প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো? পর্ব_০৫

0
4469

প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো?
পর্ব_০৫
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
সূর্য পূর্ব কোলে লাল আভা ছেড়ছে।
একটু আগে আজান হলো।
ঘুম ভাঙলো আজান শুনে,
ঘুম ভাঙতে নিজের পাশে কম্বলের তলে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে থাকা প্রেয়নকে দেখতে পেলাম।
তার মুখটা মিষ্টি মায়াতে ভরপুর।
অসাধারণ সে, মন চাইছে এভাবে দেখে কাটিয়ে দি৷
কিন্তু এখন নামাজ পড়তে হবে রাইমাকে উঠিয়ে পড়াতে বসাতে হবে।
উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে নিলাম।
তার পর চা বানিয়ে রাইমাকে উঠিয়ে চা দিয়ে পড়াতে বসিয়ে দিলাম।
আমার সংসার টা এমনি চলে মায়ের অবর্তমানে এগুলা তো আমারি দায়িত্ব।
বাবা ঘুম।
আমারো কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
একটু পর উঠে সবার জন্য নাস্তা বানাবো এটা ভেবে আবার গিয়ে এক কোনে শুয়ে পরলাম।
বিছনায় শুতেই ঘুম নেমে এলো চোখে।



মুখের উপর রোদ এসে পরতে ঘুম হালকা হয়ে গেল।
চোখ মেলে তাকাতে দেখি উনি বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
ঘুমোতে গিয়ে কি বেশি ঘুম হলো নাকি।
–পৃথু তুই উঠেছিস এক কাপ কফি আনবি?
–কটা বাজে?
–১০ টা।
–কি বলো প্রেয়ন ভাই আমি এখনো ঘুমিয়ে আছি হায় হায়৷
বিছনা ছেড়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দরজার দিকে যাবো হটাৎ আমাকে টান দিলো প্রেয়ন আমি সোজা তার কোলের উপর পরলাম।
–কি করছেন৷
–গিন্নি তুই আমার গিন্নি এবার তো আর ভাই বলিস না রে।
–আপনি এখন এসব বলছেন আমার কাজ আছে ছাড়ুন।
–ছাড়বো না আর ভাই বলবি।
–আচ্ছা বলবো না এবার ছাড়ুন।
–সত্যি।
–৩ সত্যি।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
উনি আমাকে ছেড়ে দিতে উঠে এক দৌড় দি৷
প্রেয়ন ঘর থেকে পৃথুলার দৌড় দেখে মুচকি হাসছে।
–পিচ্চি বিয়ে করেছি আমি।

–আল্লাহ কতো লেট হয়ে গেল।
খাবার করার আগে ওনার কফিটা বানিয়ে নিলাম।
কফি নিয়ে রুমে এসে দেখি উনি আগের অবস্থান এ বসে কাজ করছেন৷ কফিটা ওনাকে দিলাম।
–ধন্যবাদ পৃথু প্রচুর মাথা ব্যাথা হচ্ছিল।
–জি।
আমি চলে এলাম৷
রান্না করে সবাইকে খেতে দিলাম।
বাবার খাবার টাও দিয়ে দিলাম।
–এতো কজ করিস কষ্ট হয় না।
–না মা মরে যাবার পর থেকে সব আমার রোজকার রুটিন।
–পৃথু বাসায় যেতে হবে যে।
–বাসায় কিন্তু রাইমার উপর সব কিছু,
–কিছু হবে না ওর উপর আমি কথা বলেছি আজই নতুন কাজের ৩ জন মহিলা আসবে ঘরের সব কাজ তারা করবে।
–আজি যাবো।
–হ্যা আমার কাজ পরেছে।
–আচ্ছা।
মন খারাপ করে বাবার কাছে গেলাম।
–চলে যেতে হবে গো বাবাই আর থাকা হবে না। বাবাই তেমার মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে।
আর ভয় পায় না।
সত্যি তোমার বলা কথা গুলো আমার জীবনে পথ চলার একটা রাস্তা করে দেয়।



