বউ_যখন_কাজের_মেয়ে
,
পর্ব-৪
Writer:-MD Mahim Ahmed
,
,
,
,
সকাল বেলা মাহিম আর প্রিয়া ঘুম থেকে উঠে,ভদ্র লোক আর অনার স্ত্রীর কাছে বিদায় নিয়ে রওনা হলো প্রিয়ার গ্রামের বাড়ির দিকে।
,
দুজনি গাড়িতে একদম চুপ করে বসে আছে,কেউই কিছু বলছেনা।প্রিয়া তার ব্যাগটা হাতে নিয়ে ব্যাগের ভিতর থেকে তার মা-বাবার আর তার ছোট্ট বেলার ছবিটা বেড় করে দেখতে লাগলো।মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়া ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ দিয়ে পানি বেড় হতে লাগলো।
,
ছোট্ট বেলায় প্রিয়ার মা-বাবা Accident এ মারা যাওয়া পর থেকেই এই ছবিটা প্রিয়া তার সঙ্গেই রাখে।এই ছবিটা ছাড়া প্রিয়ার মা-বাবার কোন অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে নেই।যখন প্রিয়ার খুব বেশি মন খারাপ আর একা অসহায় লাগে,তখন এই ছবিটা বেড় করে আর মনে মনে ভাবে যে তার মা-বাবা তার সাথেই।এটা ভেবে কান্না করে নিজের মনকে সান্তনা দেয়।
,
,
প্রিয়ার গ্রামে আসার কিছু দূরে যাওয়ার পর
,
প্রিয়া:-গাড়িটা থামান আমি এখানেই নামবো।
,
মাহিম:-এখনো তো আপনার মামার বাড়ি আসেনি
,
প্রিয়া:-না আসুক, আমি বলছি আপনি গাড়িটা থাম করুন
,
এরপর মাহিম গাড়িটা রাস্তার একদিকে সাইট করলো,আর গাড়ি থেকে মেনে পরলো।প্রিয়াও গাড়ি থেকে মেনে তার ব্যাগটা হাত নিল।
,
মাহিম:-এখনো তো অনেকটাই পথ?
,
প্রিয়া:-থাকুক আমি হেটেই যেতে পারবো,আমার জন্য আর আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা।
,
মাহিম”’আর অল্প কিছুক্ষন আমরা একসাথে থাকবো,এটুকু সময়-ই তুমি আর আমার সাথে থাকতে চাইছো না,এতটাই বিরক্তির লাগছে আমাকে।তুমিও যখন একসাথে থাকতে চাইছো না তাহলে আমিও না(মনে মনে)
মাহিম:-হুমম সেটাই,আমারও অনেক বোরিং লাগছে।
,
মাহিমের কথা শুনে তার ভিতরটা যেন ফেটেগেল এটা ভেবে যে সে পৃথিবীতে এতটাই অপ্রয়োজনীও যে তার কাছেই যায় তারে মাথা বোঝা হওয়ে দাড়ায়।প্রিয়া আর মাহিমের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছেনা,তার চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে,মুখ দিয়ে কোন কথা বেড় হচ্ছেনা,শুধু বলল:
প্রিয়া:-ঠিক আছে ভালো থাকবেন।
,
এইবলেই প্রিয়া ব্যাগটা নিয়ে চলে যাচ্ছিল,আর মাহিম দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল।প্রিয়া যাচ্ছে আর চোখের জল ফেলছে।মাহিম দাড়িয়ে শুধু দেখছে কিছু বলছেনা।এভাবে কিছু দুরে যাওয়া পর মাহিম আর দাড়িয়ে না থেকে গাড়িতে উঠে গাড়িটা স্টার্ট করে চলে যাচ্ছিল।প্রিয়া গাড়ির চলে যাওয়া সব্দ পেয়ে পিছনে ঘুরে দাড়িয়ে মাহিমের চলে গাড়ির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এভবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হাত দিয়ে দুচোখের পানি মুছে তার মামার বাড়ির দিকে রওনা হলো।
,
,
,
প্রিয়া তার মামার বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই তার মামা দেখে অনেটাই খুশি হয়ে প্রিয়ার কাছে ছুটে আসলো আর বলতে লাগলো
মামা:-প্রিয়া মা তুই,কেমন আছিস?কখন আসলি?
,
প্রিয়ার মামার কথা শুনে ঘুম থেকে প্রিয়ার মামী বেরিয়ে আসলো।
,
মামা:-জামাই বাবা কই?
,
প্রিয়া কিছু বলছেনা,মাথা নিচু করে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
,
মামা:-কিরে মা তুই কিছু বলছিস না কেন?কি হয়েছে বল,জামাই বাবা কই বাহিরে দারিয়ে আছে নাকি?
,
এইবলে প্রিয়ার মামা বাহিরে যাচ্ছিল এমন সময় প্রিয়া বলে উঠলো
প্রিয়া:-মামা তোমার জামাই চলেগেছে
,
প্রিয়া কথা শুনে তার মামা আবার প্রিয়ার কাছে এসে অবাক দৃষ্টিতে প্রিয়ারর দিকে তাকিয়ে বলল
মামা:-চলে গেছে মানে?
