#ফাগুন_ এলো_ বুঝি!
(২১)
ভালোবাসা মানুষকে আঘাত করেনা,
কিন্তু ভালোবাসার মানুষটা যদি ভুল কেউ হয়,আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয় হৃদয়ের প্রত্যেকটি অংশ।যন্ত্রনা হয়ে ওঠে সঙ্গী।
কাউকে প্রচণ্ড ভালোবাসার অন্য নাম দূর্বলতা।নিজেকে তখন সব থেকে তুচ্ছ,সামান্য মনে হয়।
ঠিক যেমন হচ্ছে পূর্ণতার।অল্প দিনেই ধ্রুবর প্রেমে মজে,আবার সেই ভালোবাসা না পাওয়ায় নিজেকে মনে হচ্ছে ক্ষুদ্র কোন জীব।ধ্রুব আজ এইভাবে অপমান করল?আঘাত করল তার অনুভূতিকে?তাহলে এতগুলো দিন ধ্রুবর ভালোবাসা কী সত্যিই দেখানো ছিল?টাইম পাস!
পূর্ণতা বোজা কন্ঠে বেশ কয়েকবার”টাইম পাস”শব্দটা আওড়াল।মস্তিষ্ক বলছে ধ্রুব বদলে গিয়েছে।কিন্তু মন মানছেনা।বড় বেহায়া কীনা!মানবে কেন?
পূর্ণতা বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে।ধ্রুবর নিক্ষিপ্ত প্রত্যেকটা বাক্য বুকটা এফোড় ওফোড় করে দিচ্ছে।দুঃখে ডুবে থাকা মন নিয়ে দুপুরের খাওয়াটাও হয়নি।ধীর তখন গাড়িতে তুলে দিয়েছিল।সাথে আসতেও চেয়েছে।পূর্ণতা শক্ত কন্ঠে মানা করেছে।বিয়ের কথা ওঠা থেকে ধীরকে দেখলেই অস্বস্তি হচ্ছে পূর্ণতার।ধীর তাকে ছোট থেকে ভালোবাসবে,এতো দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি।
সায়রা নিজেকে পাল্টাতে চাইছেন।বলেনা,চৈতন্য হওয়া?ওরকম কিছুই হয়ত ঘটেছে হঠাৎ।সেদিন খান বাড়িতে সেলিনা সায়রাকে অনেক কিছু বলেছেন।বুঝিয়েছেন।সায়রা শুধু চুপ করে শুনেছে।সেলিনার অনেক কথার সারমর্ম ছিল একটাই,
পূর্ণতাকে একবার ভালোবেসে দ্যাখো সায়রা,আশরাফ যেচে ভালোবাসবেন তোমাকে।ফিরে আসা থেকে এই বাক্যটাই মাথায় ঘুরছিল সায়রার।সত্যিই কি পূর্ণতাকে ভালোবাসলে আশরাফ তাকে মেনে নেবে?স্বামীর ভালোবাসা পেতে কোন নারী না চায়?সায়রাও খুব করে চান,আশরাফ তাকে ভালোবাসুক।এত বছরে যা সম্ভব হয়নি,মৃত্যুর আগে অন্তত স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে যাক।আর এতে পূর্ণতা কেন?দরকার পরলে তার গোটা শত্রু সমাজ কে সে কাছে টানবে।আপন করবে।তবে একটা ব্যাপার সায়রা খেয়াল করেছেন,পূর্নতার সঙ্গে ভালো ব্যাবহার করলে আশরাফের আচরন ও ভালো হয়।এই যেমন আজ,কী সুন্দর অফিস থেকে ফিরে পূর্ণতার বিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করছিল।
ভাবুক সায়রা নিজের ঘরে যাওয়ার সময় চোখ পরল পূর্ণতার ঘরের দিকে।গুনগুন শব্দ আসছে ভেতর থেকে।দরজা চাপানো।পূর্ণতা কী ফিরেছে?কখন এলো ও?শব্দই বা কীসের?সায়রা হাল্কা করে দরজা ঠেললেন।বিছানায় শুয়ে ফুপিয়ে কান্নারত পূর্ণতাকে দেখে অবাক হলেন খুব।সেতো বকেনি।আশরাফ মেয়েকে কোনো দিন একটা ফুলের টোকাও দেননি।তবে কি মিশরা কিছু বলেছে?
