ফাগুন_এলো_ বুঝি (১৪)

0
868

#ফাগুন_এলো_ বুঝি
(১৪)

ফেরার পর থেকে ঘরে খিল দিয়ে বসেছে পূর্ণতা।বারান্দার দরজা,জানলা কোনো কিছু আটকাতে ভোলেনি।ধ্রুবর শাস্তি পাওয়ার ইচ্ছে নেই তার।কিন্তু ঠিক আড়াইটা নাগাদ টোকা পরলো দরজায়।পূর্ণতার ঘাপটি মেরে থাকা চললনা আর।ওপাশ থেকে সেলিনা উদগ্রীব হয়ে ডাকছেন।সাথে কানে আসছে ধীরের কন্ঠ।পূর্ণতা দরজা বন্ধ করে থাকার মেয়ে নয়।ওতো ছোট বেলায় সারাক্ষণ আনাচে কানাচে ছোটাছুটি করত।সেলিনা ভাবছেন পূর্ণতা আবার অসুস্থ টসুস্থ হলো কীনা!উপায় না পেয়ে পূর্নতা দরজা খুলল।সঙ্গে সঙ্গে ধীর ধৈর্যহীন প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
‘কী রে পূর্না,দরজা খুলছিলিনা কেন?
ধীরের চোখেমুখে ভয়।পূর্ণতা হাসার চেষ্টা করে বলল
“ঘুমিয়ে পরেছিলাম ভাইয়া।
সেলিনা বললেন,
‘এটা কী ঘুমানোর সময় মা আমার?খাবিনা?চল সবাই বসে আছে।
পূর্ণতা অসহায় চোখে তাকাল।সবাই মানে ধ্রুবও?সে নড়ছেনা দেখে ধীর মায়ের সামনেই হাত টেনে নিয়ে চলল ওর।পেছনে সেলিনা মুচকি হাসলেন।ধীরের পাশে পূর্নতাকে কিন্তু মন্দ লাগেনা!

মেহবুব ও আছেন টেবিলে।মূলত লাঞ্চ টাইমে বাড়ি এসে খেয়ে যান উনি।অফিস কাছে হওয়ায় এই সুবিধে টুকু পাচ্ছেন।বাইরের খাবার এমনিতেও রুচিতে ধরেনা।ছেলেদুটোও তার মতন হয়েছে।পূর্ণতা দেখল সেই আসতে বাকি ছিল।বাকিদের খাওয়া তো শুরু হয়েছে এর মধ্যেই।ধীর তাকে এনে চেয়ার টেনে দিল।পূর্ণতার সামনে প্লেট, গ্লাস সব দিয়ে তারপর নিজে বসলো।খাবার বাড়তে নিলে সেলিনা হেসে বললেন,
‘সার্ভ করার জন্যে আমি আছি বাবা!তুই খা।
ধীর লজ্জ্বা পেল একটু।খাওয়ায় মন দিলো।মিশরা তীক্ষ্ণ চোখে দেখছিল ওদের।তার মন বলছে এই দুজনের মধ্যে কিছু তো চলছে।কি চলছে?প্রেম?

পূর্ণতা ধ্রুবর চেয়ারের আশেপাশেও নেই।একটু স্বস্তি মিলল তার।ধ্রুব আর জ্বালাতে পারবেনা।মোটামুটি খেলোও শান্তিতে।হাত ধুতে বেসিনে চলে গেল।ঠিক তখনই পাশে গিয়ে দাঁড়াল ধ্রুব।পূর্ণতা খেয়াল করেনি।ট্যাব ছেড়ে, হ্যান্ডওয়াশ মেখে কঁচলে হাত ধুচ্ছে সে।হঠাৎ কানের কাছে ধ্রুব এসে ডাকল,
” মায়াপরি!
ফিসফিসে আওয়াজে গা শিরশির করে উঠল পূর্নতার।চমকে পেছন ফিরল।ধ্রুবকে দেখে মুখটা একটুখানি হয়ে গেল।তাড়াহুড়ো করে ডায়নিং রুমের বাকিদের দেখল।।পূর্নতা তাকালে ধ্রুব ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ভয় পেয়েছ মায়াপরি?
পূর্ণতা ভয়ে পেয়েছে সত্যি।কিন্তু ধ্রুবর কাছে ধরা দেবে কেন?ভীত চেহারা সাহসি বানানোর চেষ্টা করে বলল,
‘না তো।
‘তাই?
‘হ্যা।
‘শিওর?
পূর্ণতার দৃঢ় কন্ঠ ‘হ্যা।
ধ্রুব পূর্ণতার দিক আরেকটু এগোতেই পূর্ণতা একদম বেসিনের সঙ্গে লেগে গেল।ধ্রুব পূর্ণতার সাথে পুরোপুরি মিশে দাঁড়াল। পূর্ণতা ভয়ে ভয়ে একবার ওকে দেখছে একবার ডায়নিং রুমের দিকে।
‘আপনি সরে দাঁড়ান।কেউ এসে পরবে।
“সরবনা।
পূর্ণতা চোখ বড় করে বলল
‘ কেন?কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হবে।খারাপ ভাববে।
” দেখুক।
পূর্ণতা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল
‘এমন কেন করছেন?
‘শাস্তির কথা ভুলে গেছ?বলেছিলাম না?একটা বড় পানিশমেন্ট তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে?
পূর্ণতা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
‘একটু দয়া করা যায়না?আমার সত্যি ভয় লাগছে।কেউ এসে দেখলে যাচ্ছেতাই কান্ড ঘটবে।

