ফিলোফোবিয়া ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির ) ২০.

0
470

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২০.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

আজ ঈদ। সকাল থেকে বাড়িতে হৈচৈ। ঈদগাহ মাঠ থেকে ফিরে জাফর সাহেব মেয়েদের দেখতে না পেয়ে আওয়াজ দিলেন। ঈদের দিন ছেলে মেয়েরা আনন্দে হুল্লোড়ে মেতে থাকবে এতেই তো উৎসবের আনন্দ আরো দ্বিগুণ হবে। জাফর সাহেবের আওয়াজ শুনে হুড়াহুড়ি করে ছুটে এলো দুই মেয়ে। কার আগে কে সালাম করবে তা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি। প্রিয় দ্রুত সালাম করে তড়াক করে উঠে বাবার সামনে হাত ফেলে বলল,
‘ আব্বা আমার ঈদ সালামি।’
প্রভা কপাল কুঁচকে নিলো। ঝাঁঝালো গলায় বলল,
‘ আপার আগে আমি এসেছি। আমাকে আগে সালামি দিবে আব্বা।’
‘ তাতে কি! সালাম তো আমি আগে করেছি।’
ভ্রু নাচিয়ে বলল প্রিয়। প্রভা রেগে হাতপা ঝেরে বলল,
‘ ভালো লাগেনা প্রত্যেকবার তুই জিতিস। উফ!’
মুখ ভেঙ্গচি কাটল প্রিয়। কাঁধ নাচিয়ে বিজয়ের হাসি হাসল। মেয়েদের খুঁনসুটিতে জাফর সাহেব হেসে ফেলল। মেয়েদের হাতে সালামি তুলে দিতেই মেয়েরা খুশিতে নেচে-কুঁদে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। মায়ের কাছ থেকেও তো সালামি আদায় করতে হবে!

রাতে খাওয়াদাওয়ার পর মায়ের ঘরে গেল প্রিয়। মা তখন ঘর গোছাতে ব্যস্ত। গলা ঝেড়ে ডাকলো প্রিয়। আমেনা বেগম ঝাড়ু দিতে দিতে মেয়ের দিক এক পলক তাকালেন। জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে প্রিয়। মেয়ের কাচুমাচু মুখ দেখে আমেনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কিছু বলবি!’
প্রিয় যেন সাহস পেল। নীচু গলায় বলল,
‘ কাল দিতীদের বাড়ি আমাকে আর প্রভাকে দাওয়াত করেছে। যদি তুমি বলো….
প্রিয়’র কথা কেটে, আড়ষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আমেনা বেগম,
‘ দিতী কে? তোর ক্লাস সেভেনের বান্ধবী। যার বাবা ওইবার ইলেকশন করেছে?’
মাথা ঝাকাল প্রিয়। আমেনা বেগম একটু চুপ থাকল। তারপর বলল,
‘ নেতার বাড়ি, বখাটেদের ভিড় থাকে সবসময়। যেতে হবে না কোথাও।’
‘ ও অনেক করে বলছে। বাড়িতে কেউ নেই। প্রভাও তো সাথে যাবে।’
আমেনা বেগম সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো মেয়ের দিক।বললেন,
‘ যেতেই হবে?’
উপর নিচ মাথা ঝাঁকাল প্রিয়। আমেনা বেগম বললেন,
‘ গেলে তুই একা, প্রভা যাবেনা।
এতক্ষণ দরজার আড়ালে থেকে সব শুনছিল প্রভা। না যাওয়ার কথা শুনে আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো। মুখ কালো করে। কান্না মত মুখ করে বলল,
‘ কেন মা! আমিও আপার সাথে যাবো।’
‘ প্রিয়’র বন্ধু তুই কেন যাবি?’
প্রভার সুরে তাল মিলিয়ে বলল প্রিয়,
‘ ওকেও দাওয়াত করেছে। সাথে চলুক না মা!’
‘ আগামীকাল তোর আব্বার কলিগ সুহাস আহমেদ পরিবার সহ আসবেন। বাড়ি তোদের কাউকে না পেলে কি ভাববে?’
‘ কিন্তু মা….
‘ আর কোন কথা শুনতে চাইছিনা। প্রিয়’র বন্ধু ও যাক।তুই আমার সাথে বাড়িতে থাকছিস প্রভা।’
কড়াকড়ি করে বললেন আমেনা বেগম। মায়ের কথার পিঠে কথা বলার সাহস পেলনা প্রিয় প্রভা। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল চুপচাপ।

