বউ
Part- 12
writer: #Nur_Nafisa
.
.
(সকালে নাফিসার ঘুম ভাঙতেই দেখলো রেহান পাশ ফিরে ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা ফুটিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব লজ্জা লাগছে নাফিসার। সে রেহানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। রেহান তার লজ্জামাখা ফেস দেখে হাসির রেখা আরো প্রশস্ত করলো। তারপর নাফিসার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বললো…)
.
রেহান- হেভ এ সুইট মর্নিং ডিয়ার। ওয়েলকাম টু ম্যারিড লাইফ বউ।
.
(নাফিসা লজ্জায় রেহানকেই ঝাপটিয়ে ধরে রেহানের বুকে মুখ লুকালো। রেহান কাথাটা আর একটু টেনে দুজনের মাথাসহ ঢেকে দিলো।)
.
নাফিসা- ওঠো… দুষ্টুমি করবে না একদম…
.
কে শুনে কার কথা!
.
নাফিসাকে আজ রুবিনা তার একটা শাড়ি দিয়েছে পড়ার জন্য। নাফিসা শাড়ি পড়ে রান্নাঘরে আছে আয়েশা ও রুবিনার সাথে। রুবিনাকে টুকটাক হেল্প করছে আর আয়েশা ও রুবিনার গল্প শুনছে। রেহান ভোরে নামাজ পড়ে বাসা থেকে বেরিয়েছিলো। বাসায় ফিরে নাফিসাকে রুমে দেখতে না পেয়ে কিচেনে উকি দিয়ে হা হয়ে আছে! নাফিসা আজ তার আম্মুর নীল রঙের কাতান শাড়ি পড়েছে! তার উপর ভেজা চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে! খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু ডাকবে কিভাবে! তার শাশুড়ী আর আম্মু এখানে! পানি পান করার অজুহাতে কিচেনে ঢুকলো। রুবিনা একটু অবাক ই হলো, কারণ পানি পান করার জন্য কিচেনে আসার কি দরকার! ড্রয়িং রুমেই তো পানি রাখা আছে! তা ও কিছু বললো না। নাফিসা একবার তাকিয়েছিলো তার দিকে, রেহান রুমে যাওয়ার ইশারা করলে নাফিসা ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালো। রেহান পানি পান করে বেরিয়ে গেলো। রুমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার কিচেনে এলো।)
.
রেহান- নাফিসা, আমার ফোনের চার্জার দেখেছো?
.
নাফিসা- না।
.
রেহান- আম্মু, আব্বু কোথায় গেছে?
.
রুবিনা- বেয়াই সাহেবের সাথে বেরিয়েছে।
.
রেহান- রিয়াদ?
.
রুবিনা- রিয়াদও
.
রেহান রুমে ফিরে এলো। রুবিনা নিরবে হাসলো। সে বেশ বুঝতে পারছে রেহান বারবার কেন আসছে! নাফিসাও হাসলো কিন্তু তা প্রকাশিত হয়নি। রেহানের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে! এই মেয়ে কি তার ইশারা বুঝতে পারছে না! এবার রুম থেকে জোরে চিৎকার করেই বলতে লাগলো….
.
রেহান- আম্মু, পারলে ১কাপ কফি করো…
.
রুবিনা ৪কাপ কফি বানিয়ে ইচ্ছে করেই ২কাপ নাফিসার কাছে দিলো রেহানকে দেওয়ার জন্য। নাফিসাকে এবার নিরুপায় হয়ে রুমে যেতেই হলো। রেহান টিশার্ট খুলে সোফায় বসে ফোন দেখছে। নাফিসা এসে বেডসাইড টেবিলে ১কাপ কফি রেখে ঘুরে দাড়াতেই দেখল রেহান তার খুব কাছে এসে দাড়িয়েছে। এইটুকু সময়ে রেহান দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তারপর নাফিসার হাত থেকে অন্য কাপটা নিয়ে রেহান টেবিলে রেখে দিলো।
.
নাফিসা- রেখে দিলে কেন! এটা আমার। আমি খাবো না!
.
রেহান- রাখো তোমার কফি খাওয়া! কতোক্ষণ আগে ডেকে এসেছি, এতো লেট করেছো কেন! আগে তার মাশুল দাও….