ধ্রুব নিরুদ্বেগ
‘তাতে আমার কী?শর্ত ভঙ্গ করার আগে, ভাইয়ার সামনে আমাকে ক্যাবলা বলার আগে মনে ছিলনা এসব?
“আর কখনও বলবনা।প্রমিস!
পূর্ণতা ঠোঁট ওল্টাল।ধ্রুব চোখ ছোট করে বলল,
‘তোমার প্রমিস দিয়ে আমি কি করব?
‘তাহলে?
‘আমি তোমাকে চুঁমু খাব এখন।
পূর্ণতার বুক ছ্যাত করে উঠল।
ধ্রুব ওর সারামুখে চোখ বোলাতে বোলাতে বলল
“কোথায় খাব?গালে?কপালে?নাকের ওপর?উম,নাকি ঠোঁ__
পূর্ণতা আর্তনাদ করে বলল,
” না।ছি!কিসব আজেবাজে বলছেন!
‘চুঁমুতো আমি খাবই মায়াপরি!জায়গা তুমি ঠিক করবে?নাকি আমি?
ঠিক আছে।আমিই চ্যুজ করছি
ধ্রুব ঠোঁট এগোতেই পূর্ণতা হাত দিয়ে চেহারা ঢেকে ফেলল।ওভাবেই জোরে-জোরে মাথা নেড়ে বলল,
‘আমি আপনার সব কথা শুনব এরপর থেকে।এরকম করবেন না।প্লিজ!
ওপাশ থেকে উত্তর এলোনা দেখে পূর্ণতা হাত সরাল।ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হাসছে।পূর্ণতা তাকালে ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ভয় পেলে?
পূর্ণতা মাথা নাড়ল। স্বীকার করল এবার।সে পেয়েছে ভয়।
তখন মিশরা আসছে এদিকটায়।ধ্রুব-পূর্নতা দুজনেই ওকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে দেখল।পূর্ণতা ঢোক গিলে ধ্রুবর দিক ফিরল। ধ্রুব এক ভয়ানক কান্ড ঘটাল সাথে সাথে।টুপ করে চুমু খেয়ে ফেলল পূর্ণতার গালে।পূর্ণতা হকচকাল।স্তব্ধ হয়ে তাকাল।মিশরা বেসিনের কাছে আসতেই ধ্রুব শীষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল।যেন এখানে কিছুই ঘটেনি।মিশরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকল কিছুক্ষন।এরা দুজন এতক্ষন এখানে কি করছিল?পূর্ণতাকে বলল,
‘সর।
বেসিন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল পূর্ণতা।মিশরা কী বলল শুনতেই পায়নি।মিশরা একটু জোরে বলল,
‘সরতে বলছি তো।সর।
পূর্ণতা নড়ে উঠল।ধ্রুবর যাওয়ার দিক চেয়েছিল সে।ধ্রুব টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে সিড়ি বেয়ে উঠছে। কয়েক ধাপ গিয়ে আবার ফিরে তাকাল। চোখাচোখি হতেই পূর্ণতা চোখ নামিয়ে ফেলল দ্রুত।মিশরা হাত ধুঁতে ধুঁতে তাকিয়ে দেখছে ওর হাবভাব।পূর্ণতা বুকে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলল পরপর।প্রচন্ড কাঁপছে। মিশরা কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে শুধাল,
