ফাগুন_ এলো_ বুঝি! (২৭)

0
875

#ফাগুন_ এলো_ বুঝি!
(২৭)
যদি ভালোবাসা পাই, আবার শুধরে নেব,
জীবনের ভুলগুলি।
যদি ভালোবাসা পাই, ব্যাপক দীর্ঘপথে,
তুলে নেব ঝোলাঝুলি।
যদি ভালোবাসা পাই, শীতের রাতের শেষে,
মখমল দিন হব।
যদি ভালোবাসা পাই, পাহাড় ডিঙাব,
আর সমুদ্র সাঁতরাব।
যদি ভালোবাসা পাই, আমার আকাশ হবে
রুদ্র শরতের নীল…..
যদি ভালোবাসা পাই, জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল।

পূর্ণতার কান্না থেমে গেল।তারা শূন্য আকাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে ঘাড় ঘোরাল ভরাট, পরিচিত কন্ঠ শুনে।ধ্রুব দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।তার ঠোঁটে দীর্ঘ হাসি।পূর্ণতা ধ্রুব কে দেখতেই অভিমানে আবার মুখ ঘোরাল।ধ্রুব মুচকি হেসে এগিয়ে এল।হুট করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল পূর্নতাকে।চমকে উঠল পূর্ণতা।বহুদিন পর ধ্রুবর স্পর্শ পেয়ে ছোট্ট দেহটা ঝাঁকুনি দিল।কাঁধের ওপর ধ্রুবর উষ্ণ থুতনির ছোঁয়ায় পূর্ণতার হুশ ফিরল।রেগেমেগে ছোটাছুটি শুরু করল।ধ্রুব আরো শক্ত করে ধরল।পূর্নতা যেন পিষে গেল ধ্রুবর বুকের মধ্যে।অথচ
কন্ঠে তেঁজ নিয়ে বলল,
“ছাড়ুন আমাকে।
‘একবার ছেড়েছি।আর নয়।
ধ্রুবর সাবলীল উত্তর।
‘লজ্জ্বা করছেনা আপনার? এভাবে যাকে তাকে জড়িয়ে ধরেন!নাকি মেয়ে দেখলে হুশ থাকেনা?
‘যাকে তাকে ধরিনি।আমার বিয়ে করা বউকে ধরেছি।

পূর্ণতার অন্তঃস্থল ঠান্ডা হয়ে এল ‘বউ ‘শব্দটা শুনে।একটু সময় চুপ থাকল।যেই মাত্র অতীতের কথা মনে পড়ল ফের ছোটাছুটি শুরু করল।সাথে ঝাঁঝাল কন্ঠে বলল,
‘কীসের বউ?নিজের অনিচ্ছায়, বাবার কথায় কাউকে বিয়ে করলেই তো আর সে বউ হয়ে যায়না।আপনি আমাকে ছাড়ুন।আপনি তো দেখছি দুর্দান্ত নির্লজ্জ একটা মানুষ।

ধ্রুব ফিসফিস করে বলল ” তোমার জন্যে নির্লজ্জ্ব হতেও রাজি মায়াপরি!
সেই আগের ডাক,আগের মত ধ্রুবর ফিসফিসে আওয়াজ।সব যেন গুলিয়ে দিল পূর্ণতার,রাগ, অভিমান।ধ্রুব পূর্ণতার ঘোমটা খুলে দিল একহাত দিয়ে।সাথে খুলে দিল ওর খোপাটাও।কালো চুল পিঠ ছড়াল।পূর্ণতা নড়ে উঠল
‘কী করছেন?
ধ্রুব জবাব দেয়না।পূর্ণতার চুলের ভাঁজ মুখ ডোবায়।পূর্ণতার শরীর শিরশিরিয়ে ওঠে।মানা করতে গেলেও জ্বিভে কথা আসেনা।ধ্রুব ঠোঁট নামিয়ে যেই মাত্র গলায় আনল, ওমনি দরজায় ঠকঠক শব্দ ভেসে এল।ধ্যান ভাঙল পূর্ণতার।ধ্রুবর হাত সামান্য ঢিলে হতেই পূর্ণতা ওকে নিজের কাছ থেকে ঠেলে সরিয়ে দিল।কটমট করে বলল,
‘চরিত্রহীন লোক একটা!
ধ্রুব সুলভ হাসল।পূর্ণতা কপাল কোঁচকাল।সেকী হাসার মত কিছু বলল?দরজায় টোকার শব্দটা গাঢ় হলো তখন।কেউ অধৈর্য হাতে ধাক্কাচ্ছে।
পূর্ণতা যেতে নিলে ধ্রুব থামিয়ে দিল,
” আমি যাচ্ছি।


