ফাগুন_ এলো_ বুঝি! (২৮)

0
830

#ফাগুন_ এলো_ বুঝি!
(২৮)

ধ্রুব কিংকর্তব্যবিমুঢ়!স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে ধীরের দিকে।ধ্রুবর চেহারার এমন ভঙ্গি ভীষণ এঞ্জয় করল ধীর।একটু আগের কঠিন চোয়াল বিদ্রুপের হাসিতে বাঁকা হল।না, ঠিক বিদ্রুপের নয়,এই হাসি এক স্বার্থপরের।

‘তুই জানতি মায়াপরি আমাকে ভালোবাসে?
ধ্রুবর কন্ঠে অবিশ্বাস?দৃষ্টিতেও তাই।ধীর সময় না নিয়েই বলল,
“জানতাম।তুইও যে ওকে ভালোবাসিস তাও জানতাম।
কেন?তুই কী ভাবলি?আমি জানলে তোদের মাঝখান থেকে সরে দাঁড়াব?তোকে আর পূর্নাকে মিলিয়ে দিয়ে বলব ‘ ভালো থাকিস?মহান হওয়ার জন্যে নিজের এত বছরের ভালবাসার বলি দেব?ঠিক তোর মতো?

ধ্রুব অবাক চোখে তাকাল।ধীর বাঁকা হেসে বলল,
‘আমি সব জানি ধ্রুব।পূর্নার সঙ্গে তুই প্রেম করবি,আর আমার কানে সেটা পৌঁছাবে না?তবে দেরি হয়েছে জানতে,আরো আগে জানলে পদক্ষেপটা আগেই নিতে পারতাম।তুই খুব চালাক ধ্রুব!আমার নাকের ডগায় পূর্নার সাথে প্রেম চালালি আমি বা বাড়ির কেউ ধরতেই পারিনি।অথচ দ্যাখ,আমি যে পূর্নাকে ভালোবাসি,গোটা পরিবার বুঝে গেল।

প্রথম প্রথম তোকে- পূর্নাকে কাছাকাছি দেখে আমার খারাপ লাগতো।কিন্তু আমোলে নেইনি।ভেবেছিলাম, পূর্না আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু, সেদিন পহেলা ফাল্গুনে?তুই আর পূর্না যেভাবে নাঁচছিলি,একে অন্যের দিক তাকিয়েছিলি তাতেই আমার সন্দেহ হলো।নিশ্চিত হতে পূর্নার বান্ধুবি রুপকে জিজ্ঞেস করলাম।ওর থেকেই শুনলাম তোরা দুজনেই দুজনকে ভালোবাসিস।রাগে আমার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটছিল তখন।তুই আমার ভাই না হলে তোকে পুঁতেই ফেলতাম মাটিতে।কত বড় সাহস তোর,তুই আমার পূর্নার দিকে হাত বাড়াস!
কিন্তু পরে ভাবলাম,থাক,জোরজুলুম করে কী হবে?তোকে তো আমি চিনি,তুই যখন জানবি যে আমি পূর্নাকে ভালোবাসি তুই ফিল্মের হিরোর মত সরে দাঁড়াবি।নিজের ভালোবাসাকে তুলে দিবি আমার হাতে।হলোও তাই।আমার প্ল্যানটা কাজে দিল।আমি সেইদিনই তোকে ডেকে পাঠালাম,ইচ্ছে করে টেবিলের ওপর ডায়েরি মেলে রাখলাম,তাও পূর্নার ছবিটা যেখানে সেই পাতা।আর নিজে গেলাম ওয়াশরুমে।তুই এলি।তারপর ,ঠিক যেমন চাইলাম তেমনই হলো।তোর চোখে ডায়েরিটা পরলো।তুই গোটা ডায়েরি পড়েই বুঝে গেলি ‘আমি পূর্নাকে ভালোবাসি।তাও ছোট বেলা থেকে।ব্যাস!হিসেব মত সরেও গেলি।ডায়েরি মেঝেতে পরে থাকতে দেখেই আমি বুঝে গেছিলাম আমার প্ল্যান সাকসেসফুল!কষ্ট করে আর কিচ্ছু করতে হলোনা।
তারপর দিন পূর্নাকে তোর ঘর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হতে দেখে আমি যে কী খুশি হয়েছি তোকে বোঝাতে পারবনা।তুই ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিস আমি জানতাম,কারন তোদের সব কথা আমি বাইরে দাঁড়িয়ে শুনেছি।
সবই ঠিক ছিল।পূর্না আমারই হতে যাচ্ছিল।মাঝখান থেকে ওই মিশু এসে ___
আর বাবাও,পূর্নাকে তোর সাথেই বিয়ে দিলেন।মানে কাঁটা ঘায়ে লবন ছেটালেন আর কি।
তোদের পাশাপাশি দেখে আমার মাথা দপদপ করছিল। পারলে চোখ দিয়েই ঝলসে দিতাম তোকে।
তুই যদি এখন বলিস,আমি স্বার্থপর!হ্যা, আমি স্বার্থপর।পূর্নাকে আমি ডেস্পারেটলি চাই।ওর জন্য কোনও কম্প্রোমাইজ আমি করতে পারবনা।
আসলে আমি কিন্তু তোদের মাঝে আসিনি,এসেছিস তুই।তাই এবারেও তুই সরে যাবি।মিশরাকেতো আজ বাদে কাল আমি ডিভোর্স দিয়েই ছাড়ব।তারপর পূর্নাকে বিয়ে করব।তুই এখানে বাঁধা হবিনা ধ্রুব।তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।
দাঁত পিষে পিষে বলে থামল ধীর।ধ্রুবর উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিল ঠান্ডা হুমকি।ধ্রুবর বিস্ময়ের রেশ তখনও কাটেনি।সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা,যে ভাইয়ের জন্যে নিজের ভালোবাসাকে ত্যাগ করতে দুবার ভাবলনা,সেই ভাই_______!
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলল।মৃদূ হেসে বলল,
” অনেক তো বললি ভাইয়া,এবার আমি বলি?
ধীর চোখ চিকন করল।ধ্রুব স্পষ্ট কন্ঠে বলল,
‘একটা কথা আছে জানিস,কারো জন্যে ত্যাগ স্বীকার করা কঠিন কিছু নয়,
কিন্তু তাকে খুঁজে বের করা কঠিন,যে আসলেই এই ত্যাগের যোগ্য!
আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, তোর মত নোংরা মস্তিস্কের লোক আদৌ কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখেনা।পূর্নতার তো নয়ই।

