ফাগুন_ এলো _বুঝি! (২৬)

0
972

#ফাগুন_ এলো _বুঝি!
(২৬)

ধ্রুবর শোকে নিস্তব্ধ পূর্ণতা।চোখের সামনে ধীর আর মিশরার বিয়ে হলো অথচ তার মস্তিষ্ক তখনও নিশ্চল।তার শুকনো চেহারা দেখে সবাই ভাবল, বিয়ে ভাঙার দুঃখ হয়ত!তারা যদি জানত,পূর্ণতার এক সমুদ্র দুঃখের প্রতিটি বিন্দু শুধুমাত্র ধ্রুবকে ঘিরে।
ধীর মিশরার বিয়ের সময় মেহবুব এসে পূর্নতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন,
‘তুই চিন্তা করিস না মা,তোর গায়ে কলঙ্ক লাগতে আমি দেবনা।
তখনও পূর্ণতা নিরুত্তর।মিশরা গড়গড় করে কবুল বললেও ধীর দাঁত খিচে বসেছিল।কবুল বলেছে সময় নিয়ে।মিশরার প্রতি রাগে এখনও তার শরীরের প্রতিটি লোম ফোঁসফোঁস করছে।
বিয়ে বাড়ির সমস্ত অতিথিরা ফেরত গিয়েছেন।এই কান্ডের পর আশরাফ,মেহবুব সম্মিলিত ভাবে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন তাদের কাছে।ধীর মিশরার বিয়ের পর সবাই এক এক করে বাসা ত্যাগ করলেন। খানিকক্ষন আগেও রমরমে মেতে থাকা বাড়িটা এখন কোলাহলশূন্য,শব্দহীন।

পূর্ণতার চোখের জল শুকিয়ে গেছে। আজ দশটা দিন একটা সেকেন্ড না কেঁদে পার করেনি।ধ্রুবর থেকে সেই প্রথম আঘাত পাওয়ার পরে শুরু হয়েছিল।আর শেষই হচ্ছেনা। অথচ তাও মনের কোথাও একটা বিশ্বাস ছিল ধ্রুব কিছু একটা করবে।বিয়ে ভাঙবে ও।হয়নি।উলটে সে প্রতিনিয়ত তার ভালোবাসা নিয়ে মজা করেছে।আজ ও উপহাস করল।আচ্ছা,সারা বিয়েতে ধ্রুবকে একবারও কেন দেখলনা,কোথায় সে?তারতো দাঁড়িয়ে থেকে দেখা প্রয়োজন,কী করে পূর্ণতার হৃদয় ভাঙছে।

ভাবুক পূর্ণতা চমকে উঠল মিশরার হঠাৎ ডাকে।মিশরার পড়নে সালোয়ার- কামিজ।বিয়ের সময় পরেছিল।প্রথম বার এই সাবলীল পোশাকে নজরকাড়া লাগছে ওকে।পূর্ণতা তাকাল চোখ তুলে।পূর্ণতার ফ্যাকাশে চোখমুখ দেখে মিশরা বুক ভরে শ্বাস নিল।আনন্দ উপচে পরল কানায় কানায়।ক্রুর হেসে বলল,
‘কষ্ট হচ্ছে পূর্ণতা?
পূর্ণতা কিছু বললনা।মিশরা পূর্ণতার পাশে বসল।আফসোসের ভান করে বলল,
‘তোর জন্যে আমার খুব মায়া হচ্ছে জানিস!যাকে ভালবাসলি তাকে পেলিনা।তোর চোখের সামনে সে অন্য কারো হয়ে গেল।বলা যায় একরকম তোর মুখ থেকে থালা কেড়ে নেয়ার মতন ঘটলো ব্যাপারটা।
এখন কী করবি তুই?

পূর্ণতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ভাঙা কন্ঠে বলল,
‘ কি আর করব!ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
‘মামা বোধ হয় তোর জন্যে পাত্র খুঁজছেন।যে কাউকে পেলেই তার গলায় তোকে ঝুলিয়ে দেবেন।বাবাও কিন্তু তাই চাইছেন।
মিশরার কন্ঠে বিদ্রুপের আঁচ পেয়েও পূর্ণতা নিশ্চুপ।মনে মনে আওড়াল,
‘আমার জীবনটাইতো একটা প্রহসন!