ধ্রুব দরজা খুলতেই ধীর হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকল।প্রথমেই তাকাল বিছানায়।বিছানা একদম পরিপাটি দেখে বুক ভরে শ্বাস নিল।ধ্রুব প্রশ্ন ছুড়ল,
‘কিছু হয়েছে ভাইয়া?তুই এখানে,এতরাতে?

ধীর উত্তর না দিয়ে
পালটা প্রশ্ন ছুড়ল ‘ পূর্না কোথায়?
ধীরের কন্ঠ শুনে ঘরে এল পূর্নতা।
‘কি হয়েছে ধীর ভাইয়া?
ধীর পূর্ণতার আপাদমস্তক দেখল।পূর্ণতার চুল তখন হাত খোপা করা।ধীর সময় নিয়ে বলল,
“আ__আসলে পূর্ণা,পূর্না তুই একটু আমার ঘরে যাবি প্লিজ?
পূর্ণতা ধ্রুব মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল।পূর্নতা জিজ্ঞেস করল,
‘কেন ভাইয়া?কোনও সমস্যা?

ধীর ঠোঁট চেটে থেমে থেমে বলল,
” সমস্যা বলতে, বুঝতেই পারছিস আমার আর মিশুর বিয়েটা কি পরিস্থিতিতে হয়েছে! ও এখন আমাকে মেনে নিতে চাইছেনা।আর আমিওনা।তাই তুই যদি একটু ও ঘরে যেতিস___
ধ্রুব মাঝপথেই উদ্বেগ নিয়ে বলল,
“ও গিয়ে কী করবে?
ধীর ঠান্ডা চোখে ধ্রুবর দিক তাকাল।পরমুহূর্তে নিচের দিক।বলল,
“পূর্না আমার ঘরে গেলে আমি না হয় তোর সাথে এ ঘরে ঘুমাতাম।উপকার হতো অনেক।

‘কিন্তু ভাইয়া এভাবে কতদিন?তোদের দুজনের দুজনকে মেনে নিতেতো হবেই।আজ হোক কাল।আফটার অল ইউ বথ আর হাজবেন্ড ওয়াইফ।
ধীর খুব শান্ত ভাবে বলল,
‘আই ন্যো ধ্রুব।আমি এমনি এমনি তোদের বিরক্ত করতে আসিনি।বাধ্য হয়েই এলাম।আসলে মিশরার শরীর টা ভালোনা।তাই___

