বউ_যখন_কাজের_মেয়ে . পর্ব-৫

0
3673

#বউ_যখন_কাজের_মেয়ে
,
পর্ব-৫
রাইটার-মোঃ মাহিম আহমেদ
,
,
,
প্রিয়া:-প্লিজ মাহিম বাবু আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন না,আপনার বউ হিসাবে মেনে না নেন কিন্তু আপনাদের বাড়ির #কাজের_মেয়ে হিসাবে আমাকে,নিয়ে যান।আমি কোন দিনও আপনার কাছে স্ত্রীরর অধিকার বা আপনার স্ত্রী সিহাবে নিজেকে দাবি করবো না।আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়ে হয়ে থাকবো
আমাকে টাকাও দিতে হবেনা,থাকার জন্য একটু জায়গা আর দুবেলা-দুমুঠো ভাত, আর কিছুই চাই না আমি,প্লিজ মাহিম বাবু আমাকে ছেড়ে যাবেন না।(হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে)
,
মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো,চোখে জল কপাল দিয়ে রক্ত বেড় হচ্ছে,কেমন অসহায় হয়ে হাত জোর করে কাঁদছে।প্রিয়াকে এভাবে দেখে তার মায়া হলো,আর জায়গাটাও ভালো না,তাই প্রিয়া নিয়ে তাদের বাড়ির দিকে রওনা হলো।
,
,
মাহিম প্রিয়াকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে সিরি দিয়ে উপরে উঠছিল এমন সময় মাহিমের বাবা বলে উঠলো
বাবা:-দাড়াও
,
মাহিমের বাবার শুনে মাহিম আর প্রিয়া দুজনি দাড়িয়ে গেল।
,
বাবা:-মাহিম এই মেয়ে এখানে কি করছে?(প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে)এই মেয়ে তোমার কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই নাকি?বিয়ের আগে তো মাহিমকে হাত জোর করে বিয়ে করতে বলেছি,যে তুমি বিয়ের পরের দিনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে।
,
প্রিয়া কিছু বলল না,মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।
,
মাহিমের বোন অর্পা-মাহিমের বউ হওয়া
কি যোগ্যতা আছে তোমার?অশিক্ষিত গাইয়্যা মেয়ে একটা(মাহিমের দিকে তাকিয়ে)মাহিম,তুই তো এই মেয়ে রেখে আসতে গিয়েছিলি,তাহলে আবার তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসলি কেন?
,
মাহিম:-আপু অনার মামী অনাকে বাসা থেকে বেড় করে দিয়েছে,আর কোথাও যাওয়া মতো কোন জায়গা নেই।
,
অর্পা:-প্রিয়ার যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই তাতে আমাদের কি?
,
বাবা:-তাই বলে তুমি একটা গাইয়্যা মেয়েকে তোমার স্ত্রীর হিসাবে মেনে নিবে,তাকে স্ত্রী মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসবে?
,
মাহিম:-বাবা অনি এই বাড়িতে একটা কাছে মেয়ে হিসাবে এসেছে,আমার স্ত্রী হিসাবে নয়।আর অনাকে আমার স্ত্রী হিসাবে মেনে নেওয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা(বিরক্তির ভাবে)
,
বাবা:-আমাদের বাড়িতে আর কোন কাছে মেয়ে লাগবেনা,(প্রিয়া দিকে তাকিয়ে)এই মেয়ে তুমি এক্ষনি এই বাড়িত থেকে বেরিয়ে যাও বলছি(রাগি কন্ঠে)
,
প্রিয়া ব্যাগটা ফেলে দিয়ে মাহিমের বাবার পা এর কাছে হাটু ফেলে বসে।
প্রিয়া:-(কেঁদে কেঁদে)বাবা আমায় কিছুই দিতে হবেনা,শুধু থাকার জন্য একটু জায়গা আর দুবেলা-দুমুঠো ভাত,আর কিচ্ছুই চাইবো আপনাদের কাছে।
,
অর্পা:-বাবা তুমি কিছুই এই মেয়ে কে এই বাড়িতে থাকতে দিবেনা,এইসব মেয়েদের কে না আমি খুব ভালো করেই চিনি।প্রথমে একটু থাকার জায়গা তারপর নিজের অধিকার, তারপর একদিন দেখবে আমাদের কেই এই বাড়ি থেকে বেড় করে দিবে।
,
প্রিয়া:-বাবা আমি সারাজিবন আপনাদের বাড়ির কাছের মেয়ে হয়ে থাকবো,কোন দিনও আপনাদের কাছে আমার অধিকার চাইবো না।শুধু আমাকে একটু থাকার জায়গা দিন প্লিজ বাবা(হাত জোর করে কেঁদে কেঁদে)
,
এভাবে কেঁদে কেঁদে অনেক ভাবে প্রিয়া অনুরধ করছিল কিন্তু মাহিমের বাবা আর মাহিমে বোন অর্পা কিছুতেই মানছিল না।এমন সময় মাহিমের মা বেরিয়ে আসে বলল।
,
মাহিমের মা:-তুমি থাকবে,এই বাড়িতেই থাকতে।
,
মাহিমের মা এর কন্ঠ শুনে সবাই অনার দিকে তাকালো।
,
মাহিমের বাবা:-থাকবে মানে?