‘কি হয়েছে?
পূর্ণতা ছোট করে বলল
‘কিছু হয়নি।মিশরার দৃষ্টি তখনও নিবদ্ধ।পূর্ণতা বাঁচার জন্যে তাড়াহুড়ো করে যেতে ধরতেই ওপাশ থেকে আসা ধীরের বুকের সঙ্গে ধাক্কা খেল।ধীর জায়গায় স্থির থাকতে পারলেও পূর্ণতা পরে যেতে ধরল।তৎপর হয়ে ওর কনুই ধরে ফেলল ধীর।
‘কিরে?পরে যাচ্ছিলি তো?
‘দেখিনি ভাইয়া।স্যরি!
‘তোর কি শরীর খারাপ লাগছে পূর্না?
ধীরের উদ্বীগ্ন স্বর।পূর্ণতা মাথা নেড়ে বলল,
‘না ঠিক আছি আমি।
পূর্ণতা চলে গেল। ধীরকে দেখেই মিশরা আবার হাতে হ্যান্ডওয়াশ ঢালল।ধীর কতক্ষন দাঁড়িয়ে রইল।অপেক্ষা করছে সে।মিশরার হলে সে হাত ধোবে।কিন্তু মিশরা ইচ্ছে করে নড়ছেনা।ধীরকে দাঁড় করিয়ে রাখতে বেশ মজা লাগছে।ভান করছে সে হাত ধুঁতে ভীষণ ব্যাস্ত।সাথে গুনগুন করে গানও গাইছে সে।যেন আশেপাশে কেউ নেই।
ধীর শেষে বিরক্ত হয়ে দাঁত পিষে বলল,
‘তোর মনে ময়লা জানতাম।হাতেও এত ময়লা যে এতবার ধুলেও যাচ্ছেনা?
মিশরা হতভম্ব হয়ে তাকাল।ধীর ওকে ঠেলে সরিয়ে দিল।পরপর ঝটকা খেল মিশরা।ধীর ট্যাব ছেড়ে বেসিনের আয়নার দিক চেয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
‘আমার সাথে ফাজলামো করতে আসবিনা।ফল খুব খারাপ হবে মিশু,এটা মনে রাখবি সব সময়।
_____
সারাটাদিন পূর্ণতা আর ধ্রুবর সামনে যেতে পারলনা।তার লজ্জ্বায় মরে যাওয়ার উপক্রম।আয়নার সামনে গিয়ে বারবার গালে হাত বোলাচ্ছে।ধ্রুব চুমু খেয়েছে সেই দুপুরে আর এখন রাত।অথচ স্পর্শটা জীবন্ত লাগছে যেন।পূর্ণতার সামনে আবার ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য।ধ্রুব তাকে চুমু খেয়েছে?ভাবতেই রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইছে শীতল স্রোত।সে রাতটা ওভাবেই কাটল।ধ্রুব মাঝখানে বেরিয়েছিল। সেই ফাঁকে রাতের খাবার আগেভাগে সেড়েছে পূর্ণতা।সেলিনাকে বলেছে শরীর খারাপ লাগছে ঘুমোবে।ধীর ও তাই আর বিরক্ত করতে গেলনা।পরেরদিন পূর্ণতা বেলা করে উঠেছে ঘুম থেকে।সকালের নাস্তা সেড়েই ভার্সিটি ছুটবে।মিশরা তখনও বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে।পূর্ণতা সিড়ি থেকে নেমে রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়াল।সেলিনা কাজ করছেন।রাহেলা অনেকগুলো আদা- রসুন,পিয়াজ কাটছে বসে বসে।বেনি মুছছে আসবাপত্র। পূর্ণতা গিয়ে ডাকল
‘মামুনি কি করছো?