‘তুই এখানে কী করছিস?
পূর্ণতা,মিশরা এক যোগে দরজার দিক তাকাল।সায়রা ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এলেন।মিশরাকে শুধালেন,
‘তুই এখানে কেন?
‘কেন?আসতে পারিনা? এটাত আমাদের বাড়ি,আমি যেখানে ইচ্ছে যেতে পারি।
‘না।এটা আর তোমার বাড়ি নেই।তোমার বাড়ি এখন তোমার স্বামীর বাড়ি।
মিশরা মুখ ব্যাঁকালো।তীব্র অনিহা নিয়ে বলল,
‘স্বামী মাই ফুট!
সায়রা চোখ গরম করলেন ‘ মিশরা!
মিশরা ঠোঁট ওল্টায়,
“মম তুমি আমার সাথে ইদানীং এরকম করছো কেন?ধমকাচ্ছ,বকা দিচ্ছ।হয়েছে কী তোমার?
মিশরার কন্ঠে অভিমান।সায়রা স্পষ্ট বললেন,
‘তোকে আরো অনেক কিছু করা উচিত।তুই যা করেছিস!
মিশরা বুঝতে না পেরে একবার পূর্ণতার দিক তাকাল।পূর্ণতাও প্রশ্ন নিয়ে চেয়ে।
‘কী করেছি আমি?
‘সেসব বলার সময় এখন নয়।
সায়রা পূর্ণতার দিক ফিরলেন।চেহারার কাঠিন্যভাব সঙ্গে সঙ্গে মুছে যেতে মিশরা স্পষ্ট দেখল।
সায়রা হেসে নরম গলায় বললেন,
‘কাজী এসে গেছে,চল।
পূর্ণতা অবাক হয়ে বলল
‘কার সাথে বিয়ে হচ্ছে আমার?
‘গেলেই বুঝবি।আয়।
সায়রার ঠোঁটে জুড়ে হাসির ফোয়ারা।পূর্ণতা নেমে দাঁড়াল।ভেতরটা আছড়ে পরে কাঁদছে।কাকে না কাকে বিয়ে করতে হবে এখন!এও ছিল কপালে?
সব কিছুর জন্যে আবারও ধ্রুবকেই দ্বায়ী মনে হলো পূর্ণতার।লোকটা তার জীবনে না এলে জীবনটা এত বিষময় হতোনা।সায়রা পূর্ণতাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।মিশরা ঠোঁট কামড়ে ভাবতে বসল,
‘কাজী এসেছে,কিন্তু পাত্র কে?আমিতো এতক্ষন নিচেই ছিলাম।কোনো ছেলেকে তো দেখলাম না।
দ্রুত পায়ে সায়রাদের পেছন পেছন বের হলো মিশরা।পূর্ণতার কার সঙ্গে বিয়ে হবে?পরমুহূর্তে ভাবল
” যার সঙ্গে ইচ্ছে হোক।ধীর ভাইয়ার চোখের সামনে হবে এতেই আমি খুশি!

পূর্ণতা নিচে নেমে আসতেই সবার প্রথমে চোখ পড়ল ধ্রুবকে।ধ্রুব সোফায় বসে।পাশে মেহবুব।অন্য সোফায় আশরাফ,সেলিনা।ধীর নেই কোথাও।
পূর্ণতা বিস্মিত হলো ধ্রুবকে দেখে।এত কিছু ঘটে গেল লোকটাকে দেখেনি।হঠাৎ কোত্থেকে এল?
পূর্ণতা তাকাতেই ধ্রুবর চকচকে চেহারা আরো ঝলমলায়।চোখ জুড়ে আনন্দ,কিছু পাওয়ার আনন্দ স্পষ্ট। পূর্ণতার রাগে আগুন ধরে গেল গায়ে।তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর এই লোকের কী খুশি!পূর্ণতা চোখ সরিয়ে নিল।সায়রা পূর্ণতাকে সাথে এনে ধ্রুবর পাশেই বসালেন।মিশরার কোঁচকানো ভ্রু সাথে সাথে শিথিল হলো।চোখ দুটো কপাল ছুঁলো।এর মানে ধ্রুব ভাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে পূর্ণতার? ও ওয়াও!
মিশরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে ধীরকে খুঁজতে শুরু করল।
‘ধীর ভাইয়া কোথায় তুমি?এখন এখানে থাকা যে খুব দরকার তোমার।
মেহবুব কাজীকে বললেন বিয়ে পড়ানো শুরু করতে।পূর্নতার তখনও সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।কাজীর মুখে পাত্রের জায়গায় ধ্রুবর নাম শুনতেই চকিতে ধ্রুবর দিক তাকাল সে।ধ্রুবও তাকিয়েছে তখন।চোখাচোখি হতেই ধ্রুব মিষ্টি করে হাসল।পরক্ষনে বাচ্চাদের মত মুখ করে ঠোঁট নেড়ে বোঝাল
‘স্যরি!
শান্ত পূর্ণতার রাগ, ক্ষোভ উত্থলে উঠল তৎক্ষনাৎ।কীসের স্যরি?
রেগে দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে।কাজীর কথা থেমে যায়।সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে তাকাল।আশরাফ শুধালেন,
‘কী হয়েছে মা?
পূর্ণতা অনতিবিলম্বে ঘোষণা দিল,
‘আমি ওনাকে বিয়ে করবনা বাবা।
বলতে গিয়ে গলা কাঁপল পূর্ণতার।ধ্রুবর মুখ শুকিয়ে গেল।অপরাধির মত নামিয়ে নিল মাথা।বড়রা একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন।মেহবুব নম্র কন্ঠে বললেন,
‘ধ্রুব ভালো ছেলে মা।নিজের ছেলে বলে বলছিনা,ও তোকে সুখে রাখবে।
‘আপনার ছেলেই আমার যত দুঃখের কারন।
পূর্ণতার মনের কথা মুখ অব্দি এলোনা।সেলিনা উঠে পূর্ণতার কাছে গেলেন।
‘আমি জানি পূর্ণতা,তোর মনের মধ্যে কী চলছে!কিন্তু জীবন একটাই।তোর সুন্দর জীবনটা নষ্ট হোক আমরা কেউ চাইনা।ধ্রুবকে তুই ততটা ভালো চিনিস না,যতটা আমরা ওকে চিনি।ও সত্যিই ভীষণ ভালো আর নরম মনের।বিয়ের পর তোকে কোনও অভিযোগের সুযোগ ও দেবেনা। মিলিয়ে নিস আমার কথা।