,
মাহিমে মা:-হুম,প্রিয়াকে যখন কেউই এই বাড়ির বউ হিসাবে মেনে নিবে না,তখন আমি চাইছি প্রিয়া এই বাড়িতে কাছের মেয়ে হয়েই থাকবে।
,
অর্পা:-আমাদের বাড়িতে কি কাছের মেয়ে নেই নাকি?(রাগি কন্ঠে)
,
মাহিমের মা:-আজ থেকে প্রিয়া ছাড়া এই বাড়িতে আর কোন কাজের মানুষ থাকবে না,বাড়ির সব কাজ প্রিয়াই করবে।,আশা করি আমার এই কথাটা রাখবেন(মাহিমের বাবা দিকে লক্ষ করে বলল)
,
এইবলেই অনি ভিতরে গেলেন।আর মাহিমের বাবাও আর কিছু না বলে উপরে চলে গেলেন।মাহিমও আর দাড়িয়ে না থেকে উপরে তার রুমে চলো গেল।
,
আসলে এই মা-মনি হচ্ছে মাহিম শত মা,কিন্তু মাহিম অনাকে নিজের মা ছাড়া কখনই শত মা ভাবেনি।
কিছু বুঝলেন না তো।
মাহিমের বাবা এই মা-মনি প্রথম বিয়ে করে বিদেশে যায়,আর ঐখানে মাহিমের বাবা ২য় বিয়ে করে।মাহিম আর অর্পা হলো ২য় স্ত্রীর সন্তান। দেশে আশার পর মাহিমের বয়স যখন ৫ তখন মাহিম এই মা-মনির কাছে রেখে আবার বিদেশে যায়।
আর তখন থেকেই মাহিম এই মা-মনি কে নিজের মা মনে করে কখনই শত মা ভাবেনা।
এই বাড়িতে মাহিমের বাবার কথাই শেষ কথা,কিন্তু মাহিমের বাবা এই মা-মনিকে তার জীবনের একটুও সময় দিতে পারিনি বলে মাহিমেরর মা-মনির কিছু কথা রাখে।
,
,
মাহিম রাত রুমে এসে খুব টায়ার্ড লাগছিল তার, তাই সে রুমে এসেই ঘুমিয়ে পরলো।
,
কিছুক্ষণ পর প্রিয়া রুমে আসলো এসে দেখলো মাহিম জুতো না খুলেই ঘুমিয়ে পরেছে।প্রিয়া মাহিমের কাছে এসে মাহিম জুতো গুলো খুলে পা গুলো ভালো উঠে দিয়ে একটা কম্বল গা এ দিয়ে দিল।
তারপর অন্যরকম একটা মায়া নিয়ে মাহিমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
,
,
,
খুব সকালে মাহিমের ঘুম ভেঙ্গে যায়, মাহিম ঘুম থেকে উঠে দেখলো তার জুতো খুলা গাঁ এ কম্বল,ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো না।মাহিম খেয়াল করলো প্রিয়াকে রুমে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।কাল রাতে মেয়ে কোথাও থাকলো কিছু খেয়েছে কিনা কিছুই তো জানেনা।মাহিম উঠে প্রিয়াকে খুজতে দরজা খুলতে দেখলো প্রিয়া সেদিনের মতো প্রিয়া তার রুমের দরজার সামনে ঠান্ডায় ছোট্ট বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে।
,
,
মাহিম দেখে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর প্রিয়া ডাকলো।
মাহিমের ডাকে প্রিয়ার ঘুম ভেঙে যায়, প্রিয়া মাহিমকে দেখে উঠে দাড়ালো।
,
মাহিম:-কাল রাতে কিছু খেয়েছেন?
