বউ_হবে_আমার??,পর্ব_০৪
writter_সোহানুর_রহমান_রহমান
সোহানের সেই দৃশ্যটা একদম ভাবতে ইচ্ছে করছিলো না।যখন টাকাগুলো দিয়ে চারু তার পা দুটি ঝাপটে ধরে কাদতে থাকলো।তাহলে কি এরা গরীর বলে সবসময় এদেরকেই হেনস্তা হতে হবে?এদের কি কোনো অধিকার নেই?
দু দিন না খেয়ে মেয়েটি কিভাবে রইলো।নিজের মনকে সোহান ঘৃনা করতে লাগলো।যে মেয়েটি দু দিন ধরে অসুস্থ আর সেই প্রতির সে কিভাবে কুনজর দিতে পারলো।
রাস্তা দিয়ে হাটছে আর চারুর মায়াবী মুখটা বারবার তার চোখের সামনে আনছে।কিন্তু এভাবে তো চারুকে বোঝানো যাবে না।তাকে যেভাবেই হোক সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতেই হবে তবে আগে সেই ভুয়া ডাক্তারকে দেখতে হবে।যে সবকিছু মুলে রয়েছে।
.
রাত ১২ টা হটাৎ করেই একটা আওয়াজ শুনতে পাওয়া গেলো।আওয়াজটা শুনে মনে হলো কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ।হটাৎ একটা লোক দৌড়ে এসে পাশে থাকে ছেলেপেলেদের ভিতরে একজনের পায়ে পড়ে গেলো।পায়ে পড়তেই ছেলেটা তার কলার চেপে ধরে মারতে মারতে রুমের ভিতর নিয়ে গেলো।কিন্তু এদিকে রুমে সোহানকে পাওয়া যাচ্ছে না।তাহলে কি এতক্ষন সবকিছু সেই ঘটাচ্ছিলো।আর এই ঘর দেখে তো সেই দোকানটাই মতে হলো।হ্যা এটাই সেই ঘর আর এরা তারাই যাদের এখনো অনেক কথাবার্তা বাকি আছে।
সোহান লোকটিকে মেরে মেরে রুমের এক কোনে ফেলে দিলো।লোকটি চিৎকার করে চেচাতে লাগলো।
—বল চারুকে কেন তুই নষ্ট করছিছ?শালা তোর বাসাই মা বোন নাই?
সোহানের কথা শুনে চাচার বয়সি লোকটা অদ্ভুত ভাবে চেয়ে রইলো।মুখে তার কোন কথা নেই।এতক্ষনে লোকটি বুঝতে পারলো তাকে কেন এতো অত্যাচার করা হচ্ছিলো।
ইতিমধ্যে লোকটির একটা মেয়েকে তার সামনে আনা হলো।সোহান গিয়ে সেই মেয়ে ওড়নাটা সড়িয়ে জামার এক অংশ ছিড়ে নিলো।যেটা লোকটি বাবা হয়ে আর সহ্য করতে পারলো না।চিৎকার করে কাদতে কাদতে বললো,,
—বাবা তোমার পায়ে ধরি তুমি আমার মেয়ের সাথে এমন করোনা।আমি তোমাকে সবকিছু বলছি শুধু আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।
কথাগুলো শুনে মেয়েটিকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো।সোহান লোকটির বুকের উপর পা রেখে,,
—বল কেন চারুর সাথে এমন করলি?
—বাবা এজন্য আমাকে মাফ করে দাও।কিন্তু বিষ্শাষ করো আমী মেয়েটার শরীরে কোনো পাপের চিন্হ লাগাইনি।
—তাহলে?
—আমি ঘুমের ওষুধ দিতেই মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ার পর আমি মেয়েটাকে বিছানাই রেখে দিই।নিজের মেয়েকে মিথ্যা বলে ওর শরির থেকে বোরকাটা খুলে ঢেকে রাখতে বলি।আমার একটু কাজ ছিলো তাই দোকানে ফিরতে দেরী হয়েছিলো।আর যখন ফিরে আসলাম তখন দেখি মেয়েটা আর নেই।বিষ্শাষ করুন মেয়েটা
কে আমি স্পর্শ করিনি।
কথাগুলো শোনামাত্র সোহান লোকটির বুক থেকে পা টা সড়িয়ে নিয়ে পথের দিকে রওনা দিলো।সে লোকটির কথা শুনে হাসবে না কাদবে সেটা একদম ভেবে পাচ্ছে না।খুশির আকারটা তার চোখে মুখে ভাসছে।
বাসায় ফিরে এসেছে আর এখন সে চারুর রুমের সামনে দাড়িয়ে রয়েছে।হাতে খাবার প্যাকেট করা আর কাধে রয়েছে কিছু কাপড়।দরজার কড়া নাড়তেই চারু দরজা খুলে ফেললো।
চারুকে জোড়বশত সেগুলো দিয়ে সে রুমটা নিজে থেকেই আটকে দিয়ে চলে এলো।মেয়েটাকে খুব তাড়াতাড়ি দুঃখ বেদনার জগত থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
.
হটাৎ রাতটা কেটে চারদিকে আযানের সুর শোনা যাচ্ছে।আর এদিকে চারুর রুমটা কে যেন খটখট করে ধাক্কা দিচ্ছে।চারু তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে রুমটা খুলতেই দেখে সোহান পান্জাবি গায়ে তার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে,,
—ভাইয়া আপনি এইখানে?
—চারু এভাবে এতো অলস হলে চলবে নাতো।
—এখন আবার কি করতে হবে?