পূর্ণতা ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।
‘আমি তোমাদের কী করে বোঝাব মামুনি,তোমার এই ছেলেই সব নষ্টের মূল।এখন দয়া করে আমাকে বিয়ে করতে এসছেন।নিশ্চয়ই মামার কথা ফেলতে পারবেনা বলে।নাহলে__
নিশ্চুপ পূর্ণতাকে গভীর চোখে দেখছে ধ্রুব।পূর্ণতার ভেতরে কী হচ্ছে সব যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।পূর্ণতার এরকম আচরন একদম স্বাভাবিক।সে যা করেছে!
আজ ভাগ্য সঙ্গ দিলো বিধায় মায়াপরিকে পাচ্ছে সে,নাহলে দুহাত তুলে সেতো আত্মসমর্পণ করেছিল।মুক্ত করে দিয়েছিল তার ভালোবাসার পাখিটাকে।
মেহবুব ও উঠে এলেন এবার।পূর্ণতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর গাল ধরে বললেন,
‘বুড়ো মামার ওপর ভরসা নেই তোর?
পূর্ণতা তাকাল।চোখ ভর্তি টলটলে জল।এক ফোঁটা গড়িয়ে পরতে গেলে মেহবুব যত্র মুছে দিলেন।
‘তোর দুঃখ আজ এখানেই শেষ হবে রে মা!কথা দিচ্ছি আমি।একটু বিশ্বাস রাখ শুধু।

পূর্ণতা মেহবুবের বুকে আছড়ে পরল।মেহবুব জড়িয়ে নিলেন একহাতে।হাউমাউ করে কেঁদে উঠল পূর্ণতা।মিশরা ব্যাতীত সকলের চোখে চিকচিকে জল।ধ্রুব সন্তর্পনে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে কার্নিশ মুছে নিল,যাতে সবার মধ্যে অশ্রু কনা গড়িয়ে না পরে।

সবাই মিলে দফায় দফায় পূর্ণতাকে বোঝাল।পূর্ণতা শান্ত হলো।কাজী সাহেব ফের বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।কবুল বলতে এক দন্ড সময় নিলোনা ধ্রুব।সাথে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করল,
‘আর কোনও দিন তোমাকে কাঁদাবোনা মায়াপরি।ভালোবাসার জালে এমন শক্ত করে বাঁধব,তুমি চাইলেও ছাড়াতে পারবেনা।সুখ এনে লুটিয়ে দেব তোমার পায়ে।তোমার খুশির জন্যে বিলিয়ে দেব নিজের সর্বস্ব!