সচ্ছ আকাশ। সকালে মেঘ মেঘ গুমোট ভাব থাকলেও এখন একদম উজ্জ্বল আকাশ। ঝলমল করছে প্রকৃতি। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে শতাব্দ। রোদচশমা চোখে। সূর্যের প্রচণ্ড তাপ। তীর্যক আলো পড়ছে চোখেমুখে। ভাপসা গরম ছেড়েছে। পাঞ্জাবির কলারটা পেছন দিকে হেলিয়ে দিলো শতাব্দ। গাড়ির সামনের কাচের আড়াল থেকে প্রিয়কে দেখা যাচ্ছে। কালো গ্রাউন পড়েছে। এক হাতে হ্যান্ড ব্যাগ অন্যহাতে গ্রাউনের কুচি ধরে এদিকটায় আসছে। কোমর ছোঁয়া খোলা লতানো কেশ। লাজুক চোখমুখ। নিমিষেই অদ্ভুত এক মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেল শতাব্দকে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল সে।
গাড়ির জানালার কাচে টোকা পড়তে ঘোর কাটল শতাব্দের। দরজা খুলে দিলো সে। প্রিয় এসেছে। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো প্রিয়। বড় বড় শ্বাস ফেলছে। হাঁপিয়ে গেছে। ভ্রু কুঁচকে নিলো শতাব্দ। পানির বতলটা এগিয়ে দিলো। ঢকঢক করে এক বতল পানি শেষ করে ফেলল প্রিয়। অনবরত হাপাচ্ছে এখনো।
‘ হাপাচ্ছ কেন? কি হয়েছে?’
একটু সময় নিয়ে প্রিয় উত্তর দিলো,
‘ এলাকার অনেকেই আব্বার পরিচীত। সেই সুবাদে আমাদেরকেও চিনে। যদি কেউ দেখে আব্বাকে বলে দেয় কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।’
‘ প্রভা যাবেনা?’
‘ না, আজ দুপুরে বাসায় মেহমান আসছে। তাই প্রভাকে আসতে দেয়নি মা।’
গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে শতাব্দ জিজ্ঞেস করল,
‘ কোথায় যেতে চাও’
‘ আপনার এপার্টমেন্টে।’
প্রিয়’র অকপট আওয়াজে ভড়কে গেল শতাব্দ। পাশ ফিরে বিমূঢ় দৃষ্টিতে প্রিয়’র দিক তাকালো। প্রিয়’র সহজ সরল অকপট মুখ। আবার জিজ্ঞেস করল,
‘ কোথায় যাবে?’
‘ আপনার এপার্টমেন্টে। কেন?’
কপাল কুঁচকে সরল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রিয়। শতাব্দ হেসে ফেলল বলল,
‘ যা বলছো ভেবে বলছো তো?’
‘ এখানে ভাবাভাবির কি আছে। আপনার এপার্টমেন্টে দেখার খুব ইচ্ছা আমার। তাই আজ যখন সময় সুযোগ পেয়েছি তাই সেখানেই যেতে চাই।’
প্রিয়’র চাহনিতে নিছক সরলতা। সেখানে নেই কোন মিথ্যা অভিনয়, কৃত্রিমতার আশ্রয়। হেসে ফেলল শতাব্দ। বলল,
‘ এতটা সরলতাও ভালো নয় প্রিয়। তুমি আমার সাথে আমার এপার্টমেন্টে যেতে চাইছ! ভয় করছেনা তোমার? যদি তোমার ক্ষতি করে ফেলি!’
‘ ক্ষতি করার হলে আগে থেকে সাবধান করেনা কেউ। তাছাড়া আমার আপনার উপর ভরসা আছে!’
‘ কারো উপর এতো ভরসা রাখা ভালোনা প্রিয়। আমার তো নিজের উপর একবিন্দুও ভরসা নেই।’
‘ আপনি যেই কেউ না। আপনি আমার….
এতটুকু বলে থেমে গেল প্রিয়। ঠোঁট মেলে হাসলো শতাব্দ। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি তোমার?’
প্রিয় চুপ। মুখের সামনে ঝুঁকে এলো শতাব্দ। ধীর আওয়াজে আবার জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি তোমার..তার পর কি প্রিয়?’
লজ্জায় মিয়িয়ে যাচ্ছে প্রিয়। বুক ধুকপুক করছে তার। কাচুমাচু হয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে নিলো। হাত জড়সড় করে শক্ত হয়ে বসে রইল। হেসে দুরে সরে গেল শতাব্দ। গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে জিজ্ঞেস করল,
‘ তুমি সত্যি আমার এপার্টমেন্ট দেখতে চাও?’
বাহিরে তাকিয়ে লাজুক মাথা ঝাকাল প্রিয়।

