বউ
Part- 5
writer: #Nur_Nafisa
.
.
কিছুক্ষণ পর,
রিয়াদ- আম্মু ভাবি কোথায়? ভাবি ঘুমাবে না?
.
রুবিনা- দেখ রেহানের রুমে না হয় নাফিসার রুমে হবে হয়তো।
.
রিয়াদ- রেহান ভাইয়ার রুমে ভাইয়া একা, আর বাকি সব রুমে দেখেছি ভাবি নেই। আমি ভাবলাম ভাবি তোমাদের রুমে এসেছে।
.
রায়হান- এখানে আসেনি তো। ড্রইং রুমে ও নেই?
.
রিয়াদ- না।
.
রায়হান- কি বলিস! কোথায় গেছে তাহলে?
.
( রুবিনা, কিচেনে দেখে এলো সেখানে নেই। কিচেন থেকে বের হতেই দেখলো মেইন দরজা খোলা। সবাই তো বাসায় ই আছে তাহলে মেইন দরজা খুললো কে! নাফিসা আবার এতো রাতে বাইরে বেরিয়ে যায়নি তো! এদিকে রিয়াদ আর রায়হান চৌধুরী রেহানের কাছে গেলো।)
.
রায়হান- রেহান, নাফিসা কোথায়?
.
রেহান- জানিনা।
.
রায়হান- সেকি! তাহলে কোথায় গেছে মেয়েটা!
.
রেহান- ? কোথায় গেছে মানে! ঘরে নেই?
.
রিয়াদ- না..
.
(রুবিনা রেহানের রুমে এলো দৌড়ে)
রুবিনা- মেইন দরজা খোলা কেন? নাফিসা কি বাইরে বের হয়েছে!
.
(কথাটা শুনে রেহানের মনে ছ্যাত করে উঠে! রেহান তো নাফিসাকে চোখের সামনে থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে! সে কি এতো রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে! রেহান দ্রুত বিছানা থেকে নেমে গেলো।)
রেহান- ঘরে দেখেছো তো ভালো করে?
রিয়াদ- হ্যা আমি সব দেখেছি। ভাবি আবার ছাদে চলে যায়নি তো!
.
রেহান- আব্বু তুমি ছাদে দেখে আসো আমি নিচে যাই…
.
(কথা বলে রেহান ফোন নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে এলো। গেইট তো তালা দেয়া। ইকবাল ভাই(দারোয়ান) তো এখনেই ঘুমাচ্ছে! দারোয়ান কে ডেকে তুললো রেহান)
রেহান- ভাইয়া, নাফিসাকে দেখেছো?
.
দারোয়ান- নাফিসা আবার কেডা?
.
রেহান- আরে আমাদের বাসায় যে মেয়ে থাকে, তাকে দেখেছো?
.
দারোয়ান- অ… বড় ভাবি?
.
রেহান- ( এই লোক ও ভেবে নিয়েছে আমার #বউ !) হ্যাঁ…. এখন দেখেছো তাকে?
.
দারোয়ান- না তো। বিকালে দেখছিলাম।
.
রেহান- গেইটে তালা লাগিয়েছো কখন?
.
দারোয়ান- সন্ধ্যায়। আপনারা ইশার নামাজ পড়ে আইছেন পরে।
.
রেহান- (তাহলে তো বাইরে বের হতে পারবে না! কোথায় গেছে! ঘরেই কোথাও লুকিয়ে আছে হয়তো! কিন্তু আম্মু যে বললো মেইন দরজা খোলা ছিলো! আবার ঘরের দিকে যেতে নিলে এমনি ফোন টা বেজে উঠে )
হ্যালো আব্বু, পেয়েছো?
.
রায়হান- না, ছাদে নেই।
.
রেহান- আচ্ছা আমি আস….
(ফোনে কথা বলতে বলতে গেইট থেকে বাসার দিকে পা বাড়াতেই বাগানের সাইডে চোখ আটকে গেল। মনে হচ্ছে দোলনা টা দুলছে। হালকা আলোতে কাউকে দেখা যাচ্ছে, নিশ্চয়ই নাফিসা ছাড়া কেউ না!)
আব্বু তুমি রুমে যাও, নাফিসাকে পেয়েছি। আমি ওকে নিয়ে আসছি….
.
রায়হান- ওকে।
.
(রেহান দোলনার কাছে গেল। দেখলো নাফিসা হাত পা দোলনায় তুলে হাটুতে মুখ গুজে কাচুমাচু হয়ে বসে কান্না করছে।)
.
রেহান- এখানে বসে আছো কেন? সবাই এদিকে খুঁজে হয়রান! চলো বাসায় চলো….
.
(নাফিসা মুখ তুলে তাকালো রেহানের দিকে। রেহান তার চেহারা দেখে খুব কষ্ট পেল! কান্না করে চোখ মুখ ফুলে গেছে! রেহানের এখন নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে! কেন সে বকা দিতে গেলো! অন্যদের মতো সে ও তো বুঝতে পেরেছিল মেয়েটির আচরণ একটু আলাদা!কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে রেহান! )
রেহান- নাফিসা, বাসায় চলো। আব্বু আম্মু সবাই টেনশন করছে…
.
নাফিসা- যাবো না আমি। আ.. আমি আব্বু আম্মুর কাছে যাবো… ?
.
রেহান- (নাফিসার কাছে দোলনায় বসে) sorry ওসব বলার জন্য….
.
(নাফিসা লাফ দিয়ে দোলনা থেকে নেমে গেলো। ডুকরে কান্না করতে করতে… )
.
নাফিসা- আমার কাছে আসবে না… আমি মরে যাবো…. একটুও কাছে আসবে না। আব্বু আমাকে নিয়ে যাওওওও ?
