#ফুল_ফুটেনি_এই_বসন্তে,১৪ শেষ
#ফারজানা_আক্তার
তারপর আয়ান কোন দ্বিধা ছাড়াই বলা শুরু করলো “যদি তোমার বিশ্বাস না হয় আমার কথা তবে তুমি নয়নার থেকে জিজ্ঞেস করে নিও। আমি নয়নাকে বলেছিলাম তোমার সমস্যা আমি মেনে নিলাম তবে আমার একটা শর্ত আছে তুমি যদি সেই শর্তে রাজি হও এই বিয়ে আমি করবো নয়তো এই বিয়ে আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তখন নয়না বলেছিলো ও রাজি তবে এখন বুঝতে পারছি নয়না ওর ভাই ভাবির চাপে এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলো।”
“কি শর্ত দিয়েছিলে যা নয়না মেনে নিয়েছে এতো দ্রুত? ”
“আসলে শর্ত টা ছিলো, আমি ওকে বলেছিলাম আমার প্রথম স্ত্রী কে আমি ভীষণ ভালোবাসি তাই তার ভবিষ্যৎ সুখের জন্যই আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাই এখন কারণ আমার দ্বিতীয় বিয়ে সে পারবেনা সহ্য করতে তারপর আমাকে নিজ ইচ্ছাই ও ছেড়ে যাবে। আর যতদিন ও না যায় আর আমাদের ডিভোর্স না হয় ততদিন তুমি আমার থেকে স্ত্রীর অধিকার পাবেনা। আর এই কয়েকমাস আমি ছাঁদে ঘুমিয়েছি,বৃষ্টি পরলে সিঁড়ি রুমে রাত কাটিয়েছি। সবাই ঘুমানোর পর আমি খুব ধীরে ধীরে ছাঁদের দিকে পা বাড়াতাম।”
আয়ানের কথাগুলো শুনে চোখে অশ্রু রা বাঁধাহীন ভাবে ঝরতে লাগলো। যাকে আমি এতোটা স্বার্থপর বেইমান না জানি আরো কত কি ভেবেছি সে কিনা এই কয়েকমাস এতোটা কষ্টে রাত কাটিয়েছে শুধু মাত্র আমার ভবিষ্যৎ সুখের জন্য। বিশ্বাস করতে সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। তবুও নিজেকে সংযত করে আয়ানকে বললাম “আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
আয়ান জানতে চেয়েছিলো কি সিদ্ধান্ত, তারপর ওকে বললাম বলবো সময় হলে।
**********
শাহানা খালা চলে গেছে রাতের খাবার বানিয়ে দিয়ে। আমি সব খাবার টেবিলে সাজালাম একে একে সব এনে। আমার শ্বাশুড়ির জন্য খাবার রুমেই নিতে হবে। নয়না মন খারাপ করে সোফায় বসে আছে। আমি নয়নাকে কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই ওর। তাই ওর পাশে গিয়ে হালকা ধা’ক্কা দিলাম, হকচকিয়ে নয়না বলে কি হয়েছে কি হয়েছে। আমি একটু মলিন হাসলাম তারপর বললাম আরে পাগলী কিছুই হয়নি। তারপর নয়না জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো দেখলাম। নয়নাকে বললাম শ্বাশুড়ির খাবার রুমে দিয়ে আসার জন্য কিন্তু নয়না কিছুতেই রাজি হয়না তাই বাধ্য হয়ে আমিই নিয়ে গেলাম।
