রিয়ান কে দেখামাত্র সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো।আর একের পর এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
#চলবে,
#প্রেম_প্রেম_খেলা(০৭)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
আদ্রিয়ানের মুখ দিয়ে সহজে মিথ্যা কথা বের হয় না।সে আমতা আমতা করতে লাগলো।এদিকে সাংবাদিকরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিতে লাগলো।তাদের সবার একই প্রশ্ন যে আদ্রিয়ান অহনার বাসায় কি জন্য এসেছে?আর আজ কিসের পার্টি হচ্ছে?
আদ্রিয়ান অনেক ভেবেচিন্তে বললো আজ অহনার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে। সেজন্য আমাকে ইনভাইট করেছিলো।এদিকে অহনা যে বলেছে অন্য কথা সেটা আর আদ্রিয়ান জানতো না।
আদ্রিয়ানের কথা শুনে সবাই সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।তবে আদ্রিয়ান আর অহনা যে কিছু একটা লুকাচ্ছে সেটা মিডিয়ার লোকেরা ওদের মুখ দেখেই বুঝতে পারলো।
এদিকে এসব নিউজ শুনে আদ্রিয়ানের বন্ধুরা ছুটে এলো।তারা আদ্রিয়ান আর অহনাকে একসাথে দেখে অনেক বেশি শকড হলো।এটা কি করে সম্ভব?আদ্রিয়ান অহনার ফ্ল্যাটে কি করে?তাদের কে তো আদ্রিয়ান এ ব্যাপারে কিছু বলে নি।
তানহা আর চুপ করে থাকতে পারলো না।সে বললো, আদ্রিয়ান তুই এখানে কি করছিস?আরে এসব হচ্ছে টা কি?উত্তর দে আমায়।
উল্লাস আর সানিও অবাক।
কিন্তু আদ্রিয়ান চুপ হয়ে থাকলো।সে কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।
এদিকে সাংবাদিকরা নিউজ করলো জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আদ্রিয়ান কে নতুন মডেল মিস অহনার বাসায় দেখা গিয়েছে।তাদের সাজসজ্জা আর রুমের ডেকোরেশন দেখে মনে হয়েছে আজ কোনো পার্টি ছিলো।কিন্তু তারা কেউ সত্য টা স্বীকার করতে চাই নি।তবে গোপন সূত্রে জানা গেছে আদ্রিয়ান আজ অহনাকে প্রপোজ করেছে।তাদের যে অনেক আগে থেকেই রিলেশন ছিলো সেটা বোঝাই যাচ্ছে।তা না হলে অহনাকে হঠাৎ আদ্রিয়ান তার নতুন মিউজিক ভিডিও তে কেনো নিলো?
সামান্য এই ঘটনাকে ইস্যু করে পুরো দেশের লোক জেনে গেলো অহনা আর আদ্রিয়ানের প্রেমের কথা।
তবে আদ্রিয়ানের কেনো জানি মনে হচ্ছে সাংবাদিক দের খবর অহনা বা ওর বান্ধুবীরাই দিয়েছে।তা না হলে ওনারা জানলো কি করে?আদ্রিয়ান কে তো আসতে কেউই দেখে নি।
আদ্রিয়ান আর অহনার প্রেমের কথা শুনে তানহার মন টা ভীষণ খারাপ হলো।কারণ সে যে নিজেই আদ্রিয়ান কে ভীষণ পছন্দ করে।কিন্তু আদ্রিয়ান তার বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার কারণে বলার সাহস হয় নি।তবে সে তার ভালোবাসার কথা অনেকভাবে বুঝিয়েছে আদ্রিয়ান কে।কিন্তু আদ্রিয়ান বুঝতে চেষ্টাই করে নি।
আদ্রিয়ান আর এক মুহুর্ত থাকলো না।রাগ করে অহনার ফ্ল্যাট থেকে চলে গেলো।
এদিকে তানহা অহনাকে এট্যাক করলো।আর বললো,বেশি উড়িও না অহনা।একদম ডানা কিন্তু কেটে দিবো তোমার।
অহনা তখন তার হাতের রিং টা বোলাতে বোলাতে বললো,অনেক দেরি হয়ে গেছে মিস তানহা।আর আমার ডানা কাটার সাহস কোনো বাপের মেয়ের নাই।চ্যালেঞ্জ রইলো কিন্তু।
তানহা হঠাৎ খেয়াল করলো রিং টা।সে তখন বললো এই রিং তো তোমার হাতে আগে দেখি নি?কিসের রিং এটা?