.
রেহান- ?
.
(রেহান দোলনা থেকে উঠে দাড়ালে নাফিসা আরও ২পা পিছিয়ে গেলো। তারপর রেহান রায়হান চৌধুরীকে কল করে বললো নিচে আসতে… রায়হান চৌধুরী এসে নাফিসাকে অনেক কৌশলে মানিয়ে বাসায় নিয়ে এলো। রেহান ও নিজের রুমে চলে এলো। সে শুধু ভাবছে নাফিসার সাথে এমন ব্যবহার করা একদম উচিত হয়নি তার। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে নেহার ছবিগুলো সব কাটতে লাগলো। আগেই কেটে দিতো, কিন্তু মনে ছিলো না।নেহার ছবি কেটে অন্য ফাইলে দেখলো নাফিসার ছবি!? নাফিসার ছবি এখানে কিভাবে! রেহান বাকি সব ছবি দেখতে লাগলো। এবার বুঝতে পেরেছে, আজ বাসায় ফোন রেখে যাওয়ায় নাফিসা আর রিয়াদ ছবিগুলো তুলেছে! বিভিন্ন ভঙ্গিতে অনেক ছবিই তুলেছে। অজান্তেই রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো ?)
.
৪র্থ দিন, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে নাফিসা একদম চুপচাপ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথেই কোনো কথা বলছে না। কোনো দুষ্টুমি ও করছে না। রেহানের দিকে তো তাকাচ্ছে ও না! রুবিনা ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডেকে নিয়ে এসেছে। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে গেলো। সবাই ই একটু আপসেট। চঞ্চল মেয়েটার নিরবতা কারো কাছে ভালো লাগছে না। রেহান বসে টিভি দেখছিল, রিয়াদ ব্যাগে টিফিন রাখতে গিয়ে দেখলো নাফিসার চিঠিটা ও তার ব্যাগে!
.
রিয়াদ- ওফ! ভাবির চিঠিও আমার ব্যাগে! ভাইয়া এটা ভাবির কাছে দিয়ে দিও তো আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই….
.
রেহান- ওকে। নাফিসার চিঠি মানে!
.
রেহান কাগজ টা খুলে চিঠিটা পড়তে লাগলো….. প্রাপকের নামটা দেখেই হাসি পেল – এলেক্স!?। এবার উৎসাহ নিয়ে বাকিটা পড়তে লাগলো…..
.
ডিয়ার এলেক্স,
আশা করি ভালো আছিস। আমিও ভালো আছি আমার হাসব্যান্ড, দেবর, শশুর আব্বু, শাশুড়ী আম্মুকে নিয়ে। আব্বু আম্মু কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! জানিস, আমার হাসব্যান্ড রেহান চৌধুরী অনেক হ্যান্ডসাম, ছোট ভাইটা রিয়াদ চৌধুরীও অনেক কিউট। দুই ভাই ই কিউটের ডিব্বা। অনেক ফর্সা। চুল গুলো সিল্কি সিল্কি। পারফেক্ট বডি। দুই ভাই লাল টিশার্ট পড়লে একদম হিরো হিরো লাগে! হবেই না কেন! আমার শশুর আব্বু ও শাশুড়ী আম্মুও অনেক ফর্সা ও কিউট। আমিও আমার হাসব্যান্ড এর লাল টিশার্ট পড়ে ঘুমাই, আবার একটা হলুদ ও নিয়েছি। রিয়াদের সাথে তো আমি প্রতিদিন ই ক্রিকেট খেলি আবার গার্ডেনে পানি দিতে গিয়ে গোসল করি রিয়াদ ই বললো আজ আমাকে ফ্যামিলি সম্পর্কে ফ্রেন্ডের কাছে চিঠি লিখতে।
অনেক কিছু লিখে ফেলেছি। আর জানতে দিবো না তোকে। বাংলা বুঝতে কষ্ট হলে ইংলিশে ট্রান্সলেশন করে নিস। বাই বাই বেবি….
.
( চিঠিটা পড়ে রেহান হাসতে লাগলো। ভাবছে পাগলী মেয়েটা সত্যিই রেহানকে তার বর ভেবে নিয়েছে। আর তার পরিবারকে নিজের পরিবার হিসেবে নিয়েছে! রেহানের কাছে নাফিসাকে অন্যরকম ভাবে ভালো লাগতে শুরু করেছে।
রেহান চিঠিটা নিয়েই নাফিসার কাছে গেলো। রিয়াদের রুমের দরজার সামনে যেতেই নাফিসা রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিল, রেহান পথ আটকালো। নাফিসা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, রেহানকে একবার ও দেখছে না।)
.
রেহান- নাফিসা, সরি…..
.
(নাফিসা কিছু না বলে ডান দিক দিয়ে আসতে চাইলে রেহান ডানদিকে চেপে পথ আটকে আবার বললো “সরি” এবার বাম দিকে পাশ কাটাতে চাইলে রেহান বামদিকে চেপে পথ আটকে আবার বললো “সরি”। এবার নাফিসা পেছনে সরে গিয়ে ধপাসস করে দরজা লাগিয়ে রুমে বসে রইলো! রেহান হতাশ হয়ে ফিরে এলো ড্রয়িং রুমে ?)
.
রায়হান- অফিস যাবি না?
.
রেহান- হুম।
.
রায়হান- ৩দিন কেটে গেছে, পত্রিকায় তো তেমন কোনো নিউজ পেলাম না। এবার আমরাই নিউজ টা দেই। আজ অফিস থেকে তুই ছাপাখানায় নিউজ দিয়ে আসিস….
.
রেহান- ?!
.
.
চলবে…..