এভাবেই কাটতে লাগলো দিন কাল। হঠাৎ একদিন আমার শ্বাশুড়ি আয়ানকে ডেকে বলে ও যেনো আমাকে কখনোই ডিভোর্স না দেয়। আমি আর নয়না একসাথেই দাঁড়ানো ছিলাম। দু’জনেরই চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে শ্বাশুড়ির এমন কথা শোনে। কিন্তু রাগ হতে লাগলো মাথা মোটা আয়ানের কথা শোনে। ওর একটাই কথা ও আমাকে ডিভোর্স দিবে তাও আবার আমার ইচ্ছেতেই। কিন্তু আয়ান তো জানেইনা এখনো আমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হঠাৎ আমার শ্বাশুড়ির রুপ বদলানোর সুরে খুব বেশিই অবাক হয়েছি আমি। মাহিও দেখলাম সাপোর্ট করছে মায়ের কথায়। বুঝলামনা এদের মা মেয়ের হলো কি হুট করে। আমি আস্তে করে সরে গেলাম তারপর রুমে গিয়ে উকিলবাবুকে ফোন করে আসতে বললাম। আজ শুক্রবার তাই আয়ানও বাসায় আছে। এটাই সুযোগ, আমি নিশ্চিত আমার শ্বশুড় মারা যাওয়ার আগে আমার শ্বাশুড়িকে বলে গেছে সত্যি টা। তাইতো মা মেয়ের গলার স্বর অন্যরকম। কিন্তু আমি তো এতোটা স্বা’র্থ’প’র নয়। অন্যের হক মে’রে খাবো এমন শিক্ষা তো পায়নি ছোটবেলা থেকে। উকিলবাবু বললেন উনি আসতে আসতে সকাল ১০টা বাজবে তাই আমি রান্না ঘরে গেলাম কিছু নাস্তা তৈরি করার জন্য অবশ্যই নয়নাও সাহায্য করতেছে আমায়।
******
উকিলবাবুকে দেখে নয়না ভীষণ অবাক হলেও উকিলবাবু একটুও অবাক হলেননা বরং প্রিয়তমাকে প্রাণভরে দেখে দৃষ্টির তৃষ্ণা মিটাচ্ছেন।
সবাই সোফায় বসে আছেন। আয়ান আমার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিজ্ঞেস করে উকিলবাবুকে কেনো ডেকেছি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আয়ানের ভেতরটা শুকিয়ে যাচ্ছে। কেমন জানি ভয় পাচ্ছে আয়ান। আমার শ্বাশুড়ি আর মাহিরও একই অবস্থা। আয়ানের টা ভালোবাসা আর আমার শ্বাশুড়ি আর মাহিরটা শুধুই স্বার্থ। আমি একটু চুপ হয়ে রইলাম সবার অবস্থা বুঝার জন্য। হঠাৎ আমার শ্বাশুড়ি আমার কাছে এসে কান্নাজড়িতো এবং কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো “মা রিহানা তুমি যা বলবে তা-ই শুনবো আমরা। তোমার সব কাজ আমি আর মাহি করে দিবো। তোমার কথার উপরে কোনো কথা-ই বলবোনা। তুমি দয়া করে আয়ানকে তালাক দিওনা, আমাদের কে এই বাসা থেকে বের করে দিওনা। এই বাসার প্রত্যেকটা কোনায় আমার স্বামীর স্মৃতি আছে। আমাদের কে এভাবে নিঃস্ব করে দিওনা মা।”
আমার শ্বাশুড়ির এই কথাগুলোই আমি তেমন অবাক না হলেও আয়ান আর নয়না বেশ অবাক হয়েছে। আর উকিলবাবু যবে থেকে এসেছে নয়নার দিকেই তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আয়ান বিষ্মিত কন্ঠে ওর মাকে বলে “কি বলছো মা এসব তুমি? মাথা কি একেবারেই খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি তোমার?”