পূর্ণতা নাক টেনে টেনে কবুল বলল।ঠিক সেই সময় ঘরে ঢুকল ধীর।পূর্ণতার ধ্রুবর সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে দেখে হার্টবিট থেমে গেল।দেয়ালের সঙ্গে ঠেকে গেল পিঠ।
অস্পষ্ট কন্ঠে আওড়াল,
‘এ হতে পারেনা।কিছুতেই না।
মিশরাই আগে লক্ষ্য করেছে ধীরকে।ওকে দেখতেই হাসি চওড়া হলো তার।
‘হোয়্যাট আ টাইমিং!উফ!
ধীরের চোখ বেয়ে পানি পরতে দেখে মিশরা স্বর্গসুখ অনুভব করল।ধীরের বুক জ্বলে যাচ্ছে পূর্নতা-ধ্রুবকে পাশাপাশি দেখে।যেভাবে এসেছিল সেভাবেই বেরিয়ে গেল।এই দৃশ্য তার জন্যে নয়।যাওয়ার আগে রুষ্ট চোখে দেখে নিল মিশরাকে।তার দিকেই চেয়ে হাসছে।ধীরের সমস্ত ক্ষোভ গিয়ে বর্তালো মিশরার ওপর। এই মেয়েকে দুনিয়ার মধ্যেই জাহান্নাম চিনিয়ে ছাড়বে সে!
______
সম্পূর্ণ ঘর ফুল দিয়ে স্বাজানো।পুরোটা রজনীগন্ধার সংমিশ্রন।এটা ধ্রুবর ঘর।সাজানো হয়েছে কিছুক্ষন আগে।ধ্রুব নিজে অর্ডার দিয়ে সব রজনীগন্ধা আনিয়েছে।মায়াপরির পছন্দ যে!
দুই ছেলের বউ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মেহবুব।সাথে আশরাফ আর সায়রাও এসছেন।যেহেতু দুটো বিয়েই ছিল অযাচিত,অপ্রত্যাশিত। মেয়েদের মনের অবস্থা ভালো নেই ভেবেই মেহবুব জোরাজুরি করে আশরাফ আর সায়রাকে সাথে আনলেন।
ধ্রুবর ঘরের মত ধীরের রুমেও বাসর সাজানো হয়েছে।
দুই বোনকে রেখে আসা হয়েছে যার যার স্বামীর ঘরে।পূর্ণতা পা গুছিয়ে বসে আছে।পড়নে টুকটুকে বেনারসি।সায়রা পড়িয়ে দিয়েছেন।মিশরাকেও পরিয়েছেন।মিশরা সহজে পরতে চায়নি।সায়রার বাজখাই ধমকে গাইগুই করতে করতে রাজি হয়েছে।
পূর্ণতার ভেতর উত্থাল -পাতাল চলছে,সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে।এই বিয়েতে ধ্রুবর প্রতি তার ভালোবাসা রইলেও ধ্রুবতো ভালোবেসে বিয়ে করেনি।করেছে পরিবারের জোরাজুরিতে। বোঁকা নয় পূর্ণতা,যে এই সামান্য বিষয়টা বুঝবেনা।
নাহলে ধ্রুব তো নিজের মুখে বলেছিল,
তার কোনও যোগ্যতা নেই ধ্রুবর পাশে দাঁড়ানোর।বলেছিল সে একটা ঘরকূনো মেয়ে।আর সেই মেয়েটাই ধ্রুবর বউ হলো আজ,ধ্রুবর জন্যে এর থেকে নির্মম ভাগ্য কী হতে পারে!
দরজা খোলার শব্দে নড়েচড়ে উঠল পূর্ণতা।কাঁপা চোখ ঈষৎ তুলে দেখল এক জোড়া পা।
____
ঘরে মাত্র প্রবেশ করল ধীর।আসতেই চায়নি।সেলিনা এক প্রকার জোরজবরদস্তি করে ঢোকালেন।ধীরের রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে।প্রত্যেকটি শিরা দপদপ করছে।
সোফার দিকে চোখ পরতেই নাকমুখ কুঁচকে গেল।শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছে মিশরা।পড়নে স্লিভ লেস টিশার্ট,থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।মুখের মধ্যে চুইংগাম।চিবোচ্ছে আর ব্যাস্ত হাতে আঙুল চালাচ্ছে স্ক্রিনে।ধীরের বুক মুচড়ে উঠল কষ্টে।ছলছল চোখে সাজানো বিছানার দিক তাকাল।ঠিক এইখানে পূর্ণতার বসে থাকার কথা ছিল।সে আসবে।পূর্ণতার কাছে গিয়ে ওর থুতনি ধরে বলবে
“আমার বউ,আমার পূর্না।খুব সুন্দর তুই!
পূর্ণতা লজ্জ্বায় কুটিকুটি হয়ে মুখ লোকাবে তার বুকে।রাতভোর চলবে ভালোবাসাবাসি।ধীর চোখ খিঁচে বুজে ফেলল।কিচ্ছু হয়নি।কিচ্ছুনা।সব এই রাক্ষসী,ডায়নি মেয়েটার জন্যে।ধীরের চোয়াল শক্ত হলো।কপালের রগ ফুলেফেঁপে উঠল।
ত্রস্ত পায়ে গিয়েই মিশরার কনুই চেপে বলল
‘ওঠ!
আচমকা ঘটনায় মিশরা চমকে গেছিল।ধীর তাকে টেনে দাঁড় করিয়েছে। মিশরা বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ধীর ভাইয়া কী করছো?গেমস খেলছি আমি।

“আমার লাইফটা হেল করে দিয়ে তুই গেমস খেলছিস?
ফোনটা ছিনিয়ে নিয়েই ফ্লোরে আছাড় মারল ধীর।মিশরা আর্তনাদ করে উঠল,
‘ও মাই গড!আমার ফোন!
রেগে ধীরের দিক ফিরে বলল,
‘কী করলে এটা?জানো এটার দাম কত?
ধীর মিশরার বাহু চেপে ধরল।একরকম খাঁমচে ধরল জায়গাটুকুন।মিশরা ব্যাথায় মুখ কোঁচকাল,ধীর চিল্লিয়ে বলল,
‘কেনো করলি?বল কেনো করলি আমার সাথে এরকম?উত্তর দে____

মিশরা ঝাড়া মেরে হাতদুটো সরাল ধীরের।কানের মধ্যে আঙুল নাড়তে নাড়তে বলল,
‘কানটা ফেটে গেল।উফ!আস্তে কথা বলতে পারোনা?