সায়রা নিশব্দে এগোলেন পূর্ণতার দিকে।
হঠাৎ গায়ের ওপর একটা ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকাল পূর্ণতা।সায়রাকে দেখেই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে চোখ মুছল।ধড়ফড় করে উঠে বসে বলল,
” ছোটমা তুমি?
সায়রা খুব শান্ত কন্ঠে বললেন,
‘কাঁদছিস যে?কেউ কিছু বলেছে?
পূর্ণতা ছোট করে বলল “না।
এই না তেই যেন শত শত অভিযোগ ঝরে পরল।
সায়রার ওষ্ঠে খেলে গেল তাচ্ছিল্যের হাসি।নিজের প্রতি।
” লুকোচ্ছিস?লুকাবিই তো।আসলে আমার মত মানুষের থেকে লুকোনোই উচিত!
পূর্ণতা উদ্বেগ নিয়ে বলল,
‘ছোটমা আমি__
“এই বিয়েতে তোর মত নেই?
আচমকা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সায়রা।পূর্নতার কথাটুকুন সম্পূর্ণ হলোনা।নিরব, নির্জীব হয়ে পরল সাথে সাথে।
পূর্ণতা উদাসীন দৃষ্টি দেয়ালের ওপর রাখল। তার মানস্পটে ভাসছে ধ্রুবর রুষ্ট চোখ,কঠিন চোয়াল,ছুড়ে দেয়া কিহু অনাকাঙ্ক্ষিত বিদঘুটে বাক্য।
‘আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।তোমার কোনো যোগ্যতা নেই আমার পাশে দাঁড়ানোর।
কথাগুলো মনে পড়তেই পূর্ণতা চোখ বুজে ঢোক গিলল। মুখ শক্ত করে বলল,
” আছে।
সায়রা সন্দেহী কন্ঠে বললেন,
“তবে কাদঁছিস কেন?
পূর্ণতা সময় নিয়ে বলল,
‘এ বাড়ি ছেড়ে যাব তাই।
সায়রা হেসে ফেললেন।নিরব হাসি।পূর্ণতা অপ্রস্তুত হয়ে পরল হাসিটায়।মাথা নামিয়ে নিল সে।সায়রা পূর্ণতার থুতনি উঁচুতে ধরে বললেন,
“জানি আমি তোর সৎ মা।কখনও তোর জন্যে কিচ্ছু করিনি।তাও যদি তোর মনে হয় কোনও কাজে কারো সাহায্য দরকার তবে আমার কাছেই আসিস।সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমি।
পূর্ণতা সায়রার দিক ফ্যালফ্যালে চোখে চেয়ে থাকল।কথাগুলো কানে ঢুকলোনা বিস্ময়ের তোপে।ছোট মা এইভাবে কথা বলছে?তাও আমার সাথে?