,
প্রিয়ার মামী:-এখনো বুঝতে পারো নাই,তোমার জামই তোমার প্রিয়ারে রাইখা গেছে,মানে ছাইড়া গেছে।
,
মামা:-কি সব বাজে কথা বলছো তুমি(একটু রাগি কন্ঠে)
,
মামী:-ঠিকি কইতাছে আমি,তোমার কি মনে হয় এই প্রিয়ার মতো একটা অশিক্ষিতা গাইয়া মাইয়্যারে অতবড় বাড়ির বউ হিসাবে মাইনা নিব।ঐ পোলার বউ হওয়ার কি যোগ্যতা আছে তোমার প্রিয়া যে ওর বউ হিমাবে মাইনা নিব।
,
মামা:-সবকিছুই আছে আমার প্রিয়ার!!(প্রিয়া কাছে এসে)এই প্রিয়া মা তুই কিছু বলছিস না কেন?বল তোর মামী বলছে সব মিথ্যে বল।
,
প্রিয়া কিছু বলছেনা শুধু তার চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে।
,
মামা:-কিরে মা তুই কাদছিস কেন?বল যে তোর মামী যা বলছে সব মিথ্যা বল(প্রিয়ার দুকাধে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে)
,
এভাবে বলছিল আর প্রিয়াকে ধাক্কা দিচ্ছিল প্রিয়ার মামা।
প্রিয়া:-(কেদে কেদে বলতে লাগলো)হ্যাঁ মামা মামী যা বলছে তাই সত্যি
,
প্রিয়ার কথা শুনে প্রিয়ার মামার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো,অনি প্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে পিছন দিকে পিছতে পিছতে চেঁয়ারে বসে পরলো।আর প্রিয়ার মামী প্রিয়ার কথা শুনে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আর বলতে লাগলো
মামী:-তুই শীলার ব্যাপারে সব যানতি,আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার লাইগা আর অতবড় বাড়ি বড়লোক জামই দেইখা তুই আমারে কিছুই বলোস নাই,যাতে তোর ঐ বাড়িতে বিয়াডা হইয়া যায়। তাই না।
,
প্রিয়া কিছু বলছেনা শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।
,
মামী:-কি এখনো হইছে তো?বড় বাড়ির বউ হওয়া শখ মিডলো তো তোর?লুবি মাইয়্যা বড়লোক জামই দেইখা কত নাটক-টাটক কইরা বিয়া করলি,এখনো দিছে তো গলা ধাক্কা দিয়া বাড়ি থাইকা বেড় কইরা।
বড়লোকের গলা ধাক্কা খাইয়্যা এখন আবার আইচোস আমার বাড়িতে থাকতে,আমি তো কিছুতেই আর তোরে আমার বাড়িতে থাকতে দিমু না,এক্ষনি আমার বাড়ি থাইকা বেড় হইয়া যা(রাগি কন্ঠে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে)
,
প্রিয়া তার মামীর সামনে দু’হাটু ফেলে দু’হাত জোর করে কেদে কেদে বলতে লাগলো
প্রিয়া:-(কেঁদে কেদে)মামী প্লিজ আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবে না,এই পৃথিবীতে তুমি আর মামা ছাড়া আর কে আছে বলো?আর কোথাও তো আমার যাওয়ার জায়গা নেই,কোথাও যাব আমি কার কাছে যাব?(হাও-মাও করে কাঁদতে কাঁদতে)
,
মামী:-এইবার আর কোন কামহইবো না,তোর এই নাটক সেই ২০বছর ধইরা আমি দেখতেছি,আর না,যা আমার বাড়ি থাইকা বেড় হই যা।(এইবলে প্রিয়া চুলের মুঠি ধইলো)
,
প্রিয়া:-মামী তোমার দু’পা ধরি(দু’পা ধরলো)আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিওনা,তুমি যাই বলবে আমি তাই করবো(কেঁদে কেঁদে)
,
মামী:-বুঝছি ভালো কথায় কামহইবো না
,
এইবলেই প্রিয়ার মামী প্রিয়াকে পা’দিয়ে একলাঠি মারলো,আর প্রিয়া ছিটকে গিয়ে তার মামার বসে থাকা চেঁয়ারের সাথে ধাক্কা গেলে প্রিয়ার কপাল ফেটে রক্ত বেড় হতে লাগলো।প্রিয়া কাপালে হাত দিয়ে দেখলো রক্ত বেড় হচ্ছে,মাঠি থেকে উঠলো,প্রিয়া ঠিক মতো দারাতে পারছেনা,সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে দাড়ালো।
,
,
তারপর চোঁখেরর জল মুছে,ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড় হয়েগেল।বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রিয়া মামা প্রিয়াকে অনেক আটকানোর চেষ্ট করেছিল কিন্তু প্রিয়া শুধু”আমি ঠিক একটা থাকার জায়গা খুজে নিব,তুমি নিজের খেয়াল রেখ মামা”বলেই কান্না করতে করতে বেরিয়ে এসেছে।