ধীর ধমকে উঠল ‘ ধ্রুব!
ধ্রুব ও পালটা স্বর উঁচু করল,
‘চিৎকার করিস না।আজ আমি বুঝতে পারছি,আমি কত বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম।তোর মত লোকের জন্যে দিনের পর দিন নিজে কষ্ট পেয়েছি,ওই মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েছি,কাঁদিয়েছি, যার এখানে কোনো দোষই নেই!ছি!নিজের প্রতিই লজ্জ্বা লাগছে এখন।রাগ হচ্ছে।

বোঁকা তুই নোস,বোঁকা আমি।বড্ড বেশিই বোঁকা।
নাহলে কি আর তোর মত ভাইয়ের জন্যে নিজের ভালোবাসা কে সেক্রিফাইজ করতে যাচ্ছিলাম?
যে ভাই স্বার্থ ব্যাতীত কিছুই বুঝলোনা?
আরে তুই যদি আমাকে নিজে থেকে বলতিস যে তুই পূর্ণতাকে চাস,আমি ওর জীবন থেকে খুশি খুশি চলে যেতাম।কিন্তু তার জন্যে আড়ালে বসে এতো ছক কষার দরকার পরতোনা ভাইয়া।
আমি যেমন তোর ভাই,তুইও তো আমার ভাই। তাইনা? তুই যদি আমার জন্যে নিজের ভালোবাসা কে ছাড়তে না পারিস তবে আমি কেন?যেখানে মায়াপরী আমার নিজের স্ত্রী?নিজের স্ত্রীকে সেক্রিফাইজ করবে,এতটা কাপুরষ ধ্রুব নয়।

ধীর রেগে কিছু বলতে গেলে ধ্রুব থামিয়ে দিল। বুকের সাথে দুহাত ভাঁজ করে বলল,
“অনেক প্ল্যান করেছিস ভাইয়া।অনেক প্ল্যান।
আর যাইহোক মিথ্যাচার করে বিয়ে করতে পারলেও আদৌ পূর্ণতার ভালোবাসা তুই পেতিসনা।কারণ, ও আমাকে ভালোবাসে।আমিই ভুল ছিলাম,যে তোর মত একটা লোকের হাতে ওকে তুলে দিতে চেয়েছি।মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হতে যাচ্ছিল প্রায়।ভাগ্যিস!সময় মতো বিয়েটা ভাঙল।এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে যে স্টোর রুমের ঘটনায় আসলেই তুই নির্দোষ কীনা!হতে পারে মিশুই ঠিক বলেছে।তোর মত পুরুষ কে বিশ্বাস করাও ভুল।

ধীর ফের চেঁচিয়ে উঠল ‘ ধ্রুব!লাগাম দে মুখে।
‘লাগাম এবার তুই টানতে শেখ।
ধ্রুব এক পা এগিয়ে এসে ধীরের চোখে চোখ রেখে নির্ভীক কন্ঠে বলল,
“পূর্ণতা আমার মায়াপরি।আমার স্ত্রী।একবার ওকে ছেড়ে দিতে চেয়েছি,কিন্তু সেই ভুল দ্বিতীয় বার করবনা আমি।আল্লাহর কালাম পড়ে যখন বিয়ের বন্ধনে বাধা পরেইছি,তখন ওর হাত আমি সারাজীবন আঁকড়ে থাকব।তোর মত হাজার ধীর আসলেও সেই হাত ছোটাতে পারবেনা।
ধীর কিড়মিড় করে বলল,
” খুব বড় ভুল করছিস ধ্রুব।
“ভুল তুই করছিস।ঘরে বউ রেখে অন্যের বউ নিয়ে টানাটানি করাটা রীতিমতো পাপ।অন্যায়।
এনি ওয়ে,অনেক রাত হয়েছে, আসছি।নিজের স্ত্রী নিয়ে তোর মত লোকের সাথে তর্ক করার রুচি, আগ্রহ, ইচ্ছে কোনওটাই আমার নেই।