পূর্ণতা এটুকু শুনতেই উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
” সেকি!মিশুর কি হয়েছে?
ধীর কাঁধ উচু করে বলল,
“আমি কী করে জানব?আমাকে বলেনি।দেখে মনে হলো তাই বললাম।
” তোমরাওনা!
পূর্ণতা মাথা নেড়ে দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।ধীর সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে ধ্রুবর দিক ফিরল।ধ্রুবর শুকনো মুখ দেখে প্রশান্ত শ্বাস ফেলল তারপর।
____
রুমে ঢুকতেই আঁতকে উঠল পূর্ণতা।মিশরা বিছানায় বিধ্বস্ত অবস্থায় পরে।গায়ে প্যাচানো চাদরটা খুলে গেছে।উন্মুক্ত শরীরের অনেক অংশ।সারা গায়ে দাগ।পূর্ণতা ভয়ে গগন বিদারী চিৎকার দিল।দৌড়ে গেল মিশরার কাছে।গালে মৃদু থাপ্পড় দিতে দিতে ডাকতে থাকল
‘এই মিশু?কি হয়েছে?মিশু!
মিশরার শরীরে আচড় আর কামড়ের দাগে পূর্ণতার বুঝতে বাকি রইলনা কী ঘটেছে ওর সাথে!তবে অতটাও মারাত্মক চিন্তা উঁকি দেয়নি মাথায়।ভাবল,প্রথম রাত তাই হয়ত।কিন্তু ধীর তো মিশরাকে বিয়েই করতে চাইছিলনা। তাহলে এসব কেন?তবে কী স্টোর রুমের ঘটনাই সত্যি ছিল?পূর্নতার মাথা এলোমেলো লাগছে।
এদিকে পূর্ণতার চিৎকার শুনে এক প্রকার ছুটে এল সকলে।পায়ের শব্দ পেয়েই পূর্ণতা তড়িঘড়ি করে মিশরার গলা অব্দি কম্বল টেনে দিল।
___
ধুম জ্বর এসছে মিশরার গায়ে।মাথার কাছে বসে ক্রমাগত জলপট্টী দিচ্ছে পূর্ণতা।গভীর রাত বলে ডাক্তার ডাকা হয়নি।বাড়ির সবাই উপস্থিত এখানে।চিন্তায় ছোট হয়ে গেছে প্রত্যেকের মুখমণ্ডল।বাদ যায়নি ধীরও।সেও চিন্তিত।তবে নিজেকে নিয়ে।মিশরার এই দশা যে কীসের জন্যে তার বুঝতে বাকী নেই।এর মধ্যেই মেহবুবের গম্ভীর কন্ঠে ভেসে এল,
“ওর এমন অবস্থা কি করে হলো ধীর?

ধীর ভ্রু কুঁচকে তাকাল,
” আমি কি করে বলব?
“তুই_ইতো জানবি। এতক্ষনতো ও ঠিকই ছিলো।তবে হঠাৎ এতো টা অসুস্থ কি করে হলো?
” মা সেটা আমার জানার কথা নয়। আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো তোমরা,?একটু আগেও আমি ওকে ঠিকঠাকই দেখে গিয়েছি।আর ওই তো বলল আমায়,যে ও আমার সাথে একরুমে থাকতে চাচ্ছেনা। তাই আমি পূর্ণা কে ডেকে আনলাম ওর কাছে থাকার জন্যে।এখন দেখছি লোকের ভালোও করা যাবেনা।

‘এক মিনিট এক মিনিট!মিশু তোর সাথে একরুমে থাকতে চায়না বলে তুই পূর্ণতাকে ডেকে আনলি মানে?পূর্ণতা এসে কী করত?
সায়রার প্রশ্নে ধীর নার্ভাস হয়ে গেল।আমতা-আমতা করে বলল,
‘শুধু সেইজন্যে নয়।আমার ওকে দেখে মনে হলো ওর শরীর ভালো নেই বোধহয়।তাই পূর্নাকে ডেকেছি।
আশরাফ বললেন,
‘কিন্তু তুমি তো মাত্র বললে একটু আগেও ওকে ঠিক দেখেছ।
ধীর মৃদূ চেঁতে বলল,
“আজবতো!তোমরা কী আমাকে জেরা করছো সবাই?প্রতিবার কাঠগড়ায় আমি দাঁড় হচ্ছি।কেন?

” বিশ্বাস হারালে এরকম অনেক কিছু করতে হয়।
মেহবুবের কথায় ধীর কিছু বলতে গেল,সেলিনা থামিয়ে দিয়ে বললেন
‘আচ্ছা বাদ দাওনা এসব।মেয়েটার এত জ্বর!তুমি বরং রুকমান ভাইকে ফোন করো একটা। নাহলে ওকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করো।
‘এত রাতে ওনাকে ফোন করা ঠিক হবেনা।আমি বরং হাসপাতালে নেয়ার ব্যাবস্থা করি।

