বউ
Part- 14
writer: #Nur_Nafisa
.
.
সকালে নাস্তা করার পর মি ও মিসেস আহমেদ ব্যস্ত হয়ে পড়লো গোছগাছ করতে। আর নাফিসা শশুর আব্বুকে বলে রেহানের ছুটি নিয়ে নিলো ঘুরতে যাবে বলে।
.
নাফিসা- মটো, দ্রুত তৈরি হয়ে নাও, ঘুরতে যাবো।
.
রিয়াদ- ওকে….
.
রেহান- এটা কি হলো! রিয়াদ যাবে কেন? তুমি একা যাবে কিনা বলো, না হলে কাউকে যেতে হবে না । তাছাড়া রিয়াদের স্কুল আছে।
.
রিয়াদ- (চিৎকার করে) ভাইয়া! আমিও যাবো। আগামী ১সপ্তাহ আমি স্কুলে যাবো না। আব্বু টিচারকে কল করে বলে দিবে। আর আমি বড় ভাইয়ার বিয়ের উপলক্ষে ৭দিনের ছুটি চাহিয়া একখানা আবেদন পত্র লিখিয়া আব্বুর সিগ নেচার নিয়া জমা করিয়া আসবো, ব্যাস!!!
.
নাফিসা- হাহাহা….
.
রেহান- বাহ! যার বিয়ে তার খবর নেই, প্রতিবেশীর চোখে ঘুম নেই! স্কুলে যা…
.
রিয়াদ- আম্মুউউউ ভাইয়া কিন্তু সবসময় বেশি বেশি করে! কিছু বলো….
.
রুবিনা- আমাকে কিছু বলবি না, যার যা ইচ্ছে তা কর। প্রয়োজনে তোর বাপকে বল। আমাকে বিরক্ত করবি তো মাথায় বারি পড়বে….
.
রিয়াদ- হুহ! তোমার জন্যই ভাইয়া এমন হইছে, শাসন করো না কোনোদিন।
.
রেহান- হাহাহোহো….
.
নাফিসা- যার বিয়ে তার খবর নেই মানে! কোথায় যাবে তুমি!
.
রেহান- আরে, কোথাও না। কথার কথা বললাম।
.
নাফিসা- রিয়াদ ও যাবে আমাদের সাথে। আজ তোমার ইচ্ছায় কোন রাজত্ব চলবে না। আমি যা বলবো তাই হবে।
.
রিয়াদ- ইয়েস! লাভ ইউ কিউট ভাবি….
.
নাফিসা- লাভ ইউ টু…. জলদি যাও….
.
রিয়াদ- ওকে..
.
রিয়াদ চলে গেলো তৈরি হতে। নাফিসাও নিজের রুমে চলে এলো পিছু পিছু রেহান ও। দরজা চাপিয়ে নাফিসাকে জড়িয়ে ধরলো,
.
রেহান- বাহ! দেবর ভাবির কি মহব্বত! লাভ ইউ আবার লাভ ইউ টু!
.
নাফিসা- রিয়াদ আমার দেবর না, আমার ছোট ভাই। ওকে….
বাট তোমার এতো হিংসা হচ্ছে কেন!
.
রেহান- হবে না! কই আমি কখনো লাভ ইউ বললে তো আমাকে রিপিট করো না!
.
নাফিসা- করবো কিভাবে, আমি তো তোমাকে লাভ করি না। (রেহানের গালে চুমু দিয়ে) আমি তোমাকে অফুরন্ত ভালোবাসি।
.
রেহান- এক গালে দিলে কেন! অন্যটা কি দোষ করেছে?
.
এবার অন্য গালেও আরেকটা দিলো।
নাফিসা- স্টুপিড, ছাড়ো রেডি হবো….
.
রেহান- আমিও অফুরন্ত ভালোবাসি আমার বউ কে…
রেহান নাফিসার কপালে গভীর ভাবে চুমু দিয়ে তারপর ছাড়লো।
.
কিছুক্ষণ পর তারা বেরিয়ে গেলো। গাড়ির কাছে গিয়ে…
.
নাফিসা- আমি গাড়ি ড্রাইভ করবো।
.
রিয়াদ- ভাবিইই! তুমি গাড়ি চালাতে পারো?
.
নাফিসা- ইয়েস! কতবার ড্রাইভিং রেস এ ফাস্ট হয়েছি হিসেব নেই…
.
রেহান- ফাস্ট হও আর লাস্ট হও, এখন গাড়ি চালাতে পারবে না। এটা লন্ডন না, এখন তুমি বাংলাদেশে আছো।
.
নাফিসা- সো হোয়াট! আমি চালাবো, জাস্ট তুমি হাইওয়ে ড্রাইভিং গতিবেগ টা বলে দাও। তাহলেই হবে….
