ফাগুন_এলো_বুঝি! (১৯)

0
818

#ফাগুন_এলো_বুঝি!
(১৯)

ইউনিভার্সিটির যে কোনো অনুষ্ঠানের দায়িত্ব মূলত থাকে সিনিয়রদের ওপর। ধ্রুবদের ব্যাচ যেহেতু এবারেই বেরিয়ে যাবে,তাই এ বছর সমস্ত কিছুর দায়িত্ব তাদের কাঁধে।বিশেষ করে ধ্রুবর।কারন রেজাল্ট,জনপ্রিয়তায় ডিপার্টমেন্টের হেড সে।বিকেলের প্রোগ্রামে ধ্রুব একটু তাড়াতাড়িই এলো।প্রথমে ভেবেছিল পূর্ণতাকে সাথে করে আনবে,পরে ভাবল দরকার নেই।সেতো আগেভাগে যাচ্ছে,পূর্ণতা আগে গিয়ে করবে কী?তাছাড়া যেখানে তার কাজ,ব্যাস্ততা অনেক,সেখানে পূর্ণতার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করার জো পাবেনা।ধ্রুব পাঞ্জাবি পরে একেবারে পরিপাটি হয়ে এসেছিল।তারপর অনেক সময় কেটেছে।অনুষ্ঠান শুরুর পর্যায়ে এখন।একের পর এক সিট বুক হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অথচ পূর্ণতার দেখা নেই।মিশরাও চলে এসছে।মেয়েটা আজকেও জিন্স- টপ্স পরেছে।চারপাশে হাজার হাজার পাঞ্জাবি-শাড়ি পরা মানুষের মধ্যে ওকে একটু এলিয়েন এলিয়েন লাগছেনা?অথচ মিশরা বরাবর বেপরোয়া। ইশিতা কত করে অনুরোধ করল দুজন এক রঙের শাড়ি পরবে!মিশরার আবার শাড়িতে এলার্জি যেহেতু,ভাবল না হয় চুড়িদার পরুক!তাও না।এলো একদম শর্ট একটা টপ্স আর হাটুছেড়া জিন্স পরে।ইশিতার মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে।কোন কুক্ষনে যে গেছিল মিশরার বেস্টফ্রেন্ড হতে!মাঝে মাঝে কপাল চাপড়াতে মন চায়।

ধ্রুব মাঠের এক কোনায় দাঁড়িয়ে।ফোনে বারবার কাউকে ডায়াল করছে।রিং হচ্ছে,অথচ রিসিভ করছেনা।বিরক্ত লাগেনা?কিন্তু না।ধ্রুব কোনো ভাবেই তার মায়াপরির ওপর বিরক্ত হতে পারছেনা।বরং তার চিন্তা হচ্ছে। পূর্ণতা আসবে তো?নাকি আসবেনা?সকালের পর তো আর সামনেই পরেনি।একটু চুঁমুচাঁমাটি দিলেই মেয়েটা লজ্জ্বায় কাঁত হয়ে যায়।সারাদিনেও দেখা দেয়না।কিন্তু এতে তার কী দোষ? মায়াপরির মুখটাই এত আদূরে,সারাক্ষন চুঁমু দিতে ইচ্ছে হয়।এর মাঝে রিদ এসে পাশে দাঁড়াল ধ্রুবর।জিজ্ঞেস করল,
” কিরে ব্যাটা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
ধ্রুব গেটের দিক চেয়ে অধৈর্য কন্ঠে বলল,
‘এখনও আসছেনা কেন বলতো!
রিদ মন খারাপ করে বলল,
‘জানিনা রে! আমারটাও আসেনি।
ধ্রুব চোখ ঘুরিয়ে তাকাল,রিদ বলল,
“এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?আচ্ছা ভাই শোন না,আমার হয়ে ওকে একটু বলে দিবি?