মিশরার মাথায় অন্য পাশে সায়রা বসে।আদুরে হাত বোলাচ্ছেন মেয়ের মাথায়।মিশরার মুখের দিক চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“এসব অভিনয় করে কি লাভ হলো রে তোর মিশু?কি পেলি ধীরকে বিয়ে করে?
সায়রা পূর্ণতার দিক তাকালেন।মেয়েটা চিন্তায় অর্ধেক বোনের জন্যে।সেই বোন,যে কীনা ওরই ক্ষতি চেয়ে ধুন্ধমার কান্ড ঘটাল আজ।এর একটুকু পরিমান যদি জানত পূর্ণতা, কী করতো ও?এভাবেই ভালোবাসত মিশরাকে?
সায়রা গভীর দৃষ্টিতে পূর্ণতাকে দেখছেন।ওর মুখে এতদিনের শোকের মেঘ আজ একদম নেই।একদম না।সায়রার স্বস্তি পেলেন ভেবে,
‘অন্তত কিছু তো করতে পারলাম তোর জন্যে।

ধীর ওয়াশরুমে পূর্ণতাকে না পেয়ে ফিরে আসতে ধরল।এদিকে পূর্ণতা স্টেজে এসে উঠল তখন।সায়রা স্টেজে পূর্ণতাকে দেখেই ধীরকে ডাকতে গেলেন।গিয়ে দেখলেন ধীরকে ওর কাজিনের মেয়েটা কিছু একটা দিচ্ছে।ধীর সেটা পড়েই স্টোর রুমের দিক হেটে গেল।সায়রা এগিয়ে এসে কৌতুহলে মেঝে থেকে কাগজটা তুললেন।লেখা দেখেই চিনলেন, এটা মিশরার হাতের লেখা।রাগ লাগল খুব, যখন দেখলেন মিশরা পূর্ণতার নাম ব্যবহার করে ধীরকে ডাকছে।
সায়রাও ধীরের পিছন পিছন গেলেন।ধীর ঢুকল রুমের ভেতর।সায়রা তখন রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে। ভেতর থেকে আসা মিশরার কথার ধরন শুনেই বুঝে গেলেন ওর মনে কি চলছে!কী করতে চাইছে তার মেয়ে!

আর যাই হোক,ধীর মিশরার ক্ষতি করবেনা সায়রা জানতেন।তাই মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।এতে যদি পূর্ণতার ভালো হয়,বিয়েটা বন্ধ হয়,তবে ক্ষতি কী?সায়রাই দরজা টেনে বন্ধ করে দিলেন বাইরে থেকে।মিশরার খেয়াল ধীরের দিকে থাকায় মাকে সে দেখেনি।নিজেও অবাক হয়েছিল আপনা-আপনি দরজা বন্ধ হতে দেখে।কিন্তু ধীরকে ধরা দিলোনা।সায়রা বাইরে দাঁড়িয়েই ওদের সব কথোপকথন শুনলেন।মিশরা যেই মাত্র চেঁচাতে শুরু করল সায়রা আস্তে করে দরজার হাতল খুলে দিলেন।যাতে দরজা চাপানো থাকে,কিন্তু বাইরে থেকে কেউ দেখলে বুঝবে দরজা দেয়া,ভেতর থেকেও কেউ টের পাবেনা দরজা খোলা।সায়রা ছুটে এসে সবাইকে ডেকে নিলেন ওদিকে।বললেন মিশরা চিৎকার করছে কেন যেন।
প্রত্যেকে ছুটে এল।সাথে পূর্ণতাও।চাপানো দরজা হাত দিয়ে ঠেলে খুললেন মেহবুব।তারপর দেখলেন ধীর মিশরার মুখ চেপে ধরেছে, আর মিসজরা অবস্থা__

মিশরা কান্নায় সবাই বিশাস করলেও সায়রা জানতেন এসব ওর নাটক।তবুও গলায় গলা মিলিয়েছেন।অন্তত বিয়েটা যাতে ভেঙে যায়।কারন সায়রা তখন নিশ্চিত ছিলেন পূর্ণতা ধ্রুবকে ভালোবাসে।সায়রা বিচক্ষণ। যখন সেলিনার মুখে শুনলেন ধ্রুব কাউকে কিছু না বলে হুট করে ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে চিটাগং চলে গেছে।এদিকে পূর্ণতার নিরস চেহারা ওদিকে ধ্রুবর হঠাৎ প্রস্থান,সব মিলিয়ে সায়রা দুইয়ে দুইয়ে চার মেলান।বুঝে নিলেন,পূর্ণতার চাওয়ার সঠিক গন্তব্য কোথায়!