অহনা চুপ করে রইলো।
তখন টুশু বললো,আদ্রিয়ান অহনাকে ভালোবাসে
আর আজ এই রিং টা দিয়ে প্রপোজ করেছে অহনাকে।
অহনা এটাই চাচ্ছিলো যে তার বন্ধুরা নিজেরাই প্রকাশ করুক এটা।কারণ সে নিজের মুখে বললে দোষ হয়ে যেতো।
অহনা এবার অভিনয় করতে লাগলো।সে টুশুকে বললো, কি করলি এটা টুশু?আদ্রিয়ান তো এই ব্যাপার টা গোপন রাখতে বলেছে।কেনো বললি তানহাকে।এটা আমার আর আদ্রিয়ানের পার্সোনাল ম্যাটার।
টুশু তখন বললো কি বলছিস কি?আমি তো জানি না সেটা।আগে বললেই তো হতো।তাহলেই তো বলতাম না।
তানহা অহনা আর তার বান্ধুবীদের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেলো ফ্ল্যাট থেকে।তার বিশ্বাসই হচ্ছে না আদ্রিয়ান এইভাবে তাকে না জানিয়ে অহনার সাথে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে।
কিন্তু অহনার আজ অনেক বেশি আনন্দ হচ্ছে।সে ভাবতেই পারছে না আদ্রিয়ান আর তার প্রেমের কথা এভাবে পুরো দেশের লোক জেনে যাবে।যাক অবশেষে সবাই জেনে গেলো আদ্রিয়ানও মিঙ্গেল।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
এদিকে আদ্রিয়ান টেনশনে একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছে।সে বুঝতেই পারছে না এটা কি হয়ে গেলো তার সাথে?এইভাবে ধরা খেয়ে গেলো সে।এখন কি করে সবার মুখ বন্ধ করবে আদ্রিয়ান?
হঠাৎ তানহা দৌঁড়ে এসে আদ্রিয়ান এর সামনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,তুই এটা কি করে করতে পারলি আদ্রিয়ান? তুই অহনাকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলছিস?
আদ্রিয়ান তানহার কথা শুনে বললো তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েও এই কথা টা বিশ্বাস করলি?আমি যদি ওকে ভালোবাসতাম তাহলে তোরা সেটা জানতি না?তোদের কে না জানিয়ে আমি কিছু করেছি?
তানহা তখন বললো কিন্তু অহনার বান্ধুবীরা যে বললো,
তুই নাকি অহনাকে ভালোবাসিস।
তুই নিজে আজ অহনাকে রিং পড়িয়ে দিয়েছিস?
আদ্রিয়ান তখন বললো হ্যাঁ দিয়েছি।কারণ অহনাকে আমার এখন ভীষণ প্রয়োজন।ও আমাকে ভালোবাসে এটা তো আর মিথ্যা নয়।ওর এই ভালোবাসা টাকে আমরা কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু করতে পারবো। বুঝেছিস।আমরা একের পর এক মিউজিক ভিডিও বানাবো। যেগুলো সব হিট হবে।
তানহা তখন বললো তাই মানে তুই ওর সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করছিস?
–হ্যাঁ করছি।তাছাড়া ওকে বশে আনা যাবে না।কারণ ও বাহিরে থেকে সহজ সরল মেয়ে হলেও ভিতরে ভিতরে ওর অনেক বুদ্ধি।
তানহা তখন বললো,কিন্তু এখন সবাই যে বলছে তোর আর অহনার মধ্যে রিলেশন চলছে।তোরা নাকি প্রেম করছিস। সবার মুখ বন্ধ করবি কি করে?
আদ্রিয়ান তখন বললো পিছু লোকে কিছু বলুক।আই ডোন্ট কেয়ার।আর আমি তো চাচ্ছি লোকে আমার বেশি বেশি করে সমালোচনা করুক।
এই বলে আদ্রিয়ান জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আর আবার একটা সিগারেট ধরালো।
তানহা নিজেও এগিয়ে গেলো আদ্রিয়ানের কাছে।আর বললো দেখিস আবার এই প্রেম প্রেম খেলা খেলতে খেলতে আবার সত্যি সত্যি ওর প্রেমে যেনো না পড়িস।
আদ্রিয়ান তখন বললো এটা কখনোই সম্ভব না।কারণ আদ্রিয়ান কোনো মেয়েকে ভালোবাসতেই পারে না।
তানহা এবার আদ্রিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো, আদ্রিয়ান!কোনো মানুষই একা বাঁচতে পারে না কিন্তু।সবার একজন মনের মতো জীবনসঙ্গিনীর প্রয়োজন আছে।আর দুনিয়ার সব মেয়ে কিন্তু এক নয়।প্লিজ আদ্রিয়ান একটু পজেটিভ হয়ে যা।
আদ্রিয়ান তখন তানহার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো এটা আর সম্ভব নয় তানহা।তুই তো সবকিছু জানিস তারপরেও কি করে এটা বলতে পারলি?আর আমি দুনিয়ার কোনো মেয়েকেই বিশ্বাস করি না।
তানহা তখন বললো কিন্তু কেউ একজন যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে তার কি হবে?