সেলিনা তাকালেন।শুভ্র হেসে বললেন ‘ উঠেছিস?শরীর ঠিক আছে?
‘হ্যা।তুমি কি করছো?
‘কাল বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে।তাই আজকেই সব কাজ গুছিয়ে রাখছি।কাল যাতে দেরি না হয়।

‘কীসের অনুষ্ঠান মামুনি?

“ও তুইতো জানিস না।কাল ধ্রুব’র জন্মদিন।তোর মামা বিরাট আয়োজন করেছেন। প্রত্যেকবারই করেন।অনেক লোক আসবে।
পূর্ণতা ছোট করে বলল “ও
মনে মনে বলল,
‘কাল তাহলে ওনার জন্মদিন?
“ইয়েস মায়াপরী! কাল আমার জন্মদিন।মাই হ্যাপি বার্থডে!

পূর্ণতা চমকে তাকাল।পেছনে ধ্রুব দাঁড়িয়ে।পড়নে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের সঙ্গে সাদা টিশার্ট। অবাক হয়ে বলল,
“আপনি কি করে বুঝলেন আমি কি ভাবছিলাম?
ধ্রুব একিরকম ফিসফিস করে বলল,
” এটাইতো স্বাভাবিক। তুমি না বলতেই তোমার মনের কথা বুঝতে হবে আমায়।নাহলে দাম্পত্য জীবন সুখের হবে কী করে?
পূর্ণতা ভ্রু কোঁচকালো
‘কাদের দাম্পত্য জীবন?
‘কেন?আমাদের!
পূর্ণতা স্তম্ভিত।হঠাৎ গতকালকের কথা মনে পড়তেই লালচে হয়ে উঠল গাল দুটো।লজ্জ্বায় চোখ নামিয়ে পাশ কেটে যেতে ধরল।ধ্রুব পেছন থেকে বলল,
‘তা কি গিফট দিচ্ছ আমায়?
পূর্ণতা থামল।
পেছন ফিরে বুকের সাথে দুহাত গুঁজে বলল,
‘গিফট?কেন? গিফট কেন চাইছেন?কালকের দিনটার জন্যেই আমার কপালে দুর্ভোগ নামল এভাবে।তাহলে গিফট কেন দেব?
ধ্রুব এগিয়ে এল।মুখের সামনে ঝুঁকে বলল,
‘ইউ আর রং মায়াপরি!বরং কালকের দিনটার জন্যেই আমার মত হ্যান্ডসাম সুন্দর একটা ছেলেকে তুমি তোমার লাইফে পাচ্ছো।

পূর্ণতা মাথাটাকে পিছিয়ে নিয়ে বলল,
‘সব সময় এমন গায়ের ওপর পরে,ফিসফিস করে কথা বলেন কেন?
ধ্রুব মিটিমিটি হেসে বলল
‘আমার ইচ্ছে।তোমার অসুবিধে কী?
‘বিরাট অসুবিধে।আপনি এভাবে কথা বললে আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।ধুকপুক করে।কাঁপে।লাফায়।

ভাবুক পূর্ণতার সামনে তুড়ি বাজাল ধ্রুব।পূর্ণতা নড়ে ওঠে।ধ্রুব ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘কাল আমাকে কি গিফট দেবে সেটাই ভাবছো। তাইতো?
‘ঘোড়ার ডিম দেব।
পূর্ণতা ভেঙচি কেটে চলে গেল।
সেদিক চেয়ে ধ্রুব পকেটে হাত গুঁজে বলল,
‘আমার গিফটতো আমি নিজেই আদায় করে নেব মায়াপরি!
____
ধীর বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে।ঠিক তখন পূর্ণতার কন্ঠস্বর ভেসে এল দরজা হতে।
“ধীর ভাইয়া?
আওয়াজ শুনতেই ধীর তাড়াহুড়ো করে সিগারেট ফেলে দিল।রুমে এসে চটজলদি সারাগায়ে পারফিউম স্প্রে করে দরজা খুলল গিয়ে।পূর্ণতাকে দেখে
খুশি হয়ে বলল
‘আয়।আয় পূর্না।
পূর্ণতা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
‘কি করছিলে?