আশরাফ আস্তে-ধীরে দরজা থেকে সরে এলেন।স্বস্তির নিঃশ্বাসে ওঠানামা করল বুক।এতক্ষন পূর্ণতাদের সমস্ত কথা আঁড়াল হতে শুনেছে।আশরাফ নিশ্চিন্ত মনে আঁওড়ালেন,
“যাক! পূর্ণতার তবে এই বিয়েতে মত আছে।তার মানে যা ভেবেছিলাম তা নয়।তখন মেয়েটা ওভাবে বেরিয়ে গেল,এসে চুপচাপ ঘরে ঢুকল মনমরা হয়ে আমিতো চিন্তায় পরে গেছিলাম।ধীরের মত ছেলে,ওরকম পরিবার ই আমার মেয়েটার জন্যে উপযুক্ত।ভাবি ওকে মায়ের মতন আগলে রাখবেন।
____
ধ্রুব বারান্দার দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে।লম্বা পা দুটো সামনে মেলে রাখা।রিদ বসেছে তার পাশেই।বাড়িটা রিদদের।ধ্রুব এসেছে অনেকক্ষন।যখন ফোন করে বলল
“আসছি তোদের বাসায়” রিদ অবাক হয়েছিল অনেক।ধ্রুব কারন ছাড়া তাদের বাড়ি এসেছে কীনা মনে নেই।এমনিতে জোর করেও আনা যায়নি ছেলেটাকে।আজ তবে কী ঘটলো?
ধ্রুব ঘরে ঢুকেই দরজা লাগাতে বলল। রিদ দরজা লাগানো মাত্রই প্রশ্ন করল,
‘তোর কাছে ওয়াইন আছে?
রিদের চোখ ফেঁটে প্রায় বেরিয়ে আসবে। ধ্রুব আজ অব্দি কখনও সিগারেট খায়নি,সে ওয়াইনের খোঁজ করছে?ভালো করে ধ্রুবর দিক তাকাতেই দেখল ধ্রুবকে ঠিক লাগছেনা।অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে।চোখমুখ রক্তলাল।পরশু শেষ দেখা হয়েছিল ওর সাথে।তখনওতো সব ঠিক ছিল?দুদিনে চেহারার এমন হাল হলো কেন ওর?
রিদকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বলল,
” ওয়াইন আছে কি না বল!সময় নষ্ট করিস না আমার।তুই না প্রায়ই বাড়িতে বসে খাস,আমাকে বলেছিলি।কোথায় রেখেছিস?
রিদ মোটা কন্ঠে বলল,
‘মদ খাবি কেন?কী হয়েছে?
‘থাকলে দে।
‘আগে আমাকে বলতে হবে হয়েছে কী?পূর্ণতার সঙ্গে ঝগড়া করেছিস?
‘পূর্নতার’ নাম শুনতেই ধ্রুবর শুকনো মুখটা আরো এক ধাপ শুকিয়ে গেল।চোখের পাতাদুটো কেঁপে উঠল কেমন।রিদ ঠিক লক্ষ্য করল।ধ্রুব এলোমেলো দৃষ্টি আশেপাশে ফেলে বলল,
‘ওর সাথে কী হবে?
‘তার মানে নিশ্চয়ই ওর সাথে কিছু হয়েছে।কী হয়েছে আমাকে বল।এমন কী ঘটলো যার জন্যে ধ্রুব তুই মদ চাইছিস!
ধ্রুবর জীবনে এমন কিছু ঘটবে আর রিদ জানবেনা?তাহলে কী দরকার এই নাম মাত্র বন্ধুত্বের?
ধ্রুব নিশ্চল চোখে তাকাল।ভাঙা কন্ঠে বলল,
“আমার সব শেষ হয়ে গেছে রে রিদ!
সেই থেকে একভাবে ধ্রুব মদ্যপান করছে।প্রথম ঢোকে তীব্র বিতৃষ্ণায় মুখ কুঁচকে ফেলেছিল।কিন্তু তাও থামেনি।লোকমুখে অনেক শুনেছে,নেশা করলে কষ্ট ভোলা যায়।এসব তারই ছোট্ট ছোট্ট পন্থা।
রিদের চেহারায় অন্ধকার।প্রিয় বন্ধুর এই হাল? চোখের সামনে থেকে কী করে মানবে?সেতো কিছুতেই রাজি হয়নি মদ বের করে দিতে।ধ্রুব অধৈর্য হয়ে নিজেই খুঁজে নিয়েছে।
রিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বোতল ধরে টান দিল,
‘ধ্রুব থাম এবার।অনেক খেয়েছিস।
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে তাকাল,মদ্যক কন্ঠে আওড়াল,
‘বিরক্ত করিস না রিদ।ঘরে যা তুই।
‘ধ্রুব, আন্টি জানলে খুব কষ্ট পাবে!