“হ্যাঁ খারাপ হয়ে গেছে মাথা। তুই চুপ থাক, তুই কিছু বুঝবিনা।”
“আমি সবই বুঝি মা। রিহানা যেমনটা চাই তেমনটাই হবে। আমি চাইনা আমার অক্ষমতার জন্য আমার মতো রিহানার জীবনটাও থেমে থাক।”
এবার আমার শ্বাশুড়ি হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে। আয়ান জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। তারপর আমার শ্বাশুড়িকে সোফায় গিয়ে বসতে বললো। আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি এদের কান্ডকারখানা। আয়ান চোখ বন্ধ করে ওর মাকে সব বলে দিলো। কেনো নয়নাকে বিয়ে করেছে, কেনো আমাকে অবহেলা করেছে, ওর মধ্যে কি সমস্যা সব এক এক করে ক্লিয়ার করেছে আয়ান। আমি শুধু মাত্র নয়নার জন্যই এই সত্যি টা সবার সামনে আসতে দিয়েছি নয়তো কখনোই আমি আমার আয়ানকে কারো সামনে এতোটা ছোট হতে দিতাম না। নয়না আয়ানের কাছে সেই ভালোবাসা কখনোই পাবেনা যা ওকে উকিলবাবু দিতে পারবে কারণ আয়ানের সবটা জুড়ে যে শুধুই আমি। সবটা শুনে কেমন জানি অনুশোচনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমার শ্বাশুড়ি আর মাহি। ওদের চোখ বলছে ওরা ভীষণ লজ্জিত কোনো প্রমাণ ছাড়া একটা বছর আমার সাথে খারাপ ব্যবহার জন্য।
ঢিপঢিপ করে কাঁপছে আমার হৃদয় যখন আয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো উকিলবাবুকে কেনো ডেকেছি। আমি একটু কেঁশে উকিলবাবুকে বললাম কাগজগুলো বের করুন। আমার কথা আয়ানের কানে পৌঁছার সাথে সাথেই আয়ান দ্রুত প্রশ্ন কিসের করলো কাগজ এগুলো। আমি খুব ধীর কণ্ঠে বললাম দেখলেই বুঝবা। উকিলবাবু আমার হাতে দুটো কাগজ দিলেন তারপর আমি মাহির সামনে গিয়ে ওর হাতে দিলাম একটা কাগজ আরেকটা দিলাম আয়ানের হাতে। আমার এমন কাজে সবাই শুধু অবাকের উপর অবাক হচ্ছে আর নয়না তো এক কোনে চুপসে দাঁড়িয়ে আছে। উকিলবাবুকে দেখে হয়তো ওর মনে ঝ’ড় বইছে এই মুহুর্তে। ভালোবাসা যে অদ্ভুত রকমের সুন্দর।
ওদের হাতে কাগজ দেওয়ার পর বললাম কাগজগুলো এই মুহুর্তে রাখো, পরে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো, একটু অপেক্ষা করো। এগুলো তোমাদের আমানত যা আমি তোমাদের ফিরিয়ে দিলাম।
তারপর নয়নাকে ডাকলাম কাছে। উকিলবাবু আরেকটা কাগজ বের করে আমার হাতে দিলেন। আমি কাগজটা আয়ানের সামনে ধরে বললাম “দাও সাইন করে দাও এই ডিভোর্স পেপারে।”
আয়ানের চোখে অশ্রু টলমল করছে দেখলাম। তাতে আমার কি, আমাকেও তো কষ্ট দিয়েছে কথা লুকিয়ে। একটু শো’ধ তো তুলতেই হবে। আয়ানের হাতে কলম ধরিয়ে দিয়ে বললাম দ্রুত সাইন করতে। আয়ান কাঁপা কাঁপা হাতে অশ্রুসিক্ত চক্ষু নিয়ে সাইন করে দিলো। সাইন করার পর বললো যাও আজ থেকে তুমি তোমার সুখের সন্ধানের খুঁজে লেগে যাও। আমি মৃদু হাসলাম। কিন্তু আমার হাসি যেনো আয়ানের পছন্দ হলোনা। সে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে চোখ-মুখ শক্ত করে সোফায় গিয়ে বসলো। আমার শ্বাশুড়ি ননদের চোখেও বিষ্ময়ের শেষ নাই। শান্ত আছে একমাত্র উকিলবাবু।
তারপর নয়নার কাছে গিয়ে একটু অাদুরে কন্ঠে বললাম “এবার তুই সাইন করে দে।”
নয়না চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো। আয়ান সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে বললো “নয়না সাইন করবে মানে? ও সাইন করবে কেনো?”