.
বলেই নাফিসাকে নিয়ে খাটে ঝাপিয়ে পড়লো। দু’হাতে নাফিসার হাত চেপে ধরলো বিছানায়।
.
নাফিসা- কি হচ্ছে কি এসব! সরো…
.
রেহান- (নাফিসার গলায় নাক ঘষতে ঘষতে) এই শাড়ি পড়েছো কেন! আমার মাথা হ্যাং করার জন্য!
.
নাফিসা- তুমিই তো বলেছো শাড়ি পড়তে।
.
রেহান- নীল রঙ টা তোমাকে মানিয়েছে বেশ। ম্যাচিং ব্লাউজ কোথায় পেলে!
.
নাফিসা- শাশুড়ী আম্মুর টা ই। দেখছো না কেমন ঢিলা! সরো, কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
.
রেহান- হোক, আমার কাজ আগে।
.
রেহান ১০-১৫ মিনিট পর নাফিসাকে ছাড়লো। তারপর টেবিল থেকে কফি কাপ নিয়ে একটা সে খেতে লাগলো আর একটা নাফিসার হাতে দিলো। নাফিসা কাপ নিয়ে দেখলো কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে। সে রেগে রেহানের হাতেই কাপ ধরিয়ে দিলো।
.
রেহান- খাবে না?
.
নাফিসা- তুমিই খাও তোমার কফি
.
রেহান- হাহাহা…. ওকে আমিই খাই। বের হওয়ার আগে শাড়ির আচলটা মাথায় দাও। ঘাড়ের স্পট দেখা যাচ্ছে।
.
নাফিসা দরজার সামনে থেকে দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দেখলো সত্যিই ঘাড়ে স্পট দেখা যাচ্ছে। গলার দিকটাও লাল হয়ে আছে। আবার রেহানের দিকে রেগে তাকিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রুম থেকে বেরিয়ে রিয়াদের রুমে চলে গেলো।
.
রায়হান চৌধুরী বাসায় ফিরলে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।
.
রেহান- আব্বু আজ অফিস যেতে হবে?
.
(সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রেহানের দিকে! ছেলে বাবার কাছে সরাসরি কেমন প্রশ্ন তুলছে! আর রায়হান চৌধুরী মনে মনে ভাবছে ” নতুন বিয়ে করেছিস, অফিস যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলে তো কৌশলেও ছুটি নিতি। সবার সামনে ছুটি চাওয়ার কি দরকার ছিল, ব্যাক্কল!”
রেহান সবার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে আবার বলতে শুরু করলো….)
.
রেহান- না, মানে নাফিসাকে নিয়ে শপিং এ যেতাম। তাই বলছিলাম…
.
রায়হান- তোমার ইচ্ছে।
.
রিয়াদ- আমিও যাবো শপিং করতে…
.
রেহান- স্কুলে যাবে কে? আমি….?
.
রিয়াদ- ১দিন অফ করলে কিছু হবে না। টিচারকে বলে দিবো ভাইয়ার বিয়ে ছিলো তাই আসিনি….
.
রায়হান- হাহাহা….. বুঝলেন বেয়াই সাহেব, আমার বড় ছেলের চেয়ে বেশি ইন্টেলিজেন্ট ছোট ছেলে।
.
রিজোয়ান- হাহাহা….
.
রেহান রুমে এসে দেখলো নাফিসা খাটে বসে পা ঝোলাচ্ছে। রেহান দরজা লক করে নাফিসার কাছে এসে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বসলো।
.
নাফিসা- রেডি হয়ে অফিস যাও শশুর আব্বুর সাথে। বিকেলে যাবো শপিং এ।
.
রেহান- না, আজ ছুটি নিয়েছি।
.
নাফিসা- নো… কোনো ছুটি নেই। এখনই অফিস যাবে। যাও…
.
রেহান- কি হয়েছে তোমার? আমরা মাত্র কাল বিয়ে করলাম, আমাদের তো একটু আলাদাভাবে সময় কাটানো প্রয়োজন। হুম?
.