শতাব্দের এপার্টমেন্টে এসে হতভম্ব প্রিয়। বাড়িটা কি চমৎকার দেখতে। ভেতরে ওয়েল ফার্নিস্ট। ইমান্দিপুরের বাড়ি থেকে এখানকার এপার্টমেন্টটা আরো বেশি সুন্দর করে সাজানো। দারুণ ফার্নিচার। জমিন মার্বেল পাথরের সাদা ফকফকে টাইলস মোড়ানো। চারিদিকে হরেক রকম লাইটিং আর অভিজাত পূর্ন জিনিসে সাজানো। ভেতরের আয়োজন সাজানো দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে, যিনি সাজিয়েছে নিশ্চয়ই ভীষণ সৌখিন মানুষ তিনি। এতবড় এপার্টমেন্টে শতাব্দ একা থাকে? এখানে বড়সড় পরিবার বেশ আরাম করে থাকতে পারবে নিঃসংকোচ।
সোফায় বসে উসখুস করছে প্রিয়। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে। গলা শোকাচ্ছে তার। শতাব্দকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছে। করবে কি, করবে না তা নিয়ে ভাবছে। প্রিয়’র মনের উসখুস ভাবটা বুঝি বুঝল শতব্দ। জিজ্ঞেস করল,
‘ কিছু বলতে চাও?’
প্রিয় যেন সাহস পেল। হতভম্ব কন্ঠে গড়গড় করে বলতে শুরু করল,
‘ এটা কার এপার্টমেন্ট? এখানে আপনি একা থাকেন?’
‘ বিশ একুশ বছর আগে, দাদাভাই তখন ইমান্দিপুরের চেয়ারম্যান। বাবা যখন নতুন নতুন ব্যবসা শুরু করলেন। ব্যবসার সুবাদে বেশিভাগ সময় এখানে থাকতে হতো বাবাকে। তাই আমি আর মা, বাবার সাথে এখানে থাকতাম। এই বিল্ডিংয়ের কাজ চলছিল তখন। বাবার ব্যবসার অবস্থাও বেশ ভালো ছিল। এপার্টমেন্ট গুলো বেশ সস্তা পানির দামে বিক্রি করছিল। তাই বাবা একটা কিনে রেখেছিল। কয়েক বছর এখানে ছিলাম। ইমান্দিপুরে ফিরে যাবার পর এতবছর এমনি পরেছিল। বছর তিনেক আগে রি- ডেকোরেট করা হয়েছে।’
প্রিয় জ্ঞানী ব্যক্তিদের মত মাথা ঝাকিয়ে বলল, ‘ওহ।’
শতাব্দ প্রিয়’রকে অন্যসব ঘর গুলো দেখাতে নিয়ে গেল। সব ঘর খালি পড়ে, তালাবদ্ধ। তালা খুলে এক এক করে দেখাচ্ছে শতাব্দ। সবশেষে শতাব্দের ঘরে ঢুকলে প্রিয় থমকে গেল। চোখমুখে চরম বিস্ময়ের ছাপ। সবকিছু এলোমেলো অগোছালো। কাপড়চোপড় বইপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বিছানার অবস্থাটাও বেহাল। এত সুন্দর ঘরটার এই কি হাল। কিংকর্তব্যবিমূঢ় প্রিয়। প্রশ্নসূচক বিমূঢ় দৃষ্টিতে শতাব্দের দিক মাথা তুলে তাকালো। শতাব্দ বলল,