ধীর দাঁত কপাটি পিষে বলল,
” একদম ঢং করবিনা।যা জিজ্ঞেস করেছি সোজাসুজি তার উত্তর দে আমায়।তোর যদি এতই প্রেম ছিল আমার প্রতি, এতই শখ ছিল আমাকে বিয়ে করার তবে এরকম একটা নোংরা, বাজে নাটক করে কেন ফাঁসালি আমাকে?কেন সবার সামনে আমার চরিত্রের দিকে আঙুল ওঠালি?কেন?

মিশরা চোখ পিটপিট করে বলল,
‘প্রেম?তোমার প্রতি?শখ?তোমাকে বিয়ে করার?তোমাকে?
তাৎক্ষণিক অট্টহাসিতে ফেঁটে পরল মিশরা।হাসতে হাসতে বলল
‘ও গড!কী শোনালে আমায়?আমার নাকি ওর প্রতি প্রেম?হাউ ফানি!
‘তাহলে এসবের মানে কী ছিল?
ধীর চিবোনো কন্ঠ।
মিশরা খুব কষ্টে হাসি থামাল।চোখের কার্নিশে জল জমেছে হাসতে- হাসতে।তর্জনী দিয়ে মুছে ধীরের দিক তাকাল।হাসি হাসি মুখটা মুহুর্তেই ক্রুর বানিয়ে বলল,
‘প্রতিশোধ নিয়েছি।প্রতিশোধ!
ধীর বুঝলনা।অবাক কন্ঠে বলল,
‘কীসের প্রতিশোধ?
মিশরা হেলেদুলে এসে বিছানায় আয়েশ করে বসল।বলতে শুরু করল,
“সেই ছোট্টবেলা থেকে দেখে আসছি,সব্বাই আমাকে ছেড়ে পূর্ণতাকে ভালোবাসে,আদর করে।এমন কি ওর জন্যেই আমি কক্ষনও বাবার ভালোবাসা পাইনি।বাবা সব সময় ওকে নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন অথচ আমার দিকে ফিরেও তাকাননি।এমনকি ওর মায়ের জন্যেই আজ অব্ধি বাবার কাছে আমার মম স্ত্রীর অধিকার অব্ধি পায়নি।বুঝলাম,পূর্নতা বাবার নিজের মেয়ে।তাই ভালোবাসাটাও ওর প্রতি বেশি হবে।কিন্তু এই বাড়িতে?এই বাড়ির সবাই কে হয় ওর?পূর্ণতাই বা কে হয় তোমাদের?আমার মামা,আমার মামুনি অথচ তাদের চোখের মনি সেই পূর্ণতা।
সবার মুখে একটা নাম,” পূর্ণতা “।অথচ কে ও?আমার নিজের বোন?না।আমার সৎ বোন? তাওতো নয়।ও আমার সৎ বাবার মেয়ে।কিন্তু আমাকে রেখে ওর প্রতি সবার দরদ ভালোবাসা একেবারে উতলে পরে।সবার এক গান,
‘মেয়েটার মা নেই।
আরে আমার ও তো বাবা নেই।কই,এরকম ভালোবাসা তো আমাকে দেয়নি তারা।
তারপর তুমিও যোগ হলে।পূর্ণতার প্রতি তোমার অগাধ ভালোবাসা,অগাধ স্নেহ।যার ছিটেফোঁটা ছিলনা আমার প্রতি।উলটে ওই মেয়েটার জন্যে আমার গায়ে হাত অব্দি তুলেছো।মনে আছে?সে’বার আমি পূর্ণতাকে মেরেছিলাম বলে তুমি আমার এই গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিয়েছিলে?মনে পড়ছে ধীর ভাইয়া?
আমি সেইদিন থেকে তোমাকে ঘৃনা করি।সহ্যই হতোনা তোমাকে।দিনের পর দিন ওর জন্যে তুমি আমাকে ধমকেছ,কথা শুনিয়েছ,অপমান করেছ।বিনিময়ে বাড়িয়ে দিয়েছ তোমাদের দুজনের প্রতি আমার রাগ,আমার জেদ,আমার ক্ষোভটাকে।
তারপর কিছু বছর তো যোগাযোগ ছিলনা।কিন্তু যেদিন থেকে আমরা এ বাড়িতে পা রাখলাম,আমি সেদিন থেকে লক্ষ্য করছিলাম তোমাকে।
তোমার চাল-চলন, হাবভাব,পূর্ণতার প্রতি তোমার ছুঁকছুঁক স্বভাব দেখেই আমিই বুঝে গেলাম যে তুমি পূর্ণতাকে ভালোবাসো।কিন্তু শিওর ছিলামনা যে পূর্ণতাও তোমাকে ভালোবাসে কীনা!তাও হলাম,যেদিন সিড়ির গোড়ায় তোমাদের প্রেম লীলা দেখেছি।তার আগে অবশ্য শুনলাম মামা মামুনি পূর্ণতার বিয়ে তোমার সাথে দেবে ঠিক করছেন।সাথে মামুনির দৃঢ় বিশ্বাস,পূর্ণতাও তোমাকে পছন্দ করে।সেদিন আমার মাথায় একটা প্ল্যান এলো।এক ঢিলে দুই পাখি মারার প্ল্যান।জানো সেটা কী?তোমাদের বিয়ে আটকানো।
তোমাদের দুজনার ওপরে আমার এত্ত বেশিই রাগ ছিল যে তোমাদের এক হয়ে সুখে সংসার করতে কিভাবে দেই আমি?পৃথীবিতে সব থেকে কষ্টের কি বলোতো ধীর ভাইয়া?
“ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়া।তাকে পেয়েও হারানো।
আর ঠিক সেই কষ্টটাই তোমাদের দুজনকে আমি দিতে চেয়েছি।ইনফ্যাক্ট দিয়েও দিলাম।তোমাদের হবে হবে বিয়েটাকে আটকাতে নাহয় নিজের চরিত্রে একটু দাগ লাগাতে হলো।তাতে কী?আফটার অল আ’ম সাকসেসফুল!পূর্ণতার থেকে তোমাকে যাস্ট তুড়ি বাজিয়ে কেড়ে আনলাম।ও কিচ্ছু করতে পারলনা।শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল।তবে আমার কিন্তু মাথাতেও আসেনি মামা ধ্রুব ভাইয়ার সঙ্গে ওর বিয়ে দেবেন।বলতে গেলে এই বিষয়টা সোনায় সোহাগা হয়েছে।
এখন থেকে একই বাড়িতে তুমি আর পূর্ণতা থাকবে।কিন্তু পূর্ণতার পরিচয় হবে তোমার ছোট ভাইয়ের বউ
তোমার পরিচয় হবে ওর বোনের স্বামী।
চোখের সামনে দুজন দুজন কে দেখে দগ্ধে দগ্ধে মরবে।কেউ কারো কাছে যেতে পারবেনা।ছটফট করবে সারাজীবন। ভাবতেই কি সুখ লাগছে আমার!আহ!শান্তি!এতটা আনন্দ,এতটা খুশি আমি আমার হ্যোল লাইফে হইনি।
মিশরা একটু থামল।ধীরের থম ধরে থাকা মুখের দিক চেয়ে বলল
তবে,পূর্ণতার কি হবে আমি জানিনা।
But Adnan khan dhir, you’re finished !
আমাকে বিয়ে করে তোমার জীবন শেষ।আমার কাছে তো কখনওই স্বামীর অধিকার পাচ্ছোনা তুমি।চোখের সামনে এরকম সুন্দরী স্ত্রী দেখবে অথচ তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা।না পারবে পূর্ণতার কাছে যেতে,না পারবে আমার কাছে আসতে।একদিকে ভালোবাসার মানুষ টাও হারালে অন্যদিকে যাকে বিয়ে করবে তার কাছেও ভালোবাসা পাবেনা।
ইশশ!কি দুঃখ! সত্যিই তোমার কথা ভেবেই আমার খুব খারাপ লাগছে।চুঁ চুঁ!কী হবে এখন ধীর ভাইয়া?কি করবে তুমি?