ধীরের রক্তবর্ন দৃষ্টি,ধ্রুব তোয়াক্কা করলনা।ঘরে ঢুকে ধীরের মুখের ওপর ধড়াম করে দরজা আটকাল।
রাগে, ক্ষোভে হাত মুঠো হয়ে এল ধীরের।হিঁসহিঁস করে পাশের দেয়ালে গায়ের সবটুকু শক্তি দিয়ে ঘুষি বসাল।ধ্রুবর ঘরের বন্ধ দরজার দিক চেয়ে আওড়াল,
“কাজ টা তুই ঠিক করলিনা ধ্রুব।ঠিক করলিনা।
___

দরজা লাগিয়ে ফিরতেই ধ্রুবর চোখ গেল খালি বিছানায়।পূর্নতা নেই।ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে কাউচের দিক তাকাল।পূর্নতা গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে সেখানে।সারাদিনের ধকলে মেয়েটা চোখের পাতা খুলে রাখতেই পারেনি।ধ্রুব দুই ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“বাবাহ!আমার সাথে বিছানায় ঘুমাবে না বলে এতো কিছু?কিন্তু এসব যে চলবেনা মায়াপরী!

ধ্রুব লম্বা পায়ে এগিয়ে গিয়েই ঘুমন্ত পূর্নতাকে কোলে তুলল।ওকে এনে বিছানায় শোয়ালো।নরম তুলতুলে বালিশে মাথা ঠেকল পূর্নতার।ঘুম কাতুরে মেয়েটা কিচ্ছু টের পেলনা।ধ্রুব ওকে শুইয়ে দিয়ে হাটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসল।পূর্ণতার মুখের দিক নিষ্পলক চেয়ে থেকে বলল
” তোমার মুখে এত মায়া কেন?একটু কম কম হতে পারলো না?তাহলে তো আর অন্যের সাথে নিজের বউকে নিয়ে যুদ্ধে নামতে হতোনা আমার।

পূর্ণতার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় তুলল ধ্রুব।নরম আঙুল নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,

“বিশ্বাস করো, ভুল করেও কখনও ভাবিনি ভাইয়া এমন করবে আমাদের সাথে।বুঝলে কোনও দিনও ওই রকম একটা স্বার্থপরের হাতে তুলে দেয়ার জন্যে তোমার থেকে দূরে যাওয়ার ভুল করতামনা আমি।
ধ্রুবর কন্ঠ ভেঙে এল।চোখ চিকচিক করে উঠল।দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ঝুঁকে গেল পূর্ণতার মুখের ওপর। ঠোঁট ছোঁয়াল কপালের মাঝ-বরাবর।গভীর এক চুঁমু একে সরে এল।
মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলল
‘আমার মায়াপরি!ভালোবাসি তোমাকে।

_____
পূর্ণতার ঘুম ভাঙলো সকাল সকাল।নড়তে গেলেই গায়ের ওপর পেল শক্ত কিছুর স্পর্শ। নিভু নিভু চোখে তাকাল পূর্নতা।ধ্রুবকে পাশে শুয়ে থাকতে দেখে ততটা চমকায়নি যতটা চমকাল ধ্রুবর তাকে জড়িয়ে থাকা দেখে।রীতিমতো কাশি উঠে গেল পূর্নতার।
কাশির শব্দে নড়েচড়ে উঠল ধ্রুব।ঘুম ভাঙলোনা তাও।শেষ রাতে ঘুমিয়েছে বিধায় ঘুম দুচোখে জেঁকে বসেছে এখন।ধ্রুব নড়ে অন্যপাশ ফিরে শুলো।ছাড়া পেয়ে পূর্ণতা শ্বাস ফেলল।এতক্ষন আটকে ছিল যেন।বুকে হাত দিয়ে টের পেল দ্রিম দ্রিম শব্দ।সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বিছানা থেকে নেমে গেল পূর্নতা।ওয়াশরুম যাওয়ার সময় চোখ পড়ল ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়।পূর্ণতা দাঁড়িয়ে গেল।গায়ে বেনারসিটা আছে,অথচ গয়না নেই।কিন্তু ঘুমানোর সময় তো সবই ছিল।পূর্ণতার তখন খেয়াল পরল গয়না সব ড্রেসিং টেবিলের ওপরেই রাখা।তার মানে এগুলো ধ্রুব খুলেছে?ও হ্যা,সেতো কাউচে ঘুমিয়েছিল কাল।বিছানায় ও নিশ্চয়ই এই লোক নিয়েছে।পূর্ণতা ঘাড় ঘুরিয়ে ধ্রুবর দিক ফিরল।ভেঙচি কেটে বিড়বিড় করল,
‘এতগুলো দিন কাঁদিয়ে এখন দরদ দেখাচ্ছে!
____
ফ্রেস হয়ে নিচে নামল পূর্নতা।প্রথমেই খেয়াল পরল মিশরাকে।সকাল সকাল বসে বসে টিভি দেখছে। ত্রস্ত হাতে রিমোর্ট টিপছে সে।পাল্টাচ্ছে একের পর এক চ্যানেল।চেহারায় ফুটে আছে প্রচন্ড বিরক্তি। পূর্ণতা ওর দিকে এগিয়ে গেল,
জিজ্ঞেস করল,
” মিশু শরীর কেমন লাগছে এখন?জ্বর কমেছে দেখি__