‘ কাজের লোক ছুটে আছে। তাই গোছগাছ করা হয়নি।’
প্রিয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। টেনে বসার ঘরে নিয়ে এলো শতাব্দ। সোফায় আরাম করে বসে। ঘড়ির দিক তাকালো। তিনটা বাজতে চলছে। প্রিয়কে জিজ্ঞেস করল,
‘ ক্ষুধা পায়নি তোমার? আমার কিন্তু প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। সেই ভোরে বাড়ি থেকে নাস্তা করে বেরিয়েছি।’
‘ এত সকালে কেন?’
‘ বন্ধুদের সাথে গেটটুগেদার ছিল।’
‘ ওহ’ ঠোঁট গোল করে বলল প্রিয়।
‘ ক্ষুধা লেগেছে না? কি খাবে বলো?’
প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। ক্ষুধায় চুঁচুঁ করছে পেট। এক্সাসাইটমেন্টে সকালে নাস্তাটাও করেনি। লজ্জা, জড়তায় ভদ্রতাসূচক বাক্যে মুখে বলল,
‘ ক্ষুধা লাগেনি। পেট ভরা আমার।’
প্রিয়’র জড়তা বুঝল শতাব্দ। বলল,
‘ আমার পছন্দ মত কিছু নিয়ে আসবো। আমি বাহির থেকে লক করে দিয়ে যাচ্ছি। থাকতে পারবে? ভয় পাবেনা তো।’
মাথা নাড়াল প্রিয়। যার অর্থ ভয় পাবেনা। পকেট থেকে অন্যফোনটা বের করে প্রিয়’র হাতে দিয়ে বলল,
‘ ভয় পেলে ফোন করো।’
শতাব্দ বেরিয়ে গেল। মিনিট পাঁচেক এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে শতাব্দের ঘরে গেল। এলোমেলো সবকিছু দেখে অস্থির লাগছে প্রিয়’র। প্রথমে ঘরের জানালা দরজা খুলে দিলো। তারপর কোমরে ওড়না বেঁধে ঘর গুছাতে নেমে পড়ল। সবকিছু গোছগাছ শেষ করতে গিয়ে ক্লান্ত প্রিয়। হাত পা ছড়িয়ে সোফায় বসে পড়ল। মা এমন গোছগাছ করতে দেখলে, ভীষণ খুশি হতো নিশ্চয়ই! ভেবেই হেসে ফেলল প্রিয়। আচমকা, বিছানার পাশে ছবির ফ্রেমের দিক চোখ আটকালো। হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। চেয়ারম্যান সাহেব, শতাব্দ, তার মা কিন্ত পাশের লোকটাভীষণ চেনা চেনা লাগছে। এর আগে কোথাও কি দেখেছে? কোথায় দেখেছে!
মনে করার চেষ্টা করল প্রিয়। পারছেনা। কোথাও তো অবশ্যই দেখেছে।

