“বউ যখন কাজের মেয়ে”
>পর্ব-৩৩
লিখা-মান্না ইসলাম মাহিম
.
আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতেই প্রিয়া ঘুমের মধ্যেই ভয়ে মাহিমের বুকে মুখটা লুকিয়ে মাহিমের শার্ট এর কলার চেপে ধরলো!মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়া তাকে এমন ভাবে জরিয়ে ধরেছে যেন মনে হচ্ছে প্রিয়া তার পৃথিবীর থেকে আপন মানুষটা কে কাছে পেয়েছে।ছাড়তেই চাইছে না।মাহিম কিছুক্ষণ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ার শরিল ঠান্ডায় কাপছে।এরপর মাহিম প্রিয়াকে খাটের কাছে এনে সুইয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে দিল!
মেয়েটা কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে অনেক নিষ্পাপ লাগে।ইচ্ছে করে ওর মায়া ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে!প্রিয়ার মায়া ভরা নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকায় মাহিমের মনে প্রিয়ার জন্য মায়া জন্ম নিল।সত্যি মেয়েটা কে অনেক কষ্ট দিয়েছি।অনেক অবহেলা অপমান করেছি আর না।মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ঠিক করলো।এবার থেকে আর প্রিয়ার সাথে খারাপ ব্যাবহার করবে না!সব সময়ই তার সাথে ভালো ব্যাবহার করবে।আর প্রিয়া অকারণে কষ্ট দিবে না!
এরপর মাহিম কিছুক্ষণ প্রিয়ার দিকে তাকিয়া থাকার পর রুমে জানালাটা বন্ধ করে দিল।তারপর খাটের কাছে এসে একপাশ হয়ে কম্বল টেনে সুয়ে পরলো!সকাল বেলা মাহিম ফ্রেশ হয়ে প্রিয়ার কাছে এসে দেখলো প্রিয়া কম্বলটা ভালো করে পেচিয়ে এখনো ঘুমচ্ছে!প্রিয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে মাহিম আর প্রিয়াকে ডাকলো না।জ্বর আছে কিনা সেটা দেখতে মাহিম প্রিয়া গায়ে হাত দিতেই প্রিয়ার ঘুম ভাঙ্গলো!প্রিয়া চোখ খুলতেই মাহিম কে দেখে তারাহুরো করে উঠে বসে পরলো!নিজেকে খাটের উপর আর গায়ে কম্বল দেখে অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো…
প্রিয়া:-আআমি এখানে কি করে?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
প্রিয়ার কথা শুনে মাহিম কোন উত্রর না করে উঠে পরলো।প্রিয়া মাহিমকে চুপচাপ দেখে আবার বলে উঠলো..
প্রিয়া:-কি হলো কথা বলছেন কেন?বলুন আআমি খাটের উপরে কেন?
প্রিয়ার কথা শুনে মাহিম প্রিয়ার দিকে একবার তাকালো।তারপর মাহিম রেডি হতে হতে বলতে..
মাহিম:-কৈফত চাইছেন আমার কাছে?
প্রিয়া:-না না কৈফত চাইতে যাব কেন?কাল রাতে বাহিরে সুয়ে ছিলাম।আর এখন দেখছি খাটের উপরে।তাই জানতে চাইছি আমি এখানে কি করে এলাম?(মাহিমের পিছন থেকে)
মাহিম:-সেটা আমি কি করে বলবো?আমি আপনাকে মেঝে থেকে উঠিয়ে খাটের উপরে আনিনি(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া খেয়াল করলো।মাহিম আজকে ওর সাথে অন্যরকম ভাবে কথা বলছে।আগের মতো রাগি রাগি ভাবে কথা বলছে না।একদম শান্ত ভাবে কথা বলছে।যার মাঝে কোন রাগ অভিমান নেই!
মাহিম:-কি হলো এমন করে কি ভাবছেন?