একটু হেসে বললাম “ওমা ও সাইন না করলে ডিভোর্স হবে কেমনে।”
“কি করতে চাইছো তুমি বলবে একটু??”
“জানতে চাইলে এতো কথা বলো কেনো? চুপচাপ বসে দেখো কি হয় না হয়।”
কথাটা একটু বিরক্তিকর কণ্ঠেই বললাম।
নয়না সাইন করতে না চাইলেও আমার ধমকে সাইন করে দেয়।
নয়না সাইন করার পর ওর আর উকিলবাবুর বিষয়টা সবার সামনে তুলে ধরলাম। সবাই হতভম্ব। সাথে তুলে ধরলাম ওর ভাই ভাবির নিষ্ঠুরতার কথা। তারপর আমরা সবাই মিলে নয়না আর উকিলবাবুর বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করে উনাকে বিদায় দিলাম। নয়নার মুখটা লজ্জায় লালছে হয়ে উঠেছে। আমার শ্বাশুড়ি মাহি আয়ান যেনো এখনো এক ঘোরের মধ্যে আছে। আর আমার মুখে লেপ্টে আছে মুচকি হাসি।
এবার আয়ান শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো এগুলো কিসের কাগজ?
আমিও শান্তভাবে বলা শুরু করলাম কারণ আর দেরি করার সময় নেই।
“একদিন বিকালবেলা আব্বু চিলেকোঠায় গিয়েছিলে তখন আমি ওখানেই ছিলাম। আব্বুকে হঠাৎ চিলেকোঠায় দেখে বেশ অবাকও হয়েছিলাম বটে। পরে আব্বু আমাকে অনেক কথা বলেছিলেন সেদিন এবং অনেক উপদেশও দিয়েছিলেন। আমি সব পালন করতে না পারলেও কিছু কিছু চেষ্টা করেছি। সেদিন আব্বু আমার হাতে একটা কাগজের প্যাকেট দিয়ে বলেন এই প্যাকেট যেনো উনার মৃত্যুর আগে না খুলি। আমিও খুলে দেখিনি আর। কিন্তু একদিন আমার হুট করেই খুব ইচ্ছে হলো প্যাকেটটা খুলে দেখার। আমি অনেক চেয়েছি না দেখতে তবুও অশান্ত মন বাঁধা না মেনে দেখেই নিলো। যেদিন আমি প্রথম খাবার টেবিলে সবার সাথে খারাপ আচরণ করেছি আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি সেদিনই আমি প্যাকেটটা খুলে দেখেছিলাম।”
“কি ছিলো প্যাকেটে?”
আয়ান জিজ্ঞেস করলো ধীর কণ্ঠে।
“প্যাকেটে কয়েকটা কাগজ ছিলো যেটাতে লেখা ছিলো এই বাড়ি ঘর আর বাবার যা অর্থসম্পদ আছে সব আমার নামে লিখে দিয়েছেন। বিশ্বাস করো তখন আমি থমকে গিয়েছিলাম। বাবা হুট করে কেনো এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন বুঝতে পারছিলাম নাহ। নিজের অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পরেছিলো। তখনই প্যাকেটর মধ্যে একটা টুকরো কাগজ দেখতে পেলাম তারপর সেটা হাতে নিয়ে মেলে পড়তে শুরু করলাম।”
“কি লেখা ছিলো টুকরো কাগজে?”