ধ্রুব কাচের চকচকে বোতলে ফের চুমুক বসাতে গেল।রিদের কথায় থেমে গিয়ে বলল,
“তোর আন্টি কিছু জানবেইনা।এই যে আমার মায়াপরি টা অন্যকারো হয়ে যাচ্ছে সে তো জানতে পারছেনা রিদ!তবে এসব কী করে জানবে?
রিদ ধ্রুবর কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘দ্যাখ ধ্রুব,মানছি ধীর ভাই পূর্ণতাকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসে।কিন্তু তুই আর পূর্ণতা একে অন্যকে ভালোবাসিস।পূর্ণতা যদি ধীর ভাইকে ভালোবাসতো তবে তোর এই ত্যাগ স্বীকার নিয়ে আমি কিচ্ছু বলতাম না।কিন্তু তাতো নয়।মেয়েটা তোকে ভালোবেসে তোর কাছে ছুটে এসেছিল।তুই নিজের ভালোবাসা নিয়ে কী করবি সেটা তোর ব্যাপার, কিন্তু ঐ মেয়েটার ভালোবাসা কোরবানি দেয়ার তুই কে?তুই এসব না করে ধীর ভাইকে সবটা খুলে বল।ভাই ভালো মানুষ, সে ঠিক বুঝবে।পূর্ণতা তোকে ভালোবাসে জানলে উনি কোনওদিন এই বিয়ে করবেন না।ধ্রুব আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস?এই ধ্রুব!
ধ্রুবর ঘাঁড় হেলে পরেছে।রিদ বুঝল তার সব কথা বিফলে গেছে।ধ্রুব ঘুমিয়ে পরায় আদৌ কিছু শুনলো কীনা কে জানে!আবার একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো রিদের বুক চিড়ে।ধ্রুবকে উঠিয়ে ধরে ধরে নিয়ে বিছানায় শুইইয়ে দিল।ধ্রুবর ফোন নিয়ে সেলিনার নম্বরে একটা ক্ষুদে বার্তা পাঠাল,
” Ma ami group study korte rid der bsay eshechi.firbona aj.chinta korona.
______
সকাল দশটা নাগাদ ফোন বাজল।ঘুম ছুটে গেল ধ্রুবর।চোখ-মুখ কুঁচকে নড়েচড়ে উঠল।পরপর চোখ খুলে তাকাল।নিজেকে আবিষ্কার করল রিদের ঘরে,রিদের বিছানায়।প্রথম দফায় ভড়কে গেছিল ধ্রুব। পরে রাতের কথা মনে পড়তেই শান্ত হলো খানিক।ধ্রুব উঠে বসল আস্তেধীরে। মাথা ব্যাথায় টনটন করছে।কাল কি একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছে?রিদ ছেলেটাকে আবার জ্বালায়নিতো?আর বাড়ির সবাই?সে না ফেরায় চিন্তা করেনি?খোঁজ নেয়নি?
পরমুহূর্তে ভাবল ‘ নেবেনা কেন?নিশ্চয়ই রিদ ফোনে জানিয়েছে আমি এখানে।ছেলেটাকে শুধু শুধু প্যারায় ফেললাম।
ধ্রুবর ফোন আবার বেজে উঠল তখন।স্ক্রিনে ভাইয়া লেখা।ধীরের কল।ধ্রুব রিসিভ করে গলা ঝেড়ে বলল,
‘হ্যা ভাইয়া বল।
” কি রে,,ঘুম ভাঙলো তোর??