পূর্ণতা হাত মিশরার কপালে রাখতে গেল,মিশরা তৎক্ষনাৎ মাথাটাকে সরিয়ে নিল।
– টিভি দেখছি। বিরক্ত করিস না,যা এখান থেকে।
পূর্ণতার মন খারাপ হলোনা।সে অভ্যস্ত এতে।এর মধ্যেই ধীর এসে দাঁড়াল ওর পাশে।শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল
” যে ভালোবাসার কদর বোঝেনা, তাকে ভালোবাসা দেখাতে যাস কেন পূর্না।সত্যি,তুইওনা!
মিশরা রেগেমেগে বলল,
“ব্যাস!শুরু হয়ে গেল, সকাল সকাল আমাকে জ্বালাতে এলে?
ধীর তাচ্ছিল্য হাসল,
“ফালতু কাজ কর্ম এই ধীর করেনা।
ধীর হনহন করে গিয়ে ডায়নিংয়ের চেয়ার টেনে বসল।মিশরা সেদিক চেয়ে দাঁত পিষে ধরল।ঠায় দাঁড়ানো পূর্নতাকে দেখে খেঁকিয়ে বলল
” দাঁড়িয়ে আছিস কেন?সর সামনে থেকে।
পূর্ণতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে চলে গেল।ধীর যত্র নিজের পাশের চেয়ার ইশারা করে বলল
“এখানে বোস।
নির্ভেজাল পূর্নতা ধীরের পাশেই বসল।
‘তুই দেখছি নতুন বউয়ের মত এক হাত ঘোমটা টেনেছিস পূর্না।
সেলিনা ধীরের সামনে খাবার রাখতে রাখতে বললেন,
‘ওতো নতুন বউ-ই।আমার ধ্রুবর বউ।এ বাড়ির ছোট বউ।
ধীরের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল।সেলিনার বেড়ে দেয়া প্লেট নিজের সামনে থেকে এক ঝটকায় ঠেলে দিয়ে বলল,
” এসব কী নাস্তা বানিয়েছ?আমি এগুলো খাই?
উপস্থিত প্রত্যেকে হকচকালেন।কাচের প্লেট ঠেলে দেয়ায় গ্লাসের পানিটাও উত্থলে উঠতে চাইল।সেলিনা অবাক কন্ঠে বললেন,
“ওমা!খাসনা মানে?তুইতো পরোটা খেতে ভালোবাসিস।
‘বাসি।তাই বলে এখন খাবনা।অন্য কিছু দাও।
পূর্ণতা বলল,
‘তাহলে কী খাবে ভাইয়া?স্যান্ডউইচ বানাব?
পূর্ণতার কোমল কন্ঠে ধীরের রাগটা কমে এল।তবুও চোখমুখ কুঁচকে বলল,
” কিছুনা।দিয়েছে যখন খাচ্ছি।
ঠেলে দেয়া প্লেট আবার টেনে কাছে আনল ধীর।পরোটা ছিড়ে মাংসের ঝোলে ভিজিয়ে মুখে দিল।সকলে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন।এই ছেলের মতিগতি বোঝা মুশকিল।
“এই মিশু তুই ওখানে বসে কেন?খাবিনা?
সেলিনার প্রশ্নে মিশরা উত্তর পাঠাল,
” না।
আশরাফ নম্র কন্ঠে ডাকলেন,
‘মিশু মা,না খেয়ে থাকবে কেন?এসো।বাবার পাশে বসে খাও।
মিশরার ফোঁসফোঁস রাগ উবে গেল।এই মানুষ টার প্রতি ভেতর ভেতর সে প্রচন্ড দূর্বল।টিভি বন্ধ করে এসে বাবার পাশে বসল।সায়রা পূর্নতাকে শুধালেন,
” ধ্রুব ওঠেনি?
‘না ছোট মা।
সেলিনা পূর্নতার প্লেটে খাবার দিতে গেলে পূর্ণতা বাধা দিল।
“আমি এখন খাবনা মামুনি।
‘কেন রে?খাবিনা কেন?
ধীর ও প্রশ্ন করল,
” খাবিনা কেন?
পূর্ণতা হাত কঁচলাতে কঁচলাতে বলল,
‘না মানে,উনি,উনি আসুক।
পূর্ণতার মিনমিনে স্বর সবার কানে গেল।সেলিনা, সায়রা একে অন্যের দিক চেয়ে মুখ চেপে হাসলেন।আশরাফ এমন ভান করল যেন শোনেইনি কিছু।এদিকে ধীরের পরে যাওয়া রাগ আবার তরতর করে বাড়ল।শক্ত হাতে পরোটা টেনে ছিড়ল।পুরো ক্ষোভটা দেখাল অবলা খাবারের ওপর।
কিন্তু মিশরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল পূর্ণতার দিকে।পূর্ণতা উনি উনি করে কাকে বোঝাল?ধ্রুব ভাইয়াকে?ও বাবা,এই একদিনে এত প্রেম?
মিশরা মাথা নাড়ল,ধীরের দিক চেয়ে মিটিমিটি হাসল।গায়ের ব্যাথা সব উধাও হয়ে গিয়েছে এই একটা আনন্দে।
মেহবুব খেতে খেতে বললেন,
“তাহলে যাও,ওকে ডেকে নিয়ে এসো।ও কখন না কখন উঠবে অতক্ষন তুমি বসে থাকবে?যাও।
পূর্ণতা উশখুশ করতে করতে উঠে গেল।ধীর তেজে পারলনা খাবার টেবিল উল্টে দিতে।গাঁট হয়ে বসে রইল ওভাবে।
___
রুমে আসা থেকে দাঁড়িয়ে আছে পূর্নতা।চোখ অবশ্য বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ধ্রুব’র দিকেই।
ডাকতে তো এলো, কিন্তু কীভাবে ডাকবে?সেতো পণ করেছে মনে মনে,এই লোকের সঙ্গে আর একটা কথাও বলবেনা।
পূর্ণতা পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝে খুঁটছে।আঁকিবুঁকি করছে কখনও কখনও।অনেকটা সময় পর পূর্ণতা ধ্রুবকে ডাকতে এগোল। প্রথমে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে ডাকল,
” শুনছেন?
উত্তর নেই।পূর্ণতা আরেকটু এগিয়ে বিছানা ঘেঁষে দাঁড়াল।
‘শুনছেন?খেতে ডাকছে।
এবারেও কোনো জবাব নেই।পূর্ণতা এবার ঝুঁকে গেল,হাত দিয়ে ধ্রুব কে ছুঁতে যাবে হুট করে ধ্রুব চোখ মেলল।সাথে হ্যাচকা এক টান মেরে পূর্ণতাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,নিজে আধশোয়া হলো ওর ওপর। পরপর ঘটনায় ভঁড়কে গেল পূর্ণতা।ধ্রুব কাছে থাকলেই যেখানে দম আটকে আসে,সেখানে এই অবস্থায় বেশিক্ষন থাকলে মরেই যাবে।ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হেসে ডান ভ্রু উঁচাল।পূর্ণতা তুঁতলে বলল,
“এসব,এসব কী ককী ধরনের অসভ্যতা?
ধ্রুব উত্তর না দিয়ে পূর্নতার নাকে নাক ঘষে দিল।পূর্ণতার চোখ বেরিয়ে এল এতে।শরীর শিরশির করছে সেই কখন থেকে।
” এতক্ষন তাহলে ঘুমের ভান ধরে ছিলেন?
” হু।তবে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো,সেই কখন রুমে এসেছ অথচ এতক্ষনে কাছে এলে?
ধ্রুবর অকপট স্বীকারোক্তি। পূর্ণতা মনে মনে বলল,
“কী শয়তান ছেলে!