‘তেমন কিছু না।বোস।
পূর্ণতা বিছানায় বসল।রুমের চারপাশ চেয়ে বলল,
“তোমার রুমটা তো বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছ ভাইয়া।আগের থেকে অনেক চেঞ্জ।
“তোর ভালো লেগেছে??
‘হ্যা।খুব সুন্দর!
‘মনে হচ্ছেনা কোনো আসবাব চেঞ্জ করা দরকার?বা দেয়ালের কোনো পেইন্টিং সরানো দরকার?
‘না।সব কিছুইতো পার্ফেক্ট সাজিয়েছ তুমি।
ধীর প্রশান্ত শ্বাস ফেলে ভাবল
‘যাক!তাহলে আমাদের পছন্দ এক।এই রুম কিছু দিন পর আমাদের দুজনের হবে পূর্না।তোর ভালো লেগেছে মানে আর কোনো চিন্তা নেই।
আচ্ছা, পূর্ণার জন্যে যেটা কিনেছি, সেটা কি ওকে এখন দেব? ও যদি কিছু মনে করে?
পরমুহূর্তে ভাবল,
কি মনে করবে?ছোট বেলায় তো কত কিছু কিনে দিয়েছি।
‘কি ভাবছো?
‘হু?না কিছুনা।
ধীর একটু চুপ থেকে বলল ‘ পূর্না!তোর জন্যে একটা জিনিস কিনেছি আমি।
পূর্ণতা উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“অামার জন্যে?কি কিনেছো ভাইয়া?দেখাওনা।

পূর্ণতার উচ্ছ্বাস দেখে ধীর নিশ্চিন্ত হলো।পাশাপাশি নিজেকে কঠিন কিছু বকাঝকাও দিল।সব বিষয় নিয়ে কেন এত বেশি বোঝে সে?এইতো, পূর্ণতা কিছু মনে করলনা। উলটে মেয়েটা কত খুশি হয়েছে।
‘ওয়েট!আনছি।
আলমারি খুলে ধীর একটা প্যাকেট বের করল।সাইজ মোটামুটি।
পূর্ণতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘দ্যাখ পছন্দ হয় কিনা!
পূর্ণতা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে বলল
” কি আছে এতে?
‘খুলে দ্যাখ।
পূর্ণতা আস্তে ধীরে নরম হাতে র‍্যাপিং খুলল।বের হলো একটা কাগজের বাক্স।ঢাকনা সরাতেই খুশিতে লাফিয়ে উঠল পূর্ণতা।
‘এত গুলো চুড়ি আমার জন্যে?
ধীর পাশে বসে বলল,
‘হ্যা।সাইজ আন্দাজ করে কিনেছি।দ্যাখতো ঠিকঠাক হচ্ছে নাকি!
পূর্ণতা বাক্সটা কোলের ওপর রেখে কয়েকগোছা নীল চুড়ি হাতে তুলল।সারা চুড়িতে পাথর খচিত কারুকাজ। যেই মাত্র হাতে ভরবে ওমনি কেউ একজন ছো মেরে নিয়ে নিল এক প্রকার।পূর্ণতা-ধীর দুজনেই ভঁড়কে তাকাল।মিশরা চুড়িগোছা নিজের হাতে ভরে নেড়েচেড়ে দেখে বলল,
‘এগুলো তো ভারি সুন্দর!

ধীর রেগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।বলল,
“তুই চুড়িগুলো ওর হাত থেকে নিলি কেন?
মিশরা ধীরের চোখ দেখে ঘাবড়ে গেল।ভয়ানক রেগে গেছে ও।এক্ষুনি না ঠাস করে চড় লাগায়।পরিস্থিতি সামলাতে হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘আমিতো এমনিই পরলাম।
পরমুহূর্তে আহ্লাদি কন্ঠে বলল,
” কিন্তু ধীর ভাইয়া,তুমি আগে আমাকে এটা বলো,যে তুমি শুধুমাত্র পূর্নতার জন্যে চুড়ি কিনেছ?কেন?বাড়িতেতো আমিও আছি।আমার জন্যে আনলেনা কেন?আমাকে বুঝি ভালোবাসোনা তোমরা?
মিশরার ন্যাকা ন্যাকা কন্ঠে ধীরের রাগ পরে গেল।কিন্তু বলার মত উত্তর পাচ্ছেনা সে।গিফট শুধু পূর্ণতার জন্যে এনেছে।ভেবেছে পূর্ণতার হাতে দেবে, কেউ তো আর জানবেনা।কিন্তু মাঝখান থেকে এই মিশুটা এসে যাবে কে জানত!এখন আবার মাকে গিয়ে নালিশ করলে কি বিশ্রী হবেনা ব্যাপারটা? আমতা-আমতা করে বলল,