.
রেহান- কাউকে এক্সিডেন্ট করে জেলে যাওয়ার শখ হয়নি আমার। সবসময় আমার মতের বিপরীতে থাকো কেন! যাও গাড়িতে উঠো…
.
নাফিসা মন খারাপ করে পিছনের সিটে রিয়াদের সাথে বসলো।
.
রেহান- সামনে না এলে গাড়ি আজ স্টার্ট হবে না।
.
নাফিসা- না হোক, আমার কি! বাসায় ফিরে যাবো।
.
রেহান ড্রাইভিং সিট থেকে উঠে এসে নাফিসাকে কোলে করে সামনে তার পাশের সিটে বসিয়ে দিলো। রিয়াদ ওদিকে হাসতে হাসতে ফেটে যাচ্ছে… নাফিসা আবার নামতে নিলে রেহান গালে একটা চুমু দিয়ে বললো…
.
রেহান- নামবে না, ড্রাইভিং করতে দিবো তোমাকে কিন্তু এখন না। অন্য একটা জায়গায় নিয়ে।
.
নাফিসা আর কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো। রেহান গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করলো। রিয়াদ পেছন থেকে সামনে ঝুঁকে গাড়ির মিউজিক অন করে দিলো। নাফিসা এখনো চুপচাপ। রেহান একহাতে ড্রাইভ করছে অন্য হাতে নাফিসার একটা হাত ধরে তার হাটুতে রাখলো। নাফিসা হাত সরাতে নিয়ে ব্যর্থ, রেহান আরও শক্ত করে চেপে ধরলো। ঢাকার হাইওয়ে প্রায় শেষ প্রান্তে এসে গাড়ি থামালো। নাফিসা আশেপাশে তাকালো মুগ্ধকর কিছুই নেই, না আছে কোন বাড়িঘর, আর না আছে কোনো মনোরম পরিবেশ। একপাশে তাকালে শুধু বালির মাঠ দেখা যাচ্ছে, আর অন্যপাশে ময়লা আবর্জনা। দুর্গন্ধ! সামনে একটা ব্রিজ দেখা যাচ্ছে…
.
রেহান- নামো গাড়ি থেকে..
.
রিয়াদ- ভাইয়া এটা কোথায় নিয়ে এসেছো! ময়লা আবর্জনার স্তূপ!
.
রেহান- নামতে বলেছি নাম
.
দুজনেই নেমে নাক চেপে ধরে রেহানের পিছু পিছু যাচ্ছে। রেহান ব্রিজের ওপর নিয়ে গেলো। রিয়াদ নাফিসা ব্রিজের নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো কালো পানি দেখা যাচ্ছে ….
.
নাফিসা- লেকের পানি এমন কেন!
.
রেহান- লেক না এটা নদী।
.
নাফিসা- রিয়াদ, এই নদীর নাম কি?
.
রিয়াদ- ভাইয়া, এই নদীর নাম কি?
.
রেহান- তোকে জিজ্ঞেস করছে তুই বল, আমি কেন বলবো!
.
রিয়াদ- তাহলে এই নদীর নাম নামহীন নদী…. হাহাহা….
.
নাফিসা- রাবিশ একটা ….
.
রেহান- ওইদিকে রাবিশ…. হাহাহোহো…
.
নাফিসা- নদীর নাম বলো না হলে ধাক্কা দিয়ে এই কালো পানিতে ফেলবো।
.
রেহান- হাহাহা…. এটা আমাদের বুড়িগঙ্গা নদী যেটা ঢাকার ময়লার ড্রেন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। আবার কারো কারো প্রাণ এই নদীর পানিই।
.
নাফিসা- কি অবস্থা করেছে! ইন্টারনেটে তো এমন কিছু তুলে ধরে না, সেখানে অনেক সুন্দর দেখায়! ভেরি বেড স্মেল….
.
রেহান- আছে, অনেক সুন্দর নদীও আছে…. আউট অফ ঢাকা…
.
নাফিসা- চলো সেখানে যাই….
.
রেহান- এখন না। অন্য কোন সময়… আজ শুধু ঢাকা ঘুরবো। এখন গাড়িতে উঠো। যেখানে যেখানে গাড়ি থামাবো ১০মিনিটের বেশি সময় নিবে না।
.
