ফাগুন_এলো_ বুঝি! (৩৪)

0
934

#ফাগুন_এলো_ বুঝি!
(৩৪)

দেখেছো কি ঝড়,কালবৈশাখি?
জীবন কেমন ওলট পালট করে দেয়!
প্রচন্ড তান্ড*ব নৃত্যে ধ্বং*স করে
সাজানো সংসার।
তাজা প্রান কে*ড়ে নেয়।
সেলিনার সাজানো সংসারে সত্যিই যেন কালবৈশাখি ঘনিয়ে এল।চোখের সামনে গুড়িয়ে দিচ্ছে সব।আদরের দুই সন্তান মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।তাও এক মেয়ের জন্যে।এর থেকে সুখের আর কি আছে?
সেলিনার হতবিহ্বল দৃষ্টি ধ্রুব,আর ধীরের দিকে।যে ভাইয়েরা ছিল একে অন্যের প্রান,আজ যেন তারাই কারন হচ্ছে সেই প্রাননা*শের।এও দেখার ছিল?এ-ও ছিল সম্ভব!

“তুই আমার আর পূর্নার মাঝে আসিস না ধ্রুব।ধীরের আওয়াজে ধ্যান ভাঙল সেলিনার।ধ্রুব পালটা জবাব দিল,
“তোর আর পূর্নতার মাঝে, এরকম কোনও শব্দ পৃথিবীতে এক্সিস্ট করেনা ভাইয়া।অযৌক্তিক কথাগুলো এবারতো ছাড়।
‘বাড়াবাড়ি করছিস ধ্রুব।
ধীরের উঁচু কন্ঠ।
ধ্রুবও চেঁচিয়ে উঠল,
‘বাড়াবাড়ি করছিস তুই।তাও অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে।বিন্দুমাত্র লজ্জ্বা নেই তোর মধ্যে?
ধীর কিড়মিড় করে বলল,
” মুখে লাগাম দিয়ে কথা বল,ধ্রুব!তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি তোর বড় ভাই।

“বড় ভাইয়ের মতন থাক তবে।ছোট ভাইয়ের বউ নিয়ে টানাটানি করছিস কেন?কেন প্রতিযোগিতায় নামছিস?

“প্রতিযোগিতা তুই করছিস।কতদিন হলো তুই পূর্না কে চিনিস?,এক মাস? দু মাস? বড় জোর ছ’মাস। কিন্তু আমি,আমি ওকে সাত বছর ধরে ভালবাসি। তখন তো ওর নাম টাও জানতিস না।তাহলে কিসের এতো জোর দেখাচ্ছিস তুই? বিয়ের? এক সাইন করেছিস বিয়ে হয়ে গেছে,আবার একটা সাইন করবি ব্যাস, বিয়ে ভেঙেও যাবে।

ধ্রুব ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
” তাই?তোর কাছে বিয়ের মানে এতোটা নগন্য? শুধু মাত্র খাতাকলমের সই দিয়ে একটা সম্পর্ককে পরিমাপ করিস তুই?
আর কি বললি, কত দিন আমি পূর্নতাকে চিনি?
হ্যা,মেনে নিলাম এক বছরও হয়নি আমি ওকে চিনেছি, ওকে ভালোবেসেছি।কিন্তু দিন-ক্ষনের থেকেও গুরুত্বপূর্ন’ আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।

বড়রা স্তব্ধ হয়ে হয়ে একজন আরেকজনের মুখ দেখছেন।আশরাফ প্রচন্ড অবাক কন্ঠে বললেন,
“তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো মানে?পূর্নতা তোমাকে ভালোবাসত ধ্রুব?ধীরকে নয়?
পূর্ণতাই আগ বাড়িয়ে জবাব দিল,
‘না বাবা।আমি কোনওদিন ধীর ভাইয়াকে ভালোবাসিনি।ওনাকে নিয়ে তো এসব দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।
‘তাহলে তুই যে সেদিন আমাকে বললি তোর কোনও আপত্তি নেই!
সেলিনার কন্ঠেও বিস্ময়।
‘আমি ভুল বুঝেছিলাম মামুনি।ভেবেছিলাম,তুমি ধ্রুবর কথা বলছো।
মেহবুব মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
” এত বড় ভুল বোঝাবুঝি? তুই আমাদের কিছু জানালিনা কেন ধ্রুব?তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস জানলে আমি কোনওদিন ধীরের সঙ্গে বিয়ে দিতাম না পূর্নতার।
ধ্রুব ধীরের দিক চেয়ে থেকেই বলল,
‘সেটাইত ভুল করে ফেললাম বাবা।যার জন্যে সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিতে চাইলাম,সেই আজ আমার বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াল।

