বউ_যখন_কাজের_মেয়ে
,
পর্ব-০৮
Writer:-MD Mahim Ahmed
,
মাহিম আবার ঠিক আগের মতো করে প্রিয়া হাতটা পিছন দিক দিয়ে চেপে ধরলো আর প্রিয়াও ঠিক আগের মতো করে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।
মাহিম:-এবার যদি আমি আপনার এই হাতটা ভেঙ্গে গুরিয়ে দেই,তাহলে আমি কিন্তু বেশ করবো(প্রিয়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে)
,
প্রিয়া:-(কেঁদে কেঁদে)হ্যাঁ দিন না,শুধু ভেঙ্গে কেন মেরে ফেলুন আমাকে,পুরো মেরে ফেলুন আমাকে(কেঁদে কেঁদে)
,
মাহিম দেখলো প্রিয়ার অনেকটাই ব্যাথা পাচ্ছে, খুব কাঁন্না করছে,তাই সে প্রিয়ার হাতটা ছেগে দিল।
মাহিম প্রিয়ার হাতটা ছেড়ে দিয়ে প্রিয়ার কাজ থেকে একটু দূরে সরিয়ে গেল।
,
প্রিয়া:-ছেড়ে দিলেন কেন? ভেঙ্গে দিন না,মেরে ফেলুন আমাকে(কেঁদে কেঁদে)
,
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
,
প্রিয়া:-এইরকম ভাবে কষ্ট দেওয়া চেয়ে আমাকে একদম মেরে ফেলুন,এইরকম ভাবে আমি আর বাচতে না(কেঁদে কেঁদে)
,
,
কথা গুলো বলেই প্রিয়া কাঁন্না করতে লাগলো।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকালো দেখলো প্রিয়া খুব কাঁন্না করছে,এমনতেই মেয়েটা গাঁ এ অনেক জ্বর,আর এই জ্বর নিয়েই বাড়ির সমস্ত কাজ করতে প্রিয়ার অনেক কষ্ট হয়।আর এখন সেও যদি এভাবে প্রিয়ার উপর অত্যাচার করে তাহলে মেযেটা সত্যি কিছু একটা হয়ে যাবে,এমনিতেই প্রিয়ার শরিলের অবস্থা বেশি ভালো না।এটা ভেবে মাহিম কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে আর কিছু বলে রুম থেকে বেরি গেল।
,
,
>রাত ১১টা<
মাহিম রুম থেকে বেড় হয়ে কিছুদূর যেতেই তার মা-মনি কে হাতে খাবারের প্লাট নিয়ে তার রুমের দিকে যেতে দেখে বলল।
মাহিম:-মা-মনি তুমি এতরাতে কোথায় যাচ্ছ?
,
মা-মনি:-তোর রুমেই যাচ্ছিলাম।
,
মাহিম:-আমার রুমে?(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
,
মা-মনি:-হুম,নতুন বউ কোথায় নাকি?
,
মাহিম:-নতুন বউ আবার কে?
,
মা-মনি:-আরে নতুন বউ মানে তোর বউ প্রিয়া কোথায়?
,
মাহিম:-রুমে কেন?
,
মা-মনি:-আর বলিস না,তোর খাবার নিয়ে আশার সময় কত করে বললাম যে নতুন বউ সারাদিন জ্বর নিয়ে কত কাজ করলি এখন একটু তুই খেয়ে নিয়ে
বিশ্রাম-নে, মাহিমের আসতে অনেক রাত হবে।সে কিছুতেই আমার কথা শুনলো না,বলল যে তুই আগে খাবি তারপর নাকি নতুন বউ খাবে।দেখ এখন কয়টা বাজে কিন্তু এখনো আমার রুম থেকে খাবারটা নিয়ে আসেনি।এই বাড়িতে তো আমি ছাড়া আর কেউ মেয়েটার সাথে ভালো করে কথাই বলেনা,তাই খাবারটা নিয়ে তোর রুমে যাচ্ছিলাম।তা কি নতুন বউ ঘুমিয়েছে নাকি?