মুখে বলল ‘ উঠুন।দম আটকে আসছে আমার।
” মিথ্যে বলছো!
পূর্ণতা ভ্রু কোঁচকালো,
” মিথ্যে বলে আমার লাভ?খাবার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে।আমাকে যেতে হবে।
” আমাকেও।
তবে এখন যদি আমরা দুজনই না যাই তাহলে ওরা কি ভাববে বলোতো?
“কি ভাববে?
ধ্রুব কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
‘সবাই ভাববে আমরা রোমান্স করছি।
পূর্ণতা মুখ হা করে বলল,
” অসভ্য লোক একটা!মেয়ে দেখলেই আপনার অসভ্যতামি বেড়ে যায় তাইনা?
নাকি নিজের নোরাকে মিস করছেন?
ধ্রুবর হাসিটা নিভে গেল।
“তোমার আমার মধ্যে নোরাকে আনছো কেন?
“আমি নিয়ে আসিনি। নিয়ে এসেছেন আপনি।আর যাইহোক আমি অন্ধ নই।বিগত দিন গুলোতে সবই চোখে পরেছে।
পূর্ণতা স্বর শীতল।ধ্রুব কে ফের ঠেলে বলল,
” উঠুন।
ধ্রুব কাতর কন্ঠে বলল,
” এমন কেনো করছো মায়াপরী?মানছি ভুল করেছি।কিন্তু সেটাতো__
পূর্ণতা এবারেও কথা সম্পুর্ন করতে দিলোনা।
” কালই বলেছি, আপনার কোনও কথাই শুনতে চাইনা আমি।আপনি সরবেন?নাকি না?
ধ্রুবর মুখ কালো হয়ে গেল।পূর্ণতার ওপর থেকে সরে গেল চুপচাপ।পূর্নতার খারাপ লাগলেও ধরা দিলনা।কেন দেবে?লোকটা এতগুলো দিন তাকে কাঁদিয়েছে।এখন কাছে পেয়ে ভালোবাসা উত্থলে পরছে?
পূর্ণতা যাওয়ার আগে ধ্রুবকে বলে গেল,
‘তাড়াতাড়ি আসবেন।

