“বউ যখন কাজের মেয়ে”
>পর্ব-৩৪
লিখা-মান্না ইসলাম মাহিম
.
.
প্রিয়া খেয়াল করলো মাহিম মুখটা কেমন করে যেন বসে আছে।এরপর প্রিয়া এক গ্লাস জল নিয়ে মাহিমের কাছে এসে…
প্রিয়া:-এই নিন জল…(মাহিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
মাহিম কিছু না বলে জলের গ্লাসটা প্রিয়া থেকে নিয়ে ছুড়ে মারতেই প্রিয়া হাত এগিয়ে দিতেই, প্রিয়ার হাতে সাথে লেগে ভেঙ্গে প্রিয়ার হাত কেটে গেলো!প্রিয়ার হাত কেটে যেতেই প্রিয়া চিৎকার দিয়ে হাতটা চেপে ধরলো।তারপর মাহিমর দিকে তাকালো।প্রিয়া কিছুই বুঝতে পারলো না সে হাত চেপে ধরেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে…
প্রিয়া:-গ্লাসটা এভাবে ফেলে দিলেন কেন?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-কুকুর কে লায় দিলে মাথায় উঠে জানতাম।মানুষেও যে একি অবস্থা সেটা জানতাম না!(রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া:-মানে?
মাহিম:-আমি আপনার অনুগত দাস নাকি?….নাকি প্রজা মনে করেন আমাকে?(রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া একদম নিশ্চুপ হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিমের দিকে কিছু বলছে না!
মাহিম:-সমস্ত হাহাহিহি শেষ হলো,এবার নিজের সময় মতো আমাকে জল দিতে এসছেন!আমি কি আপনার কাছে জল চেয়েছি নাকি?(রাগি কন্ঠে প্রিয়ার দিকে তাকিয়েই)
প্রিয়া:-চাননি ভালো কথা, তবুও দিতে এসেছিলাম তো?(মাহিমের দিকে তাকিয়েই)
মাহিম নিশ্চুপ কিছু বলল না।
প্রিয়া:-খাবেন না সেটা বললেই হতো,এভাবে ছুড়ে ফেলে দিলেন কেন?
প্রিয়ার কথা শুনে মাহিম রেগে বসা থেকে উঠে প্রিয়ার কাছে এসে বললতে লাগলো..
মাহিম:-বেস করেছি ফেলে দিয়েছি,আবার দিতে আসলে আবার ফেলবো!আর আপনি এনে দিতে বাধ্য কারণ…আপনি এই বাড়ির কাজের মেয়ে।কথাটা সব সময়ই মনে রাখবেন(প্রিয়ার কাছে এগিয়ে এসে রাগি কন্ঠে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া মাহিমের চোখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সকালের মাহিম আর এখনকার মাহিমের মাঝে কোনই মিল খুজে পাচ্ছে না।প্রিয়ার কাছে দু-টো আলাদা মানুষ মনে হচ্ছে!প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।প্রিয়ার চোখ ছলছল করছে।চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে।প্রিয়াকে চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকার দেখে..
মাহিম:-এই কথাটা সময় মাথায় রাখবেন।
রাগি চোখে প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে মাহিম বলল।এর মাহিম কিছুক্ষণ ছলছল চোখে মাহিমের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো..
প্রিয়া:-হুমম ঠিকি বলেছেন আপনি!..আর ধন্যবাদ আপনাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
কাদো কাদো ভাবে মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেই প্রিয়া চোখে জল নিয়ে মেঝে থেকে গ্লাস ভাঙ্গা টুকড়ো গুলো কুড়াতে লাগলো!মাহিম চুপ করে রাগি ভাবে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে ঘুড়ে দাড়ালো।এরপর সমস্ত গ্লাস টুকড়ো গুলো কুড়িয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে রুম থেকে বেড় হয়েগেল।মাহিম কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে প্রিয়ার বেড় হয়ে যাওয়াটা দেখলো।তারপর খাটের উপর বসে পরলো!অনেক্ষণ হলো কিন্তু প্রিয়া রুমে আসলো না।কিছুক্ষণ পর প্রিয়া রুমে আসলো।রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল।তারপর খাটের কাছে এসে মেঝেতে বিছানা করতে লাগলো।
মাহিম কিছু বলছে না।চুপ করে খাটের উপর বসে আছে।এরপর প্রিয়াও কিছু না বলে মেঝেতে বিছানা করে সুয়ে পরলো!
সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট করে অর্পা ওর এক ফ্রেন্ড এর বাসায় গেলো।কিছুদিন ধরে অর্পার এক ফ্রেন্ড অসুস্থ। তাই দেখলো গেলো।একটু পর মাহিম ঘুম থেকে উঠে দেখলো প্রিয়া রুমে নেই!প্রাই অফিসে যাওয়ার সময় হয়েছে!মাহিম কিছুক্ষণ সুয়ে থাকার পর মাহিম উঠে বাথরুমে গেলো!
একটু পর বেড় হয়ে এসে ফ্রেশ হতে ডেসিন এর সামনে যেতেই চোখে পর তার সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলে রেডি করে রাখা!অন্যদিনের মতো প্রিয়া আজকে আর মাহিমকে কিছুই জিঙ্গেস করেনি যে ও খাবে?উপরে খাবে নাকি নিচে খাবে?
এইসব কিছুই জিঙ্গেস না করে নিজের দায়িত্ব মতো নাস্তা টেবিলে রেখে দিয়েছে!মাহিম অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে কিছুক্ষণ রুমে ওয়েট করলো।ও খেলো কি খেলো না।সেটা দেখার জন্য একটি বারের জন্যও প্রিয়া রুমে আসলো না।এরপর মাহিম ব্রেকফাস্ট না করেই অফিসে চলেগেল!
কেটে যাওয়া হাত দিয়ে প্রিয়া কোন কাজেই করতে পারছে না।একটু পানি লাগতেই শুধু জ্বলে উঠছে।
অর্পাও আজকে বাসাতে নেই যে ওর কাছ থেকে ঔষধ লাগিয়ে নিবে।অর্পা এখনো ফ্রেন্ড এর বাসা থেকে ফিড়েনি।কি আর করার কাজ তো করতেই হবে।এরপর প্রিয়া নিজের শাড়ির আচল ছিড়ে হাতে বেধে কাজ করতে লাগলো!
সারাদিন কাজ করার পর প্রিয়া স্লান করে টেবিলে সবার জন্য রাতে খাবার রেডি করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর সবাই খেতে বসলো।
মাহিমের মা:-এই মেয়ে অর্পা বাসাতে ফিরেনি?(খেতে খেতে বলল)
প্রিয়া:-না।ফোন করে বলেছে ফিসবে না!
মাহিমের মা:-মাহিম ফিরেছে?
প্রিয়া:-না!উনি ও এখনো ফেরিনি!
রাত ১১টারএইদিকে মাহিম বাসায় ফিরলো।রুমে এসে দেখলো প্রিয়া রুমে নেই!এরপর মাহিম ফ্রেশ হতেই একটু পর প্রিয়া রুমে আসলো এসে…
প্রিয়া:-আপনার খাবার খাবেন নাকি নিয়ে যাব?(দরজায় দাড়িয়ে)
প্রিয়ার কথা শুনে মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে”সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই অফিসে গিয়েছি আর অনি এখন এসে বলছে খাব কিনা?মনে মনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে মাহিম!
প্রিয়া:-কি হলো কিছু বলছেন না কেন?
মাহিম:-না রাতে খাব না নিয়ে যান!(একটু রাগি ভাবে)
এরপর প্রিয়া আর কিছু না বলে খাবার নিয়ে চলেগেলো!মাহিম দেখলো আজকে প্রিয়া কোন জোরাজুরি করলো না।চুপচাপ খাবার নিয়ে চলে গেলো!প্রিয়া রুমে থেকে খাবার নিয়ে বেড় হতেই মাহিম রেগে খাটের উপর বসে পরলো!
কিছুক্ষণ পর প্রিয়া রুমে আসলো!তারপর দরজাটা আঠকে ভিতরে আসতেই…
মাহিম:-আপনি খাবার গুলো রেখে আসলেন কেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বসা থেকে)
প্রিয়া:-আপনিই তো বললেন খাবেন না।এরজন্য তো আমি খাবার গুলো রেখে আসলাম(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মাহিম:-আমি বললাম বলেই আপনি খাবার গুলো রেখে আসবেন?
প্রিয়া:-অতভূত ব্যাপার তো?…আপনি তো দেখছি ডায়ে গেলেও কাঠেন বায়ে গেলেও কাঠেন?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়ার কখা শুনে মাহিম ও কিছুক্ষণ চুপ করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে থাকার পর বলতে লাগলো!
মাহিম:-ওহ তার মানে আজকে রাতে আর আমার খাবার জুটবে না তাই তো?
প্রিয়া:-দেখুন আমি আপনার জন্য খাবার উপরে আনতে পারবো না।খাবার খেতে হলে নিচে যেতে হবে।আর এমনিতেই খাবার গুলো ঠান্ডা হয়েগেছে।(মাহিমের দিক থেকে চোখ গুলো সরিয়ে নিয়ে)
মাহিম:-থাক আমাকে দয়া করতে হবে না!