আদ্রিয়ান তখন হাসতে হাসতে বললো,শুধু একজন!আমি তো চাই দেশের সকল মেয়ে আমার প্রেমে দিবানা হয়ে থাক।আর আমি তাদের সবাইকে ইগনোর করে চলি।এতেই আমি তৃপ্তি পাবো।
তানহা তখন বললো আগে শুনবি তো সেই একজন মেয়ে কে?
আদ্রিয়ান তখন বললো সে যেই হোক আমার তার প্রতি বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নাই।এই বলে আদ্রিয়ান চলে গেলো।
এদিকে তানহা মনে মনে ভাবতে লাগলো হায় রে আদ্রিয়ান! আমি তোর এতো কাছে থেকেও আমাকে চিনতে পারছিস না?এখন কি করে তোকে আমি আমার মনের কথা বলি?
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
আদ্রিয়ান বাসায় প্রবেশ করতেই মিঃ আতিক হাসান বললো,বাবা এসব কি শুনছি?অহনার সাথে নাকি তুমি রিলেশনে গেছো।
আদ্রিয়ান তার বাবার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।
কিন্তু আদ্রিয়ানের আম্মু মিসেস তমালিকা খন্দকার বললো,তোমার যদি অহনাকে ভালো লাগে তাহলে আমরা ওদের পরিবারের সাথে কথা বলে দেখতে পারি।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, মাম্মি তুমি এটা ভাবলে কি করে ওই রকম একটা থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে আমি রিলেশন করবো?এটা জাস্ট একটা গুজব।এই বলে আদ্রিয়ান তার রুমে চলে গেলো।আর রুমে গিয়েই সে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।তার কেনো জানি আজ ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে।কিছুই ভালো লাগছে না তার।সেজন্য আদ্রিয়ান নিজের গাওয়া গান নিজেই শুনতে লাগলো।
???
অশান্ত মন, বোঝাই কাকে?
হারিয়ে চাইছি তোমাকে
হাতছানি দিয়ে যে ডাকে
স্মৃতির পাতা
নদীর শেষে, আকাশ নীলে
স্বপ্নগুলো মেলে দিলে
তারা বলে সবাই মিলে
দীপান্বিতা
ঠিক সেই সময় অহনা কল দিলো আদ্রিয়ান কে।কিন্তু আদ্রিয়ান রিসিভ করলো না কল।অহনা সেজন্য বার বার কল দিতেই আছে।আদ্রিয়ানের এবার ভীষণ রাগ উঠলো।সে ফোন রিসিভ করেই বললো,
এই মেয়ে তোমার সমস্যা টা কি?এভাবে বার বার কল দিচ্ছো কেনো?
অহনা আদ্রিয়ানের এমন মেজাজ দেখে বললো, কি হয়েছে আপনার?এভাবে কথা বলছেন কেনো?
আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে শান্ত হলো।সে তখন বললো,আমি এখন ব্যস্ত আছি।পরে কথা বলছি।
অহনা তখন বললো আমি জানি আপনি এখন কোনো ব্যস্ত নাই।আমাদের রিলেশনের কথা সবাই জেনে গেছে বিধায় আপনার এমন রাগ হচ্ছে আমার উপর।কিন্তু এতে আমার কি দোষ?
আদ্রিয়ান তখন বললো তুমি কি এসব কথা বলার জন্য কল দিয়েছো?
;না।
–তাহলে কাজের কথা বলো।
অহনা তখন বললো, আচ্ছা আদ্রিয়ান! আপনি কি আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসেন?আমার কেনো জানি ডাউট হচ্ছে।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে কল কেটে দিলো।আর আবার গান শুনতে লাগলো।কারণ তার এখন কারো কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না।
???
শোনো না, রূপসী, তুমি যে শ্রেয়সী
কি ভীষণ উদাসী, প্রেয়সী
না, না, না, না, না, না
জীবনের গলিতে, এ গানের কলিতে
চাইছি বলিতে, “ভালোবাসি”
গান শুনতে শুনতে আদ্রিয়ান ওখানেই ঘুমিয়ে পড়লো।
কিছুক্ষন পর হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আদ্রিয়ান চমকে উঠলো।আদ্রিয়ান তাকাতেই দেখে অহনা।
–তুমি এখানে?আমার বাসায় আসার সাহস হলো কি করে তোমার?