“হ্যা।উঠলাম মাত্র।
” আচ্ছা তাহলে চলে আয় এক্ষুনি।
ধীরের কন্ঠে ব্যাস্ততা।ধ্রুব জিজ্ঞেস করল,
“কেন?কি হয়েছে?
” কি হয়েছে মানে? আমরা সবাই পূর্ণাদের বাসায় যাচ্ছি।তুই যাবিনা?
ধ্রুব কপাল কোঁচকাল,
‘হঠাৎ ওদের বাড়িতে কেন?
ওপাশ থেকে ভেসে এলো ধীরের বিস্মিত কন্ঠ,
‘কেন মানে?মা তোকে বলেনি?আজ তো পূর্নাকে আংটি পড়াতে যাব।সাথে বিয়ের ডেটটাও ফিক্সড হবে।
ধ্রুবর কলিজা ছলাৎ করে লাফিয়ে উঠল।ভয়,আশঙ্কায়,যন্ত্রনায়।আজ তবে মায়াপরিকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলার ঘোষণা হবে?চোখ জ্বলে উঠল ধ্রুবর।তীব্র বুকের ব্যাথায় ভুলে গেল মাথাব্যাথা।
খুব কষ্টে জ্বিভ ঠেলে কথা বের করল,
‘ও।আমি গিয়ে কি করব ওখানে?তোমরাই যাও।
ধীর কথাটার চরম বিরোধিতা জানিয়ে বলল,”
কি করবি এটা কেমন কথা?তুই আমার একমাত্র ভাই ধ্রুব।আমার লাইফের এত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিনে তুই থাকবি না?তাছাড়া তুইতো জানিস আমার অবস্থা।পূর্ণা কে দেখলেই আমার বড্ড নার্ভাস লাগেরে!তোকে পাশে পেলে একটু সাহস পাব।আয়না ভাই।
ধ্রুব চোখ বুজল।এক ফোঁটা অশ্রুদানা গড়াল সাথে সাথে।ছোট করে বলল,
“আসছি।
লাইন কেটে ফোনটাকে দূরে ছুড়ে মারল ধ্রুব।ডিসপ্লে ভেঙে কুটিকুটি হলো।ধ্রুব মাথা চেপে ধরে ঝুঁকে গেল হাটুর ওপর।
ফোন পরেছে রিদের পায়ের কাছে।ভাঙা ফোন মেঝে থেকে তুলে ধ্রুবর দিক এগিয়ে এল সে।
‘এই অবলা ফোনের ওপর রাগ দেখিয়ে কী লাভ ধ্রুব?
রিদের গলা শুনতেই ধ্রুব চোখ মোছার চেষ্টা করল।রিদ হেসে ফেলল তা দেখে
“আমার কাছে নিজেকে লোকানোর চেষ্টা করছিস ধ্রুব?লাভ নেই।আমি চিনি তোকে।এখন কাঁদছিস?দুদিন পর তোর চোখের সামনে পূর্ণতার বিয়ে হবে তোরই ভাইয়ের সঙ্গে।দিনের পর দিন ওরা সংসার কর__
ধ্রুব আর্তনাদ করে উঠল,
‘আর বলিস না রিদ।আর বলিস না।আমি পারছিনা নিতে।
রিদ বলল,
‘তাহলে যা,ধীর ভাইকে গিয়ে সব খুলে বল।তুই ওনাকে হয়ত ওনার ভালোবাসা পাইয়ে দিবি,কিন্তু অন্যায় করছিস পূর্ণতার সঙ্গে। ও কি কোনও দিন পারবে ধীর ভাইকে ভালোবাসতে?তাকে মন থেকে মেনে নিতে?পারবেনা।উলটে একই বাড়িতে তোকে চোখের সামনে ঘুরঘুর করতে দেখে ওর তাজা ক্ষত কোনো দিন শুকাবেনা।গুমরে গুমরে মরবে মেয়েটা।না পারবে তোকে ভুলতে আর না পারবে ধীর ভাইয়ার সঙ্গে মন দিয়ে সংসার করতে।
আচ্ছা বেশ,তুই বলতে না পারলে আমি যাচ্ছি,আমি গিয়ে সব বুঝিয়ে বলব ভাইকে।উনি ঠিক বুঝবেন।
রিদ যেতে ধরলেই ধ্রুব হাত চেপে ধরল।বরফ কন্ঠে বলল,
‘কোথাও যাবিনা তুই রিদ।যা হচ্ছে হোক।
রিদ উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘এখনও এইসব বলবি ধ্রুব?