প্রিয়া:-আমি আপনাকে দয়া করি?(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম:-হ্যা তাই তো করছেন!একটু খাবার খেতে চাইছি বলে শর্ত দিচ্ছেন, নিচে যেতে বলছেন।
প্রিয়া:-দেখুন আমি কোন শর্ত দেইনি।আপনি এমন কোন অসুস্থ না যে নিচে যেতে পারবেন।(একটু বিরক্তিকর ভাবে)
মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়াকে দেখতে কেমন জানি লাগছে।মুখটা একদম সুখনা সুখনা লাগছে।একদম শান্ত ভাবে কথা বলছে।কোন রাগ কোন জোর নেই!হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো টেকে যাওয়া জায়গায় আচল দিয়ে বেধে রেখেছে!
মাহিমকে চুপ করে থাকা দেখে প্রিয়া বলে উঠলো..
প্রিয়া:-কি হলো চুপ করে আছেন কেন?নিচে যাবেন?
মাহিম:-হুম ঠিক আছে নিচে না হয়া যাব!…..আপনি হাতে ওষধ(ঔষধ) লাগিয়েছেন?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া মাহিমের কথা শুনে মাহিমে দিকে তাকালো, কিছু বলছে না।শুধু অন্যরকম একটা দৃষ্টি নিয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো!মাহিম ও কিছু বলছে না প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে!
কিছুক্ষণ মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর প্রিয়া বলে উঠলো..
প্রিয়া:-সেটা জেনে আপনি কি করবেন?(
মাহিম:-যেটা বলছি সেটার উত্রর দিন আগে।আসলে কাল রাগের মাথায় যেটা করেছি সেটা করা একদমি উচিৎ হয়নি।
মাহিমের কথা শুনে প্রিয়ার চোখে জল চলে আসলো।ভেজা চোখে মাহিমের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো..
প্রিয়া:-কতটা নিলজ্জ আপনি!এখন আবার আমাকে টিজ করছেন।এতটা সজতা মনে করেন আমাকে?(চোখে জল নিয়ে কাদার মতো করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়ার চোখে জল দেখে মাহিম প্রিয়ার কাছে এগিয়ে আসলো।তারপর প্রিয়ার ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে একদম স্বান্ত ভাবে বলতে লাগলো.
মাহিম:-আমি আপনাকে কি মনে করি সেটা আপনি কোদিনও বুঝেন-নি আর…আমি আশাও করিনা যে আপনি কোদিন বুঝবেন!
প্রিয়া:-যথেষ্ট বুঝি আমি!আপনি আসলে আমাকে কাঠের পুতুল মনে করেন।আমার মন শরিল বলে কিছু নেই।কষ্ট দিলেও আমি ব্যাথা পাইনা!
তাই আপনি আমাকে যখন ইচ্ছে অবহেলা অপমান এমন কি গা এ হাত পর্যন্ত উঠাতে দিধা করেন না।(চোখে জল নিয়ে মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে)
মাহিম কিছু বলছে না।চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়া:-শুধু যে আমাকে শরিলে কষ্ট দেন তা তো নয়।আমার মনটা কেও আপনি….
প্রিয়া কিছু একটা বলতে গিয়ে বলতে পারলো না।কান্না আরো বেড়ে গেলো।
এরপর মাহিম বললতে লাগলো..
মাহিম:-অন্যকথা বলুন শুনে নিব মনের কথা না!কারণ মন বলে বস্তুটা আপনার নেই।
প্রিয়া নিশ্চুপ কিছু বলল না।মাহিমের দিকে তাকিয়ে!এরপর মাহিম প্রিয়া টেকে যাওয়া হাত ধরতেই প্রিয়ার চোখে কান্নারবনা বইতে লাগলো।এরপর মাহিম প্রিয়ার টেকে যাওয়া হাতে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার..
মাহিম:-কাল রাগের মাথায় আপনাকে ব্যাথা দিয়ে ফেলেছি,তার জন্য স্যরি!(প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে)
প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে চোখে ফেলার পর..
প্রিয়া:-আপনার এই ব্যাথা দাওয়াটা না আমি এখন সহ্য করতে পারি….কিন্তু আপনার এই স্বান্ত্রনা দাওয়াটা সহ্য করতে পারি না(চোখে জল নিয়ে মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়েই)
-Waiting for Next Part-
আর ২/৩পর্বে শেষ করার কথা!
গল্পটা ভালো লাগলে পড়বেন আর
ইচ্ছে করলে লাইক কমেন্ট করবেন!
বাট বাজে কমেন্ট কেউ করবেন না!