‘শালা আমি এখনও আমার কথাই বলিনি।তুই আছিস তোর টা নিয়ে।
‘তাতে কী হয়েছে?পূর্ণতাতো জানে তুই ওকে ভালোবাসিস।আমার রুপসীতো আর জানেনা।
ধ্রুব মাঝখানের কথাটুকুন শুনেই শুধাল,’
‘জানে বলছিস?
‘আরে জানে জানে।আই থিংক ও নিজেও তোকে ভালোবাসে। নাহলে তোকে এত ভাও দিত? রিদের দৃঢ় কন্ঠ।
ধ্রুব কপালের পাশ চুল্কে বলল,
‘বুঝতে পারছিনা।
‘তাহলে বরং আজ বলে দে।শুভস্ব শীগ্রম।
‘দেব বলছিস?
‘অফ কোর্স!
ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে ভাবতে বসল।
তখনি ওদের মাঝে নোরা এসে বলল,
‘এই ধ্রুব দেখোনা আমায় কেমন লাগছে?
রিদ একবার দেখে অন্যদিক ফিরে মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল।এই মেয়ের কী গায়ে গন্ডারের চামড়া?ধ্রুব এত ইগনোর করে বোঝেনা?তাও হ্যাংলার মত দুলতে দুলতে চলে আসে।উত্তরের অপেক্ষায় থাকা নোরাকে ধ্রুব একবার চেয়েও দেখলনা। সে গেটের দিক তাকিয়ে থেকেই বলল
” ভালো লাগছে।
নোরা আর কথা না বাড়িয়ে মুখ কালো করে চলে গেল।ধ্রুব প্রত্যেকবার তার সঙ্গে ভাব নেয়।অথচ দিন শেষে এই ভাবওয়ালা ছেলেটাকেই মন দিয়ে বসে আছে সে।একী যন্ত্রনা!
___
আরে শালা, এ কি দেখছি আমি?
কথাটায় ফোন থেকে চোখ তুলল ধ্রুব।রিদের দৃষ্টি অনুসরন করে সামনে তাকাতেই থমকে গেল সে।
গেট দিয়ে একিসাথে ঢুকছে পূর্ণতা, রুপ।দুজনেই একই রকম শাড়ি পরেছে।বাসন্তি রঙের ওপর লাল প্রিন্টের হাফ সিল্কের শাড়ি।পূর্ণতাকে এই প্রথম বার শাড়ি পরা দেখলো ধ্রুব।সাথে খোপা বাঁধা চুল।কানে বড় ঝুমকো।টানা টানা চোখে আইলানার আঁকা।হাত ভরা লাল রেশমি চুড়ি।ঠোঁটে লাল লিপস্টিকের সঙ্গে নাকে ছোট্ট একটা জ্বলজ্বলে পাথরের নাকফুল।ধ্রুব ঢোক গিলল।মনে হচ্ছে তার স্বপ্নের সেই মায়াপরিটাই এগিয়ে আসছে।ধ্রুব চোখ ফেরাল খুব কষ্টে।শ্বাস টানলো গভীর।প্রানবায়ু আটকে পরছে যেন।মায়াপরি কী আজ তাকে মারার প্ল্যান করল?
‘এত সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। এই ডায়লগটাই মাথায় আসছে এখন।
রিদের কথায় চোখ ছোট করে তাকালো ধ্রুব।চাউনি বুঝতে পেরে রিদ ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘আরে আমি আমারটার কথা বলছি ভাই।এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?তোর বউ আমার বোন।
‘হ্যা ঠিক আছে।চল এখন ভেতরে যাই।

রিদ যেতে নারাজ।গড়িমসি করে বলল
‘ইয়ে ধ্রুব,তুই যা না। আমি আসছি।
ধ্রুব বুঝতে পেরে আর কিছু বললনা।চলে গেল বিশাল স্টেজের পেছন দিকে।
রিদকে দেখেই পূর্ণতা এগোতে নিল।রুপ হাত টেনে ধরল।
‘কোথায় যাচ্ছিস?
‘রিদ ভাইয়ার কাছে।
‘যেতে হবেনা।অন্যদিকে চল।
‘কেন? গেলে কী হবে?