‘হ্যা বলব।কারন আমি জানি আমার ভাই মায়াপরিকে কতটা ভালোবাসে।ওর সব লেখা পড়েছি আমি।সাক্ষী রয়েছি ওর অনূভূতির।আমি সামান্য কটা দিনের ভালোবাসা ভুলতে গিয়ে এত্ত কান্ড ঘটাচ্ছি,সেখানে আমার ভাইটা মরেই যাবে রিদ।
ভাই হয়ে ভাইয়ের ভালোবাসা কেঁড়ে নিতে আমি পারবনা।
রিদ বোঝানোর ভঙিতে বলল,
‘কে বলল তুই কেঁড়ে নিচ্ছিস ধ্রুব?তোর ভালোবাসা তোর একান্ত নিজের।সেটা কি বিলিয়ে দেয়ার জিনিস?আর বিলিয়েই যখন দিচ্ছিস,থাকতে পারবি তো ওকে ছাড়া?সহ্য করতে পারবি তো চোখের সামনে একটু একটু করে ওকে হারানোর কষ্ট?
ধ্রুব খানিকক্ষণ রিদের দিক চেয়ে থেকে শব্দ করে হেসে উঠল।রিদ ভ্রু কোঁচকালো প্রশ্নে।পরমুহুর্তে হাসি থামিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল ধ্রুব।হা-হুতাশ করে বলল,
” কেনো ওকে ভালোবাসতে গেলাম আমি?কেনো? সব দোষ আমার।সব।
রিদ উদ্বীগ্ন হয়ে বলল,
‘এখানে তোর কোনো দোষ নেই ধ্রুব।তুই কেন শুধু শুধু___
ধ্রুব চেঁচিয়ে উঠল ‘ সব দোষ আমার রিদ।তুই বুঝতে পারছিসনা,আমি আমার ভাইয়ের ভালোবাসার দিকে হাত বাড়িয়েছি।আমি কতটা নীচ!আর তুই বলছিস ভাইয়াকে গিয়ে সব খুলে বলতে?আমি এতটা স্বার্থপর নই রিদ।আমি পারবনা।
রিদ খেই হারাল মেজাজের।চেঁতে গিয়ে বলল,
“হ্যা তুই সার্থপর হবি কেন?তুইতো দয়ার সাগর।মহান হওয়ার এমন সুযোগ ছাড়বি কেন?সব কষ্ট নিজে ভোগ কর,সাথে ওই নির্দোষ মেয়েটাকেও দে।যে তোকে ভালোবেসে ভুল করেছে।না না ঠিক ভুল নয়,পাপ করেছে পাপ।
ধ্রুব নিশ্চুপ। রিদ নিজেকে ঠান্ডা করে বলল,
“ধ্রুব আমার কথাটা শোন,তুই এসব না করে সবাইকে সবটা বলে দে,এতে তোদের তিনটে জীবনই নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবে।দরকার পরলে আমি গিয়ে কথা বলছি!
‘তুই কাউকে কিছু বলবিনা রিদ।তোকে আমার বন্ধুত্বের দোহাই রইল।
রিদের মুখ থমথমে হয়ে গেল।
‘নিজের ভাইয়ের ভালোবাসার মূল্য আছে তোর কাছে।অথচ তোর আর পূর্ণতার ভালোবাসার কোনও মূল্য নেই?