“না আসলে আমি ভাবছিলাম__
পূর্ণতা মাঝখান থেকে বলল
“এখানে তো অনেক আছে মিশু।এতগুলো চুড়ি কী ধীর ভাইয়া শুধু আমার জন্যে এনেছে নাকি?তোমার যেটা ভালো লাগে তুমি রাখো।
মিশরা বলল,
“ভালো লেগেছে তো।আর দেখ আমার হাতেও খুব সুন্দর মানিয়েছে।আমি বরং সব গুলোই নিয়ে নেই।
মিশরা পূর্ণতার কোলের ওপর থেকে চুড়ির বাক্স হাতে তুলল।ধীর কিছু বলতে ধরল,পূর্ণতা তার আগেই হেসে বলে দিল,
“আচ্ছা বেশ! তুমি সব গুলোই রেখে দাও।
মিশরা একবার ধীরের দিক চেয়ে মুচকি হাসল। চুড়ির বাক্স সাথে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল তারপর।
এপাশে এসে ক্রুর হেসে বলল,
” সবেতো শুরু।এরপর আরও কত কি হবে,তোমরা দুজন ভাবতেও পারছোনা।

মিশরা যেতেই ধীর চেঁতে বলল,
‘তুই ওকে সব কেন দিলি?কাকে জিজ্ঞেস করে দিলি?ওগুলো আমি তোর জন্যে এনেছি।
পূর্ণতা বোঝানোর ভঙিতে বলল,
” ভাইয়া,ও আর আমিতে কি তফাৎ বলোতো!দুজনেই তো তোমার কাছে এক।ও নেয়া মানেই আমি নেয়া।

‘আমার কাছে তোদের কি তফাৎ, সেটা তুই বুঝলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হতোনা।
ধীর লম্বা পায়ে রুম ত্যাগ করল।পূর্ণতার মনটাই খারাপ হয়ে গেল এখন।ধীর ভাইয়া নিশ্চয়ই রেগে গেছে।কি করে রাগ ভাঙাবে সে?
পূর্ণতা মুখ কালো করে বিছানায় বসে পরল আবার।ধ্রুব নিজের ঘরে যাচ্ছিল।হঠাৎ পূর্ণতাকে ধীরের রুমে দেখেই কদম থেমে গেল।ভেতরে এসে দেখল পুরো রুম খালি।শুধু পূর্ণতাই আছে।টেনে টেনে ডাকল,
“মায়া পরী! বরের রুম রেখে এখানে কি করছো?
পূর্ণতা ধ্রুবকে দেখে বলল,
” আপনি এখানেও চলে এসেছেন?
ধ্রুব এসেই বিছানায় শুয়ে পরল।
” আমি ছাড়া তোমার কাছে আর কে আসবে মায়াপরি?
পূর্ণতা লাফিয়ে দাঁড়াল।তার মেজাজ এমনিই খারাপ।বিরক্তি দেখিয়ে বলল,
‘সব সময় ফাজলামো ভালোলাগেনা।
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘আমার আশিকানা তোমার কাছে ফাজলামো মনে হচ্ছে মায়াপরি?এত হাল্কা ভাবে নেয়া কি ঠিক?
পূর্ণতা কোমড়ে দু-হাত দিয়ে বলল,
‘আপনি কি যাবেন?নাকি ধীর ভাইয়াকে ডাকব?
ধ্রুব নিরুৎসাহিত
‘ডাকো।সো হোয়াট?আমি কি ওকে ভয় ___