প্রিয়া:-না মানে আপনিই এনেছেন।নাহলে আমি তো ঘুমিয়ে পরে ছিলাম।আমি তো আর ঘুমের মাঝে হেটে হেটে আসিনি খাটে।(মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম:-যদি এনে থাকি তাহলে বেস করেছি।আপনাকে বাহিয়ে সুতে কে বলেছে?
প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলেই মাহিম আবার রেডি হতে লাগলো..
প্রিয়া:-বাড়ির কাজের মেয়ের তো ওটাই আসল জায়গা তাই না?
মাহিম:-তাই বলে আমার রুমের সামনে?
প্রিয়া:-আমি কোথায় সুবো সেটা আমার ব্যাপার। আপনি আমাকে খাটে নিয়ে এসেছেন কেন সেটা বলুন?(মাহিমের পিছন থেকেই চেচিয়ে)
মাহিম কিছু না বলে একটু রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকাতেই প্রিয়া ভয় পেয়ে গলা নামিয় বলতে লাগলো..
প্রিয়া:-না এই কৈফত আমি আপনার কাছে চাইতেই পারি তাই না?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম কিছু বলছে না।শুধু প্রিয়ার কথাগুলো শুনছে!
প্রিয়া:-আর এখন-ই বা আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখতে আপনাকে কে বলেছে?(বাচ্চদের মত অভিমানী ভাব)
মাহিম:-এই সবকিছু আপনি বলে দেওয়ার পর আমি করবো নাকি?(একটু রেগে)
প্রিয়া:-হ্যা অন্তত আমার ব্যাপারে আপনাকে তাই করতে হবে!
প্রিয়ার কথা শুনে মাহিম একটু রেগে খাটের কাছে এগিয়ে এসে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে..
মাহিম:-এই এত কথা বলছেন কেন?এমন একটা ভাব করছেন যেন আমি আপনাকে কাল রাতে…..
প্রিয়া:-দেদেখুন একদম আজে-বাজে কথা বলবেন না বলে দিচ্ছি।আমি আপনাকে ঐসব কথা বলেছি নাকি?
মাহিম:-তাহলে এত প্রশ্ন করছেন কেন?
প্রিয়া:-দেখুন আমি আপনাকে কোন প্রশ্ন করছি না।আমি শুধু জানতে চাইছি আমি খাটে এলাম কি ভাবে?
মাহিম:-আমি নিয়ে আসছি…
প্রিয়া:-আপনি নিশ্চই আমাকে কোলে উঠিয়ে এনেছেন?
মাহিম:-হুম!কোলে উঠিয়ে নিয়ে আসছি, কি করবেন?(রাগি ভাবে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-কেকেন? কে বলেছে আপনাকে আমাকে কোলে করে খাটে আনতে?
মাহিম:-বাবা এমন ভাব করছেন যেন এর আগে আপনাকে কেউ কোলে উঠয়-নি?
প্রিয়া:-না উঠয়-নি!
মাহিম:-কেন আপনার শিহাব আপনাকে কোনদিন উঠয়-নি?
প্রিয়া নিশ্চুপ কিছু বলল না।মাহিম প্রিয়াকে চুপ করে থাকা থেকে আবার ডেসিন এর সামনে গেলো।তারপর মাথার চুল ঠিক করতে করতে বলতে লাগলো…
মাহিম:-কি হলো এখন চুপ কেন?কথা শেষ হয়েগেল নাকি?
প্রিয়া:-আপনি আসলে একটা ঝগড়াটে মানুষ,সব সময়ই শুধু ঝগড়াই করতে চান।(একটু রাগি ভাবে)
প্রিয়ার কথা শুনে মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকালো।তারপর বলে বলল.
মাহিম:-মুখ দিয়ে দেখি ভালোই কথা ফুটছে?
প্রিয়া:-যেটা সত্যি সেটাই বললাম।আপনি সত্যই একটা ঝগড়াটে মানুষ(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-হয়েছে হয়েছে! এবার উঠে তারাতারি আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসুন যান!