ক্রোধে ধীরের হাত মুঠো হয়ে এল।দাঁতের সঙ্গে দাঁত লেগে গেল।মটমট করে উঠল গাল।সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপতে থাকল।
মিশরার মিটিমিটি হাসতে থাকা চেহারায় ক্ষুব্ধ চোখ নিক্ষেপ করে বলল,
” আমার জীবন নাহয় শেষ মিশু,কিন্তু তোর কী হবে?
মিশরার হাসিটা দপ করে নিভে গেল,
‘মানে?

ধীর বাঁকা হাসল।শব্দ হলোনা হাসিতে।আগুন চোখে চেয়ে বলল,
শুধু আমার একার নয়,তোর জীবনও শেষ হবে।এখন এই মুহুর্ত থেকে।আর সেটার জন্যে আমিই যথেস্ট।কি যেন বলেছিলি সবার সামনে?আমি তোকে রে*প করতে চেয়েছি।তাইনা?
রে*প হওয়ার খুব ইচ্ছে তোর?খুব ইচ্ছে?বেশ!
রে*পের মজা আজ তোকে খুব ভালোকরে বোঝাব।যাতে ভবিষ্যতে রে*প শব্দটা শুনলেও ভয়ে কেঁ*পে উঠিস তুই।কেঁ*পে উঠবে তোর শরীর।

মিশরার কলিজা ছ*লাৎ করে উঠল ভ*য়ে।
‘ককি ককরতে চাইছো তুমি ধীর ভাইয়া?
গলা কেঁ*পে এল মিশরার।সেই সঙ্গে কাঁ*পছে বুক।ধীর উত্তর না করে পেছন ফিরে দরজার ছিটকিনি তুলে দিল।আত্মা শুকিয়ে এল মিশরার।রক্ত হিম হয়ে গেল।ধীর এগোতে নিলেই মিশরা ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়াল।পেছাতে পেছাতে আঙুল তুলে বলল,
‘খখবরদার ধধীর ভাইয়া,এগোবেনা বলছি।আমি কিন্তু চিৎ*কার করব।
ধীর নিরুদ্বেগ,
‘কর।দেখি এবার কে কে আসে!
মিশরা সত্যিই চেঁচানোর জন্যে হা করল।এর আগেই ধীর ছুটে এসে মুখ চেপে ধরল ওর।কিড়মিড় করে বলল,
”Mishra jannat,
You’re finish today ,not me…