,
মাহিম:-না এখনো ঘুমোয়-নি
,
মা-মনি:-ওহ্ তাহলে যাই খাবারটা দিয়ে আসি,সারাদিন গাঁয়ে জ্বরের কারনে কিছুই খায়নি।রাতেও না খেলে মেয়েটা কালকে বিছানা থেকে উঠতেই পারবেনা।মেয়েটা যেমন আমার ভালো-মন্দ খোঁজ-খবর রাখে,আমারও মেয়েটার ভালো-মন্দ খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
,
এইবলে মাহিমের রুমের দিকে যাচ্ছিল।মাহিম ভাবলো প্রিয়ার প্রতি তার মা-মনির অনেকটাই ভালোবাসা, প্রিয়ার তো হাত দিয়ে রক্ত পরছে আর কাঁন্না করছে।এভাবে প্রিয়াকে তার মা-মনি দেখলে অনেটাই রেগে যাবে তার উপর।মা-মনি মাহিমের নিজের মা না কিন্তু মাহিম ওনাকে নিজের মা ভাবে আর নিজের মা এর মতই ভয় করে সে বলল
,
মাহিম:-মা-মনি দাড়াও
,
মাহিমের কথা শুনে দাড়িয়ে গেল।
মাহিমের তার মা-মনির কাছে এসে'
মাহিম:-খাবার গুলো আমাকে দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি, অনেক রাত হয়েছে যাও তুমি গিয়ে ঘুমাও।
,
মা-মনি:-না থাক আমি-ই নিয়ে যাচ্ছি।
,
মাহিম:-বললাম না অনেক রাত হয়েছে তুমি গিয়ে ঘুমাও।
,
এইবলে জোর করে ওনার হাত থেকে খাবার গুলো নিয়ে ওনাকে ওনার রুমে পাঠিয়ে দিল।
,
,
কিছুক্ষন পর মাহিম খাবারের প্লেট টা নিয়ে নিজের রুমে আসলো,এসে দেখলো প্রিয়া মেঝেতে বসে অসহায় হয়ে চোখের জল ফেলছে।
মাহিম দাড়িয়ে প্রিয়ার দিকে ভাবছে"-মেয়েটা গাঁ এ এত জ্বর নিয়ে সারাদিন না খেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আর সে শুধু তাকে এতটা কষ্ট দিল।মা-বাবা মরে একটা অসহায় মেয়ে কে এতটা কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।এইভাবে কিছুক্ষন দাড়িয়ে ভাবার পর মাহিম খাবারের প্লেট টা টেবিলে গিয়ে রাগলো।তারপর প্রিয়ার কাছে গেল,গিয়ে তার পাশে বসলো।
মাহিম রুমে কখন এমেছে প্রিয়া বুঝতে পারে-নি,মাহিম প্রিয়ার পাশে বসতেই প্রিয়া চমকে উঠে মাহিমের দিকে তাকালো।মাহিম প্রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ার চোঁখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু কোন শব্দ হচ্ছে না।কেমন একটা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকাতেই প্রিয়ার হাতের দিকে মাহিমের চোখ পরলো।মাহিম প্রিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো চুড়ির টুকরো দিয়ে কেটে যাওয়া জায়গাটায় রক্ত জমে আছে।
,
,
কিছুক্ষন পর মাহিম প্রিয়ার কেটে যাওয়া হাতটা ধরলো,প্রিয়া কিছু বলল না অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।
,
মাহিম:-(প্রিয়ার হাতটা ধরে)সরি(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
,
প্রিয়া:-(কাঁদার মতো করে)আপনি সরি বলছেন কেন?(অভিমানী সুরে)
,
মাহিম:-আমি আসলে বুঝতে পারিনি আপনার এতটা লাগবে।
,
প্রিয়া:-আমি ব্যাথা পেলে আপনার কি? আপনি তো চান-ই আমার ব্যাথা লাগুক আমি কষ্ট পাই।
,
মাহিম:-(নিশ্চুপ)
,