বিকালের শেষ প্রহর। মুড়ছে পড়েছে সূর্যের আলো। তাপটা মিলিয়ে মৃদু বাতাস বইছে। র*ক্তবর্ণ সূরটা এখন নেতিয়ে গেছে। গোধূলি লগ্ন প্রায়। সোফায় জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে প্রিয়। অবাধ্য চুল চোখ ছুঁইছে বারবার। তিরতির কাঁপছে ঠোঁট। মৃদু বাতাসে শীত শীত কি লাগছে? আরো গুটিয়ে নিলো নিজেকে। হঠাৎ কেউ কপাল ছুঁয়ে কানের নিচে চুল গুজে দিলো। কারো অকস্মাৎ স্পর্শে কেঁপে উঠল প্রিয়। ধরফরিয়ে উঠে বসলো। ভড়কে যাওয়া বড়বড় দৃষ্টি মেলে সামনে তাকাতেই চমকাল। হেসে ফেলল শতাব্দ। বলল,
‘ শুভ বিকেল! তোমার কফি।’
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল প্রিয়। নড়েচড়ে উঠে বসলো। চুল ঠিক করতে করতে বলল,
‘ আপনি কখন এলেন?’
‘ অনেকক্ষণ।’
‘ ডাকেননি কেন?’
‘ ইচ্ছা করল না। ঘুমন্ত প্রিয়কে দেখতে ভীষণ মিস্টি লাগছিল।’
মুচকি হাসল প্রিয়। বলল,
‘সরি হুট করে আপনাকে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম।’
‘ আমার বাড়িতে ঢুকে আমার প্রিয়কে ছোঁয়ার সাধ্যি কার?’
আবারো হাসলো প্রিয়। লজ্জায় মাথা নুয়ে নিলো। সামনের টেবিলে গরম ধোঁয়া উঠা কফি দেখে বলল,
‘ কফি কে করেছে! আপনি?’
‘ রাতবিরেতে কফি খাওয়া’র বদঅভ্যাস তাই….’
এক্সাইটেড হয়ে তড়িঘড়ি করে কফির মগ তুলতে গিয়ে হাতের দিক চোখ পড়লো গাজরা গোলাপের মালা। চমকালো প্রিয়। বিস্মিত দৃষ্টিতে শতাব্দের দিক তাকালো। প্রিয়’র চোখেমুখে খুশির আমেজ উল্লাস স্পষ্ট।
‘ আপনি কি করে জানলেন আমার গাজরার মালা হাতে পড়তে পছন্দ?’
‘ উম! মনে হলো!’
‘ ধন্যবাদ।’
খুশিতে উজ্জ্বল চোখমুখ নিয়ে বলল।
কফির মগ হাতে তুলে চুমুক দিচ্ছে প্রিয়। নিমিষ চেয়ে রইল শতাব্দ। চোখ জুড়ে কি নিদারুণ সরলতা, পবিত্রতা। কপালে পড়ন্ত চুল গুলো গুছিয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা। কোমরে বেঁধে রাখা ওড়না। সাধারণের ভেতর ভীষণ অসাধারণ মেয়েটা। তার আশেপাশে থাকলে কেন এত অগোছালো হয়ে যায় শতাব্দ! তার ব্যক্তিত্ব, অস্তিত্ব ভুলে। নিজেকে ভুলে অন্য এক শতাব্দ হয়ে যায়। কোন এক অদ্ভুত নেশা টানে। বারবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করে প্রিয়কে।
শতাব্দকে এমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে নড়েচড়ে বসলো প্রিয়। কফির কাপ রাখার বাহানায় উঠতে গেলে আচমকাই পেছন থেকে হাত আটকে ধরল শতাব্দ। টেনে তার সামনের টেবিলটায় বসালো। প্রিয়’র কোমর থেকে ওড়নার গিট খুলে গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ এসব কেন করেছ প্রিয়?’
‘ আপনার ঘর অগোছালো ছিল তাই…
চোখ তুলে তাকালো শতাব্দ। প্রিয়’র কথা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল। প্রিয়’র হাত জোড়ায় গভীর করে চুমু দিলো। হাতে পিঠে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে দিতে, চোখে চোখ ডুবিয়ে নেশাতুর নিমিষ কন্ঠে বলল,
‘ আমার বউ হয়ে সংসার করতে ইচ্ছা করছে? আমার কিন্তু করছে! এমন কোমরে ওড়না গিট দিয়ে তোমাকে কাজ করতে দেখে, আমার ভীষণ বউ পেতে ইচ্ছা করছে। পাশেই কাজি অফিস। বিয়ে করে নেই! কি বলো?’
বলে চোখ টিপলো শতাব্দ। লজ্জা মিয়িয়ে গেল প্রিয়। চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চাইল। মানুষটা এমন বেফাঁস, লাগামহীন কেন!

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মতামত জানাবেন।

( প্রথম খন্ড শেষ হতে হয়তো আর চার- পাঁচ পর্ব বাকি)

টাইপোগ্রাফি: Maksuda ratna আপু🌺🥀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here