অনেকটা পথ পেরিয়ে আবার আর একটা ব্রিজের পাশে গাড়ি থামালো। এখানকার পরিবেশ আগের চেয়ে অনেকটা সুন্দর। বলার আগেই রিয়াদ, নাফিসা নেমে গেলো। ব্রিজের উপর উঠলো তারা সবাই। প্রচুর বাতাস এখানে, ঠান্ডা বাতাস সাথে একটা মিষ্টি জাতীয় গন্ধ আসছে। নাফিসার শাড়ির আঁচল উড়ে একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। রেহান পেছন থেকে শাড়ির আঁচল সহ নাফিসাকে ধরলো।
.
রেহান- এমন বেখেয়ালিভাবে থাকলে তো গাড়ি এসে শাড়ির আঁচলও নিয়ে যাবে সাথে শাড়ির মালকিনও।
.
নাফিসা- এই জায়গাটা অনেক সুন্দর। নদীর পানিও পরিষ্কার দেখাচ্ছে, বিশুদ্ধ বাতাস। আই লাইক ইট! নাম কি এই জায়গার?
.
রেহান- এখন আমরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এর সন্ধিস্থলে আছি। যে ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছো এটা ডেমরা ব্রিজ নামে পরিচিত। নিচে যে নদী বয়ে চলেছে তা শীতলক্ষ্যা নদী।
.
নাফিসা- নামটাই কতটা শীতল, বাতাসও শীতল পানিও নিশ্চয়ই অনেক শীতল হবে…
.
রেহান- হুম।
.
নাফিসা- মিষ্টি গন্ধ কিসের।
.
রেহান- পাশে মেবি, কোনো রঙের মিল আছে।
.
রিয়াদ- ভাইয়া মোবাইল দাও, ছবি তুলবো।
.
রেহান মোবাইল বের করে দিলো। সবাই একসাথে সেলফি, একা একাও ছবি তুললো অনেক। রেহানের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নাফিসা ও রিয়াদের জোরাজোরিতে ব্রিজের নিচে নদীর তীরে নিয়ে এলো তাদের। এখানেও অনেকগুলো ছবি তুললো তারা। নাফিসা শীতলক্ষ্যা নদীর শীতল পানিতে মুখ ধুয়েছে আর রেহান দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্দী করেছে।
.
নাফিসা- চলো না নৌকায় করে ওপারে যাই।
.
রেহান- নো, বলেছি না আজ শুধু ঢাকা ঘুরবো। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী সময়ে এক এক করে সব জায়গা ঘুরবো।
.
নাফিসা- ওকে।
.
সবাই গাড়িতে উঠলে রেহান আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলো। কিছুটা পথ অতিক্রম করে আবার গাড়ি থামালো। একটা দোকান থেকে কয়েকটি চিপস, কোক, কেক, সেন্ডউইচ কিনে এনে পেছনের সিটে দিলো। রিয়াদ ও নাফিসা দুজনেই চিপসের প্যাকেট খুলে চিপস খেতে লাগলো। এই রাস্তায় তেমন গাড়ি নেই। তাই রেহান নাফিসাকে বললো ড্রাইভিং করতে। নাফিসাও চিপস রেখে খুশি মনে সিট চেঞ্জ করলো। ড্রাইভিং করছে সে, আর রেহান নাফিসার প্যাকেট থেকে চিপস খাচ্ছে। রাস্তার দুপাশে গাছপালা। দেখতে পুরো গ্রামের মতো নীরব পরিবেশ। ফাকা রাস্তা হলেও নাফিসার ড্রাইভিং স্লো হয়ে যাচ্ছে। হবেই না কেন! প্রকৃতি তাকে মুগ্ধ করছে!
.
রেহান- এভাবে ড্রাইভ করলে তো পথ কখনোই শেষ করা যাবে না!
.
নাফিসা- (গাড়ি থামিয়ে) আমি পারবো না ড্রাইভিং করতে। আমি কিছুই দেখতে পারছি না। সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছি না। তুমিই চালাও…
.
রেহান- হাহাহা….. শখ মিটে গেছে। এদিকে আসো….
.
নাফিসা- এই জায়গার নাম কি? এটা কি গ্রাম?
.
রেহান- এটা গ্রাম না, এটা উপশহর। আমুলিয়া মডেল টাউন হিসেবে পরিচিত।
.
পরপর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের অঞ্চল ঘুরেছে, ঢাকা সেনানিবাস, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ন্যাশনাল মেমোরিয়াল, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টোডিয়াম, ন্যাশনাল মিউজিয়াম সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে থাকাকালীন নাফিসা কিছুক্ষণ ড্রাইভ করেছিলো।
সারাদিন ঢাকার অনেক জায়গায় ঘুরেছে তারা। লাঞ্চ, ডিনার রেস্টুরেন্টে সেরেছে। রাতে নাফিসাকে তাদের ফ্ল্যাটে রেখে দুভাই বাসায় ফিরে এসেছে।
.
.
চলবে…..