পূর্ণতা নিচে এসে একই জায়গায় বসতেই ধীর প্রশ্ন ছুড়ল
,”এতক্ষন লাগলো যে?
পূর্ণতা ছোট করে বলল,
‘ওই এমনি।
পূর্ণতার মাথায় ঘোমটা নেই এখন।ভেজা চুল দেখা যাচ্ছে।তার মানে ধ্রুব,পূর্নার মধ্যে__
ধীর নিজের মত ভেবে নিল।গলা দিয়ে খাবার নামলনা আর।উঠে দাঁড়িয়ে গেল।সেলিনা শুধালেন,
‘কি হলো?
‘খাওয়া শেষ।
‘তুইত কিছুই খেলি__
কথা শেষ করার আগেই ধীর হাটা ধরল। সিড়ির কয়েক ধাপ উঠতেই মুখোমুখি হলো ধ্রুবর।ধ্রুবও তখন নামছিল।ধীরকে দাঁড়াতে দেখে সেও দাঁড়াল।ধীরের চোখ লাল।
‘তুই তাহলে আমার প্রতিপক্ষ হয়েই গেলি ধ্রুব?
ধ্রুব বুঝলোনা।
‘মানে?
‘মানে টা এবার সময় বলবে।
ধীরের যাওয়ার দিক চোখ ছোট করে চেয়ে রইল ধ্রুব।কি বলে গেল তার ভাই?কীসের প্রতিপক্ষ?ধ্রুব মাথা না ঘামিয়ে নেমে এল।ঠিক ধীর যেখানে বসেছিল,পূর্নতার পাশের জায়গাটা?সেখানেই বসল।ওপর থেকে দৃশ্যটা দেখেই ধীর দাঁত খিঁচে ধরল।
‘ঠিক এইভাবে আমার জায়গা দখল করছিস ধ্রুব।চেয়ার থেকে শুরু করে পূর্নার জীবন, সবখানে।

সায়রা মনোযোগ দিয়ে মিশরাকে দেখছেন।কি শান্তভাবে খাচ্ছে মেয়েটা।এতটা চুপচাপ কবে হলো ও?অনেকক্ষনের নিরবতা ভাঙলেন আশরাফ।মেহবুবকে বললেন,
‘ভাইজান,আজ আমাদের যেতে হবে।
মেহবুব খাওয়া থামিয়ে তাকালেন,
‘কেন?কোনও দরকারি কাজ পরেছে?
‘জ্বি।ব্যাবসার কাজে সুইডেন যেতে হবে।

‘তাহলে সায়রা থাকুক আশরাফ ভাই?আপনি ও চলে যাবেন, তাহলে ও একা ওই বাসায় গিয়ে কি করবে?
‘আমিতো ওকেও সাথে নিতে চাইছি ভাবি।