রুপ কিছু বলতে গিয়েও পারলনা।গতকাল রিদের ঐ কথাটা মনে করে করে রাতে যে কতবার লজ্বা পেয়েছে সেই জানে।রুপ রিদের কাছে না গেলে কী হবে,রিদ নিজেই এসে ওদের সামনে দাঁড়াল।সুন্দর করে হেসে বলল,
‘হাই পূর্ণতা।কী খবর তোমার?
‘এইত ভাইয়া।ভালো।
রিদ এসে দাঁড়ানোয় রুপ আরো শক্ত করে ধরল পূর্নতার হাত।রীতিমতো নখ গেঁথে গেল। পূর্ণতা ব্যাথা পেলেও রিদের সামনে কিছু বলতে পারছেনা।রুপকে ইশারা করল হাত সরাতে।রুপ সরালনা।আরো দৃঢ় করল বাঁধন।
রিদ বারবার রুপের দিক তাকাচ্ছে।মেয়েটাকে আজ মাত্রারিরিক্ত সুন্দর লাগছে।রিদ ভীষণ নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের কী খবর অরুপসী?
রুপ ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
‘আমি কী করে জানব?
‘তাও ঠিক।তুমিই বা কী করে জানবে?তা ফোন করে আর বিরক্ত করছেনা তো?
রুপ মাথা নাড়ল।করছেনা।
রিদ আর কথা খুঁজে পেলনা।পূর্ণতা রয়েছে।ওর সামনে বলবেও বা কী?বলল,
‘ঠিক আছে।থাকো তোমরা।আর পূর্ণতা,একটু পরেই প্রোগ্রাম শুরু হবে।কাছাকাছি থেক।ফোন আছে সাথে?”
“হ্যা ভাইয়া আছে।
‘আমার নম্বরটা তুলে নাও।
পূর্ণতা হাতের ছোট্ট পার্স থেকে ফোন বের করল।সাইড বাটনে ক্লিক করে আলো জ্বালাতেই চোখ দুটো কপাল ছুঁলো।ধ্রুবর বত্রিশ টা মিসড-কল উঠে আছে।ফোন সাইলেন্ট ছিল?ইয়া আল্লাহ আমিতো শুনিইনি।দেখিওনি।
পূর্ণতাকে স্ট্যাচু বনে যেতে দেখে ডেকে উঠল রিদ,
‘পূর্নতা কী হলো?নম্বরটা তোলো।
‘হু?হ্যা, হ্যা ভাইয়া বলুন।
নম্বর বলতে বলতে রিদ বারবার রুপের দিক দেখছিল।প্রত্যেকটা ডিজিট ধীরেসুস্থে বলেছে সে।যাতে রুপের মনে করতে সুবিধে হয়।কিন্তু তার আশাকে হতাশা বানিয়ে রুপ আরেকদিক তাকিয়ে আছে।রিদ মন খারাপ করে পূর্ণতাকে বলল
‘আসি।
কয়েক পা বাড়াতেই ডেকে ওঠে রুপ।
‘রিদ ভাইয়া!
রিদ অবাক হয়ে ঘুরে তাকাল।এইপ্রথম রুপের নম্র কন্ঠে যেন সন্মান খুঁজে পেল।রুপ নিজেই এগিয়ে এসে দাঁড়ালো রিদের সামনে।
‘আপনাকে ধন্যবাদ দিলে ছোট করা হবে জানি।তবুও নিজের খুশির জন্যে একটা ধন্যবাদ দিতে চাই।আপনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে এই নোংরা ঝামেলা থেকে বাঁচিয়েছেন।রক্তের সম্পর্ক থাকলেও মানুষ মানুষের জন্যে এরকম কিছু করেনা।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

রিদ বুকের সাথে দুহাত ভাঁজ করে বলল,
‘কিছু সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের উর্ধ্বে হয় রুপ।যার জন্যে মানুষ প্রান দিতেও সংকোচ করেনা।আমার মনে হচ্ছে আমি দিন দিন সেই সম্পর্কেই জড়িয়ে যাচ্ছি তোমার সাথে। এখন সেটা কী?তুমি বরং ভেবে দেখ,তারপর আমাকে জানিও।তখন আমিও নাহয় সত্যিটা বলব তোমায়।
রিদ মুচকি হেসে চলে গেল। রুপ ফ্যালফাল করে চেয়ে থাকল।কী বলে গেলেন এসব?