ধীর হাত তালিয়ে দিয়ে ওঠে।
‘বা!বাহ!বাহ!
সবাই দেখছি এই ধ্রুবর সাপোর্টার।কেন?আমিওতো পূর্নাকে ভালোবাসি।ধ্রুব ওকে কেন পাবে তাহলে?কেন?আমার এতদিনের ভালোবাসার কী কোনও দাম নেই?
পূর্ণতা মুখের ওপর বলল,
“না নেই।যে মানুষ কোনও কিছু বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করেনা,যে মানুষ স্বার্থপরের মত শুধু নিজের কথা ভাবে,যে কথায় কথায় মেয়েদের গায়ে হাত ওঠায়,তার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার।
ধীর রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাল।ধ্রুব পূর্নতার সামনে গিয়ে ওকে আড়াল করে দাঁড়াল।ধীরের লাল চোখে চোখ রেখে বলল,
” তুই আসলে পূর্নতাকে কোনওদিন ভালোইবাসিসনি ভাইয়া। ভালোবাসলে অন্তত ওর ভালো থাকা নিয়ে ভাবতিস।জোরজবরদস্তি করে ওকে কেড়ে নিতে চাইতিস না।আর না পারতিস নির্লজ্জ্বের মত কথা বলতে।
ধীর চিৎকার করে উঠল ” ধ্রুব!
আবারও বলছি,মুখ সামলে কথা বল।নাহলে__
‘নাহলে কী?
“নাহলে আমি ভুলে যাবো তুই আমার ভাই।
ধীর যত্র দুহাত দিয়ে ধ্রুবর কলার চেপে ধরে বলল।ধ্রুবও উত্তেজিত হয়ে বলল
“সেতো তুই অনেক আগেই ভুলে গেছিস।নাহলে নিজের ভাইকে মারতে কেউ গুন্ডা ভাড়া করে পাঠাতে পারেনা।
ফের এক বজ্রপাত ঘটল যেন।সকলে বিমুঢ় হয়ে গেল ধ্রুবর কথায় শুনতেই।
‘তোমাকে মারতে লোক পাঠিয়েছে মানে?
মেহবুব থেমে থেমে শুধালেন,
ধ্রুব বাবা-মায়ের দিক করুন চোখে তাকাল।এই কথাটা শুনলে তাদের কী অবস্থা হবে সে জানে।বলতেও তো চায়নি।রাগে বেরিয়ে গেছে।
” কী হলো ধ্রুব?ধীর তোকে মারতে চেয়েছে,মানে কী একথার?
সেলিনা উদগ্রীব হয়ে পরলেন।ধ্রুব, ধীরের দিক তাকাল।ধীর হাঁসফাঁস করছে।ঢোক গিলে জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট চাটছে।
ধ্রুব যেই মাত্র বলতে ধরল,
‘কক্সবাজারে___
ধীর ক্রুদ্ধ হয়ে বলল,
‘ধ্রুব!সবার কাছে আমাকে খারাপ বানাতে চাইছিস?
ধীর রেগে ধ্রুবর চোয়াল বরাবর ঘু*ষি মারল।চমকে উঠল সকলে।ধ্রুব কয়েক পা পিছিয়ে গেল।ভঁড়কে গেছে সে।পূর্নতা ছুটে ধ্রুবর কাছে যেতে নিলেই ধীর খপ করে হাত চেপে ধরল।
‘তুই ওর কাছে যাবিনা।
মেহবুব গর্জন দিলেন,
“ধীর,সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছ তুমি।আমি কিন্তু__
ধীর কটমট করে বলল,
‘আপনি চুপ থাকুন মেহবুব খান।আজ এইসব কিছুর জন্যে দ্বায়ী আপনি।সেদিন আমাকে মিশরার সঙ্গে বিয়ে না দিলে আজ এসব হতোইনা।
তাই যা হচ্ছে চুপচাপ দেখতে থাকুন।
ধীর আঙুল তুলে বলল।মেহবুব হতবাক হয়ে গেলেন ছেলের ব্যবহার দেখে।মিশরা মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে।না কিছু বলছে,না কিছু করছে।একটা সেকেন্ড বিশ্রাম পাচ্ছেনা তার চোখদুটো।পূর্নতাকে কাঁদিয়ে এক সময় সুখী হওয়া মেয়েটা আজ নিজের দূর্ভোগ দেখে যেন কথা বলতেই ভুলে বসল।সায়রা শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে ক্ষনে ক্ষনে মেয়ের দিক তাকাচ্ছেন।মেয়ের এই দৃষ্টি সহ্য হচ্ছেনা তার।স্ত্রীর সামনে স্বামী অন্য মেয়েকে নিয়ে__কোন মেয়েই বা সইতে পারবে এসব?তার মেয়েটা কী করে পারছে?কী করে?