হঠাৎ হাতে বাধল একটা ভাঙা চুড়ি।তখন মিশরা টেনে নেয়ার সময় একটা পরে গেছিল,সেটারই অংশ।ধ্রুব ওটাকে চোখের সামনে ধরে বলল,
‘এটা কী?
পূর্ণতা বলল
“চুড়ি!
“সেটা আমিও জানি।কিন্তু ভাইয়ার রুমে চুড়ি কেন? গার্লফ্রেন্ড টার্ল্ফ্রেন্ড রুমে এনেছিলো নাকি?তুমি জানো কিছু?
ধ্রুবর সন্দেহী কন্ঠ।পূর্ণতা নাকমুখ কুঁচকে বলল,
“খালি বাজে কথা তাইনা?ধীর ভাইয়া ওরকম ছেলে?এগুলো তো উনি আমার জন্যে এনেছিলেন।
ধ্রুবর ভ্রু কুঞ্চন আরো গাঢ় হয়।
“তোমার জন্যে? কেন?তুমি চুড়ি পরতে ভালোবাসো?
‘সব মেয়েই চুড়ি পরতে ভালোবাসে।
ধ্রুব তৎক্ষনাৎ উঠে বসল,
” তাই?তার মানে সব মেয়েদের আর তোমার পছন্দ এক??
পূর্ণতা কাধ উঁচিয়ে বলল,
“ভিন্ন কেন হবে?
ধ্রুব ঠোঁট গোল করে বলল,
” ও….
আচ্ছা,তার মানে সব মেয়েদের তো আমাকেও পছন্দ,,তবে কি তোমারও আমাকে__
ধ্রুব দুষ্টু হেসে ভ্রু উঁচাল।পূর্ণতার বিরক্তি ডুবে গেল পানিতে।না চাইতেও লাল হলো গালদুটো।
ছুটে বেরিয়ে গেল সে।যেতে যেতে বলে গেল,
“আপনি একটা যা তা….
ধ্রুব বুকে হাত দিয়ে বিছানায় সটান শুয়ে পরল।হাঁসফাঁস করে বলল,
‘এভাবে লজ্জ্বা পেওনা মায়াপরি!এখানে ব্যাথা করে।যে কোনো মুহুর্তে এট্যাক-ফ্যাটাক করে বসব।
_____
নোরার আনন্দে মরে যাওয়ার যোগাড়। এবারের ফাগুন উৎসবে ধ্রুবর ডান্স পার্টনার হতে যাচ্ছে সে।খবরটা রিদ জানিয়েছে তাকে।নোরা বিশ্বাসই করতে পারলোনা।কথাটা সে স্বয়ং ধ্রুবর থেকেই শুনতে চায়।ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার থেকে ধ্রুবকে পছন্দ তার।প্রথমত ধ্রুবর মারডালা লুক,আর দ্বিতীয় ওর গান।দুটোতেই সুন্দরী নোরা কুপোকাত হয়ে পরল।এই নিয়ে ছয়,ছয়বার ওকে প্রোপোজ ও করেছে।কিন্তু ধ্রুব বরাবর হেসে সুন্দর করে বলেছে ‘ এসব বাদ দিয়ে পড়াশুনা করো নোরা।এটা প্রেম করার জায়গা নয়।
ধ্রুব বরাবর তাকে এড়িয়ে চলেছে।সেই ধ্রুব আজ তাকে ডান্স পার্টনার করতে চায়,এই কথা এত সহজে হজমের যোগ্য?
ধ্রুব দুটো থার্ড ইয়ারের ছেলের সাথে কথা বলছিল।কিছু একটা ইন্সট্রাকশন দিচ্ছিল ওদের।নোরা একদম ছুটে এসে থামল ওদের সামনে।দ্রুত আসায় হাপিয়ে গেছে।ধ্রুব ওকে দেখে ছেলেদুটোকে বলল,