অহনা তখন বললো, ভালোবাসার মানুষের বাসায় আসতে আবার সাহস লাগে নাকি?
আদ্রিয়ান অহনাকে তার বাসায় দেখে এতো বেশি রেগে গেলো যে রাগ করে বললো,
অহনা আমার তো এখন পুরো সন্দেহ হচ্ছে যে তুমি নিজে মিডিয়ার লোকদের খবর দিয়েছো।
তুমি ইচ্ছা করেই করেছো এটা।যাতে আমার ইমেজ নষ্ট হয়ে যায়।কারণ তুমি ভীষণ খুশি হয়েছো আমাদের রিলেশনের কথা প্রকাশ হয়ে।
অহনা তখন বললো, ছিঃ ছি। কি বলছেন এসব?আমি কেনো আপনার মানসম্মান নষ্ট করতে চাইবো?শুধু কি আপনার মানসম্মান নষ্ট হয়েছে?আমারও তো মানসম্মান চলে গেছে।
আদ্রিয়ান হঠাৎ সেই কথা শুনে অহনার গলা ধরে বললো, তোমার আবার মানসম্মান আছে?এর আগে তো ভাইরাল হওয়ার জন্য কত কি করেছো?সেগুলো ভুলে গেলে?
অহনা তখন চিৎকার করে বললো, আদ্রিয়ান লাগছে আমার।ছাড়ুন।
আদ্রিয়ান তখন বললো লাগার জন্যই তো ধরেছি।আমার কেনো জানি তোমাকে আজ খুন করতে ইচ্ছে করছে।
অহনা তখন হাসতে হাসতে বললো তাহলে তাই করুন।ভালোবাসার মানুষের হাতে খুন হওয়া টাও ভাগ্যের ব্যাপার।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে অহনাকে ছেড়ে দিলো।
অহনা তখন বললো আচ্ছা আপনি আবার আমার সাথে কোনো গেম খেলছেন না তো?
আদ্রিয়ান চুপ হয়ে রইলো।
অহনা তখন বললো আমার বিশ্বাস আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।কারণ কেউ ভালোবাসার মানুষের সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করতেই পারে না।
আদ্রিয়ান কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি মিঃ আতিক হাসান আর মিসেস তমালিকা খন্দকার রুমে প্রবেশ করলেন।
কারণ অহনা তাদের বাসায় আসায় মিঃ আতিক হাসান আর তমালিকা খন্দকার ভীষণ খুশি হয়েছেন।তারা অহনার সাথে একদম ছেলের বউ এর মতো আচরন করতে লাগলো।তারা ভাবতেই পারছে না শেষ মেষ তাদের ছেলে কাউকে পছন্দ করেছে।আদ্রিয়ানের বাবা মা তো এটাই চাই যে তাদের ছেলেও কাউকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসুক আর তার ভয়ংকর অতীত টা ভুলে যাক।
আদ্রিয়ানের বাবা মা মনে করছে একমাত্র অহনাই পারবে আদ্রিয়ান কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে।ভালোবাসার প্রতি যে তার অবিশ্বাস আর ঘৃনার জন্ম নিয়েছে তা একমাত্র অহনাই দূর করতে পারবে।
এদিকে অহনাও ভাবতেই পারছে না আদ্রিয়ানের বাবা মা এতো ভালো মানুষ। তারা কি সহজে মেনে নিচ্ছে অহনাকে।
কিন্তু আদ্রিয়ানের ব্যাপার টা অহনা এখনো বুঝতে পারলো না।কারণ আদ্রিয়ান নিজে তাকে ভালোবাসার কথা বললো।তাকে রিং ও পড়িয়ে দিলো।কিন্তু তার সাথে এখন এমন ব্যবহার করছে যে তাকে সে ভালোই বাসে না।
আদ্রিয়ান কি আদৌ অহনাকে ভালোবাসে তা নিয়ে অহনার মনে সন্দেহের জন্ম নিলো।
এদিকে মিঃ আতিক হাসান আর তমালিকা খন্দকার অহনার বাবা মার ঠিকানা জানতে চাইলো।কারণ তারা আর কিছুতেই দেরি করতে চাইছে না।যে করেই হোক আদ্রিয়ানের সাথে অহনার বিয়ে তারা পাকাপোক্ত করবে।
চলবে,