বিছানায় মিশরাকে ছু*ড়ে ফেলল ধীর।ফ্লোরে লুটিয়ে থাকা মিশরার বেনারসি তুলে একে একে ওর হাত পা সব বে*ধে দিল।মুখে গু*জে দিল রুমাল।মিশরার সমস্ত শরীর অ*বশ হয়ে গেল।মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে শুরু কর।ঢের বুঝল,আজ সত্যিই সে শে*ষ!
_____
দরজা লাগিয়ে চুপ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো ধ্রুব।পূর্ণতার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস নেই।কোন মুখেই বা বলবে? যা কিছু ঘটলো তাতে সেই দোষী।দিনের পর দিন মেয়েটাকে কাঁদিয়েছে।রেখেছে মানসিক অশান্তিতে।কিন্তু সেও কী সুখে ছিল খুব?একিরকম যন্ত্রনা,দুঃখ নিজেও পেয়েছে।মেয়েদের মত শোকে,দুঃখে হাত পা ছড়িয়ে বদ্ধ রুমে কেঁদেছে।এই ঘরের প্রতিটি দেয়াল তার সাক্ষী।সাক্ষী ঠান্ডা মেঝেটাও।
ধ্রুব কে ঠাঁয় দাঁড়ানো দেখে পূর্নতা নিজেই বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়।ধ্রুব’র কাছে গিয়ে সালাম করার জন্যে ঝুঁকতেই ব্যাস্ত হাতে বাঁধা দিল ধ্রুব।
‘কী করছো?
পূর্ণতা সোজা হয়ে দাঁড়াল।খুব কাছ থেকে ধ্রুবর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলে গেল।সেই প্রথম দিনের মত।ধ্রুব আজও মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে।এতদিনের নির্জীব চোখে আজ উপচে পরছে ভালোবাসা।পূর্ণতা চোখ সরিয়ে অন্যদিক তাকাল।
“শুনেছি বাসর ঘরে স্বামীকে সালাম করতে হয়।
বিয়েটা যেভাবেই হোক আপনি তো আমার স্বামী।
পূর্ণতার কন্ঠ শীতল।ধ্রুবর প্রথম বার নার্ভাস লাগছে ওর সাথে কথা বলতে।ঠোঁট জ্বিভ দিয়ে চেটে বলতে গেল,

‘আসলে___
পূর্ণতা থামিয়ে দিল,
” থাক! আপনাকে কিচ্ছু বলতে হবেনা।আমি জানি,আপনি নিজ ইচ্ছায় এই বিয়ে করেননি।করবেন- ই বা কি করে?আফনান খান ধ্রুব কী একটা ঘরকূনো,অযোগ্য মেয়েকে বউ করতে চাইবে?তার পেছনে শতশত পূর্ণতারা লাইন ধরে আছে।নোরার মত সুন্দরি যে তালিকায় প্রথম।সেই লোক আমাকে যেচে বিয়ে করতে চাইবে এ ভাবাও ভুল।এমন লোক তো শুধু আমাদের অনুভূতি নিয়ে খেলতেই পারে।ভালোবাসতে শিখিয়ে মাঝপথে হাত ছেড়ে দিতে পারে।তাইনা?

ধ্রুব অসহায় কন্ঠে বলল,
‘বিশ্বাস করো মায়াপ___
পূর্ণতা দুহাত জড়ো করে বলল,
‘দয়া করে এই নামটায় আমাকে আপনি ডাকবেননা।গা ঘিনঘিন করছে এই ডাক শুনলে।আর রইল বাকি
বিশ্বাসের কথা? আপনার মুখে ঐ শব্দটা মানাচ্ছেনা।আমি যদি আপনার পাশে দাঁড়ানোর জন্যে অযোগ্য হই,আপনি তবে বিশ্বাসের অযোগ্য।