পূর্ণতা উদ্বীগ্ন চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।ধ্রুবকে খুঁজে পাওয়াই তার প্রধান লক্ষ্য।এত্ত গুলো কল দিয়ে তাকে না পেয়ে কী সাংঘাতিক চেঁতে আছে কে জানে!কথা বলবে তো?পূর্ণতা ধ্রুবর ফোনে ডায়াল করল।এবার সে ফোন ধরছেনা দেখে পূর্ণতা ধরেই নিল ধ্রুব ক্ষেপেছে।চিন্তায় আধখানা পূর্ণতার অবস্থা।তার ওপর আবার ওয়াশরুম যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা।
পূর্ণতা রুপকে বলল
“রুপ! ওয়াশরুম যাব আমি।
রুপ ভাবনায় মশগুল থাকায় চমকে উঠল,
‘হু?
‘ওয়াশরুম যাচ্ছি একটু।পার্স টা রাখ।
‘হ্যা দে।
___
ওয়াশরুম ফাঁকাই আছে। পূর্ণতা শাড়ির কুচি পায়ের কাছ থেকে সামান্য উঁচু করে ধরে মূল ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে ঢুকল কেবল।এর মধ্যে কেউ একজন ঢুকেই দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিল।পূর্ণতা প্রথমে ভেবেছিল অন্য কেউ, অন্য ওয়াশরুম ব্যাবহার করবে।কিন্তু দরজা লাগানোর শব্দ পেতেই তড়িৎ গতিতে পেছন ফিরল।ধ্রুব দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো দেখে আঁতকে বলল,
” একি আপনি…?
ধ্রুব সম্মোহনী দৃষ্টিতে চেয়ে।পূর্ণতা এদিক ওদিক দেখে বলল,
‘লেডিস ওয়াশরুমে ঢুকেছেন কেন?কেউ দেখলে কী হবে?
ধ্রুব উত্তর দিলনা দেখে ফের বলল,
“আপনি কী আমার ওপর রাগ করেছেন?আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল,একটা কল ও শুনিনি।
নিরুত্তর ধ্রুব এবার ধীর পায়ে এগোতে লাগল।পূর্ণতা ঢোক গিলে পিছিয়ে যেতে ধরলে পিঠে বাঁধল দেয়াল।আটকে গেল পূর্ণতা।ধ্রুব একদম কাছে এসে থামল।পূর্ণতার পুরোনো হাঁদফাঁসটা ফেরত এলো আবার।ধ্রুবর নিশ্চল চাউনি যন্ত্রনা দিচ্ছে তাকে।মিষ্টি যন্ত্রনা!
ধ্রুব স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
‘আজ একটু বাড়াবাড়ি করব মায়াপরি।কথা দিচ্ছি এরপর থেকে সব স্পর্শ বিয়ের পর হবে।বিয়ের আগে এই শেষ ছোঁয়া।আর ছোঁবনা।
‘মমময়াময়ানে?