ধ্রুব উদাস হেসে বলল,
‘অল্প কয়দিনের ভালোবাসার আবার কীসের মূল্য?
রিদ নাক ফোলালো রাগে।
‘তুই একদিন আমায় বলেছিলি না ধ্রুব,
ভালোবাসায় দিন-ক্ষন গুরুত্বপূর্ণ নয়,
গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এর গভীরতা!
তাহলে আজ এসব হাবিজাবি বলছিস কেন?
ধ্রুব ফিচেল কন্ঠে বলল,
‘সব ভুলে যা রিদ।শুধু মনে রাখ পূর্ণতা শুধু ভাইয়ার।
রিদ ক্লান্ত হয়ে ধ্রুবর পাশে বসে পরল।
‘পূর্নতা যে কার,সেটা সময় বলবে।
____
সমানে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে পূর্ণতা।একটু পরেই মামুনিরা আসবে।আংটি পড়িয়ে বিয়ের দিন পাঁকা করবে।ধ্রুবও নিশ্চয়ই আসবে সাথে।তাহলে কী সে যা চাইছে হবে এরকম?
এর মধ্যে রুমে হাজির হলেন সেলিনা।দরজায় দাঁড়িয়েই পূর্ণতাকে পায়চারি করতে দেখে কপাল কুঁচকে বললেন,
‘তুই কি কিছু নিয়ে চিন্তায় আছিস?
পূর্ণতা চমকে উঠল,
হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ককই নাতো।
সায়রা হাতের শাড়ি -ব্লাউজ বিছানার ওপর রেখে বললেন,
‘ওনারা বেরিয়েছেন বাড়ি থেকে।তুই তৈরি হয়ে নে।সাজগোজ করে আমাকে ডাকিস, আমি এসে শাড়ি পরিয়ে দেব।
সায়রা বের হতে ধরলেই পূর্ণতা ডেকে উঠল,
” ছোট মা!
সায়রা ফিরে তাকালেন
“কিছু বলবি?
” একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
পূর্নতার কোমল কন্ঠ।সায়রা বললেন,
“কর।
পূর্ণতা ভেবে সময় নিয়ে বলল,
“বাবা তোমাকে ভালোবাসেনা বলে তোমার কষ্ট হয়না??
সায়রা চোখ পিটপিট করলেন ‘ হঠাৎ এই কথা?
পূর্ণতা চোখ নামিয়ে ফেলল।
‘না মানে,এমনিই।
সায়রা মৃদূ হাসলেন।লম্বা শ্বাস ফেলে বললেন,
“সত্যি বলতে তোর বাবার চোখে আমি আমার জন্যে কখনও ভালোবাসা দেখিনি।তাই কষ্ট হয়না।যদি দেখতাম বা অনুভব করতাম, ‘যে লোকটা আমাকে ভালোবাসে”তাহলে কষ্ট পেতাম।খুব কষ্ট।ও চাইলেও ওকে দূরে যেতে দিতাম না।জোর করে হলেও নিজের কাছে রেখে ভালোবাসা আদায় করতাম।
পূর্ণতা অবাক নেত্রে তাকিয়ে থাকল।সায়রা আর দাঁড়ালেন না।কেমন অদ্ভূত সূক্ষ্ম যন্ত্রনা এসে চেপে বসল কাঁধে।ত্রস্ত পায়ে চলে গেলেন ঘর থেকে।
পূর্ণতা তখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।ঘাড় কাঁত করে তাকাল বিছানায় রাখা শাড়ির দিকে।নরম পায়ে গিয়ে বসলো সেখানে।
শাড়িটা তুলে বুকের সঙ্গে চেপে ধরল পূর্ণতা।
“তোমার চোখেতো আমি ভালোবাসা দেখেছি ধ্রুব।তবে কী জোর করেই তোমাকে নিজের কাছে রেখে দেব?
চলবে….