,
প্রিয়া:-(মাথা নেরে বলল না)
,
মাহিম:-সারা রাত এখানেই ছিলেন নাকি?
,
প্রিয়া:–(মাথা নেরে বলল হ্যাঁ)
,
মাহিম:-কেন? ভিতরে গিয়ে সুয়ে পরেন নি কেন?
,
প্রিয়া:-আপনি তো সেদিন বলেছিন আপনার রুমের বাহিরে থাকতে(বাচ্চাদের মত মাথা নিচু করে)
,
মাহিম:-তো মা-মনির রুমে যাননি কেন?(একটু রাগি কন্ঠে)
,
প্রিয়া:-আমি তো অনার রুম চিনিনা
,
মাহিম দেখলো কাল থেকে কান্নাকাটি আর না খাওআয় মুখটা কেমন সুখনা-সুখনা লাগছে। সে বলল
মাহিম:-আচ্ছা যান মা-মনির ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিন।
,
প্রিয়া:-না,সবার জন্য নাস্তা ডেরি করতে হবে।
,
মাহিম:-আমাদের বাড়িতে মা-মনি ছাড়া এত সকালে কেউই ঘুম থেকে উঠে না,আমি যেটা বললাম সেটা করুন,আর সুনুন কাল থেকে বারিয়ে থাকার দরকার নেই,আমার রুমের মেঝেতে থাকবেন।(বিরক্তির ভাবে)
,
প্রিযা:-আচ্ছা(মাথা নিচু করে)
,
এরপর প্রিয়া চলেগেল,আর মাহিম ওয়াশরুমে গেল,ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসে ফোন ফোন টিপছিল।
,
কিছুক্ষন পর প্রিয়া রুমে আসলো।
পরনে একটা শাড়ি,চুল গুলো ভেজা,ঠোঁটে হালকা করো লিবিস্টিক,আর শাড়ির আচলটা কমড়ের একদিকে গোজা।
প্রিয়াকে দেখতে এখনো একটু অন্যরক লাগছে।
মাহিম না চাইতেও চোখ বার বার তার দিকে যাচ্ছে।মাহিম প্রিয়ার পেটের দিকে তাকাতেই মাহিম তার চোখ ফিরো নিল,কারন আর বেশিক্ষণ এভাবে প্রিয়ার দিকে তাকালে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।এভাবে যে কেউ তার স্ত্রীকে দেখলে,জরিয়ে ধরতে চাইবে,একটু রুমান্স করতে চাইবে।
মাহিমের খুব ইচ্ছে করছিল প্রিয়ার ঠোঁঠের সাথে তার ঠোঁঠ এক করে দিতে,কিন্তু প্রিয়া এই বাড়িতে এসেছে কাজের মেয়ে হিসাবে,মাহিম বউ হিসাবে না।তাই মাহিম মনে মনে প্রিয়ার উপর অনেকটাই রেগে রইলো।
,
প্রিয়া:-আপনার জন্য কি চা আনবো?(মাথা নিচু করে)
,
মাহিম:-এতে বলার কি আছে,
যান নিয়ে আসুন(একটু রাগি চোখে তাকিয়ে)
,
প্রিয়া আরর কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
,
কিছুক্ষন পর প্রিয়া হাতে চায়ের কাপ নিয়ে মাহিমের সামনে এসে বলল
প্রিয়া:-এই নিন আপনার চা(কাপটা মাহিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
,
মাহিম চারকাপটা হাতে নিয়ে কাপে চুমুক দিল দেওয়ার সাথে সাথে কাপের গরম চারকাপটা চা গুলো সহ প্রিয়ার হাতে ছুরে মারলো আর প্রিয়া সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
,
প্রিয়ার চিৎকার শুনে মাহিমের মা-মনি রুমে ছুটে আসলো।
,
মা মনি:-কি হয়েছে মা,এভাবে চিল্লানি দিলি কেন?