এবার খুব রাগান্বিত কণ্ঠে মাহি কথাটা বললো।
আমি একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলা শুরু করলাম “লেখা ছিলো *মা রিহানা আমি জানি তোমার সাথে এই পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্য খুব বাজেভাবে কথা বলে, অপমান করে, নির্যাতন করে তবুও তুমি চুপ আছো শুধুমাত্র সবাইকে ভালোবাসো বলে। তোমার এই চুপ থাকা তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আরো বেশি গাঢ় করেছে। আয়ানের দ্বিতীয় বিয়ের পর তো তোমার যন্ত্রণা আরো বাড়িয়ে তুলেছে সবাই। আমার বিশ্বাস সবাই তোমাকে ফেলে দিলেও তুমি কখনো ফেলে দিবেনা কাউকে তাই বিশ্বাস করে তোমার হাতে নিজের সব অর্থসম্পদ তুলে দিলাম।। তোমার সাথে সবাই যেভাবে আচরণ করছে এখন আমি জানি আমার মৃত্যুর পর তোমাকে সবাই এই ঘর থেকে ধা’ক্কা মে’রে বের করে দিতেও দ্বিধাবোধ করবেনা তাই সবাইকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য এমনটা করা খুব জরুরি ছিলো। তুমি যদি এক মুহুর্তের জন্য হলেও আমাকে বাবা মেনে থাকো মন থেকে তবে তুমি আমার সকল অর্থসম্পদ আর এই পরিবারকে সারাজীবন আগলে রাগবে। ভীষণ বিশ্বাস করি তোমায় আমি। আজ এসব বলার কারণ হলো আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে মা। ডাক্তার বলেছে আর কয়েক মাসের মধ্যে আমার মৃত্যু নিশ্চিত। আমার রোগটার কথা আমি তোমায় বলতে পারছিনা মা তবে এই রোগের চিকিৎসা অনেক করিয়েছি চুপে চুপে আমি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। প্রসাবে খুব জ্বালা করে আমার। ঔষুধও খেতাম নিয়মিত তবুও রোগটা গাঢ় হয়ে গেছে। আর তোমার শ্বাশুড়ির সাথেও শেয়ার করতে পারছিলাম না কারণ ও জানলে চিন্তায় ভে’ঙে পরবে আর আমি চেয়েছিলাম যতদিন বেঁচে আছি এই ধরনীতে তোমার শ্বাশুড়ির সাথে ভালো সময় কাটিয়েই পরপারে যাবো। অল্প সময়ে এরচেয়ে বেশি চাওয়া আমার আর কিছুই নেই। ক্ষমা করো মা নিজের স্বার্থের জন্য তোমার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদটুকুও করতে পারিনা। কারণ এতে যদি তোমার শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়া হয়ে যায় তবে ভালো সময় কাটানো তো আর হবেনা।
শেষে একটাই কথা বলবো কখনো মুখ বুঁজে অন্যায় সহ্য করবেনা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে অন্যায়কারী যেই হোকনা কেনো নয়তো অন্যায় করতে করতে তারা একসময় ভুলে যায় যে অন্যায় সহ্য করা ব্যক্তিটাও তাদের মতোই র’ক্তে মাং’সে গড়া একজন মানুষ।”
সবটা শুনে সবাই চুপসে গেছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই কিন্তু সবার চোখে জল। আমার শ্বাশুড়ি তো সোফায় ঢলে পরেছে। নয়না সামলাচ্ছে উনাকে। আমি দাঁড়িয়ে আছি চুপ হয়ে। আজ অনেক বেশি কথা বলা হয়ে গেছে। হঠাৎ সব নিরবতা ভেদ করে মাহির কণ্ঠ কর্ণকুহর হলো “আমাদের হক এভাবে আব্বু বাইরের একটা মেয়েকে দিয়ে যেতে পারলো?”