প্রিয়া:-আমি তো এই বাড়ির কাজের মেয়ে আপনার বউ না।আমি ব্যাথা পেলে আপনার তো কিছু জায়-আসে না।(কাঁদো কাঁদো ভাবে)
,
,
মাহিম:-"আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দেই,তুমি আমাকে বাধ্য করো তোমাকে কষ্ট দিতে।আমি সব সময় তোমার কাছে যেতে চাই তোমাকে আপন করে নিতে চাই।কিন্তু তুমিই আমাকে প্রতিটা মুহূর্তে দূরে সরিয়ে দাও,আমাকে আঘাত করো।তুমি কিছুতেই আমাকে বুঝতে পারো না,ভূল বুঝো আমাকে।খারাপ ভাবো আমাকে।যতদিন তুমি আমাকে ভূল বুঝছে ততদিন আমিও তোমাকে কষ্ট দিব।(মনে মনে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)
,
মাহিম:-হুম আমার কিছুই জায়-আসেনা,কিন্তু মানুষ হিসাবে তো একটা দায়িত্ব আছে আপনার প্রতি।এখন বেশি কথা না বলে টেবিলে চলুন আমি হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
,
প্রিয়া:-(অভিমানী সুরে)লাগবে না আপনার ছাড়ুন(হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে)
,
মাহিম:-বলছি তো চলুন
,
প্রিয়া:-আপনাকে আমার উপর দয়া করতে হবেনা,এমনিতেই আপনি আমার উপর অনেক দয়া করেছেন।দয়া করে যে আপনাদের বাড়িতে আমাকে একটু থাকা-খাওয়ার জায়গা করে দিয়েছেন।এটাই অনেক আর কোন করতে হবে না আপনার।(অভিমানী সুরে কাঁদো কাঁদো ভাবে)
,
মাহিম:-বলছি না চলুন হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
,
প্রিয়া:-করবো না আমি হাতে ব্যান্ডেজ।
,
মাহিম:-করবেন না মানে?
,
প্রিয়া:-করবো না মানে করবো না।
,
মাহিম:-আপনি করবেন না,আপনার ঘাড় করবে।
,
প্রিয়া:-ঠিক আছে,তাহলে সেটাই করুন।
,
এইবলে প্রিয়া বসা থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল।এমন সময় মাহিম প্রিয়ার হাত ধরে ফেললো আর বলল
,
মাহিম:-আমি যখন বলেছি আপনাকে হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে তখন করতেই হবে।(ধমক দিয়ে)
,
প্রিয়া:-মাহিম বাবু আপনি একটা কাজের মেয়ের সাথে এভাবে হাত জোর করতে পারেন না, কোন অধিকার আপনার নেই।(অভিমানী সুরে)
,
মাহিম:-এই চুপ একদম চুপ।হাত দিয়ে রক্ত পরছে আর সে আছে তার জেদ নিয়ে।(রেগে)
,
এরপর মাহিম প্রিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে টেবিলে চেঁয়ার টেনে বসালো।
,
মাহিম:-এখানে একদম চুপ করে বসে থাকবেন(রাগি কন্ঠে)
,
প্রিয়া:-কেন আমি আপনাদের বাসায় কাজ করে খাইবলে কি সব সময় আপনার কথা শুনতে হবে নাকি?(বাচ্চাদের মতো করে)
,
মাহিম:-হ্যাঁ শুনতে হবে,আমি যখন যা যে সময় এ বলবো তখন সেটাই সে সময় এ আপনাকে শুনতে হবে।
,
প্রিয়া:-কেন শুনবো আমি আপনার কথা?
,
এরপর মাহিম প্রিয়া চেঁয়ারে বসানো প্রিয়ার দু-দিকে দু-হাত দিয়ে তার কাছে এগিয়ে এসে।
মাহিম:-আমার কথা শুনতে আপনি বাধ্য আমি যাই বলবো আপনাকে তাই শুনতে হবে।আর আমার কথা আপনি কেন শুনবেন কারণ জানেন?কারন উপরওলার পরে আপনার একমাত্র হলাম আমি।(প্রিয়ার চোঁখের দিকে তাকিয়ে)
-----Next Part-----