আজকে সূর্য কোনদিকে উঠেছে? মানুষটা কেমন জানি অচেনা অচেনা মনে হচ্ছে!মাহিমের দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রিয়া!
মাহিম:-কি হলো?
প্রিয়া:-(চমকে উঠে)না কিছু না।আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি এক্ষনি নিয়ে আসছি!
এইবলে প্রিয়া উঠে রুম থেকে বেড় হয়েগেল!
প্রিয়া নীচে এসে দেখলো অর্পা সবকিছুই করেছে।প্রিয়া অর্পার কাছে অর্পা প্রিয়াকে দেখে অর্পা টেবিলের উপর সবকিছু রেডি করতে করতে বলে উঠলো..
অর্পা:-আরে প্রিয়া ঘুম ভাঙ্গলো বুঝি?
প্রিয়া:-না মানে আপু….
অর্পা:-থাক কিছু বলতে হবে না।মাহিমের অফিসে যাওয়ার সময় হয়েছে।যা খাবার নিয়ে উপরে যা..
প্রিয়ার দিকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে..প্রিয়া অবাক দৃষ্টিতে দেখে খাবারের প্লেট হাতে নিতে নিতে বললতে লাগলো..
প্রিয়া:-আপু আপনি এত কষ্ট করে এইসব করতে গেলেন কেন? আমি-ই করতাম(খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে)
অর্পা:-(হাসি মুখে)কেন মাহিম বুঝি আমার ভাই না?
প্রিয়া:-না না আপু আমি সেই কথা বলছি না।আমি…
অর্পা:-(হেসে হেসে)হয়েছে হয়েছে যা এবার। লেট হলে এইদিকে আবার তোর উনি রেগে না খেয়েই অফিসে চলে যাবে।
অর্পা কথা শুনে মুখে প্রিয়া ঠোঠে হাসি ফুটে উঠলো।তারপর প্রিয়া আর কিছু না বলে খাবার নিয়ে উপরে চলে গেলো!
এভাবে ৭দিন কেটে যাওয়া পর!প্রিয়া মাহিমদের বাসায় আগের মতো করেই বাসার সমস্ত কাজ করে বাট আগের সবাই খারাপ ব্যাবহার করে না!শুধু মাহিম মা আর মাহিমের বাবা এনারা দু-জনি একটু সুযোগ পেলেই শুধু করে দেয়।বাট মাহিম আর অর্পা দু-জনি প্রিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা।অর্পা আগের মতো প্রিয়ার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে না!ফ্রেন্ড এর মতোই অর্পা প্রিয়ার সাথে সবকিছুই শেয়ার করে।মাহিম ও এই ৭দিনে প্রিয়ার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেনি।প্রিয়া এইরকম অসুস্থ শরিল নিয়ে বাসার সমস্ত কাজ করতে কষ্ট হলেও”জীবনে কখন কিছুই পাইনি আর কিছু আশাও করি না!জীবনের শেষ মুহূর্ত গুলো এভাবেই কাঠিয়ে দিব!এটা ভেবে প্রিয়া নিজের মন কে শান্তনা দিয়ে সমস্ত যন্ত্রণা সহ্য করে।সব সয়ই হাসি মুখে বাড়ির সমস্ত কাজ করে!
আজকে সারাটা দিন প্রিয়ার অনেক কষ্টে কাঠলো!সকাল থেকেই মাথায় হালকা ব্যাথা আর যন্ত্রণা করছে।একদম কিছুই ভালো লাগছিল না!ইচ্ছে করছিল সুয়ে থাকতে বাট কোন উপায় নেই!সারাদিন মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ির সমস্ত কাজ তারাতারি শেষ করতে প্রায় সন্ধা হয়ে আসলো!রাতের রান্নাবান্না করতে ৯টা বেজেগেলো!রাতের রান্নাবান্না শেষ করে টেবিলের উপর সব রেডি করে রেখে দিল!সারাদিন এভাবে কাজ করে খুব ক্লান্ত অনুভাব করছিল তাই একটু ফ্রেশ হয়ে সুয়ে পরলো!মাহিম এখনো বাসায় ফিরেনি তাই খাটের উপরে সুয়ে চোখ বন্ধ করে একটু রেস্ট নিচ্ছিল।এমন সময়….