নাফিসা- বাকিরা কি ভাববে বলো তো। আর আমাদের বিয়ে নেক্সট উইকে আবার হবে। তাছাড়া বিয়ে হলেও অন্যকাজ রেখে বসে থাকবে এটা কেমন হলো! সব কাজ নির্দিষ্ট নিয়মে চলবে, আর এর মাঝে যে সময়টুকু বাকি থাকবে সেটা ই আমরা ২জন মিলে উপভোগ করবো।
.
রেহান অবাক! বাচ্চা মেয়েটা এতো সিরিয়াস হয়ে গেছে কিভাবে! মাত্র এক দিনেই ওর মধ্যে বাচ্চাভাবটা হারিয়ে ম্যাচিউর ভাব এসে পড়েছে।
.
নাফিসা- কি হলো?
.
রেহান- ওকে মিসেস। যাচ্ছি অফিস।
.
রেহান বসা থেকে উঠতে যাবে নাফিসা আবার হাত ধরে বসিয়ে দিলো…
.
নাফিসা- রাগ করেছো?
.
রেহান মুচকি হেসে নাফিসার কপালে চুমু দিলো…
.
রেহান- না, রাগ করিনি। ভাবছি আমার বউ একদিনে কতটা ম্যাচিউর হয়ে গেছে। পাগলামী একেবারেই কমে গেছে। কিন্তু আমার সাথে পাগলামী করতে হবে অলটাইম। এটা বাদ দেয়া যাবে না।
.
নাফিসা উত্তরে শুধু মুচকি হাসলো।
.
রেহান গোসল করে এলে নাফিসা আলমারি থেকে শার্ট বের করে রেহানকে দিলো কিন্তু রেহান শার্ট নিলো না। এবার নাফিসা রেহানের দিকে চোখ পাকিয়ে শার্ট পড়িয়ে দিলো। রেহান হেসে নাফিসার কোমড় জড়িয়ে ধরে দাড়ালো আর নাফিসা কলার ঠিক করে শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছে।
.
রেহান- বউ…
.
নাফিসা- হুম?
.
রেহান- আজ আম্মুর ফোন টা সাথে রাখবা। অফিসে থেকে কল করবো। বিকেলে শপিং এ গেলে তোমাকে ফোন কিনে দিবো।
.
নাফিসা- নো…. অফিসে কাজ করতে যাবে প্রেম করতে না। সো নো কল… আর ফোন আমার ই আছে, বিডি সিমকার্ড নেই ।
.
রেহান- কোথায় তোমার ফোন? একবারও তো দেখলাম না।
.
নাফিসা- আমার পার্সে।
.
রেহান- এমন করো কেন! কাজ তো করবোই, ফাকে ফাকে বউ এর সাথে প্রেম ও করবো।
.
নাফিসা- এমন করলে তুমি কাজ করতে পারবে না।
.
রেহান- পারবো…. কোথায় তোমার ফোন? দেখাও…
.
নাফিসাকে ছেড়ে আলমারি থেকে মোবাইলের বক্স নিয়ে সেখান থেকে একটা সিমকার্ড বের করলো আর নাফিসা লাগেজ থেকে পার্স বের করে ফোন দিলো রেহানের কাছে। রেহান সিম লাগিয়ে দিলো….
.
নাফিসা- তুমি আমি মিলে ১জন, সো ১বারের বেশি কল দিবে না।
.
রেহান- তুমি ১, আমি ১ এবং আমরা দুজন মিলে ১। টোটাল ৩টা দিবো। ওকে…..
.
নাফিসা- স্টুপিড।
.
রেহান- হাহাহা….. তোমার ড্রেস গুলো আলমারি তে জায়গা করে রেখে দিও। না পারলে আমি ফিরে রাখবো।
.
নাফিসা- ওকে
.
রেহান নাফিসার মুখটা ধরে ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো।
.
রেহান- আমার টা দিবে না?
.
নাফিসা- ইশ! আমার লজ্জা লাগে।
.
রেহান- লন্ডন যাওয়ার সময় দিয়েছিলে কেন! ওদিন লজ্জা লাগে নি! না দিলে অফিস যাবো না।
.
নাফিসা- স্টুপিড, চোখ বন্ধ করো….
.
রেহান- না….
.
নাফিসা এক সেকেন্ড সময় নিয়ে রেহানের গালে চুমু দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রেহান ও হাসতে লাগলো। তারপর বাবার সাথে অফিসে চলে গেলো।
.
চলবে…….