যখন মিশরা জানাল সে ধীরকে বিয়ে করতে চায়, সায়রা চেয়েও মানা করতে পারলেননা।সে ভাবেইনি এরকম কিছু বলবে মেয়ে।আজ হয়ত ধীরের প্রতি অন্যায় করেছেন সায়রা, কিন্তু পূর্ণতাকে তো বাঁচিয়ে দিলেন।মনে একজন কে রেখে অন্য একজনকে নিয়ে সংসার করা যে কত কষ্টের, আশরাফ কে দেখে আন্দাজ পান সায়রা।এদিক থেকেতো ধীর ও বেঁচে গেল।নাহলে তার মতোই জীবন কাটত ছেলেটার।

ঐসময় সবার সামনে পূর্ণতার বিয়ের কথা ইচ্ছে করে তুললেন সায়রা।ভাইকে তিনি চেনেন।মেহবুব পূর্ণতাকে বাঁচাতে সেকেন্ড অপশন হিসেবে যে ধ্রুবকেই বাছবে সায়রা নিশ্চিত ছিলেন এক প্রকার।হলোও তাই।
হয়ত ধীরকে বিয়ে করে মিশরার ক্ষতি হলো।না না কিসের ক্ষতি?যে ইচ্ছে করে শিকল পায়ে বাঁধে তাকে হাটানো যায়না।
মিশরা যেচে পরে এসব কাণ্ড ঘটিয়েছে।নির্ঘাত মনের মধ্যে ধীর আর পূর্ণতার প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়েই।যে নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে তাকে আর কিভাবে আটকানো যায়?মিশরা জানলোনা,বুঝলোনা যে,বোঁকা মেয়েটা
পূর্ণতার খারাপ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।পাইয়ে দিয়েছে পূর্ণতার ভালবাসার মানুষকে।যখন জানবে কেমন হবে ওর অভিব্যাক্তি?

কাঁধের ওপর কারো হাত পরতেই চমকে উঠলেন সায়রা।গভীর ভাবনায় ছেদ ঘটল তার।তাকালেন চোখ তুলে।সেলিনা আশ্বস্ত করতে বললেন
“চিন্তা করোনা সায়রা। সব ঠিক হয়ে যাবে,মিশুও সুস্থ হয়ে যাবে।
উত্তরে সায়রা হাল্কা মাথা নাড়লেন।পূর্ণতার লাগাতার জলপট্টিটা কাজে দিল।মিশরার গায়ের গরম ভাব অনেকটা কমে এসছে।পূর্ণতা ঘুমন্ত মিশরার কপালে হাত উলটে পালটে দেখে বলল,
” যাক বাবা!জ্বর প্রায় কমেছে।ছোট মা, মামুনি তোমরা সবাই এবার ঘুমোতে যাও,আমি আছি ওর পাশে।

ধ্রুব ঠোঁট ওল্টাল।বিড়বিড় করে বলল,
‘এলেন আমার ডাক্তারনি!
ধীর প্রশান্ত হাসল পূর্ণতা এইরুমে থাকবে শুনে।কিন্তু সায়রা তীব্র আপত্তি জানালেন,
“না না। তুই কেনো থাকতে যাবি?তুই ঘরে যা,আমি থাকব।
– দরকার হবেনা ছোট মা,আমি পারব।

“আমি জানি পারবি।কিন্তু আমি চাইছিনা তুই এখানে থাক।এখন তুই কি আমার চাওয়ার মূল্য দিবিনা?
সেলিনাও তাল মেলালেন,
” সায়রা তো ঠিকই বলছে পূর্ণতা।তুই কেনো থাকতে যাবি?ধীর আছেনা?ও থাকবে।স্বামী হয়েছে যখন দায়িত্ব নিতে শিখুক।তুই চল,সায়রাও চলো।ওঠো।