‘মায়াপরি!একবার আমার কথাটা শোনো প্লিজ!আমি ইচ্ছে করে__

‘প্লিজ ধ্রুব ভাইয়া।আপনি কিছু বলবেন না।যখন মরিয়া ছিলাম আপনার মুখে দুটো কথা শোনার তখনতো বলেননি।তাই আজ আর নয়।আমাদের বিয়ে হয়েছে ঠিকই,কিন্তু এই বিয়েতে ভালোবাসা নেই।তাই,তাই আপনি আপনার মত থাকুন।আমি আমার মতো থাকব।আমার দিক থেকে আপনার কোনও সমস্যা তৈরি হবেনা।ঘর আপনার, আমি এক কোনায় পরে থাকব।
আর আপনি চাইলে আপনার বান্ধুবি নোরার সাথেও আপনার ঘনিষ্ঠতা চালিয়ে যেতে পারবেন।আমার তাতেও সমস্যা নেই।যাকে ধরে রাখা যায়না,তাকে ছেড়ে দেয়াই সমিচীন।
পূর্ণতার কাটকাট জবাব।টইটম্বুর চোখ নিয়ে বারান্দায় গেল সে।পেছনে রেখে গেল আহত ধ্রুবকে।কিন্তু ধ্রুব হতাশ হলোনা।উলটে দৃঢ় কন্ঠে আওড়াল,
‘ আমি জানি মায়াপরী,এসব কথা তুমি আমার ওপর তোমার অভিমান করে বলেছ।কিন্তু তোমার এই অভিমান আমি দীর্ঘস্থায়ী হতে দেবনা।তার জন্যে যা করতে হয় সব করব।সব।
____
বিছানায় লেপ্টে আছে মিশরা।বিবস্ত্র সে।ব্যা*থায় শ্বাস নিতেও পারছেনা।ধীর তার হিং*স্রতার সবটুকু ঢেলে দিয়েছে আজ।মিশরা গো*ঙাতে গো*ঙাতে কোনও রকমে উঠল।চাদরটা গায়ে পেচিয়ে খুব ক*ষ্টে হেটে গেল ওয়াশরুম অব্দি।
ধীর তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে।বেসিনের আয়নায় নিজেকে দেখেই আঁতকে উঠল মিশরা।সারা মুখে ছো*প ছোপ দাগ।ঠোঁট কে*টে র*ক্ত পরছে।ধীর তাকে আ*চড়ে,কা*মড়ে নিঃশ্বেষ করে দিয়েছে।মিশরা দুহাতে মুখ চেপে হুহু করে কেঁ*দে উঠল।সেকেন্ড পার হতেই
শক্ত হাতে টোকা পরল দরজায়।সাথে ভেসে এল ধীরের স্বর,
” আমার ওয়াশরুমে এতো সময় থাকা যাবেনা।
মিশরা কিড়মিড় করতে করতে শাওয়ার অন করল।গায়ে পানি পরতেই ক্ষত সব ছলকে উঠল ব্যাথায়।
সব শেষে যখন বের হলো ধীর তখন সোফায় বসে। সেন্টার টেবিলে পা উঠিয়ে রাখা।উদাম গায়ে শুধুমাত্র ট্রাউজার পরে।মিশরা ধীরকে দেখতেই, রাগে, ঘৃনায় চোখ ফেরাল।ধীর উঠে দাঁড়াল। মিশরার মুখোমুখি গিয়ে পকেটে হাত গুঁজে কঠিন কন্ঠে বলল,
– আশা করি তুই বুঝে গিয়েছিস,আমি ঠিক কি কি করতে পারি!বা আমাকে ঘাটালে কি ঘটতে পারে!আমি ভালোর ভালো খারাপের খুব খারাপ।আর যেই রুপ টা আজ তোকে দেখালাম।
মিশরা তেঁতে বলল,
“তোমার লজ্জ্বা করছেনা?একটা মেয়ের সাথে নোংরামো করে আবার জোর গলায় কথা বলছো?
ধীর তাচ্ছিল্য হাসল
‘আমার লজ্জ্বা নিয়ে বলছিস?তাহলে তুইতো আমার থেকেও বড় নির্লজ্জ্ব! আমাকে ব্লেম করার আগে নিজের দিকে তাকা।সন্মান না হারিয়েই ঢোল পিটিয়েছিলি তোর সব শেষ।কিভাবে পারলি? আমিতো শুনেছিলাম মেয়েদের আর যাইহোক একটু আকটু লজ্জ্বা থাকে।তুইতো মেয়ে নোস,তুই হলি পাড়ার বে**দের মত যাদের ইজ্জত নিয়ে কোনও মাথাব্যথা থাকেনা।
মিশরা চেঁতে গেল’
‘মুখ সামলে কথা বল ধীর ভাইয়া।
সঙ্গে সঙ্গে ধীর গাল চে*পে ধরল।মিশরা ক*কিয়ে উঠল ব্যা*থায়।
ধীর ক্রুদ্ধ কন্ঠে আওড়াল
“আমাকে ফাসিয়ে বিয়ে করে তুই বড্ড বেশি ভুল করে ফেললি রে মিশু।সারাজীবন মা*শুল দিবি এখন।
তোর কাজের ফলাফল কত ভয়া*নক হবে তুই প্রত্যেকটা রাত টের পাবি।আজ থেকে তোর প্রতিটা রাত কাটবে বিভীষিকাময়।প্রতিনিয়ত তোকে শেখাব রে*প কী?রে*প কাকে বলে?
না পারবি কাউকে বলতে, আর না পারবি সহ্য করতে।ধীর মিশরার গাল ছেড়ে দিয়ে সরে এল।কাবার্ড থেকে টিশার্ট বের করে পরতে পরতে বেরিয়ে গেল।মিশরা দেয়াল ঘেঁষে বসে পরল মেঝেতে।হাটুতে মুখ গুঁজে ভেঙে পরল কান্নায়।নিজের জালে নিজেই ফাঁসল শেষমেষ!

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here