অর্পা:-এই প্রিয়া??(রুমের ভিতর আসতে আসতে)
অর্পার ডাক কানে পরতেই প্রিয়া চমকে তারাতারি উঠে বসে…
প্রিয়া:-হ্যা বলুন কিছু লাগবে?
অর্পা:-এভাবে সুয়ে আছিস কেন? শরিল খারাপ?
প্রিয়া:-না আপু এমনি!কি লাগবে বলুন?(বসা থেকে উঠে)
অর্পা:-গলাটা কেমন সুখনা সুখনা লাগছে, ১কাপ কপি হবে?
প্রিয়া:-আপনি বসুন আমি এক্ষনি বানিয়ে নিয়ে আসছি!
এইবলে প্রিয়া উঠে রুমে বেড় হয়ে যাচ্ছিল এমন সময়!
অর্পা:-আচ্ছা শোন(প্রিয়ার পিছন থেকে)
প্রিয়া:-(পিছন দিকে ঘুরে)জ্বী?(অর্পার দিকে তাকিয়ে)
অর্পা:-তোর জন্য ১কাপ সহ নিয়ে আশিস কেমন!
প্রিয়া:-ঠিক আছে!
১০টার এইদিকে মাহিম বাসায় ফিরলো!
আজকে মাহিম এর ও অফিসে অনেক ধকল গেছে।মাহিমও আজকে প্রায় সারাটা দিনিই কাজের ব্যস্ততায় কাঠিয়েছে।দুপুর বেলা লান্স করারও সময় পায়নি!আজকে অনেক জায়গায় মাহিমকে মিটিং Mntn করতে হয়েছে।অনেক টায়ার্ড মাহিম!মাহিম বাসায় এসে রুমে ঢুকতেই দেখলো প্রিয়া আর অর্পা কপির কাপ হতে বসে গল্প করছে।মাহিম রুমে আসতেই প্রিয়া একবার মাহিম এর তাকিয়ে আবার গল্পে মনযোগী হলো!অর্পা তাদের ছোট্ট বেলার গল্প বলছে প্রিয়াকে!
মাহিম রুমে এসে বাথরুম গেলো!তারপর ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হতে নিয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো তারা একটু হাসাহাসি করছে।মাহিম কিছু না বলে খাটের উপর বসে ফেসবুকিং করতে লাগলো!
কিছুক্ষণ পর অর্পা রুম থেকে বেড় হয়েগেলো।
প্রিয়া খেয়াল করলো মাহিম মুখটা কেমন করে যেন বসে আছে।এরপর প্রিয়া এক গ্লাস জল নিয়ে মাহিমের কাছে এসে…
প্রিয়া:-এই নিন জল…(মাহিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
মাহিম কিছু না বলে জলের গ্লাসটা প্রিয়া থেকে নিয়ে ছুড়ে মারতেই প্রিয়া হাত এগিয়ে দিতেই, প্রিয়ার হাতে সাথে লেগে ভেঙ্গে প্রিয়ার হাত কেটে গেলো!প্রিয়ার হাত কেটে যেতেই প্রিয়া চিৎকার দিয়ে হাতটা চেপে ধরলো।তারপর মাহিমর দিকে তাকালো।প্রিয়া কিছুই বুঝতে পারলো না সে হাত চেপে ধরেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে…
প্রিয়া:-গ্লাসটা এভাবে ছুড়ে ফেলে দিলেন কেন?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
-waiting for next part-
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!)