ধীরের মেজাজ খারাপ হলো।কিন্তু টু শব্দ করলনা।এখন কিছু বলতে গেলেই সবাই ঝাঁক বেধে ঝাপিয়ে পরবে তার ওপর।
সায়রা যেতে চাইলেন না।মেয়েকে অসুস্থ রেখে ঘুম আসবে?কিন্তু সেলিনা চোখের ইশারায় বোঝালেন, এখন ধীর আর মিশুর কাছাকাছি থাকা উচিত। বুঝতে পেরে সায়রাও আর দ্বিমত করেলেন না।সবাই একে একে বের হয়ে গেল ঘর ছেড়ে।যেহেতু জ্বর কমেছে তাই মেহবুব ও আর ফোন করেননি হাসপাতালে।
পূর্ণতা যেতে নিলেই ধীর উদ্বেগ নিয়ে বলল,
” তুই কেনো যাচ্ছিস? তুই থাক না পূর্না।
পূর্ণতার উত্তরের আগেই ধ্রুব বলে ওঠে,
– কেনো ভাইয়া? ও থেকে কি করবে?মিশুর তো জ্বর কমেছে।
ধীর মিনমিন করে বলল,
না, মানে ওর যদি কিছু দরকার হয়!

ধ্রুব সোজাসাপটা বলল,
” সেজন্যে তো তুমি আছো।স্বামীর থেকে বড় সেবা আর কে কর‍তে পারে?
এসো…

ধীরের সামনেই পূর্ণতার হাত মুঠোয় নিল ধ্রুব।আঙুলে আঙুল ঢুকিয়ে ঘর থেকে বের হলো।ধীর কটমটে দৃষ্টিতে দেখল ওদের প্রস্থান।
বিছানায় ঘুমোনো মিশরার দিক চেয়ে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল,
“এইসব তোর জন্যে হয়েছে।চোখের সামনে ধ্রুব আর পূর্না ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি।জ্বরটা কমে কেন গেল তোর?একবারে মরে যেতিস!রাক্ষসী কোথাকার!

পরমুহূর্তে সচেতন কন্ঠে বলল,
” না না আমি চেয়ে চেয়ে দেখতে পারবনা এসব।পূর্না আমার ছিল, আমার থাকবে।

রুমের বাইরে আসা মাত্র পূর্ণতা ধ্রুব’র হাত ঝাঁকি মারল।নিজের হাত ছুটিয়েই ঘরের দিকে হেটে গেল।প্রথম দফায় থতমত খেল ধ্রুব।বুঝতে পেরে মুচকি হেসে আওড়াল
“মহারানীর রাগ এখনও ভাঙেনি তাহলে।এক্ষুনি ভাঙছি।
ধ্রুব পা বাড়াতে নেবে এর মধ্যে পেছন থেকে একটা শক্ত কন্ঠ ভেসে এল,
” দাঁড়া ধ্রুব।
ধ্রুব ফিরে তাকাল,ধীরকে দেখে বলল,

“হ্যা ভাইয়া?
ধীর এসে ধ্রুবর মুখোমুখি দাঁড়াল।কোনও রকম ভনিতা না করে বলল,
‘তুই এখন ঐ ঘরে যাবিনা ধ্রুব।আর গেলেও,পূর্নার থেকে একশ হাত দূরে থাকবি।ভুলেও পূর্নাকে ছোঁয়ার,ওর কাছাকাছি যাওয়ার,বা ওর সাথে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরীর চেষ্টা করবিনা।
বড় ভাইয়ের লাগামহীন কথাবার্তায় ধ্রুব তাজ্জব বনে গেল।একটু আকটু মেজাজ ও খারাপ হলো।চোখ ছোট করে বলল,
” তোর কথা ঠিক বুঝলাম না ভাইয়া।আমি আমার স্ত্রীর কাছে যাব কী না,সেই সিদ্ধান্ত কী তুই দিবি?