–প্রেয়ন ভাইয়া আজ না গেলে হতো না (রাইমা)
–না রে রাইমা বাসায় কাজ আছে।
–আচ্ছা (মন খারাপ করে)
–মন খারাপ করিস না রাইমা আবার আসবো।
–চকলেট নিয়ে আসবা কিন্তু ভাই পরের বার।
–আল্লাহ কি বলিস তোর জন্য চকলেট আমার পকেটে৷
প্রেয়ন পকেট থেকে অনেক গুলো চকলেট বার করে দিলো।
–দেখ।
–ধন্যবাদ। (খুশি হয়ে)
–হুম।
ব্যাগ গুছচ্ছি আর ওদের দুষ্টুমি দেখছি।
সত্যি যদি বিয়েটা ১ মাসের জন্য না হয়ে সারা জীবনের জন্য হতো৷
ব্যাগ গোছানো শেষ হলো।
–চলো পৃথু৷
–হুম চলুন৷
আমরা রওনা হলাম৷
বাবাকে দেখে।
ইচ্ছে তো হচ্ছে না মোটেও কিন্তু ১ মাসের জন্য আমি তো তার স্ত্রী।
গাড়িতে দু’জন ই চুপচাপ ছিলাম কোন কথা হয় নি দুজনের মধ্যে।
বাসায় আসতে ফুপি জড়িয়ে ধরলেন।
তার পর রুমে এলাম৷
কাপড় পাল্টে গোসল করে নিলাম।
একটা হলকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছি।
ভেজা চুল গুলো মুছতে আছি
তখন হটাৎ মনে হলো কেউ পেছনে এসে দাঁড়িয়ে ছে।
আমি আয়নার সামনে তাকানোর আগেই পেছনে থাকা লোকটা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আমি বুঝতে পারি একটা প্রয়ন।
–কি করছেন?
–তোকে অনেক মিষ্টি দেখাচ্ছে পৃথু৷
–হয় তো ছাড়ুন।
–কেন গিন্নি তুই না আমার বৌ।
–মাত্র ১ মাসের।
–কথায় কথায় ১ মাস না টানলে হয় না।
–যা সত্যি তা কেন টানবো না। (মলিন হেসে)
–পৃথু।
–বলুন।
–যদি বলি ভালোবাসি।
–কিছু সময়ের জন্য ভালো বেসে লাভ নেই।
–তোর চুলের গন্ধ টা কিন্তু অনেক সুন্দর পৃথু।
ওনার কথায় ভেতরে শীতল হাওয়া বইতে লাগলো।
–ছেড়ে দিলাম তোকে সত্যি ও ১ মাসের জন্য ভালোবেসে লাভ নেই।
ওনার এভাবে কাছে আসা এভাবে ছেড়ে দেওয়া।
একটা জাল বুনে দিচ্ছে আমার মস্তিষ্কের চারি দিকে।
কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
কিন্তু কষ্ট হয় এটা বুঝতে পারছি।

আমি সরে নিচে চলে এলাম।
–পৃথুলা।
–জি ফুপি।
–ফুপি কে? (বেশ রেগে)
হটাৎ ফুপির রাগে ভয় পেয়ে গেলাম।
–ইয়ে মানে,
–কি মানে ফুপি না মা বলবি মা।
আমি ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ফুপির দিকে।
–কিরে বলবি না মা।
–হুম মা।
–এই বার হলোনা।
–মা আমি বার হচ্ছি। (প্রেয়ন)
–কই যাচ্ছিস?
–একটু কাজ আছে মা।
প্রেয়ন চলে গেল।
আমি তাকিয়ে রইলাম।
আস্তে আস্তে সে চোখের সীমানা অতিক্রম করলো।
–পৃথুলা।
–জি।
–আয় আমি একটা জিনিস দেখায় তোকে।
মা আমাকে অনেক রান্না শেখালেন।
এভাবে দিন কাটলো।
রাত এখন ১০ টা৷
প্রেয়ন এখনো বাসায় আসে নি।
ভালো লাগছে না চিন্তা হচ্ছে।
কি করবো ফোন করবো কিন্তু কি করে ফোন তো নেই।
ঘরের মধ্যে পায়চারি করছি।
আজ প্রথম নিজেকে বৌ বৌ হিসাবে মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে একটা দায়িত্ব পরেছে সত্যি আমার উপর৷
প্রয়ন কোথায়।

রাত ১২ টা,
খাবার টেবিলে বসে আছি। মা ও বসে ছিলো কিন্তু ওনাকে পাঠিয়ে দিছি একটু আগে ঘুমোতে।
হটাৎ কলিং বেল বাজলো।
দৌড় দিয়ে দরজা খুললাম।
ওনাকে দেখে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে।
আমি সরে ওনাকে ভেতরে আসতে দিলাম।
রুমে এসে উনি ফ্রেশ হলো।
–খাবার
–খেয়ে এসেছি এগুলা গিন্নি গিন্নি তুমি শুধু এই পরিবারের সামনে তাও ১ মাসের জন্য আমার সামনে এসব নাটক করবে না।
,
কড়া গলায় কথা গুলো বলে বিছনার এক কোনে শুয়ে পরলো
আমার চোখ ভের এলো।
সত্যি তো ঠিকি বলেছে উনি।
উনি খেয়ে এসেছে একটা বার প্রশ্ন করলো না আমি খাইছি নাকি।
কেন করবে আমি কি হই ওনার।
খিদা মিটে গেলো আমার।
আমি চোখ মুছে এক কোনে শুয়ে পরলাম।


রাত ১ টা হটাৎ মনে হচ্ছে,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here