তিন জোড়া চোখ বিস্মিত হয়ে একযোগে আশরাফের দিক তাকাল।সায়রা,মিশরা আর পূর্নতা।আজ এতগুলো বছরে এই প্রথম আশরাফ সায়রাকে নিয়ে যাচ্ছেন কোথাও।তাও বিদেশে?মিশরা মায়ের দিক তাকাল।সায়রা চোখ নামিয়ে নিয়েছেন।সকলকে লুকিয়ে মায়ের চোখের জল মোছার দৃশ্য ঠিক দেখে ফেলল মেয়ে।সাথে শান্তিও পেল ভেবে,
‘মম আর বাবার মধ্যে সব ঠিক হচ্ছে তবে।
পূর্ণতার বিস্ময় এবার হাসিতে পাল্টাল।তার বাবা কথা রাখছে তাহলে!আশরাফ মেয়ের দিকে তাকাতেই পূর্নতা ঠোঁট নেড়ে নিঃশব্দে বোঝাল,
‘থ্যাংক ইউ বাবা!
আশরাফ মৃদূ হেসে চোখের পাতা এক করলেন।অর্থাৎ নিরবে আস্বাস দিলেন মেয়েকে।মিশরা এটাও দেখল।ভীষণ অবাক লাগল তার।আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলনা।মাথা চক্কর দিল উলটে।
সেলিনা খুশি হয়ে বললেন,
‘বাহ!সায়রাও যাচ্ছে? খুব ভালো হবে।ওর অনেক ইচ্ছে ছিল বিদেশ ভ্রমনের।তাইনা?
সায়রা মৃদূ হেসে বললেন,
‘ওই আর কি!
ধ্রুব নিরব ব্যাক্তি।দেখলে মনে হবে তার সমস্ত মনোযোগ খাওয়ার মধ্যে।কিন্তু তার মস্তিষ্কে চলছে অন্য কিছু। ধীর কীসের কথা বলল, কী করতে চাইছে?পূর্নতার থেকে তাকে আলাদা করতে কতদূর যেতে পারে? এসবই মাথায় ঘুরছে।ঠিক তখন আশরাফ বললেন,
” কি ব্যাপার ধ্রুব? তুমি এতো চুপচাপ যে!
ধ্রুব তাকাল,
‘হু?না, এমনিই আংকেল।সবে ঘুম থেকে উঠেছিতো।তাই।
“ওহ আচ্ছা।ধীর তো নেই এখানে।কথাটা তবে তোমাদের তিনজন কেই বলি?
‘কী কথা আঙ্কেল?
সকলে তাকাল আশরাফের দিকে।আশরাফ আমুদে কন্ঠে বললেন,
“আমার তরফ থেকে তোমাদের জন্যে একটা উপহার আছে।
‘কী উপহার?
মিশরার প্রশ্নে
আশরাফ হেসে পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিলেন।বের করলেন চারটে কক্সবাজার ফ্লাইটের টিকিট।বললেন,
‘তোমাদের চার জনের হানিমুনের সমস্ত অর্গানাইজেশন করেছি আমি।
তিন জন প্রচন্ড ঝটকা খেল।সমস্বরে অবাক কন্ঠে আওড়াল
‘হানিমুন?
______
ঘরের মধ্যে অনবরত পায়চারি করছে ধীর।সকালে নাস্তার টেবিলে ঘটে যাওয়া খবর সে পেয়েছে।হানিমুনে যাবে ধ্রুব আর পূর্ণতা।মিশু যাবেনা এটাতে সে কনফার্ম। হয়েছেও তাই।ভেবেছিলো সে নিজেও মানা করে দেবে।তারপর ট্যুরটা ক্যান্সেল হবে আপনা-আপনি।,কিন্তু না,ওরা দুজন না গেলেও ধ্রুব আর পূর্ণতাকে অন্তত পাঠাবে সবাই।সেই থেকেই ধীরের মাথা খারাপ।
এখন ওদের আটকানোর উপায়?
কক্সবাজারে গিয়ে ওরা তো একে অন্যের আরও কাছাকাছি আসবে।তখন ওদের মধ্যে দুরুত্ব কিভাবে বাড়াবে?সাথেতো তার ও যাওয়া দরকার।কিন্তু একা যাবে কী করে?মিশুতো যাচ্ছেনা।ধীরের পায়চারির মধ্যই রুমে ঢুকল মিশরা।চিন্তিত ধীরকে একবার দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসল।চিরুনি তুলে আচড়াতে শুরু করল কালারিং চুলগলো।ধীর অনেকক্ষন ভেবে ভেবে একটা উপায় বের করল।ইতস্তত কাটিয়ে মিশরার পেছনে দাঁড়াল।মিশরা দেখেনি।ধীর যখন তার হাত থেকে চিরুনি নিয়ে নিল, খেয়াল করল তখন।ভ্রু গোঁটাল সে।ধীর চিরুনি দিয়ে মিশরার চুল আচড়াতে শুরু করতেই মিশরার চোখ ফেটে বেরিয়ে এল।বিস্ময়ের চোটে কথাই বলতে পারলনা।অবাক চোখে শুধু অচেনা ধীরকে দেখতে থাকল।ধীর আস্তে-ধীরে চুল আচড়াচ্ছে। সময় নিয়ে রয়ে সয়ে বলল,
‘একটা কথা বলবো মিশু?
ধীরের এত নরম কন্ঠ মিশরা কোনওদিন শোনেনি।তার বেলায় তো নয়ই।
‘কী?
ধীর আয়নায় মিশরার প্রতিবিম্বের দিক চেয়ে বলল,
“কাল রাতের জন্যে আ’ম স্যরি!তবে আমি কিন্তু অবৈধ কিছু করিনি।তুই আমার স্ত্রী।তোকে ছোঁয়ার অধিকার আমার আছে।বিয়ে যেভাবেই হোক আমরা বরং মেনে নিই সেটা।বাকি সব ভুলে গিয়ে সংসার করি।কি বলিস?
মিশরা অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,
” এসব তুমি বোলছো?
‘হ্যা।কেন?
মিশরা হেসে ফেলল।যেন দারুন কৌতুক শুনেছে।ধীরের মেজাজ খারাপ হলেও চুপ থাকল।
‘কাল রাতের জন্যে ক্ষমা করতে পারছিনা।
তবে হ্যা,মিশুর দ্বারা এসব সংসার টংসার আশা করা বোকামী।নিজের কাজ করো আর এই সব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।যত্তসব।
মিশরার কাটকাট জবাব।বলে দিয়ে রুম থেকেই বেরিয়ে গেল।ধীরের সব আশায় জল পরল এতে।রেগে চিরুনিটাকে আছাড় মারল ফ্লোরে।