ধীরের চড়া কন্ঠ,
“প্রসঙ্গ যদি পূর্নাকে নিয়ে ওঠে,তবে অবশ্যই আমি দেব।
ধ্রুব ধীরের আচরনের আগামাথা বুঝছেনা।তবুও ধীর-স্থির কন্ঠে বলল,
” প্রসঙ্গ পূর্ণতার হোক,বা অন্য মেয়ের,সত্যি এটাই যে তুই এখন বিবাহিত।ঘরের ভেতর তোর স্ত্রী জ্বরে অচেতন হয়ে পরে আছে, আর তুই এখানে আমার স্ত্রী নিয়ে আমাকে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে এসছিস?শুনতে কেমন অদ্ভূত লাগছেনা?

ধীরের কাঠ জবাব,
“না। লাগছেনা।কারন আমি পূর্নাকে ভালোবাসি।ওর সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।মিশরা মাঝখানে ঢুকে ক্যাচাল পাঁকিয়েছে,বাবা জোর করে ওর সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন বলেই ও আমার স্ত্রী হয়ে গেলনা।পূর্ণই আমার স্ত্রী হবে।ও শুধু আমার ধ্রুব।তুই ওর দিকে হাত বাড়াবিনা।খরবদার!
ধ্রুব চোয়াল কঠিন হলো।পরমুহূর্তে ভাবল,
ভাইয়া তো মায়াপরিকে ভালোবাসে।হুট করে এরকম একটা ঘটনায় হয়ত ওর মাথা ঠিক নেই।তাই
শান্তভাবে বলল,
‘তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ভাইয়া!আদৌ বুঝতে পারছিস তুই কী বলছিস?পূর্ণতা এখন আমার বউ।তুই নিজেও অন্য কারো স্বামী,সেটা তুই মানিস বা না মানিস।সত্যিতো আর বদলাবেনা।পূর্ণতা আর তোর নেই।আর তোর হয়ত লজ্জা করছেনা এসব বলতে,কিন্তু বিশ্বাস কর ভাইয়া,মাঝরাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের বড় ভাইয়ের সঙ্গে নিজের বউকে নিয়ে আলোচনা করতে আমার সত্যিই রুচিতে বাঁধছে।

ধীর রুষ্ট হয়ে বলল,
‘তার মানে তুই আমার কথা শুনবিনা ধ্রুব?পূর্নাকে তুই ছুঁবি?
ধ্রুবর মেজাজ পুরোপুরি তেঁতে যাচ্ছে।ধীর এসব কী বলছে খেয়াল আছে ওর?নিজের ছোট ভাই আর ছোট ভাইয়ের বউকে নিয়ে__ছি!
ধ্রুব নিজেকে যথাসম্ভব ঠান্ডা রেখে বলল
“What’s Wrong with you vaia?
হয়েছে কী তোর?রাত বিরেতে আজেবাজে না বকে রুমে যা।তোর বউ অসুস্থ তাকে দ্যাখ গিয়ে।যা।
ধ্রুব ফের হাটা ধরল।ধীর ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘আমার কথাকে গ্রাহ্য করছিস না ধ্রুব?এত বড় সাহস তোর?একবার তোকে পূর্নার থেকে সরিয়েছি,আলাদা করেছি, প্রয়োজন পরলে কিন্তু আবা___
ধ্রুব থমকে দাঁড়াল।হুশ আসতেই কথা থামিয়ে ফেলল ধীর। ধ্রুব পেছন ঘুরে ভ্রু গুটিয়ে বলল,
‘কী বললি তুই ?
ধীর জবাব দিলনা।ধ্রুব এবার মোটা গলায় শুধাল,
‘কী হলো?বল,একবার সরিয়েছিস, আলাদা করেছিস, কী মানে এসবের?
ধীর তাকাল।বুকের সঙ্গে দুহাত ভাঁজ করে বলল,
‘মানে খুব সহজ, ” তুই আর পূর্না যে একে অন্যকে ভালোবাসিস,আমি আগে থেকে জানতাম।”
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here