—তাড়াতাড়ি অযু করে এসো।নামাজ পড়তে হবে।
সোহানের কথা শুনে চারুর চোখদুটো লম্বা হয়ে গেলো।পতিতা হতে গেলে নামাজ পড়তে হয়?সে তো কখনো এইরকম কোনো কথা শুনেনি?
—ভাইয়া পতিতা হতে নামাজ পড়তে হবে কেন?
—চারু তুমি কিন্তু আমাকে ধমক দিচ্ছো।যাও গিয়ে অযু করে এসো।
—কিন্তু আমাকে তো জানতে হবে এসবের ভিতর আবার নামাজ আসলো কোথা থেকে?আমি তো দেখেছি পতিতারা খুব খারাপ হয়।
—চারু যখন তুমি ভালো কাজ করবে তখন তোমাকে কেঊ সন্দেহ করবে না।আর যারা শুধু খারাপ কাজ করে তাদের কে পুলিশে ধরে নিয়ে যায়।
সোহানের কথাটা চারু বিষ্ষাশ করে নিলো।সে তো নিজেই কতো এইরকম পুলিশ কেস দেখেছে।যাক বাবা তাহলে এখন থেকে নামাজ পড়লে আমাকে কেউ সন্দেহ করবে না।ভাইয়ার তো হেব্বি বুদ্ধি।
কিন্তু কিন্তু,,
—কি ব্যাপার তুমি এখনো দাড়িয়ে কেন চারু?
কথাটা শুনে চারু মাথা চুলকাতে চুলকাতে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।চারু যেতেই সোহান চুপিচুপি হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলতে লাগলো,,
—পাগল একটা মেয়ে?
চারু অযুখানাই গিয়ে দেখে ফ্লাটের সবাই সেখানে উপস্থিত।সে ভাবলো হইতো এখানের সবাইকে এই নিয়ম মানতে হয়।চুপিচুপি একটা মেয়ের কাছে গিয়ে বসে,,
—আচ্ছা আপু তাহলে এসব সত্যিই মানতে হয়?
—এই মেয়ে কিসব বলছো?(মেয়েটি)
চারু বুঝতে পারলো না মেয়েটি এমন কেন বললো?
অযু সেরে সে নামাজ শেষ করে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো।কখনো সে এমন সাধীনভাবে ফ্লাটে রাত কাটাইনি।বেলকনি থেকে ঠান্ডা হাওয়া লাগতেই তার চুলগুলো দুলতে শুরু করলো।
সকাল হতেই আবার চারু সোহানের সামনে হাজির।
—ভাইয়া আমাকে ডেকেছেন?
—হ্যা।নামাজ পড়েছো?
—জি।
—কুরআন পড়তে পারো?
—জি না।
—কাল থেকে নামাজ বাদেই পাশের রুমে কুরআন শিখতে যাবে।
—কি?(অবাক হয়ে)
—এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।যদি তোমাকে পুলিশ কোনো হোটেল থেকে আটক করে তখন তুমি কুরআন পড়লে ওরা তোমাকে ছেড়ে দিবে।
— ও এই কথা?(কিছুটা বোঝার ভান করে)
—সকালে কিছু খেয়েছো?
—না।আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলবো?
—হ্যা বলো?
—আচ্ছা ভাইয়া আমি একটু আগে একটা মেয়েকে এই ব্যাপারে জিগ্গেস করতেই সে আমাকে ঝাড়ি দিলো কেন?
— কি কি কি তু তু তুমি কাকে এই কথাটা বলেছো?(অবাক হয়ে)
—এই পাশের রুমের আপুকে।
—চারু এখন থেকে আর এসব করবে না।ধরো তার কথা যদি সবাই জেনে যাই তাহলে সে লজ্জা পাবেনা?তাহলে সে কি কখনো স্বীকার যাবে নাকি?
—হ্যা ভাইয়া ঠিক বলেছেন।
—তো চারু সাহেব?এখন থেকে কিভাবে চলতে হবে?
—এখন থেকে কারো সাথে এইরকম কথা বলা যাবেনা।
—এইতো ভালো মেয়ে।এখন যাও আর গিয়ে রেডি হয়ে নাও।তোমাকে নিয়ে বেরোতে হবে।
—কোথাই যাবেন?
—তোমাকে নিয়ে একটু হসপিতালে যেতে হবে।বুঝোনা মেয়েদেরকে একটু ডাক্তার দেখানো উচিত।
চারু আর কোন কথা না বলে রুম চলে গেলো।চারুর পাগলের মতো মাথাটা দেখে সোহান আর হাসি ধরে রাখতে পারলো না।এ কেমন মেয়েরে বাবা?এতোবড় হয়েছে তবুও ভিতরে বাচ্চাদের মতো বোকাই রয়ে গিয়েছে।
হসপিতালটা খুব কাছেই তাই সোহান চারুকে নিয়ে হেটে রওনা দিলো।তাকে একটা বিষয় জানতে হবে যেটা চারুর জিবন মরনের সাথে জড়িয়ে আছে।পথে হাটার সময় চারু সোহানকে ডিস্টার্ব করা চেষ্টা করতে চাইলো কিন্তু কোনমতেই পেরে উঠছে না।তাই চারু সোহানকে বলে ফেললো,,
—ভাইয়া একটা কথা বলবো?
—হ্যা বলো?
—আচ্ছা কল গার্লরা তো প্রতিদিন কতজনের সাথে রাত কাটাই কিন্তু এদেরতো কোন বাচ্চা হয়না কেন?
কথাটা শুনে সোহান হাবলা হয়ে গেলো।এখন সে এই মেয়েকে কি জবাব দিবে?
.
চলবে,,