,
,
,
প্রিয়া প্ররায় সারাদিনি ঘুরলো কারো বাসায় কাজ করার জন্য, কিন্তু কোথাও কোন পেলো না।
,
,
গভীর রাত,সারাদিনি গেল এখনো কিছুই খায়নি,মাথায় ব্যাথা ভালো করে হাটতে পারছেনা প্রিয়া।ব্যাগটা বুকে জরিয়ে ধরে রাস্তার একসাইদ দিয়ে হাটছে হঠাৎ করে তার পিছনে কারো পায়ের আওয়াজ পায়।প্রিয়া দাড়িয়ে কান খাড়া করলো,আবার শুনতে পেল কারো পায়ের আওয়াজ।প্রিয়া ধীরে ধীরে পিছনে ঘুরে দাড়ালো,অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।প্রিয়া ভয় পেয়ে চারদিকে ভালো করে তাকাতে লাগলো,এমন সময় হঠাৎ করে দু’টা ছেলে প্রিয়ার সামনে এসে দাড়ালো,প্রিয়ার শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো,মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।প্রিয়া ব্যাগটা আরো শক্ত করে বুকের মধ্য জরিয়ে ধরলো।
,
প্রিয়া:-(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)কারা আপনারা? পথ ছাড়ুন(ভয় ভয় করে)
,
১ম ছেলে:-আমরা তো মানুষ কিন্তু এই গভির রাতে পরীটা আসলো কোথা থেকে?(সিগারেট টানতে টানতে)
,
২য় ছেলে:-কি সুন্দরি আজকে কেউ তোমায়,নিয়ে যায়নি?চল আমাদের সাথে চল আমরা দুজন আছি যা লাগে দিব,কোন সমস্যা হবেনা।
,
প্রিয়া:-(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)দেখুন আপনারা ভূল করছেন,পথ ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন।(ভয় ভয় করে)
,
এইবলে প্রিয়া চলে যাচ্ছিল এমন সময় ২য় ছেলেটা প্রিয়ার হাত ধরে নেয়।
,
২য় ছেলে:-আরে সুন্দরি কই যাও?আমাদের কি মাল্দার মনে হয় না।(শক্ত করে প্রিয়ার হাত ধরে)
,
প্রিয়া অনেক কষ্ট করে হাতটা ছারিয়ে নিয়ে দৌরতে থাকে,আর ছেলে গুলা প্রিয়ার পিছু পিছু।
প্রিয়া পিছনে বারবার তাকাচ্ছিল এমন সময় একটা গাড়ির সাথে প্রিয়া ধাক্কা লেগে পরে যায়।আর গাড়ি চালক তারাতারি গাড়িটা ব্রেক করে গাড়ি থেকে মেনে যায়।প্রিয়া চোখ উঠে দেখে গাড়ি চালকটা আর কেউ নয় মাহিম।প্রিয়া মাহিমকে দেখে মাঠি থেকে উঠে গিয়ে মাহিমের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।ছেলে গুলো মাহিমকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
,
,
,
মাহিম পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়া অনেকটা ভয় পেয়ে ঠান্ডায় বুকের মাঝে ব্যাগটা চেপে ধরে বাচ্চাদের মতো দারিয়ে আছে।
,
,
প্রিয়া:-(কাপা কাপা কন্ঠে) আপনি এখানে?
,
মাহিম কিছু না বলে গাড়ির ভিতর থেকে একটা ছবি বেড় করে দিয়ে বলল
মাহিম:-এটা আপনাকে দিতে এসেছিলাম
,
প্রিয়া ছবিটা হাতে নিয়ে দেখলো তার মা-বাবার ছবিটা ভূলে ছেড়ে আসছিল সেটা।
,
মাহিম আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছিল,এমন সময় প্রিয়া মাহিম সামনে দাড়িয়ে হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো।
প্রিয়া:-প্লিজ মাহিম বাবু আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন না,আপনার বউ হিসাবে মেনে না নেন কিন্তু আপনাদের বাড়ির #কাজের_মেয়ে হিসাবে আমাকে,নিয়ে যান।আমি কোন দিনও আপনার কাছে স্ত্রীরর অধিকার বা আপনার স্ত্রী সিহাবে নিজেকে দাবি করবো না।আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়ে হয়ে থাকবো
আমাকে টাকাও দিতে হবেনা,থাকার জন্য একটু জায়গা আর দুবেলা-দুমুঠো ভাত, আর কিছুই চাই না আমি,প্লিজ মাহিম বাবু আমাকে ছেড়ে যাবেন না।(হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে)
,
–Tu be Continue–
,
ভালো লাগলে জানাবেন।
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন )
#ধন্যবাদ_সবাইকে