পূর্নতা রেগেমেগে ধীরের হাত ঝাড়া মারল,
“কি ভাবছো তুমি, এসব অশান্তি করে আমাকে পাবে?কান খুলে শুনে রাখ ধীর ভাইয়া,আমি কোনও দিন তোমার হবনা।আমি ধ্রুবর ছিলাম ওরই আছি।সারাজীবন থাকব।
“আবার তুই এই একই কথা বলছিস?
ধীর ক্ষুব্ধতায় ফের হাত ওঠাল।এর আগেই ধ্রুব পূর্নতাকে টেনে নিজের কাছে এনে ধীরের মুখোমুখি দাঁড়াল।শান্ত অথচ কড়া কন্ঠে বলল,
“বারবার একি ভুল করোনা ভাইয়া,লাস্ট ও*য়ার্নিং দিচ্ছি।
” কি করবি তুই? এই, কি করবি তুই? ধ্রুবর বুকের কাছে ঠেলতে লাগল ধীর।
বল কী করবি?
পূর্না আমার।শুধু আমার।শুনেছিস তু__
কথা শেষ ও হয়নি এর আগেই ধ্রুবর শক্ত হাতের মা*র পরল ধীরের নাকের ওপর।দ্বিতীয় দফায় হকচকাল সবাই।ধীরের আন্দাজেই ছিলনা ধ্রুব গায়ে হা*ত ওঠাবে।ভারসাম্য রাখতে পারলনা,ছিট*কে পরল মেঝের ওপর।নাকের পাশ কে*টে গলগল করে র*ক্ত গড়াল।সেলিনা ভ*য়ে মুখ চেপে ধরলেন।সায়রাকে খা*মছে আকড়ে ধরলেন দুহাতে।
‘ধীর ভাইয়া!
মিশরা উদ্বিগ্ন হয়ে ধীরের কাছে গেল।বিনিময়ে পেল ধীরের সোজাসাপ্টা প্রত্যাখান।ধীর ধা*ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল তাকে।মিশরা পরে যেতে ধরলে আশরাফ আকড়ে ধরলেন।ধীর নাকের র*ক্ত মুছে এনে চোখের সামনে ধরল।চোয়াল মটমট করে উঠল।রাগে ফুঁসে ধ্রুবর দিক এগিয়ে গেল।শুরু হলো ঘা*ত-প্রতিঘা*ত,দুই ভাইয়ের যু*দ্ধ।কেউ কাউকে ছাড় দিলনা।আ*ঘাতের পর আ*ঘাত করাই যেন একমাত্র কাজ।দুজনেই ভুলে বসল তাদের র*ক্তের সম্পর্কের কথা।
মেহবুব,আশরাফ ত্রস্ত পায়ে ছুটে গেলেন।দুজন গিয়ে দুইভাইয়ের পেছন থেকে চেপে ধরে সরাতে চেষ্টা করলেন একে অপরের থেকে।বেগ পুহিয়ে সফল হলেন।আশরাফ ধ্রুবকে ধরে পিছিয়ে গেলেন।শান্ত করতে চাইলেন ওকে।কিন্তু মেহবুব ধীরকে ধ্রুবর থেকে ছাড়িয়েই ঠাস করে চড় মারলেন গালে।ধীর গালে হাত দিয়ে তাকাতেও পারলনা,পরপর আবার এক চড় বসালেন।
রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন,
“জানোয়ার!তুই এত খারাপ!আমার বাড়িটাকে জাহান্নাম বানাতে চাইছিস?বেয়াদব!
যদি বুঝতাম,আজ এই দিন দেখতে হবে তাহলে জন্মের সাথে সাথেই তোর মুখে বিষ ঢেলে দিতাম।এক্ষুনি বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। বেরিয়ে যা।
সেলিনা কাঁদতে কাঁদতে বসে পরলেন।মিশরা আর্তনাদ করে বলল,
‘না মামা তুমি__
মেহবুব সাবধানী বানি ছুড়লেন,
” খবরদার মিশরা!আর একটা কথাও বলবিনা এই কুলাঙ্গারের হয়ে।
ধীর তখনও নিচের দিক চেয়ে ফুঁসছে।
মেহবুব ফের চিৎকার দিলেন,
‘কী হলো?বেরিয়ে যা বলছি।
ধীর বাবার দিক তাকাল।পরপর হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ধ্রুবর দিকে।গায়ের এলোমেলো শার্ট ঠিক করতে করতে সদর দরজা হতে বেরিয়ে গেল।
পেছন থেকে সায়রা,আশরাফ ডাকলেন, শুনলনা ও।ধীর আড়াল হতেই মিশরার চোখে অন্ধকার নেমে এল।চারপাশ ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে থাকল।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ঢলে পরল ফ্লোরে।আরেক দফা আঁতকে উঠল খান বাড়ির প্রত্যেকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here