,
প্রিয়া:-কিছু না মা-মনি,চারকাপটা হাত থেকে পরে ভেঙে গেছে(প্রিয়া পিছনে হাত করে)
,
মা-মনি:-দেখে শুনে কাজ করবি,(এইবলে অনি রুম থেকে বেরিয়ে গেল)
,
আর প্রিয়া ভেঙে যাওয়া কাপের টুকরো গুলো কুরাতে লাগলো।আর মাহিম কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
,
,
সারাদিন গেল,কিন্তু মাহিম বাড়ি ফিরেনি।রাত সাড়ে এগারোটায় মাহিম বাড়ি ফিরে এল।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,শুধু প্রিয়া জেগে আছে।মাহিম হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে খাবার এর টেবিলে বসলো। প্রিয়া এসে সামনে খাবার দিল,প্রতিদিনি মাহিম কে তার মা-মনি খাবার দেয়।কিন্তু আজকে প্রিয়া দিচ্ছে,সেটা দেখে মাহিম চেঁচিয়ে তার মা-মনিকে ডাকতে লাগলো।
,
প্রিয়া:-মা-মনি ঘুমিয়ে পড়েছে,আপনিও খেয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
,
মাহিম আর কিছু না বলে খেতে বসলো।আর খাওয়া শেষ করো নিজের রুমে আসলো।
কিছুক্ষন পর প্রিয়া রুমে আসলো,মাহিম প্রিয়ার দিকে তাকালো মুখটা কেমন সুখিয়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে প্রিয়া এখনো কিছু খায়নি।
মাহিম:-রাতে খেয়েছেন?
,
প্রিয়া চমকে উঠলো,মাহিম তাকে এই প্রশ্ন করবে সেটা কখনি প্রিয়া ভাবেনি।তাই সে অবাক দৃষ্টিতে মাহিমের দিকে তাকিয়ে রইলো
,
মাহিম:-না,মানে এমনি জিগ্যেস করছিলাম।আপনি খেলেন কি না খেলোন তাতে আমার কি?আমার মনে হলো তাই বললাম আর কিছু না।খেয়েছেন রাতে?
,
প্রিয়া:-না
মাহিম:-আপনি এতরাত পর্যন্ত না খেয়ে আছেন কেন?(প্রিয়া কাছে এগিয়ে এসে)
,
প্রিয়া:-আমার ক্ষিতে লাগেনি,তাই আজকে আর খাব না।
,
মাহিম:-(প্রিয়া কাছে এগিয়ে এসে)এই দেখুন আপনাকে আমি জোর করে বিয়ে করে ঘরের বউ করে আনিনি,উল্টা আপনি আমাকে হাত জোর করে বিয়ে করেছেন।আর আপনি এই বাড়িতে আমার বউ হিসাবে না,বাড়ির কাজের মেয়ে হিসাবে এসেছেন।সো এইসব নাটক না করে যান গিয়ে খেয়ে আসুন(রাগ দেখিয়ে(
,
প্রিয়া:-বললাম তো আমার ক্ষিদে নেই
,
মাহিম:-আমি বলছি তো যান গিয়ে খেয়ে আসুন(রাগি কন্ঠে)
,
প্রিয়া:-একটু আগেই তো আপনি বললেন আমি খেলাম কি খেলাম না এতে আপনার কিছু যায় আসেনা? তাহলে আমি এখন না খেয়ে থাকলে আপনার কি?(অভিমানী সুরে)
,
মাহিম:-আমার কি সেটা যদি বুঝতেন তাহলে হয়তো আপনার কপালটা ভালো হতো,চলুন খাবেন চলুন।
,
এইবলে মাহিম প্রিয়ার একহাত ধরে টানতেই প্রিয়া চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।মাহিম কিছু বুঝতে পারলো না,প্রিয়ার হাতের দিকে তাকাতেই দেখলো সকালে চা পরাতেই প্রিয়ার হাতে অনেটাই জায়গা পুড়েগেছে।আর মাহিম সেখানেই ধরতেই প্রিয়া ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠেছে।
-Tu be Continue
,
ভালো লাগলে যানাবেন।
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন )
#ধন্যবাদ_সবাইকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here