মিশরা খুব আস্তে আস্তে হাটছে।মাথায় ঘুরছে ধীরের একটু আগের কথাগুলো।ধীর কি সত্যিই সংসার করতে চাইছে?তাও তার সঙ্গে?
কাল রাতে ধীরের স্পর্শে রাগ, ক্ষোভ উপচে পরেছে।এত হিংস্র একটা মানুষ হয়?
পূর্নতাকে বিয়ে করতে না পেরে শোকে দুঃখে যা করল তা মানা গেলেও কী বলল এখন?একদিনের মধ্যে সবার এত পরিবর্তন কী করে?
ওদিক পূর্নতার আচরনও কেমন অবাক করার মত।যা মিশরার ভাবনা চিন্তাকেও নাড়িয়ে দিচ্ছে।

“পূর্ণতাও তো ধীর ভাইয়া কে ভালোবাসতো। তবে ও কি করে পারলো ধ্রুব ভাইয়া কে মেনে নিতে?ওদের মধ্যে তো সব কিছু স্বাভাবিকই দেখলাম।তবে কি আমার বুঝতে ভুল হয়ে গেল?কোনও ভাবে পূর্ণতা ধ্রুব ভাইয়াকে ভালোবাসতো নাতো?
তখন সায়রা পেছন থেকে ডেকে উঠলেন,
‘মিশু!
মিশরা ঘুরে তাকাতেই বললেন,
” আমার ঘরে আয় একবার।কথা আছে।
সায়রা ঢুকে গেলেন রুমে।মিশরা কৌতুহল নিয়ে পা বাড়াল সেদিকে।
___
পূর্ণতা লাগেজ গোছাচ্ছে।ধীর আর মিশরার যাওয়া না হলেও তাদের যাওয়া হচ্ছে।পূর্নতা শত মানা করলেও কেউ কানে তোলেনি।বিশেষ করে সায়রা।কেন যেন সায়রা উঠেপড়ে লাগলেন ওদের হানিমুনে পাঠাতে।পূর্নতা তার ছোটমায়ের এত আগ্রহের মাথামুণ্ডু বুঝলোনা।তার আপত্তি শুনে আশরাফ প্রথম দিকে মেনে নিতেই যাচ্ছিলেন,কিন্তু সায়রার কথায় আর হলোনা।কি যে বোঝালেন বাবাকে কে জানে?অবশ্য যেতে তো পূর্নতাও চায়।মানা ওপর ওপর করছিল।ধ্রুবর প্রতি অভিমানের জন্যে।পূর্ণতা যখন কাজ,আর ভাবনায় মশগুল হূট করে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরল ধ্রুব।থুতনি গুঁজে দিল কাঁধে। পূর্ণতা চমকে উঠল।ধ্রুবকে দেখেই ক্ষেপে বলল,
“সব সময় এমন হুটহাট করে জড়িয়ে ধরবেন না আমায়।
” আমি না ধরলে কে ধরবে মায়াপরী?
বরং আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ধ্রুব।
“আপনাকে বলেছি না আমাকে নাম ধরে ডাকতে?

“বলেছিলে। কিন্তু আমি যে শুনছিনা তোমার কথা, তার প্রমান তো পাচ্ছো।

“আপনি এরকম কেনো করছেন বলুন তো?ছাড়ুন আমাকে।
পূর্নতার ছোটাছুটি এবারেও কাজে দিলোনা।ধ্রুব কপাল কুঁচকে বলল,
“সব সময় এতো ছাড়ুন ছাড়ুন করোনাতো,নিজের বউকেই তো ধরেছি।

পূর্ণতা তাচ্ছিল্য হাসল,
“,বউ?যেখানে বিয়েটাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে করেছেন সেখানে আবার কিসের বউ?
ধ্রুব মুচকি হাসল,
“ইচ্ছের বিরুদ্ধে নয়,ভালোবেসে করেছি।
পূর্ণতা মুখের ওপর বলল,
” এক মুখে দুরকম কথা বললে তাকে কি বলে জানেন?
দুমুখো সাপ!আর আপনি ঠিক তাই।
ধ্রুবর দুষ্টু হাসি মুছে গেল।হাত শিথিল হতেই পূর্ণতা নিজেকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।ধ্রুব কতক্ষন মন খারাপ করে চেয়ে থেকে হেসে ফেলল।
“যাচ্ছো যাও মায়াপরি!তবে সামনে কিন্তু আমার দিন আসছে।

চলবে…..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here