‘তোমরা তাহলে যাও এখন।বাকিটা রিদ বুঝিয়ে দেবে।
ছেলেদুটো যেতেই নোরা ধড়ফড় প্রশ্ন ছুড়ল
” কেমন আছো ধ্রুব?
ধ্রুব মৃদূ হেসে বলল
‘ ভালো।তুমি?
‘আমি ভালো আছি।ইনফ্যাক্ট এখন তো আরো বেশি ভালো আছি।
ধ্রুব চুপ থেকে এদিক ওদিক তাকাল।পূর্নতার দিক অল্প সময় চেয়ে থাকায় মেয়েটা তার নাম দিয়েছে ক্যাবলাকান্ত।নোরা যেভাবে চেয়ে থাকে ধ্রুবর দিক,এটা দেখলে কী বলবে ও?
‘তুমি কি কিছু বলবে নোরা?
নোরা জোরে মাথা ঝাকিয়ে বলল
“হ্যা।রিদ বলল এবার ডান্স প্রোগ্রামে আমাকে পার্টনার করছো তুমি?

” হ্যা।তোমার অসুবিধে থাকলে না হয়__
নোরা ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বলল,
“না না আমার কোনো আপত্তি নেই।আমিতো সেই কবে থেকে তোমার পার্টনার হতে চাইছি।
ধ্রুব তাকাতেই মিনমিন করে বলল,
‘আই মিন ডান্স পার্টনার।
অবশেষে হতে পারব জেনে আমার যে কি খুশী লাগছে ধ্রুব।
ধ্রুব পকেটে হাত গুঁজে সোজাসাপটা বলল,
‘এত খুশি হয়োনা নোরা।হাফ টাইমে পার্টনার চেঞ্জ হবে।
‘কি?
‘হ্যা।প্রথম স্টেজে আমার সাথে উঠবে তুমি।এরপর দেড় মিনিটের মাথায় পার্টনার চেঞ্জ হবে।
নোরার মুখটা চুপসে গেল।
‘সেকেন্ড টাইমে তাহলে তোমার পার্টনার কে হবে?
ধ্রুব চোখ ছোট করে হেসে বলল,
‘দ্যাটস আ সিক্রেট!
______
রুপ, পূর্ণতা নরম ঘাসের ওপর বসেছে।রুপের মুখ শুকনো।পূর্ণতা গতকালকের মত অনেকবার প্রশ্ন করেও উত্তর পেলনা।শেষমেষ ক্লান্ত হয়ে চুপ করে গেল।তবে রুপের কিছু একটা হয়েছে সে নিশ্চিত।এখন না বললে কিভাবে বুঝবে সে?রুপের মনমরা চেহারা দেখতে একদম ভাল্লাগেনা।মেয়েটা সারাক্ষন বকবক করে।অথচ আজ দুটোদিন ধরে কেমন চুপচাপ।পূর্ণতা রুপের মনোযোগ ফেরাতে বলল,
‘কদিন পর পহেলা ফাল্গুন রুপ।কোনো প্ল্যান করেছিস?
রুপ ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
‘নারে!
‘সেকি কেন?।এবারতো আমাদের ভার্সিটিতে প্রথম প্রোগ্রাম এটা।এমন নিরামিষ বসে থাকব দুজনে?
রুপ বলল,
‘তুই নাহয় শাড়ি পর।সমস্যা কোথায়?
‘আমি?আমি একা শাড়ি পরব?প্রত্যেকবার আমরা দুজন ম্যাচিং করে সাজগোজ করি।অর্নামেন্টস থেকে শাড়ি সব কিছু এক হয়।তাহলে এবার আমি একা কেন?

‘আমার ভালো লাগছেনা পূর্ণতা!এসবে মন পাচ্ছিনা।
পূর্ণতা উঠে দাঁড়াল হঠাৎ। রুপ তাকাল,
‘কি হলো?
‘তুই আমার সাথে আর কখনও যোগাযোগ করিস না রুপ।আমাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ হবে আজ।
রুপ নিজেও দাঁড়িয়ে গেল।অবাক হয়ে বলল,
‘মানে?সামান্য সাজগোজের জন্যে___
“সামান্য সাজগোজ নয়।কথাটা বন্ধুত্বের গভীরতার।সেই ক্লাস সিক্স থেকে আমরা বন্ধু।শুধু বন্ধু নয়,আমরা বেস্টফ্রেন্ড। আমার এমন কোনো কথা নেই যা তুই জানিস না।কারন আমি তোকে বেস্টফ্রেন্ডই ভাবি।কিন্তু তুই?তুই কি আদৌ আমাকে বেস্টফ্রেন্ড ভাবিস?

রুপ ক্লান্ত কন্ঠে বলল
‘পূর্নতা কি বলছিস এসব?আমি কখন কোন কথাটা তোকে বলিনি?
‘তাই?সব বলেছিস?তাহলে গতকাল থেকে আমি যে লাগাতার প্রশ্ন করলাম তোর কি হয়েছে উত্তর দিয়েছিস তুই?
‘কিছু হয়__
পূর্ণতা আঙুল উঁচিয়ে শাসিয়ে বলল,
‘একদম মিথ্যে বলবিনা।তোর মুখ দেখে যদি আমি নাই বুঝতে পারলাম তাহলে আমার বন্ধুত্বে প্রশ্ন আছে।তুই বলতে না চাইলে বলিস না।কিন্তু আমি যে বললাম,আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হবে আজ,তাই হোক।আসছি।
পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে চলে যেতেই রুপ হাত টেনে ধরল।পূর্ণতা তাকানো মাত্রই জাপটে ধরল ওকে।হুহু করে কেঁদে উঠে বলল,
‘আমি খুব বাজে ভাবে ফেঁসে গেছি রে পূর্ণতা।আমার আর বাঁচার উপায় নেই।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here