পূর্ণতার কথা জড়িয়ে গেল।ধ্রুব আর সময় নিলনা।চট করে আকড়ে ধরল পূর্ণতার তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট দুটো।পূর্ণতা ফ্রিজড হয়ে গেল।শক্ত করে খামছে ধরল শাড়ি।ধ্রুব তাতেও বাঁধ সাধল।পূর্ণতার দুহাত উঠিয়ে নিজেই নিজের পিঠে রাখল।পূর্ণতা এবার শক্ত করে ধরল তার পাঞ্জাবির অংশ।ধ্রুবর চুম্বন তীব্র থেকে তীব্রতর হল।সেই মুহুর্তের জন্যে পূর্ণতাও হারিয়ে গেল ধ্রুবর ছোঁয়ায়।ধ্রুবর ভালোবাসায়।

কিছুক্ষন পর সরে এল ধ্রুব।পূর্ণতার কপালে কপাল ঠেকাল।একে অন্যের ঘন নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে একে অন্যের মুখের ওপর। পূর্ণতার চোখ তখনও বন্ধ।সে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা।ধ্রুব পরপর শ্বাস ফেলল।যেন কোন কিছু বলতে চাইছে।থেমে থেমে বলা ধরল,
‘মায়াপরি!মায়াপরি, আমি, তোমাকে, আমি তোমাকে ভ___
এর মধ্যে মাইক্রোফোনে ধ্রুবর নাম ধরে ডাকা হচ্ছে।কন্ঠস্বর কোন এক শিক্ষকের।ধ্রুবর কথা সম্পূর্ণ হলোনা।দ্রুত পায়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।পূর্ণতা আস্তেধীরে চোখ খুলে ধ্রুবর যাওয়ার দিক তাকাল।দেয়াল বেয়ে বেয়ে পিঠ নামিয়ে বসে পরল টাইলসের মেঝেয়।লজ্জ্বায় হাটুতে মুখ গুঁজে হেসে ফেলল।ধ্রুব যে বলল সব স্পর্শ হবে বিয়ের পর,তার মানে উনিও জানেন বিয়ের কথা!
____
এক ঘন্টা পর,

লম্বা একটা জ্যাম পেরিয়ে মাত্রই ধ্রুবদের ভার্সিটি পৌঁছেছে ধীর।গেটের সামনে ধীরের গাড়ি এসে থামলো।সাউন্ড সিস্টেমের গান এই অব্দি আসছে।অনেকে শো না দেখে ভীর করেছে বাইরেও।ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা।ধীর কোনও দিক না দেখে সোজা গেট দিয়ে ঢুকল। হাতে এক গুচ্ছ্ব লাল গোলাপ এনেছে।প্রোগ্রাম শেষ হলেই পূর্ণতাকে মনের কথা জানাবে।মেয়েটা কী পরিমান চমকাবে ভাবলেই হাসছে ধীর।
সাড়ি সাড়ি আসনের একদম পেছনে দাঁড়াল ধীর।সোজা স্টেজে অভিনয় করছে এক দল ছেলেমেয়ে।ধীর চারপাশে পূর্ণতাকে খুঁজছে।মেয়েটার সঙ্গে সকাল থেকে দেখা হয়নি।নাস্তার টেবিল, বা দুপুরের খাবার সময় একটাতেও পূর্ণতাকে পায়নি।ওকি আজ সেজেছে?কেমন লাগছে ওকে?
ধীরের উত্তর হিসেবে মাইক্রোফোনে পূর্ণতা-রিদ,নোরা-ধ্রুবর নাঁচের কথা এনাউন্স হলো।ধীর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াল এবার।তার পূর্না নাঁঁচবে এখন।উৎসুক দর্শকদের মধ্যে হৈচৈ বেঁধে গেল ধ্রুব আর নোরা স্টেজে উঠতেই।প্রথমে ধ্রুব উঠল,তারপর হাত পেতে নোরাকে আনল।
পরপর উঠল রিদ,একইরকম পূর্ণতাকে হাত ধরে ওঠাল।পূর্নতাকে দেখতেই মুগ্ধ হলো ধীর।মনে হলো সেই বাচ্চা পূর্ণতাই।যাকে প্রথম বার শাড়ি পরুয়া দেখে পা পিছলে প্রেমে পড়েছিল সে।
মঞ্চে চারজনের নাঁচ শুরু হলো।হিন্দি গানে পার্ফম করছে তারা।সাথে দর্শক সাড়ির হাত তালিতে চারপাশটা আর মুখরিত হয়ে উঠল।ধীর মনোযোগ দিয়ে পূর্ণতার নাঁচ দেখছে।দুঠোঁটে হাসি লেগে তার।ঠিক দেড় মিনিটের মাথায় পূর্ণতা আর নোরার একসাথে ঘোরার স্টেপ ছিল।তারা দুজন ঘুরতে ঘুরতে দুপাশে আসবে।নোরা ঘুরে রিদের কাছে গেল,সে আগে থেকেই জানত স্টেপ সম্পর্কে। কিন্তু পূর্ণতা জানতনা।সে ঘুরে ধ্রুবর কাছাকাছি যেতেই ধ্রুব কোমড় টেনে কাছে আনল।ধীরের হাসিটা দপ করে নিভে গেল তৎক্ষনাৎ। পূর্ণতা খানিক হকচকাল।ভাবল ধ্রুব দুষ্টুমি করছে।তাও সবার সামনে?