মাহির কথা শুনে দ্রুতই উত্তর দিলাম “কারো হক মে’রে খাওয়ার শিক্ষা আমার পরিবার আমাকে দেয়নি মাহি। তোমার হাতের কাগজটা খুলে পড়ে দেখো।”
একই কথা আয়নাকেও বললাম। আয়ান আর মাহি একসাথেই খুলে দেখলো। মাহি তো ভীষণ খুশি ওর ভাগের সব ও পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু আয়ান মুখ গোমড়া করে রেখেছে। আমি আয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম “তুমি খুশি হওনি?”
আয়ান উত্তর দিলো “এভাবে আব্বুর কথার অমান্য কেনো হলে? তোমার নামেই থাকতো সব এতে ক্ষতি তো কিছুই দেখলাম নাহ।”
তারপর অনেক বুঝালাম আয়ানকে। যেটাতে আমার কোনো অধিকার নেই সেটা আমি গ্রহণ করি কিভাবে তাই তো যার আমানত তার কাছেই ফিরিয়ে দিলাম। দুই ভাইবোনের নামে ভাগ করে দিলাম সব অর্থসম্পদ।
আমার শ্বাশুড়ি আর মাহি আমাকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে। আয়ানও খুব অনুতপ্ত।
আমি একটু হাসলাম তারপর একটু গম্ভীর কন্ঠে বললাম “মা আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি কিন্তু আমি তবুও ভুলতে পারবোনা সেদিনের অপবাদটা। সব ভুললেও সেটা ভুলতে পারবোনা কখনোই। আপনাদের সাথেই সারাজীবন কাটিয়ে দিবো কিন্তু আগের মতো সেই সম্মান আর আশা করবেননা দয়া করে আমার থেকে। আমি এই ঘরেই থাকবো কিন্তু মিশতে পারবোনা আর আগের মতো।”
আয়ানের সামনে গিয়ে বললাম “আয়ান ফুল ফুটেনি এই বসন্তে। বিশ্বাস করো অনেক চেষ্টা করেছিলাম তবুও ফুল ফুটাতে পারলাম না এই বসন্তে। দেখো চেয়ে নয়না আর উকিলবাবুরও তো একই কপাল। এই বসন্তে আর ফুল ফুটবেনা আয়ান। জানো আয়ান খুব বেশিই ভালোবাসি তোমায় কিন্তু তুমি বিশ্বাস রাখতে পারোনি আমার উপর, ভরসা রাখোনি আমার উপর। আমার ভালোবাসা তোমার কাছে ঢং ছিলো তাইতো এতো বড় একটা কথা লুকিয়ে গেছো আমার কাছে। আমাকে স্বার্থপর বানাতে উঠেপড়ে লেগেছিলে। একটুও কি আস্তা ছিলোনা? এতোটাই কি স্বার্থপর আমি? নাহ আয়ান আমি আগেও যদি সত্যি টা জানতাম তবে তখনও ছেড়ে যেতাম না তোমায়। তুমি বুঝতে পারোনি আমায় আয়ান। তুমি চিনতে পারোনি। তোমাকে সত্যিই বড্ড বেশি ভালোবাসি এই অভাগী আমি কিন্তু আগের মতো হয়তো আর কখনোই তোমার সাথে স্বাভাবিক হতে পারবোনা, কখনোই নাহ। হৃদয় টা চূ’র্ণ’বি’চূ’র্ণ করে দিয়েছো তবুও বলবো ভালোবাসি আয়ান ভালোবাসি।”
কথাগুলো শেষ করেই সবার সামনে থেকে চলে এলাম। সিড়ি বেয়ে উঠছিলাম ছাঁদে। সিঁড়ি রুমে আসতেই দেখি ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর এক মুহুর্তও থেমে না থেকে দুই হাত মেলে মনের আনন্দে বৃষ্টিবিলাশ করতে লাগলাম তখনই আমার পাশে অনুভব করলাম কেউ এলজনের অস্তিত্ব। দৃষ্টি মেলে দেখলাম আয়ান মুগ্ধ হয়ে দেখছে আমায় সাথে বৃষ্টি বিলাশ।
***************সমাপ্তি*****************