চোখ পাঁকিয়ে বলল
“এখানেও শুরু করে দিলেন?
ধ্রুব তার হাত আকড়ে দুলতে দুলতে বলল,
‘এটাই নাঁচের থিম ম্যাডাম।দেখো রিদ আর নোরা নাঁচছে এখন।
পূর্ণতা সেদিক তাকিয়ে বলল,
‘এটা নিশ্চয়ই আপনার বুদ্ধি।
ধ্রুব হেসে বলল ‘ অফকোর্স মাই ফেইরি।
পূর্ণতা আর কিছু বললনা।ধ্রুবর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে নাঁচছে সে।গা দোলাচ্ছে।
পূর্নতার কোমড় জড়ানো ধ্রুবর হাত আরো দৃঢ় হলো।পূর্ণতা আরেকটু মিশে গেল সাথে।দুজনের চাউনি এক হল।স্থির রইল। সরলনা।ভুলে বসল জাগতিক সব কিছু। শুধু একভাবে চেয়ে থাকল দুজন দুজনের সম্মোহনী দৃষ্টিতে।
দর্শক সাড়ির প্রত্যেকেই উত্তেজিত, উল্লাসিত।একমাত্র ধীরের ঠোঁটে হাসির লেশ মাত্র রইলনা।উলটে চোয়াল শক্ত হয়ে এসছে তার।বারবার চোখ যাচ্ছে পূর্ণতার কোমড়ে রাখা ধ্রুবর হাত,পূর্ণতার আঙুলের ভাঁজে লুকোনো ধ্রুবর আঙুল,পূর্ণতার দিক চেয়ে থাকা ধ্রুবর দৃষ্টিতে।

ধীরের অস্থির,অসহ্য লাগা শুরু হলো।গলার টাই ঢিলে করল সে।
এমন কেনো লাগছে আমার?এতক্ষন তো পূর্নাকে রিদের সাথে নাঁচতে দেখে একটুও খারাপ লাগেনি।তবে ধ্রুবর সাথে এভাবে দেখে কেনো এতো অস্বস্তি হচ্ছে আমার?ধ্রুব তো আমার অচেনা কেউ নয়।তাহলে?তবে কেনো ওদের এভাবে মেনে নিতে পারছিনা আমি!মনে হচ্ছে আমার পূর্ণা আমার নয়,অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে।কার?ধ্রুবর?না না, এসব আমি কি ভাবছি?পূর্ণা আমার,শুধুই আমার।
ধীরের অজান্তেই রাগ লাগছে ভীষণ। কপালের রগ ফুলছে।শ্বাস ঘন হচ্ছে।হাতের গুচ্ছ্ব গোলাপ গুলো মুঠোর মধ্যেই দুমড়ে মুচড়ে ধরল সে।ক্ষুব্ধ নজর মঞ্চে বুলিয়ে রেগেমেগে বেরিয়ে গেল।
মিশরা এতক্ষন দেখছিল ধীরকে।ধীর যে ধ্রুব আর পূর্ণতাকে কাছাকাছি দেখে ক্ষেপেছে সেটা স্পষ্ট বুঝল সে।ধীরকে চলে যেতে দেখে মুখ দিয়ে শব্দ করল,
‘চু চু চু ধীর ভাইয়া!এইটুকুতেই এত ফাঁটছে?সামনে কী করবে?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here